��প্রসঙ্গ : "সুন্নাহ্"-ই মান্য; "হাদীস" নয়��
             ❝সকল হাদিস সূন্নাহ্ নয়❞
নামধারী "আহলে হাদিস", আহলূস সূন্নাহ্ নয়।
গুরুত্বের কারনে একক পর্বে সমাপ্ত হলো।

উদ্দেশ্য : পাঠক ইহা পাঠ করে "সুন্নাহ্" ও "হাদীস" এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবে।

আলোচনা :
রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) হাদীস কারিমে "সুন্নাহ্" আঁকড়ে ধরে "আহলূস সুন্নাহ্" হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
কিন্তু
"হাদীস"-এর উপর আমল বা অনুসরণ করার কথা কোথাও বলেন নি।
"আহলে হাদীস" নামীয় গোষ্ঠী  একটি হাদীস পেশ করতে পারবেন না, যাহাতে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) উম্মতকে "হাদীস" মজবুত করে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন।

| | "আহলূস সূন্নাহ্" ও "আহলে হাদীস"-র সংজ্ঞা :

ইসলামী ইতিহাসে একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা নিজেদের ‘আহলে কুরআন’ বলে, আরেক গোষ্ঠী দাবী করে তারা ‘আহলে হাদীস’।
আর সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ বলে ‘আহলূস সূন্নাহ্ ওয়াল জামাআত’। কারণ, মুসলিম মাত্রই সূন্নাহর আহাল বা আহলূস সূন্নাহ্।

যারা ‘আহলে কুরআন’ তারা কুরআনের পরে অন্য কিছু মানে না তাই তারা "হাদীস"-ও মানে না।
যারা ‘আহলে হাদীস’ তারা "কুরআন ও হাদীস" পর্যন্ত মানে "সুন্নাহ্-সাহাবা ইজমা কিয়াস"-মানে না।
আর আমরা "কুরআন, সুন্নাহ্, সুন্নাতে সাহাবা-তাবেঈন, ইজমা, কিয়াস" মানি বিধায় আমরা “আহলূস সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আহ”।

আমরা সবাই কুরআন ও হাদীসের পার্থক্য জানি, বুঝি।
কিন্তু
অনেকে আমরা হাদীস ও সুন্নাহর মাঝে কী পার্থক্য তা জানি না।
এ বিষয়টি জানার উপরই নির্ভর করে যে, কোনো মুসলমান ‘আহলে হাদীস’ হতে পারে না।

মুসলমান মাত্রই সূন্নাহর আহাল বা আহলূস সূন্নাহ্।
সকল মুসলমানের  "আহলূস সূন্নাহ্" হওয়া অপরিহার্য।

| | হাদীস ও সুন্নাহর পার্থক্য :

�� হাদীস :
চারটি বিষয়ের সমন্বয় হলো হাদীস :
০১. রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) তাঁর জীবনে যা কিছু বলেছেন।
০২. রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) তাঁর জীবনে যা কিছু করেছেন।
০৩. রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) যে সকল বিষয়কে সমর্থন করেছেন।
০৪. রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর ব্যক্তিগত অবস্থা ও গুনাবলী।
এ চারটি বিষয়ের সমন্বিত রূপকে পরিভাষায় হাদীস বলা হয়।

�� সূন্নাহ্ :
সূন্নাহ্ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পথ।
কুরআন, হাদীস, ফিকহের পরিভাষায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থ থাকলেও হাদীসের পরিভাষায় সুন্নাহ শব্দের অর্থ হলো-الطريقة المسلوكة في الدين. মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয় দ্বীনের পথের নাম সূন্নাহ্।

ক্বুরআ'নুল কারীমে এসেছে- قل هذه سبيلي ادعو الي الله. বলুন, এটা আমার পথ আমি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি।
*_* সূরাহ্ ইউসুফ; আয়াত ১০৮।
সারকথা, উম্মতের জন্য অনুসরণীয় রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর পথকে হাদীসের ভাষায় সুন্নাহ্ বলা হয়েছে।
সুতরাং হাদীস এবং সূন্নাহ্ শব্দ দুটি পরস্পর পরিপূর্ণরূপে স্বতন্ত্র বা বিরোধী নয় আবার সমার্থকও নয়।
বরং উভয় শব্দ কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিন্ন অর্থাৎ কোনো কোনো জায়গায় হাদীস পাওয়া যায় কিন্তু সূন্নাহ্ থাকে না, আবার কখনো সূন্নাহ্ পাওয়া যায় কিন্তু হাদীস থাকে না।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাদীস ও সূন্নাহ্ একই সাথে বিদ্যমান।

�� কোনো কোনো কাজ বা বর্ণনাকে শুধু "হাদীস" বলা যায়, কিন্তু "সুন্নাহ্" নয় :

এমন বর্ণনার প্রকার তিনটি :
(ক)
যেসব বর্ণনা, কাজ এক সময় শরীয়ত হিসেবে গৃহীত ছিল কিন্তু পরবর্তিতে তা রহিত হয়ে গেছে এগুলো হাদীসের আওতায় পড়ে; কিন্তু সূন্নাহ্ নয়।
কারণ,
সূন্নাহ্ হলো উম্মতের জন্য অনূসরণীয় কাজ। যে কাজগুলোর বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে তা আর অনূসরণীয় থাকে নি।
যেমন:
❖ এক সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে – توضئوا مما مست النار‘‘”
অর্থাৎ আগুনে রান্না করা বস্তু খাওয়ার পর তোমরা অযু কর। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বিধান আমাদের শরীয়তে বহাল থাকে নি বরং রহিত হয়ে গেছে। তাই ইহা হাদীস বলে মেনে নিতে হবে কিন্তু সূন্নাহ্ নয়।

❖ ইসলামের প্রথম যুগে মাসবুক ব্যক্তি মুসল্লিকে জিজ্ঞাসা করে জানতো কতো রাকাত তার ছুটে গেছে অতঃপর প্রথমে সে ছুটে যাওয়া রাকাত আদায় করে নিতো তারপর জামাতে শরীক হতো।
হযরত মু’য়ায রা. একবার এর ব্যতিক্রম করলেন তিনি প্রথমেই জামাতে শরীক হলেন অবশিষ্ট নামায ইমামের সালাম ফেরানোর পর পড়লেন রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) তা দেখে জিজ্ঞেস করলেন।
তিনি উত্তরে বলেন, হুজুর আপনার জামাত ছেড়ে আলাদা একাকি নামায পড়া পছন্দ হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেন- إنّ معاذا سنّ لكم سنة فاتبعواها‘‘”
মু’য়ায তোমাদের জন্য একটি সুন্দর পথ রচনা করেছে তোমরা এই পথ অনুসরণ করো।
বুঝা গেল,
প্রথম পদ্ধতিটা শুধু ``হাদীস`` কিন্তু সূন্নাহ্ নয়। আর, মু’য়ায রা. কতৃক আমলটিকে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) সূন্নাহ্ বলেছেন (ইরশাদ করেছেন)। কারণ ইহা অনুসরণীয়।
আর প্রথম পদ্ধতির বিধান রহিত হওয়ায় তা সূন্নাহ্ বলা যায় না।
সারকথা, অনেক ``হাদীস`` হাদীসের কিতাবে সংরক্ষিত আছে; কিন্তু সেগুলোর বিধান রহিত হয়ে গেছে তাই সেগুলোকে হাদীস তো বলতেই হবে কিন্তু সূন্নাহ্ বলা যাবে না।

সূন্নাহ্ হচ্ছে ঐসব হাদীসের বিপরীত যেগুলো কোন সময় বলবৎ ছিলো।
কাজেই সূন্নাহ্ সেগুলো যা চিরকাল অনুসরণীয় ও পালনীয়।

(খ)
যে সব হাদীস রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর শা'ন-মানের সাথে খাস বা নির্দিষ্ট।
অর্থাৎ যে সব হাদীস রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর সাথে নির্দিষ্ট অন্য কারো জন্য তা পালনীয় নয়।

নিঃসন্দেহে সেগুলো হাদীস তবে সূন্নাহ্ নয় কারণ উম্মতের জন্য তা অনুসরণীয় নয় ।
যেমন :
বিবাহর ক্ষেত্রে চারের কোনো শর্ত রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর জন্য ছিলো না।
সে কারণে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর ঘরে একই সাথে নয়জন স্ত্রী একত্রিত হয়েছেন।
ইহা রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর কাজ; কাজেই, নিঃসন্দেহে তা ``হাদীস`` তবে ``সূন্নাহ্`` নয়।
উম্মতের জন্য অনুসরনযোগ্য আমল বা কাজ হচ্ছে : এক সাথে চারজনের বেশী স্ত্রী রাখার অনুমতি নেই।
সুতরাং রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর উপরোক্ত আমলটি উম্মতের জন্য অনুসরণীয় নয়।
বরং ইহা রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর আজিমুশ্বান মর্যাদার সাথে খাস বা নির্দিষ্ট।
এই সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে –
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ ……………… مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ (سورة الاحزاب: ৫০)
হে নবী আমি আপনার জন্য আপনার বিবিগণ (যার সংখ্যা ৯) কে হালাল করেছি এই বিধান কেবলই আপনার জন্য। অন্য মুমিনের জন্য নয়।
*_* সূরাহ্ আহযাব; আয়াত ৫০।

(গ)
রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) বিশেষ কোনো কারনে বা প্রেক্ষিতে কোনো কথা বলেছেন বা কাজ করেছেন, কিন্তু উম্মতকে সাধারণ অবস্থায় তা অনুসরণ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই সেগুলি অবশ্যই ``হাদীস`` কিন্তু ``সূন্নাহ্`` নয়।
যেমন-
❖ মাগরিবের নামাযের পূর্বে নফল পড়া সূন্নাহ্ নয় বরং যাওয়া মাত্র যদি এর দ্বারা মাগরিবের নামায বিলম্বিত না হয়।
حدثنا أبو معمر حدثنا عبد الوارث عن الحسين عن ابن بريدة حدثني عبد الله المزني : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( صلوا قبل صلاة المغرب ) . قال في الثالثة ( لمن شاء ) . كراهية أن يتخذها الناس سنة . (صحيح البخاري: ৬/২৬৮১، رقم: ৬৯৩৪)
অর্থাৎ কেউ পড়তে চাইলে পড়তে পারবে কিন্তু তা সূন্নাহ্ নয়।
হাদীসটি এসেছে একটি মাসআলা বুঝানোর জন্য।
তা হলো আসরের ফরযের পর নফল পড়ার নিষিদ্ধতা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সূর্য ডোবার সাথে সাথে নফল মাকরূহ হওয়ার বিষয়টি আর অবশিষ্ট থাকে না; সুতরাং এখন যদি কেউ সূর্যাস্তের পর নফল পড়তে চায় তাহলে পড়তে পারে, তবে এসময় নফল পড়া সূন্নাহ্ নয়। তাই রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এবং খুলাফায়ে রাশেদাও মাগরিবের পূর্বে নফল পড়তেন না।
বুঝা গেলো,
হাদীসটি এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে বর্ণিত হয়েছে তাই নিঃসন্দেহে ``হাদীস`` কিন্তু ``সূন্নাহ্`` নয়।
হ্যাঁ, সাহাবাগণ পরবর্তিতে মসজিদের খুঁটির আড়ালে দাঁড়িয়ে তা পড়তেন; ইহার দ্বারা বৈধতা (নফল)-ই বুঝায় সূন্নাহ্ নয়।

❖ তেমনিভাবে দাঁড়িয়ে প্রস্বাব করা "হাদীস" তবে "সূন্নাহ্" নয়।
কেননা হাদীসে এসেছে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) জীবনে একবার এক পতিত দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে এই কাজটি করেছেন, তাই ইহা অবশ্যই "হাদীস" কিন্তু "সূন্নাহ্" নয়।
সূন্নাহ্ হচ্ছে বসে প্রস্বাব করা।
কারণ, রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) সর্বদাই এই কাজটি বসে করেছেন।
একবার দাঁড়িয়ে এই কাজটি করে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন স্থানটি আবর্জনাযুক্ত হওয়ার কারণে অথবা শারীকিক কোন সমস্যার কারণে বসতে অসম্ভব হলে তার জন্য দাঁড়িয়ে প্রস্বাব করার বিধান আছে।
রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর জীবিনে এ ব্যতিক্রম না থাকলে তা বিধান হয়ে যেতো। উম্মতেরা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কোন অবকাশ পেতো না।
রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) দয়াপরবশ হয়ে উম্মতকে এইরুপ অবকাশ দিয়েছেন।

❖ ঋতুকালীন স্ত্রীর সঙ্গ হওয়া ``হাদীস`` তবে ``সূন্নাহ্`` নয়।
হাদীসে আছে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم), আমাদের মা আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. কে ঋতুকালীন সময়ে কাপড় জড়িয়ে তার সাথে শুয়ে পড়তে বলেছেন।
এই হাদীসটি এ মাসআলা বুঝানোর জন্য বর্ণিত হয়েছে যে, ক্বুরআ'নুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ. (البقرة: ২২২)
তোমরা ঋতুস্রাবকালে স্ত্রী সঙ্গম বর্জন কর এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীদের নিকটে যেয়ো না।
*_* সূরাহ্ বাকারা; আয়াত ২২২।
"নিকট যেয়োনা"-কথাটা কিছুটা অস্পষ্ট।
তাই ইহার ব্যাখ্যার প্রয়োজনে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم)-ও, আমাদের মা আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. কে সঙ্গে শুয়ায়ে বুঝালেন এতটুকু রাখা বৈধ। অবৈধ হচ্ছে সঙ্গম করা।

❖ সন্তান কোলে নিয়ে নামায পড়া ``হাদীস``, তবে ``সূন্নাহ্`` নয়।
হাদীসে এসেছে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) তাঁর কন্যার সন্তানকে কোলে নিয়ে জীবনে একবার পুরো নামায পড়িয়েছেন। সিজদার সময় মাটিতে বসিয়ে দিতেন উঠার সময় কোলে তুলে নিতেন; নিঃসন্দেহে ইহা হাদীস।
জীবনে একবার এ কারণে তা করেছেন যাতে কোনো উম্মতের ক্ষেত্রে বাচ্চাকে পাশে রেখে নামায পড়া কোনো পরিস্থিতির কারণে অসম্ভব হয়ে পড়লে সে যেন বাচ্চা কোলে নামায আদায় করতে পারে।
তাই বলে এটা "সূন্নাহ্" নয় যে, সকলেই সাওয়াবের আশায় বাচ্চাকোলে নিয়ে নামায আদায় করবে এবং এই হাদীসকে সবসময় অনুসরণ করবে।

ইহা মূলত: উম্মতের প্রতি তিনি দয়াপরবশ হয়ে করেছেন।

❖ উচ্চ শব্দে আমীন বলা "হাদীস" দ্বারা প্রমাণীত; তবে "সূন্নাহ্" নয়।
"সূন্নাহ্" হচ্ছে নিম্ন শব্দে আমীন বলা।
হযরত ওয়াইল রা. স্বশব্দে আমীন বলার বর্ণনাকারী।
তিনি ইয়ামান থেকে মদীনায় আসেন; ২০ দিন রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর সঙ্গে প্রথম কাতারে নামায পড়েন। ২০ দিনে জাহারী নামাযের সংখ্যা দাড়ায় ৬০ ওয়াক্ত, হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে মাত্র তিন বার স্বশব্দে আমীন বলেলেন। এতে কী বুঝাতে চেয়েছেন?
‘কিতাবুল আসমা ওয়াল কুনাতে’ আল্লামা দাওলাবী বর্ণনা করেন যে, হযরত ওয়াইল রা. নিজেই কারণ উল্লেখ করেছেন যে,
ما اراه الا ليعلمنا. (كتاب الاسماء والكنت)
আমার ধারণা রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) স্বশব্দে (তিন ওয়াক্ত) আমীন বলেছেন আমাকে শেখাবার উদ্দেশ্যে غير المغضوب عليهم، ولاالضالين. আমীন বলতে হয়।
সুতরাং প্রমাণ হলো যে আমীন স্বশব্দে বিশেষ উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল।
তা হলো নতুন সাহাবীকে শিক্ষা প্রদান; এতে জায়েয (হাদিস) প্রমাণীত হলেও ``সূন্নাহ্`` প্রমাণীত হয় না।
এই কারণে হানাফী ইমামগণ নিম্নস্বরে ``আমীন`` পড়াকে ``সূন্নাহ্`` বলেছেন।
যদিও স্বশব্দে পড়াও জায়েয তবে চিৎকার করে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) আমীন বলেননি যা বর্তমানে তথাকথিত “আহলে হাদীসরা” করে থাকে।

✒ সারকথা:
তিন ধরনের বর্ণনা বা রেওয়ায়েতকেই কেবল "হাদীস" বলা যায়; কিন্তু "সূন্নাহ্" বলা যায় না।
যথা :
০১. যে সকল হাদীস মানসূখ ও রহিত হয়ে গেছে।

০২. যে সকল হাদীসের সম্পর্কে কেবলই রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর সাথে নির্দিষ্ট।

০৩. যে সকল কথা বা কাজ রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছে বিশেষ কোন কারণবশত:, কিংবা কোন মাসআলা বুঝানোর উদ্দেশ্যে।

✏ এবার দেখা যাক, যেসব বিষয় কেবলই ``সূন্নাহ্`` তবে ``হাদীস`` নয় :

খুলাফায়ে রাশেদীনের পথ কর্ম সিদ্ধান্তসমূহ "সূন্নাহ্"; কিন্তু "হাদীস" নয়।
কারণ, হাদীসতো রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর ‘কথা, কাজ, সমর্থন’ কে বলা হয়।
এইগুলোতো সাহাবায়ে ক্বিরাম রা.-র ‘কাজ, কথা’।
তাই এই অর্থে ``হাদীস`` বলা যায় না; কিন্তু সকল উম্মতের জন্য এইগুলো অনুসরনীয় বিধায় এইগুলো "সূন্নাহ্"।

এইমর্মে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) ইরশাদ করেছেন :
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
তোমাদের (উম্মত) উপর আমার "সূন্নাহ্" এবং সত্য পথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের "সূন্নাহ্" এর অনুসরণ অবশ্য কর্তব্য। তোমরা এই সূন্নাহ্-কে শক্তভাবে আকড়ে ধরো।
মোট কথা, চার খলীফার সিদ্ধান্ত ও কর্মগুলো শুধু "সূন্নাহ্"; কিন্তু "হাদীস" নয়।

যেমন:
✪ খলীফা আবু বাকার রা.-র সূন্নাহ্; যেমন :
০১. যেসব মুসলমান কেন্দ্রীয় সকরারকে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন কেননা যে সকল বিষয় ইসলামের প্রতীক যদিও তা সুন্নাতের স্তরে পড়ে। যদি তা কোনো গোষ্ঠী একসাথে বর্জন করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ এটা সুন্নতে সিদ্দিক রা.।

০২. যেমন খৎনা করা, আযান দেয়া সূন্নাহ্ তবে ইসলামের নিদর্শন হওয়ায় কোনো গোষ্ঠী তা একসাথে বর্জন করলে সরকার যুদ্ধ করে হলেও তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

০৩. তেমনিভাবে জীবদ্ধশায় পরবর্তী খলীফা নির্বাচন করা সিদ্দিকী সূন্নাহ্।

✪ খলীফা ওমর রা.-র সূন্নাহ্ : যেমন :
০১. এক মজলিস বা একই শব্দে প্রদত্ত তিন তালাক তিন তালাক বলেই বিবেচিত হবে যদিও তা তাকীদের নিয়তে বলার দাবী করা হোক।

০২. ইরাক যুদ্ধের পর সে জমি-জমা মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন না করে বাইতুল-মালে জমা করে ইয়াতিম দুস্থ:দের প্রদানের সিদ্ধান্ত।

০৩. মুসলিম রাষ্ট্রে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমদের কর (tax) বা জিযিয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করণ।

০৪. তারাবীহ্-র নামায জামা'আতের সাথে বিশ রাকাত পড়ার সিদ্ধান্ত; এইসবগুলো সূন্নাতে ওমরী। তবে হাদীস নয়।

✪ খলীফ উসমান রা. এর সূন্নাহ্। যেমন :
০১. জুমআর নামাযের পূর্বে একটি আযান বৃদ্ধি করণ।

০২. ক্বুরআ'নুল কারীম ক্বুরাইশদের ভাষায়। ইহা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতভিন্নতা ও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় উসমান রা. সকলকে আবার ক্বুরাইশী ভাষার উপরে দাঁড় করিয়েছেন। এইগুলো উসমানী সূন্নাহ্।

✪ খলীফা হযরত আলী রা. এর সূন্নাহ্; যেমন :
০১. মুসলামানদের মধ্যে যদি পরস্পরে লড়াই বাঁধে তাহলে বিজিতদের সম্পদ গনীমতের সম্পদ বলে বিবেচিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং বন্দিরাও দাস-দাসী হবে না; যেমনটি কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হলে তাদের মাল হয় গণীমতের অন্তর্ভুক্ত, আর বন্দিরা হয় দাস- দাসী। এবং এই বিধানটি জামাল যুদ্ধের ঘটনাতে পরাজিতদের মধ্যে আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত হয়।

মোটকথা: খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে গৃহীত এসব সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা এই উম্মতকে এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে সুশৃংখল ও সুগঠিত করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছিলো; যা ছিলো সূন্নাহর দৃষ্টিতে অপরিহার্য।

❐ "আহলে হাদীস" সম্পদ্রায় ও "আহলূস সূন্নাহ্ ওয়াল জামা'আত" এর পার্থক্য :

এই দীর্ঘ আলোচনায় প্রমাণ হয় যে,
রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর এ ধরনের বর্ণনা প্রচুর।
আবার অনেক বর্ণনা শুধু হাদীস; তবে তার বিধান পালন রহিত, আর ইহার বৈশিষ্ট্য বিশেষ কারণে হওয়ায় তা ``হাদীস`` হলেও ``সূন্নাহ্`` নয়।
আর বহু বিষয় রয়েছে যা "সূন্নাহ্"; আর তা সকল উম্মতের জন্য অনুসরণযোগ্য।
যেমন :
চার খলীফার সূন্নাহ্।
সেগুলো শুধু "সূন্নাহ্" তবে "হাদীস" নয়।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ বুঝে নিলে একথা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে,
‘আহলে হাদীস’ ও ‘আহলূস সূন্নাহ্ ওয়াল জামা'আতের’ মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধাান।
যেমন:
০১. "আহলে হাদীস" যেকোনো একটি হাদীস পেলেই আমল শুরু করে; তা রহিত হোক বা রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর বৈশিষ্ট্য হোক বা কোনো বিশেষ কারণে তা রহিত হোক অথচ এগুলো পালনীয় বিষয় নয়।
আর,
আহলূস সূন্নাহ্ বিশ্বাস করে সব "হাদীস" কে; কিন্তু মান্য করে যা মানার জন্য উম্মাহ্ আদিষ্ট বা অনুসরণ-অনুকরণ যোগ্য।

০২. "আহলে হাদীস" সাহাবা মানে না; কারণ সাহাবাদের ‘কথা, কাজ’ হাদীস নয় বরং সূন্নাহ্।
অথচ সূন্নাহ্ অস্বীকারকারী এই গোষ্ঠী হলো স্ব-ঘোষিত "আহলে হাদীস"।
চার খলীফার সব সিদ্ধান্তকে তারা এই কারণেই অমান্য করে।

``আহলূস সূন্নাহ্``-র বিপরীতে বর্তমান ``আহলে হাদীস`` গোষ্ঠীর কতিপয় বিদা'আত :
০১. তারাবীর নামায ৮ রাকাত বলা;
০২. তিন তালাক দিলে এক তালাক হবে বলা;
০৩. জুমু’আর প্রথম আযানকে বিদ‘আত বলা;
০৪. আমীন স্বশব্দে-চিৎকার করে বলা, ইত্যাদী।

তাদের এই সকল বিদা'আতের মূল রহস্য এটাই যে তারা সূন্নাহ্ই মানে না।
পক্ষান্তরে, রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর শা'ন-মানের সাথে খাস-বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাদীসগুলো আমল করার দুঃসাহস করে থাকে।

অন্যদিকে, তারা জঈফ হাদীস ও মাউজু হাদীসকে একাকার করে সব অগ্রহণযোগ্য বলে উক্তি করে।
এমনকি স্বীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সহীহ্ হাদিসকেও নুতন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাহকিক করে দ্বয়ীফ/মাওদ্বু সাব্যস্থ করে মিথ্যাচার করতেও কুন্ঠিত হয় না।
এসব কারণে কোনো খাঁটি মুসলমানের ক্ষেত্রে ‘আহলে হাদীস’ হওয়াও সম্ভব নয়।
কিন্তু
“আহলূস সূন্নাহ্ (অনুসরণযোগ্য হাদীস) ওয়াল জামা'আহ্”, খুলাফায়ে রাশিদীন সহ সকল সাহাবায়ে ক্বিরাম রা.-র আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত নাজাতপ্রাপ্তদের খাঁটি জামা'আত; ইহাকে "সিরত্বল মুস্তাকিম" নামে ক্বুরআ'নুল কারিমে ঘোষনা করা হয়েছে।

এ সকল কারণে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) এর হাদীসে ``সুন্নাহ্`` আঁকড়ে ধরে "আহলূস সূন্নাহ্" হওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
হাদীসের উপর আমল বা অনুসরণ করার কথা কোথাও বলা হয়নি।
যেমন:
০১. হাদীসে এসেছে : من تمسك بسنتي عند فساد امتي..الخ “যে আমার সূন্নাতকে যখন উম্মতের মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টি হবে তখন মজবুত করে ধরবে…”।

০২. تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله.
০৩. عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.

স্ব-ঘোষিত "আহলে হাদীস" গোষ্ঠী একটি হাদীসও পেশ করতে পারবেন না; যাঁহাতে রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله وسلم) উম্মতকে "হাদীস" মজবুত করে আঁকড়ে ধরা তথা ``আহলে হাদিস`` হওয়ার জন্য ইরশাদ করেছেন।

Top