❏ প্রশ্ন-২০৫: خَيْرٌ 'খাইরুন' শব্দের তাহ্কীক বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কি? বর্ণনা কর।


✍ উত্তর: خَيْرٌ ‘খাইরুন’ শব্দের অর্থ কল্যাণকর। যে বস্তু সবার নিকট প্রিয় ও পছন্দনীয়। যেমন- জ্ঞান (عقل), ন্যায় পরায়ণতা (عدل) ; বহুবচনে خُيُوْرٌ। ধন-সম্পদ, ঘোড়া, ভদ্রলোক ও ফয়েয-বরকতসম্পন্ন, বহুবচনে اَخْيَارٌ । সুশ্রী, অত্যন্ত ভাল, উত্তম, ভাল, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য; মূল গঠন باب ضرب হতে; কাউকে অন্যের ওপর ফযিলত ও প্রাধান্য দেয়া, নির্বাচিত করা, পূণ্যকাজে অগ্রগামী হওয়া; বহুবচনে خِيَارٌ। ক্ষীরা, শশা, পছন্দনীয় ও গ্রহণীয় মাল, পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, একবচন, বহুবচন- এসব তাহকীকাত বা বিশ্লেষণ ভাষাবিদ ও অভিধান বিশারদগণের। উত্তম, পূণ্য, কল্যাণকর, পছন্দনীয় ভাল কাজ এবং সর্বোত্তম সম্পদ বা মাল- এই  পাঁচটি اسم تفضيل তথা তুলনাবাচক আধিক্য অর্থ জ্ঞাপক বিশেষ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটির মূল اَخْيَرٌ, ষষ্ঠ অর্থ রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। اَخْيَارٌ، خُرَّةٌ হলো اسم مصدر বা ক্রিয়ামূল বিশেষ্য। 

252. কামূসুল কোরআন, পৃষ্ঠা-২২৭।


خير القرون অর্থ সম্পর্কে মুহাক্কিক ওলামায়ে কিরামের অভিমত নিম্নে প্রদত্ত হলো:

قرون এটি قرن -এর বহুবচন। قرن ,এর অর্থ- যামানা, যুগ, কাল ও শতাব্দি। خيرالقرون অর্থ- সর্বোত্তম যুগ, উত্তম সময়কাল। এর দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ  -এর যুগের বংশধারা এবং এর পরবর্তী ধারাবাহিকতায় দুই বংশধারা। হাদীস শরীফে এসেছে, 


خير القرون قرنى ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم .


‘সবচেয়ে উত্তম যুগ আমার যুগের বংশ। অতঃপর ওই যুগের পরের যুগ, অতঃপর ওই যুগ যা এর পরে আগত।’

253. ইসলামী বিশ্বকোষ, পৃষ্ঠা- ৩১৫, মাকতাবাতুল ফায়সাল।


خير: ما فيه نفع وصلاح، وهو ضد الشر . فالمال خير والخيل خير، والعلم النافع خير. 

وفى التنزيل بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ  . (سورة ال عمران)

إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّي . (سورة ص)

فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ ‘ اى من زاد على مقدار الفدية تطوعًا فهو خير له عنداللهِ .

الخيرة: بكسر الخاء وفتح الياء بوزن عِنَبَةٌ بمعنى الاختيار، يقال اختار اختيارًا والاسم الخيرة محمد رسول الله صلى الله عليه وسلّم خيرة اللهِ . 

 254. معجم، جلدثانى، صفحة ১৬৬، المطلع والقاموس 


خير ‘খাইর’ এমন বস্তু যা সকলের নিকট প্রিয় ও পছন্দনীয়। যেমন- জ্ঞান, বিবেক, মান-মর্যাদা, ন্যায়পরায়ণতা ও উপকারী বস্তু। যা شر শব্দের বিপরীত, شر অর্থ-মন্দ, খারাপ।


خير দু’প্রকার:- 


প্রথমত: خير مطلق সাধারণ ভাল ও কল্যাণকর। যা সব সময় প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট পছন্দনীয় হয়। যেমন, জান্নাত।


দ্বিতীয়তঃ خير مقيد সীমাবদ্ধ ও শর্তযুক্ত ভাল। যা কারো জন্য ভাল হবে এবং অন্যের জন্য মন্দ। যেমন, যায়েদের জন্য সম্পদ ভাল কিন্তু আমরের জন্য মন্দ। সে কারণে আল্লাহ তা‘আলা ধন-সম্পদ সম্পর্কে উভয় গুণ বর্ণনা করেছেন। সুতরাং একস্থানে ইরশাদ করেছেন,


 ان ترك خيرًا 


অর্থাৎ- ‘যদি কিছু ধন-সম্পদ রেখে যেত’। আবার অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, 


نسارع لهم فى الخيرات بل لايشعرون 


অর্থাৎ- ‘তোমরা কি ধারণা করছ যে, আমি তাদেরকে যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদের কল্যাণার্থে দিয়ে যাচ্ছি, বরং তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না।’ 

255. সূরা মু’মিনূন, আয়াত: ৫৬


কোরআনে কারীম(ﷺ)র যেখানে ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে خير শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কতিপয় ওলামায়ে কিরাম বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন যে, উক্ত মাল দ্বারা সে সকল সম্পদ উদ্দেশ্য যা সংখ্যায় অধিক সম্পদ এবং হালাল উপায়ে ও বৈধ পন্থায় উপার্জন করা হয়েছে। 

خير ও شر শব্দদ্বয় দু’ভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। 


প্রথমতঃ اسم বা বিশেষ্য হিসেবে যেমন, 


وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ. 


অর্থাৎ- ‘তোমাদের মধ্য হতে এমন একদল উম্মত হওয়া উচিত, যারা সৎ কর্মের প্রতি আহ্বান করবে।’ অর্থাৎ- ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের’ প্রতি। 

256. সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪।


দ্বিতীয়তঃ وصف বা বিশেষণ হিসেবে। তখন اسم تفضيل এর অর্থ প্রদান করে। যেমন, 


فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى


অর্থাৎ- ‘নিঃসন্দেহে উত্তম পাথেয় হচ্ছে খোদাভীতি’। এখানে خير শব্দটি افضل অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। 

257. সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭।


পবিত্র আয়াত শরীফ نَأْتِ بِخَيْرٍ مِنْهَا অর্থাৎ- ‘আমরা তার চেয়ে উত্তম নিয়ে আসি’।  

258. সূরা বাকারা, আয়াত: ১০৬।


এবং وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ অর্থাৎ- ‘রোযা রাখাতে তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে’।

259. সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫।


এখানে خير শব্দটি اسم বা বিশেষ্যও হতে পারে অর্থাৎ افعل التفضيل বা সিফতের অর্থেও হতে পারে। خير  শব্দটি কখনো شر বা মন্দের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। আবার কখনো ضرر বা কষ্ট ও কঠোরতার মোকাবিলায় আসে। যেমন, 


وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ .


‘যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে কোন ধরনের কঠোরতায় নিপতিত করেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী আর কেউ থাকবে না। পক্ষান্তরে তিনি যদি তোমার মঙ্গল কামনা করেন, তবে তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ 

260. সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৭।


خَيْرَات অর্থ- পূণ্যসমূহ, কল্যাণ ও সৌন্দর্যসমূহ। এটি خَيْرَةٌ এর বহুবচন। যেমন,

 فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ 

(অর্থাৎ- সেখানে সুশ্রী ও পূণ্যবতী রমণীরা রয়েছেন।)  

261. সূরা আর্-রহমান, আয়াত: ৭০।


আয়াত সম্পর্কে একদল ওলামা বলেছেন যে, خَيْرَاتٌ মূলতঃ  خَيِّرَتٌ  ছিল ياء তে তাশদীদের সাথে ছিল, যাকে সহজকরণ করা হয়েছে। কেননা خير শব্দটি যখন اسم تفضيل -এর অর্থে ব্যবহৃত হয়, তখন এর جمع বা বহুবচন আসে না।


خَيِّرَاتٌ বহুবচন, একবচনে خيرة । যার অর্থ- সে সকল মহিলা, যারা কল্যাণের অধিকারী হয়েছে। خِيْرَةٌ ও إِخْتِيَارٌ শব্দদ্বয় خَارَيَخِيْرُ ,এর مصدر বা ক্রিয়ামূল। 

262. লুগাতুল কোরআন, মওলানা আবদুর রশীদ নো’মানী, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩২৭।

 
Top