❏ প্রশ্ন : স্বভাবগতভাবে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, যখন আল্লাহর তা‘আলার পরিচয়ের মাধ্যম এক মাত্র রাসূল (ﷺ), তাহলে তার পর্যন্ত আমরা পৌঁছা সম্ভব নয়। কারণ তিনি বারযাখ জগতে, আর আমরা দুনিয়াতে। দুনিয়ায় অবস্থানকারী বারযাখে অবস্থানকারীর সাথে কিভাবে মিলবে?


✍ জবাব : এই প্রশ্ন এ কারণে সৃষ্টি হতে পারে যে, আমরা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞ। নতুবা কথা পরিস্কার। রাসূল (ﷺ) এর জগত পরিবর্তন নবুওয়াত চালু থাকার জন্য আড়াল নয়। ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত, রাসূল (ﷺ) এর নবুওয়াত কেয়ামত পর্যন্ত চলবে। তাই যদিও তিনি বারযাখ জগতে আছেন, তবুও তিনি আমাদের জন্য জীবিত বিদ্যমান আছেন। যদি আমাদের চোখের আড়ালে।


ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) তার কিতাব আলহাবী লিল ফাতাওয়ার ৪৫৩ নং পৃষ্ঠায় বলেন,

إن رسول الله صلى الله عليه وسلم حي بجسده وروحه وأنه يتصرف ويسير حيث شاء في أقطار الأرض رفي الملكوت وهو بهية التي كان عليها قبل وفاته لم يبدل منه شئ وأنه مغيب عن الأبصار كما غابت الملائكة مع كونهم أحياء بأجسادهم فإذا اراد الله رفع الحجاب عمن أراد كرامه برؤيته رأه على هية التي هو علىها لا مانع من ذلك ولاداعي إلى التخصيص برؤية المثال

আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় রাসূল পবিত্র শরীর ও রূহের সাথে জীবিত। আসমান জমিনের যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যায়। তিনি মৃত্যুর পূর্বে যেমন ছিলেন, এখনো সেই অবস্থায় আছেন। কোনো প্রকার পরিবর্তন হয়নি। তিনি আমাদের চোখের আড়ালে, যেমন ফেরেশতারা আমার চোখের আড়ালে। তবে সশরীরে জীবিত। তবে আল্লাহ যাকে রাসূলের দীদার দ্বারা সম্মানিত করতে চান, পর্দা সরিয়ে সেই অবস্থায় দীদার করান, যে অবস্থায় আছেন। এর জন্য কোন বাধা নেই। আবার রূপক আকৃতির দীদারেরও কোনো কারণ নেই।


রাসূল (ﷺ) সারা পৃথিবীর, এমনকি সকল নবীগণেরও। এহিসেবে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন প্রকার হওয়া আমাদের জন্য। তার জন্য সারা জগত এক সমান। কারণ তিনি তো রহমাতুল লিল আলামিন।

স্বপ্ন ও জাগ্রত অবস্থায় রাসূল (ﷺ) এর সাথে সাক্ষাতের অনেক পদ্ধতি বিশেষাজ্ঞ আলেম বুযুর্গরা নিজ নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

রাসূল (ﷺ) এর উপর অগণিত অনির্দিষ্ট পরিমাণে দুরূদ পাঠ করবে। কপাল ভালো হলে তাড়াতাড়ি হয়। কোনো বদ আমলী থাকলে বহু দিন লেগে যায়। তবে সাক্ষাৎ হবেই।


হযরত আব্দুল আযীয দাব্বগ (رحمة الله) বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দা আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ) এর পরিচয় লাভ না করে। তিনি বলেন,

 إن العبد لا ينال معرفة الله تعالى حتى يعرف سيد الوجود صلى الله عليه وسلم

‘বান্দা আল্লাহর পরিচয় পায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূল (ﷺ) এর পরিচয় লাভ না করবে।’ (আল আবরিয : ৩২)

এর ব্যাখ্যায় মাওলানা আশেকে এলাহী মিরাঠী লিখেন, যেহেতু দীন ও দুনিয়ার সকল নেক কাজ বরং সত্য বলতে ঈমানও এই পরিচয়। এ কারণে নিজ বুঝ মতো প্রয়োজন মাফিক ব্যাখ্যা করছি।


ঘটনা :  হযরত আহমদ যাওয়াদী (رحمة الله) বলেন, আমি পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত রাত দিনে পঞ্চাশ হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করেছি। দুরূদ শরীফের বরকতে জাগ্রত অবস্থায় রাসূল (ﷺ) এর সাক্ষাৎ লাভ করেছি। (তাকরিয : ১/৩৭)


ঘটনা : হযরত নূরুদ্দীন শা‘রানী (رحمة الله) বলেন, সারা বছর প্রতিদিন ৩৩ হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করেছি। আমিও এই মর্যাদা লাভ করেছি। (লাওয়াকেহুল আনোয়ারিল কুদসিয়া : ১৬)


ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাল্লামকে জাগ্রত অবস্থায় সত্তর বার দেখেছি। (তানবীরুল মুলক ফি রুইয়াতিন নবী ওয়াল মালিক)


হযরত শায়খ ইবরাহীম মাকবুলী (رحمة الله)র সামান্য মুহূর্ত রাসূল (ﷺ) এর দীদার থেকে খালি যেতো না।


হযরত আবুল আব্বাস মারুসী (رحمة الله) বলেন,

 لو احتجب عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ساعة ما عددت من جملة المسلمين

যদি আমার থেকে রাসূল (ﷺ)  সামান্য মুহূর্তের জন্য আড়াল হয়, তাহলে আমি নিজেকে মুসলমান করি না।

এই ব্যাপারে  ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله)র তানবীরুল মুলক দেখুন। উল্লিখিত ঘটনাগুলি দ্বারা হাজির নাজিরের মাসআলা খুব স্পষ্ট হয়।


রাসূল (ﷺ) এর বাতলানো রাস্তা যা একজন পূর্ণ মুরশিদ হিসেবে নিজ উম্মতকে বুঝিয়ে গেছেন। তার উপর দৃঢ়তার সাথে আমল করলে আল্লাহর পরিচয় লাভ হবে। তবে এতে কামেল মুরশিদের তত্তাবধান জরুরী।


হযরত আব্দুল আজীজ দাব্বাগ (رحمة الله) বলেন,

لا يعرف سيد الوجود صلى الله عليه وسلم حتى يعرف شيخه

যতক্ষণ পর্যন্ত নিজ শায়েখের পরিচয় অর্জন না হবে রাসূল (ﷺ) এর পরিচয় অর্জন হবে না। (আলআবরিয)

আত্মিক চুক্তি করে নেওয়া উচিত। রোগীর জন্য যেমন উচিত শারিরিক রোগ নির্মুল করা, আরগ্য লাভ করার পর উন্নত খাবার খাওয়ানো, তেমনি আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য জরুরী হলো, রোগ দূর করে সে সব আমল করবে যা রব্বানী দীদাদের যোগ্য বানায়। 



 
Top