সাহাবীদের যামানায় নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত।

ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসহাক আল ফাকিহী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
ফজরের সালাতের পর (মক্কা শরীফে) মসজিদে হারামে ওয়ায়েজ (যিনি কোর’আন, হাদীস থেকে বিভিন্ন কিসসা বর্ণনা করতেন) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং আল্লাহর যিকির করতেন এবং দোয়া করতেন এবং (উপস্থিত) মানুষ আমিন আমিন বলতেন। আর এটা হত মাকামে ইবরাহীমের পেছনে, ইমামের সালাম ফেরানোর পর।
আর এটা সর্বপ্রথম শুরু করেছিলেন উবাইদ বিন উমাইর বিন কাতাদাহ আল লাইছি রাদিয়াল্লাহু আনহু। এরপর থেকে এ আমল চলছিল।
রেফারেন্সঃ
আখবারু মাক্কাহ লিল ফাকিহী-২/৩৮৮

উবাইদ বিন উমাইর বিন কাতাদাহ আল লাইছির পরিচিতিঃ
যিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট ওয়ায়েজ এবং মুফাসসির। তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য তাবেয়ীগণের একজন। সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর মজলিসে বসতেন।
রেফারেন্সঃ
সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-৪/১৫৬

আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসহাক আল ফাকিহীর পরিচিতিঃ
ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেন, তিনি একজন ইমাম ছিলেন। তিনি ছিলেন ইমাম বাইহাকীর দাদা উসতাদ।
[সূত্রঃ দেখুন, সিয়ার-আত তাবাকাতুল ইশরূন]।

পর্যালোচনাঃ
______________
• নামাজের পর সম্মিলিত দোয়া শুরু হয়েছিল সাহাবায়ে কেরামের সময় থেকে।
• এটা শুরু করেছিলেন একজন বিশিষ্ট তাবেয়ী যার নির্ভরযোগ্যতার উপর সকলেই একমত।
• যিনি এই আমল শুরু করেছিলেন, তাঁর এমন মজলিসে সাহাবায়ে কেরাম উপস্থিত থাকতেন।
• এ সুন্দর আমলটি চালু হয়েছিল স্বয়ং মক্কা শরীফে, মাকামে ইবরাহীমের পিছনে।
• সালাতের পর এমন সম্মিলিত দোয়াতে তাদের সম্মতি ছিল বিধায় কোন সাহাবায়ে কেরাম এর কোন বিরোধিতা করেন নাই। সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বয়ং তাঁর মজলিসে বসতেন, তিনিও এমন সম্মিলিত দোয়ার বিরোধিতা করেন নাই।
• নামাজের পর সম্মিলিত দোয়া সাহাবীদের এবং তাবেয়গণের আমল হিসেবে প্রমাণিত। বেদ’আত বলার কোন সুযোগ নেই।
• যারা নামাজের পর সম্মিলিত দোয়াকে বেদ’আত বলে, এটা তাদের অজ্ঞতার পরিচয়।
• আলহামদু লিল্লাহ, আমরা সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণকে অনুসরণ করছি।

সুপ্রিয় পাঠক, এখন আমরা অপর এক সাহাবীর সাথে পরিচিত হতে যাচ্ছি।

সাহাবীর পরিচয়ঃ
____________
আল আলা বিন আল হাদরামী রাদিয়াল্লাহু আনহু ।
তিনি এমন এক সাহাবী ছিলেন যাকে মুসতাজাবুদ দা’ওয়াহ বলা হত, কারণ তিনি দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করতেন।

আলোচনাঃ
_______________________
ঘটনা সংক্ষেপ করে মূল কথাটি বলার চেষ্টা করছি।
হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফত আমলে মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য হযরত আলা হাযরামী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে মুজাহিদদের কমান্ডার বানিয়ে বাহরাইন পাঠালেন। একটি শুষ্ক ময়দান অতিক্রম করার সময় সকলে প্রচন্ড পিপাসার্ত হয়ে পরলেন। সবার পাত্র খালি। পানি নেই।
দাহনা নামক স্থানে সকলে রাত্রি যাপন করলেন। এক পর্যায়ে আলা বিন আল হাযরামী রাদিয়াল্লাহু আনহু সকলকে ডাকলেন। হযরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাদের সাথে ছিলেন। সবাই তখন চিন্তায় কাতর ছিলেন। আলা রাদিয়াল্লাহু আনহু সবাইকে শান্তনা দিলেন, বললেন, তোমরা মুসলমান। আল্লাহর পথে বের হয়েছো। আল্লাহর কসম, তোমরা কখনো লাঞ্ছিত হবেনা।
ফজরের সময় হলো।
সকল সাহাবায়ে কেরাম তায়াম্মুম করে (তায়াম্মুমের কথাটি ইমতাউল আসমা কিতাবে রয়েছে) সালাত আদায় করলেন। সালাত আদায়ের পর হযরত আলা বিন আল হাদরামী রাদিয়াল্লাহু আনহু হাত তোলে পানির জন্য দোয়া করলেন। (হাত তোলার বর্ণনা তারীখে তাবারীতে রয়েছে) এবং সকল সাহাবায়ে কেরাম তাঁর সাথে দোয়া করলেন। (আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করলেন) দোয়া শেষে তারা পানি দেখতে পেলেন। সকলেই সেদিকে ছুটলেন এবং পানি পান ও গোসল সারলেন।
রেফারেন্সঃ
_________________
• এ ঐতিহাসিক ঘটনাটি নামধারী আহলে হাদীসদের শায়েখ (তাদের দাবী অনুসারে) ইবনু কাসীর তাঁর আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ গ্রন্থে (৬/৩৭০) উল্লেখ করেছেন।
• একই ঘটনা বিশ্ববিখ্যাত ইমাম, মুফাসসির, ঐতিহাসিক, ইবনু জারীর তাঁর তারীখে তাবারীতে ২য় খন্ডের ৫২২ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন।
• একই ঘটনা ইমাম মিকরিযী তাঁর ইমতাউল আসমা নামক বিখ্যাত কিতাবে (৫/২৯১) উল্লেখ করেছেন।
• একই ঘটনা ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ রিদা তাঁর আবু বকর সিদ্দীক আউয়ালু খুলাফাইর রাশিদীন নামক কিতাবে ( পেইজঃ১০০) উল্লেখ করেছেন।
• একই ঘটনা সালাফীদের হাতে গড়া ডক্টর সায়্যিদ বিন আল হুসাইন আল আফফানী তাঁর বিখ্যাত কিতাব ফুরসানুন নাহার মিনাস সাহাবাতিল আখইয়ার (৫/১২২) এ উল্লেখ করেছেন।

চাপাবাজিঃ
______________________
নামধারী আহলে হাদীসরা এ ঘটনাকে সরাসরি অস্বীকার করতে না পেরে বলে, এ ঘটনাটি সনদ বিহীনভাবে বর্ণিত হয়েছে, সুতরাং এটি দিয়ে দলীল দেয়া যাবেনা।

জবাবঃ
_____________________
• নামধারী চাপাবাজ আহলে হাদীস নামক ভন্ডরা এখানে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। মিথ্যা ধোঁকা দিয়ে সত্যকে ঢাকার বৃথা চেস্টা করেছে। অবশ্যই এ ঘটনার সনদ এর উল্লেখ রয়েছে। তারীখে তাবারী খুলুন, দেখবেন পরিস্কারভাবে এর সনদ সেখানে রয়েছে।
• সালাফীরা নিজেদেরকে নিয়ে গর্ব করে, তারা নাকি জাল হাদীস কখনো বলেনা। তো তারাই তো দাবী করে, ইমাম ইবনু কাসীর সালাফী আকীদার লোক ছিলেন। তাহলে তাদের (তাদের দাবী অনুসারে) শায়েখ ইবনু কাসীর কীভাবে এই জাল কথাটিকে সাহাবীদের নামে তাঁর কিতাবে চালিয়ে দিলেন?
মূলতঃ বিষয়টি এমন নয়। তাঁর পূর্বে এ ঘটনার সনদ সহ বর্ণিত হয়েছে। তিনি যদিও তাঁর কিতাবে সনদের উল্লেখ করেন নাই, কিন্তু এ ঘটনা নিয়ে তিনি কোন সমালোচনা করেন নাই। তাঁর মানে তিনি এটিকে সমর্থন করেছেন। যদি এটা জাল হত, তবে তিনি সেটা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করতেন না, কিংবা উল্লেখের পর এর সমালোচনা করতেন। মোট কথা, ইবনু কাসীরের নিকট এটি গ্রহণযোগ্য ঘটনা ছিল।
• এ ঘটনাটি যদি সনদ বিহীন বর্ণনা হয়ে থাকে, তবে তো এটির কোন ভিত্তি থাকার কথা নয়। তাহলে সালাফী, লা-মাযহাবীদের শায়েখরা তাদের কিতাবে এটিকে কোন সমালোচনা ছাড়াই উল্লেখ করেছেন? ডক্টর আফফানী তো তাদেরই হাতে গড়া লোক। আলবানীর আকীদার লোক। সালাফী শায়েখদের নিকট থেকে তা’লীম নিয়েছেন। তো তিনি কেন তাঁর কিতাবে এ ঘটনাটি কোনরূপ সমালোচনা ছাড়াই উল্লেখ করলেন? অবশ্যই এটি তাঁর নিকট গ্রহনযোগ্য ছিল বিধায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
• সুতরাং নামধারী আহলে হাদীসরা একটি গ্রহনযোগ্য ঘটনাকে নিজের ঘৃণ্য স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সনদ বিহীন বলে উড়িয়ে দিতে চাইছে। এটি তাদের নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। আসলে এটি তাদের চরিত্র। এটি নতুন কিছু নয়। এমন অনেক মিথ্যাচার তারা আরো করেছে। প্রমাণের কোন অভাব নেই। নিজেদের স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে তাদের নিজেদের শায়েখেদের লাথি মারতে দ্বিধা বোধ করেনা।
অদ্ভূত চরিত্র এই কথিত, নামধারী, ফেতনাবাজ আহলে হাদীসরা!

ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত ভাবে হাত উঠিয়ে দুআ করা মুস্তাহাব। সাহাবা দের আমালের দ্বারা এটি প্রমানিত। ঢালাও ভাবে বেদআত বলার কোন সুযোগ নেই।
প্রমান :
الدعاء الاجـتماعى بـرفع يـدى الامام والماموم بعـد الصلوة الفـرضية مستحب بشرط عـدم الالـتـزام و بشرط انه جـزء من الصلوة –
....... وقد كان العلاء رضى الله تعالى عـنه من سادات الصحابة العلماء العباد مجابى الدعوة اتفق له فى هذه الغزوة انه زاد الجيش وخيامهم وشرابهم وبقـو على الارض ليـس معهم شيئ سوا ثيابهم وذالك ليلا ولم يقدروا منها على بعير واحد فركب الناس من الهم واغم مالا ولم يحد ولا يوصف وجعل بعضهم يوصى الى بعض – فنادى منادى العلاء رضى الله تعالى عنه فاجتمع الناس اليه فقال ايّها النّاس الستم المسلمين ؟ الستم فى سبيل الله ؟ الستم انصار الله ؟ قالوا بلى – قال فابشروا فو الله لا يخذ الله من كان فى مثل حالكم – و نودى بصلاة الصبح حين طلع الفجر فصلّى بالناس فلما قضى الصلوة جثا على ركبتيه وجثا الناس "ونصب فى الدعاء ورفع يديه وفعل الناس مثله" حتى طلع الفجر و جعل الناس يـنظرون الى سراب الشمس يلمح مرة بعد اخرى وهو يجتهد الدعاء-
(البداية والنهاية – الجزء الساد س من المجلد الثالث 327\328 – 329 - وفى نسحة اخرى 6\ 331-334
و اورد هذ القصة بتمامه ابن الاثير مأخوذا من تاريخ الطبرى – تلك الرواية معتمد عليها لانه قال فى كشف الطنون (فى مدح البداية والنهاية ) وهو كتاب مبسوط اعتمد فى نقله على النص من الكتاب والسنة فى وقاع الالوف والسالفة وميز بين الصحيح والسقيم والخبر والاسرائيلى وغيره (مقدمة البداية والنهاية 1\3)
ذالك الحديث مرفوع حكما موقوف لفظا – تيسير المصطلح الحديث 132-133 )
______________

 
Top