আল্লাহ পাক নূরসৃষ্টিকারী

আল্লাহ পাক কোরআন পাকে বলেন-



আল্লাহু নুরুস্‌ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্‌
অর্থাৎ আল্লাহ পাক আসমান জমিনের নূর
— সূরা নূর, পারা ১৮
আল্লাহর একটি সিফাত (গুণ) হলো ‘যুন্ নূর’, যার অর্থ তিনি নূর (আলো)-এর স্রষ্টা এবং ওই নূর দ্বারা আসমান ও জমিন, আর সেই সাথে ঈমানদারদের অন্তরও হেদায়াতের আলো দ্বারা আলোকোজ্জ্বলকারী। ইমাম নববী (রহ:) নিজ ‘শরহে সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থে হুযূর পূর নূর (দ:)-এর দোয়া উদ্ধৃত করেন:
এয়া আল্লাহ, আপনি হলেন আসমান ও জমিনে নূর এবং সমস্ত প্রশংসা-ই আপনার
— মুসাফিরদের নামায-বিষয়ক বই #১৯৯
উপরোক্ত ‘আপনি হলেন আসমান ও জমিনে নূর’ - এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম বলেন:
আপনি-ই তাদেরকে (আপনার নূর দ্বারা) আলোকিত করেন এবং আপনি-ই তাদের নূর তথা আলোর স্রষ্টা।
হযরত আবু উবায়দা (রা:) বলেন,
এর অর্থ - আপনার নূর দ্বারাই আসমান ও জমিনে অবস্থানকারী সবাই হেদায়াত লাভ করেন।
আল্লাহর নাম ’নূর’ সম্পর্কে আল্ খাত্তাবী তাঁর তাফসীরে লিখেন,
তিনি (আল্লাহ) এমন এক সত্তা যাঁর নূর দ্বারা অন্ধ দেখতে পায় এবং পথহারা পথের দিশা পায়, যেহেতু তিনি আসমান ও জমিনে নূর (আলো); আর এটাও সম্ভব যে ‘নূর’ বলতে ‘যুন্ নূর’-কে বোঝানো হয়েছে। উপরন্তু, এটা সঠিক নয় যে ‘নূর’ আল্লাহতা’লার যাত মোবারকের গুণ (যাতী সিফাত/সত্তাগত গুণ), কেননা এটা ’সিফাতু ফে’লী’ (গুণবাচক ক্রিয়া); অর্থাৎ, তিনি নূরের স্রষ্টা।
অন্যান্য উলামা বলেন,
আল্লাহ আসমান ও জমিনে নূর - এ বাক্যটির অর্থ হলো, তিনি ওগুলোর সূর্য ও চাঁদ ও তারাসমূহের কর্তা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) এরশাদ করেছেন:
মহান আল্লাহ সৃষ্টি জগত (মাখলুকাত)-কে অন্ধকারে (ফী যুলমাতিন) সৃজন করেন; অতঃপর তাদের প্রতি নিজ নূর মোবারক বিচ্ছুরণ করেন। যিনি-ই এই ঐশী আলোর স্পর্শে এসেছেন, তিনি-ই হেদায়াত পেয়েছেন; আর যে সত্তা এর স্পর্শ পায় নি, সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাই আমি বলি, (ঐশী) কলম শুকনো এবং (সব কিছুই) আল্লাহর (ঐশী) ভবিষ্যৎ জ্ঞানের আওতাধীন।
— আল হাদীস
নোটঃ
  • ওপরের এই হাদীস ইমাম তিরমিযী (রহ:) সহীহ সনদে তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন (‘হাসান’ হিসেবে)।
  • ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) নিজ ‘মুসনাদ’ কেতাবের ২টি স্থানে,
  • ইমাম তাবারানী (রহ:) তাঁর হাদীস সংকলনে,
  • হাকিম (রহ:) নিজ ’মুসতাদরাক’ পুস্তকে এবং
  • ইমাম বায়হাকী (রহ:) তাঁর ‘সুনান আল কুবরা’ কেতাবে এটি বর্ণনা করেছেন।
হযরত ইবনুল আরবী (রহ:) তিরমিযী শরীফের ওপর তাঁর ব্যাখ্যামূলক ‘আরিদাত আল আহওয়াযী’ গ্রন্থে (১০:১০৮) ইমাম তিরমিযী (রহ:)-এর বর্ণনার বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে বলেন,
এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেকে ওই নূর থেকে ততোটুকুই পান যা আম (সাধারণ) ও খাস্ (সুনির্দিষ্ট)-ভাবে তাঁর জন্যে মন্ঞ্জুর করা হয়েছে...তাঁর অন্তরে এবং শরীরে।
উপরোল্লিখিত হাদীস ও হযরত কাজী ইবনে আরবী (রহ:)-এর ব্যাখ্যা পরিস্ফুট করে যে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নূর (জ্যোতি), আর মহানবী (দ:) হলেন ইমানদারদের মধ্যে প্রথম এবং নূরের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবার বেলায় সর্বাগ্রে, এমন কি ফেরেশতাবৃন্দ যারা নূরের সৃষ্টি, তাঁদেরও অগ্রে। ঈমানী ঘাটতি যাদের, শুধু তারাই এ সত্যটি অস্বীকার করতে পারে যে আল্লাহ যখন তাঁর নূর সৃষ্টিকুলের প্রতি বিচ্ছুরণ করেছিলেন, তখন মহানবী (দ:)-ই নিশ্চিতভাবে সর্বপ্রথমে ও সর্বাগ্রে ওই ঐশী জ্যোতির পরশ পেয়েছিলেন, এমন মাত্রায় তা পেয়েছিলেন যা কোনো ফেরেশতা, কোনো নবী (আ:) কিংবা কোনো জ্বিন-ই পান নি।

তথ্যসূত্র

sufi-heart.com
 
Top