بسم الله الرحمن الرحيم
📒 نحمده و نصلي على رسوله الكريم أما بعد-📒

প্রিয় মুসলিম সমাজ! বিয়ের সময় কন্যা বা বরের শরীরে হলুদ লাগানো আমাদের দেশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রথা। প্রতিটি বিয়ের সময় বর ও কন্যা কে আনন্দ-উল্লাসের সহিত হলুদ লাগানোর প্রথাটি পালন করা হয়ে থাকে। তবে এই প্রথাটি শরীয়ত সম্মত কিনা? তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা হয় না। তাই আজকে আমরা এই প্রথা কে নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস অনুযায়ী পর্যালোচনা করব।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِهِ أَثَرُ صُفْرَةٍ فَسَأَلَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ قَالَ: ((كَمْ سُقْتَ إِلَيْهَا)). قَالَ زِنَةَ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ)). باب الصُّفْرَةِ لِلْمُتَزَوِّجِ:
অর্থাৎ! হযরত আনাস ইব্নু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, ‘আবদুর রহমান ইব্নু ‘আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে এমন অবস্থায় এলেন যে, তার সুফরার (হলুদ রং) চিহ্ন ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিহ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। ‘আবদুর রাহমান ইব্নু ‘আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার উত্তরে বললেন, তিনি এক আনসারী নারীকে বিয়ে করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কী পরিমাণ মাহর দিয়েছ? তিনি বললেন, আমি তাকে খেজুরের অাঁটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর একটি বকরী দিয়ে হলেও।
{{ সহিহ বুখারী হাদিস নং 5153 }}

حدثنا سليمان بن حرب حدثنا حماد- هو ابن زيد- عن ثابت عن أنس رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم رأى على عبد الرحمن بن عوف أثر صفرة قال: ما هذا ؟ قال: إني تزوجت امرأة على وزن نواة من ذهب. قال: ((بارك الله لك، أولم ولو بشاة)).
অর্থাৎ!! হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবদুর রহমান ইব্নু ‘আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর দেহে সুফ্রার (হলুদ রং) চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এটা কী? ‘আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এক মহিলাকে একটি খেজুরের অাঁটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার এ বিয়েতে বরকত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর।

{{ সহীহ বুখারী হাদিস নং-৫১৫৫,,
সুনানে দারেমী হাদিস নং 2250,,
সুনান ইবনু মা’জাহ হাদিস নং
সুনান নাসাঈ হাদিস নং 3372 }}

উপরোল্লিখিত হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, বিয়ের সময় কনে অথবা বরকে হলুদ লাগানো জায়েজ ও সাহাবীদের সুন্নত। তবে এই হলুদ লাগানোর প্রথাটি হতে হবে বিদা’আত, নাজায়েজ ও কুসংস্কার মুক্ত। কিন্তু আমাদের সমাজে প্রচলিত হলুদ লাগানোর প্রথা বিদ’আত ও কুসংস্কার মুক্ত আদৌ নয় বরং বহু নাজায়েজ ও কুসংস্কার কর্মকে যুক্ত করে আমাদের সমাজে এই প্রথাটি পালিত হয়।
যে সমস্ত নাজায়েজ কর্ম ও কুসংস্কার হলুদ লাগানোর প্রথার সঙ্গে যুক্ত, তন্মধ্যে কিছু নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১, গায়ের-মাহরাম নারী ও পুরুষের হলুদ লাগানোর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা।
২, এ সময় কন্যা ও বরের নামাজ থেকে বিরত থাকা।
৩, নানান ধরনের কুসংস্কার যুক্ত ও অপ্রয়োজনীয় বস্তু দিয়ে হলুদের ডালা অথবা থালা সাজানো।
৪, হলুদ লাগানোর জন্য বর ও কন্যার হলুদের পাতলা কাপড় পরিধান করা।
৫, বেপর্দা স্থানে সর্বসাধারণের সামনে হলুদ লাগানো।
৬, হলুদের অনুষ্ঠান চলাকালীন মহিলাদের গীত ও সংগীত গাওয়া।
৭, গায়ে হলুদ লাগানো অবস্থায় বর বা কন্যার জন্য বাড়ির বাইরে যাওয়া কে অমঙ্গল জানা।
৮, অমুসলিমদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করে কোন কাজ সম্পন্ন করা।
ইত্যাদি ইত্যাদি
এছাড়া আরো বহু কুসংস্কার, বিদআত ও নাজায়েজ কর্ম বিভিন্ন স্থানে এই হলুদ অনুষ্ঠানে পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং আমাদেরকে হলুদ অনুষ্ঠান কে শরীয়ত সম্মত করার উদ্দেশ্যে উপরোক্ত বর্জনীয় কর্মসমূহ পরিত্যাগ করতে হবে। যাতে আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সালামের সুন্নত ‘বিবাহ’ ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত ‘গায়ে হলুদ লাগানো’ এর সময় কোন নাজায়েজ ও হারাম কর্ম সম্পন্ন করে জাহান্নামের অধিকারী না হয়ে যাই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের কে সমস্ত নাজায়েজ ও হারাম কর্মসমূহ পরিত্যাগ করে সঠিক ও সুন্নত পদ্ধতি অনুযায়ী বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার শক্তি প্রদান করুন! আমীন!! বি-জাহি সাইয়েদিল মুরসালীন আলাইহিস সালাতু ওয়াত তাসলীম।

وما توفيقي الا بالله تبارك و تعالى

Top