▆ আউলিয়া কেরামের মাযার বা যিয়ারাত থেকে সাহায্য প্রার্থনা বা বরকত লাভ ▆
আউলিয়ার মাযার যেয়ারত করে তা থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা ইসলাম ধর্মে বৈধ কিনা এ প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে আমরা মহানবী (দ:) ও মুসলিম উম্মাহর উলামায়ে হাক্কানী রব্বানীবৃন্দের আকিদা-বিশ্বাস বিবেচনা করবো।
প্রিয় নবী (দ:)-এর আকিদা-বিশ্বাস
(১) হযরত বুরায়দা (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলে খোদা এরশাদ ফরমান, “ইতিপূবে আমি তোমাদেরকে কবর যেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে যেয়ারত করো।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুসলিম শরীফ, মেশকাত ১৫৪ পৃষ্ঠা।]
এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রাহ:) লিখেছেন যে, অজ্ঞতার যুগ সবেমাত্র পার হওয়ায় রাসূলুলাহ (দ:) কবর যেয়ারত নিষেধ করেছিলেন এই আশংকায় যে মুসলমানরা পুরনো জীবনধারায় প্রত্যাবর্তন করবেন। তবে মানুষেরা যখন ইসলামী ব্যবস্থার সাথে ভালভাবে পরিচিত হলেন, তখন প্রিয় নবী (দ:) যেয়ারতকে অনুমতি দিলেন
[আশ্আতুল লোমআত, ১ম খন্ড, ৭১৭ পৃষ্ঠা।]
(২) হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত নবী করীম (দ:) এরশাদ করেন, “আমি তোমাদের কবর যেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে যেয়ারত করো”।
[গ্রন্থ সূত্রঃ ইবনে মাজাহ, মেশকাত পৃষ্ঠা ১৫৪।]
(৩) মোহাম্মদ বিন নোমান (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলে খোদা (দ:) এরশাদ ফরমান, “যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবার তার পিতা-মাতার বা তাঁদের যে কোনো একজনের কবর যেয়ারত করে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং পুণ্যবানদের একজন হিসেবে তার নাম লেখা হবে”।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মেশাকাত, ১৫৪ পৃষ্ঠা।]
এ সকল হাদীস থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে প্রিয় নবী (দ:)-এর কাছে কবর যেয়ারত বৈধ। উপরন্তু, যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবার তাঁর পিতামাতার কবর যেয়ারত করেন, তাঁর গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
ইমাম শাফেয়ী (রহ:)-এর আকিদা-বিশ্বাস
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রহ:) ইমাম শাফেয়ী (রহ:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, “আমি ইমাম আবু হানিফা (রহ:)-এর সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর মাযার যেয়ারত করি। আমার যখন কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তখন আমি দু’রাকাত নামায আদায় করে ইমাম আবু হানিফা (র:)-এর মাযার যেয়ারত করি এবং তৎক্ষণাৎ আমার প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়”।
[গ্রন্থ সূত্রঃ রাদ্দুল মোহ্তার, ১ম খণ্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা।]
শায়খ আব্দুল হক দেহেলভীও লিখেন: “ইমাম শাফেয়ী (রহ:) বলেছেন যে হযরত মূসা কাযেমের (রহ:) মাযারে তাৎক্ষণিক দোয়া কবুল হয়”
[আশ্আতুল লোমআত, ১ম খণ্ড, ৭১৫ পৃষ্ঠা।]
এ সকল লেখনীতে প্রতিভাত হয় যে, ইমাম শাফেয়ীর (রহ:) এ মর্মে আকিদা-বিশ্বাস ছিল আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার যেয়ারত করে তা থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ এবং মাযারস্থ আউলিয়ায়ে কেরাম বিপদ-আপদ দূর করার একটি মাধ্যম, এ বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করাও বৈধ।
ইমাম সাবী মালেকী (রাহ:)-এর আকিদা-বিশ্বাস
“আল্লাহর নৈকট্যের জন্যে ওসীলা অন্বেষণ করো”- আল্ কুরআন (৫:৩৫)-এর এই আয়াতটি ব্যাখ্যাকালে ইমাম সাবী (রহ:) বলেন. “আল্লাহ্ ভিন্ন অপর কারো এবাদত-বন্দেগী করছেন মনে করে আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার যেয়ারতকারী মুসলমানদেরকে কাফের আখ্যা দেয়া স্পষ্ট গোমরাহী। তাঁদের মাযার যেয়ারত করা আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারো এবাদত-বন্দেগী নয়, এটা হলো আল্লাহ্ যাঁদেরকে ভালোবাসেন তাঁদেরকে ভালোবাসার নিদর্শন”।
[গ্রন্থ সূত্রঃ তাফসীরে সাবী, ১ম খণ্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা।]
ইমাম সাবী (রহ:)-এর এই ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় যে আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার যেয়ারত বৈধ এবং এটা আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারো পূজা-অর্চনা নয়, বরং আল্লাহ্ যাঁদেরকে ভালোবাসেন তাঁদেরকে ভালোবাসার নির্দশন।
সুলতানুল মাশায়েখ হযরত নিযামউদ্দীন আউলিয়ার আকিদা-বিশ্বাস
হযরত নিজামউদ্দীন আউলিয়া (রহ:) বলেন যে মওলানা কাটহেলী একবার তাঁর নিজের ঘটনা বর্ণনা করেন: কোনো এক বছর দিল্লীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আমি একটি বাজার এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম আর তখন আমার খিদে পেয়েছিল। আমি কিছু খাবার কিনে মনে মনে বল্লাম, এ খাবার আমার একা খাওয়া উচিৎ নয়; এটা কারো সাথে ভাগাভাগি করতে হবে। এমতাবস্থায় আমি এক বৃদ্ধ মানুষের দেখা পেলাম যাঁর গায়ে চাদর মোড়ানো ছিল। আমি তাঁকে বল্লাম, ওহে খাজা! আমি গরিব এবং আপনাকেও গরিব মনে হচ্ছে। মওলানা কাটহেলী ওই বৃদ্ধকে খাবার গ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ জানালেন এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন। মওলানা কাটহেলী বলেন, আমরা যখন খাচ্ছিলাম তখন আমি ওই বয়স্ক মরুব্বীকে জানালাম যে আমি ২০ টাকা (রূপী) ঋণগ্রস্ত। এ কথা শুনে ওই বয়স্ক মরুব্বী আমাকে খাওয়া চালিয়ে যেতে তাগিদ দিলেন এবং ওই ২০ টাকা (রূপী) এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমি আপন মনে ভাবলাম, তিনি এই টাকা পাবেন কোথায়? খাওয়া শেষে সেই বয়স্ক মরুব্বী উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে মসজিদে নিয়ে গেলেন। এই মসজিদের ভেতরে একটি মাযার অবস্থিত ছিল। তিনি ওই মাযারের কাছে কী যেন চাইলেন। তাঁর হাতে যে ছোট লাঠি ছিল তা দ্বারা দু’বার মাযারে আলতোভাবে ছুঁয়ে তিনি বল্লেন, এই লোকের ২০ টাকা প্রয়োজন, তাকে তা দেবেন। অতঃপর বয়স্ক মরুব্বী আমার দিকে ফিরে বল্লেন, ‘মওলানা, ফিরে যান; আপনি আপনার ২০ টাকা পাবেন।’
আমি এ কথা শুনে ওই মরুব্বীর হাতে চুমো খেলাম এবং শহরের দিকে ফিরে চল্লাম। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কীভাবে আমি ওই ২০ টাকা খুঁজে পাবো। আমার সাথে একটা চিঠি ছিল যা কারো বাসায় আমাকে পৌঁছে দেবার কথা ছিল। ওই চিঠি যথাস্থানে নিয়ে গেলে আমি জনৈক তুর্কী ব্যক্তির দেখা পাই। তিনি তাঁর গৃহ-ভৃত্যদের বল্লেন আমাকে ওপর তলায় নিয়ে যাবার জন্যে। আমি তাঁকে চেনার চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, কিন্তু তিনি বার বার বলছিলেন কোনো এক সময় নাকি আমি তাঁকে সাহায্য করেছিলাম। আমি তাঁকে না চেনার কথা বল্লেও তিনি আমাকে চিনতে পেরেছেন বলে জানালেন। আমরা এভাবে কিছুক্ষণ কথাবর্তা বল্লাম। অতঃপর তিনি ভেতর থেকে ফিরে এসে আমার হাতে ২০ টাকা গুজে দিলেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ ফাওয়াইদ আল ফাওয়াদ, ১২৪ পৃষ্ঠা।]
হযরত নিযামউদ্দীন আউলিয়া (রহ:)-এর বর্ণিত এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি এ মর্মে বিশ্বাস পোষণ করতেন যে আউলিয়ায়ে কেরাম যাহেরী জিন্দেগীতে থাকাকালীন সময়ে যেভাবে মানুষদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম, ঠিক একইভাবে মাযারস্থ অবস্থায়ও তাঁরা মানুষদেরকে আধ্যাত্মিক সাহায্য দিতে সক্ষম। আর তাঁদের কাছে এই সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ। প্রকৃত দাতা হলেন আল্লাহ তা’লা; আউলিয়ায়ে কেরাম আমাদের সাহায্য করেন আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে; যেমনিভাবে প্রকৃত আরোগ্য দানকারী হলেন আল্লাহ্ পাক, কিন্তু রোগীরা আরোগ্যের জন্যে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
আল্লামা জামী (রহ:)-এর আকিদা-বিশ্বাস
আল্লামা জামী (রহ:) শায়খ আবুল হারিস আওলাসী (রহ:)-কে উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন যে হযরত যুন্নূন মিসরী (রহ:) সম্পর্কে তিনি অনেক কিছু শুনেছেন। তাই কিছু মাসআলা সম্পর্কে জানতে আল্লামা জামী (রহ:) তাঁর সাথে দেখা করার কথা মনস্থ করেন। কিন্তু যখন তিনি মিসর পৌঁছেন তখন জানতে পারেন যে হযরত যুন্নূন মিসরী (রহ:) বেসালপ্রাপ্ত (খোদার সাথে পর পারে মিলিত) হয়েছেন। এমতাবস্থায় আল্লামা জামী (রহ:) তাঁর মাযারে যান এবং মোরাকাবায় বসেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি হয়রান বোধ করেন এবং ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর তিনি হযরত যুন্নূন মিসরী (রহ:)-কে স্বপ্নে দেখেন এবং তাঁর প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেন। শায়খ মিসরী তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তাঁর কাঁধ থেকে বোঝা নামিয়ে দেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ নাফহাত আল্ উনস্ ১৯৩ পৃষ্ঠা।]
এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে আল্লামা জামী (রহ:) তাঁর আকিদা-বিশ্বাস স্পষ্ট করলেন এ মর্মে যে, কোনো প্রয়োজন নিয়ে আউলিয়ায়ে কেরামের মাযারে যাওয়া বৈধ। তাঁরা আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমাদেরকে সাহায্য করে থাকেন।
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী শাফেয়ী (রহ:)-এর আকিদা
ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহ:) লিখেন, উলামা ও যাদের প্রয়োজন তাঁদের মধ্যে এই আচার সবসময়ই চালু ছিল যে তাঁরা ইমাম আবু হানিফা (রহ:)-এর মাযারে যেতেন এবং নিজেদের অসুবিধা দূর করার জন্যে তাঁর মাধ্যমে দোয়া করতেন। এ সকল ব্যক্তি এটাকে সাফল্য লাভের একটা ওসীলা মনে করতেন এবং এর অনুশীলন দ্বারা বড় ধরনের পুরস্কার লাভ করতেন। বাগদাদে থাকাকালীন সব সময়েই ইমাম শাফেয়ী (রহ:) ইমাম আবু হানিফা (রহ:)-এর মাযারে যেতেন এবং তাঁর কাছে আশীর্বাদ তালাশ করতেন। যখন আমার (ইমাম ইবনে হাজর) কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন আমি দু’রাকাত নামায আদায় করে তাঁর মাযারে যাই এবং তাঁর ওসীলায় দোয়া করি। ফলে আমার অসুবিধা তক্ষণি দূর হয়ে যায়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ খায়রাত আল্ হিসান, ১৬৬ পৃষ্ঠা।]
এ লেখনী থেকে পরিস্ফুট হলো যে, ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহ:) বুযুর্গানের দ্বীনের মাযার যেয়ারত ও তাঁদের ওসীলা গ্রহণকে বৈধ জানতেন এবং ইমাম শাফেয়ীও (রহ:) এর ওপর আমলকারী ছিলেন।
শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (রহ:)-এর আকিদা
শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (রহ:) লিখেন: “কবর যেয়ারত করা মোস্তাহাব (প্রশংসনীয়) এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে”।
[গ্রন্থ সূত্রঃ আশআতুল লোমআত, ১ম খণ্ড, ৭১৫ পৃষ্ঠা।]
তিনি আরও লিখেন: “যেয়ারতের সময় কবরস্থদেরকে সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য), বিশেষ করে পুণ্যবান বান্দাদের ক্ষেত্রে। তাঁরা যাহেরী জিন্দেগীতে থাকাকালীন তাঁদেরকে সম্মান প্রদর্শন করা যেমন প্রয়োজনীয় ছিল, একইভাবে তাঁদের মাযারেও তা প্রদর্শন করা জরুরি। কেননা, মাযারস্থ বুযুর্গানে দ্বীন যে সাহায্য করে থাকেন, তা তাঁদের প্রতি যেয়ারতকারীদের প্রদর্শিত ভক্তি-শ্রদ্ধার ও সম্মানের ওপরই নির্ভর করে”।
[গ্রন্থ সূত্রঃ আশআতুল লোমআত, ১ম খণ্ড, ৭১০ পৃষ্ঠা।]
এ লেখনী থেকে পরিস্ফুট হয় যে শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (রহ:) আউলিয়ার মাযার যেয়ারত ও তাঁদের তওয়াসসুল (মধ্যস্থতা) গ্রহণকে শেরক বা বেদআত বলে জানতেন না। উপরন্তু তাঁর মতে এটা পছন্দনীয় কাজ এবং এর দ্বারা যেয়ারতকারীরা মাযারস্থ বুযুর্গানের দ্বীনের সাহায্য পান ও আশীর্বাদধন্য হন।
শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ দেহেলভীর আকিদা-বিশ্বাস
শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ লিখেন যে তাঁর পিতা শাহ্ আব্দুর রহীম বলেছেন, “একবার আমি হযরত খাজা কুতুবউদ্দীন বখতেয়ার বাকী (রহ:)-এর মাযার শরীফ যেয়ারত করতে যাই। এমতাবস্থায় তাঁর রূহ্ মোবারক আমার সামনে দৃশ্যমান হন এবং আমাকে বলেন যে আমার একজন পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করবে, আর আমি যেন ওর নাম রাখি কুতুবউদ্দীন আহমদ। ওই সময় আমার স্ত্রী বয়স্ক হয়ে গিয়েছিল এবং সন্তান ধারণের বয়স পেরিয়েছিল। তাই শায়খের এ কথা শুনে আমি মনে মনে ভাবলাম সম্ভবত আমার নাতি হতে যাচ্ছে। হযরত বখতেয়ার কাকী (রহ:) আমার মনের কথা বুঝতে পেরে সন্দেহ দূর করে দিলেন এ কথা বলে যে তিনি নাতির খোশ-খবরী (শুভ সংবাদ) দেন নি, বরং আমার নিজের একজন পুত্র সন্তানের কথা বলেছেন। কিছু কাল পরে আমি আবার বিয়ে করি এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে (শাহ্) ওয়ালিউল্লাহর জন্ম হয়।” শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ বলেন, ’আমার জন্মের সময় আমার বাবা ওই ঘটনার কথা ভুলে গিয়েছিলেন আর তাই আমার নাম রেখেছিলেন ওয়ালিউল্লাহ্। তাঁর যখন এ ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়, তখন তিনি আমার দ্বিতীয় নাম রাখেন কুতুবউদ্দীন আহমদ।
[গ্রন্থ সূত্রঃ আনফাস্ আল্ আরেফীন, ১১০ পৃষ্ঠা।]
এ ঘটনা বর্ণনা করে শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ তাঁর বিশ্বাস সম্পর্কে স্পষ্ট একটা ধারণা আমাদের দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে পুণ্যবান আউলিয়াবৃন্দের মাযারে যাওয়া জায়েয এবং বেসালের পরও আউলিয়ায়ে কেরামের কাছে গায়েবের খবর জানা আছে, যেমনটি হযরত খাজা কুতুবউদ্দীন বখতেযার কাকী (রহ:) ওই পুত্র সন্তানের জন্মের এক বছর আগে এ সম্পর্কে জানতেন। উপরস্তু, মাযারস্থ বুযুর্গানে দ্বীন মনের খবরও জানেন।
শাহ্ আব্দুল আযীয দেহেলভীর আকিদা-বিশ্বাস
শাহ্ আব্দুল আযীয লিখেন: “শরহে মাকাসিদ গ্রন্থে লেখা আছে যে মাযার যেয়ারত করা উপকারী এবং মাযারস্থ আউলিয়ায়ে কেরামের রূহ্ মোবারক উপকার সাধন করতে সক্ষম। বাস্তবিকই বেসাল (খোদার সাথে পরলোকে মিলিত)-প্রাপ্ত হবার পরে আউলিয়ায়ে কেরামের রূহ্ মোবারক তাঁদের শরীর ও মাযারের সাথে সম্পর্ক রাখেন। তাই কেউ যখন কোনো ওলীর মাযার যেয়ারত করেন এবং ওই ওলীর প্রতি মনোযোগ দেন, তখন উভয় রূহের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে যে আউলিয়ায়ে কেরাম জীবিতাবস্থায় বেশি সাহায্য করতে সক্ষম না বেসালপ্রাপ্ত অবস্থায়। কিছু উলামায়ে কেরাম বলেছেন যে বেসালপ্রাপ্ত আউলিয়া বেশি সাহায্য করতে সক্ষম; আর কিছু উলামা হুজুর পূর নূর (দ:)-এর একটি হাদীস এ মতের স্বপক্ষে পেশ করে তা প্রমাণ করেছেন; হাদীসটিতে এরশাদ হয়েছে, ইযা তাহাই-ইয়্যারতুম ফীল উমুরে, ফাসতা’ঈনূ মিন আহলিল কুবূর -
অর্থাৎঃ ’যখন তোমরা কোনো ব্যাপারে পেরেশানগ্রস্ত হও, তখন মাযারস্থ (আউলিয়া)-দের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো’। শায়খ আব্দুল হক দেহেলভী (রহ:) শরহে মেশকাত গ্রন্থে বলেছেন যে এই বিষয়টির পরিপন্থী কোনো দালিলিক প্রমাণ কুরআন ও সুন্নাহ্ কিংবা সালাফবৃন্দের বাণীতে বিদ্যমান নেই
[গ্রন্থ সূত্রঃ ফতোওয়ায়ে আযীযিয়া, ২য় খণ্ড, ১০৮ পৃষ্ঠা।]
ফতোওয়ায়ে আযীযিয়ার এই উদ্ধৃতি থেকে প্রমাণিত হয় যে পুণ্যবান আউলিয়ার মাযার যেয়ারত করা উত্তম একটি আমল এবং তাঁদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা শরীয়তে জায়েয (বৈধ)।
[এ লেখাটি www.aqdas.co.uk শীর্ষক ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে]
মূল: মোহাম্মদ আকদাস্ (য্ক্তুরাজ্য)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দিন হোসেন।