২৫- মসজিদে সানী জামাত করা
▆ আহলে হাদীসদের মতে :
মসজিদে নির্ধারিত ইমাম মুয়াজ্জিন কতৃক জামাত হওয়ার পরও প্রয়োজনবোধে একাধিক বার জামাত করা যাবে। এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
দলীলঃ
১) একদা হযরত আনাস রাযি. এমন এক মসজিদে গমন করলেন যেখানে জামাত হয়ে গিয়েছিলো। তখন তিনি সেখানে আযান ও ইকামত দিয়ে জামাতের সাথে নামায পড়লেন। (ই’লাউস সুনান ৪/২৪৮)
২) একদা এক ব্যক্তি এমন সময় মসজিদে এসে উপস্থিত হলেন যখন প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) নামায পড়ে ফেলেছিলেন।
তখন প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) উক্ত ব্যক্তিকে দেখে সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার নামাযে সঙ্গ দিবে? তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে নামায পড়লেন।
আহনাফের মতে :
জামাত হয়ে যাওয়ার পর কতক মসজিদ এমন রয়েছে যাতে একাধিকবার জামাত করা জায়েজ।
আর কতক মসজিদ এমন রয়েছে যাতে একাধিক জামাত করা মাকরুহ।
যে সকল মসজিদে একাধিক জামাত করা জায়েজ সেগুলো হলো :
১) রাস্তার পাশের মসজিদ যেখানে নির্দিষ্ট কোন মুসল্লী নেই।
২) এমন মসজিদ যাতে নির্দিষ্ট কোন ইমাম মুয়াজ্জিন নেই।
৩) মহল্লার মসজিদ যেখানে অন্য মহল্লার লোকেরা জামাত করে চলে গিয়েছে।
৪) মহল্লার মসজিদে মহল্লার লোকেরা আযান দেয়া ছাড়া নামায পড়েছে।
উক্ত চার সূরতে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা জায়েজ বরং উত্তম।
যে সকল মসজিদে একাধিক জামাত করা মাকরূহ তা হলো :
১) এমন মসজিদ যেখানে নির্ধারিত ইমাম মুয়াজ্জিন রয়েছে এবং মহল্লাবাসী একবার আযান দিয়ে জামাত করেছে। সেই মসজিদে দ্বিতীয়বার আযান দিয়ে জামাত করা মাকরূহ।
২) শুধু আযান দেয় নি, আর বাকী নিয়ম ঠিক রেখে আগের মতই জামাত করা। এটাও মাকরূহ।
এই দুই সূরতে দ্বিতীয় জামাত করা মাকরূহ। (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/২৮৮,২৮৯)
আহনাফের দলীলঃ
হযরত আব্দুর রহমান বিন মুজাফফর রহ. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা আমি সালিম বিন আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযি. এর সঙ্গে এক জামে মসজিদে গিয়ে দেখি সেখানে জামাত হয়ে গিয়েছে।
লোকেরা হযরত সালিম রাযি.-কে বললেন, আপনি কি দ্বিতীয়বার জামাত করবেন না?
সালিম রাযি. বললেন, একই মসজিদে একাধিক জামাত করা বৈধ নয়। (ই’লাউস সুনান ৪/২৪৮, মুদাওয়ানাতুল কুবরা ১/৯৯)
হযরত আবু বকর রাযি. থেকে বর্নিত প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) একদা মদীনার কোন এলাকা থেকে এসে জামাত পাননি।
তখন প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন এবং পরিবারের লোকদেরকে নিয়ে গৃহে জামাত করেন। (মাজমাউয যাওয়াহিদ ১/১৬০, ই’লাউস সুনান ৪/২৫২)
আহলে হাদীসদের দলীলের জবাব :
✴প্রথম হাদিসের জবাব :
তাদের উল্লেখকৃত প্রথম হাদীস হলো, হযরত আনাস রাযি. নতুন করে আযান ও ইকামত দিয়ে জামাত করেছেন।
এর থেকে বুঝে আসে যে, নিশ্চয় উক্ত মসজিদটি পথের ধারের মসজিদ হবে।
অথবা
এমন হবে যে, উক্ত মসজিদের পাশের লোক ব্যতীত অন্য কেউ আযান ব্যতীত জামাত করে গিয়েছে।
তাই তিনি নতুন করে আযান ইকামত দিয়ে জামাত করেছেন।
অন্যথায়
যেহেতু হযরত আনাস রা. এঁর ঘটনায় অাযান ইকামাত আছে সেহেতু একাধিক জামাত করতে হলে আযান ইকামাত ছাড়া যাবে না।
আর যারা একাধিক জামাতের প্রবক্তা তারাও কিন্তু নতুন করে আযান ইকামত দিয়ে দ্বিতীয় জামাত করার পক্ষপাতি নয়।
কাজেই তা তাদের মনগড়া।
✴দ্বিতীয় হাদীসের জবাব : উক্ত হাদীস দ্বারা তাদের দাবীর স্বপক্ষে দলীল দেয়া ঠিক নয়।
কারণ
তাতে মুক্তাদী ছিলেন নফল নামায পড়নেওয়ালা। যিনি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর সাথে পূর্বে ফরয আদায় করে ফেলেছিলেন। আর এরূপভাবে জামাত করা তো হানাফীরাও জায়েজ বলেন।
কিন্তু তাদের সাথে আহনাফের দ্বন্দ হলো, ভিন্নভাবে এমন ব্যক্তিদেরকে নিয়ে দ্বিতীয়বার জামাত করা যারা এখনো ফরয পড়েন নি।
এভাবে জায়েজ হওয়ার পক্ষে দলীল হিসাবে তারা কোন হাদীস দেখাতে পারবে না।
বরং এর বিপরীত হানাফীদের অসংখ্য হাদীস রয়েছে।
একাধিক জামাতের ক্ষতিসমূহঃ
১) প্রিয় নাবী রাসূলুন কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) ও সাহাবায়ে কেরামের বিরোধিতা করা।
কেননা তারা একাধিক জামাত করতেন না।
২) প্রথম জামাতে শরীক না হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠা।
ফলে তা মানুষকে দিন দিন গাফলতির দিকে নিয়ে যাবে।
৩) একাধিক জামাতের দ্বারা মানুষের মাঝে বাহ্যিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়।