❏ প্রশ্ন-১৮০: হযরত নূহ (عليه السلام) কখন হতে রিসালতের পদে অধিষ্ঠিত হন এবং হযরত আদম (عليه السلام)-এর কত বছর পর জন্মগ্রহণ করেন?


✍ উত্তর: হযরত নূহ (عليه السلام), হযরত আদম (عليه السلام)’র ওফাতের ১১২৬ (এক হাজার একশত ছাব্বিশ) বছর পর জন্মগ্রহণ করেন এবং যৌবনে পদার্পণ করা মাত্রই রিসালতের পদে অধিষ্ঠিত হন। অনেক বছর দ্বীন প্রচারের পর মাত্র কয়েক জন লোক তার ওপর ঈমান আনে।

সাড়ে নয়শত বছর পর আল্লাহর দরবার হতে অভিযোগের স্বরে বলা হল, এসব লোক ঈমান আনবে না। এখন তাদের ওপর প­াবনের আযাব আসবে। তুমি নিজের জন্য নৌকা বানাও। হযরত জিবরাইল (عليه السلام) ‘ছাল কাঠ বা গাছ নিয়ে আসলেন এবং এগুলো জমিনে লাগানোর জন্য ইঙ্গিত করলেন। বিশ বা চলি­শ দিনে এগুলো বড় বৃক্ষে পরিণত হলো। তখন হযরত নূহ (عليه السلام), হযরত জিবরাইল (عليه السلام) এর শিক্ষা মতে নিজের তিন পুত্র এবং অন্য একজন ব্যক্তির সাহায্যে একটি নৌকা বানালেন এবং ভিতরে-বাইরে তৈলবাতি লাগালেন। নৌকাটির দৈর্ঘ্য ছিল এক হাজার গজের চেয়ে বেশি, প্রস্ত ছয়শো গজ এবং উচ্চতা ছিল ত্রিশ গজ। শামসাদ বৃক্ষের কাঠ দিয়ে একটি তাবুত বানিয়ে হযরত আদম (عليه السلام)’র শরীর মুবারকও তাতে রাখলেন এবং প্রজন্ম সংরক্ষণের জন্য প্রত্যেক প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর একেকটি জোড়া নৌকায় উঠানো হল। অবশেষে প­াবনের সময় ঘনিয়ে আসলো। একটি অনিঃশেষ উৎস হতে পানি উৎসারিত হতে লাগলো। পুকুর-কূপ ও নদীর পানিও প্রবল তরঙ্গায়িত হতে লাগলো। আকাশ হতে ঝড়-বৃষ্টি বইতে লাগলো এবং চলি­শ দিন পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলো। জল-স্থল একাকার হয়ে গেলো এবং পর্বত চূড়া সমূহেও পানি উঠে গেলো। ওই জাতির বাদশাহ সাফরুশনাম মৃত্যু ভয়ে পালাতে লাগলো। অবশেষে সে ধ্বংস হয়ে গেলো।

হযরত নূহ (عليه السلام) এর দ্বীনের সাথে বিরোধিতাকারী তার স্ত্রী ওয়া’লা ও পুত্র কেনান নৌকায় আরোহন করতে অস্বীকৃতি জানালো। পরে একটি তরঙ্গ তাদের জীবন সাঙ্গ করে দিলো। নৌকাটি কুফা হতে যাত্রা শুরু করলো এবং হেরেমে মক্কাকে সাতবার প্রদক্ষিণ করলো। নানা দেশ ও ভূখন্ড পাড়ি দিয়ে ঘুরতে লাগলো। অবশেষে  পাঁচ মাস পর জুদি পর্বতের চূড়ায় গিয়ে তিনি (عليه السلام) যাত্রা বিরতি করলেন এবং ওই স্থানে এক মাস অবস্থান করেন। বলা হয় যেহেতু প্রলয়ংকারী প্লাবনে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দেখা মিলতো না, তাই হযরত নূহ (عليه السلام) স্বীয় নৌকায় সুকৌশলে এমন দু’টি আলোকিত মোহর স্থাপন করেন যা দ্বারা রাত-দিনের ঘন্টার হিসাব জানা যেত এবং এর হিসাবে নামায-রোযা পালন করতেন। 

আরো কিছু চমৎকার ও বিরল বর্ণনা লোকমুখে প্রসিদ্ধ আছে যেমন- নৌকার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য হযরত নূহ (عليه السلام) আল্লাহর হুকুমে হাতীর পিঠে হাত রাখলেন, তখন এর দ্বারা শুকরের জন্ম হলো যেটি নৌকার ময়লা-আবর্জনা পানাহার করে পরিষ্কার করে দিতো। এরপর নৌকাবাসী লোকেরা ইঁদুরের জ্বালায় অতীষ্ট হয়ে উঠলো। তখন হযরত নূহ (عليه السلام) আল্লাহ'র হুকুমে বাঘের কপালে হাত ফেরালেন এবং বাঘটি হঁাচকি দিলো, তখন তার নাক হতে বের হলো বিড়াল এবং সে ইঁদুর খতম করতে লাগলো ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরূপ একটি রেওয়ায়তে একথা প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, যখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলো তখন তিনি প­াবনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য কাক-কে পাঠালেন, তবে সে মৃত জীব ও প্রাণী দেখে তাতে নিমগ্ন হয়ে গেলো। এরপর পাঠানো হল কবুতরকে, তখন সে যয়তুন বৃক্ষের কিছু পাতা ছিড়ে আনলো যার দ্বারা বুঝা গেলো যে, পানি গাছের উপরে উঠেছিলো। এর কিছুক্ষণ পর সে ঠেঁাটে কিছু মাটি নিয়ে আসলো যেটি হলো একথার আলামত যে, এখন জমি দৃশ্যমান হয়েছে। অবশেষে সকল নৌকাবাসী লোক আশুরার দিন নৌকা হতে নামলো এবং জুদি পাহাড়ের সন্নিকটে বসতি স্থাপন করলো। যেহেতু তাদের সংখ্যা ছিলো ৮০ (আশি) জন, তাই এই বসতির নামকরণ করা হলো ‘সাওক-আল সামানিন’ অর্থাৎ আশিজন বসতি স্থাপনকারীর বাজার। এরপর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলো মহামারীর। কেবল হযরত নূহ (عليه السلام), তাঁর তিন পুত্র ও পরিবারবর্গ তথা তার বিবিগণ ছাড়া অবশিষ্ট সকল লোক মরে গেলো। তাঁর পুত্রদের নাম হচ্ছে: 

(১) সাম, 

(২) হাম, ও 

(৩) ইয়াফেস। 

হযরত নূহ (عليه السلام) গোটা বিশ্বের সকল বসতিকে তিন পুত্রের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। মুলকে শাম, ইরান, খুরাসান ও ইরাক পড়লো সামের ভাগে। আফ্রিকান দেশ সমূহ, হাবশা, সিন্ধা, হিন্দা ও সুদান পড়লো হামের ভাগে এবং চীন ও তুর্কিস্তান পড়লো ইয়াফেস এর ভাগে।


❏ প্রশ্ন-১৮১: হযরত আদম (عليه السلام)’র পদার্পনের কত দিন পর এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়?


✍ উত্তর: প্লাবন বা তুফানের ঘটনাটি সংঘটিত হয় হযরত আদম (عليه السلام)’র পদার্পনের ২২৮২ (দুই হাজার দুই শত বিরাশি) বছর পর। এরপর হযরত নূহ (عليه السلام) তিন শত পঞ্চাশ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর পার্থিব বিদায়ের সময় হযরত জিবরাইল ও আযরাইল (عليه السلام) তাঁর নিকট জীবনকাল সম্পর্কে এই মর্মে জিজ্ঞাসা করেন যে, দুনিয়া কেমন? উত্তরে তিনি বলেন, জীবনকে আমি এমন একটি ঘর হিসেবে পেয়েছি যার দু’টি দরজা রয়েছে। তার একটি দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম, অল্পক্ষণ অবস্থান করলাম, এরপর দ্বিতীয় দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেলাম। হযরত নূহ (عليه السلام) বয়স পেয়েছিলেন ১৪৬৬ (এক হাজার ছয়শত ছিষট্টি) বছর। কেউ কেউ অন্যান্য সংখ্যাও উল্লেখ করেন। হযরত নূহ (عليه السلام) এর উপাধি হচ্ছে ‘শায়খুল আন্বিয়া’ ও ‘নাজিউল্লাহ’। তাঁকে দ্বিতীয় আদমও বলা হয়। তাঁর ওপর দশটি সহীফা অবতীর্ণ হয়। তাঁর কবর শরীফ বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থিত। 


❏ প্রশ্ন-১৮২: يَا هُوَ শব্দের মর্মার্থ ও উদ্দেশ্য কি এবং هو সর্বনামের প্রত্যাবর্তন কোন দিকে? বর্ণনা কর।


✍ উত্তর: يَا هُوَ এর শাব্দিক অর্থ, হে আল্লাহ্! এটা আল্লাহ্ তা‘আলার জাতি বা সত্তাগত নাম। সুফিয়া-ই কিরাম অধিকাংশ সময় এটির অযিফা পাঠ করে থাকেন। আর هو সর্বনামের মারজা বা প্রত্যাবর্তনস্থল হচ্ছে, আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু।

 
Top