"কারবালার করুণ কাহিনী-৫"

----জাল্লাদ ইবনে যিয়াদ---

হযরত ইমাম মুসলিম (রাদি আল্লাহু আনহু) যখন কূফায় পৌঁছলেন, তখন সাথে সাথে বার হাজারের অধিক কূফাবাসী তাঁর হাতে হযরত ইমাম মুসলিম (রাদি আল্লাহু আনহু) এর নামে বায়াত গ্রহন করে। এ অবস্থা দেখে তিনি হযরত ইমাম হোসাইন (রাদি আল্লাহু আনহু) কে সাহসা চলে আসার জন্য চিঠি লিখেন। এ দিকে ইয়াযিদ যখন এ অবস্থার কথা জানতে পারলো, তখন বসরার গভর্ণর ওবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে ফরমান পাঠালো যেন কালবিলম্ব না করে কূফায় এসে লোকদেরকে হযরত ইমাম হোসাইন (রাদি আল্লাহু আনহু) এর বায়াত গ্রহণ থেকে বাঁধা দেয় এবং যারা ইতোমধ্যে বায়াত গ্রহন করেছে, তাদেরকে ধমকি ও হুমকির মাধ্যমে ফিরায়ে আনে। ইবনে যিয়াদ বড় ধোঁকাবাজ ওখুনী ছিল। এ জালিম কূফায় এসে নানা ভয় ভতীরি মাধ্যমে কূফাবাসীকে ইয়াজিদের বিরোধীতা থেকে বিরত থাকতে বললো এবং নানালোভ দেখায়ে ওদেরকে হযরত ইমাম হোসাইন (রাদি আল্লাহু আনহু) সহয়তা করা থেকে বাধা দিল। এতে সে সফল হলো এবং সকলের মনে প্রভাব ও ভীতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হলো।

হযরত ইমাম মুসলিম এ অবস্তা দেখে রাত্রে রাতে হানী বিন আরওয়ার ঘরে গেলেন এবং বললেন,হানী, আমি গরিব মুসাফির। তুমিতো কূফাবাসী সম্পর্কে ভালমতে অবহিত। আমি তোমার আশ্রয়ে তোমার ঘরে থাকতে চাই। হানী ওনাকে সানন্দে গ্রহন করলেন এবং একটি কামরা খালি করে দিলেন।

ইবনে যিয়াদ যকন জানতে পারলো যে ইমাম মুসলিমকে হানী আশ্রয় দিয়েছে,তখন সে সৈন্য পাঠিয়ে হানীকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসলো। অনুরূপভাবে কূফায় অনান্য সরদার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও কিল্লায় নজরবন্দি করলো। হযরত ইমাম মুসলিম (রাদি আল্লাহু আনহু) এ খবর জানতে পেরে ভীষন উত্তেজিত হয়ে উঠলেন,তার শীরা উপশীরায় হাশেমী রক্ত উৎলিয়ে উঠলো। তিনি তাঁর ছেলেদ্বয়কে কাজী শরীহের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন এবং আহলে বায়তের ভক্ত অনুরক্তদের আহবান করলেন। তাঁর এ আহবানে দলে দলে লোক আসতে লাগলেন। অল্প সময়ের মধ্য চল্লিশ হাজারের মত লোক জমায়েত হয়ে গেল। এদেরকে নিয়ে তিনি রাজ প্রসাদ ঘেরাও করলেন। ইবনে যিয়াদ ও তার সহচররা গ্রেপ্তার হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছৈ গিয়েছিল। কালবিলম্ব না করে ধুরন্ধর ইবনে যিয়াদ একটি চালবাজি করলো। সে কিল্লায় নজরবন্দীকৃত কূফার সরদারদেরকে বাধ্য করলো যে ওরা যেন ছাদে উঠে কূফাবাসীদেরকে বুঝায়, ভয় দেখায় যাতে ইমাম মুসলিম ত্যাগ করে চলে যায়। এ লোকেরা মনে করলো যে তারা একেমঃ ইবনে যিয়াদ হাতে বন্দী, তাছাড়া ইবনে যিয়াদের পরাজয় হলেও কেল্লা দখল করার আগে তাদেরকে খতম করে দিবে। এ ভয়ে তারা তাড়াতাড়ি ছাদে উঠে তাদের আত্বীয় স্বজনকে ডাকদিয়ে বললো,ইমাম মুসলিমের সহায়তা করা তোমাদের জন্য বিপজ্জনক হবে। সরকার তোমাদের উপর ক্ষেপে যাবে,ইয়জিদ তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মেরে ফেলবে। তোমাদের ঘর-বাড়ি লুন্ঠন করবে,জায়গা জমি বাজেয়াপ্ত করবে,আমাদেরকে কেল্লার অভ্যন্তরে খতম করে দেবে। তাই তোমাদের ও আমাদের ভয়াবহ পরিনতির কথা স্বরণ করে ঘরে চলে যাও। ইবনে জিয়াদের এ চালবাজি কাজে আসলো। হযরত ইমাম মুসলিমের বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। সবাই এদিক সেদিক হয়ে চলে গেল। সন্ধ্যার মধ্য দেখা গেল যে চল্লিশ হাজারের মধ্য পাঁচশজন আছে। সূর্য ডুবার পর একটু অন্ধকার হয়ে আসলে এ পাঁচশজনও চলে গেল।
---(সিররুশ শাহাদাতাইন-১৬পৃষ্টা)


সবকঃ হযরত ইমাম হোসাইন (রাদি আল্লাহু আনহু) ও আহলে বায়তের প্রতি মহব্বত ও ওফারদারীর দাবীদার কূফাবাসীদের সমস্ত ওয়াদা প্রতিজ্ঞা মিথ্যা ছিল। তারা যথাসময়ে বেওফা হিসেবে প্রমাণিত হলো। আহলে বায়তের প্রতি মহব্বতের দাবীদার সবাই সত্যবাদী নয়।
Top