নামধারী আহলে হাদিস মতবাদ ক্বুরআন সুন্নাহ্ ও মক্কা মদিনা বিরোধী।
শিক্ষাপ্রদ কথোপকথনঃ
লোকটি খুবই পেরেশান হয়ে গেল। বিপদের মুহূর্তে মূল আলোচ্য বিষয় অন্য দিকে কথা ঘুরানোর ক্ষেত্রে এই ফেরকাটি উস্তাদ। তিনি বললেন, আমাদের দ্বীন মক্কা-মদীনার। আপনারা কুফার দ্বীন পালন করেন।
আমি বললাম, আপনাদের বড় ভাই আহলে কুরআনও একই কথা বলে। তারা বলে, আমাদের ইসলাম হলো মক্কা-মদীনার। কারণ, কুরআনের কিছু সূরা মক্কী (মক্কায় অবতীর্ণ), কিছু সূরা মাদানী (মদিনায় অবতীর্ণ)। কুরআনের বিপরীতে সিহাহ সিত্তার একটি কিতাব মক্কা-মদীনার কেউ লেখেনি। আপনাদের বিরুদ্ধে আহলে কুরআনদের যুক্তিটা বেশ শক্তিশালী মনে হচ্ছে।
আমি আরও বললাম, আপনারা তো বিখ্যাত তাবে-তাবেয়ী মদীনার আলেম ইমাম মালেক রহ. এর লেখা হাদিসের কিতাবকেও সিহাহ সিত্তা থেকে বের করে দিয়েছেন, অথচ আমাদের কুফার ইমাম উক্ত কিতাব ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেছেন। আপনি ইমাম মহাম্মাদ রহ. এর মুয়াত্তা দেখুন।
বড় আশ্চর্যের বিষয়, যারা মদীনার ইসলাম বর্ণনা করে, তাদের দ্বীন মদীনার হয় না, অথচ যারা মদীনার কিতাবের কোন গুরুত্বই দেয় না, তাদের ইসলাম মক্কা-মদীনার হয়ে যায়।
মদিনাবাসীর বিরোধিতা:
আসুন দেখি, আপনাদের মদীনার ইসলামের কী অবস্থা।
১. আপনাদের নিকট শুধু পাগড়ির উপরও মাসেহ করা জায়েজ। মদীনার ইমাম মালেক রহ. বলেন, শুধু পাগড়ির উপর মাসেহ জায়েজ নয়। এমনকি মালেকী মাযহাব অনুযায়ী শুধু পাগড়ির উপর মাসেহ করলে নামাজ হবে না। দেখুন, মদীনাবাসীরা আপনাদের ওযুও মানে না, আপনাদের নামাযকেও বিশুদ্ধ বলে না।
২. ইমাম মালেক রহ. তায়াম্মুমের পদ্ধতি বর্ণনা করে লিখেছেন, একবার মাটিতে হাত লাগিয়ে মুখ মাসেহ করবে। দ্বিতীয়বার হাত লাগিয়ে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। আপনারা মদিনাবাসীর মাজহাব ছেড়ে বোখারার মাজহাব গ্রহণ করেছেন। আপনাদের নিকট হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করা যথেষ্ট এবং একবার মাটিতে হাত লাগিয়ে একই সঙ্গে মুখ ও হাত মাসেহ করতে হবে।
৩. ইমাম মালেক রহ. এর মাজহাব হলো, নামাজে হাত ছেড়ে রাখবে। অথচ আপনাদের দাবি হলো, রাসূল স. সর্বদা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কনুই ধরে বুকের উপর রাখেন। এই মাযহবটি কোন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। মদীনাবসীর কারও আমল দ্বারাও প্রমাণিত নয়।
৪. আপনারা বলে থাকেন, উচ্চ আওয়াজ বিশিষ্ট নামাজে মুসল্লী ইমামের পিছে সূরা ফাতিহা না পড়লে নামাজ হবে না। অথচ ইমাম মালেক রহ. বলেন, উচ্চ আওয়াজ বিশিষ্ট নামাজে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়বে না।
৫. ইমাম মালেক রহ. বলেন, মুক্তাদী আমীন আস্তে বলবে। ইমাম আমীন বলবে না। একাকী নামাজে আমীন বলার অনুমতি রয়েছে। অথচ আপনাদের নিকট ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে উঁচু আওয়াজে আমীন বলবে। গুরাবায়ে আহলে হাদিসদের ইমাম মুফতী আব্দুস সাত্তার লিখেছে, যে অপরিণামদর্শী ও ফেতনাবাজ উঁচু আওয়াজে আমীন এর প্রতি বিরূপ মনোভাব রাখে এবং যারা উঁচু আওয়াজে আমীন বলে, তাদের প্রতি হিংসা রাখে, সে নি:সন্দেহে একজন ইহুদী।
৬. ইমাম মালেক রহ. এর মাজহাব হলো, মহিলারা নামাজে সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়াবে। রান ও বাহু মিলিয়ে রাখবে। সুতরাং মহিলারা রুকু ও সিজদায় খুবই সঙ্কুচিত হয়ে নামাজ আদায় করবে। অথচ আপনাদের বক্তব্য হলো মহিলা-পুরুষের নামাজে কোন পার্থক্য নেই। এরপরও কোন মুখে দাবি করেন যে, আমাদের ইসললাম মক্কা-মদীনার?
৭. মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক, পৃ.৭ ও পৃ.১৪৯ আছে, যে ব্যক্তি জামাতের নামাজে ইমামের সঙ্গে রুকুতে শরীক হবে সে ঐ রাকাত পাবে। অথচ আপনারা বলেন, সে রাকাত পাবে না।
৮. ইমাম মালেক রহ. এর মাজহাব হলো, ইমাম ফজরের নামাজ শুরু করলে আগন্তুক বিতর নামাজ পড়তে পারবে। অথচ আহলে-হাদিসরা মদিনাবাসীর এই মাসআলাকে ভুল বলে থাকে।
৯. ইমাম মালেক রহ. বলেন, তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া নামাজে হাত উঠানোর বিষয়ট দুর্বল। তিনি আরও বলেন, আমি নামাজে রফয়ে ইয়াদাইন করে এমন কাউকে চিনি না। অথচ আহলে হাদিসরা এই মাসআলায় কী পরিমাণ চ্যালেঞ্জবাজী করে থাকে, তা কারও অজানা নয়।
১০. ইমাম মালেক রহ. এর বিশিষ্ট ছাত্র আব্দুর রহমান ইবনুল কাসেম বলেন, জানাযার নামাজে প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য তাকবীরে হাত উঠানো বৈধ নয়। অথচ আপনাদের মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী বলেন, জানাযার নামাজে প্রত্যেক তাকবীরে হাত উঠানো মুস্তাহাব।
১১. ইমাম মালেক রহ. বলেন, জানাযার নামাজে কুরআন পাঠের কোন রীতি আমাদের শহরে নেই। জানাযার নামাজ শুধু দোয়া। আমার শহরের আলেমগণকে এ মতের উপরই পেয়েছি। অথচ আহলে হাদিসদের বক্তব্য হলো, ইমাম অথবা মুক্তাদী যদি জানাযার নামাজে সূরা ফাতিহা না পড়ে, তবে নাময বাতিল হয়ে যাবে।
১২. জানাযার নামাজ অনুচ্চ স্বরে কিরাত পাঠের সমগ্র মুসলিম উম্মাহ একমত। এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। অথচ সমগ্র মুসলিম উম্মাহের বিরোধিতা করে আহলে হাদিসরা বলে জানাযার নামাজে উচ্চ স্বরে কেরাত পড়া সুন্নত।
১৩. ইমাম মালেক রহ. বলেন, আমি মসজিদে জানাযা রাখা মাকরুহ মনে করি। অথচ আহলে হাদিসদের বক্তব্য হলো, মসজিদে জানাযা রাখা সুন্নত এবং এর অস্বীকার একটি সুন্নতের বিরোধিতা।
১৪. ইমাম মালেক রহ. এক রাকাত বিতর সম্পর্কে বলেন, আমাদের এখানে এক রাকাত বিতরের উপর কোন আমল নেই। বিতর নামাজ কমপক্ষে তিন রাকাত হতে হবে। অথচ এর বিপরীতে আহলে হাদিসরা বলে তিন রাকাত বিতর পড়া জায়েজ নয়।
১৫. ইমাম মালেক রহ. পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেন যে, ঘোড়া হালাল নয়। অথচ আহলে হাদিসরা প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘোড়া কুরবানি দিয়ে থাকে।
১৬. ইমাম মালেক রহ. এর নিকট কুরবানি দেয়ার বৈধ সময় হলো তিন দিন। অথচ আহলে হাদিসরা চতুর্থ দিনেও কুরবানি করে থাকে।
১৭. ইমাম মালেক রহ. বলেন, রমজানের পরে শাওয়াল মাসের ছয় রোযা আমি কোন আলেম ও ফকিহকে রাখতে দেখিনি। সালাফে-সালেহিন থেকে এ রোযা রাখার ব্যাপারে আমার কাছে কোন বক্তব্য পৌঁছেনি। বরং উলামায়ে কেরাম একে মাকরুহ মনে করেন। মূর্খ লোকেরা একে রমজানের সাথে মিলিয়ে ফেলবে এই আশঙ্কায় তারা একে বিদয়াত হওয়ার ভয় করেন। অথচ আহলে হাদিসরা এ বিষয়ে জোর প্রচার চালিয়ে থাকে।
১৮. ইমাম মালেক রহ. খিয়ারে মজলিসের হাদিস উল্লেখ করে লিখেছেন, وليس لهذا عندنا حد معروف لا أمر معمول به فيه অর্থাৎ আমাদের নিকট খিয়ারে মজলিশের নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। এর উপর আমাদের আমলও নেই। অথচ এ বিষয়ে আহলে হাদিসরা খুব প্রচার চালিয়ে থাকে।
১৯. ইমাম মালেক রহ. এর নিকট একই সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক হবে। অথচ গাইরে মুকাল্লিদরা এটা কোনভাবেই মানে না।
২০. ইমাম মালেক রহ. বিশ রাকাত তারাবীহের সাথে ১৬ রাকাত নফল নামাজের প্রবক্তা। অথচ আহলে হাদিসরা এটা কোনভাবেই মানে না।
আমি বললাম, মদিনাবাসীর সাথে আপনাদের ওজু, তায়াম্মুম, নামাজ, জানাযার নামাজ, হালাল-হারাম, ও বিবাহ-তালাকের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। অথচ আপনারা সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে থাকেন যে, আমাদের দ্বীন হলো মদিনাবাসীর দ্বীন। অথচ এ ধরনের নিরেট মিথ্যা কথা বলার ক্ষেত্রে আপনাদের একটুও কি চিন্তা হয় না যে, আমাদেরকে আল্লাহর নিকট প্রত্যেক শব্দের হিসেব দিতে হবে। সেখানে টাকা-পয়সা বা গলাবাজী চলবে না। এখনও তওবার পথ খোলা আছে। আল্লাহ তায়ালার রহমত গোনাহগার বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্য আহ্বান করছে।
মদীনা ও ইলমী কিতাব:
দ্বীনের পরিপূর্ণ বিষয়ে আপনাদের এমন একটা কিতাবও নেই যা মক্কা-মদিনায় লেখা হয়েছে। কুফায় সেসব সাহাবীর মাধ্যমে দ্বীন এসেছে, যারা মক্কা-মদিনা থেকে দ্বীন নিযে এসেছিলেন। আল্লামা আলাউদ্দীন আল-হাসকাফী রহ. রাসূল স. এর পবিত্র রওজার পাশে বসে দ্বীনের একটা পূর্ণাঙ্গ কিতাব আদ-দুররুল মুখতার লিখেছেন। এ কিতাবে তিনি লিখেছেন, কুরআনের পরে ইমাম আবু হানিফা রহ. রাসূল স. এর একটি বড় মু’জেযা। এটা প্রমাণের জন্য এই একটা দলিলই যথেষ্ট যে, পুরো বিশ্বে তাঁর মাজহাব সবচেয়ে বিস্তৃত। দ্বিতীয় দলিল হলো, ইমাম আবু হানিফা রহ. এর প্রত্যেকটি কথা কোন না কোন ইমাম গ্রহণ করেছেন। তৃতীয় দলিল হলো, ইমাম আবু হানিফা রহ. এর পর থেকে এ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের বিচার কার্য ইমাম আবু হানিফা রহ. এর অনুসারীদের দ্বারাই পরিচালিত হয়েছে। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, একটি ঐতিহাসিক সত্য হলো আব্বাসী খেলাফতের প্রায় ৫০০ বছর মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ কাজি ও বিচারক ছিলেন হানাফি মাজহাবের। পরবর্তী সালজুক ও খাওয়ারেজমী সকলেই হানাফি ছিলো। উসমানি খেলাফত হানাফি মাজহাবের আলোকে পরিচালিত হয়েছে। ইবনে আবেদীন শামী রহ. এর সময় পর্যন্ত প্রায় নয় শ বছর উসমানী খেলাফত হানাফি মাজহাব অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে। শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ. বলেন, সমস্ত শহরের বাদশাহ ও কাজি হানাফি ছিলো। অধিকাংশ শিক্ষক ও অধিকাংশ জনগণ ছিলো হানাফি। মোটকথা হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় বার শ’ বছর হারামাইন শরীফাইনের খাদেম ছিলো হানাফি মাজহাবের। এরপর, এখনও পর্যন্ত হাম্বলীরা খাদেম রয়েছে। আহলে কুরআন বা আহলে হাদিস কাউকে আল্লাহ তায়ালা রাজত্ব দিয়ে হারামাইন শরীফাইনের খেদমত করার সুযোগ দেননি। তাদের খেদমত তো দূরে থাক, এই পবিত্র শহরে তাদের কোন অস্তিত্বও ছিলো না।
মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরীর সত্যের স্বীকৃতি:
আহলে হাদিসদের শাইখুল ইসলাম মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী ২০ অক্টোবর, ১৯৩৩ তার আখবারে আহলে হাদিস অমৃতসর শীর্ষক পত্রিকায় একটি বিবৃতি প্রদান করেন। তিনি বলেনে, মুসলিম ভাইয়েরা, অধিকাংশ আহলে হাদিস অবগত রয়েছে যে, মাওলানা আহমাদ সাহেব দেহলবী সাত-আট বছর যাবৎ মদিনায় অবস্থান করছেন। আপনি যখন সেখানে যাবেন, এই পবিত্র নগরীতে কোন আহলে হাদিস খুঁজে পাবেন না। এই শহরে তাদের কোন মাদ্রাসা নেই, কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এমনকি উল্লেখযোগ্য কোন কাজে তাদের কোন অবদান নেই। সেখানে আহলে হাদিসদের কোন আলোচনা নেই। এমনকি কোন নাম-গন্ধও নেই। সেখানে গেলে মনে হয়, শত শত বছর ধরে এই নগরী আহলে হাদিস শূন্য। এ অবস্থা দেখে অন্তরে খুব ব্যথা লাগলো। অত্যন্ত দু:খ পেলাম যে, ইসলামের মূল কেন্দ্র, রাসূল স. এর অবস্থানের জায়গা, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মানুষ যেখানে একত্রিত হয়, সেখানে আহলে হাদিসদের কোন নাম-গন্ধও নেই, তাদের কোন আলোচনা নেই। কতোটা লজ্জার কথা, আমরা তো স্ন্নুতের দাবি করে থাকি, অথচ রাসূল স. এর ঘর মদিনা তৈয়্যেবায় এই সুন্নতের দাওয়াতের কোন চিহ্ন নেই। আফসোস। ইন্নালিল্লাহ।
একইভাবে মক্কায় তাদের প্রথম মাদ্রাসা দারুল হাদিস মুহাম্মাদিয়া ১২ রবিউল আওয়াল ১৩৫২ হি: প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলো, আব্দুল হক্ব নুনারী। এ থেকে স্পষ্ট, যেমন গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ফেতনা, পারভেজী ফেতনা হিন্দুস্তান থেকে আরব বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছে, একইভাবে আহলে হাদিস মতবাদও হিন্দুস্তান থেকে আরবে গিয়েছে। কাদিয়ানী ও আহলে কুরআন এর এই দাবি চরম মিথ্যাচার যে, তাদের মতবাদ আরব থেকে উৎসারিত, তেমনি আহলে হাদিসদের এই দাবিও একটি নিরেট মিথ্যা যে, তাদের মতবাদ হিজায থেকে এসেছে।
আমি তাকে বললাম, মক্কা-মদীনার সাথে আপনাদের তো ততটুকু সম্পর্কও ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত নয়, যতটুকু ওখানকার মূর্তিপূজকদের রয়েছে। কেননা, তাদের থেকে অন্তত মূর্তিপূজা অন্যত্র ছড়িয়েছে। আপনি ইসলামের পুরো সাড়ে তের শ বছরের ইতিহাসে মক্কা-মদিনায় এমন একজন বাদশাহ, কাজি, মসজিদে হারাম বা মসজিদে নববির একজন ইমামকেও দেখাতে পারবেন না যে, সে মুজতাহিদ না হওয়া সত্ত্বেও তাকলীদ ছেড়ে দিয়ে লা-মাযহাবী ছিলো। ইজতেহাদকে ইবলীসের কাজ, আর মুজতাহিদের অনুসরণকে শিরক বলতো। থাকলে ঐতিহাসিক প্রমাণসহ পেশ করুন।
দ্বীনের পরিপূর্ণ বিষয়ে আপনাদের এমন একটা কিতাবও নেই যা মক্কা-মদিনায় লেখা হয়েছে। কুফায় সেসব সাহাবীর মাধ্যমে দ্বীন এসেছে, যারা মক্কা-মদিনা থেকে দ্বীন নিযে এসেছিলেন। আল্লামা আলাউদ্দীন আল-হাসকাফী রহ. রাসূল স. এর পবিত্র রওজার পাশে বসে দ্বীনের একটা পূর্ণাঙ্গ কিতাব আদ-দুররুল মুখতার লিখেছেন। এ কিতাবে তিনি লিখেছেন, কুরআনের পরে ইমাম আবু হানিফা রহ. রাসূল স. এর একটি বড় মু’জেযা। এটা প্রমাণের জন্য এই একটা দলিলই যথেষ্ট যে, পুরো বিশ্বে তাঁর মাজহাব সবচেয়ে বিস্তৃত। দ্বিতীয় দলিল হলো, ইমাম আবু হানিফা রহ. এর প্রত্যেকটি কথা কোন না কোন ইমাম গ্রহণ করেছেন। তৃতীয় দলিল হলো, ইমাম আবু হানিফা রহ. এর পর থেকে এ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের বিচার কার্য ইমাম আবু হানিফা রহ. এর অনুসারীদের দ্বারাই পরিচালিত হয়েছে। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, একটি ঐতিহাসিক সত্য হলো আব্বাসী খেলাফতের প্রায় ৫০০ বছর মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ কাজি ও বিচারক ছিলেন হানাফি মাজহাবের। পরবর্তী সালজুক ও খাওয়ারেজমী সকলেই হানাফি ছিলো। উসমানি খেলাফত হানাফি মাজহাবের আলোকে পরিচালিত হয়েছে। ইবনে আবেদীন শামী রহ. এর সময় পর্যন্ত প্রায় নয় শ বছর উসমানী খেলাফত হানাফি মাজহাব অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে। শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ. বলেন, সমস্ত শহরের বাদশাহ ও কাজি হানাফি ছিলো। অধিকাংশ শিক্ষক ও অধিকাংশ জনগণ ছিলো হানাফি। মোটকথা হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় বার শ’ বছর হারামাইন শরীফাইনের খাদেম ছিলো হানাফি মাজহাবের। এরপর, এখনও পর্যন্ত হাম্বলীরা খাদেম রয়েছে। আহলে কুরআন বা আহলে হাদিস কাউকে আল্লাহ তায়ালা রাজত্ব দিয়ে হারামাইন শরীফাইনের খেদমত করার সুযোগ দেননি। তাদের খেদমত তো দূরে থাক, এই পবিত্র শহরে তাদের কোন অস্তিত্বও ছিলো না।
মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরীর সত্যের স্বীকৃতি:
আহলে হাদিসদের শাইখুল ইসলাম মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী ২০ অক্টোবর, ১৯৩৩ তার আখবারে আহলে হাদিস অমৃতসর শীর্ষক পত্রিকায় একটি বিবৃতি প্রদান করেন। তিনি বলেনে, মুসলিম ভাইয়েরা, অধিকাংশ আহলে হাদিস অবগত রয়েছে যে, মাওলানা আহমাদ সাহেব দেহলবী সাত-আট বছর যাবৎ মদিনায় অবস্থান করছেন। আপনি যখন সেখানে যাবেন, এই পবিত্র নগরীতে কোন আহলে হাদিস খুঁজে পাবেন না। এই শহরে তাদের কোন মাদ্রাসা নেই, কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এমনকি উল্লেখযোগ্য কোন কাজে তাদের কোন অবদান নেই। সেখানে আহলে হাদিসদের কোন আলোচনা নেই। এমনকি কোন নাম-গন্ধও নেই। সেখানে গেলে মনে হয়, শত শত বছর ধরে এই নগরী আহলে হাদিস শূন্য। এ অবস্থা দেখে অন্তরে খুব ব্যথা লাগলো। অত্যন্ত দু:খ পেলাম যে, ইসলামের মূল কেন্দ্র, রাসূল স. এর অবস্থানের জায়গা, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মানুষ যেখানে একত্রিত হয়, সেখানে আহলে হাদিসদের কোন নাম-গন্ধও নেই, তাদের কোন আলোচনা নেই। কতোটা লজ্জার কথা, আমরা তো স্ন্নুতের দাবি করে থাকি, অথচ রাসূল স. এর ঘর মদিনা তৈয়্যেবায় এই সুন্নতের দাওয়াতের কোন চিহ্ন নেই। আফসোস। ইন্নালিল্লাহ।
একইভাবে মক্কায় তাদের প্রথম মাদ্রাসা দারুল হাদিস মুহাম্মাদিয়া ১২ রবিউল আওয়াল ১৩৫২ হি: প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলো, আব্দুল হক্ব নুনারী। এ থেকে স্পষ্ট, যেমন গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ফেতনা, পারভেজী ফেতনা হিন্দুস্তান থেকে আরব বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছে, একইভাবে আহলে হাদিস মতবাদও হিন্দুস্তান থেকে আরবে গিয়েছে। কাদিয়ানী ও আহলে কুরআন এর এই দাবি চরম মিথ্যাচার যে, তাদের মতবাদ আরব থেকে উৎসারিত, তেমনি আহলে হাদিসদের এই দাবিও একটি নিরেট মিথ্যা যে, তাদের মতবাদ হিজায থেকে এসেছে।
আমি তাকে বললাম, মক্কা-মদীনার সাথে আপনাদের তো ততটুকু সম্পর্কও ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত নয়, যতটুকু ওখানকার মূর্তিপূজকদের রয়েছে। কেননা, তাদের থেকে অন্তত মূর্তিপূজা অন্যত্র ছড়িয়েছে। আপনি ইসলামের পুরো সাড়ে তের শ বছরের ইতিহাসে মক্কা-মদিনায় এমন একজন বাদশাহ, কাজি, মসজিদে হারাম বা মসজিদে নববির একজন ইমামকেও দেখাতে পারবেন না যে, সে মুজতাহিদ না হওয়া সত্ত্বেও তাকলীদ ছেড়ে দিয়ে লা-মাযহাবী ছিলো। ইজতেহাদকে ইবলীসের কাজ, আর মুজতাহিদের অনুসরণকে শিরক বলতো। থাকলে ঐতিহাসিক প্রমাণসহ পেশ করুন।