রাসূল (ﷺ) কি হাজির নাজির?


❏ প্রশ্ন : রাসূল (ﷺ) সরাসরি যদি একাধিক জায়গায় উপস্থিত থাকেন, তা এর দ্বারা একক বস্তু একাধিক হওয়া আবশ্যক হচ্ছে। আর যদি সেখানে রূপক আকৃতি থাকে তাহলে বস্তুর রূপ বস্তুর থেকে ভিন্ন হয়। অতএব প্রমাণ হলো, তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যমান নয়।


✍ জবাব : حامدا ومصليا ومسلما এক রূহের সাথে সম্পৃক্ত রূপক একাধিক শরীর বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত হতে পারে। এটা একক বস্তু একাধিক হওয়া নয়। কারণ শরীরগুলির মধ্যে এক ধরণের ভিন্নতা বিদ্যমান আছে। এমন শরীর রাসূল (ﷺ) থেকে ভিন্নও নয়। কারণ সকল শরীরে সাথে তার রূহ সম্পৃক্ত থাকবে। নির্দিষ্ট করণের ভিত্তি রূহ এক হওয়ার উপর, শরীর এক হওয়ার উপর নয়।


ইমাম মালেক (رحمة الله) বলেন, إن الروح صورة كصورة الجسد ‘রূহও একটি আকৃতি, শরীরের আকৃতির মতো।’  (নোখবাতুল লায়ী : ১৩৬)


কেউ যদি বলে, রাসূল (ﷺ) এর আগমন হলেও আমরা তো দেখি না। এটা আকীদা ও আমলের ত্রুটি। চোখের দেখা না হলে এটা আবশ্যক নয় যে, রাসূল (ﷺ) আসেন না। বরং এটা নিজের দুর্বলতা। এর কারণে লজ্জিত হওয়া উচিত। ঠাট্টা করে কথা বলা নয়। কোনো জিনিস কোথাও কেউ না দেখলে এটা আবশ্যক হয় না যে, ঐ জিনিস ওখানে নেই। বরং এটা নিজের দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা ও অসর্তকতার প্রমাণ।

একথাও স্মরণ রাখতে হবে যে, এমন কথা বা আচরণ রাসূল (ﷺ) এর রূহের সাথে বে আদবী। যা বড় মারত্মক। যদিও এটা তার শরীরের সাথে বেআদবী নয়। শরীরের তুলনায় রূহের সাথে বেআদবী করা মারত্মক বেশি। যেমন ফেরেশতাদেরকে নৈকট্যপ্রাপ্ত ও বিশেষ মানুষরা ছাড়া কেউ দেখতে পায় না। এর দ্বারা এটা আবশ্যক নয় যে, ফেরেশতা সব জায়গাতে নেই। ফেরেশতা সব জায়গায় নেই একথা বলা বোকামীর প্রমাণ এবং ফেরেশতাদের সাথে বেআদবী। অথচ ফেরেশতারা তো সর্ব জায়গায় বিদ্যমান আছে। যা সাধারণদের দৃষ্টি থেকে উপরে। ফেরেশতা কখনো মানুষের আকৃতি ধারণ করে।


শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) জাযবুল কুলুব কিতাবে বলেন, শায়খ আলাউদ্দিন কাওনুবী বলেছেন, একথা অসম্ভব নয় যে, নবীগণের পবিত্র রূহ শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পর ফেরেশতাদের শরীরের মতো হয়ে যায়। বরং তাদের চেয়েও উত্তম হয়ে যায়। ফেরেশতারা যেমন বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারে, তেমনি পবিত্র রূহও বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারে। এটাও হতে পারে যে, আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের এই মর্যাদা দুনিয়ার মধ্যে অর্জন হবে এবং এক আত্মা নির্দিষ্ট শরীর ছাড়া বিভিন্ন শরীরে সচল থাকবে। যেমন, কোনো কোনো বিশেষাজ্ঞ আবদালের নাম করণের কারণ বর্ণনা করেন, তারা যখন কোনো জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা করে, তখন প্রথম জায়গায় তার রূপ রেখে চলে যায়।


সুফিদের মতে আলমে আজসাদ, আলমে আরওয়াহের মতো একটি আলমে মেসাল আছে। যা আলমে আজসাদ থেকে সুক্ষ্ম ও আলমে আরওয়াহ থেকে ঘন হয়। আর রূহ বিভিন্ন আকৃতিতে রূপান্তর হওয়া এই আলমের উপর ভিত্তি করে। হযরত জিবরাঈল আ. দাহিয়া কালবীর আকৃতিতে এবং হযরত মারিয়াম আ.র কাছে পূর্ণ মানবাকৃতিতে যাওয়া এই আলমের থেকে। এর কারণে জায়েয আছে যে, মূসা আ. ষষ্ঠ আসমানে অবস্থান করছে এবং তখন কবরেও রূপ রেখে এসেছেন। রাসূল (ﷺ) তাকে দুই জায়গাতেই দেখেছেন। এই আলম বা জগতের প্রামাণিকতার দ্বারা অনেক মাসআলার সমাধান হয়ে যায়। যেমন, জান্নাত এত বড় প্রশস্ত হওয়া সত্তে¡ও দেয়ালের মধ্যে দেখা যাওয়া ইত্যাদি।

এভাবে ইমাম গযালী (رحمة الله) ও মাওলানা আসগর আলী কনুজী লাতায়েফে ইলমিয়াতে অনেক দৃষ্টান্ত ও বিশ্লেষণের সাথে এই বাস্তবতা বর্ণনা করেছেন যে, নবীগণ মৃত্যুর পরে বিভিন্ন আকৃতিতে রূপান্তর হয়ে প্রথিবীর আনাচে কানাচে ভ্রমণ করেন। দৃষ্টিসম্পন্নরা দেখে। বরং এটা ইসলামের সত্যতা ও তাওহীদ ও রেসালাতের উপর চূড়ান্ত বিশ্বাস।


উল্লিখিত আলোচনা নবীগণ বিশেষভাবে নবীগণের সর্দার (ﷺ) সম্পর্কে। ইমাম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) এমনকি অলিগণ সম্পর্কে কি বলেন মেরকাত কিতাবে দেখুন। যখন আল্লাহর অলিদের জন্য জমিন সংকোচিত করে দেওয়া হয়, حصل لهم ابدان مكتبة متعددة وجدوها في أماكن مختلفة في أن واحدঅর্থাৎ তাদের জন্য বিভিন্ন শরীর অর্জন হয়। এই রূপক বিভিন্ন শরীরের কারণে আল্লাহর অলিদের একই সময় বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। দুনিয়াতে এই বিষয়টি বেশিরভাগ অলিদের জন্য সাধারণ বিষয়। (তাওযীহুল বয়ান, আল্লামা সাঈদী)


সুবহানাল্লাহ, মোল্লা আলী আলকারী (رحمة الله) যখন আল্লাহর অলিদের জন্য এই বিষয়টি সাধারণ বলেছেন, তাহলে নবীগণ বিশেষভাবে আমাদের নবী (ﷺ) এর পবিত্র শানে নিশ্বাস ফেলানোর সুযোগ কিসের। একারণে হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কী (رحمة الله) বলেছেন, রাসূল (ﷺ) এক সময়ে কয়েক জায়গায় কিভাবে যেতে পারে। তার কিভাবে ইলম হলো। এমন ধারণা দুর্বল ধারণা। রাসূল (ﷺ) এর ইলম ও আধ্যাত্মিকতার ব্যাপ্তি যা দলিল দ্বারা প্রমাণিত, তার সামনে এটা একটা সাধারণ বিষয় বিষয়। আর আল্লাহ তা‘আলার কুদরতের উপর কোনো কথাই নেই।


আরো স্পষ্ট হওয়ার জন্য এখানে একটি হাদীস পেশ করছি। যাতে শিক্ষা গ্রহণ করার লোকেরা ফিকিরের দৃষ্টিতে দেখে বিশ্বাস করে নেয়। জিদ করে ঈমান ধ্বংসের জালে আটকে না যায়।


মেশকাত শরীফে আছে, রাসূল (ﷺ) একজন চিন্তিত মানুষকে দেখলেন। যার সন্তান মারা গিয়েছে। তখন তিনি বলেন,

أما تحب ان لا تاتي بابا من أبواب الجنة الا وجدته ينتظرك فقال يا رسول الله اخاصة له الكلنا قال لكلكم

‘তুমি কি এটা পছন্দ করবে না যে, তুমি জান্নাতের যে কোনো দরজায় গেলে দেখবে সেখানে তোমার ছেলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে? কেউ বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ এটা কি তার জন্য বিশেষভাবে। নাকি আমাদের সকলের জন্য? তিনি বললেন, তোমাদের সকলের জন্য।’


এই হাদীসে باب শব্দটি নাকেরা তথা অনির্দিষ্ট এবং খবর না বাচকের পরে এসেছে। নাকেরা না বাচকের পরে আসলে ব্যাপকতার অর্থ দেয়। জানা গেলো, জান্নাতের প্রত্যেক দরজার এই গুণ থাকবে। প্রত্যেক দরজাতে ঐ ছেলে উপস্থিত থাকবে। প্রমাণ হলো, এক ব্যক্তি একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় থাকা শুধু সম্ভব নয়, বরং বাস্তব বিষয়।


শায়খ আবু সাঈদ কিলবী (رحمة الله) বলেন, হযরত শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله)র মাজলিসে আমি বহু বার রাসূল (ﷺ) এবং অন্যান্য নবীদেরকে দেখেছি। (সাকীনা : ২৬)


মোটকথা এখানে দেখাটা রূপক আকৃতিতে হোক বা রূহ শরীরসহ হোক আমরা দুটিই সম্ভব মনে করি। কারণ নবীগণের শরীর রূপক আকৃতির মতো সুক্ষ্ম শরীর। অন্য মানুষের শরীর এমন নয়। তা ঘন। সুক্ষ্ম শরীর ঘন শরীরের সাথে তুলনা করা যায় না।


আল ইউওয়াকীত কিতাবে হযরত শায়খ কাসেম মাগরিবী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,

ليست رؤية النبي صلى الله عليه وسلم كرؤية الناس بعضهم بعضا وإنها هي جمعية خيالية وحالة برزخية وأمر وجداني لا يدرك حقيقة الا من باشره

‘রাসূল (ﷺ)কে দেখা মানুষ একে অপরকে দেখার মতো নয়। বরং এটা একটা খেয়ালিয়া ও বারযাখী বিষয়। উপলব্দির বিষয়, যা একমাত্র সেই উপলব্দি করতে পারে যে এই মর্যাদা অর্জন করেছে।’

وحينئذ فما رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم الا بروحه المتشكلة يتشكل الأشباح من غير انتقال ذاته الشريفة ومجيئها من البرزخ إلى مكان هذا الرائي

‘মোটকথা যখন রাসূল (ﷺ) এর দেখা হয় তার রূহ দেখা হয়। যা বিভিন্ন রূপে পরিবর্তন হয়। তার সত্তা বারযাখের জগত থেকে স্থানান্তর হয়ে আগমন করে না।’ (ইউওয়াকীত)


ফাতহুল মুলহিম কিতাবে মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানী (رحمة الله) বলেন,

يجعل الله لروحه مثالا فيرى في اليقظة كما يرى في النوم

‘আল্লাহ তা‘আলা তার রূহের রূপ সৃষ্টি করে দেন। ফলে তা জাগ্রত অবস্থায় দেখে, যেভাবে ঘুমের মধ্যে দেখে।’ (১/২৩০)


শায়খ আকবর (رحمة الله) বলেন,

إن من أهل البرزخ من يخلق الله تعالى من همته من يعمل في قبره بعمله الذي كان يعمله في دار الدنيا

‘বারযাখবাসীদের মধ্যে এমন কিছু অলিরাও আছে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের শক্তি সাহস সৃষ্টি করে দেন। ফলে তারা দুনিয়াতে যেই আমল করতো সেগুলি তারা করে।’ (আলইউওয়াকীত)


র্সিরুল আসরার কিতাবে আছে, الأولياء يصلون في قبورهم كما يصلون في بيوتهم

‘অলিগণ তাদের কবরের মধ্যে সেভাবেই নামায আদায় করে, যেভাবে তারা তাদের ঘরে করতো।’


আসলে এই রক্ত মাংসের শরীরের নাম মানুষ নয়। বরং মানুষ সেউ সুক্ষ্ম নুরানী শরীরের নাম যা এই শরীরের জীবনের উৎস। এই শরীরের মধ্যে তা এভাবে সচল আছে, যেভাবে গোলাপ ফুলে পানি, যায়তুনে তেল ও কয়লার মধ্যে আগুন। যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত মাংসের শরীর এর প্রভাব গ্রহন করার যোগ্যতা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই সুক্ষ্ম শরীর এই শরীরে বিদ্যমান থাকবে। যখন সে এই যোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে তখন এই সুক্ষ্ম শরীর রক্ত মাংসের শরীর থেকে পৃথক হয়ে বারযাখ জগতে চলে যাবে। (কিতাবুর রূহ, ইবনুল কইয়ূম)


এখন এই মাসআলার বিশ্লেষণ হলো, ইন্তেকালের পরে রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র শরীর বারযাখ জগতে অর্থাৎ কবরে রূহের সাথে সম্পর্ক আছে। এই হায়াতের কারণে পবিত্র রওযাতে উপস্থিতিদেরকে দেখেন এবং শুনেন। সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কোরআন ও হাদীসের আলোকে এটা ইজমায়ী আকীদা। হুযুর (ﷺ) এবং অন্যান্য নবীগণও দুনিয়াবী শরীরের হায়াতে আছেন এবং এটা দুনিয়াবী জীবন থেকে কম নয়। স্বাদ উপভোগ ও অন্যান্য ইবাদাতে লিপ্ত আছেন। নিঃসন্দেহে এটা অনুভূত ও শারিরিক জীবন। রূহানী ও রূপক হায়াত তো সাধারণ মুমিন বরং কাফেরদেরও অর্জিত আছে। উম্মতের এই ইজামায়ী আকীদা শরীআতের মূলনীতি কিতাব, সুন্নাত উম্মাতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং এই ইজমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নিছক জিদ।


কুরআন কারীমে আছে, واسئل من أرسلنا من قبلك ‘তুমি জিজ্ঞাসা করো, যাদেরকে তোমার পূর্বে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা যুখরুফ) এই আয়াতের ইঙ্গিত, বর্ণনা ও চাহিদা থেকে প্রমাণ হয়। মুফাসসিরীন বলেন,يسند به على حياة الأنبياء ‘হায়াতুল আম্বিয়ার পক্ষে এটা দিয়ে দলিল দেয়া যাবে।’ (মুশকিলাতুল কোরআন, দুররে মানসূর, রূহুল মা‘আনী, জামাল, সাবী, শায়খ যাদা, খফাযী)


সূরা আলিফ লাম সাজদাতে আছে, ولقد أتينا موسى الكتاب  ‘আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি।’ শাহ আব্দুল কাদের এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, মে‘রাজের রাতে তার সাথে সাক্ষাত করে ছিলেন। আরো কয়েক বার সাক্ষাত করে ছিলেন। (মুযিহুল কুরআন) সাক্ষাত হায়াত ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং আয়াতের চাহিদা থেকে নবীগণের হায়াত প্রমাণিত হয়।


মূলনীতি আছে, যেই বিধান চাহিদা থেকে প্রমাণিত হয় তা এককভাবে শক্তি ও গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে সরাসরি বিবরণের মতো হয়।

ولا تقولن لمن يقتل في سبيل الله أموات بل أحياء ولكن لا تشعرون.

‘যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয় তাদেরকে মৃত্যু বলো না, তারা জীবিত। তবে তোমরা বুঝো না।’

ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا، بل أحياء عند ربهم يرزقون

‘যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে, তাদেরকে মৃত্যু ভেবো না। তারা জীবিত। তাদের রবের কাছে রিযিক পাচ্ছে।’


এই দুই আয়াতের সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,

كون الشهداء أحياء بنص القرأن والأنبياء أفضل من الشهداء

‘কুরআনের বর্ণনার দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, শহীদগণ জীবিত। আর নবীগণ শহীদগণের তুলনায় উত্তম।’ (ফাতহুল বারী)


হাফেয আসকালানী আয়াত থেকে দালালাতুন নস বা বিবরণ ভঙ্গি থেকে হায়াতুন নবী প্রমাণ করলেন।’

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত। الأنياء في قبورهم يصلون ‘নবীগণ তাদের কবরে নামায পড়ছে।’ (হায়াতুল আম্বিয়া, বায়হাকী)


আল্লামা সুবকী (رحمة الله) এই হাদীসের সনদ উল্লেখ করে তার রাবীদেরকে ছেকাহ ও সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। খাসায়েস, ফাতহুল বারী, ফাতহুল মুলহিম কিতাবেও প্রথম রাবী ছাড়া বাকি রাবীদের সাথে উল্লেখ করেছেন।


আল্লামা হাইতামী (رحمة الله) বলেন, আবি ইয়ালার সনদের সকল রাবী ছেকাহ। আসসিরাজুম মুনির কিতাবে আছে, এই হাদীসটি সহীহ।


মোল্লা আলী আল কারী (رحمة الله) মেরকাতে বলেন, صح خبر الأنبياء أحياء في قبورهم ‘নবীগণ কবরে জীবিত থাকার হাদীস সহীহ।’ ফয়যুল কাদীরে আছে, এই হাদীস সহীহ।


শায়খ মুহাক্কিক দেহলবী (رحمة الله) মাদারেজুন নুবুওয়াত কিতাবে বলেন, ইমাম আবু ইয়ালা ছেকাহ রাবীদের মধ্যস্ততায় হযরত আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণনা করেন।


কাযী শাওকানী বলেন, أنه صلى الله عليه وسلم حي في قبره وروحه لا تفارقه كما صح أن الأنبياء أحياء في قبورهم

‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার কবরে জীবিত। তার রূহ তার থেকে বিচ্ছেদ হয় না। যেমন অন্যান্য নবীগণ তাদের কবরে জীবিত।’

(তোহফাতুয যাকেরীন)


নায়লুল আওতার কিতাবেও শাওকানী বলেন,

 وقد ثبت في الحديث أن الأنبياء أحياء في قبورهم

‘নিঃসন্দেহে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, নবীগণ তাদের কবরে জীবিত।’ 

(ইমাম মুনজিরী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বায়হাকী সহীহ বলেছেন।)


অফাউল অফা কিতাবে আছে, আবু ইয়ালা ছোকাহ রাবীদের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বায়হাকী সহীহ বলেছেন।


মাওলানা যাকারিয়া খান দেহলবী (رحمة الله) ফাযায়েলে দুরূদে লিখেছেন, নবীগণ কবরে নামায পড়ছেন, এই হাদীস সহীহ।


জামহুর মুহাদ্দিস এই হাদীসের শুদ্ধতার উপর একমত হয়েছে। হাদীসের মূলনীতিতে এর চেয়ে মজবুত দলিল আর কি হতে পারে। ফাতহুল মুলহিম কিতাবে আছে, دلت النصوص الصحيحة على حياة الأنبياء ‘সহীহ বর্ণনা একথা বুঝায় যে, নবীগণ কবরে জীবিত।’ অন্য জায়গায় আরো বলেন, أن النبي صلى الله عليه وسلم حي كما تقرر وأنه يصلي في قبره بأذان وإقامة ‘রাসূল (ﷺ) জীবিত যেমনটি প্রমাণিত আছে। তিনি তার কবরে আযান ও ইকামাতের সাথে নামায আদায় করেন।’(ফাতহুল মুলহিম : ৩/৪১৯)


ইমাম আবু দাউদ এবং ইমাম আহমদ (رحمة الله) হযরত আবু হোরায়রা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, ما من أحد يسلم علي الا رد الله علي روحي حتى أرد عليه السلام ‘কোনো মানুষ আমাকে সালাম দিলে আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। আমি তার সালামের জবাব দেই।’


ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী (رحمة الله) বলেন, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)র হাদীসের উপর যে নির্ভর কররো, সে ঠিক করলো। হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, তার সকল রাবী ছেকাহ।


সিরাজুম মুনির- ইমাম নভভী, কিতাবুল আযকার- ইবনে কাসীর। ইবনে তায়মিয়া (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি উত্তম। ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়া, যুরকানী ও ইমাম সাখাবী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ বলেছেন।


উসূলে হাদীসের আলোকে এই হাদীস একেবারে হাসান ও সহীহ। এর সকল রাবী ছেকাহ। মুহাদ্দিসগণের বিশেষ জামাত এই হাদীসকে সহীহ ও হাসান বলেছেন।


ইমাম আবু দাউদ, ইমাম দারেমী, ইমাম নাসায়ী, ইমাম হাকেম, ইমাম ইবনে মাজাহ, ইমাম নাসায়ী, ইমাম ইবনে শায়বা প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ আওস বিন আওস থেকে বর্ণনা করেছেন, তোমাদের উত্তম দিনগুলির মধ্যে একটি জুমা। এই দিন হযরত আদম আ.কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে তাদের ইন্তেকাল হয়েছে। এই দিনে প্রথম ও দ্বিতীয় বার সিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। সুতরাং তোমরা জুমার দিন বেশি বেশি আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দুরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।


সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ কিভাবে আমাদের দুরূদ আপনার সামনে পেশ করা হবে? আপনি তো টুকরা টুকরা হয়ে যাবেন। রাসূল (ﷺ) বলেন,

إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء

‘আল্লাহ তা‘আলা জমিনের উপর হারাম করে দিয়েছেন যে, নবীগণের শরীর খেতে পারবে না।’


মুহাদ্দিসগণ এই হাদীস সম্পর্কে বলেন, ফাতহুল বারী কিতাবে আছে, হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, এই হাদীস ইবনে খোযায়মা প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ সহীহ বলেছেন। ইবনে কাইয়ূম (رحمة الله) জিলাউল আফহাম কিতাবে বলেন, এই হাদীসের শুদ্ধতা ও রাবীগণ ছেকাহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।


আল্লামা আইনী (رحمة الله) ওমদাতুল কারী কিতাবে বলেন, صح عنه صلى الله عليه وسلم أن الأرض لا تأكل أجساد الأنبياء  ‘রাসূল (ﷺ) থেকে এই হাদীস সহীহ সনদে পৌঁছেছে।’

ইবনে কাইয়ূম (رحمة الله) কিতাবুর রূহতে বলেন,

أن الأرض لا تأكل أجساد الأنبياء قد صح عن النبي صلى الله عليه وسلم

‘রাসূল (ﷺ) থেকে এই হাদীস সহীহ সনদে পৌঁছেছে যে, মাটি নবীগণের শরীর খাবে না।’


কওলুল বাদী‘তে আল্লামা মুনজিরী থেকে বর্ণিত আছে, এই হাদীস হাসান।


আল্লামা আব্দুল গনী নাবলুসী (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। শায়খ মুহাক্কিক (رحمة الله) মাদারেজুন নুবুওয়াতে বলেন, হাদীসটি সহীহ। উসূলে হাদীসের আলোকে এই হাদীসও একে বারে সহীহ। বরং ইমাম হাকেম ও আল্লামা যাহাবী এই হাদীসকে বোখারীর শর্তের পর্যায়ের বলেছেন। মোস্তাদরাকে হাকেমেও এই দুই হাদীস বোখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন।


ইবনে মাজাহ ১১৯ নং পৃষ্ঠায় হযরত আবু দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, فنبي الله حي يرزق ‘আল্লাহর নবী জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়।’ এই হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের উক্তি হলো, হাফেয মুনজিরী (رحمة الله) বলেন, সনদ সুন্দর। সিরাজে মুনীরে বলেন, এর রাবীরা ছেকাহ। ফাতহুল কাদীরে আল্লামা মানাবী বলেন, দিমইয়ারী বলেন, এর রাবীরা ছেকাহ।


হাফেয ইবনে হাজার (رحمة الله) তাহযীবুত তাহযীব কিতাবে বলেন, আমি বলি এর রাবীরা ছেকাহ। আল্লামা সামহুদী বলেন, এই হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ সুন্দর সনদে বর্ণনা করেছেন।


মেরকাত কিতাবে আল্লামা মোল্লা আলী আল কারী (رحمة الله) বলেন,

باسناد جيد نقله ميرك عن المنذري وله طرق كثيرة

‘মুনজিরী থেকে মীরক সুন্দর সনদে উদ্ধৃত করেছেন। এর অনেক সনদ রয়েছে।’ (২/১১২)


নায়লুল আওতার কিতাবে শাওকানী (رحمة الله) বলেন, সনদ সুন্দর। আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আওনুল কা‘বুদ কিতাবে আছে, এর সনদ ভালো। (১/৪০৫)


 মেশকাত, নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ, ইবনে আমি শায়বা, আল বেদায় ওয়ান নেহায়া, আল জামেউস সগীর, দারেমী ও খাসায়েসে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, إن لله ملائكة سياحين في الأرض يبلغوني من أمتي السلام ‘আল্লাহর তা‘আলার পক্ষ থেকে কিছু ফেরেশতা নিযুক্ত আছে। যারা জমিনে ঘোরে এবং আমার উম্মাতে সাল্লাম আমার কাছে পৌঁছায়।’


এই হাদীস সম্পর্কে সিরাজুম মুনির কিতাবে আল্লামা আযীযি বলেন, হাদীসটি সহীহ। মাজমাউয যাওয়ায়েদ কিতাবে আল্লামা হাইসামী বলেন, এই হাদীসের রাবীরা সহীহ।


মোস্তাদরাকে হাকেমে আছে, ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী দুজনই সহীহ  বলেছেন। ইমাম সাখাবী (رحمة الله) কওলুল বাদী‘ কিতাবে এর সনদ সহীহ বলেছেন। সাহমুদী (رحمة الله) অফাউল অফা কিতাবে সহীহ সনদে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দেসে দেহলবী (رحمة الله) মুতাওয়াতির বলেছেন। (ফাতাওয়া আযীযি : ২/৬৯)


জিলাউল আফহাম কিতাবে হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে।

من صلى عند قبري سمعته ومن صلى علي من بعيد علمته

‘যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে দুরূদ পাঠ করে আমি তা শুনি। যে দূর থেকে দুরূদ পাঠ করে তা আমাকে জানানো হয়।’


এই হাদীস সম্পর্কে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) হাদীসের সনদ আবুশ শায়খের ধারা সম্পর্কে বলেন, সুন্দর সনদ।

আল কাওলুল বাদী‘তে আল্লামা সাখাবী (رحمة الله) বলেন, সনদটি ভালো। মোল্লা আলী আল কারী (رحمة الله) মেরকাতে বলেন, সনদ ভালো। (২/১০) আল্লামা শাব্বীর আহমদ ওসমানী (رحمة الله)ও সনদ ভালো বলেছেন। (১/৩৩০)


এই মুহাদ্দিসগণ বিশেষভাবে ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله)র বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, এই বর্ণনা ভালো ও সহীহ। স্মরণ রাখতে হবে, মুহাদ্দিসগণের মতে জায়্যিদ তথা ভালো ও সহীহের মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। শাব্দিক কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।


তাদরীবুর রাবী কিতাবে ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, إن ابن الصلاح يرى التسوية بين الجيد والصحيح ‘ইবনে সালাহ (رحمة الله) জায়্যিদ ও সহীহ এক মনে করেন।’


মোটকথা এই সকল হাদীস ও কোরআনের আয়াতের দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, নবীগণের হায়াতের ব্যাপারে কারো কোনো ইখতিলাফ নাই। সায়্যিদুল আম্বিয়ার ব্যাপারে তো হতেই পারে না। উম্মাতের প্রত্যেক স্তরে নবীগণের হায়াতকে মেনে নেওয়া হয়েছে। ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) এই সকল আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করে নবীগণের হায়াত বিশেষভাবে শেষ নবীর হায়াতকে মুতাওয়াতির বলেছেন।

إن من جملة ما تواترت عن النبي صلى الله عليه وسلم حياة الأنبياء في قبورهم . وأيضا حياة النبي صلى الله عليه وسلم في قبره وسائر الأنبياء معلومة عندنا علما قطعيا لما قام عندنا من الأدلة في ذلك وتواترت به الأخبار الدالة على ذلك

‘নবীগণ তাদের কবরে জীবিত থাকা সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) থেকে মুতাওয়াতির বর্ণনা রয়েছে। নবী (ﷺ) ও অন্যান্য নবীগণ কবরে জীবিত থাকার বিষয়টি আমাদের কাছে অকাট্য বিশ্বাস। কারণ এব্যাপারে মুতাওয়াতির বিবরণ রয়েছে।’

(ফাতাওয়া ইমাম সুয়ূতী : ২/১৪)


সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ঐকমত্য আকীদা হলো, রাসূল (ﷺ) ও অন্যান্য নবীগণ কবরে সশরীর বিদ্যমান ও জীবিত।


এখন মুহাদ্দিস, ধর্মতত্ত্ববিদ ও ফোকাহায়ে কেরামের উক্তি পেশ করা হচ্ছে। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,

إن حياته صلى الله عليه وسلم في قبري لا يعقبها موت بل يستمر حيا والأنبياء في قبورهم

‘রাসূল (ﷺ) তার কবরে জীবিত। আর মৃত্যু আসবে না। বরং সর্বদা জীকিত থাকবেন। কারণ নবীগণ কবরে জীবিত। (ফাতহুল বারী)


জানা গেলো, এই জীবন স্থায়ী ও চিরদিনের। এর উপর মৃত্যু আসে না। আল্লামা আইনী (رحمة الله) বলেন,فإنهم لا يموتون في قبورهم بل هم أحياء‘নবীগণ কবরে মারা যান না; বরং জীবিত থাকেন।’

ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন,إن الله جل ثناءه رد إلى الأنبياء أرواحهم أحياء عند ربهم 

‘আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের রূহকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তারা তাদের রবের কাছে জীবিত।’


মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) শরহে শেফা কিতাবে বলেন,

المعتقد المعتمد أنه صلى الله عليه وسلم حي في قبره كسائر الأنبياء في قبورهم وهم أحياء عند ربهم أن لأرواههم تعلقا بالعالم العلى والسفلى كما كانوا في الحال الدنيوي فهم بحسب القلب عرشيون وباعتبار القالب فرشيون

‘নির্ভরযোগ্য আকীদা হলো, রাসূল (ﷺ) তার কবরে জীবিত। যেমন অন্যান্য নবীগণ তাদের কবরে তাদের কাছে জীবিত। তাদের রূহ ঊর্ধ্ব জগত ও নি¤œ জগত উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন দুনিয়াতে ছিলেন। তারা অন্তরের দিক দিয়ে আলশওয়ালা। শরীরের হিসেবে ফরশওয়ালা।’


জানা গেলো, নবীগণের জীবন নির্ভরযোগ্য আকীদা। আল্লামা সাহমুদী (رحمة الله) বলেন, لا شك في حياته صلى الله عليه وسلم بعد وفاته –أكمل من الشهداء ‘ইন্তেকালের পর রাসূল (ﷺ) এর হায়াতের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। এই জীবন শহীদদের জীবনের চেয়েও পূর্ণ।


অফাউল অফা প্রণেতা অন্য এক জায়গায় বলেন,

وأما أدلة حياة الأنبياء فمقتضاها حياة الأبدان كحالة الدنيا مع الاستغناء عن الغذاء

‘মোটকথা নবীগণের হায়াতে দলিলের চাহিদা হলো, এই হায়াত শরীরের সাথে থাকবে। যেমন দুনিয়াতে ছিলেন। তবে খানা পিনা থেকে অমুখাপেক্ষী।’


দুনিয়াতে শরীর স্বভাবগতভাবে খাবারের মোখাপেক্ষী হয়। নবীগণের শরীর দুনিয়াবী খাবারের মোখাপেক্ষী নয়।


মুহাদ্দিস নূরুল হক দেহলবী (رحمة الله) বলেন, পছন্দনীয় ও নিশ্চিত উক্তি হলো, নবীগণ মৃত্যুর পরে দুনিয়াবী হায়াতে জীবিত। আরো বলেন, নবীগণ মৃত্যুর পরে কবরে অনুভূত হায়াতে জীবিত। তাদের শরীর ও হায়াত দুনিয়াবী হায়াতের মতো হবে না, যদিও তারা খাবারের মোখাপেক্ষী নয়।


জানা গেলো, দুনিয়াবী জীবনে তাদের যেমন আয়াত্ব করা ও অনুভব করার ক্ষমতা ছিলো, বারযাখী জীবনেও তা বহাল রয়েছে। সুতরাং সেটা দুনিয়াবী শারিরিক জীবনের মতো। ইবনে আকীল হাম্বলীর উক্তি হলো, هو حي في قبره يصلي ‘রাসূল (ﷺ) তার কবরে জীবিত, নামায পড়ছেন।’


বদরুদ্দীন হাম্বলী (رحمة الله) বলেন, الأنبياء أحياء في قبورهم قد يصلون ‘নবীগণ তাদের কবরে জীবিত। সর্বদা নামায আদায় করে।’


তবকাতে শাফেয়্যিয়াতে আছে,

لأن عندنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حي يحس ويعلم وتعرض عليه أعمال الأمة ويبلغ الصلاة والسلام

‘আমাদের মতে রাসূল (ﷺ) জীবিত অনুভুতিশীল এবং জানেন। তার কাছে উম্মতের আমল পেশ করা হয় এবং সালাত ও সালাম পৌঁছানো হয়।’

আসসিরাজুম মুনীরে বলেন,ردالله علي روحي ‘আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ কারণ রাসূল (ﷺ) সর্বদা জীবিত। তার রূহ তার থেকে পৃথক হয় না। ردالله علي روحي উদ্দেশ্য হলো,

رد علي نطفي لأن روحه دائما وروحه لا تفارقه 

আল্লামা খফাযী হানাফী (رحمة الله) বলেন, أنه صلى الله عليه وسلم حي حياة مستمرة ‘রাসূল (ﷺ) সর্বদা জীবিত।’ (নাসীমুর রিয়ায : ৩/৪৯৯)

আশায়েরাদের আকীদা হলো, নবীগণ কবরে জীবিত। ইমাম আবুল কাসেম কোশায়রী রেসালায়ে কোশায়রিয়াতে বলেন, وعندهم محمد صلى الله عليه وسلم حي في قبره  ‘আশায়েরাদের মতে রাসূল (ﷺ) নিজ কবরে জীবিত।’ ইমাম আবুল হাসান আশআরী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম এবং ইমাম আবু মানসুর মাতুরিদীও।

ইমাম তাহের বাগদাদী (رحمة الله) বলেন, أن نبينا صلى الله عليه وسلم حي بعد وفاته يسر بطاعات أمته ‘আমাদের নবী (ﷺ) মৃত্যুর পর জীবিত। তার উম্মাতের আমলে খুশি হন।’


নূরুল ঈযাহতে আল্লামা শরনবুলালী বলেন, বিশেষাজ্ঞদের মতে একথা চূড়ান্ত যে, রাসূল (ﷺ) জীবিত। يرزق متمتع بجميع الملاذ والعبادات غير أنه حجب عن البضائر القاصرين عن شريف المقامات

‘তাকে রিযিক দেওয়া হয়। তিনি সকল স্বাদ ও ইবাদাতের থেকে উপকৃত হন। তবে এই উচ্চ মর্যাদা সংকীর্ণ চোখে দেখা যায় না।’

স্মরণ রাখতে হবে, এই রিযিক ও স্বাদ দুনিয়াবী ও অনুভূত নয়। বরং অদৃশ্য জগত ও ভিন্ন জগতের।


বোখারী শরীফের ঠিকায় মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরী বলেন, إن حياته صلى الله عليه وسلم لا يتعقبها موت بل يستمر حيا ‘তার হায়াতের পরে মৃত্যু আসবে না। সর্বদা জীবিত থাকবে।’ (১/৫১৭)


নবীগণের শরীর কবরে সম্পূর্ণ রক্ষিত আছে। শরীরের সাথে রূহের সম্পর্ক আছে। যার কারণে হায়াত আছে।


আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (رحمة الله) ফয়যুল বারীতে বলেন, إن كثيرا من الأعمال قد ثبت في القبور كالأذان والإقامة-عند الدارمي وقرأة القرأن عند الترمذي

‘কবরে অনেক আমলের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন আযান ইকামাতের প্রমাণ দারেমী শরীফে আছে। কোরআন পাঠের প্রমাণ তিরমিযী শরীফে আছে। (১/১৮৩)


সুতরাং জানা গেলো, নবীগণ নিজ শরীরের সাথে কবরের মধ্যে জীবিত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছেন। নামায, তেলাওয়াতে কোরআন, আযান, ইকামাত সক কিছু প্রমাণিত।


নশরুত্তীব কিতাবে মাওলানা থানভী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) কবরে জীবিত থাকা প্রমাণিত। এই রিযিক সেই জগতের উপযুক্ত।


মাওলানা নানুতুবী (رحمة الله) বলেন, নবীগণ জীবিত। তাদের মৃত্যু তাদের জীবনের জন্য আড়ালকারী। হায়াত দূরকারী ও প্রতিহতকারী নয়। তিনি এটাও লিখিছেন যে, আমি নবীগণকে তাদের দুনিয়াবী শরীরের সম্পর্কের দিক থেকে জীবিত মনে করি। তবে كل نفس ذائقة الموت(প্রত্যেক প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করবে।) এবং إنك ميت وإنهم ميتون  (তুমি মৃত্যু বরণ করবে, তারাও মৃত্যু বরণ করেছে) এই দুই আয়াতের দাবি হিসেবে সকল নবীগণের দিকে মৃত্যুর সম্পর্ক বিশ্বাস করাও জরুরী।এই বাহ্য দিক দিয়ে নবীগণ কবরের মধ্যে লুকিয়ে যাওয়া চিল্লাকাশী, নির্জনতা ও একা থাকা মনে করা হবে। তবে মৃত্যুর পর্দার আড়ালে নবীগণের জীবন বাহ্য দৃষ্টিধারীদের চোখের প্রতিকূলে। সাধারণ উম্মতের মতো তাদের মৃত্যুতে ধ্বংস নেই। (লাতায়েফে কাসেমী)


মাওলানা দলিল দিতে গিয়ে বলেন,

(১)    নবীগণের মুবারক শরীর আগের মতো সংরক্ষিত ও নিখুত এবং জমিনের পরিবর্তন থেকে মুক্ত।

(২)    সর্বদার জন্য তাদের স্ত্রীদের সাথে বিবাহ হারাম হওয়া।

(৩)    তাদের মালে মীরাস জারী না হওয়া। এই তিনটি বিষয়ের প্রত্যেকটি নবীগণের জীবনের উপর সাক্ষী। এই কথার স্পষ্ট দলিল, পবিত্র রূহ মোবারক শরীর থেকে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় না। বরং মৃত্যুর পরেও নবীগণ নিজ শরীরের সাথে তেমনি সম্পর্ক রাখেন, যেমন আগে ছিলো। (আবে হায়াত)

মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (رحمة الله) বলেন, রাসূল (ﷺ) এর হায়াত শুধু রূহানী নয়। যেটা সাধারণ শহীদদের আছে। বরং শারিরিকও এবং দুনিয়াবী হায়াতের অংশ। বরং অনেক দিক থেকে এর চেয়ে শক্তিশালী। (মাকতুবাত) এর উদ্দেশ্য হলো, তার মোবারক রূহের সম্পর্ক রূপক শরীরের সাথে স্থির হয় না। যেমন অনেক মানুষের ধারণা। বরং রূহের সম্পর্ক দুনিয়াবী শরীরের সাথে সম্পৃক্ত হয়। এই অর্থে এই জীবন শারিরিক ও দুনিয়াবী।


মাওলানা নানুতুবী (رحمة الله) বলেন, নবীগণকে দুনিয়ার শরীরের হিসেবে জীবিত মনে করবে। (লতায়েফ) দেওবন্দ মাদরাসার মুফতী মাওলানা মাহদী হাসান বলেন, রাসূল (ﷺ) নিজ মাযারে সশরীরে বিদ্যমান আছেন। এবং জীবিত আছেন।


ইমাম তহাবী (رحمة الله) নবীগণের হায়াতের উপর ইজমার কথা বলেছেন। والاجماع على هذا.. ‘নবীগণের হায়াতের উপর ইজমা হয়েছে।’ স্মরণ রাখতে হবে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার ইজমা শরয়ী দলিলের মধ্যে একটি ওজনি দলিল।

মাওলানা মুহাম্মাদ আবেদ রেসালায়ে মাদীনাতে লেখেন, أما هم فحياتهم لا شك فيها ولا خلاف لأحد من العلماء في ذلك ‘নবীগণের হায়াতের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কারো মতবিরোধ নেই। বুঝা গেলো, কারো মতবিরোধ না থাকাটা নীরবতার ইজমা।


শায়খ মুহাক্কিক দেহলবী (رحمة الله) বলেন, নবীগণের হায়াতের মাসআলা সর্বসম্মত। তাতে কারো ইখতিলাফ নেই। অর্থাৎ নবীগণের হায়াত ইজমায়ী। তাতে কারো ইখতিলাফ নেই। (আশিয়াতুল লোমআত : ১/৬১)


মোযাহেরে হকের মধ্যে স্পষ্ট বলেছেন, নবীগণ কবরে জীবিত। এই মাসআলায় সকলে একমত। কারো মতবিরোধ নেই। সেখানের হায়াত বাস্তব শারিরিক এবং দুনিয়াবীর মতো। খাওয়া পান করার প্রয়োজন নেই। যেভাবে দুনিয়াতে প্রয়োজন হয়। দুনিয়াবী অন্যান্য গুণাগুণ যেমন ইলম, অনুভুতি ও ধারণ ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ততা দৃঢ়।


আল্লামা দাউদ বিন সোলায়মান বলেন, إن حياة الأنبياء ثابتة بالاجماع ‘নবীগণের জীবন ইজমার দ্বারা প্রমাণিত। আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আনোয়ারুল মাহমুদে আছে, إنهم اتفقوا على حياتهم صلى الله عليه وسلم لا خلاف فيه لأحد ‘মুহাদ্দিসীনে কেরাম একথার উপর একমত হয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) জীবিত। এতে কারো কোনো ইখতিলাফ নেই। (পৃ. ৬১০)


মাওলানা ইদরীস খান দেহলবী (رحمة الله) বলেন, আত্মিক ও রূপক হায়াত তো সাধারণ মুমিন বরং কাফেরদেরও অর্জিত আছে। সকল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ঐক্যবদ্ধ আকীদা, নবীগণ ইন্তেকালের পরে নিজ কবরে জীবিত। নামায ও ইবাদাতে লিপ্ত আছে। যদিও আমরা উপলব্দি করি না। তবে নিঃসন্দেহে এই হায়াত অনুভূত ও শারিরিক।


জেনে রাখতে হবে, সর্ব প্রথম হাজ্জাজ বিন ইউসুফ হায়াতে আম্বিয়ার আকীদা অস্বীকার করেছে। যে সব কারণে ফোকাহায়ে কেরাম হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে কুফরের ফতোয়া দিয়েছিলেন, তার মধ্যে এটাও একটা ছিলো। হাজ্জাজ যখন মদীনাতে আসলো এবং রওযা পাকের যেয়ারতকারীদেরকে দেখলো, তারা রওযার আশ পাশে একত্রিত হচ্ছে। তখন হাজ্জাজ বললো, তোমরা খড়ি ও গলে যাওয়া গাড্ডির তাওয়াফ করছো। এ কারণে ওলামায়ে কেরাম কুফরের ফতোয়া দিলেন। (রহমাতে কায়েনাত : ৫)


এভাবে র্কারামিয়া, কিছু মো‘তাযালা ও রাফেযীদের আকীদা হলো, নবীগণ জীবিত নন।


খায়রুল ফাতাওয়াতে আছে, নবীগণের হায়াতকে অস্বীকারকারীর পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী। (১/১২০)

 
Top