আলবানীর হাদিস বিষয়ক তদন্ত তাহকিক অগ্রহণযোগ্য কেন তার আলোচনা।
যারা আলবানী এর অন্ধানুসারী তারা আলবানীর তাহকীকের অবস্থা সম্পর্কে অবগত নন, তারা কখনও বিষয়টি যাচাই করে দেখার প্রযোজনীয়তা অনুভব করে না।
তারা অন্যদেরকে অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করলেও এদের মধ্যে যে পরিমাণ অন্ধ অনুসরণ ও গোঁড়ামী দেখা যায়, তা অন্য কারও মাঝে পরিলক্ষিত হয় না। তাদের ভাবখানা এমন যেন আলবানী কোন ভুলই করতে পারে না।
অন্যের নামে অপপ্রচারে লিপ্ত না হয়ে নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেয়ার চেষ্টা অনেক কল্যাণকর।
হাদিস বিষয়ে আলবানীর তাহকীক তদন্তের প্রকৃত অবস্থা
______________
১.
উদা বিন হাসান উদা ৫০০ হাদীসের একটি সঙ্কলন বের করেছেন। এই কিতাবে যে ৫০০ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো মুলত: আলবানী সাহেবের তারাজু বা পূর্বের মতামত থেকে ফিরে আসার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ আলবানী পূর্বে একটা হাদীসকে সহীহ বলেছে, পরে আবার মত পরিবর্তন করে সেটাকে যয়ীফ বলেছে। এধরনের রুজু দু'একটি হাদীসে ঘটেনি। এখানে মোট পাঁচ' শ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
এই কিতাবটি আলবানী এর নিজস্ব ওযেস সাইট আলবানী ডট নেটে পাওয়া যায়।
নিচের লিংক থেকে ডাউন লোড করুন।
http://www.alalbany.net/?p=5282
২.
আবুল হাসান মুহাম্মাদ হাসান আলবানী এর রুজু বা পূর্বের মতামত পরিবর্তনের উপর একটি সঙ্কলন বের করেছন। এখানেও ৩০০ এর বেশি হাদীসের উপর আলোচনা করা হয়েছে।
এ কিতাবটি আলবানী ডট কমে পাওয়া যাবে।
নিচের লিংক থেকে ডাউন লোড করুন।
http://www.alalbany.net/?p=5262
৩.
আলবানী এর তারাজু নিয়ে লেখা আরেকটি কিতাব হলো, আত-তাম্বিহাতুল মালিহা আলা মা তারাজায়া আনহুল আল্লামা আল-আলবানী।
এটি নিচের লিংক থেকে ডাউন লোড করুন।
এ কিতাবেও আলবানী এর সহীহ ও যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে পূর্বের মত পাল্টানো সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং আলবানী এর রুজু করা হাদীস সঙ্কলন করা হযেছে।
কিতাবটির ডাউনলোড লিংকঃ
http://www.alalbany.net/?p=5043
৪.
আলবানী পূর্বের অবস্থান থেকে ফেরার পাশাপাশি প্রচুর স্ববিরোধীতায় লিপ্ত হযেছে। একই রাবীকে কোথাও যয়ীফ, কোথাও সহীহ বলেছে।
একই হাদীসকে কোথাও সহীহ এবং কোথাও সহীহ নয় বলাকে তানাকুয বা স্ববিরোধীতা বলে। আলবানী এতো বেশি পরিমাণ স্ববিরোধীতা করেছে যে, এ বিষয়ে সে অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
একজন সুস্থ ধারার মুহাদ্দিস দু'একটি হাদীসের ক্ষেত্রে এমন করতে পারেন, কিন্তু সে শত শত হাদীসের ক্ষেত্রে এধরণের স্ববিরোধতিা করেছে।
শায়খ হাসান বিন আলী আস-সাক্কাফ আলবানী এর এ ধরণের স্ববিরোধীতার উপর কিতাব লিখেছেন। কিতাবের নাম, তানাকুযাতুল আলবানিল ওয়াজিহাত। এটি তিন খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তিন খন্ডে আলবানী এর মোট ১৩০০ স্ববিরোধী বক্তব্য উল্লেখ করা হযেছে।
লেখক দাবী করেছেন, আমি আলবানী এর মোট ৭০০০ (সাত হাজার) স্ববিরোধী বক্তব্য পেয়েছি। এই তিন খন্ডে আমি ১৩০০ বক্তব্য প্রকাশ করেছি। বাকীগুলো তিনি আস্তে আস্তে প্রকাশ করবেন।
লেখক তার বইয়ের কভার পেজে এই পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছেন।
৫.
শায়খ সাইদ আল মামদুহ আলবানী এর সহীহ ও যয়ীফ এর উপর তুলনামূলক আলোচনা করে ইলমুল হাদীসের আঙ্গিকে আট 'শ হাদীসের ব্যাপারে আলবানী এর ভুল ধরেছেন। অর্থাৎ একটা হাদীস আলবানী এর নিকট যয়ীফ, কিন্তু সেটি বাস্তবে সহীহ আবার একটি হাদীসকে আলবানী সহীহ বলেছে, বাস্তবে সেটি যয়ীফ, এ জাতীয় আট শ হাদীসের উপর আলোচনা করেছেন।
তিনি এর উপর, আত-তা'রীফ বিআওহামি মান কাস সামাস সুনান ইলা সহীহ ও যয়ীফ নামে ছয় খন্ডের কিতাব লিখেছেন। প্রত্যেক খণ্ডই প্রায় ৫০০ পৃ. এর উপরে।
৬.
শায়খ হাম্মাদ বিন হাসান আল-মিসরী ৩০০ শ এর বেশি রাবীর জীবনী আলোচনা করেছেন, যাদের ব্যাপারে আলবানীর মতামত রয়েছে যে, "তাদের কোন জীবনী কোন কিতাবে পাইনি অথবা তারা অপরিচিত", অথচ তাদের জীবনী আলবানী যে কিতাবে দেখেছে বলেছে তাতে বিদ্যমান রয়েছে এবং তারা পরিচিত রাবী।
তিনি নাম্বার সহ প্রত্যেক রাবীর নাম ও তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছেন। নিচের সাইটে তার আলোচনা গুলো পাওয়া যাবে।
http://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t=316200
আলবানী এর ভুল-ভ্রান্তি বিশ্লেষণ করে বাজারে নিয়মিত নতুন নতুন বই আসছে। এর অধিকাংশ বইয়ের লেখক আলবানী এর ছাত্র ও তথাকথিত সালাফী ঘরানার আলেম।
সুতরাং এ সমস্ত ভুলের ব্যাপারে অবগত না হয়ে অন্ধভাবে, যাচাই-বাছাই ছাড়া আলবানী এর রেফারেন্সকারীরা তার এই অনুসরণ করছে; সে কারণে তাদেরকে অন্ধ অনুসারী বলা ছাড়া অন্য শব্দ এখানে যথার্থ বোধ করি না।