▆ পবিত্র ক্বুরআ'ন ও হাদীসের দৃষ্টিতে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এঁর কৃপা/উসীলা ▆
উসিলা/তাওয়াস্সুলের অর্থ :
ক)
আভিধানিক অর্থে তাওয়াস্সুল
« و يقال: توسّل فلان الي فلان بوسيلة، ای تسبّب اليه بسبب و تقّرب اليه بحرمة آصرة تَعطِفُه(تُعطِفه)عليه ».
বলা হয়ে থাকে যে, ওমুক ব্যক্তি ওমুক লোকের সাথে উসিলার মাধ্যমে নৈকট্য হাসিল করেছে, অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে নৈকট্য হাসিলের জন্য মাধ্যম করেছে। সেই উসিলার বিশেষতটা হচ্ছে যার জন্য উসিলা করা হয়েছে তার কাছে এ লোকটির সম্মান রয়েছে। তাই তাওয়াস্সুলকারীর প্রতি তার ভালবাসা হয়েছে।
*_* আযহারি, প্রকাশ কাল: ১৪২২ হিজরী, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮৯২।
উসিলার অর্থ হচ্ছে কোন বস্তুকে মাধ্যম করা যা আগ্রহ ও ইচ্ছার সাথে হয়।
*_* রাগেব ইসফাহানী, পৃষ্ঠা: ৫২৩ - ৫২৪।
উসিলার অর্থ হচ্ছে যা একজনকে অন্যজনের কাছাকাছি করার কারণ হয়।
*_* আমিদ, প্রকাশ কাল: ১৩৬০ হিজরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৯৫০।
খ)
পারিভাষিক অর্থে তাওয়াস্সুল
উসিলা এমন এক জিনিস যার মাধ্যমে কোন উদ্দেশ্যে পৌঁছানো যায়।
*_* ইবনে কাসির, প্রকাশ কাল: ১৩৭৯ ফারসি সাল, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৬৩।
কুরতুবি উসিলাকে সান্নিধ্য ও নৈকট্যের অর্থে ব্যবহার করেছেন যার মাধ্যমে কোন বিষয় হাসিল করার উপযুক্ত হয়।
*_* কুরতুবি, প্রকাশ কাল: ১৪০৫ হিজরী, ৬ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৫৯।
যামাখশারি বলেছেন, যা কিছু সান্নিধ্য ও নৈকট্য হাসিল করার কারণ হয়, সেটা আত্মীয়তা হোক কিম্বা অন্য কিছু তাকে উসিলা বলা হয়। যার মাধ্যমে যে কোন কিছুর জন্য খোদার কাছে তাওয়াস্সুল করা হয়।
*_* যামাখশারি, মাহমুদ বিন ওমর, আল কাশ্শাফ আন হাকায়েকেত তানযিল, দারু এহইয়া আত তুরাস আল আরাবি, বইরুত, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৬২, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪২১ হিজরী।
মোট কথা উসিলার অর্থ ব্যাপক যা অনেক বিষয়কেই শামিল করবে।
তাওয়াস্সুলের বৈধতার পক্ষে মশহুর দলিল প্রমাণঃ
তাওয়াস্সুলের বৈধতা সেই ইসলামের প্রথম থেকেই বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে মুসলমানদের মধ্যে একটি গ্রহনীয় বিষয় ছিল।
আল্লামা সামহুদি বলেন: “আল্লাহর দরবারে নবী করিমের কাছে তাওয়াস্সুল, ইসতেগাসা বা সাহায্য প্রর্থনা ও শাফায়াত চাওয়া বৈধ বরং উত্তম কাজ। যে কোন ধর্মভীরু এ কাজকে সুনিশ্চিত বৈধ মনে করে এবং আম্বিয়ায়ে কেরাম, সালেহ বান্দা ও ইসলামের ওলামায়ে কেরামদের সীরাহ তার প্রকাশ্য প্রমাণ। সপ্তম সতাব্দী পর্যন্ত কোন দ্বীনদার ব্যক্তিই তাওয়াস্সুলের বৈধতাকে অস্বীকার করেনি। কমপক্ষে আমাদের চোখে ধরা পড়েনি”।
*_* সামহুদি, আলী বিন আহমাদ, ওয়াফাউল ওয়াফা, দারু এহইয়া আত তুরাস আল আরাবি, বইরুত, ৩ - ৪ খন্ড, পৃ: ১৩৭১।
নবী এবং ওলী-গণের উসিলা চাওয়া জায়েযঃ
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম আল্লাহর হওয়ার উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর ভালবাসা আল্লাহর ভালবাসার উসিলা।
যেমন, ক্বুরআ'নুল কারিমের আয়াত দেখুন;
3:31 قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
৩.৩১-বলুন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো। (তাহলে) আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
*_* সূরাহ্ আলে ইমরান; ৩/৩১।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এঁর ভালবাসা মু'মিন হওয়ার উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এঁর ভালবাসাই রব্বুল 'আলামীনের বান্দা হওয়ার উসিলা/সার্টিফিকেট।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এঁর ভালবাসা ব্যতীত কেউ যদি ইসলামী শারিয়াতের আহকাম সমূহ পালন করে যায়, কিছুই ক্ববুল হবে না। তার রুকু, তার সিজদা, তার ক্বিয়াম, তার বৈঠক, তারা রোজা, তার হাজ্জ সর্বোপরি তার কিছুই ক্ববুল হবে না। তিনিই পূর্বে-পরে, এখনো উসিলা। হাশরে, মিজানে, পুলসিরাতে তিনি ছাড়া আ'মালের কোন মূল্য নাই। বারযাকের পরিক্ষাতেও পরিত্রাণের তিনিই উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম পাপরাশি থেকে ক্ষমা/মাগফিরাত প্রাপ্তির উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম মহান রব্বুল 'আলামীনকে পাওয়ার প্রধান উসিলা।
বান্দা ও রব্বুল 'আলামীন এঁর মাঝে রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ক্বুরআ'ন নাযিল এর উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ইসলামী শরিয়াত প্রাপ্তির উসিলা।
মহান আল্লাহ্ পাক কর্তৃক রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম অন্ধকার থেকে আলোর পথে হিদায়াত প্রাপ্ত হওয়ার উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম উসওয়াতুন হাসানা (উত্তম অনুপম চরিত্রের আদর্শ) অর্জনের উসিলা।
ক্বিয়ামাতে আল্লাহর বান্দাগনের আ'মালের শাহাদাৎ (সাক্ষ্য প্রদান) এর উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম উম্মতের সুপারিশ এর উসিলা।
আল্লাহ্ পাকের বান্দাগনের প্রতি, সমগ্র সৃষ্টির প্রতি রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম রহমতের উসিলা।
মহান আল্লাহ্ পাকের আনুগত্য করার জন্য রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এঁর আনুগত্য উসিলা।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর 'হায়াত ও মাওত' উভয়ই আল্লাহর বান্দাগনের জন্য কল্যাণকর।
মহান আল্লাহ্ পাক ও বান্দাগনের মাঝখান থেকে রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম কে সরানো অসম্ভব।
ওয়াসিলার জন্য 'হায়াত ও মাওত' সমস্যা নয়।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজের ওয়াসিলা এবং সমস্ত আম্বিয়াগণের ওয়াসিলা ধরে হাযরাত আলী রা. এঁর মায়ের ওফাতের সময় তাঁকে নিজের মায়ের পরে মা বলে তাঁর জন্য মহান আল্লাহ্ পাকের দরবারে দোয়া করেছেন।
এ সমস্ত বর্ণনা সামনে আলোচনা করা হবে, ইন শাআ' আল্লহ।
আমরা দৈনন্দিন জীবনের প্রতি মুহূর্তে অন্যের অর্থাৎ গায়রুল্লাহ-র সাহায্য প্রার্থী হয়ে থাকি।
যেমন -
০১. সন্তান পিতা-মাতার নিকট; এখানে 'পিতা-মাতা' ওয়াসিলা।
০২. প্রজা বাদশাহ বা সরকারের নিকট; এখানে 'বাদশাহ্ বা সরকার' উসিলা।
০৩. মাদ্রাসা ও মসজিদের চাঁদার জন্য জনসাধারনের নিকট সাহায্য প্রার্থী হই; এখানে 'জনসাধারণ' উসিলা।
এটা শিরক্ নয়। যদিও এরা সবাই গায়রুল্লাহ্।
দেখুন,
হযরত ঈসা (আঃ) যিনি নবী ছিলেন, তিনিও তাঁর অনুগত হাওয়ারীগণ (গায়রুল্লাহ্) এর কাছে সাহায্য চেয়েছেনঃ
অর্থাৎ : “মরিয়ম তনয় ঈসা (আঃ) হাওয়ারীগণকে বললেন, আল্লাহর রাস্তায় কারা আমার সাহায্যকারী?
হাওয়ারীগণ বললেন, আমরা আল্লাহর রাস্তায় আপনার সাহায্যকারী।” (সূরা - আলে-ইমরান : আয়াত - ৫২)। একজন নবীর পক্ষে কি তাহলে শিরক্ করা সম্ভব? (নাউযুবিল্লাহ্)।
বস্তুত তার কাছেই চাওয়া যায় যিনি দেয়ার বা দান করার ক্ষমতা রাখেন।
ক্ষমতা দুই প্রকার -
১. ‘জাতিগত বা স্বত্ত্বাগত’-যা একমাত্র আল্লাহ্পাকের জন্য খাস এবং
২. ‘আতাই বা আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত’ - যা আল্লাহ্ পাক তাঁর সকল বান্দাকে প্রদান করে থাকেন।
এটা আবার দু’প্রকার -
২.১-‘সাধারণ ক্ষমতা’ - যা সকল বান্দাকে আল্লাহ্পাক কমবেশী দিয়ে থাকেন এবং
২.২-বিশেষ ক্ষমতা (রুহানী) - যা আল্লাহ্পাক তাঁর খাস বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা দিয়ে থাকেন। যেমন - ‘নবী’ ও‘ওলীআল্লাহ্গণ’।
এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ : “তিনি (আল্লাহ্) নিজ অনুগ্রহ প্রদানের জন্য যাকে ইচ্ছা বেছে নেন।”
*_* সূরা - আল্-বাক্বারাহ : আয়াত -১০৫।
আরো এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ : “আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা স্বীয় ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব বা প্রভুত্ব দান করে থাকেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময় ও প্রজ্ঞাময়।” (বলতে প্রভুত্ব, কর্তৃত্ব ও মালিকানা ইত্যাদি বুঝায়)।
*_* সূরা - আল্-বাক্বারাহ : আয়াত - ২৪৭।
হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য এবং মুর্দাকে জিন্দা করতেন। এরশাদহচ্ছেঃ
অর্থাৎ : “আমি (ঈসা) জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য করি এবং মুর্দাকে জিন্দা করি আল্লাহর ইচ্ছায়।”
*_* সূরা - আলে-ইমরান : আয়াত - ৪৯।
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও আল্লাহ্ প্রদত্ত এরুপ ঐশ্বরিক বা রুহানী শক্তি বলে যাকে ইচ্ছা এবং যা ইচ্ছা দান করেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন অর্থাৎ দান করার ক্ষমতা রাখেন।
এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ : “ইহা কতই না ভালো হতো যদি তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তাদেরকে যা দান করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকতো এবং বলত - আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে আমাদের দান করবেন এবং তাঁর রাসূলও। আমরা আল্লাহর প্রতি আসক্ত।”
*_* সূরা - আত্-তাওবাহ : আয়াত - ৫৯।
আরো এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ, “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল নিজ অনুগ্রহে তাদের (মোমিন) কে ধনশালী করেছেন, এটাইতো তাদেরকে (কাফেরদের) ব্যথিত করেছে।”
*_* সূরা - আত্-তাওবাহ : আয়াত - ৭৪।
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খোদা প্রদত্ত এরুপ ঐশ্বরিক বা রুহানী ক্ষমতা বলে অঙ্গুলির ইশারায় চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করেছেন, অস্তগামী সূর্যকে পুনঃউদিত করেছেন এবং হযরত জাবের (রাঃ)’র মৃত পুত্রদ্বয়কে পুনঃজীবিত করেছেন।
আল্লাহ্পাক তাঁর খাস বান্দা ওলীগণকেও বিশেষ (রুহানী) ক্ষমতা প্রদান করে থাকেন।
পবিত্র কোরআনে মজিদে ‘সূরা- নমলের’ তৃতীয় রুকুতে বর্ণিত হযরত সোলায়মান (আঃ) ও রাণী বিলকিস-এর ঘটনা তারই প্রমাণ।
হযরতসোলায়মান (আঃ)’র মন্ত্রী ‘আছফ বরখিয়া’ যিনি চোখের এক পলকে কয়েক সহস্র মাইল দূরে অবস্থিত ইয়ামেনের রাজধানী ‘সাবা’ হতে রাণী বিলকিসের বিরাট সিংহাসন কে ‘জেরুজালেমে’ হযরত সোলায়মান (আঃ)’র দরবারে উপস্থিত করেছিলেন, তিনি নবী ছিলেন না, বনী ইসরাইলের একজন ওলী আল্লাহ্ ছিলেন।
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র উছিলায় তাঁর উম্মতের মধ্যে বহু ওলীআল্লাহ্ আবির্ভূত হয়েছেন এবং হবেন, যাদের মর্তবা বনী ইসরাইলের ওলী আল্লাহ্'দের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে।
এভাবে,
০১. গাউসুল আজম পীরানে পীর দস্তেগীর হযরত সাইয়েদেনা শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ),
০২. খাজায়ে কুল্লে খাজেগাঁ হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ মঈনুদ্দীন চিশতী সাঞ্জারী আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী (রাঃ),
০৩. খাজায়ে খাজেগাঁ হযরতখাজা শেখ বাহাউদ্দীন নকশ্বন্দ বুখারী (রাঃ),
০৪. খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত খাজা শেখ আহামদ সেরহান্দ মুজাদ্দেদ আল-ফেসানী (রাঃ) এবং
০৫. খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত খাজা শেখ শাহাবুদ্দিন সাহারওয়ার্দী (রাঃ) প্রমুখের নাম তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এই সকল ওলীআল্লাহ্গণ স্বীয় রূহানী ফয়েজ বা আধ্যাত্মিক শক্তি বলে অগণিত বিপদগ্রস্থ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকেন বিধায় মানুষ বিপদ-আপদে স্বীয় মকসুদ হাসেলের নিমিত্ত উছিলা স্বরুপ তাঁদের স্মরণাপন্ন হয় ও তাঁদেরসাহায্য কামনা করে।
এখন যদি বলা হয় আল্লাহ্ পাকতো এরশাদ করেছেনঃ
অর্থাৎ : “আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুকে ডেকোনা যারা তোমাদের লাভ বা ক্ষতি কিছুই করতে পারে না”।
*_* সূরা - ইউনূস: আয়াত - ১০৬।
আরো এরশাদ হচ্ছেঃ
অর্থাৎ : “এবং এরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুকে ডাকে যা তাদের উপকারও করে না অপকারও করে না”।
*_* সূরা -আল্-ফোরক্বান : আয়াত - ৫৫।
সুতরাং আল্লাহ্ ভিন্ন কাউকে ডাকা এবং তার নিকট সাহায্য চাওয়া শিরক্ বা কুফরী নয় কি?
উত্তরে বলতে হয় উপরোক্ত আয়াত সমূহে "লা-আ"-শব্দটি মূলতঃ পূজা করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে (তফসীরে জালালাইন) অর্থাৎ আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারো পূঁজা করো না।
উপরন্তু উক্ত আয়াত কাফেরদের মুর্তী বা দেব-দেবীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।
মূর্তী মাটি বা পাথরের দ্বারা মানুষের সৃষ্টি এবং নির্জীব বা প্রাণহীন।
আর মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর বান্দা (আশরাফুল মাখলুকাত) সজীব, কর্মক্ষম, বিবেক ও বুদ্ধি সম্পন্ন। আল্লাহ্'র দেয়া ক্ষমতাবলে ক্ষমতাবান।
হযরত নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র উছিলায় তাঁর উম্মতগণের অন্তর্ভূক্ত ওলী আল্লাহ্গণ আল্লাহ্ পাকের বিশেষ রহমত ও নেয়ামত প্রাপ্ত বান্দা, রুহানী শক্তির অধিকারী এবং আছরারে এলাহীর বিকাশ স্থল। যাঁদের হাস্তির মধ্যে জাত-এ-এলাহীর হাস্তি সর্বদা বিরাজমান।
নিচের আয়াতে কারিমা দেখুন;
সুরা নেসার ৬৪ নম্বর আয়াতে এসেছে:
« وَ ما أَرْسَلْنا مِنْ رَسُولٍ إِلاَّ لِيُطاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَ لَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جاؤُكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَ اسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّاباً رَحِيماً ».
অর্থাৎ : "আমরা কোন নবীকেই প্রেরণ করিনি, শুধুমাত্র এই জন্য যে, তার হুকুমে তার আনুগত্যতা করা হোক, আর যদি এই বিরোধী লোকেরা যখন নিজের উপর অত্যচার করছিল তোমার কাছে আসতো এবং খোদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো আর নবী করিমও তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন তখন তারা খোদাকে তাওবা গ্রহণকারী ও মেহেরবান পেতো"।
বিশ্লেষণ :
এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইবনে কাসির বর্ণনা করেন: আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পাপী বান্দাদেরকে ইরশাদ করছেন যে, নবী করিম (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) কে যেন তারা খোদার দরবারে উসিলা করে নেন এবং নিজেও ক্ষমা প্রার্থনা করুক এবং নবী করিমকেও (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য মাগফেরাত চাওয়ার জন্য বলুক। এমতাবস্থায় আল্লাহর রহমতে শামিল হতে পারবে, তাদের তাওবাও কবুল করা হবে। অতঃপর (ইবনে কাসির) উদাহরণস্বরূপ নবীর (সা.) কবরে একজন আরব লোকের তাওয়াস্সুলের ঘটনা ও খোদার ক্ষমার বর্ণনা করেন।
*_* ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ৩২৮ - ৩২৯।
কুরতুবি হযরত আলী (আ.) হতে অনুরূপ একটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন:
« روي ابو صادق (الازدي الكوفي) عن علي (ر) قال: قدم علينا اعرابيّ بعد ما دفّنّا رسول الله�بثلاثة ايّام، فرمي بنفسه علي قبر رسولالله� و حث علي رأسه من ترابه، فقال: يا رسولالله فسمعنا قولك، و وعيت عن الله فوعينا عنك وكان فيما انزل الله « و لو انّهم اذ ظلموا انفسهم...» و قد ظلمت نفسي و جئتك تستغفرلي، فنودي من القبر انّه قد غفر لك ».
অর্থাৎ : আবু সাদেক আযদি হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণনা করে যে, একজন আরব লোক রাসুলুল্লাহর (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) দাফনের তিন দিন পর নিজেকে তাঁর কবরের উপর ফেলে দিয়ে তার ধুলো মাটি নিয়ে নিজের মাথায় ঢালছিল আর বলছিল: হে ! আল্লাহর রাসুল (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) আপনার বাণী শুনেছি, আমরা আপনার কাছে চাচ্ছি আর আপনি খোদার কাছে চান। যে আয়াত আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, “যদি আমার কোন বান্দা নিজের উপর যুলুম অত্যাচার করে, তারা তোমার কাছে আসবে তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও তাদের তাওবা কবুল করবেন”, আমি নিজের উপর যুলুম করেছি, এখন এসেছি যাতে আপনি আমার জন্য খোদার দরবারে মাগফেরাত ও ক্ষমা কামনা করেন; অতঃপর নবী করিমের (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) কবর থেকে আওয়াজ এলো যে, তোমার মার্জনা হয়েছে।
*_* কুরতুবি, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৬৫।
এই হাদীস হতে আমরা বুঝতে পারি যে, আরব লোকটি কোরানের আয়াতকে ধারণ করার মাধ্যমে নবী করিমকে (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) উসিলা করলো এবং খোদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো আর এই তাওয়াস্সুল ফল দিলো এবং সে লোকটিকে আল্লাহ ক্ষমা করলেন।
যখন কোন পাপী ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) এঁর দারস্থ হয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তখন তার বান্দার জন্য তাঁর শাফাআতকে ফিরিয়ে দেন না।
ফাখরে রাযি র. বর্ণনা করেন:
« و انّهم اذا جائوه فقد جائوا من خصّه الله برسالته و اكرمه بوحيه و جعله سفيرا بينه و بين خلقه و من كان كذلك فانّ الله لا يرد شفاعته ».
অর্থাৎ : যখন কোন প্রয়োজনীয় ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) এর দারস্থ হয়, এমন লোকের দরজায় এসেছে যে, খোদা নিজেই তাঁকে নবী হিসেবে নির্ধরণ করেন এবং ঐশী বাণীর মাধ্যমে তাঁকে সম্মানিত করেছেন এবং নিজের ও বান্দাদের মাঝখানে দূত বানিয়েছে; আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ সকল ব্যক্তিদের শাফাআতকে ফিরিয়ে দেন না।
*_* রাযি, মোহাম্মদ বিন ওমর (ফাখরুদ্দিন), আত তাফসিরুল কাবির, আল মাকতাবাতুত তাউফিকিয়্যাহ, কাহেরা, ১১তম খন্ড।
আরেকটি আয়াত দেখা যাক;
সুরা বাকারার ৩৭ নম্বর আয়াতে এসেছে:
« فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِماتٍ فَتابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ ».
অর্থাৎ : অতঃপর আদম (আ.) নিজের প্রভুর কাছে কিছু শব্দাবলীর শিক্ষা নেন এবং তার মাধ্যমে তাওবা করেন এবং খোদা তার তাওবাকে কবুল করলেন, কেননা আল্লাহ রাব্বুর আলামিন তাওবা গ্রহণকারী ও মেহেরবান।
যখন হযরত আদম (আ.) আল্লাহর ইরশাদি হুকুমের বিরোধীতা করে অনুতপ্ত হলেন এবং আউলিয়ার স্থানে শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, খোদার দরবারে উসিলা করার জন্য কাউকে খুঁজছিলেন, তখন খোদা তাঁকে কিছু শব্দের শিক্ষা দান করলেন, যাতে করে তাকে তাওয়াস্সুল করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে পারেন। (দ্রষ্টব্য: আল মো’জামুল আকায়েদি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৮৭)।
«كلمات»
শব্দের জন্য বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে, যার মধ্যে উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসুলের (সা.) উপস্থিতি।
« و قالت طائفة: رأي مكتوبا علي ساق العرش (محمد رسول الله) فتشفّع بذلك ».
অর্থাৎ : হযরত আদম (আ.) যখন উসিলা খুঁজছিলেন তখন আরশে হযরত নবী করিমের (সা.) পবিত্র নাম দেখতে পান, অতঃপর তাঁকে খোদার দরবারে শাফাআতকারী নির্দিষ্ট করেন।
*_* কুরতুবি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩২৪।
আলুসি তফসির বর্ণনা করার পর উল্লেখ করে:
« و اذا اطلقت الكلمة علي عيسي فلتطلق الكلمات علي الروح الاعظم و الحبيب الاكرم�فما عيسي بل و ما موسي (و ما. . . ) الاّ بعض من ظهور انواره و زهرة من رياض انواره ... ».
অর্থাৎ : যখন শব্দটি হযরত ঈসা নবীর (অা.) ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হবে অবশ্যই শব্দটি হযরত নবী করিম (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম)'কেও শামিল করবে, কেননা অন্যান্য নবীগণ রাসুলে আকরাম (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) এর নুরের একটি অংশ মাত্র।
*_* আলুসি, ১ম ও ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৩৭।
বর্ণনাকৃত আয়াতসমূহের ও তাদের তফসিরের পরিপ্রেক্ষিতে (এবং বাকি যে সকল আয়াত সংক্ষিপ্ততার কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে) নবী করিম (সল্লাল্লহু 'আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) তাঁর শারীরিক প্রকাশের পূর্বে, তাঁর জীবনে ও মৃত্যুর পর তাওয়াস্সুল করা বৈধ ও জায়েয। আর তাওয়াস্সুলের বৈধতা ও জায়েয হওয়ার ব্যাপারে তাঁর উপস্থিতিতে কোন ধরণের পার্থক্য নেই। হাদীসেও অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে।
▆ প্রসঙ্গ- রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর "উসিলা বা তাওয়াস্সুল"
______
নোটঃ ০২.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1892038621111574
নোটঃ ০৩.
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1892045067777596
_________