❏ প্রশ্ন : لا إله الا الله محمد رسول الله এটা জুমলা খবরিয়া ইসমিয়া বা দুটি ইসম দ্বারা গঠিত খবরবাচক বাক্য। আর জুমলা খবরিয়া ইসমিয়া হোক কিংবা ফে‘লিয়া হোক তার বক্তাকে সত্য বা মিথ্যা বলা যেতে পারে। لا إله الا الله محمد رسول الله এর ক্ষেত্রেও এই ধারণা হতে পারে। অমুসলিমরা বলতে পারে যে, لا إله الا الله محمد رسول الله এই বাক্যের মধ্যেও সত্য মিথ্যার সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে মুমিনের ঈমান দৃঢ় ও অটল থাকলো না। সন্দেহযুক্ত হয়ে গেলো। খালেস ঈমান চলে গেলো। এর সমাধান কী?
✍ জবাব : وبه المستعان وعليه التكلان প্রচুর মাখলুক যাদের সত্যতার উপর পুরা দুনিয়া একমত, তাদের গ্রহণের কারণে উল্লিখিত কালিমা দৃঢ় ও অটল হয়ে গেছে। তাছাড়া ব্যাপকভাবে গ্রহণের কারণে সংশয় ও সন্দেহ সব কিছু চলে গেছে। এখন এই বাক্য অকাট্য ও নিশ্চিতে পরিণত হয়েছে। এটাকে খবরিয়া বা খবরবাচক বলা বোকামী ও মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। শক্তি থাকা বাস্তবায়নকে আবশ্যক করে না। মিথ্যা যেহেতু মূলেই খারাপ, তাই তা আল্লাহ তা‘আলা থেকে কখনো প্রকাশ পায়নি, পাবেও না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা থেকে মিথ্যা প্রকাশ পাওয়ার প্রবক্তা সে কাফের। আল্লাহ তা‘আলার কুদরত থেকে উদ্দেশ্য, আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ও সন্তুষ্টিতে যা হয়। প্রকাশ পাওয়া বা ঘটা উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ তা‘আল থেকে যাই হবে তা সত্য, মিথ্যা নয়। السماء فوقنا والأرض تحتنا এটা খবরবাচক বাক্য। এর মধ্যে সত্যতা প্রকাশ্য, মিথ্যার লেশমাত্র নেই। মিথ্যার সম্ভাবনার কথা বললে সেটা বিজ্ঞানীদের কথা নয়, বরং মূর্খ নির্বোধের সন্দেহ মাত্র। তাই এটা জুমলা ইসমিয়া কতইয়াও খবরিয়া ইয়াকিনিয়া। সন্দেহযুক্ত বাক্য নয়। এর প্রবক্তা শত্রু-বন্ধু সকলে কাছে সত্যবাদী মুসলিম।
অনেক আলেম আল্লাহ তা‘আলা থেকে মিথ্যা প্রকাশ পাওয়াকে মুমকিন বিযযাত বা মূলে সম্ভব এবং মুমতানা‘ বিলগায়র বা ভিন্ন কারণে না জায়েয বলেছেন। অথচ কদীম, চিরঞ্জীব ও অতুলনীয় সত্তার সাথে মিথ্যাকে মুমকিন বিযযাত মুমতানি‘ বিল গায়র হিসেবে সম্পৃক্ত করা দলীল ও যুক্তি উভয় দিক দিয়ে অসম্ভব। খারাপ মূলে খারাপ। পৃথিবীর সকল বৈশিষ্ট্য অস্থায়ী ও নি¤œমানের। অতএব এটা কদীম সত্তার সাথে এর সম্পৃক্ততা হারাম, কুফুরী ও ঈমানের বক্রতার পরিচয়। আল্লাহ তা‘আলা সত্তাগতভাবে সত্যবাদীই সত্যবাদী। এটা কদীম সত্তার গুন। আল্লাহর সত্তা ঊর্দ্ধজগতের সাথে সম্পৃক্ত। অস্থায়ী পৃথিবীর সাথে সম্পর্ক রাখেন না। এমনকি এই গুনের সাথে ফেরেশতা জগত ও আখেরাতের জগতের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। সেখানে ঊর্দ্ধ জগতের সাথে কিভাবে সম্পর্ক রাখবে।
ফতোয়া মাহমুদিয়াতে আছে, কিযব বিযযাত মুমতানা‘ বিল গায়র যেহেতু খারাপ, তাই আল্লাহ তা‘আলা থেকে কখনো প্রকাশ পায়নি পাবেও না। যে ব্যক্তি মিথ্যা প্রকাশ পাওয়ার প্রবক্তার সে কাফের। যেমন ফতোয়া রশিদিয়াতে আছে, কিন্তু প্রকাশ না হওয়া কুদরতকে না বলা আবশ্যক করে না। কুদরত না মানলে অক্ষমতাকে আবশ্যক করে। যা إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ এর বিপরীত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসায় বলেন, وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا এর দ্বারা বুঝা যায় সত্যের বিপরীতের উপর শক্তি অবশ্যই আছে। আর তা হলো, মিথ্যা। কারণ কুদরত না থাকলে তিনি সত্যের উপর বাধ্য হবেন। সুতরাং এমন জিনিসও কি প্রশংসার যোগ্য হতে পারে যার উপর বাধ্য এবং যার বিপরীতের শক্তি রাখে না? খারাপ কাজ খারাপ, তবে খারাপ কাজের উপর শক্তি রাখা খারাপ হয় না যে, তা দুই দিকের বৈশিষ্ট্য ও বাহ্যিক দলিলের থেকে মুক্ত হবে। যদি দলিলের দ্বারা এক দিক নির্দিষ্ট হয়ে যায় যেমন, السماء فوقنا والأرض تحتنا তাহলে এই জুমলা খবরিয়া। কারণ দলিলের আলোকে একদিকের সত্যতা নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। অপর দিকের সম্ভাবনা থাকেনি।
জুমলা খবরিয়ার ব্যাখ্যা মূলত ইনশা তথা সৃষ্টিশীল থেকে আলাদা করার জন্য। যে, তার মধ্যে সত্য মিথ্যার অবকাশ নেই। কারণ ওখানে তো কোনো বিবরণ হয়নি। এখানে বিবরণ আছে তাই উভয় দিকের সম্ভাবনা থাকে। যার বিবরণ তার পক্ষে হবে অথবা তার বিপক্ষে হবে। প্রথমটা সত্য, দ্বিতীয়টা মিথ্যা। দলিলের দ্বারা যেমন মিথ্যা নির্দিষ্ট হয়, তেমনি দলিলের দ্বারা সত্যতাও নির্দিষ্ট হয় এবং মিথ্যার সম্ভাবনা থাকে। তবে জুমলা খবরিয়া থেকে বেরিয়ে যায় না। কারণ খবরের ভিত্তি বিবরণের উপর। তাতে দুটি সম্ভাবনা থাকে। কোনো একটি দিক নির্দিষ্ট হয়ে গেলে বিবরণ বাতিল হয়ে যায় না। সুতরাং খবর বহাল থাকবে। (লিখেছে, বান্দা মাহমুদ গাঙ্গুহী)
আল্লাহর কথায় কি মিথ্যার অবকাশ আছে? কখনো নয়। কারণ মিথ্যা দোষ ও ত্রুটি। আল্লাহ তা‘আলার সত্তা দোষ ও ত্রুটি থেকে পবিত্র।
অনেকে বলে, মিথ্যা দোষ ও ত্রুটি তখন, যখন বাস্তবায়ন হয়। কুদরতের মধ্যে থাকা দোষ ও ত্রুটি নয়।
إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ এই আয়াত থেকে কুদরত হওয়া প্রমাণিত, একথা দলিল ও বিবেকের বিপরীত। এই আয়াতে যে, شَيْءٍ আছে তা মাকদুর এবং মাকদুর বস্তু মুমকিন, হাদেস বা অস্থায়ী হওয়ার কারণে চিরস্থায়ী সত্তার গুণ কিভাবে হতে পারে? তাফসীরে জালালাঈন ও জামাল ইত্যাদিতে شاءه এর অধীনে উল্লেখ আছে, فالمراد لقوله شائه إن يشاء وذلك هو الممكن সুতরাং কুদরতের অধীনে যে মিথ্যা আছে তা মাকদুর হওয়ার কারণে চিরস্থায়ী সত্তার সাথে কখনো যুক্ত হতে পারে না। সম্ভাবনার পদ্ধতিতেও নয়, বাস্তবায়নের পদ্ধতিতেও নয়। মিথ্যা বাস্তবায়ন হওয়া সবার জন্য, কিন্তু তার জন্য সম্ভাবনার পদ্ধতিতে এই দোষের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াও দোষ। এটাই কারণ যে, তিনি নিজের ক্ষেত্রে (প্রশংসার স্থানে) أَصْدَقُ ব্যবহার করেছেন, যা ইসমে তাফযীল বা অগ্রাধিকার বিশেষণ। অথবা গুণবাচক শব্দ। যেমন أكبر শব্দ। وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا ‘কথার ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে আছে?’ যাতে আলেমরা জেনে নেয় যে, তার কথার মধ্যে মিথ্যার অন্তর্ভুক্তি সম্ভাবনার পদ্ধতিতেও নেই। أكبر শব্দটি অগ্রাধিকার বিশেষণ। মূলনীতি আছে, মুফায্যাল (যাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলো) মুফায্যাল মিনহু (যার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হলো)র অন্তর্ভুক্ত হয়। তাহলে অর্থ দাড়াবে, আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। এতে আরো বড় থাকাকে আবশ্যক করে। অথচ আল্লাহই বড়। সবার চেয়ে বড় বললে, শিরক করা হলো। আর আল্লাহই বড় এটা গুন।
অথবা আল্লাহ তা‘আলা চিরস্থায়ী। চিরস্থায়ী হওয়াই সত্তাগত সত্যতা। যার মধ্যে সম্ভাবনা ইত্যাদির অন্তর্ভুক্তি নেই। যদি এই মিথ্যা ভিন্ন কারণে অসম্ভব হয় তাহলে ক্ষতি কী? কারণ বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে মোমতানা‘ বিযযাত যেটাকে সত্তাগত অসম্ভব বলে এবং মোমতানা‘ বিল গায়রকে ভিন্ন কারণে অসম্ভব বলে। আর দুটিই সমান।
এই বর্ণনার দ্বারা ক্ষতি হলো, তিনি সম্ভাবনার পদ্ধতিতে এই দোষের সাথে অভিযুক্ত হবে। অর্থাৎ একথা বলা হবে যে, চিরস্থায়ী সত্তা আল্লাহ তা‘আলা মিথ্যা বলতে পারে। যদি বলবেন না। এমন বলা কি তার শানে মানায়? নাউযুবিল্লাহ। যুক্তির আলোকে যদি এমন অভিযোগ জায়েয হয়, তাহলে সকল দোষের সাথে এই ভাবে অভিযুক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ ঐ সত্তা খেতে পান করতে পারে। কিন্তু খাবেন না। মিলন করতে পারেন। কিন্তু করবেন না। অন্ধ বধীর হতে পারে। কিন্তু হবে না। নাউযুবিল্লাহ।
দ্বিতীয়ত এটা কিভাবে জানা গেলো যে, মিথ্যা মাকদুর হওয়া সত্তে¡ও বাস্তবায়ন হবে না। কারণ অসম্ভব তো থাকলো না। এরপর বাস্তবায়ন না হওয়ার দিকটা প্রাধান্য দেওয়া হলে মাকদুরের মধ্যে থাকলো কিভাবে। দলিলের আলোকে অসম্ভব এই কথা থেকে হবে যে, যার মধ্যে মিথ্যা সম্ভব। এবার এটা কোন ধরণের অসম্ভব, যার দ্বারা মিথ্যা বাস্তবায়ন না হওয়া নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। কেউ যদি বলে যে, ইচ্ছার গুণ এই মিথ্যার ক্ষেত্রে নেই যে, বাস্তবায়ন হবে। সুতরাং এর দ্বারা ভিন্ন কারণে অসম্ভব প্রমাণিত হয়ে গেলো।
ভাই বন্ধুগণ, এই গুণের উপর অবগতির মাধ্যম একমাত্র কালাম। কারণ আল্লাহর ইচ্ছা উপলব্দি করার জন্য বিবেকের কোনো দখলই নেই। কালাম হলো সেটা যার মধ্যে মিথ্যা সম্ভব। সুতরাং নির্দি¦ধায় প্রমাণ হলো যে, চিরস্থায়ী সত্তার ক্ষেত্রে মিথ্যা দলিল ও যুক্তির আলোকে সত্তাগতভাবে অসম্ভব।
যদি কেউ বলে যে, কালামে নফসী বা আসল কালামের মধ্যে দলিল ও যুক্তির আলোকে কোনোভাবে মিথ্যা সম্ভব নয়। তবে কালামে লফযী বা শাব্দিক কালামের মধ্যে যদি মিথ্যা মেনে নেওয়া হয় তাহলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি মনে হয় না। এমন আকীদা কি ঠিক? এটা একটা আশ্চর্য ধরণের প্রশ্ন। এই আকীদা এর চেয়ে আরো খারাপ।
বন্ধুরা শোনো, সত্য মিথ্যা কালামে নফসীরই গুণ হয়ে আসে। শুধু কালামে লফযীর নয়। কারণ কালাম শুধু শাব্দিক হলে, অর্থ কোনো জিনিস না হলে এটা অর্থহীন কালাম বলে। চিরস্থায়ী সত্তা আল্লাহর কালামকে কোনো ঈমানদার কোনো সময় অর্থহীন ধারণা করতে পারে? শাব্দিক কালামের মধ্যে যখন মিথ্যা মেনে নিলে, তাহলে আসল কালামের মধ্যে মিথ্যা আগে মেনে নিলে। নাউযুবিল্লাহ। অথবা আল্লাহর কালামকে অর্থহীন সাব্যস্ত করলে যা কুফর।
বন্ধুরা, মিথ্যা বলে সত্যে না থাকাকে। আর আল্লাহর ক্ষেত্রে না থাকার কোনোভাবেই পথ নেই। সম্ভাবনার পদ্ধতিতেও না, বাস্তবায়নের পদ্ধতিতেও না।