পিতার ত্যাজ্যপুত্র শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী।

হাল যামানায় আহলে হাদীস নামক এই ভ্রান্ত মতবাদকে নতুন করে চাঙ্গা করেছে নাসিরুদ্দীন আলবানী। তার বাড়ি সিরিয়ায় আলবেনীয়া নামক স্থানে। তার পিতা নূহ নাজাতী (রহমাতুল্লাহি 'আলাইহি) হানাফী মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় আলেম ছিলেন। ছেলের বিতর্কিত আচরণে অধৈর্য্য হয়ে ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন। সিরিয়ার জনগণ আলবানীকে বিতর্কিত মতবাদের কারণে সিরিয়া থেকে বহিষ্কার করে দেয়। তারপর সে সৌদি আরব আশ্রয় নেয়।
এক পর্যায়ে সৌদির আলেম উলামা ও জনসাধারণও তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। ফলে সরকারি নির্দেশে ১৯৯১ সালে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সে আরবভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে জর্দানে আশ্রয় নেয় এবং সেখানে ১৯৯৯ইং সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তার কোন নিয়মতান্ত্রিক উস্তাদ ছিল না। সেই সহীহ হাদীসকে যঈফ, আর যঈফ হাদীসকে সহীহ বলে জনগণকে বিভ্ৰান্ত করার মূলমন্ত্র শিখিয়েছে কথিত আহলে হাদীসদেরকে। চির মীমাংসিত বিষয়ে উস্কানীমূলক বক্তব্য সেই সূচনা করেছে। শিক্ষা দিয়েছে, সর্বজন শ্রদ্বেয় আকাবীরগণের প্রতি বেআদবীমূলক আচরণ। হানাফী মাযহাবের দলীল হিসেবে হাদীস পাওয়া মাত্রই মনগড়া যুক্তি তর্কের মাধ্যমে দুর্বল হাদীসের তালিকায় ফেলে দেয়াই তার প্রধান পেশা। তার জীবনী শীর্ষক কয়েক খন্ড বই প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু কোথায় সে লিখাপড়া করেছে এর কোনো বিবরণ উল্লেখ নেই। তারই লিখিত বই 'সিফাতুসসালাত' এবং 'সালাতুত তারাবীহ' গন্থ দু'টির অনুবাদক আলবানীর জীবনীতে লিখেন, তিনি তার পিতার পেশা, ঘড়ি মেরামতের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এতএব কোনো মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে তার পড়া লেখার সুযোগ কোথায়? কোথায় তার এ সময়? ব্যক্তিগত গবেষণা ও অধ্যয়নের মাধ্যমে যা বুঝেছে তাই লিখে গেছে। আমরা অবশ্য জানি যারা নিজে নিজে গবেষণায় অবতীর্ণ হয়, তারাই পথভ্রষ্ট হয়, হয় তাদের মাধ্যমে জনগণ বিভ্ৰান্ত। এধরনের পথভ্রষ্ট বিদ্যানগণের তালিকা এ জগতে বিস্তর লম্বা, কাহিনী তাদের অনেক বিদারক। মনগড়া মতবাদ ছড়িয়ে হঠাৎ আজগবী চমক সৃষ্টি করাই হয় তাদের মূল টার্গেট। তাইতো আলবানীর গবেষণায় অজ্ঞতা, বাড়াবাড়ি, দুর্বলতা, ভুলভ্রান্তি, স্ববিরোধিতা ও কল্পনাপ্রসূত মনগড়া মতবাদে ভরপূর। এ ব্যাপারে তার বিশেষ অবদান (?) হল, সে হাদীসসমূহকে সহীহ, যঈফ দুই ভাগে বিভক্ত করে দু'টি কিতাব সংকলন করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, সে যঈফ হাদীসের সংকলনের সাথে মউযু হাদীসকে মিলিয়ে উভয়টি একাকার করে ফেলেছে।
এখন প্রশ্ন হল, যঈফ আর মউযু কি এক জিনিস, উভয়টির ক্ষেত্রে কি একই বিধান প্রযোজ্য হয়? মউযু তো হাদীসই নয়; এটাতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা। অথচ যঈফ তো হাদীস।
ضعف
যু'ফ হল, সনদের সিফাত; হাদীসের সিফাত নয়। যেমন, সহীহ, হাসান এগুলো সনদের সিফাত; হাদীসের সিফাত নয়। এগুলো দ্বারা তো সনদের অবস্থা বুঝানো হয়। যঈফ হাদীস যদি একাদিক সনদে আসে তখন এর দ্বারা হুকুমও সাবেত হয়। অনুরূপ যঈফ হাদীস যদি উম্মত কবুল করে নেয় তাহলে তা সহীহ'র মতো হয়ে যায়। যেমন, لاوصيةلوارث এই হাদীসের সনদ তো যঈফ কিন্তু উম্মত এটাকে ব্যপকভাবে গ্রহণ করেছে বলে তা মা'মূলবিহী হয়েছে এবং এর দ্বারা হুকুমও সাবেত হয়েছে। অনুরূপ طلب اعلم فريضة على كل مسلم এই হাদীসটি পঞ্চাশটি সনদে এসেছে। ইবনে মাজাহ, ২২৪ নং হাদীসের টীকা)। কিন্তু প্রত্যেকটি সনদ যঈফ। তথাপি এতগুলো সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী হয়ে গেছে। ফলে এর দ্বারা ফরযের মতো গুরুত্বপূর্ণ হুকুম সাবেত করা হয়েছে। আর যঈফ হাদীস যদি হাসান লিগাইরিহী পর্যন্ত না-ও পৌঁছে তবুও তা মউযু'র মতো বেকার নয়। বরং কিছু শর্ত সাপেক্ষে ফযীলতের ক্ষেত্রে আমলযোগ্য। তাহলে বলুন, হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে যার ন্যূনতম জ্ঞানও রয়েছে তার পক্ষে যঈফ আর মউযু’কে এক মানে করা কিভাবে সঠিক হতে পারে?

বর্তমান আরব বিশ্বে আলবানীর বিরুদ্ধে বহু কিতাব লেখা হচ্ছে। তার মধ্য তানাকুযাতে আলবানী নামক কিতাবটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। লেখক এই কিতাবে আলবানীর স্ববিরোধী কথা ও কাজগুলো দায়িত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, 'আলবানী কোনো একটি হাদীসকে তার মতের পক্ষে হওয়ায় সেটাকে সহীহ বলেছেন। আবার ঐ একই সনদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা যখন তার বিরোধী পক্ষ দলীল দিয়েছেন তখন সেটাকে নির্দ্বিধায় যঈফ বলে দিয়েছে। এ জাতীয় বহু ঘটনা ঐ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনেকেই নাসিরুদ্দিন আলবানী সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছে।

সাউদী আরবের প্রধান মুফতী আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায এর নাছির উদ্দীন আলবানী সম্পর্কে অভিমতঃ
(ক) خطأ ظاهر ، لم يسبقه إليه أحد فيما نعلم من أهل العلم ، وهو مخالف للأحاديث الصحيحة ....
নাছির উদ্দীন আলবানী এমন প্রকাশ্য ভুল করেছেন যাহা আমাদের জানা মতে পূর্বের কোন আলেম এমনটি করেননি। তিনি আরো বলেন- আলবানী সাহেব সহীহ হাদীস সমূহের বিরোধিতাকারী।
[সূত্র: সালাসু রাসায়েল ফিসসালাত : ইবনে বাজ ১/২৮]।

(খ) قد يصحِّح بعض الأحاديث ويخطئ، وقد يضعِّف ويخطئ؛
কখনো তিনি সহীহ হাদীসকে জয়ীফ/দূর্বল বলে ভুল করেন, আবার কখনো দূর্বল হাদীসকে তিনি সহীহ বলে ভুল করেন।
[সূত্র : দরুস ইবনে বাজ : ১১/২৬, ২. মাজমুআয়ে ফতুয়া ইবনে বাজ : ২৫/৭১]।
বলাবাহুল্য বর্তমান বাংলাদেশে কিছু লোক আলবানীর জালে শিকার হচ্ছে। তারা আলবানীর বাড়াবাড়ি, গোঁড়ামি, ভুলক্রটির দস্তান, বিচিত্র আদর্শ ও বিভ্রান্তিকর মতবাদকে পুজি করে গোটা মুসলিম বিশ্বের সাথে যুদ্ধ নেমেছে। অথচ আলবানীর এসব বিচিত্র মতবাদের আইওয়াশ ও সিটিস্কেনের লক্ষ্যে শুধু সৌদি আরব থেকেই শতাধিক বই পুস্তক রচনা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এসব ক্ষেত্রে আহলে হাদীস ধর্মান্ধরা চোখ বন্ধ করে রাখে। আর লুফে নেয় শুধু তার বিচিত্র মতাদর্শ ও শিষ্টাচার বহিভূর্ত দিকগুলো।

 
Top