টাকার বিনিময়ে না’ত গজল পাঠ

শরীয়াতের আইন মেনে না’ত গজল ও যে কোনও ইসলামীক কবিতা পাঠ করা এবং শোনা নেকীর কাজ।
🌹হযরত আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। হাসসান ইবনু সাবিত আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আবূ হুরাইরাহ্ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-কে আল্লাহর কসম দিয়ে এ কথার সাক্ষ্য চেয়ে বলেনঃ আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে শুনেছেন, হে হাস্সান! আল্লাহর রাসূল্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ হতে (কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের) জবাব দাও। হে আল্লাহ! হাসসানকে রুহুল কুদুস (জিব্রীল) (‘আলাইহিস সালাম ) দ্বারা সাহায্য কর। আবূ হুরাইরাহ্ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ হ্যাঁ ।
(বুখারী শরীফ হাঃ নাঃ 453)
** হযরত হাস্সান ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু নাত পাঠকারী সাহাবী। মহা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে না’ত পাঠ করার সময় একটি উপহার হিসাবে তাঁর চাদর দিয়েছিলেন।
সুতরাং অর্থের আকারে নাত গায়কদের পুরষ্কার দেওয়া বৈধ। একইভাবে, শরীয়ত অনুসারে শায়ের ও বক্তাদের পুরস্কৃত করা বৈধ। কারণ এই সময়টা তাঁরা ধর্মীয় প্রচার ও প্রসার করতে ব্যয় করেন। তারা যদি অন্য কিছুতে এতটা সময় ব্যয় করেন তবে তারা তা থেকে অর্থোপার্জন করতে পারবেন।
সুতরাং তাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ প্রদান করা জায়েয। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে এই ভদ্রলোকদের মধ্যে কেউ কেউ এই ভাল কাজকে একটি পেশা হিসাবে গড়ে তুলেছেন এবং এর মাধ্যমে মানুষকে ডাকাতি করছেন। এই মতো বক্তা ও শায়েরদের ডাকা তো দূরেই থাক নামই কখনও মুখে উচ্চারণ করবেন না। অন্যদিকে, জনগণও সমানভাবে জড়িত। কিছু ভদ্রলোক যারা অর্থ দাবি করেন না তাদের সাথে লোকেরা খারাপ আচরণ করেন। এমনকি তাদের মৌলিক চাহিদাও পূরণ করা হচ্ছে না এই জন্যেই বাধ্য হয়ে দাবিগুলি বৃদ্ধি পেয়েছে । উভয় পক্ষের বিশৃঙ্খলা ভেঙে দেওয়া সবচেয়ে ভাল সমাধান। এই ভদ্রলোকদের বৈধ দাবী ও চাহিদাও মেটানো উচিত এবং তাদেরকে ধর্মের দিক লক্ষ রেখে নিয়মিত অর্থের দাবিও করা উচিত।
👉 হামদ, না’ত ও বক্তব্য শোনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির যত্ন নেওয়া উচিত, অন্যথায় পুরষ্কারের পরিবর্তে পাপ অনিবার্য।
১) এমন না’ত বেছে নেওয়া উচিত যার বিষয় বস্তু সঠিক, শরীয়াত বিরোধী কোনও কথা তাতে না থাকে।
২) সুরের মাধ্যমে নাত ও হামদ পাঠ করা জায়েজ থাকলেও শর্তটি এই যে, পাঠ করার আন্দাজ প্রেমের (গানের) কবিতাগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়।
পাঠ করার আন্দাজ ও কণ্ঠ ফিতনার কারণ না হয় । আর এতে সংগীত (বাদ্যযন্ত্র) ব্যবহার একদম অবৈধ ও হারাম ।
৩) মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য নাত ও প্রশংসা আবৃত্তি করতে হবে। খ্যাতির জন্য করলে নিজের আখেরাতকে নষ্ট করা হবে। একইভাবে, পার্থিব উদ্দেশ্যে পড়া যেমন তার দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ানো এবং আর্থিক সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ইউটিউবে আপলোড করাও শরিয়তের মতে জায়েয নয়।
৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ ও সুন্নাত না মেনে নাত পাঠ করা এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
৫) নাত পাঠ করার পাশাপাশি নিখুঁত ভাবে শরীয়তের অন্যান্য আদেশও অনুসরণ করা দরকার। শুধু নাত পাঠ করা এবং তা লিপিবদ্ধ করা এবং জান্নাতে যাওয়ার উপায় হিসাবে লোকদের কাছে পাঠ করা বোকামি এবং ধর্ম থেকে দূরত্বের পরিচায়।
৬) বিশেষ করে কিছু শায়ের এমন পোশাক পরিধান করে যা দেখে মনে হয় আলকাপ গানের জোকার। সুন্নাতী পোশাক হওয়া উচিত।
৭) মঞ্চে বেশি জোকারী ও হাসা হাসি না হয়। নবীর দরবারে উঁচু আওয়াজে কথা বললে ঈমান চলে যায় যা ক্বোরআনে প্রমাণ। তাঁর মঞ্চে জোকারী, হাসা হাসি ও রং তামাশার সাহস কী করে হয়? আদব বজায় রাখা একান্ত জরুরী।

দোয়া প্রার্থীঃ
ইমামঃ পাঁচতলা জামে মসজিদ, কালিয়াচক, মালদা, পঃবঃ ভারত

 
Top