নারীর অলংকারের যাকাত


ইসলামে নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যবহার করা বৈধ। এগুলো পরিধান করে তারা নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য কেবল স্বামীর সম্মুখে প্রকাশ করবে। ইসলামে নারী ধন-সম্পদের মালিক হতে পারে। সুতরাং তাদের ব্যবহৃত অলংকারাদির মালিক তারাই। আমাদের দেশে বিবাহে পাঁচ-দশ ভরি থেকে আরম্ভ করে একশ ভরি পর্যন্ত স্বামীর পক্ষ থেকে কনেকে প্রদান করা হয়। এগুলো নারী গ্রহণ করার পর থেকে নারীই এই সম্পদের মালিক। সুতরাং এর যাকাত তাকেই আদায় করতে হবে এবং যাকাত আদায় না করার যে শাস্তি কুরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে তা নারীই ভোগ করবে। স্ত্রীর সম্পদের যাকাত স্বামীর উপর আবশ্যক নয়। বিষয়টি অনেক মহিলা হয়তো জানেও না। আবার কেউ জানলেও যাকাত দেওয়ার বিষয়টাকে পাত্তাই দেয়না। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

 وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ - يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ

যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা অর্থাৎ যাকাত দেয় না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপাল, পার্শ¦দেশ এবং পিঠে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর। ৩০৫

৩০৫.সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৪-৩৫

 

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ: أَنَّ امْرَأَتَيْنِ أَتَتَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي أَيْدِيهِمَا سِوَارَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَهُمَا: تُؤَدِّيَانِ زَكَاتَهُ؟ قَالَتَا: لَا. فَقَالَ لَهُمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتُحِبَّانِ أَنْ يُسَوِّرَكُمَا اللَّهُ بِسِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ؟ قَالَتَا: لَا قَالَ: فَأَدِّيَا زَكَاتَهُ

হযরত আমর বিন শোয়াইব তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, একদা দু’জন মহিলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ’র দরবারে উপস্থিত হয়। তাদের হাতে তখন দু’টি স্বর্ণের কংকন ছিল। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা কি এ অলংকারের যাকাত দাও? তারা বলল, না। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা কি পছন্দ কর, এই কংকনদ্বয় জাহান্নামের আগুনের হয়ে যাক? তারা বলল, না। তারপর তিনি বললেন, তাহলে তোমরা এগুলোর যাকাত দাও।৩০৬

৩০৬.তিরমিযী, পৃ. ১৩৮, নাসাঈ, পৃ. ৩৪৩, মিশকাত; পৃ.১৬০

 

عن اسماء بنت يزبد قالت دخلت انا وخالتى على النبى صلى الله عليه وسلم وعلينا اسورة من ذهب فقال لنا اتعطبان زكوته قالت فقلنا لا فقال اما تخافان ان يسوركما الله اسورة من اليار اديا زكوته 

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ (رضي الله عنه) বলেন, একদা আমি এবং আমার খালা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ’র খেদমতে উপস্থিত হলাম। তখন আমাদের হাতে সোনার কংকন ছিল। তিনি বললেন, তোমরা কি এগুলোর যাকাত আদায় কর? আমরা বললাম, না, তখন তিনি বললেন তোমরা কি ভয় করোনা যে, আল্লাহ তোমাদের আগুনের কংকন পরিধান করাবেন? তোমরা এগুলোর যাকাত আদায় কর। ৩০৭

৩০৭.আত্তারগীব, খণ্ড, ১ পৃ. ৩১২

 

সোনা সাড়ে সাত তোলা এবং রৌপ্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ কারো মালিকানায় এক বছর থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয়। এগুলো ব্যবহৃত হোক কিংবা লকারে কিংবা আলমারিতে সংরক্ষিত হোক সর্বাবস্থায় যাকাত দিতে হবে। মহিলারা এ ব্যাপারে খুবই উদাসীন। যাকাত দেওয়াটা যদি ভারী মনে হয় তাহলে নিসাবের চেয়ে কম পরিমাণ রাখবে। তাহলে অন্তত আল্লাহর কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।


যাকাত আদায় না করার দুনিয়া, কবর ও পরকালের ভয়াবহ কঠিন শাস্তির ব্যাপারে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাবে লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যা পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে বর্ণনা করা হচ্ছে না।

Top