▆ প্রসঙ্গ : পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতির ভিন্নতা��

বলা বাহুল্য যে, মানুষ হিসেবে নর-নারি সম পর্যায়ের।
কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতত্ত্বের নিরিখে ভিন্নতা থাকায় সৃষ্টিকর্তার বিধানে উভয়ের জন্য বিধান ক্বুরআ'নুল কারিমে স্পষ্ট করা হয়েছে।
নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে।
যেমন-
০১-
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
০২-
ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
০৩-
ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
০৪-
হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।
০৫-
পুরুষের উপর জুমুআ' পড়া ফরয, মহিলাদের উপর নয়।
০৬-
নামাযে সতর্ক করার মত কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষের তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে।
কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।
০৭-
ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষই হতে পারে, কোন নারী হতে পারেনা।
০৮-
আজান শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
০৯-
পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআ'তে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
১০-
সতর : পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের সতর হল প্রায় পুরো শারীরই (ঢেকে রাখা ফরয)।
নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদত সমূহের অন্যতম হল নামায।
তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদী ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে।
তাঁদের সতরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই যেভাবে তাঁদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলিতে।
মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছিন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে।
বিষয়টি প্রমাণিত, রাসূলে কারীম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র হাদিস, সাহাবায়ে কেরাম রা. ও তাবেয়ী র.'গণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে।

❇ প্রথমে আমরা সহীহ হাদিস, তারপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবেয়ী র.'দের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করছি।
________
��হাদিস :
________
��হাদিছে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম, ১.
3016 –أخبرناهأبوبكرمحمدبنمحمدأنبأأبوالحسينالفسويثناأبوعلياللؤلؤيثناأبوداودثناسليمانبنداودأنبأبنوهبأنبأحيوةبنشريحعنسالمبنغيلانعنيزيدبنأبيحبيب : أنرسولاللهصلىاللهعليهوسلممرعلىامرأتينتصليانفقالإذاسجدتمافضمابعضاللحمإلىالأرضفإنالمرأةليستفيذلككالرجل (سننالكبرىللبيهقى،كتابالحيض،بابمايستحبللمرأةمنتركالتجافيفيالركوعوالسجود،رقمالحديث-3016)
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন,
একবার রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন,
“যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়"।
☆ সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬,
☆ কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০।
তাহকিক :
০১.
তথা-কথিত আহলে হাদিছ'র প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভূপালী বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন,
“উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করায় যোগ্য”।
০২.
মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদিসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।

��হাদিছে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম, ২.
وَالآخَرُحَدِيثُأَبِىمُطِيعٍ : الْحَكَمِبْنِعَبْدِاللَّهِالْبَلْخِىِّعَنْعُمَرَبْنِذَرٍّعَنْمُجَاهِدٍعَنْعَبْدِاللَّهِبْنِعُمَرَقَالَقَالَرَسُولُاللَّهِ -صلىاللهعليهوسلم- :« إِذَاجَلَسْتِالْمَرْأَةُفِىالصَّلاَةِوَضَعَتْفَخِذَهَاعَلَىفَخِذِهَاالأُخْرَى،وَإِذَاسَجَدْتْأَلْصَقَتْبَطْنَهَافِىفَخِذَيْهَاكَأَسْتَرِمَايَكُونُلَهَا،وَإِنَّاللَّهَتَعَالَىيَنْظُرُإِلَيْهَاوَيَقُولُ : يَامَلاَئِكَتِىأُشْهِدُكُمْأَنِّىقَدْغَفَرْتُلَهَا (السننالكبرى،كتابالصلاة،بابمَايُسْتَحَبُّلِلْمَرْأَةِمِنْتَرْكِالتَّجَافِىفِىالرُّكُوعِوَالسُّجُودِ،رقمالحديث-3324)
হাযরাত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছন,
“মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তাঁর সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দেখে বলেন, ``ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম``।
☆ সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪; এই হাদিসটি হাসান।

��হাদিছে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম, ৩.
حدثنامحمدبنعبداللهالحضرميقالحدثتنيميمونةبنتعبدالجباربنوائلبنحجرعنأبيهاعبدالجبارعنعلقمةعمهاعنوائلبنحجرقال : جئتالنبيصلىاللهعليهوسلم………….فقالليرسولاللهصلىاللهعليهوسلم : ياوائلبنحجرإذاصليتفاجعليديكحذاءأذنيكوالمرأةتجعليديهاحذاءثدييها (المعجمالكبير،بابالواو،وائلبنحجرالحضرميالقيل،رقمالحديث-28)
হাযরাত ওয়াইল বিন হুজর রা. বলেন। আমি রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন যে, হে ওয়াইল বিন হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর।
☆ আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২৮; এই হাদিসটিও হাসান।
উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে,
কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন।
বিশেষত দ্বিতীয় হাদিসটি দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে,
মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত, কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির।
ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতরও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপযোগী।
উল্লেখ্য যে,
এই সব হাদিসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এরুপ আরো কিছু হাদিস রয়েছে।
পক্ষান্তরে, এগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা যে, যাতে বলা হয়েছে, ``পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ের নামাযই এক ও অভিন্ন``-একথার পক্ষে একটি হাদীসও নেই।

_________________________
        সাহাবায়ে কিরামের ফাতাওয়া।
_________________________
��ফাতাওয়া ১.
5072 –عبدالرزاقعنإسرائيلعنأبيإسحاقعنالحارثعنعليقالإذاسجدتالمرأةفلتحتفزولتلصقفخذيهاببطنها (مصنفعبدالرزاق،كتابالصلاة،بابتكبيرالمرأةبيديهاوقيامالمرأةوركوعهاوسجودها،رقمالحيث-5072)
হাযরাত আ'লী রা. বলেছেন,
``মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে``।
☆ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২,
☆ মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩,
☆ সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২।

����ফাতাওয়া ২.
حَدَّثَنَاأَبُوعَبْدِالرَّحْمَنِالْمُقْرِئ،عَنْسَعِيدِبْنِأَبِيأَيُّوبَ،عَنْيَزِيدَبْنِأَبِيحَبِيبٍ،عَنْبُكَيْرِبْنِعَبْدِاللهِبْنِالأَشَجِّ،عَنِابْنِعَبَّاسٍ؛أَنَّهُسُئِلَعَنْصَلاَةِالْمَرْأَةِ؟فَقَالَ : تَجْتَمِعُوَتَحْتَفِزُ. (مصنفابنابىشيبة،كتابالصلاة،فيالمرأةكَيْفَتَجْلِسُفِيالصَّلاَةِ،رقمالحديث-2794)
হাযরাত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল,
মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন,
“খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবেন”।
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪।
উপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর মত উদৃত করা হয়েছে।

আমাদের জানা মতে কোন হাদীসগন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও উপরোক্ত উদৃতির বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম থেকে সাহাবায়ে কিরাম রা. যে দ্বীন শিখেছেন তাদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ী র.'গণ।
তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে,
“মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন”।
নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে :
_________________________
          তাবেয়ী র.'দের ফাতাওয়া :
_________________________
��ফাতাওয়া ১.

2486- حدثناهشيم،قال : أخبرناشيخلنا،قال : سمعتعطاء؛سئلعنالمرأةكيفترفعيديهافيالصلاة؟قال : حذوثدييها(مصنفابنابىشيبه،كتابالصلاة،بابمنكانيتمالتكبيرولاينقصهفيكلرفعوخفض،)
হাযরাত আতা বিন আবী রাবাহ কে জিজ্ঞেস করা হল,
“নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?”
তিনি বললেন-“বুক বরাবর”।
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬।

����ফাতাওয়া ২.

2489- حدثنامحمدبنبكر،عنابنجريج،قال : قلتلعطاء : تشيرالمرأةبيديهابالتكبيركالرجل؟قال : لاترفعبذلكيديهاكالرجل،وأشارفخفضيديهجدا،وجمعهماإليهجدا،وقال : إنللمرأةهيئةليستللرجل،وإنتركتذلكفلاحرج.
হাযরাত ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন,
“আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম, “মহিলা কি তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?”
তিনি বললেন, “মহিলা পুরুষের মত হাত তুলবেনা। এরপর তিনি তাঁর উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথ খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই``।
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯,
☆ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৫০৬৬, ৬২৫১।

������ফাতাওয়া ৩.

2796- حدثناجرير،عنليث،عنمجاهد؛أنهكانيكرهأنيضعالرجلبطنهعلىفخذيهإذاسجدكماتصنعالمرأة.
হাযরাত মুজাহিদ বিন জাবর রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন।
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬।

��������ফাতাওয়া ৪.

2487- حدثناروادبنجراح،عنالأوزاعي،عنالزهري،قال : ترفعيديهاحذومنكبيها.
হাযরাত যুহরী রহ. বলেন,
“মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে"।
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭।

����������ফাতাওয়া ৫
5068 –عبدالرزاقعنمعمرعنالحسنوقتادةقالاإذاسجدتالمرأةفإنهاتنضممااستطاعتولاتتجافىلكيلاترفععجيزتها
হাযরাত হাসান বসরী রহ. ও হাযরাত কাতাদা রহ. বলেন,
“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে”।
☆ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮,
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩।

������������ফাতাওয়া ৬.

2795- حَدَّثَنَاأَبُوالأَحْوَصِِ،عَنْمُغِيرَةَ،عَنْإبْرَاهِيمَ،قَالَ : إذَاسَجَدَتِالْمَرْأَةُفَلْتَضُمَّفَخِذَيْهَا،وَلْتَضَعْبَطْنَهَاعَلَيْهِمَا.(مصنفابنابىشيبة،كتابالصلاة،فيالمرأةكَيْفَتَجْلِسُفِيالصَّلاَةِ،رقمالحديث-2795)
হাযরাত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন,
``মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে``।
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫।

��������������ফাতাওয়া ৭.
5071 –عبدالرزاقعنمعمروالثوريعنمنصورعنإبراهيمقالكانتتؤمرالمرأةأنتضعذراعهاوبطنهاعلىفخذيهاإذاسجدتولاتتجافىكمايتجافىالرجللكيلاترفععجيزتها
হাযরাত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন,
“মহিলাদের আদেশ করা হত তাঁরা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে।
☆ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১।

����������������ফাতাওয়া ৮.

2799- حَدَّثَنَاإسْمَاعِيلُابْنُعُلَيَّةَ،عَنْمُحَمَّدِبْنِإِسْحَاقَ،عَنْزُرْعَةَبْنْإِبْرَاهِيمَ،عَنخَالِدِبْنِاللَّجْلاَجِ،قَالَ : كُنَّالنِّسَاءُيُؤْمَرْنَأَنْيَتَرَبَّعْنَإذَاجَلَسْنَفِيالصَّلاَةِ،وَلاَيَجْلِسْنَجُلُوسَالرِّجَالِعَلَىأَوْرَاكِهِنَّ،يُتَّقيذَلِكَعَلَىالْمَرْأَةِ،مَخَافَةَأَنْيَكُونَمِنْهَاالشَّيءُ.
হাযরাত খালেদ বিন লাজ্জাজ রহ. বলেন,
“মহিলাদেরকে আদেশ করা হত যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়``।
☆ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯।
উল্লেখিত বর্ণনাগুলি ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীন র.'র আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে।
পক্ষান্তরে, একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়।

_________________________
চার ইমামের ফিক্বহের আলোকে :
_________________________
ইছলামে ফিক্বাহ্'র চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহ্'র মাঝে ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত রয়েছে।
যথা-
��০১-ফিক্বাহে হানাফী
��০২-ফিক্বাহে শাফেয়ী
��০৩-ফিক্বাহে মালেকী
��০৪-ফিক্বাহে হাম্বলী

এবার দেখুন, এই চার ফিক্বাহ'র ইমামদের মতামত।
��০১-ফিক্বহে হানাফী :
احباليناانتجمعرجليهامنجانبولاتنتصبانتصابالرجل، (كتابالآثار-1/609)
ইমাম আবু হানীফা রহ.'র অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন,
“আমাদের নিকট পছন্দনীয় হল, মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা।
☆ কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহ.-১/৬০৯।
روىامامناالأعظمعننافععنابنعمررضىاللهعنهماأنهسئلكيفكانالنساءيصلينعلىعهدرسولاللهصلىاللهعليهوسلم؟قالكنيتربعنأمرنأنيحتفزن،
أخرجهأبومحمدالحارثىوالأشنانىوابنخسرومنطريقهعنسفيانالثورىعنه،راجعجامعالماسانيد-1/400،وهذاأقوىواحسنماروىفىهذاالباب،ولذااحتجبهامامناوجعلهمذهبهوأخذبه،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা র. হাযরাত  নাফে রহ. থেকে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন-“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা.'কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,
“রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?”
তিনি বললেন-“আগে তাঁরা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”।
☆ জামেউল মাসানিদ, ১/৪০০।
উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী।
এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন। এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন।
☆ কিতাবুল আসার এর টিকা-১/৬০৭।
_________________________
মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনায় হানাফী ফিক্বহের কিতাব :
_________________________
কিতাবসমূহ :
১-বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬,
২-হেদায়া-১/১০০-১১০,
৩-আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬
৪-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪,
৫-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫।

��০২-ফিক্বহে শাফেয়ী :
( قالالشافعي ) وقدأدباللهتعالىالنساءبالاستتاروأدبهنبذلكرسولهصلىاللهعليهوسلموأحبللمرأةفيالسجودأنتضمبعضهاإلىبعضوتلصقبطنهابفخذيهاوتسجدكأسترمايكونلهاوهكذاأحبلهافيالركوعوالجلوسوجميعالصلاةأنتكونفيهاكأسترمايكونلها (كتابالأم،بابالذكرفيالسجود)
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন,
“আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন।
তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল,
সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়"।
☆ কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮।

��০৩-ফিক্বহে মালেকী :
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী র. ইমাম মালিক রহ.'র মত উল্লেখ করেন,
وأمامساواةالنساءللرجالففيالنوادرعنمالكتضعفخذهااليمنىعلىاليسرىوتنضمقدرطاقتهاولاتفرجفيركوعولاسجودولاجلوسبخلافالرجل
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহ. থেকে বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন।
☆ আয যাখীরা-২/১৯৩।

��০৪-ফিক্বহে হাম্বলী :
ইমাম আহমদ রহ.'র ফাতওয়া উল্লেখ আছে, ইমাম ইবনে কুদামা রহ. এর ``আল মুগীনী`` কিতাবে।
فأماالمرأةفذكرالقاضيفيهاروايتينعنأحمدإحداهماترفعلماروىالخلالبإسنادهعنأمالدرداءوحفصةبنتسيرينأنهماكانتاترفعانأيديهماوهوقولطاوسولأنمنشرعفيحقهالتكبيرشرعفيحقهالرفعكالرجلفعلىهذاترفعقليلاقالأحمدرفعدونالرفعوالثانيةلايشرعلأنهفيمعنىالتجافيولايشرعذلكلهابلتجعنفسهافيالركوعوالسجودوسائرصلاتها
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী আবু ইয়াজ রহ.  ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন।
প্রথম মত হল : হাত উঠাবে-��
কেননা, হাযরাত খাল্লাল (তাঁর প্রতি ছালাম) হাযরাত উম্মে দারদা (তাঁদের প্রতি ছালাম) এবং হাযরাত হাফসা বিন সীরীন (তাঁদের প্রতি ছালাম) থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে,
তাঁরা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউস র.'র বক্তব্যও তাই।
উপরন্তু, যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ রহ. বলেন, “তুলনামূলক কম উঠাবে”।

দ্বিতীয় মত হল : হাত উঠাবে না-��
“মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে"।
☆ আল মুগনী, ২/১৩৯।
আলোচনার এই পর্যায়ে
হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐক্যমত্যের প্রমাণ পেশ করার পর
আমরা দেখব,  তথা-কথিত আহলে হাদিছ'র লোকেরা যে মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের আলেমগণ এ বিষয়ে কি বলেন? তারা কি ফাতাওয়া দিয়েছেন?
_________________________
�� গায়রে মুকাল্লিদ আলেমগণের ফাতাওয়া :
_________________________
মহিলাদের নামাযের পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে যা কিছু উল্লেখ করা হল তথা হাদিছে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম, আসারে সাহাবা রা., তাবেয়ীন র.'দের ইজমা, এবং চার ইমাম র.'র ঐক্যমত্বের আলোকে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছন্ন সূত্র পরম্পরায় যেই পার্থক্যের আমল চলে আসছে, সেটাকে গায়রে মুকাল্লিদদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সেই আলোকে ফাতওয়া দিয়েছেন।

মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী র.'র পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী রহ.'কে যখন জিজ্ঞেস করা হল,
“মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?”
জবাবে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন,
“এর উপরই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যের মাঝে আমল চলে আসছে”।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লিখেন,
“মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীসে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম ও চার মাযহাবের ইমাম র.'গণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বিকারকারী হাদীসে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র কিতাবসমূহ ও উম্মতে মুসলিমার সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ”।
☆ ফাতওয়ায়ে গযনবীয়্যা-২৭-২৮,
☆ ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস—৩/১৪৮-১৪৯,
☆ মাযমুয়ায়ে রাসায়েল-মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর-১-৩১০-৩১১।
☆ মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ সাহেব “ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস”এ এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন।
☆ মাজমুয়ায়ে রাসায়েল, ১/৩০৫।

_________________________
লা মাযহাবী দাবীকারীদের একটি যুক্তি ও তার খন্ডন :
_________________________
তথা-কথিত আহলে হাদীস নামধারীরা রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র একটি হাদীস দিয়ে সব সময় দলীল দিয়ে থাকে।
যে হাদীসে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, ``তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়``।
যেহেতু রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র এ হাদীসে পুরুষ নারীর কোন পার্থক্য করা হয়নি। তাই নারী পুরুষের নামাযের অবস্থা একই।
অথচ রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র এ হাদীসটির দিকে আমরা তাকালেই তাদের এ দলীলের অসারত স্পষ্ট হয়ে উঠে।
কারণ হাদীসটি রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছিলেন একদল পুরুষ সাহাবী রা.'দের।
আর, রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র উক্তি আমাকে যেভাবে দেখ, এ উক্তি দ্বারাও স্পষ্ট যে, এ হুকুম পুরুষদের জন্য।
কারণ, মহিলা সাহাবী রা.'রা রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'কে নামাযরত অবস্থায় দেখে না।
তাই তাঁদের দ্বারা রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র নামায দেখে নামায শিক্ষা করা সম্ভব নয়।

_________________________
আলবানীর অসাড় অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য।
_________________________
আশ্চর্যের কথা হল, উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ এবং উম্মতের মাঝে রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম'র জাহিরী যুগ থেকে পর্যায়ক্রমে চলে আসা এই সর্বসম্মত আমালের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেখুন,
আলবানী তার পুস্তক “সিফাতুস সালাতে” ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, “পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক”।
কিন্তু, এই দাবির পক্ষে তিনি না কোন আয়াত পেশ করেছেন, না কোন হাদিস। আর, কোন সাহাবী রা. বা তাবেয়ী র.'র ফাতাওয়া।
এরুপ বক্তব্যের ভিত্তি তিনি শুধু এটাকেই বানিয়েছেন যে,
পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নাই।
অথচ তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য উচিত ছিল উপরোল্লিখিত দলিল সমূহ বিশ্লেষণ করা।
কিন্তু তিনি তা না করে কেবল পার্থক্য সম্বলিত একটি হাদীসকে [যা বক্ষ্যমান নিবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে] শুধু এ কথা বলে যয়ীফ বলে আখ্যা দিয়েছেন যে, হাদীসটি ‘মুরসাল’। আর মুরসাল হওয়ায় এটি দুর্বল। এ ছাড়া অন্য কোন আলোচনাই তিনি দলীল সম্পর্কে করেননি।
এ হলো তার ছহীহ্-কে দ্বয়ীফ, আর দ্বয়ীফকে ছহিহ্ ; আর ছহিহ্'কে জাল কিংবা দ্বয়ীফ বলার প্রকৃত অবস্থা।
কিন্তু তার এই কথাটি এক গুয়েমি ছাড়া কিছু নয়।
কারণ, মুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট হাদিস মুরসাল হলেই তা অগ্রহণীয় হয়ে যায়না।
কেননা,
প্রথমত:
আয়িম্মায়ে দ্বীনের অধিকাংশের মতে বিশেষত স্বর্ণযুগের ইমামগণের নিকট যদি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী উপস্থিত থাকে তাহলে মুরসাল হাদিসও সহীহ হাদিসের মত গ্রহণযোগ্য।
স্মৃতব্য, আলবানী এ যুগের ব্যাক্তিত্ব আর ইছলামী ফিকাহ্'এ উস্তাদবিহীন গ্রন্থাগার ব্যক্তিগত অধ্যয়নকারী ছিলো।

দ্বিতীয়ত:
যে ইমামগণের নিকট ‘মুরসাল” হাদীসকে সহীহ বলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে তারাও মূলত কিছু শর্তের সাথে মুরসাল হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করার উপযোগী মনে করেন।
প্রবন্ধের শুরুতে বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাটিতেও সেসব শর্ত বিদ্যমান রয়েছে। যার কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান “আউনুল বারী”-(১/৫২০ দারুর রাশীদ, হালাব সিরিয়া) তে লিখেছেন,
“এই মুরসাল হাদীসটি সকল ইমামের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলীল হওয়ার যোগ্য”।
☆ তার পূর্ণ বক্তব্যটি দেখুন, আওনুল বারী-২/১৫৯।

পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা খুবই গর্হিত।
সেটি হলো,
তিনি বলেন, হাযরাত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. নাকি বলেছেন-
“মহিলা পুরুষের মতই নামায আদায় করবে”।
এই কথাটি নাকি ``মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা``তে আছে।
অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই।
আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।
যা হোক, ইতোপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা'র একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে হাযরাত ইবরাহীম নাখয়ী র. থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। যেখানে হাযরাত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. স্পষ্টই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।

তৃতীয়ত:
আলবানী তার নিজের দাবী প্রমাণ করার জন্য আরেকটি কাজ করেছে। সেটা হল, ইমাম বুখারী রহ.'র রিজালশাস্ত্রেরে একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি পেশ করেছে-
عنامالدرداءانهاكانتتجلسفىالصلاةجلسةالرجل-
“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন”।
আলবানী খেয়াল করতে পারেনি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়।
এক হওয়া নয়।
যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হতো, তাহলে “পুরুষের মত বসা” কথাটির কোন অর্থ থাকেনা।
তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মত মহিলারা বসতোনা।
কিন্তু তিনি যেহেতু ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।

আরেকটি মজার ব্যাপার হলো,
হাযরাত উম্মে দারদা র. হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী দলীল পেশ করলো।
অথচ আলবানিই উপরে উল্লেখিত প্রথম হাদিসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আশ্চর্য ব্যাপার! আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।

মনে রাখা জরুরী যে, তাবিয়ি'র কথা দালীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য।
এখন দেখুন,
যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতোপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গেছে।
আর, একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু, সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিলো।
এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আ'মালকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা।
বিশেষ করে যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট একথার ইংগিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।

_________________________
মাসয়ালার ব্যাপারে অনেকে একটি হাদীস থেকে দালীল দিয়ে থাকেন।
দালীলটি হল,
রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেন,
صلوا كما رأيتموني أصلي
তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবেই নামায পড়।
☆ ছহিহুল বুখারী।
এর জবাব হলো-
হাদিসটি ব্যাপক, মহিলা পুরুষকে আলাদা করে নাই।
হাদিসটি'র صلوا كما رأيتموني أصلي ব্যাপকতা দাবি করে: পুরুষ এবং মহিলার নামাজের আকৃতি একই রকম হবে।
আল্লাহ তায়ালা ক্বুরআ'নুল কারিমে বলেন,

ليس الذكر كالأنثى
(সুরা আলে ইমরান, ৩৬)
যার অর্থ- পুরুষ মহিলার মত নয়।
আয়াতের ব্যাপকতায় দাবি করে পুরুষ মহিলা কোন ক্ষেত্রেই একরকম হতে পারেনা।
মূল মাছয়ালা হলো :
ক্বুরআ'নুল কারিমের আয়াত ও হাদিস যত ব্যাপক হোক না কেন যদি মোহকাম না হয় তা হলে তা থেকে খাছ করা জায়েজ। কাজেই অমুক হাদিস ব্যাপক হওয়ায় তা থেকে দলিল দেয়া যাবেনা।
সুতরাং বুঝা গেল, নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা-এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
তথা-কথিত আহলে হাদিছদের বক্তব্যটির কোন দলিল নেই।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নেবার তৌফিক দান করুন।
আমীন! ছুম্মা আমীন! আমীন! ইয়া রব আমীন!
বেশুমার ছলাত ও ছালাম, রছুলে কারিম ছল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া ছাল্লাম, নূর নাবিজী'র প্রতি।
আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।
ওয়াল্লহু হুদাল্লিল মুত্তাকিন।

আরো পড়ুন, অবসরে পড়ার জন্যে Share করে রাখুন।
নামায / صلاوات
নোট :
০১.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729017340747037&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
০২.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729028937412544&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
০৩.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729030320745739&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
০৪.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729035960745175&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
০৫.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729041780744593&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
০৬.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729044500744321&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
০৭.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729045997410838&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
০৮.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729047414077363&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
০৯.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729053044076800&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১০.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729054860743285&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১১.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729056294076475&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১২.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729058344076270&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১৩.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729059464076158&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১৪.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729060824076022&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১৫.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729062754075829&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১৬.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729065247408913&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১৭.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729068104075294&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
১৮.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729070430741728&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
১৯.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729073010741470&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
২০.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729076520741119&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
২১.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729101377405300&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
২২.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729103390738432&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
২৩.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729105364071568&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
২৪.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729108850737886&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
২৫.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729112310737540&id=100009163649667&refid=17&__tn__=%2As
২৬.
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1729121184069986&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
▆ নামাযে পুরুষের "বুকের উপর হাত বাঁধা" পদ্ধতি ভিত্তিহীন ▆
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1728621234119981&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.

Top