হায়িয-নিফাসের আরো কতিপয় বিধান
হায়িয যদি পূর্ণ দশ দিন এবং নিফাস পূর্ণ চল্লিশ দিন পর বন্ধ হয় আর নামাযের সময় যদি তাকবীরে তাহরীমা পর্যন্ত থাকে তবে ঐ ওয়াক্তের নামায তার উপর ফরয হবে। গোসল করে পবিত্র হয়ে কাযা করবে। আর যদি এতটুকু সময় না থাকে, তবে তার উপর ঐ ওয়াক্তের নামায ফরয হবে না।
অনুরূপভাবে হায়িয থেকে দশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর পবিত্র হলে এবং রাতের এতটুকু অংশ যদি বাকী না থাকে যাতে একবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলতে পারবে, তবে ঐ দিনের রোযা তার উপর ওয়াজিব নয়। আর যদি দশ দিনের পূর্বে এবং এতটুকু পরিমাণ সময় আছে যাতে সুবহি সাদিকের পূর্বে গোসল করে কাপড় পরিধান করে ‘আল্লাহু আকরব’ বলার সময় থাকে, তবে রোযা তার উপর ফরয হবে। যদি গোসল করে নয় তবে উত্তম, আর যদি গোসল নাও করে তাহলে গোসল করা ব্যতিত রোযার নিয়ত করে নিবে এবং সকালে গোসল করে নিবে। যদি এতটুকু সময় না থাকে তবে তার উপর পরের দিনের রোযা ফরয হবে না। তবে রোযাদারের ন্যায় থাকা আবশ্যক।
রোযা অবস্থায় হায়িয-নিফাস আরম্ভ হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। হায়িয-নিফাস অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম। এ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হালাল মনে করা কুফুরী। হাদিস শরীফে আছে-
مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ
যে ব্যক্তি ঋতুবতীর সাথে সংগম করল, কিংবা স্ত্রীর পেছনের রাস্তা দিয়ে সংগম করল, সে মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ বিধানের সাথে কুফুরী করল। ২৯৬
২৯৬.ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, মুসনাদ, ইমাম তিরমিযী, তিরমিযী শরীফ ও ইমাম নাসাঈ, নাসাঈ শরীফ
আর কেউ যদি এ অবস্থায় সংগম করা হারাম জেনেও সংগম করে তবে সে বড় গুনাহগার হবে এবং তাওবা করা তার উপর ফরয। যদি সংগম হায়িয আসার কালে করে, তবে এক দীনার আর হায়িযের শেষ কালে করলে অর্ধেক দীনার সাদকা করা মুস্তাহাব।
পূর্ণ দশ দিন সমাপ্ত হলে রক্ত বন্ধ হওয়া মাত্র গোসল করা ব্যতিত সংগম করা বৈধ। তবে মুস্তাহাব হলো গোসল করার পর সংগম করা।
দশ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যদি রক্ত বন্ধ হয়, তবে গোসল না করা পর্যন্ত অথবা রক্ত বন্ধ হওয়ার সময়কালীন নামাযের ওয়াক্ত অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পূর্বে সংগম করা জায়েয নেই।
নির্ধারিত সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায় তাহলে গোসল করলেও সংগম বৈধ হবে না, যতদিন পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সীমা পূর্ণ না হয়। যেমন কারো নির্ধারিত সময়সীমা ছয় দিন ছিল, কিন্তু এবার পাঁচ দিনেই রক্ত আসা বন্ধ হয়ে গেল, তখন তার বিধান হলো সে গোসল করে নামায আরম্ভ করে দিবে কিন্তু সংগম করার জন্য আরো একদিন অপেক্ষা করা ওয়াজিব। ২৯৭
২৯৭.মুফতি আমজাদ আলী (رحمة الله) (১৩৬৭ হি.) বাহারে শরীয়ত, খণ্ড ২, পৃ. ৯০-৯১
কনের মাসিক অবস্থায় বিয়ে পড়ানোতে কোনো সমস্যা নেই। তবে সমস্যা হবে বাসররাতে স্বামীর সহবাস করতে। যেহেতু এসময় সহবাস করা নিষেধ ও মহাপাপ।
সংগমের সময় স্বামী স্তববৃন্ত চুষতে গিয়ে স্ত্রীর দুধ যদি স্বামীর মুখে চলে যায়, তাহলে স্ত্রী স্বামীর দুধ মা হয়ে যায় না এবং স্ত্রী স্বামীর উপর হারাম হয় না। হারাম হওয়ার জন্য শর্ত হলো দুধপান দুধপান বয়সের ভেতরে হতে হবে। আর তা হলো দু’বছর। এ সময় সন্তানের জন্য দুধ হলো প্রধান খাদ্য। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ
জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধপান করাবে, যদি কেউ দুধপান করার সময় পূর্ণ করতে ইচ্ছা করে। ২৯৮
২৯৮.সূরা বাকারা, আয়াত: ২৩৩
স্ত্রী সহবাসের পর মহিলারা গোসলের পূর্বে ঘরের প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম করতে পারবে, তবে যতদ্রুত সম্ভব গোসল করে নেওয়া উত্তম। কারণ পরে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাছাড়া হঠাৎ এমন প্রয়োজনও দেখা দিতে পারে, যাতে গোসল করা জরুরি।
গোসলের পর প্রসাবদ্বার থেকে বীর্য বের হলে তা উত্তেজনাবশত নয়; বরং তা কোনোভাবে ভেতরে আটকে থাকা বীর্য। সুতরাং তাতে পুনরায় গোসল করা ওয়াজিব নয়। প্রস্রাবের ন্যায় তা পুনরায় ধুয়ে ফেলে উযূ করলেই যথেষ্ট।
একই রাতে স্ত্রীর সাথে একাধিক বার সংগম করলে কিংবা একাধিক স্ত্রীর সাথে সংগম করলে প্রতিবার সংগম করার পর গোসল করা উচিত। গোসল করা সম্ভব না হলে অন্তত উযূ করে নেওয়া দরকার।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ، ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ، فَلْيَتَوَضَّأْ بَيْنَهُمَا وُضُوءًا
হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, অতঃপর আবার তা করতে ইচ্ছা রাখে, সে যেন মাঝখানে উযূ করে। ২৯৯
২৯৯.ইমাম মুসরিম (رحمة الله) (২৬১ হি.), সহীহ মুসলিম, সূত্র মিশকাত; পৃ. ৪৯
সাধারণত স্বামী-স্ত্রী রাতের বেলায় মিলন করে ঘুমায় আর ভোর বেলা কিংবা সকাল বেলা উঠে গোসল করে। এক্ষেত্রে মিলনের পর ঘুমানোর পূর্বে গোসল করে নেওয়া উচিত। অথবা ঘুমানোর পূর্বে পুরুষাঙ্গ ধুয়ে পরিষ্কার করে উযূ করে ঘুমাবে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: ذَكَرَ عُمَرُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ تُصِيبُهُ الْجَنَابَةُ مِنَ اللَّيْلِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রتَوَضَّأْ وَاغْسِلْ ذَكَرَكَ، ثُمَّ نَمْ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ’র কাছে আরয করলেন, রাতে তিনি জানাবতে পতিত হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, তখন তুমি উযূ করবে এবং তোমার পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে, অতঃপর ঘুমাবে। ৩০০
৩০০.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র মিশকাত; পৃ. ৪৯
জানাবত অবস্থায় যদি খাবার খেতে হয়, তাহলে উযূ করে খাবে।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ جُنُبًا فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ ينَام تَوَضَّأ وضوءه للصَّلَاة
হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন জানাবত অবস্থায় থাকতেন, আর এ অবস্থায় খাবার বা ঘুমানোর ইচ্ছা করলে তিনি নামাযের ন্যায় উযূ করতেন। ৩০১
৩০১.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র মিশকাত; পৃ. ৪৯
স্ত্রী সংগমের পর রাতে হোক বা দিনে হোক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করে পবিত্র হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ হায়াত-মাউতের কোনো গ্যারান্টি নেই। নাপাকী অবস্থায় মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া নাপাকী ব্যক্তির ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেনা।
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: لَا تدخل الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ وَلَا كَلْبٌ وَلَا جنب
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না সে ঘরে যাতে রয়েছে ছবি, কুকুর ও নাপাকী ব্যক্তি। ৩০২
৩০২.আবু দাউদ ও নাসাঈ, সূত্র মিশকাত; পৃ. ৫০
عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثٌ لَا تَقْرَبُهُمُ الْمَلَائِكَةُ جِيفَةُ الْكَافِرِ وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوقِ وَالْجُنُبُ إِلَّا أَن يتَوَضَّأ
হযরত আম্মার বিন ইয়াসার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির কাছে রহমতের ফেরেশতা আসেনা। কাফেরের মৃতদেহ, খালুক ব্যবহারকারী ও নাপাকী ব্যক্তি কিন্তু সে যদি উযূ করে।৩০৩
৩০৩.আবু দাউদ, সূত্র মিশকাত; পৃ. ৫০