হায়িয
মহিলাদের হায়িয প্রকৃতিগতভাবেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىَ يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
তারা আপনাকে হায়িয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, তা অপবিত্র ও আবর্জনাযুক্ত অবস্থা। কাজেই তখন স্ত্রীদের থেকে তোমরা দূরে থাকবে এবং তাদের কাছে গমন করবেনা, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়। অতঃপর তারা যখন পবিত্র হবে, তখন তাদের নিকট গমন করবে, ঠিক সেভাবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন। যারা অধিক পরিমাণ তাওবা করে এবং পবিত্রতা অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। ২৯৪
২৯৪.সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২
মহিলাদের যৌনপথ দিয়ে সাধারণত তিন ধরনের রক্ত বের হয়ে থাকে।
১. সেইরক্ত, যা অসুখ বিসুখ বা রোগের কারণে বের হয়ে থাকে। এ রক্ত সাধারণত নয় বছর বয়সের পূর্ব থেকে বের হয়ে কিংবা এমন দিন বা বয়সে বের হয় যখন মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের রক্তকে ‘ইস্তিহাযা’ বা কুরক্ত বলা হয়।
২. হায়িয, ঋতু বা মাসিকের রক্ত।
৩. নিফাসের রক্ত যা সন্তান প্রসবের পর বের হয়।
মহিলা বালিগ হওয়ার পর স্বভাবগতভাবে তাদের জরায়ু থেকে রোগ ব্যাধির কারণ ব্যতিরেকে যে রক্ত নির্গত হয়, একে শরীয়তের পরিভাষায় হায়িয বলে।
হায়িয হওয়ার বয়স কমপক্ষে নয় বছর। এর পূর্বে যদি কোনো বালিকার রক্তস্রাব হয় তাহলে তা হায়িয বলে গণ্য হবে না। সাধারণত পঞ্চান্ন বছর পর্যন্ত মহিলাদের হায়িয হয়ে থাকে। এর পরে রক্তস্রাব হলে একে হায়িয বলে গণ্য করা হবে না। তবে এ বয়সে রক্তের রং যদি গাঢ় লাল হয় অথবা কালচে লাল হয় তাহলে তা হায়িয বলে গণ্য হবে।২৯৫
২৯৫.ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড ১, পৃ. ৩৬
হায়িযের সময়কাল কমপক্ষে তিনদিন তিনরাত এবং উর্ধ্বে দশদিন দশরাত। এর কম বেশি হলে তা হায়িয বলে গণ্য হবে না বরং একে বলা হয় ইস্তিহাযা; যা রোগের কারণে হয়ে থাকে। এর বিধান হায়িযের বিধানের ব্যতিক্রম।
কোনো মহিলার যদি ঋতুকালের নির্ধারিত সময়সীমা থেকে থাকে অতঃপর কখনো যদি সে নির্ধারিত সময়কালের চাইতে বেশি দিন ঋতুকাল চলতে থাকে, তবে সর্বোচ্চ দশদিন পর্যন্ত হায়িয ধরা হবে। যেমন কোনো মহিলার যদি নির্ধারিত তিনদিন ঋতুকাল চলে অতঃপর হঠাৎ একবার চারদিন রক্ত দেখে, তবে ধরে নিতে হবে তার সাধারণ নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে। তার এই চতুর্থ দিনের রক্তও হায়িয বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে তিনদিন হলো তার সাধারণ নিয়ম আর চতুর্থ দিন হলো নিয়মের পরিবর্তন। এভাবে সাধারণ নিয়মের অধিক হলেও দশদিন পর্যন্ত হলে হায়িয হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু দশদিনের পরও যদি রক্ত দেখা দেয় তাহলে গত মাসে কতদিন রক্ত এসেছিল তা দেখতে হবে। যতদিন গতমাসে রক্ত এসেছিল, ততদিন হায়িয ধরবে বাকী দিনগুলো ইস্তিহাযা।
ঋতুর মুদ্দতকালে কোনো একদিন যদি রক্ত দেখা না যায়, তবুও সে দিনটি ঋতুকালের মধ্যে গণ্য হবে। যেমন প্রথম দিন রক্ত দেখা গেল কিন্তু দ্বিতীয় দিন দেখা গেলনা, এভাবে ঋতুচলাকালে মাঝে মধ্যে যদি রক্ত দেখা না যায়, তবুও সেদিনগুলো ঋতুকালের মধ্যে গণ্য হবে।
নিফাস
সন্তান প্রসবের পর নারীর জরায়ু থেকে যে রক্ত বের হয় তাকে নিফাস বলে। সুতরাং কোনো মহিলা যদি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান বের করে নেয় এবং তার জরায়ু থেকে রক্ত নির্গত না হয়, তবে সে নেফাসী বলে গণ্য হবে না। নিফসের রক্ত সংক্রান্ত বিধান ও তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কোনো মহিলা যদি যমজ সন্তান প্রসব করে, তবে নিফাসের মুদ্দত গণনা শুরু করতে হবে প্রথম সন্তান প্রসবের পর থেকে।
নিফাসের মুদ্দত
নিফাসের সর্বনিম্ন সময়সীমা নির্ধারিত নেই। সুতরাং সন্তান প্রসবের পর পরই যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায় কিংবা সন্তান প্রসবের পর কোনো রক্তই নির্গত না হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে তার নিফাসের সময়সীমা শেষ। তবে নিফাসের সর্বোচ্চ মুদ্দত হলো চল্লিশ দিন। নিফাসের সময়সীমার মধ্যে মাঝে-মধ্যে রক্ত নির্গত না হলেও তা নিফাসের দিন বলে গণ্য হবে। গর্ভপাত হওয়ার অবস্থায় সন্তানের অঙ্গগঠন হয়ে থাকলে যে স্রাব আসে তা নিফাসের রক্ত বলে গণ্য হবে।
হায়িয ও নিফাসের আহকাম
হায়িয ও নিফাসের দিনগুলোতে নামায আদায় করা নিষিদ্ধ এবং তার কাযাও আদায় করতে হবে না। এভাবে ঋতুকালীন সময়ে রোযা রাখাও নিষিদ্ধ, তবে তা পরে কাযা করতে হবে।
হায়িয ও নিফাসের সময় মসজিদে প্রবেশ এবং কা’বা ঘরের তাওয়াফ করা নিষেধ। কুরআন তিলাওয়াত করাও নিষিদ্ধ। তবে যদি এক আয়াত থেকে কম হয কিংবা কিরআতের নিয়ত না থাকে বরং দোয়া বা শোকরিয়া আদায় করতে গিয়ে আয়াতাংশ উচ্চারণ করতে পারবে।
হায়িয ও নিফাসের সময় কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নেই, এমনকি কোনো বস্তু বা স্থানে কুরআনের পূর্ণ এক আয়াত লিখা থাকলে তাও স্পর্শ করা জায়েয নেই। তিলাওয়াতে সিজদা ও সিজদায়ে শুকরও আদায় করা আবশ্যক নয়। হায়িয নিফাসের সময় স্ত্রী সহবাস হারাম। এ ছাড়া বাকী সব বৈধ। হায়িয-নিফাস বন্ধ হলে গোসল করা ফরয।