নিফাসের পরিচিতি


নিফাস  ن + ف + س ধাতু হতে উদ্গত হয়েছে।শরী‘আতের পরিভাষায় সন্তান প্রসবের পর যে রক্তস্রাব হয় তাকে নিফাস বলে (হিদায়া)।


প্রসবের সময সন্তানের অর্ধেকের বেশী বের হওয়ার পর যে রক্তস্রাব হবে তা নিফাস হিসাবে গণ্য হবে। আর যদি অর্ধেকের কম বের হওয়ার পর রক্তস্রাব হয় তবে তা ইস্তিহাযা হবে নিফাস হবে না (আলমগীরী ও বাহরুর রাইক)।


যদি কোন মহিলার গর্ভপাত হয় এবং সন্তানের এক দু’টো অঙ্গ পরিষ্কারভাবে দেখা যায় তবে গর্ভপাতের পর যে রক্তস্রাব হবে তা নিফাস হিসাবে গণ্য হবে।


যদি সন্তানের কোন আকৃতি প্রকাশ না পায় শুধু মাংস পিণ্ড দেখা যায় তবে দেখতে হবে ইতিপূর্বে পনের দিন পাক ছিল কিনা এবং রক্তস্রাব কম পক্ষে তিন দিন তিন রাত জারী ছিল কিনা যদি এরূপ হয় তবে তা হায়িয হিসাবে গণ্য হবে এবং এ সময়ের নামায রোযা ছেড়ে দিতে হবে। আর যদি এরূপ না হয় তবে এ রক্তস্রাব ইস্তিহাযা হিসাবে গণ্য হবে (বাহরুর রাইক ও আলমগীরী)।


সন্তুন ভুমিষ্ট হওয়ার আগে ও পরে রক্তস্রাব হলে এবং সন্তানের কিছু অংশ প্রকাশ পেলে আগে আসা রক্ত হায়িয হবে না। অবশ্য পরে আসা রক্ত নিফাস বলে গণ্য হবে (আলমগীরী)।


যদি নাভি ফেটে সন্তান ভূমিষ্ট হয় তাহলে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার যে হুকুম তারও সে হুকুম হবে। নিফাসের হুকুম তার জন্য প্রযোজ্য হবে না। অবশ্য নাভির দিক থেকে সন্তান বের হওয়ার পর লজ্জাস্থান দিয়ে রক্তস্রাব হলে তা নিফাস বলে গণ্য হবে (আলমগীরী)।


অনুরূপভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেট কেটে কোন মহিলার সন্তান প্রসব করানো হলে তার সেই অস্ত্রোপচার জনিত স্বাভাবিক ক্ষতরূপেই গণ্য হবে এবং ক্ষত সম্পর্কে শরীয়তের যে বিধিবিধান রয়েছে এক্ষেত্রেও তাই প্রযোজ্য হবে। তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর লজ্জাস্থান দিয়ে রক্ত নির্গত হলে তা নিফাস বলে গণ্য হবে।


যদি যমজ সন্তান হয় তবে প্রথম সন্তানের পর হতেই নিফাস ধর্তব্য হবে। একই গর্ভ থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে দুই সন্তান প্রসবিত হলে যমজ সন্তান বলে বিবেচিত হবে। কাজেই ছয় মাস অথবা তদপক্ষে বেশী সময়ের মধ্যে দুই সন্তান প্রসবিত হরে দু‘গর্ভ হতে জন্মগ্রহণ করেছে বলে গণ্য করা হবে। এবং নিফাসও দু’টি হবে (আলমগীরী)।


যদি কোন মহিলার প্রসবান্তে চল্লিশ দিনের অধিক রক্তস্রাব হয় এবং এটাই তার প্রথম প্রসব হয়, তবে চল্লিশ দিনই নিফাস হিসাবে গণ্য হবে। চল্লিশ দিন পুরা হওয়ার পর গোসল করে নামায পড়বে। আর যদি পূর্বে আরও সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে থাকে এবং তার নিফাসের মুদ্দতের ক্ষেত্রে কোন নির্ধারিত নিয়ম থাকে তবে নিয়মের দিনগুলো নিফাস হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তিহাযা হবে (হিদায়া ও আলমগীরী)।


কোন মহিলার প্রসবান্তে ত্রিশদিন রক্তস্রাব হওয়ার অভ্যাস ছিল। কোন একবার সে যদি ত্রিশ দিনের পরেও রক্ত দেখতে পায় তবে সে অপেক্ষা করতে থাকবে। যদি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর অথবা চল্লিশ দিনের মধ্যে রক্ত বন্ধ হয়ে যায় তবে সব কয় দিনই নিফাস হিসাবে গণ্য হবে। আর যদি চল্লিশ দিনের বেশী রক্তস্রাব হয় তবে ত্রিশ দিন নিফাসের মধ্যে গণ্য হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো ‘ইস্তিহাযা’ হবে (আলমগীরী)।


চল্লিশ দিনের ভিতরে যদি দুইবার রক্তস্রাব হয় এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সময় রক্ত বন্ধ থাকে তবে ইমাম আবূ হানীফা (رحمة الله) -এর মতে এসময়টিও নিফাসের মধ্যে গণ্য হবে (আলমগীরী)।


ইমাম আবূ ইউসূফ (رحمة الله) -এর মতে কোন মহিলার যদি নিফাসের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোন অভ্যাস থাকে তবে একবার যদি এ অভ্যাসের ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে গণ্য হবে। ৩১৪

৩১৪.আলমগীরী ১ম খণ্ড



 
Top