��প্রসঙ্গ : ফিত্না বা বিশৃঙখলায় আহালূস সূন্নাহ্ হওয়া বা সূন্নাহ্ আঁকড়ে ধরে থাকা��

ক্বুরআ'ন ও সূন্নাহ্ হচ্ছে একজন মুসলিমের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

সূন্নাহর বিনাশ বা হাইজ্যাকিং এর মাধ্যমে একজন মুসলিমকে ইসলাম চ্যুত বা ইসলাম থেকে হাইজ্যাক করার ষড়যন্ত্রে ইসলামের দূষমনেরা হাজার বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যাদেরকে হাইজ্যাক করা হয় তাদের মাধ্যমেই তার ছেড়ে আসা খাঁটি ইসলামকে ধ্বংসে তাকেই ব্যবহার করা হয়। তার দ্বারা ভেজাল ইসলামের প্রচার প্রসারের কাজ করানো হয়।
যেমন করা হয়েছিল আরবের নজদ অঞ্চলের মুসলিম পরিবারের সন্তান``ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদী``-কে। এই কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিটিশ গুপ্তচর হ্যামফ্রের ব্যক্তিগত ডায়েরী অাবিষ্কৃত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহ্ বিষয়টি জানতে পারে।

তাদের এই চক্রান্তের পরবর্তী আবিষ্কার আলবানী। সে একজন ঘড়ির মিস্ত্রী হিসেবই প্রসিদ্ধ ছিলো।
সে আরবী ভাষাভাষী হওয়ার সুবাধে গ্রন্থাগারে নিজে নিজে কিতাব পাঠ করে যুগে যুগে সহীহ্ বা বিশুদ্ধ হিসেবে খ্যাত সহীহ্ বুখারী, সহীহ্ মুসলিম ইত্যাদী সহ অপরাপর সহীহ্ কিতাব খ্যাত ইসলামের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলোতে জাল হাদিস থাকার দাবী করে সেগুলোকে বদলে দেয়। সেগুলোর বিপরীতে সে প্রত্যেক সহীহ্ বা বিশুদ্ধ কিতাবকে মনগড়াভাবে দুইভাগ করে দেয়।
যেমন :
সহীহ্ কিতাব বা সিহাহ্ সিত্তাহ খ্যাত ৬টি কিতাবের প্রত্যেকটিকে দুই ভাগ করে ফেলা হয়। তার এই খণ্ড বিখণ্ডিত কিতাবকে অদৃশ্য গোষ্ঠীর অর্থায়নে ছাপানো হয়। অত:পর সেগুলোকে বিশ্বব্যপী প্রচার প্রসারের ব্যবস্থা করা হয়।

তার সমকালীন বিদগ্ধ Scholars (স্কলার্স) থেকে শুরু করে বর্তমান বিশ্ব বিখ্যাত Scholars-রাও অদৃশ্য অর্থায়নে মদদপুষ্ট তার এই কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করে যাচ্ছেন।

তার কর্মকাণ্ডের চিত্র :
শায়খ বুখারী রহ. এর সংকলিত কিতাব ``সহীহ্ বুখারী`` :
তার হস্তক্ষেপের পরে
০১. কিতাব সহীহ্ বুখারী
০২. কিতাব দ্বয়ীফ ও মওদ্বু বুখারী।
এই হলো হাজার বছর পরে তার হস্তক্ষেপের ফলে সৃষ্ট অবস্থা।

এভাবে প্রায় সকল সহীহ্ হাদিসের কিতাবে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সে হস্তক্ষেপ করতে সমর্থ হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান সমাজে ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা ধোঁকা দিচ্ছে, তারা ধোঁকা দেওয়ার জন্য এবং মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য একটা সহজ বুদ্ধি বের করে নিয়েছে।

বুদ্ধিটা হচ্ছে : জনসমাজে কোন হাদীস শরীফকে দ্বয়ীফ, জাল, মওজু, বানোয়াট ইত্যাদি বলে প্রচার করা।
আর প্রমাণস্বরুপ অদৃশ্য মদদপুষ্ট সেই আলবানীর Reference (রেফারেন্স) ব্যবহার করে মুসলমানদের ঈমান হাইজ্যাক করার প্রয়াস চালানো।

ইহার আগে তারা ইসলাম হাইজ্যাকিংএ কোন প্রকার Reference (রেফারেন্স) ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণ করতে পারছিল না।

যাহোক,
এইরুপ পরিস্থিতিতে উম্মাহ্'র অবশ্য করণীয় হচ্ছে :

ইসলামের ধারাবাহিক চর্চাকারি তথা সূন্নাহর আহাল বা আহলূস সূন্নাহর উলিল আমর উলামায়ে ক্বিরাম এর সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখা। অর্থাৎ তাঁদের নিসবাত (সম্পর্ক) থেকে কোন প্রকারেই বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
ইহাকে সূন্নাহর অনূসরণ বলা হয়।
ক্বুরআ'নুল কারিমে ইহাকে "কুনু মাআস সাদিকীন" বলা হয়েছে।

আর এই সূন্নাহ্ বা কুনু মাআস সাদিকীন এর ধারাবাহিকতা তথা ইসলামের ১৪০০ বছর ধরে সমাদৃত হাদিস ও ফিকাহ্ এর একনিষ্ঠ খাদিম মুহাদ্দিস সাহাবা, তাবিয়িন, তাবি-তাবিয়িন আয়ম্মায়ে গবেষক (মুজতাহিদিন)-গনের ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ, দারসে ক্বুরআ'ন, দারসে হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা; ও সালফে সালিহীনদের সীরাত সীরত্বল মুস্তাকিম তথা আহলূস সূন্নাহ্ ওয়াল জামাআ'হ্-এ অবিচল থাকা।

নুতন নুতন মুখরোচক, সুশ্রাব্য কিংবা হৃদয়গ্রাহী খই ফুঁটানো শায়ত্বনী যুক্তিপূর্ণ Lecture বা বক্তব্যও যদি হয় তা সম্পূর্ণরূপে বয়কট করা; সে সকল ব্যাক্তি থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।

মনে রাখবেন,
"জ্ঞানীকুলের আপোষহীনরা ব্যতীত জ্ঞান পাপীদের ধোঁকাবাজি সাধারন্যে অমৃতফল"।

এখন আসুন,
রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর একটি প্রসিদ্ধ হাদিস কারিম দেখা যাক :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُتَمَسِّكُ بِسُنَّتِي عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِي لَهُ أَجْرُ شَهِيدٍ
ذكر الحديث ابن عدي في كتابه الكامل، ورواه البيهقي في كتابه الزهد الكبير، وذكره الذهبي في كتابه ميزان الاعتدال.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেছেন : উম্মতের বিশৃংখলার সময় যে ব্যক্তি আমার সূন্নাহ্-কে আঁকড়ে ধরবে, সে ব্যক্তি একশত শহীদের সওয়াব পাবে।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আজ জুহদুল কাবীল লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২০৭,
*_* আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-৬৫,
*_* মেশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১৭৬।

এছাড়া হাদীসটি
০১. ইবনে আদী রহঃ তাঁর "আলকামেল" গ্রন্থে এবং
০২. আল্লামা যাহাবী রহঃ তাঁর "মীযানুল ইতিদাল" গ্রন্থে এনেছেন।

এই হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কেরামের মন্তব্য :
০১.
আল্লামা মুনজিরী রহঃ বলেন, এর সনদ সহীহ বা হাসান এর দুয়ের কাছাকাছি।
*_* আততারগীব ওয়াত তারহীব-১/৬১।
০২.
আল্লামা ইবনে আদী রহঃ বলেন, যদিও এর সনদে হাসান বিন কুতাইবা রয়েছে, তবু মনে হচ্ছে এতে কোন সমস্যা নেই।
*_* আলকামেল ফিজ জুআফা-৩/১৭৪।

এই বক্তব্যের কাছাকাছি বক্তব্যের আরেকটি হাদীস রয়েছে। যা গ্রহণযোগ্য হাদীস।
كثير بن عبد الله عن أبيه عن جده قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ( من أحيا سنة من سنتي قد أميتت بعدي فإن له من الأجر مثل أجر من عمل بها من الناس لا ينقص من أجور الناس شيئا . ومن ابتدع بدعة لا يرضاها الله ورسوله فإن عليه مثل إثم من عمل بها من الناس لا ينقص من آثام الناس شيئا
হযরত কাসীর বিন আব্দুল্লাহ তাঁর পিতা, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) কে বলতে শুনেছেন যে, যে ব্যক্তি আমার পর আমলহীন (ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যাওয়া বা জারী না থাকা) আমার কোন সূন্নাহকে জিন্দা করবে, তাহলে তাঁকে দেখে যারা আমল করবে তাঁদের আমলের সওয়াবের মতই সে সওয়াব প্রথম ব্যক্তিকে দেয়া হবে। দ্বিতীয় আমলকারীর সওয়াবের মাঝে কোন কমতি ছাড়াই।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২১০,
*_* সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৭৭,
*_* মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৩৮৫,
*_* মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-২৮৯।

আল্লাহ্ সূবহানাহু ওয়া তা'আলার সর্বকালীন ইরশাদ (পথ প্রদর্শন) :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর জন্য তাক্বওয়া (আল্লাহর সন্তুষ্টির স্মরণে সর্বদা ন্যায়ের পথ অবলম্বন) চর্চা কর এবং সত্যবাদীদের সাথী হয়ে যাও।'
*_* সূরাহ্ আত তাওবা, আয়াত ১১৯।

তাক্বওয়া চর্চাকারি আর সাদিকীন-দের সাথীদের শায়ত্বনী চক্র কিছুই করতে পারে নি, পারবেও না।

____________
▆ প্রসঙ্গ : মাযহাব না মানলে বুখারী, মুসলিম মানা যায় না।
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1680169845631787

▆ মাযহাব মানলে মুশরিক হয় না; যাদের হাত ধরে ইসলাম তাঁরা সকলেই মাযহাবভূক্ত।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1666045127044259

▆ প্রসঙ্গ : সূন্নাহ্ মান্য; হাদিস নয়। সকল হাদিস, সূন্নাহ্ নয়।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1680658558916249

▆ মাযহাব এত কেন।
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1743491289299642

▆ প্রসঙ্গ : সহীহ্-যয়ীফ নির্ধারণে তাহকিক আসলে কী।
https://www.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1688604351455003

▆ প্রসঙ্গ : দ্বীনের বুঝ (ফিক্বাহ্) অর্জনকারীদের অনূসরণ।
https://m.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1681989658783139

 
Top