"কারবালার করুণ কাহিনী-৬"
--ইমাম মুসলিম (রাদ্বি আল্লাহু আনহু) এর শাহাদত--
হযরত ইমাম মুসলিম (রাদ্বি আল্লাহু আনহু) যখন কূফায় পৌঁছেন, তখন বেওফা কূফাবাসীরা তাঁর হাতে বায়াত করে। পরবর্তীতে তাঁরথেকে মুখ ফিরায়ে নেয়,তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করে। তিনি একাকী হয়ে যান। সময়টা ছিল রাত্রি বেলা,ইবনে যিয়াত তাকে গ্রেফতার করার জন্য শহরের চারদিকে কড়া পহারার ব্যবস্তা করলো। হযরত ইমাম মুসলিম (রাদ্বি আল্লাহু আনহু) ক্ষুধা-তৃষ্ণার্ত অবস্তায় একটি মসজিদে অনেক্ষন বসে থাকার পর রাত্রির অন্ধকারে বের হলেন। পথ ঘাট সম্পর্ককে তিনি মোটেই অবগত ছিলেন না। মনে মনে বলছিলেন্ আফসোস, হোসাইন থেকে আলাদা হয়ে শত্রূ মধ্যে এসে পড়লাম। মনের কথা শোনার মত কোন দরদী ব্যক্তি নেই। এমন কোন বার্তাবাহকও নেই যিনি আমার দুর্দশার খবর ইমাম হোসাইনকে পৌঁছাবে।
এভাবে হয়রান পেরেসান হয়ে মহল্লার অলিগলিতে ঘুরছিলেন। ওখানে ‘তুয়া’ নামে এক বৃদ্ধাকে দেখে ওর কাছে পানি চাইলে,বৃদ্ধা পানি পান করালো এবং পরিচয় পাওয়ার পর ওনাকে ঘরে আশ্রয় দিলেন। এ বৃদ্ধার ছেলে ইবনে যিয়াদের দালাল ছিল। সে এ খবর এখবর ইবনে যিয়াদের কানে পৌঁছালে ইবনে যিয়াদ সঙ্গে সঙ্গে সৈন্য পাঠিয়ে দিল। সৈন্যরা এ বৃদ্ধার ঘর চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো এবং ইমাম মুসলিমকে গ্রেপ্তার করার প্রস্তুতি নিল। ইমাম মুসলিম যখন টের পেলেন তখন তিনি খোলা তরবারি নিয়ে ইবনে যিয়াদের সৈন্যদের উপর আক্রমান করলেন। ছাগল পালের মধ্যে বাঘের আক্রমনের মত তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন,সৈন্যরা হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে এদিক সেদিক পালিয়ে গেল,অনেকেই মারা গেল এবং অনেকে আহত হলো। এ কাপুরুষরা সম্মুখে আক্রমনে দাঁড়াতে না পেরে দূর থেকে দেয়ালে উঠে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলো। সেই সময় তিনি মক্কার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন-
“হে হোসাইন,আপনার ভাই আঘাতে আঘাতে জর্জরিত এবং কূফাবসী কি ধরনের আচরন শুরু করেছে এ খবরতো আপনি এখনো পাননি। আফসোস, এ মর্মাতিক খবর আপনাকে কে পৌঁছাবে এবং আপনাকে এখানে আসা থেকে কে বাঁধা দেবে।”
এ ফাঁকে আরেকটি পাথর এসে তাঁর ঠোঁট ও দাঁতের উপর পড়লো।এতে ওনার মুখ থেকে রক্ত বের হতে লগলো। দাড়ি মুবারক রক্তে লাল হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তিনি দুর্বল হয়ে একটি দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে গেলেন।এ সুযোগে এক কাপুরুষ ঘরের ভিতর দিয়ে এসে ওনার মাথায় তলোয়ার দিয়ে আঘাত করলো।এতে ওনার উপরের ঠোঁট কেটে গেল। এ অবস্তায় তিনি ওকে এক আঘাতে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন।তিনি সেখানে বসে রইল এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে লাগলেন, হে আল্লাহ্ আমি বড় তৃষ্ণার্থ। তাঁর এ ফরিয়াদ শুনে সেই বিদ্ধা ঘর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিল। তিনি গ্লাসে মুখ দিলে পানি রক্ত মিশ্রিত হয়ে লাল হয়েগেল। তিনি সেই পানি ফেলে দিলে বুড়ি পুনরায় আরেক গ্লাস এনে দেয়। সেটাও রক্ত মিশ্রিত হয়ে গেল। তৃতীয় বার এনে দিলে সেটাতে মুখ দিতেই তাঁর দাঁত ঝড়ে পড়লো। শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহর ইচ্ছা নেই’-এ বলে পানির গ্লাস হাত থেকে রেখে দিলেন। এরই মধ্যে পিছন থেকে কোন একজন তীর নিক্ষেপ করলো,সেটা তার পিঠে বিদ্ধ হলো। এতে তিনি কাবু হয়ে গেলেন। জালিমেরা এ সুযোগে দৌঁড়ে এসে তাঁকে ধরে ফেললো এবং ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেল। নরাধম ইবনে যিয়াদ নির্দেশ দিল যে তাঁকে ছাদে নিয়ে যেন হত্যা করা হয়। ইবনে কবির নামে এক জালিম তার হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেল।যাবার পথে তিনি দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন এবং বলছিলেন “আল্লাহুম্মাহ্-কূম বাইনানা ওয়া-বাইনা ক্বাউনা বিল হাক্কি”
ছাদে দিয়ে দেখলেন যে নীচে কূফাবাসীর সমবেত হয়ে এ দৃশ্য দেখতেছে। তিনি ওদেরকে লক্ষ্য করে বললেন,হে কূফাবাসী ,যখন আমার মস্তক শরীর থেকে আলাদা করে ফেলবে, তখন আমার দেহটা দাফন করিও এবং আমার শরীরের রক্তার্ত কাপড়টা খুলে মক্কাগামী কোন কাফেলাকে দিও যেন ইমাম হোসাইনকে পৌঁছায় এবং আমার ছেলেদ্বয়ের প্রতি একটু দয়া করিও। তারপর মক্কার দিকে তাকিয়ে বললেন “আস্সালামু-আলাইকা-ইয়াবনি রসুলআল্লাহ্” ভাই, আপনাকেতো আমার এখবর পৌঁছাতে পারলাম না। আপনি এদিকে আসার সিদ্ধান্ত কক্ষনো নিবেন না। ইত্যবসরে জাল্লাদ দেহ থেকে ওনার মাথা আলাদা করে ফেললো। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)
সবক:- আল্লাহ্ ওয়ালাগণ শত জুলুম অত্যাচার পরও স্বীয় বিশ্বাসে অটল থাকেন। কোন কিছু তাদেরকে টলাতে পারে না। কাপুরুষরা কখনো স্বীয় সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে না। কুফার সে কাপুরুষেরা প্রথমে আহলে বায়তের মহব্বতে গদ গদ করে উঠে। পরে ইবনে যিয়াদের হুমকিতে আহলে বায়তের জানের দুশমন হয়ে যায়।
--ইমাম মুসলিম (রাদ্বি আল্লাহু আনহু) এর শাহাদত--
হযরত ইমাম মুসলিম (রাদ্বি আল্লাহু আনহু) যখন কূফায় পৌঁছেন, তখন বেওফা কূফাবাসীরা তাঁর হাতে বায়াত করে। পরবর্তীতে তাঁরথেকে মুখ ফিরায়ে নেয়,তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করে। তিনি একাকী হয়ে যান। সময়টা ছিল রাত্রি বেলা,ইবনে যিয়াত তাকে গ্রেফতার করার জন্য শহরের চারদিকে কড়া পহারার ব্যবস্তা করলো। হযরত ইমাম মুসলিম (রাদ্বি আল্লাহু আনহু) ক্ষুধা-তৃষ্ণার্ত অবস্তায় একটি মসজিদে অনেক্ষন বসে থাকার পর রাত্রির অন্ধকারে বের হলেন। পথ ঘাট সম্পর্ককে তিনি মোটেই অবগত ছিলেন না। মনে মনে বলছিলেন্ আফসোস, হোসাইন থেকে আলাদা হয়ে শত্রূ মধ্যে এসে পড়লাম। মনের কথা শোনার মত কোন দরদী ব্যক্তি নেই। এমন কোন বার্তাবাহকও নেই যিনি আমার দুর্দশার খবর ইমাম হোসাইনকে পৌঁছাবে।
এভাবে হয়রান পেরেসান হয়ে মহল্লার অলিগলিতে ঘুরছিলেন। ওখানে ‘তুয়া’ নামে এক বৃদ্ধাকে দেখে ওর কাছে পানি চাইলে,বৃদ্ধা পানি পান করালো এবং পরিচয় পাওয়ার পর ওনাকে ঘরে আশ্রয় দিলেন। এ বৃদ্ধার ছেলে ইবনে যিয়াদের দালাল ছিল। সে এ খবর এখবর ইবনে যিয়াদের কানে পৌঁছালে ইবনে যিয়াদ সঙ্গে সঙ্গে সৈন্য পাঠিয়ে দিল। সৈন্যরা এ বৃদ্ধার ঘর চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো এবং ইমাম মুসলিমকে গ্রেপ্তার করার প্রস্তুতি নিল। ইমাম মুসলিম যখন টের পেলেন তখন তিনি খোলা তরবারি নিয়ে ইবনে যিয়াদের সৈন্যদের উপর আক্রমান করলেন। ছাগল পালের মধ্যে বাঘের আক্রমনের মত তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন,সৈন্যরা হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে এদিক সেদিক পালিয়ে গেল,অনেকেই মারা গেল এবং অনেকে আহত হলো। এ কাপুরুষরা সম্মুখে আক্রমনে দাঁড়াতে না পেরে দূর থেকে দেয়ালে উঠে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলো। সেই সময় তিনি মক্কার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন-
“হে হোসাইন,আপনার ভাই আঘাতে আঘাতে জর্জরিত এবং কূফাবসী কি ধরনের আচরন শুরু করেছে এ খবরতো আপনি এখনো পাননি। আফসোস, এ মর্মাতিক খবর আপনাকে কে পৌঁছাবে এবং আপনাকে এখানে আসা থেকে কে বাঁধা দেবে।”
এ ফাঁকে আরেকটি পাথর এসে তাঁর ঠোঁট ও দাঁতের উপর পড়লো।এতে ওনার মুখ থেকে রক্ত বের হতে লগলো। দাড়ি মুবারক রক্তে লাল হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তিনি দুর্বল হয়ে একটি দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে গেলেন।এ সুযোগে এক কাপুরুষ ঘরের ভিতর দিয়ে এসে ওনার মাথায় তলোয়ার দিয়ে আঘাত করলো।এতে ওনার উপরের ঠোঁট কেটে গেল। এ অবস্তায় তিনি ওকে এক আঘাতে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন।তিনি সেখানে বসে রইল এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে লাগলেন, হে আল্লাহ্ আমি বড় তৃষ্ণার্থ। তাঁর এ ফরিয়াদ শুনে সেই বিদ্ধা ঘর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিল। তিনি গ্লাসে মুখ দিলে পানি রক্ত মিশ্রিত হয়ে লাল হয়েগেল। তিনি সেই পানি ফেলে দিলে বুড়ি পুনরায় আরেক গ্লাস এনে দেয়। সেটাও রক্ত মিশ্রিত হয়ে গেল। তৃতীয় বার এনে দিলে সেটাতে মুখ দিতেই তাঁর দাঁত ঝড়ে পড়লো। শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহর ইচ্ছা নেই’-এ বলে পানির গ্লাস হাত থেকে রেখে দিলেন। এরই মধ্যে পিছন থেকে কোন একজন তীর নিক্ষেপ করলো,সেটা তার পিঠে বিদ্ধ হলো। এতে তিনি কাবু হয়ে গেলেন। জালিমেরা এ সুযোগে দৌঁড়ে এসে তাঁকে ধরে ফেললো এবং ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেল। নরাধম ইবনে যিয়াদ নির্দেশ দিল যে তাঁকে ছাদে নিয়ে যেন হত্যা করা হয়। ইবনে কবির নামে এক জালিম তার হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেল।যাবার পথে তিনি দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন এবং বলছিলেন “আল্লাহুম্মাহ্-কূম বাইনানা ওয়া-বাইনা ক্বাউনা বিল হাক্কি”
ছাদে দিয়ে দেখলেন যে নীচে কূফাবাসীর সমবেত হয়ে এ দৃশ্য দেখতেছে। তিনি ওদেরকে লক্ষ্য করে বললেন,হে কূফাবাসী ,যখন আমার মস্তক শরীর থেকে আলাদা করে ফেলবে, তখন আমার দেহটা দাফন করিও এবং আমার শরীরের রক্তার্ত কাপড়টা খুলে মক্কাগামী কোন কাফেলাকে দিও যেন ইমাম হোসাইনকে পৌঁছায় এবং আমার ছেলেদ্বয়ের প্রতি একটু দয়া করিও। তারপর মক্কার দিকে তাকিয়ে বললেন “আস্সালামু-আলাইকা-ইয়াবনি রসুলআল্লাহ্” ভাই, আপনাকেতো আমার এখবর পৌঁছাতে পারলাম না। আপনি এদিকে আসার সিদ্ধান্ত কক্ষনো নিবেন না। ইত্যবসরে জাল্লাদ দেহ থেকে ওনার মাথা আলাদা করে ফেললো। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)
সবক:- আল্লাহ্ ওয়ালাগণ শত জুলুম অত্যাচার পরও স্বীয় বিশ্বাসে অটল থাকেন। কোন কিছু তাদেরকে টলাতে পারে না। কাপুরুষরা কখনো স্বীয় সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে না। কুফার সে কাপুরুষেরা প্রথমে আহলে বায়তের মহব্বতে গদ গদ করে উঠে। পরে ইবনে যিয়াদের হুমকিতে আহলে বায়তের জানের দুশমন হয়ে যায়।