নামধারী আহলে হাদীস/সালাফীদের কাছেও মুরসাল হাদীস দলীলযোগ্য, বিশেষ করে যখন কোন মুরসাল হাদীস তাদের তথাকথিত / ভ্রান্ত দাবীর পক্ষে যায়।
এ এক অদ্ভূত মূলনীতি যে তাদের দাবীর পক্ষে গেলে তারা যে কোন ধরণের হাদীস মানতে রাজী, আর তাদের দাবীর বিপক্ষে গেলে তারা সহীহ হাদীস মানতেও নারাজ! মুরসাল হাদীসের ক্ষেত্রেও একই ধরণের মূলনীতি তারা অনুসরণ করে থাকে।
প্রথমেই শায়খ ডঃ সুহাইব হাসান সাহেবের কথা বলি, যিনি ভ্রান্ত আহলে হাদীস মতবাদেরই একজন।
ডঃ সুহাইব হাসান মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন শায়খ বিন বায, শায়খ মুহাম্মদ আল-আমীন আশ-শানকীতী, শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী প্রমুখ।
তিনি তাঁর কিতাব ‘An Introduction To The Science Of Hadith’ এর পৃষ্ঠা ১৪-১৭ তে মুরসাল হাদীস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তিনি শুরুতেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে যদি তাবেঈ তাঁর একজন উস্তাদের নাম (সাহাবা) উল্লেখ না করে সরাসরি রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) থেকে বর্ণনা করেন তাহলে তা অবশ্যই সহীহ।
আর তাবেঈ যদি একাধিক উস্তাদের নাম উল্লেখ না করে থাকেন, তবে সে ক্ষেত্রে হাদীসের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে ইমামদের মতামত কি তা তিনি উল্লেখ করেছেন।
যেমনঃ ৪ মাযহাবের ইমামদের মতামত সম্পর্কে তিনি লিখেছেন (যা নিম্নের নোটে উল্লেখ করা হয়েছে।)
মুরসাল হাদীস এর গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ফকীহ মুহাদ্দিসীনদের মতামত।
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/1981523215496447
__________________
তথাকথিত আহলে হাদীস/সালাফীদের মান্যবর ভ্রান্ত আলেম, কথায় কথায় তারা যার তাহকীকের দলীল দিয়ে থাকে, সেই ভ্রান্ত নাসিরুদ্দীন আলবানী মুরসাল হাদীসকে সহীহ বলেছে তার কিতাব 'সিলসিলাতুল আহাদীসা সহীহা' এর অনেক জায়গায়।
যেমনঃ উক্ত কিতাবের ১/২৪৮, ১/৩৭১, ১/৪৭৭; ১/৫৭৪, ১/৮৫৯, ২/৮৩, ২/১৭৮, ২/২০৩, ২/৩৩০, ২/৫৫৫, ২/৫৭৩ ইত্যাদি পৃষ্ঠাতে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হল আলবানী নিজেই তার 'জানাইয' কিতাবে মুরসাল হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছে।
আলবানী তো এও লিখেছেঃ
"মুরসাল হাদীস তো সবার নিকট প্রমাণযোগ্য।"
দেখুন- আলবানী, আহকামে জানাইযঃ ১১৮।
এবার আরেকটি বিষয় দেখিয়ে আজকের মত আলোচনা শেষ করছি। তা হল-
নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় তথাকথিত আহলেহাদীস/সালাফীরা পুরুষের বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণ করার জন্য আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীস উল্লেখ করে থাকে।
এই হাদীসকে তথাকথিত আহলে হাদীস/সালাফী আলেমরাই প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে, অথচ এটি একটি মুরসাল হাদীস।
নাসিরুদ্দীন আলবানী তার কিতাব 'সহীহ আবু দাউদ' এ (১/২১৬, হাদীস নং-৭৫৯) আবু দাউদ শরীফের এই মুরসাল হাদীসকে সহীহ বলেছে।
তাছাড়াও নাসিরুদ্দীন আলবানী এর কিতাব 'রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নামায', যে কিতাবটি তথাকথিত আহলে হাদীস/সালাফীরা অহরহই প্রচার করে থাকে এবং সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ করে থাকে, সেই কিতাবের বাংলা অনুবাদের পৃষ্ঠা-৫৫ তে এই মুরসাল হাদীস দিয়ে দলীল দেওয়া হয়েছে।
আজকের মতো এখানেই আমাদের বিশ্লেষণী আলোচনা শেষ করলাম। আশা করি তথাকথিত আহলে হাদীসরা বা বাংলাদেশের নামধারী সালাফীরা কিছু হলেও চিন্তার খোরাক পাবে।
আর যদি শরিয়তের ক্ষেত্রেও "তালগাছটা আমার" নীতি তারা প্রয়োগ করেই চলে, তবে মহান আল্লাহ্ পাক তাদের খবিশের পায়রবি থেকে হিফাজাত করুন, আমীন।