দারিদ্র্যের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ


কুরআন মাজীদে দারিদ্র্যের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- 

ولا تقتلوا اولادكم خشية املاق نحن نرزقهم واياكم ان قتلهم كان خطئا كبيرا

“তোমরা অভাবের ভয়ে তোমাদের সন্তান-সন্তাতিদেরকে হত্যা করো না, আমিই তাদেরকে ও বিশেষত তোমাদেরকেও রিযিক দান করি। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা মহা গুরুতর পাপ।” ২৮৮

২৮৮.সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩১

 

অনেকে বলে থাকেন যে, পুরুষ ও স্ত্রীর মিলনের ফলে যে বস্তুটি সৃষ্টি হয়, তা প্রথম চার মাসের মধ্যে নষ্ট করা ইসলামে নিয়ম রয়েছে, তাতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু আজকাল ডাক্তারগণ পুরুষের শুক্রকীট স্ত্রীলোকের ডিম্বকোষের সাথে মিলিত হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন। লক্ষণীয় যে, যেহেতু দুটি বস্তুকে মিলিত হতে দেয়া হচ্ছে না, তাই কোনো কিছু নষ্ট করার প্রয়োজন হচ্ছে না। এখন আমাদের জানা উচিত যে, জন্মনিয়ন্ত্রণ কী পদ্ধতিতে করা হচ্ছে এবং কখন কতটুকু করা চলে-এটা কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে আদৌ বিচার্য বিষয় নয়।


এখানে বিচার্য বিষয় হচ্ছে, একটা মৌলিক বিশ্বাস এবং তা হচ্ছে আল্লাহকে পালনকর্তা হিসাবে মান্য করা হবে কি না? কুরআন শরীফে এ কথাটিই বোঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে- ‘তোমরা গরিব হয়ে যাবে বা খাদ্য সংস্থান করতে পারবে না এ ভয়ে সন্তান হত্যা করো না। আমি তাদের খাদ্য সংস্থান করব এবং তোমাদেরও।’ এ থেকেই নীতিগতভাবে জন্মহ্রাসের বিরুদ্ধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠে। অন্যথায়, স্বাস্থ্যগত কারণে অর্থাৎ যদি সন্তান ধারণ করাতে মায়ের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, পিতা কিংবা মাতা এমন কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত থাকে যার কারণে সন্তানেরও রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে স্বামী-স্ত্রীর পারষ্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে জন্মনিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বন করার অনুমতি ফিকাহবিদগণ দিয়েছেন। তাই বলে একে একটা পদ্ধতি হিসাবে সকলের জন্যই গ্রহণ করা অনুমোদনযোগ্য নয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কেবল এ পদ্ধতি গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। বিশেষ কারণ ছাড়া এ পদ্ধতি গ্রহণ অর্থই দাঁড়ায় আল্লাহর ‘রবুবিয়ত’ বা পালনবাদকে চ্যালেঞ্জ করা। এ দুঃসাহস কোনো মুসলমানের পক্ষেই করা উচিত হবে না।


জন্মনিয়ন্ত্রণ আমাদের সমাজে ক্রমেই ভাইরাস হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বিবাহ-শাদির আলোচনা সামনে আসলেই প্রায় ছেলেমেয়েরা ভাবতে থাকে- বিয়ের পর বাচ্চা নিবে নাকি কয়েক বছর পরে নিবে! বাসর ঘরে যাওয়ার আগেই মনে মনে স্থির করে নেয়, বাচ্চা নিবে নাকি নিবে না। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই পাকাপোক্ত করা হয়। সেজন্য বাসর রাতের পূর্বেই জন্মনিয়ন্ত্রণ তথা পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে পাত্র-পাত্রীর শরয়ী জ্ঞান থাকা উচিত।


আমাদের দেশে প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দু’ধরনের। যথা:


১. অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, ২. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।


জন্মনিয়ন্ত্রণের অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো আযল করা, অণ্ডকোষ কর্তন করা, জরায়ু কর্তন করা, গর্ভপাত করা। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্মনিয়ন্ত্রণ হলো পিলবড়ি খাওয়া, কনডম ব্যবহার করা, কপাটি, ভ্যাসেকটমি, লাইগেশন করা ইত্যাদি।


ইসলামী শরীয়ত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষে সাময়িক সময়ের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের অনুমতি প্রদান করেছে, জন্মরোধন নয়। শারীরিকভাবে দুর্বল এমন নারীর জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের অনুমতি রয়েছে, যে গর্ভধারণ করলে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। কিংবা গর্ভ এসে গেলে দুগ্ধপোষ্য শিশুর দুধ থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়া বা স্ত্রীর স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ দ্বীনদার চিকিৎসকের পরামর্শক্রমেই কেবল জায়েয, নতুবা নয়। তবে যদি অভাব-অনটন কিংবা দাদিদ্র্যের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে এর দ্বারা প্রকারান্তরে আল্লাহ তায়ালার রাজ্জাকিয়্যাতের (একমাত্র রিজিকদাতা) গুণের ওপর সন্দেহ পোষণ করা হয়ে থাকে। এজন্য তা হারামের পর্যায়ভুক্ত।

 
Top