▆নামাযে বুকের উপর পুরুষের হাত রাখা পদ্ধতি বাতীল : আহলে হাদিস গায়রে মুকাল্লিদ সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিকট এ নিয়ম "শায" ও বিচ্ছিন্নতা।
[আহলুস সূন্নাহর বিপরীতে আহলে হাদিস সম্পদ্রায়ের আপত্তি সমূহের জবাব]▆

সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে হাত বাঁধার দুটো নিয়ম চলে আসছে :
যথা :
০১. বুকের নীচে হাত বাঁধা,
০২. নাভীর নীচে হাত বাঁধা।
মুসলিম উম্মাহর বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণও এ দুটো নিয়ম গ্রহণ করেছেন।
নিকট অতীতে ব্রিটিশ উপনিবেশকালের শেষের দিকে হাত বাঁধার নতুন কিছু নিয়ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল না এবং কুরআন-সুন্নাহর প্রাজ্ঞ মনীষী ও মুজতাহিদগণের সিদ্ধান্তেও তা পাওয়া যায় না।
বলাবাহুল্য,
এসব নিয়ম ‘শুযুয’ ও বিচ্ছিন্নতা বলে গণ্য, যা দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়ে সম্পূর্ণ বর্জনীয়।
কিন্তু
দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে,
সম্প্রতি এইসব বিচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতাকেই ‘সুন্নাহ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং চরম দায়িত্বহীনতার সাথে সাধারণ মানুষের মাঝেও তা প্রচার করা হচ্ছে।
আমরা মনে করি,
সাধারণ মুসলমানদেরকে দলীল-প্রমাণের শাস্ত্রীয় জটিলতার মুখোমুখি করা অনুচিত।
কিন্তু
এ সকল অনাচারের প্রতিরোধ ও আম মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষার জন্য এখন কিছু বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার বিকল্প নেই।
যথাসম্ভব সহজ ভাষায় তা উপস্থাপনের চেষ্টা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়েতের উপর থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
নামাযে হাত বাঁধার ক্ষেত্রে যেসব শুযুয ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

কতিপয় শুযুযঃ
শুযুয ০১.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1750875058561265
শুযুয ০২.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1750881855227252
শুযুয ৩ :
বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা।

ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে বুকের উপর হাত বাঁধার নিয়ম পাওয়া যায় না।
কোনো সহীহ মরফূ হাদীসেও এই নিয়ত বর্ণিত হয়নি।

মুসলিম উম্মাহর কোনো মুজতাহিদ ইমাম থেকেও নিখুঁত ও অগ্রগণ্য বর্ণনায় এই নিয়ম পাওয়া যায় না।

কিছু শায ও মুনকার রেওয়ায়েত পাওয়া যায়, যেগুলো হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়।
তেমনি কোনো কোনো মুজতাহিদ ইমাম থেকে পরবর্তীদের অসতর্ক কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, যেগুলো ঐ ইমামের বিশিষ্ট শাগরিদ ও মনীষীদের বর্ণনার বিরোধী।

এ ধরনের একটি মতকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা যে মারাত্মক বিভ্রান্তি তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনাঃ
বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব রেওয়ায়েতের সহযোগিতা নেওয়া হয় এখানে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করছি।

মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের রেওয়ায়েত��
তাঁর বিবরণ অনুযায়ী সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম ... তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
أخبرنا أبو طاهر، نا أبو بكر، نا أبو موسى، نا مؤمل، نا سفيان، عن عاصم بن كليب، عن أبيه، عن وائل بن حجر قال : صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ووضع يده اليمنى على يده اليسرى على صدره.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯।
মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের পূর্ণ বিবরণ সঠিক নয়।
হাদীস শাস্ত্রের নীতি অনুসারে এ বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা ‘মুনকার’।
অর্থাৎ
সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বর্ণনায় তা ছিল না।
মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল ভুলক্রমে তা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
কারণ
সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ ফিরয়াবী ও আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ রাহ.ও বর্ণনা করেছেন।
তাঁরা দু’জনই ছিকা ও শক্তিশালী রাবী। তাঁদের রেওয়ায়েতে على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা নেই।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৮;
*_* আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/৩৩।
রেওয়ায়েত দুটির সনদসহ আরবী পাঠ নিম্নরূপ :
قال الإمام أحمد : حدثنا عبد الله بن الوليد، حدثني سفيان، عن عاصم بن كليب عن أبيه عن وائل بن حجر قال : ... ورأيته ممسكا بيمينه على شماله في الصلاة ...
وقال الإمام الطبراني : حدثنا عبد الله بن محمد بن سعيد بن أبي مريم ثنا محمد بن يوسف الفريابي ثنا سفيان عن عاصم بن كليب عن أبيه عن وائل بن حجر قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يضع يده اليمنى على اليسرى وإذا جلس افترش رجله اليسرى ...
قال الراقم : ومحمد بن يوسف الفريابي ذكره المزي في الرواة عن الثوري وابن عيينة كلهيما إلا أنه يستظهر برواية الدارقطني أنه الثوري. ففي إتحاف المهرة 13/662 تحت حديث : سمعت النبي صلى الله عليه وسلم إذا قال غير المغضوب عليهم ولا الضالين قال آمين، يمد بها صوته : قط في الصلاة ... وعن يحي بن صاعد، عن ابن زنجوية، عن الفريابي، عن الثوري، عن سلمة، نحوه. أي عن حجر أبي العنبس عن وائل بن حجر.
وقد ذكرهما صاحب أنيس الساري 10/335 في الرواة عن الثوري. رقم الحاشية : (1)
এটা শুধু পাওয়া যায় মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল রাহ.-এর বর্ণনায়, যাঁর সম্পর্কে জারহ-তাদীলের ইমামদের সিদ্ধান্ত এই যে,
তিনি সাধারণভাবে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী হলেও রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচুর ভুল হয়েছে।
এমনকি ইমাম বুখারী রাহ. তাঁকে ‘মুনকাররুল হাদীস’ বলেছেন।
ইমামগণের মন্তব্য নীচে উল্লেখ করা হল-
قال البخاري : منكر الحديث، وقال أبو حاتم الرازي : صدوق شديد في السنة كثير الخطأ، يكتب حديثه، وقال أبو زرعة الرازي : في حديثه خطأ كثير، وقال ابن سعد : ثقة كثير الغلط، وقال الساجي : صدوق، كثير الخطأ وله أوهام يطول ذكرها. وقال الدارقطني : ثقة كثير الخطأ.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাহযীবুল কামাল ১৮/৫২৬;
*_* তাযীবুত তাহযীব ১০/৩৪০;
*_* মীযানুল ইতিদাল ৮৯৪৯;
*_* আলমুগনী ফী যুআফা ৬৫৪৭।
আলবানী শেখও সিলসিলাতুয যয়ীফার অনেক জায়গায় তাঁকে জয়ীফ বলতে বাধ্য হয়েছেন এবং তাঁর সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সিলসিলাতুয যয়ীফা ১/১৩১; ২/২৪৬, ৩/১৭৯; ৩/২২৭; ৪/৪৫৫ ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত :
সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর বিবরণ বর্ণনা করেছেন আসিম ইবনে কুলাইব থেকে।
আসিম ইবনে কুলাইব থেকে এই হাদীস আরো যাঁরা বর্ণনা করেছেন :
০১. শোবা ইবনুল হাজ্জাজ,
০২. বিশর ইবনুল মুফাদ্দাল
০৩. কায়স ইবনুর রাবী
০৪. যাইদা ইবনে কুদামা
০৫. আবদুল ওয়াহিদ ইবনে যিয়াদ
০৬. খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ
০৭.আবু ইসহাক
০৮. আবুল আহওয়াস
০৯. আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস,
১০. মুসা ইবনে আবী আয়েশা
১১. আবু আওয়ানা
প্রমুখ হাদীসের বিখ্যাত ইমাম ও ছিকা রাবীগণ।
তাঁরা সকলে আসিম ইবনে কুলাইব থেকে নামাযে হাত বাঁধার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু
কেউ على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা বর্ণনা করেননি।
এঁদের রেওয়ায়েতগুলোর জন্য দেখুন যথাক্রমে :
গ্রন্থ সূত্র :
০১. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৯, হাদীস : ১৮৮৭৮;
০২. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭২৬; সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস : ১১৮৯; মুজতাবা, হাদীস : ১২৬৫; মুসনাদে বাযযার-আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৫; আলমু’জামুল কাবীর তবারানী ২২/৩৭
০৩. আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৩৩
০৪. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৮; আলমুজামুল কাবীর ২২/৩৫
০৫. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৬
০৬. সুনানে কুবরা বায়হাকী ২/১৩১
০৭. আলমুজামুল আওসাত তবারানী ২/৪২৩
০৮. মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালিসী ২/৩৫৮, হাদীস : ১১১৩; আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/৩৪
০৯. সহীহ ইবনে হিববান ৫/২৭১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৩১৭
১০. মুসনাদে বাযযার আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৯
১১. মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার বায়হাকী ৩/৫০।
এ থেকে বোঝা যায়,
আসিম ইবনে কুলাইব বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বর্ণনা করেননি।
তাহলে সুফিয়ান ছাওরীর সঠিক বর্ণনায় তা কীভাবে থাকতে পারে?
তো
এই সকল ইমাম ও ছিকা রাবীর বর্ণনার সাথে তুলনা করলে পরিষ্কার বোঝা যায়,
এ হাদীসে على صدره অংশটা মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য।
উল্লেখ্য,
কুলাইব ইবনে শিহাব ছাড়া অন্যদের সূত্রেও ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
কিন্তু
কোনো সহীহ সনদে على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা পাওয়া যায় না।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* বুগয়াতুল আলমায়ী ফী তাখরীজিয যায়লায়ী, নসবুর রায়াহর হাশিয়ায় ১/৩১৬।

হুলব আতত্বয়ী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে মুসনাদে আহমদের ‘শায’ অংশ��
বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণ করার জন্য হুলব রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসের উদ্ধৃতিও দেওয়া হয়ে থাকে।
অথচ
ঐ হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ‘বুকের উপর হাত বাঁধা’র কথা নেই।
একটিমাত্র বর্ণনায় এই অতিরিক্ত কথাটি পাওয়া যায়,
যা অন্য সকল বর্ণনার পরিপন্থী। রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই -
أحمد : حدثنا يحي بن سعيد عن سفيان : ثني سماك عن قبيصة بن هلب عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم ينصرف عن يمينه وعن يساره، ورأيته ـ قال ـ يضع هذه على صدره. وصف يحي اليمنى على اليسرى فوق المفصل.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসনাদে আহমদ; ৫/২২৬।
এই রেওয়ায়েতে দেখা যাচ্ছে,
ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রাহ. এই হাদীসটি সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন।
সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস আরো যাঁরা বর্ণনা করেছেন :
০১. ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ
০২. ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনে হাম্মাম
০৩. ইমাম আবদুর রহমান ইবনে মাহদী
০৪. মুহাম্মাদ ইবনে কাছীর
০৫. আবদুস সামাদ ইবনে হাসসান
০৬. হুসাইন ইবনে হাফস
প্রমুখ ইমাম ও ছিকা রাবীগণ।
তাঁদের কারো বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা নেই।
দেখুন যথাক্রমে :
গ্রন্থ সূত্র :
০১. মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১/৩৯০;
০২. মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৪০;
০৩. সুনানে দারাকুতনী ২/৩৩, হাদীস : ১১০০;
০৪. আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/১৬৫;
০৫. মারিফাতুস সাহাবা, আবু নুয়াইম ১৯/১৭২
০৬. সুনানে কুবরা বাইহাকী ২/২৯৫
তদ্রূপ
সিমাক ইবনে হারব থেকে সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ছাড়া আরো যাঁরা বর্ণনা করেছেন :
০১. আবুল আহওয়াস
০২. হাফস ইবনু জুমাই
০৩. শরীক
০৪. আসবাত ইবনে নাসর
০৫. শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ
০৬. যাইদা ইবনে কুদামা আলকূফী প্রমুখ রাবীগণ।
এঁদের কারো বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা নেই।
দেখুন যথাক্রমে :
গ্রন্থ সূত্র :
০১. জামে তিরমিযী ১/৩১২, হাদীস : ২৫০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৮০৯; আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/১৬৫;
০২. আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/১৬৫;
০৩. মুসনাদে আহমদ ৫/২২৬, হাদীস : ২১৯৬৯;
০৪. আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/১৬৫;
০৫. ইবনে আবী আসিম ২৪৯৫-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩; ৬. ইবনু কানি ৩/১৯৯-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩।
এ থেকে প্রতীয়মান হয়,
ছিমাক ইবনে হারবের বর্ণনায় এ অংশটি ছিল না।
সুতরাং
সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বিশুদ্ধ বর্ণনায় তা কীভাবে থাকতে পারে?
দ্বিতীয় কথা এই যে,
ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ আলকাত্তানের রেওয়ায়েত মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার বসরী-এর সূত্রে ‘‘মুখতাসারুল আহকাম’’ তূসীতেও (২/৯৭, হাদীস : ২৩৪) রয়েছে।
কিন্তু
ঐ কিতাবে ‘আলা সাদরিহী’ নেই।
সনসদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
أخبرنا بندار محمد بن بشار، قال : ثنا يحي وهو ابن سعيد عن سفيان، عن سماك، عن قبيصة بن الهلب عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم ينصرف عن شقيه عن يمينه وعن يساره ويضع اليمنى على اليسرى.
তৃতীয় কথা এই যে,
মুসনাদে আহমদেও বর্ণনাটি যেভাবে আছে, তা গভীরভাবে পাঠ করলে আল্লামা নীমভী রাহ. যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তা বেশ শক্তিশালী মনে হয়।
তা এই যে,
মুসনাদে আহমদের বর্ণনাতেও على صدره বুকের উপর কথাটা ছিল না।
এটা লিপিকারের ভ্রান্তিপ্রসূত।
মূল রেওয়ায়েত সম্ভবত এ রকম -
يضع هذه على هذه
শেষোক্ত هذه লিপিকারের ভ্রান্তির কারণে صدره তে পরিণত হয়ে থাকতে পারে।
প্রাচীন হস্তলিখিত পান্ডুলিপিতে এ ধরনের ভ্রান্তি বিরল নয়।
এসব ভ্রান্তি চিহ্নিত করার নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীসশাস্ত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং মুহাদ্দিসগণ সফলভাবে তা প্রয়োগও করেছেন।
রেওয়ায়েতের বিশুদ্ধ পাঠ যদি সেটিই হয়, যা আল্লামা নীমাভী রাহ. বলেছেন তাহলে এর অর্থ হবে-
‘তিনি এই হাত এই হাতের উপর রাখলেন।’
হাদীসটি বর্ণনা করার পর রাবী ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রাহ. ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখে দেখালেন।’’
রেওয়ায়েতের শেষ বাক্যটিও এই সম্ভাবনাকে সমর্থন করে।
মোটকথা,
এ রেওয়ায়েতেও على صدره বুকের উপর কথাটা ‘শায’ বা মুসাহহাফ, যা পরিত্যক্ত।
এই দুটি রেওয়ায়েত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণের আগে আরো যে বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত তা এই যে,
ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস ও হুলব আতত্বয়ী রা.-এর হাদীস, উভয় হাদীসেরই রাবী ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহ.।
এই দুই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় على صدره থাকলে অবশ্যই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ মনে করতেন এবং বুকের উপর হাত বাঁধতেন।
কিন্তু
তিনি হাত বাঁধতেন নাভীর নিচে, বুকের উপর নয়।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/১৪১;
*_* আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০।

দুই.
মুসনাদে আহমদের সহীহ রেওয়ায়েতে ‘‘আলা সাদরিহী’’ থাকলে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. কেন বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলেননি?
তেমনি
ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইবনে হাযম ও দাউদ জাহেরী রাহ. থেকেও কেন বুকের উপর হাত বাঁধার নিয়ম পাওয়া যায় না?
তিন.
দু’ দুটি স্পষ্ট হাদীস বিদ্যমান থাকলে মুসলিম জাহানের কোনো মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলবেন না তা কীভাবে সম্ভব?
তবে কি বলতে হবে আল্লাহর রাসূলের হাদীস ত্যাগ করার বিষয়ে হাদীস ও ফিকহের সকল ইমাম একমত হয়ে গেছেন? (নাউযুবিল্লাহ)

সূরায়ে কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে একটি বর্ণনা��
হযরত আলী রা. থেকে সূরায়ে কাওছারের দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করা হয় যে,
তিনি বলেছেন,
‘ডান হাত বাম হাতের মাঝে রাখা, অতপর তা রাখা বুকের উপর।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
حماد بن سلمة : ثنا عاصم الجحدري، عن أبيه، عن عقبة بن صهبان قال : إن عليا رضي الله عنه قال في هذه الآية : فصل لربك وانحر، قال : وضع يده اليمنى على وسط يده اليسرى، ثم وضعهما على صدره.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সুনানে বায়হাকী ২/৩০;
*_* আসলু ছিফাতিস সালাহ, আলবানী পৃ. ২১৭।
এই রেওয়ায়েত সহীহ নয়।
আল্লামা ইবনুত তুরকুমানী রাহ. (৭৪৫ হি.) বলেছেন,
‘এই রেওয়ায়েতের সনদ ও মতনে ইযতিরাব রয়েছে।’
وفي سنده ومتنه اضطراب
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলজাওহারুন নাকী, সুনানে বায়হাকীর সাথে মুদ্রিত ২/৩০।
শায়খ আলবানীও এর সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন,
‘এ রেওয়ায়েতের সনদের ইযতিরাব স্বীকৃত।
সুতরাং এ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন নেই। ...’
وأما الاضطراب في السند : فهو مسلم، فلا حاجة لإطالة الكلام ببيانه ...
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আসলু ছিফাতিস সালাহ, পৃ. ২২১।
মতনের (বক্তব্যের) ক্ষেত্রেও ইযতিরাব স্বীকার করতে হবে কিংবা বলতে হবে, এই রেওয়ায়েতেও على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা শায্ ও বিচ্ছিন্ন এবং এ হাদীসের যে বর্ণনা على صدره ছাড়া সেটিই অগ্রগণ্য।
কারণ
এ হাদীসের কেন্দ্রীয় বর্ণনাকারী আসিম আলজাহদারী রাহ.।
তার থেকে বর্ণনা করেন হাম্মাদ ইবনে সালামা ও ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ।
হাম্মাদ ইবনে সালামার বর্ণনায় ‘ইখতিলাফ’ ও ভিন্নতা পাওয়া যায়।
হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকে মিহরান, আবু সালেহ খুরাসানী ও শাইবানের বর্ণনা এবং মুসা ইবনে ইসমাইলের এক বর্ণনায় على صدره আছে।
মুসা ইবনে ইসমাইলের দ্বিতীয় বর্ণনায় এবং আবদুর রহমান-এর বর্ণনায় على صدره নেই।
তাদের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-
قال ابن جرير الطبري : حدثنا ابن حميد، قال : ثنا مهران، عن حماد بن سلمة، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن ظهير، عن أبيه، عن علي رضي الله عنه فصل لربك وانحر قال : وضع يده اليمنى على وسط ساعده اليسرى، ثم وضعهما على صدره.
وقال الطبري : حدثنا ابن حميد، قال : ثنا أبو صالح الخراساني، قال : ثنا حماد، عن عاصم الجحدري، عن أبيه، عن عقبة بن ظبيان، أن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال في قول الله تعالى : فصل لربك وانحر، قال : وضع يده اليمنى على وسط ساعده الأيسر، ثم وضعهما على صدره.
وقال البيهقي في السنن : أخبرنا أبو بكر أحمد بن محمد بن الحارث الفقيه أنبأ أبو محمد بن حيان أبو الشيخ، ثنا أبو الحريش الكلابي، ثنا شيبان ثنا حماد بن سلمة ثنا عاصم الجحدري عن أبيه عن عقبة بن صهبان كذا قال أن عليا رضي الله عنه قال في هذه الآية فصل لربك وانحر قال : وضع يده اليمنى على وسط يده اليسرى، ثم وضعهما على صدره.
وقال البخاري في التاريخ الكبير : قال موسى : حدثنا حماد بن سلمة : سمع عاصما الجهدري عن أبيه عن عقبة بن ظبيان عن علي رضي الله عنه : فصل لربك وانحر. وضع يده اليمنى على وسط ساعده على صدره. (2911)
وقال الطبري : حدثنا ابن بشار، قال : ثنا عبد الرحمن، قال : ثنا حماد بن سلمة، عن عاصم ابن ظبيان،عن أبيه، عن علي رضي الله عنه فصل لربك وانحر قال : وضع اليد على اليد في الصلاة.
وقال الحاكم في المستدرك في تفسير سورة الكوثر: ... منهما ما حدثناه علي بن حمشاذ العدل، ثنا هشام بن علي ومحمد بن أيوب قالا : ثنا موسى بن إسماعيل، ثنا حماد بن سلمة، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن صهبان، عن علي رضي الله عنه فصل لربك وانحر، قال : هو وضع يمينك على شمالك في الصلاة.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাফসীরে তবারী (সূরাতুর কাউছার) ১২/৭২১-৭২২;
*_* আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭;
*_* মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৩৩৯;
*_* সুনানে বায়হাকী ২/৩০।
পক্ষান্তরে
ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ থেকে ওকী ইবনুল জাররাহ, মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমান প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।
তাদের কারো বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ নেই।
তাদের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-
قال الطبري : حدثنا أبو كريب، قال : حدثنا وكيع، عن يزيد بن أبي زياد، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن ظهير، عن علي رضي الله عنه : فصل لربك وانحر. قال : وضع اليمين على الشمال في الصلاة.
وقال : حدثني عبد الرحمن بن الأسود الطفاوي، قال : ثنا محمد بن ربيعة، قال : ثني يزيد بن أبي زياد بن أبي الجعد، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن ظهير، عن علي رضي الله عنه في قوله تعالى فصل لربك وانحر. قال : وضع اليمين على الشمال في الصلاة.
قال البخاري في التاريخ الكبير : وقال قتيبة، عن حميد بن عبد الرحمن عن يزيد بن أبي الجعد عن عاصم الجحدري عن عقبة من أصحاب علي عن علي رضي الله عنه : وضعها على الكرسوع.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাফসীর তবারী (সূরাতুল কাউছার) ১২/৭২১-৭২২;
*_* আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭;
*_* সুনানে বায়হাকী ২/২৯।
আলবানী শেখ মতনের (বক্তব্যের) ইযতিরাব অস্বীকার করেছেন এবং على صدره রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য বলেছেন।
তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়।
কারণ
তিনি শুধু হাম্মাদ ইবনে সালামার রেওয়ায়েতের ইখতিলাফ ও ভিন্নতা উল্লেখ করে মুসা ইবনে ইসমাইলের বর্ণনাকে ‘গরীব’ আখ্যায়িত করেছেন।
পক্ষান্তরে
ওকী ইবনুল জাররাহ, মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমানের সূত্রে বর্ণিত ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদের রেওয়ায়েত, যেগুলোতে على صدره নেই, সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন।
বলাবাহুল্য,
এভাবে মূল মতনের ইযতিরাবহীনতা প্রমাণ হয় না।
তাহকীক ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্ম আপত্তিমুক্ত নয়।
হাম্মাদ ইবনে সালামা রাহ.-এর রেওয়ায়েতে على صدره ‘বুকের উপর’ কথার সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত পেশ করা হয়।
কিন্তু
তা সঠিক নয়।
কারণ :
এক.
ঐ রেওয়ায়েতে على صدره ‘বুকের উপর’ শব্দই নেই।
তাতে আছে فوق السرة নাভীর উপর।

দুই.
ঐ রেওয়ায়েতের অগ্রগণ্য বর্ণনায় فوق السرة শব্দটিও নেই।
বর্ণনাটি এই-
গযওয়ান ইবনে জারীর আদদাববী রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে,
‘আলী রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তার ডান হাত কব্জির উপর রাখতেন। কাপড় গোছানো বা শরীর চুলকানোর প্রয়োজন না হলে রুকু পর্যন্ত এভাবেই থাকতেন।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
حدثنا وكيع قال : حدثنا عبد السلام بن شداد الجريري أبو طالوت، عن غزوان بن جرير الضبي، عن أبيه قال : كان علي إذا قام في الصلاة وضع يمينه على رسغه، فلا يزال كذلك حتى يركع متى ما يركع، إلا أن يصلح ثوبه أو يحك جسده.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩/৩২২, হাদীস : ৩৯৬১।
ইমাম বায়হাকী রাহ.ও এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
তাঁর সনদে এই হাদীসের রাবী জারীর আদাদাববী রাহ. সম্পর্কে আছে যে,
‘তিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর।’
বায়হাকী আরো বলেন,
‘এই হাদীসের সনদ হাসান।’
বায়হাকীর বর্ণনার সনদসহ আরবী পাঠ এই-
... ثنا مسلم بن إبراهيم ثنا عبد السلام بن أبي حازم ثنا غزوان بن جرير عن أبيه أنه ـ وكان شديد اللزوم لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه ـ قال : كان علي إذا قام إلى الصلاة فكبر ضرب بيده اليمنى على رسغه الأيسر، فلا يزال كذلك حتى يركع، إلا أن يحك جلدا أو يصلح ثوبه، ... هذا إسناد حسن.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সুনানে কুবরা; ২/২৯।
ইমাম বুখারী রাহ. এই আছরটি সহীহ বুখারীতে এনেছেন।
তবে সনদ উল্লেখ করেননি।
তার বর্ণনার আরবী পাঠ এই-
ووضع علي رضي الله عنه كفه على رصغه الأيسر إلا أن يحك جلدا أو يصلح ثوبا. (كتاب العمل في الصلاة. باب استعانة اليد في الصلاة إذا كان من أمر الصلاة)
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. সনদসহ মূল পাঠ উদ্ধৃত করেছেন।
তাঁর আলোচনার আরবী পাঠ এই-
وكذلك رواه مسلم بن إبراهيم أحد مشائخ البخارى عن عبد السلام بن أبي حازم عن غزوان بن جرير الضبي عن أبيه ـ وكان شديد اللزوم لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه ـ قال : كان علي إذا قام إلى الصلاة فكبر ضرب بيده اليمنى على رصغه الأيسر، فلا يزال كذلك حتى يركع، إلا أن يحك جلدا أو يصلح ثوبا، هكذا رويناه في السفينة الجرائدية من طريق السلفي بسنده إلى مسلم بن إبراهيم.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* ফাতহুল বারী ৩/৮৭।
এই বর্ণনাগুলোতে হযরত আলী রা.-এর নামাযে হাত বাঁধার বিবরণ আছে।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় :
এক.
এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন জারীর আদদাববী রাহ., যিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর।
উপরের নির্ভরযোগ্য একাধিক বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে, এই বিবরণে ডান হাত (ডান হাতের পাতা) বাম হাতের কব্জির উপর রাখার কথা আছে।
কিন্তু
সেখানে فوق السرة নাভীর উপরে রাখার কথা নেই।

দুই.
ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে এই বর্ণনাটিই (تعليقا) উল্লেখ করেছেন।
সহীহ বুখারীতে উল্লেখিত রেওয়ায়েতে فوق السرة (নাভীর উপর) শব্দ নেই।

তিন.
ইমাম বায়হাকী রাহ. এই রেওয়ায়েতের, অর্থাৎ فوق السرة বিহীন রেওয়ায়েতের সনদকেই হাসান বলেছেন।

চার.
এই রেওয়ায়েতের পরবর্তী বর্ণনাকারী আবদুস সালাম ইবনে আবী হাযিম থেকে একাধিক রাবী এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন।
এদের মধ্যে ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ ও মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (যিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ)-এর বর্ণনায় فوق السرة ‘নাভীর উপর’ নেই।
এটা শুধু পাওয়া যায় আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনায়, যিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলেন না।
শুজা ইবনুল ওয়ালীদের রেওয়ায়েত সনদসহ তুলে দেওয়া হল-
حدثنا محمد بن قدامة بن أعين، عن أبي بدر، عن أبي طالوت عبد السلام، عن ابن جرير الضبي، عن أبيه قال : رأيت عليا رضي الله عنه يمسك شماله بيمينه فوق السرة،
قال المزي : هذا الحديث في رواية أبي الحسن بن العبد، وأبي سعيد بن الأعرابي وغير واحد، عن أبي داود، ولم يذكره أبو القاسم.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সুনানে আবু দাউদ ১/৪৯৫, হাদীস : ৭৫৭;
*_* তাহকীক শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা, টীকা।
*_* তুহফাতুল আশরাফ ৭/৩৪৯, হাদীস : ১০০৩০।
আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদ রাহ. ছিলেন কুফার অন্যতম আবিদ ও নেককার ব্যক্তি।
তবে বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি শক্তিশালী ছিলেন না।
ইমাম আবু হাতিম রাযী রাহ. তাঁর সম্পর্কে বলেন-
ولين الحديث، شيخ ليس بالمتين، لا يحتج به، إلا أن عنده عن محمد بن عمرو أحاديث صحاح.
অর্থাৎ : "তিনি শক্তিশালী রাবী নন, তাঁর দ্বারা দলীল দেওয়া যায় না। তবে মুহাম্মাদ ইবনে আমরের সূত্রে তিনি কিছু সহীহ হাদীস বর্ণনা করেন"।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মীযানুল ইতিদাল ২/২৪৪।
আলোচিত বর্ণনাটি ঐ সহীহ বর্ণনাগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়।
কারণ
এটা আবু তালূত আবদুস সালাম থেকে তার বর্ণনা।
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-
صدوق ورع له أوهام
অর্থাৎ : "তিনি সত্যবাদী, নেককার। তবে বর্ণনায় ভুল-ভ্রান্তি আছে"।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাকরীবুত তাহযীব; পৃ. ২৯৮।
আলবানী শেখ, আবু দাউদের সূত্রে এই রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করেছেন।
তবে সনদ উল্লেখ করেছেন আবু বদর-এর পর থেকে!
এরপর বলেছেন,
বায়হাকী এই সনদটিকে হাসান বলেছেন! ... এবং বুখারী আলী রা. থেকে তাঁর (?) এই হাদীস দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন।
তার বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-
ويشهد لرواية علي : ما أخرجه أبو داود (1/120) من طريق أبي طالوت عبد السلام عن ابن جرير الضبي عن أبيه قال : رأيت عليا رضي الله عنه يمسك شماله بيمينه على الرسغ فوق السرة، وهذا إسناد قال البيهقي (2/30) : حسن ... وقد علق البخاري حديثه هذا مطولا في صحيحه 3/55، بصيغة الجزم عن علي.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আসলু সিফাতিস সালাহ ১/২১৭-২১৮।
অথচ
ইমাম বায়হাকী আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনা সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য (হাসান) করেননি।
করেছেন মুসলিম ইবনে ইবরাহীমের বর্ণনা সম্পর্কে, যে বর্ণনায় فوق السرة নেই।
দ্বিতীয়ত
ইমাম বুখারীও সহীহ বুখারীতে শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনা উল্লেখ করেননি।
তিনি যে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তাতে فوق السرة  নেই।
গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য কি না তা পাঠক ভেবে দেখবেন।

সুলায়মান ইবনে মুসা-এর সূত্রে একটি মুরসাল রেওয়ায়েত��
তাউস রাহ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এবং তা বুকের উপর রাখতেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
قال الإمام أبو داود : ثنا أبو توبة، ثنا الهيثم ـ يعني : ابن حميد، عن ثور عن سليمان بن موسى عن طاؤو‍س قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع اليمنى على يده اليسرى، ثم يشد بينهما على صدره، وهو في الصلاة.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৯;
*_* মারাসীলে আবু দাউদ, তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৮৮২৯।
তাউস রাহ. পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ গ্রহণযোগ্য, যদিও মাঝের তিনজন রাবী সম্পর্কে কিছু আপত্তিও আছে।
এ বর্ণনার রাবী সুলায়মান ইবনে মুসা রাহ. সম্পর্কে ইমামগণ প্রশংসা করেছেন, তবে তার কিছু রেওয়ায়েত ‘মুনকার’ ছিল।
এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রাহ. তার সমালোচনা করেছেন।
ইমাম আবু হাতিম রাযী তার বর্ণনায় কিছু ইযতিরাব ও ইমাম ইবনে আদী রাহ. তার ‘তাফাররুদে’র কথা উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* তাহযীবুল কামাল ২৫৫৪।
আরবী পাঠ এই-
قال البخاري : عنده مناكير، قال النسائي : أحد الفقهاء وليس بالقوي في الحديث، وقال أبو حاتم : محله الصدق، وفي حديثه بعض الاضطراب، ولا أعلم أحدا من أصحاب مكحول أفقه منه ولا أثبت منه، وقال ابن عدي : وسليمان بن موسى فقيه راوٍ، حدث عنه الثقات من الناس، وهو أحد علماء الشام، وقد روى أحاديث ينفرد بها يرويها، لا يرويها غيره، وهو عندي ثبت صدوق.
এছাড়া এ রেওয়ায়েত দুটি মৌলিক কারণে মা’লুল।

কারণ দু'টি :
এক.
রেওয়ায়েতটি মুরসাল এবং এর সমর্থনে অন্য সনদে বর্ণিত কোনো মারফূ হাদীস বা আছর পাওয়া যায় না।
ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল এর বর্ণনা এবং হুলব রা. এর হাদীসের মুসনাদে আহমদের বর্ণনাকে এর সমর্থনে পেশ করা হয়।
কিন্তু
ইতিপূর্বে দেখানো হয়েছে যে,
এ দুটো বর্ণনা শায ও মুনকার।
আর শায, মুনকার রেওয়ায়েত শাহিদ (সমর্থক বর্ণনা) হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

দুই.
মুসলিম জাহানের কোনো প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলেছেন এমনটা পাওয়া যায় না।
এমনকি শাম অঞ্চলের বিখ্যাত ফকীহদের থেকেও পাওয়া যায় না।
অথচ
উপরোক্ত মুরসাল রেওয়ায়েতের সবকজন রাবী শাম ও শামের নিকটবর্তী অঞ্চলের এবং অধিকাংশ রাবীরই ফকীহ-পরিচিতি রয়েছে।
কিন্তু
না শামের ফকীহগণ বুকের উপর হাত বাঁধার ফতোয়া দিয়েছেন,
না শামের সাধারণ আলিমগণ এই নিয়মের সাথে পরিচিত ছিলেন।
এটি এ রেওয়ায়েতের একটি ‘ইল্লত’ (ত্রুটি),
যাকে পরিভাষায় ইল্লতে মান’বিয়্যাহ বা শুযূযে মানবী বলে।
উল্লেখ্য,
ইমাম শাফেয়ী রাহ. সম্পর্কে কোনো কোনো কিতাবে বলা হয়েছে যে,
তাঁর মাযহাব, বুকের উপা হাত বাঁধা।
এই বর্ণনা সঠিক নয়।
ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর মাযহাব হচ্ছে বুকের নীচে (নাভীর উপর) হাত বাঁধা।
ইমাম নববী রাহ. বলেন-
ويجعلهما تحت صدره وفوق سرته، هذا هو الصحيح المنصوص، وفيه وجه مشهور لأبي إسحاق المروزي أنه يجعلهما تحت سرته، والمذهب الأول.
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব ৩/২৬৮।
আরো দেখুন :
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আলমিনহাজ ‘আননাজমুল ওয়াহহাজ-এর সাথে মুদ্রিত’ ২/১৮০;
*_* আলমাজমূ ৩/২৬৯।

সারকথা
রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা থেকে যা পাওয়া গেল তা এই-
০১.
ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় على صدره নেই।
কারণ
সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে দু’জন শক্তিশালী রাবী আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ ও মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ এবং সুফিয়ান ছাওরীর উস্তাদ আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্তত ১১জন ইমাম ও ছিকা রাবী এই হাদীসের হাত বাঁধার বিবরণ বর্ণনা করেছেন।
তাঁদের কারো বর্ণনায় على صدره নেই।
একমাত্র মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলের বর্ণনায় এটা পাওয়া যায়, যার বর্ণনার ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে জারহ-তাদীলের ইমামগণ বিশেষভাবে সাবধান করেছেন।
এ কারণে হাদীসশাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী তাঁর বর্ণনার অতিরিক্ত অংশটি ‘মুনকার’ ও অগ্রহণযোগ্য।

০২.
হুলব রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনাতেও على صدره নেই।
শুধু মুসনাদে আহমদে ও যেসব কিতাবে মুসনাদে আহমদের সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে সেইগুলোতেই হাদীসটি  على صدر সহ পাওয়া যায়।

এই হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার সাথে তুলনা করলে এমনকি মুসনাদে আহমদের বর্ণনাটিও গভীরভাবে পাঠ করলে প্রতীয়মান হয় এই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় على صدره নেই।

০৩.
সূরা কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে যে রেওয়ায়েত বর্ণনা করা হয় তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
সনদ-মতন দুদিক থেকেই তা ‘মুযতারিব’।
এই হাদীসের على صدره ওয়ালা রেওয়ায়েতটিকে কোনোভাবেই অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা যায় না।
আলবানী শেখ সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন।
কিন্তু
মতনের ইযতিবাব খন্ডন করতে গিয়ে এমন কিছু কাজ করেছেন, যা দুঃখজনক।

০৪.
সুলায়মান ইবনে মুসার সূত্রে বর্ণিত যে মুরসাল রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করা হয়, তাউস রাহ. পর্যন্ত এর সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হলেও তা অন্তত দুটো কারণে ‘মা’লূল’।
সুতরাং তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

পৃথক ফোল্ডারে কপি করে সেইভ করে রাখুন।
নামায / صلاوات
নোট :
▆ ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরা
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1729030320745739
▆সহিহ্ হাদিসের আলোকে হাত কোথায় বাঁধতে হবে▆
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1749820218666749
▆নামাযে নাভীর নিচে হাত রাখা : হানাফী মাযহাবের সহীহ সরীহ শক্তিশালী দলীল▆
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1750490065266431
▆ প্রসঙ্গ : পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতির ভিন্নতা��
https://m.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1730028243979280
▆ নামাযে পুরুষের "বুকের উপর হাত বাঁধা" পদ্ধতি ভিত্তিহীন ▆
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1728621234119981
▆বুকের উপর আলবানী মাযহাবীদের হাত বাঁধা : সাম্প্রতিক এক মিথ্যাচারের জবাব▆
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1750299405285497

Top