হায়িয, নিফাস ও ইস্তিহাযার আহ্কাম


১. হায়িয নিফাস অবস্থায় নামায মাফ। এ নামাযের কাযা পড়তে হবে না।প্রথমে যখনই রক্ত দেখবে তখন থেকেই নামায পড়া ছেড়ে দিবে। যে ওয়াক্তে মহিলার হায়িয বা নিফাস আসবে ঐ ওয়াক্তের নামায তার দায়িত্ব থেকে রহিত হয়ে যাবে। ওয়াক্তের মধ্যে নামায আদায় করার মত সময় থাকুক বা না থাকুক। শেষ ওয়াক্তে নামায শুরু করার পর কোন মহিলা যদি হায়িযা হয়ে যায় তবে এ নামাযের কাযা আদায় করা তার দায়িত্ব হতে রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু নফল নামায হলে কাযা পড়া ওয়াজিব হবে। ঋতুমতী মহিলার জন্য মুস্তাহাব হল, নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পর অযূ করে নিজের ঘরে নামাযের স্থানে বসে পাক পবিত্র অবস্থায় এ নামায আদায় করতে যে পরিমাণ সময়ের দরকার হবে ঐ পরিমাণ সময় তাসবীহ্ তাহ্লীল পাঠ করা। ঋতুমতী মহিলা সিজ্দার আয়াত শুনলে তার উপর তিলাওয়াতের সিজ্দা ওয়াজিব হবে না। ৩১৫

৩১৫.আলমগীরী ১ম খণ্ড

 

২. হায়িয ও নিফাস অবস্থায় রোযা রাখা হারাম। অবশ্য পরে এর কাযা করতে হবে। নফল রোযা আরম্ভ করার পর কোন মহিলার হায়িয শুরু হলে সতর্কতার জন্য সে পরে এর কাযা করবে (আলমগীরী)। 


৩. হায়িয নিফাস অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। বসার উদ্দেশ্যে হোক বা পথ অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে হোক উভয় অবস্থাতেই এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। হায়িয ও নিফাস ওয়ালী মহিলা অনুরূপভাবে মসজিদে জুনূবী মহিলা মসজিদে প্রবেশ করবে না। কিন্তু যদি কোথাও পানি না পাওয়া যায় এবং মসজিদের পানি থাকে তবে পানি আনার জন্য মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। অনুরূপভাবে জুনূবী এবং ঋতুমতী মহিলা যদি হিংস্র জন্তুর ভয়ে অথবা ঠাণ্ডার ভয়ে মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করে তাতে কোন দোষ নেই। অবশ্য উত্তম হল মসজিদের সম্মানার্থে তায়াম্মুম করে মসজিদে প্রবেশ করা। মসজিদের ছাদও মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। জানাযা এবং ঈদের নামাযের নির্দিষ্ট স্থান বিশুদ্ধ মতে মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। ঋতুমতী মহিলা এবং জুনূবীর জন্য কবর যিয়ারত করতে কোন দোষ নেই (আলমগীরী)।


৪. হায়িয ও নিফাস অবস্থায় বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা হারাম। অনুরূপভাবে জুনূবী জন্যও তাওয়াফ করা হারাম (আলমগীরী)।


৫. হায়িয ও নিফাস এবং জুনূবী অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হারাম। পূর্ণ আয়াত বা আয়াতাংশ তিলাওয়াত করা উভয় হারাম। যদি এক আয়াতের কম হয় এবং শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে অথবা খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে তবে এতে কোন অসুবিধা নেই। এমন ছোট আয়াত বা কথাবার্তা ও আলোচনা মুখে এসে যায় যেমন ثم نظرএবং ولم يولد ইত্যাদি ধরনের আয়াত মুখে উচ্চারণ করাতে কোন ক্ষতি নেই।৩১৬

৩১৬.আলমগীরী, ১ম খণ্ড

 

৬. ঋতুমতী মহিলা এবং জুনূবীর জন্য তাওরাত, ইঞ্জিল এবং যবূর পাঠ করা মাকরূহ। কোন শিক্ষয়িত্রীর যদি হায়িয হয়ে যায় তবে সে বাচ্চাদেরকে এক এক শব্দ করে শিক্ষা দিবে। এবং দুই শব্দের মাঝে থামবে। কুরআন শরীফের বানান করা তার জন্য মাকরূহ নয়। যাহিরী রিওয়ায়াত অনুযায়ী দু‘আয়ে কুনূত পাঠ করা তাদের জন্য মাকরূহ নয়। জানবাত এবং হায়িয ও নিফাসের অবস্থায় দু‘আ পাঠ করা, আযানের জওয়াব দেওয়া বা এ জাতীয় কোন কিছু পাঠ করা জায়িয আছে (আলমগীরী)।


৭. হায়িয ও নিফাস জুনূবী এবং অযূবিহীন সকলের জন্য কুরআন শরীফ স্পর্শ করা হারাম। অবশ্য কুরআন শরীফের উপর পৃথক গিলাফ থাকে তবে স্পর্শ করা জায়িয। কোন টাকা পয়সা অথবা তশতরী তাবীয বা যে কোন পাতা বা কাগজে কুরআনের পূর্ণ আয়াত লেখা থাকলে তা হায়িয ও নিফাস অবস্থায় স্পর্শ করা জায়িয নেই। অবশ্য এ সব বস্তু যদি কোন থলিতে বা ব্যাগে থাকে তবে তা বহন করা জায়িয আছে (আলমগীরী)।


হায়িয ও নিফাস অবস্থায় কুরআন শরীফের দিকে তাকানো জায়িয, মাকরূহ নয়। উপরিউক্ত অবস্থায় এমন কিছু লেখাও মাকরূহ যার কোন কোন জায়গায় কুরআনের আয়াত আছে। যদিও সে তা তিলাওয়াত না করে (আলমগীরী)।


৮. হায়িয ও নিফাস অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। অবশ্য ইমাম আবূ হানীফা (رحمة الله) এবং ইমাম আবূ ইউসুফ (رحمة الله) -এর মতে এ অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা, তার সাথে এক বিছানায় থাকা এবং নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ছাড়া বাকী সমস্ত শরীর থেকে ফায়দা ভোগ করা জায়িয আছে। সহবাস করা হারাম, এ কথা জানা সত্তে¡ও যদি সহবাস করে তবে তাকে তাওবা ও ইস্তিগফার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অবশ্য এক দীনার বা অর্ধ দীনার সাদাকা করা মুস্তাহাব (আলমগীরী)।


৯. হায়িয ও নিফাস বন্ধ হলেই গোসল করা ওয়াজিব। যদি দশ দিন পুরা ঋতুস্রাব হয়ে হায়িয বন্ধ হয় তবে গোসলের পূর্বে সহবাস করা জায়িয আছে। এক্ষেত্রে معتادة ومبتداه উভয়ের হুকুম এক ও অভিন্ন। অবশ্য গোসলের পর সহবাস করা মুস্তাহাব। দশ দিনের আগে হায়িযের রক্ত বন্ধ হয়ে যায় তবে গোসলের পূর্বে অথবা নামাযের এমন ওয়াক্ত যে সময়ের মধ্যে গোসল করে তাহ্রীমা বাঁধা যায় পরিমাণ সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করা জায়িয নেই।

 
Top