হানাফী ও আহলে হাদীসদের বিরোধীতাপূর্ণ মাসায়েল সমূহ :
★ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পায়ের গোড়ালী সমান করে দাঁড়ানো
★ রাফে’ ইয়াদাইন,
★ ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরা,
★ নাভির নিচে হাত বাঁধা
★ জামাতে মুক্তাদীর জন্য কি ফাতেহা পড়া ওয়াজিব?
★ জামাতে আস্তে আমীন বলবে,
তাছাড়া,
এক. ফরয নামাজের ক্ষেত্রে
দুই. জুম্মার নামাজের ক্ষেত্রে
তিন. তারাবীহ নামাজের ক্ষেত্রে
চার. বিতর নামাজের ক্ষেত্রে
পাঁচ. জানাযার নামাজের ক্ষেত্রে
ছয়. ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে
প্রথমে ফরয নামাজের মধ্যে যে যে মাসআলায় হানাফী ও আহলে হাদীসদের মাঝে বিরোধ রয়েছে তার প্রামাণিক পর্যালোচনা তুলে ধরা হলো।
❇ নিয়্যাত করা :
নামাজ শুরুর আগে একটি বিশেষ ফরজ হলো নিয়্যাত করা।
নিয়্যাত শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা।
নামাযের সর্বপ্রথম ফরয হিসেবে নিয়্যাত খালেস করতে হয়, শুধু আল্লাহ তা'আলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে কালিমার ঠিক পরেই নামাজের অবস্থান।
স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির আত্মনিবেদন বা আত্মসমাহিত হওয়ার এক পরম মাধ্যম এ নামাজ।
নামাজের প্রস্তুতি পর্ব থেকে শুরু করে একেবারে শেষ পর্যন্ত মোট ১৩টি ফরজ ও ১৪টি ওয়াজিব রয়েছে। এই কাজগুলোর সামষ্টিক রূপই হলো সালাত বা নামাজ।
মানুষের প্রতিটি কাজের ফলাফল নিয়্যাতের ওপর নির্ভরশীল।
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন :
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ وَإِنَّمَا لاِمْرِئٍ مَا نَوَى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا ، أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ.
“আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকে তার নিয়ত অনুযায়ী আমলের ফলাফল পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলকে সন্তুষ্ট করার জন্য হিজরত করবে সে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়া উপার্জন বা কোন মহিলাকে বিবাহ করার জন্য হিজরত করবে তার হিজরত সে জন্যই সাব্যস্ত হবে”।
(বুখারী ২/৯৮৯ (৬৬৮৯) ও মুসলিম ২/১৪০)
তাই নামাজের ক্ষেত্রেও নিয়্যাত আবশ্যক।
নিয়্যাত হলো প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং এই নিয়্যাতও হতে হবে একটু বিস্তারিত।
নিয়্যাতে / ইচ্ছাতে স্মরণীয় বিস্তারিত বিষয়গুলো হলো :
০১. আল্লাহ তা'আলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যের স্মরণ,
০২. ক্বিবলা মুখী হওয়া,
০৩. যে ওয়াক্তের নামাজ পড়া হবে তা কেবলই আল্লাহর জন্যে সংকল্প করা,
০৪. কোন ওয়াক্তের নামাজ?
০৫. ফরজ না ওয়াজিব না সূন্নাত না নফল?
০৬. কত রাকাত?
০৭. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনা দেয়া।
ইত্যাদির সব কিছুর বিস্তারিত নিয়্যাত / ইচ্ছা নামাজ শুরুর আগেই করতে হবে। অর্থ্যাৎ, ইচ্ছার মাঝে এ বিস্তারিত বিষয়গুলো থাকা আবশ্যক।
আমরা অনেক সময় মৌখিক উচ্চারণেই কেবল নিয়্যাত করি।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিয়্যাত / ইচ্ছা তো মনে মনেই হয়।
নিয়্যাত / ইচ্ছায় বিস্তারিত যে বিষয়গুলো সংকল্প করা হবে তা শিক্ষানবিশেরা পূর্বেমুখস্ত করে মাতৃভাষায় বা আরবীতে মুখে উচ্চারণ করে স্মরণের সুবিধার্তে নির্দিষ্ট নিয়্যাত / ইচ্ছাকে অন্তরে প্রয়োগ করাতে সমস্যা নেই।
কোনো নামাজের নিয়্যাত / ইচ্ছায় নিয়্যাতের বিস্তারিত বিবরণগুলো নির্দিষ্ট ওয়াক্তের নামাজে নিয়্যাতের সময় স্মরনে স্বাভাবিক হয়ে গেলে মৌখিক উচ্চারণ জরুরী নয়।
সেকারনে প্রিয় নবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) থেকে মৌখিক উচ্চারণ সম্বলিত নিয়্যাতের বিবরণ পাওয়া যায় না।
প্রতি ওয়াক্তের নিয়্যাতের বিস্তারিত বিবরণ (Points) কি হবে তা বাক্য ( Statements) আকারে মুখস্ত থাকলে শিক্ষানবিশদের নামাজের নিয়্যাতকালে সহায়ক হয়।
এই সহায়ক ব্যবস্থাপনা ভালো প্রচলণ বা سنة حسنة
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসলিম বাব ৫, হাদিস ২২১৯;
*_* মুসলিম বাব ৩৪, হাদিস ৬৪৬৬,
*_* নাসাঈ হাদিস ২৫৫৪,
*_* ইবন মাযাহ হাদিস ২০৩, ২০৬, ২০৭;
*_* আহমাদ – খ. ৪ পৃ.-৩৫৮।
অভ্যস্ত হয়ে গেলে মৌখিক নিয়্যাত / ইচ্ছার দরকার হয় না, তখন নিয়্যাতের বিস্তারিত মনে মনে স্বত:স্ফূর্ত বা অনায়াসে স্মরণ হয়।
ফিকহের কিতাবে রয়েছে, অন্তরে ইচ্ছার পাশাপাশি যদি কেউ মুখেও নিয়্যাত করতে চায়, তাহলে করতে পারে।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* আল হিদায়া, সালাত অধ্যায়।
আর নিয়্যাত মুখে উচ্চারণের ক্ষেত্রে উচ্চারণ যেন নির্ভুল হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে।
যারা আরবিতে দক্ষ নন, তাদের জন্য মনে মনে বাংলায় নিয়্যাত করাই শ্রেয়।
প্রচলিত লম্বা আরবী নিয়্যাত করতে গিয়ে তাকবীরে উলা থেকে বঞ্চিত হওয়া বা জোরে জোরে উচ্চারণ করে অন্যের মনোযোগ নষ্ট করা যাবে না।
(ইবনে তাইময়া, আলফাতাওয়াল কুবরা ১/২১৩ (শামেলা), ইবনে নুজাইম, আল বাহরুর রায়েক ১/৪৮২)
নিয়্যাতের বাক্য মুখে উচ্চারণ করাও জায়িয।
অন্তরের ইচ্ছার সাথে আবার মুখের উচ্চারণ করা সম্পর্কে লা মাযহাবী তথা-কথিত সালাফীদের মত হলো- "নিয়্যাতের বাক্য মুখে উচ্চারণ করা বিদা'আত"।
এই ভূঁয়া সালাফী ওয়াহাবীদের প্রাচীন ঈমাম আল্লামা ইবনে কায়্যিম তাঁর বিখ্যাত কিতাব 'আররুহ'-তে এ বিষয়ে লিখেছেনঃ "ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্য নিয়্যাতের সঙ্গে মুখে উচ্চারণ করাও কি জরুরী? (জবাবে) ঈসালে সওয়াব সম্পর্কে নবী করীম কাউকে কোথাও বলেন নি তুুমি বল, হে আল্লাহ্! এই সওয়াব অমুকের পুত্র অমুকের পক্ষ থেকে গ্রহণ কর। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তো বান্দার ইচ্ছা ও কর্মের মাধ্যমেই অবগত আছেন। সুতরাং নিয়্যাতের সাথে যদি কেউ মুখেও তা উচ্চারণ করে, তাহলে সেটি হবে আরো ভালো (জায়িয)।"
[সূত্রঃ আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম- আররুহ্; পৃৃষ্ঠা ২২০; অনুবাদঃ লোকমান আহমদ আমীমী, আহসান পাবলিকেশন, ঢাকা।]
আমরা বলবোঃ ঈসালে সওয়াবের মতো একটি নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্তরের নিয়্যাতের সাথে মুখে নিয়্যাতের বাক্যগুলো উচ্চারণ করা যদি ভালো ও জায়িয হয়, সেই ক্ষেত্রে সালাতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্তরের নিয়্যাতের সাথে মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করা নাজায়িয ও বিদ'আত হয় কী করে? অতএব, অন্তরের প্রবল ইচ্ছার সাথে মুখে নিয়্যাতের বাক্যগুলো উচ্চারণ করা নাজায়িয ও বিদ'আত নয়।
প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) যখন নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন তখন 'আল্লাহু আকবার' বলে নামায শুরু করতেন।
তাকবীর বলার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠাতেন এবং উঠানোর সময় হাতের আঙ্গুলিসমূহ খোলা (ও কেবলামুখী করে) রাখতেন।
(সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, জামে তিরমিযী ২/৫ (নং২৩৯)
সাহীহ হাদীসে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠানোর কথাও বর্ণিত হয়েছে।
কিন্তু সেই হাদিসের ব্যাখ্যা হযরত ওয়ায়েল (রাযি.) বর্ণিত হাদীস দ্বারা হয়ে যায়, যা সুনানে আবু দাউদে নিন্মোক্ত শব্দে বর্ণিত হয়েছে।
أَنَّهُ أَبْصَرَ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- حِينَ قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى كَانَتَا بِحِيَالِ مَنْكِبَيْهِ وَحَاذَى بِإِبْهَامَيْهِ أُذُنَيْهِ ثُمَّ كَبَّرَ
তিনি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) কে দেখলেন যে, তিনি যখন নামাযে দাঁড়ালেন তখন উভয় হাত এভাবে উঁচু করলেন যে, উভয় হাত কাঁধ বরাবর এবং উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলি কান বরাবর হয়ে গেল, এরপর তাকবীর দিলেন। (সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস-৭২৪)
বোঝা গেল শুধু কাঁধ পর্যন্ত ওঠানো উদ্দেশ্য নয় বরং এভাবে উঠাতে হবে যাতে উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আবার এও হতে পারে যে, কাঁধ পর্যন্ত ওঠানোও একটি মাসনূন পদ্ধতি।
০১- তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত কতটুকু উঠাবে?
আহলে হাদীসদের মতে তাকবীরে তাহরীমার সময় হস্তদ্বয় কাঁধ বরাবর উত্তোলন করা সুন্নাত।
▆ তাদের দলীল,
হযরত নাফে’ রাযি. থেকে বর্নিত যে, ইবনে ওমর রাযি. যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু –হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। (ইবনে মাজাহ, ৩৯১)
হানাফী মাযহাব মতে তাহরীমার সময় দুই হাত কান পর্যন্ত এভাবে উঠাতে হবে যে, হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী থাকে এবং বৃদ্ধা আঙ্গুল কানের লতি বরাবর থাকে।
আহনাফের দলীল,
হযরত বারা ইবনে আ’যেব রাযি. বলেন,
كان النبي صلي الله عليه وسلم إذا كبر لافتتاح الصلاة رفع يديه حتى يكون إبهاماه قريبا من شحمتي أذنيه
(তহাবী শরীফ-১/১৪৪, আবু দাউদ শরীফ-১/১০৫, তিরমিযী শরীফ-১/৩৩, মুসলিম শরীফ-১/১৬৮)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাবঃ
কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন কান পর্যন্ত এবং কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠাতেন, তেমনি কখনো কাঁধ পর্যন্তও উঠাতেন।
কিন্তু হানাফী ফকীহগন যেহেতু এক হাদীসে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার স্থলে সকল হাদীস থেকে সার নির্যাস আহরণ করেন তাই তাদের বক্তব্য হলো তাহরীমার সময় এমন ভাবে হাত উঠাতে হবে যাতে হাতের আঙ্গুলগুলো কান বরাবর, বৃদ্ধা আঙ্গুল কানের লতি বরাবর এবং হাতের তালু কাঁধ বরাবর থাকে।
তাহলে সকল হাদীসের উপর আমল হয়ে যাবে।
ইমাম ত্বাহাবী রহ. স্বয়ং উক্ত আমলকারী; তিনি এই বিষয়ে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর ওফাত পূর্ববর্তী জীবনকালে কৃত আমলের ধারাবাহিকতা বা সূত্র পরম্পরায় সাহাবায়ে ক্বিরাম রা. থেকে প্রখ্যাত তাবিয়ী ইমাম আবূ হানিফা রহ., ইমাম আবূ ইউসূফ রহ. ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এঁর অভিমতে এ আমলের ধারাবাহিকতা জারী থাকা প্রমাণ করেছেন।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* ইমাম ত্বাহাবী রহ. (২৩৮-৩২১হি.) : ত্বাহাবী শরীফ, খণ্ড ১, অধ্যায় সালাত, অনুচ্ছেদ ১৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭-৩৭১; ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ।
★২-ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরা
▆ আহলে হাদীসদের মতে :
ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরা সুন্নাত নয়, বরং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা সুন্নাত।
দলীলঃ
قال سهل بن سعد رض كان الناس يئمرون ان يضع الرجل اليد اليمنى علي ذراعه اليسرى في الصلاة (رواه البخاري-١/١٠٥، الترمذي-١/٣٤)
হানাফী মাযহাব মতে :
তাহরীমার পর দুই হাত বাঁধা সুন্নাত।
হাত বাঁধার নিয়ম হলো, ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের উপর থাকবে। এবং কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা পেঁচিয়ে ধরবে। অন্য তিন আঙ্গুল বাম হাতের উপর বিছানো থাকবে।
দলীলঃ
عن وائل بن حجر، قال: قلت: لأنظرن إلى صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف يصلي، قال: فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم فاستقبل القبلة فكبر فرفع يديه حتى حاذتا أذنيه، ثم أخذ شماله بيمينه (رواه أبو داود- ١/١٠٥، الترمذي-١/٣٤،سنن الدارمي، رقم الحديث-١٣٩٧)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব :
এক হাদীসে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার কারণে আহলে হাদীসরা অন্য হাদীসগুলো পরিত্যাগ করে বসে।
ফলে সেই জানা হাদীসটিরও সঠিক মর্ম অনুযায়ী তাদের আমল হলো কিনা তা সন্দেহযুক্ত থেকে যায়।
এ ক্ষেত্রে হানাফী ফকীহগন মনে করেন হাত বাঁধা বিষয়ক যে হাদীসগুলো রয়েছে তার সমন্বিত রূপই হলো সুন্নাত তরীকা।
ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযি. সুত্রে বর্ণিত হাদীস থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়।
কেননা হাদীসে এসেছে যে, প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরতেন এবং তাঁর ডান হাত থাকতো বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি, ও বাহুর উপর।
★৩- নাভির নিচে হাত বাঁধা
▆ আহলে হাদীসদের মতে :
নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাতের পরিপন্থী। বরং হাত বাঁধতে হবে সিনার উপর। এ ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সকলের একই বিধান।
দলীলঃ
عن طاوس، قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع يده اليمنى على يده اليسرى ثم يشد بهما على صدره وهو في الصلاة (أبو داود، رقم الحديث-٧٥٩)
হানাফী মাযহাব মতে :
ইমাম আবু হানীফা রহ., সুফিয়ান সাওরী, ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, আবু ইসহাক মারওয়াযী প্রমুখ ইমামগন বলেন, নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাত। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর প্রসিদ্ধ মতও তাই। এবং ইমাম শাফেয়ী রহ. থেকেও অনুরূপ মত বর্নিত আছে।
দলীলঃ
عن علقمة عن وائل بن حجر عن أبيه رض قال رأيت النبي صلي الله عليه و سلم وضع يمينه علي شماله في الصلاة تحت السرة (مصنف ابن أبي شيبة-١٢/٣٩٠ ، سنن أبي دلود- رقم الحديث-٧٥٦ ، مسند أحمد-١/١١٠ ، رد المحتار-١/٣٥١)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব :
বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে তিনটি বর্ননা রয়েছে। তবে সবগুলোতে কালাম ও আপত্তি রয়েছে।
তাছাড়া علي صدره কথাটুকু "মুআম্মাল ইবনে ইসমাঈল" নামী জনৈক রাবীর নিজস্ব বৃদ্ধি, যাকে ইমাম বুখারী রহ. মুনকারুল হাদীস সাব্যস্ত করেছেন। (টিকাটি দেখুন)
টিকা :
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=1728621234119981&id=100009163649667&refid=17&_ft_=og_action_id.
_____
তাছাড়া
সুফিয়ান সাওরী রহ. এঁর অন্যান্য শাগরেদ তাঁদের বর্ণিত এই হাদীসে উক্ত অংশটুকু উল্লেখ করেননি।
শুধু মুআম্মাল ইবনে ইসমাঈলই উক্ত অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন।
দ্বিতীয়ত
উক্ত হাদীসটিতে মহিলাদের হাত বাঁধার হুকুম বলা হয়েছে, পুরুষের নয়।
ইহা থেকে সুস্পষ্ট হলো পুরুষ ও নারীর বিধান এক নয়।
★৪-কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পায়ের গোড়ালী সমান করে দাঁড়ানো
▆ আহলে হাদীসদের মতে :
নামাজে একে অপরের কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে এবং একজনের পা অপরজনের পায়ের সাথে মিলিয়ে দাঁড়ানো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
যদি কেউ এরূপ না করে তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না।
দলীলঃ
عن أنس بن مالك، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أقيموا صفوفكم، فإني أراكم من وراء ظهري، وكان أحدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه، وقدمه بقدمه (رواه البخاري-١/١٠٠)
আহনাফের মতে :
নামাজের মধ্যে পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলের পায়ের গোড়ালী একই বরাবর করে দাঁড়াতে হবে।
দলীলঃ
عن أنس بن مالك، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أقيموا صفوفكم، فإني أراكم من وراء ظهري، وكان أحدنا يلزق منكبه بمنكب صاحبه، وقدمه بقدمه (رواه البخاري-١/١٠٠، أبو داود-١/٩٧)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব :
আহলে হাদীসরাও তাদের দাবীর স্বপক্ষে এই হাদীসটি উল্লেখ করে থাকে।
বস্তুত এই হাদীসের মধ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এবং সকলে পায়ের গোড়ালী এক সমান করে কাতার সোজা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
হানাফীরা কাতার সোজা করার জন্য উক্ত পদ্ধতির উপর আমল করেন।
এবং কাতার সোজা করার পর নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সকলের পায়ের গোড়ালী এক বরাবর রাখতে বলেন।
প্রকৃত পক্ষে হাদীসের মর্মও এটাই।
হাদীসের অর্থ এই নয় যে, একজন নিজের পা পার্শ্ববর্তী ভাইয়ের পায়ের উপর উঠিয়ে দেবে বা একদম মিলিয়ে রাখবে।
অনুরূপভাবে
কাঁধে কাঁধ মিলানোর অর্থ এই নয় যে, একজনের কাঁধ অপরজনের কাঁধে মিলিয়ে সংকীর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করে অন্য ভাইয়ের খুশু-খুযু ও একাগ্রতা নষ্ট করবে।
★৫- জামাতে মুক্তাদীর জন্য কি ফাতেহা পড়া ওয়াজিব?
▆ আহলে হাদীসদের মতে :
মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতেহা পড়া ফরয। কেউ না পড়লে তার নামজই হবে না। চাই নামাজের কেরাত জেহরী হোক বা সিররী হোক।
দলীলঃ
عن عبادة بن الصامت، قال: صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم الصبح، فثقلت عليه القراءة، فلما انصرف قال: إني أراكم تقرءون وراء إمامكم، قال: قلنا: يا رسول الله، إي والله، قال: لا تفعلوا إلا بأم القرآن، فإنه لا صلاة لمن لم يقرأ بها (رواه الترمذي- ١/٤١)
হানাফী মাযহাব মতে :
ইমাম আবু হানীফা রহ., ইমাম আবু ইউসুফ রহ., ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর নিকট সর্বাবস্থায় (নামাজ সিররী হোক বা জেহরী মুক্তাদী ইমামের কেরাত শুনতে পাক বা না পাক) মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতেহা পড়া নাজায়েজ। বরং মাকরুহে তাহরীমী।
দলীলঃ
قوله تعالي: وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ (سورة الأعراف- ٢٠٤)
قوله عليه السلام: من صلي ركعة لم يقرأ فيها بأم القرآن فلم يصل إلا أن يكون وراء الإمام (رواه الترمذي- ١/٤٢)
قوله عليه السلام: عن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من كان له إمام، فقراءة الإمام له قراءة (سنن إبن ماجة، رقم الحديث- ٨٥٠، الترمذي- ١/٤٢، نصب الراية- ٢/١٢، تفسير إبن كثير- ٢/٢٨٠، مسلم- ١/١٧٤، نسائي- ١/١٤٦، أبو داود- ١/١٤٠، مسند أحمد- ٤/٤١٠)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব :
১- কোরআনের উক্ত আয়াত হলো নাসেখ আর সূরা ফাতেহা পড়ার হাদীস মানসূখ।
২- উক্ত হাদীসে একাকী নামাজ আদায়কারীর হুকুম বলা হয়েছে। মুক্তাদীর জন্য নয়।
_________
▆ নামাযে “ইমামের পড়ার সময় তোমরা চুপ থাকবে’’ হাদিস পাকের তাহকিক।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1769721473343290
★৬- জামাতে আস্তে আমীন বলবে
▆ আহলে হাদীসদের মতে :
উচ্চ আওয়াজে আমীন বলা সুন্নাত।
দলীলঃ
قال رسول الله صلي الله عليه و سلم: إذا قال الإمام ولا الضالين فقولوا آمين فإنه من وافق قوله قول الملائكة غفر له (رواه البخاري- ١/٧٨٢)
আহনাফের মতে :
আমীন আস্তে বলা সুন্নাত।
দলীলঃ
عن علقمة بن وائل عن ابيه أن النبي صلي الله عليه وسلم قرأ غير المغضوب عليهم ولا الضالين فقال آمين وخفض بها صوته (رواه الترمذي- ١/٥٩، مسند أحمد- ٤/٣١٦، إعلاء السنن- ٢/٢١١، نصب الراية- ١/٣٦٩، البخاري- ١/٧٨٢، بيهقي- ٢/٥٧، سنن الدار قطني- ١/٣٣٤، الجوهر النقير- ٢/٥٨ )
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব :
কোরআন হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমীন আস্তে বলা সুন্নাত।
অথচ লা মাযহাবীরা বলে থাকে আমীন জোরে বলা সুন্নাতে মোআক্কাদা।
কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের নিকট কোরআন থেকে কোন দলীল নেই। এবং প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর ক্বাওলী কোন হাদীস নেই। যেখানে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, তোমরা ১৯ রাকাত ফরয নামাজের মধ্যে মাত্র ৮ রাকাতে জোরে আমীন বলবে।
আর যে সমস্ত ফে’লী হাদীস তারা পেশ করেন তার অধিকাংশ সহীহ, কিন্তু সুস্পষ্ট নয়।
আর যেগুলো সুস্পষ্ট সেগুলো আবার সহীহ নয়।
তারা তাদের মজবুত দলীল হিসাবে ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযি. এর হাদীসটি উল্লেখ করে থাকেন। যাতে রয়েছে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) উচ্চস্বরে আমীন বলেছেন।
এই হাদীসের জবাব হলো,
স্বয়ং হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাযি. বলেছেন, আমাদের শিখানোর জন্যই প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) জোরে আমীন বলেছেন। (আসারুস সুনান ১/৯২)
★৭- রাফে’ ইয়াদাইন
▆ আহলে হাদীসদের মতে :
নামাজের শুরুতে এবং প্রতি রাকাতে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রাফে’ ইয়াদাইন করা সুন্নাতে মোআক্কাদা।
দলীলঃ
عن سالم بن عبد الله، أن ابن عمر، قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا قام للصلاة رفع يديه حتى تكونا حذو منكبيه، ثم كبر، فإذا أراد أن يركع فعل مثل ذلك، وإذا رفع من الركوع فعل مثل ذلك، ولا يفعله حين يرفع رأسه من السجود (رواه مسلم، رقم الحديث-٣٩٠)
আহনাফের মতে :
তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত রুকুতে যাওয়া ও রুকু থেকে উঠার সময় রাফে’ ইয়াদাইন মাকরুহ অর্থাৎ অনুত্তম।
দলীলঃ
عن جابر بن سمرة، قال: خرج علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: ما لي أراكم رافعي أيديكم كأنها أذناب خيل شمس؟ اسكنوا في الصلاة (رواه مسلم- ١/١٨١)
عن علقمة، قال: قال عبد الله بن مسعود: ألا أصلي بكم صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فصلى، فلم يرفع يديه إلا في أول مرة (الترمذي- ١/٣٥) ----------- (أبو داود- ١/١٥٠، نسائي- قرم الحديث- ١٧٦، طحاوي- ١/١٥٨، مسند أحمد- ٥-٩٣، الجوهر النقير- ١\١٣٨)
আহলে হাদীসদের জবাব :
রাফে’ ইয়াদাইন সম্পর্কে কোন ক্বাওলী হাদীস নেই যার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাফে’ ইয়াদাইন করতে বলেছেন।
এমনকি এর ফযিলত সম্পর্কেও কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কতক সাহাবায়ে কেরাম এটা করতে দেখেছেন।
অথচ এটা সর্বসম্মত উসূল যে, ক্বাওলী আর ফে’লী হাদীসের মধ্যে ক্বাওলী হাদীস বেশী শক্তিশালী।
আর ক্বাওলী হাদীস দ্বারা কোন একটা জিনিস সর্বদা পড়ার কথা প্রমাণ করা যায়। কিন্তু ফে’লী হাদীস এর ব্যতিক্রম।
তাছাড়া তাদের উত্থাপনকৃত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. এর হাদীসের জবাব হলো, এটা প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর প্রথম যুগের আমল ছিলো। পরবর্তীতে এটা রহিত হয়ে গেছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাযি. একদিন মসজিদে হারামে দেখলেন যে, এক ব্যক্তিকে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রাফে’ ইয়াদাইন করছে।
তিনি তাকে বললেন, তুমি এরকম করোনা। কেননা প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) এটা শুরুর যামানায় করলেও পরে তা তরক করেছেন।
দ্বিতীয় প্রমাণ হলো, এই হাদীসের বর্ননাকারী স্বয়ং ইবনে ওমর রাযি. রাফে’ ইয়াদাইন করতেন না।
এর দ্বারা বুঝে আসে যে, তাঁর নিকটও আলোচ্য হাদীসটি মানসুখ (রহিত) বলে বিবেচিত ছিলো।