❏ প্রশ্ন : সত্তাগত অসম্ভবের উপর শক্তিমান না হওয়ায় সে অক্ষম সাব্যস্ত হবে কি না?


✍ জবাব : সত্তাগত অসম্ভবের উপর শক্তিমান না হলে তাকে অক্ষম মনে করা পূর্ণ বোকামী ও হতবুদ্ধিতা। কারণ সত্তাগত অসম্ভব মাকদুর হওয়ার যোগ্যতা না রাখার কারণে কুদরত এর সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রই নয়। তাই কোনো ত্রুটি বা ক্ষতি সম্পৃক্ত হবে না। এ কারণে এটাও বলা উচিত নয় যে, তিনি শক্তি রাখেন না। এটা আদবের পরিপন্থি এবং ঐ জিনিসের অস্বীকার যা তার কাছে আছে। বরং এ কথা বলা উচিত যে, সত্তাগত অসম্ভব কুদরতের অধীনে নয়। যাতে অসম্ভব বস্তু হওয়া বাতেল হয়ে যায়। কুদরতের মধ্যে যেন ত্রুটি না আসে। (এই ব্যাখ্যা পেশ করেছেন, শায়খে মুহাক্কিক সায়্যিদ শাহ আহমদ সাঈদ কাযেমী তার বয়ানে এবং আল্লামা শাহ মুহাম্মাদ রোকনুদ্দীন সাহেব নকশবন্দী মাসউদী তার কিতাব আল আকায়েদে লিখেছেন।)


টিকা : আল্লাহ তা‘আলা কাদেরে মতলক বা সর্বশক্তিমান। অনাদী, অনন্ত, চিরস্থায়ী, কখনো ধ্বংস নেই। সত্যতা তার সাথে সত্তাগতভাবে যুক্ত। কখনো ছিন্ন হয় না। মিথ্যা সত্তাগত খারাপ। খারাপই খারাপ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, الكذب أم الذنوب ‘মিথ্যা সকল গুনাহের মূল।’ আরো বলেন, الكذب أكبر الكبائر ‘মিথ্যা বড় কবীরা গুনাহ।’ আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। সব কিছুর উপর শক্তি রাখেন। খারাপ জিনিস তখন খারাপ, যখন অস্থিত্ব লাভ করে। কোনো খারাপ কাজ মানুষের মনে আসে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না, তাহলে এটা খারাপ নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, الكذب يهلك والصدك ينجي ‘মিথ্যা ধ্বংস করে। সত্য মুক্তি দেয়।’ খারাপের সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করার দিক দিয়ে খারাপ নয়। গ্রহণকারীর হিসেবে খারাপ। সকল জিনিস সৃষ্টির সময় তা ভালো থাকে। যখন অস্থিত্ব লাভ করে, তখন যেটা খারাপ সেটা খারাপ, আর যেটা ভালো সেটা ভালো হয়। নতুবা ভালোর সৃষ্টিকর্তা ও খারাপের সৃষ্টিকর্তা দুইজন হওয়া আবশ্যক হবে। যা হিন্দুদের আকীদা।


অথচ কর্মীর কারণে ভালো খারাপ হয়। যেমন, তরবারী বানানো খারাপ নয়। তবে এটা ব্যবহার করা হিসেবে ভালো খারাপ হয়। ঐ তরবারী দ্বারা যদি উপকারী জিনিস অর্জন করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে ভালো হবে। আর এর দ্বারা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করলে এটা খারাপ। ব্যবহারকারী এর শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, والله خلق لكم ما في الأرض جميعا ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য জমিনের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।’ সৃষ্টির সময় সব জিনিস ভালো। কর্মের কারণে ভালো খারাপ হবে। এটা কর্মীর কারণে। নতুবা প্রশ্ন আসবে যে, কুফর ও হারাম কাজের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলা, তাহলে আযাব ও কাফের বলার হুকুম কিভাবে? কেউ তো জাহান্নামে যাবে না? এটা কোনো জিনিস বাস্তবায়ন ও প্রকাশের হিসেবে। আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও শক্তিমান, এর অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা উপস্থিত ও অনুপস্থিত সকল জিনিসের সৃষ্টিকর্তা। তিনি প্রত্যেক বস্তুর উদ্দেশ্য ও চাওয়ার উপর সার্বিক দিক থেকে শক্তিমান। আল্লাহ তা‘আলার কোনো গুণ সম্ভাব্য পর্যায়ের নেই। প্রত্যেক জিনিস বাস্তবায়ন ও প্রকাশের হিসেবে হারাম ও হালাল হয়। সৃষ্টিগত দিক দিয়ে নয়। সম্ভাব্য পদ্ধতিতে কোনো খারাপ জিনিস মেনে নিবে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার সুবহান গুণের সাথে গুণান্বিত থাকবে না। এই গুণ ঘোষণা দিচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা বাস্তব ও সম্ভাব্য সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র। সম্ভাবনা সত্তার সাথে সম্পৃক্ত ও যুক্ত হওয়া এটা সোবহান গুণের বিপরীত। আল্লাহ সকল উপস্থিত অনুপস্থিতের উপর শক্তিমান। সম্ভাব্য খারাপের উপর নয়। কর্মীর কর্ম হিসেবে আমল খারাপ হয়। যেমন আগে আলোচনা করা হয়েছে।


কিছু জিনিস উপাদান হিসেবে পবিত্র ও হালাল। কিন্তু বাস্তবায়ন ও প্রকাশের পরে কিছু হালাল ও কিছু হারাম এবং কিছু ব্যবহারযোগ্য ও কিছু ব্যবহার অযোগ্য হয়। এই সব কিছু প্রকাশের পরে হয়। কিন্তু মূল উপাদান হিসেবে হালাল ও ব্যবহারযোগ্য থাকে। প্রকাশের পরে পার্থক্য হয়ে গেছে। এটাকে হিসেবি পার্থক্য বলে। বাস্তব সত্য চিরস্থায়ী সত্তার গুণ। রূপক সত্য অস্থায়ী ও মাখলুকের সম্ভাব্য গুণ। মিথ্যা সত্তাগত খারাপ। একারণে মিথ্যা সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ ও সকক গুনাহের মূল সাব্যস্ত হয়েছে।


সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার ক্ষেত্রে সত্তাগত অসম্ভব। তাই অন্য কারণে অসম্ভব বলে সত্তাগত অসম্ভবকে না মানা, সত্তাগত অসম্ভবকে নাকচ করার শামিল। যার থেকে সম্ভাব্য মিথ্যার পদ্ধতি বের হয়েছে। এরা নামধারী মুসলমান হয়ে সম্ভাব্য মিথ্যা পবিত্র সত্তার জন্য জায়েয মনে করেছে। এই পদ্ধতির ভিত্তির উপর ইসলাম অস্বীকারকারী বাস্তব মিথ্যার স্বীকার হয়ে যাবে। যার ফলাফল প্রকাশ্য যে, কদীম কুরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করার দুসাহস দেখাবে। নাউযুবিল্লাহ। এটা আল্লাহ তা‘আলার উপর বড় একটি দোষ চাপানো। যেই ইসলামের বিধিবিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণকৃত তার ঠিক থাকবে না। নাউযুবিল্লাহ। আমি পূর্বে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি।


সত্যতা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا আল্লাহই সত্য ও সঠিক। আর মাখলুকের জন্য সত্যতার গুণ আল্লাহ তা‘আলার তাজাল্লি ও দানের কারণে। আর তা অস্থায়ী।

আল্লাহ তা‘আলার কানুন চালু আছে যে, কাদের ও মাকদুরের মাঝে উপযুক্ত শর্ত আবশ্যক। সুতরাং কাদের ও মাকদুরের মাঝে শর্ত হলো বিদ্যমান থাকা, আর সেটা স্পষ্ট। কিন্তু কাদের ও সম্ভবের মাঝে কোন আল্লাহর বিধান উপযুক্ত শর্ত আছে? আর তা কী?


যদি কোনো উপযুক্ত শর্ত না থাকে, তাহলে অর্থহীন ও অনর্থক হবে। আর একটি অর্থহীন ও অনর্থক জিনিস আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করা কোন ধরণের একাত্ববাদ?


বুঝো, ভয় করো, ধ্বংসদের অন্তর্ভুক্ত হও না।

 
Top