যৌতুক প্রথা শিক্ষিত সমাজের জন্য অভিশাপ’ কেন?

بسم الله الرحمن الرحيم✳️
💫نحمده تبارك و تعالي و نصلي و نسلم على رسوله الاعلى أما بعد-💫
প্রিয় শিক্ষিত মুসলিম সমাজ!! আমরা সবাই অবগত বর্তমান যুগে কন্যা জন্মলাভ করার পরেই পিতার মাথায় কন্যা কে বিবাহ দেওয়ার সময় যৌতুকের প্রয়োজনীয়তা, ব্যবস্থা ও আয়োজনের কথা মাথায় চলে আসে। যেই মেয়ে এবং কন্যা সন্তান প্রসঙ্গে হাদিস শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে-
عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ أَخْبَرَهُ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ جَاءَتْنِي امْرَأَةٌ وَمَعَهَا ابْنَتَانِ لَهَا فَسَأَلَتْنِي فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي شَيْئًا غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا إِيَّاهَا فَأَخَذَتْهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا وَلَمْ تَأْكُلْ مِنْهَا شَيْئًا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ وَابْنَتَاهَا فَدَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَدَّثْتُهُ حَدِيثَهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((مَنِ ابْتُلِيَ مِنَ الْبَنَاتِ بِشَيْءٍ فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ))
. অর্থাৎ!! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় আমার নিকট এক মহিলা আসলো। সে সময় তার সাথে তার দুটি কন্যাও ছিল। সে আমার সমীপে কিছু চাইল। সে মাত্র একটি খেজুর ছাড়া আমার নিকট কিছু পেল না। আমি সে খেজুরটিই তার হাতে দিলাম। সে খেজুরটি নিয়েই তা তার দু’কন্যার মাঝে বন্টন করে দিল। নিজে তা হতে কিছুই খেলো না। তারপর সে এবং তার দু কন্যা উঠে চলে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলে তার সমীপে আমি ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে লোক মেয়ে সন্তান প্রতিপালনের পরীক্ষায় আপতিত হয় আর তাদের সাথে সে সদাচরণ করে, তাহলে তার জন্যে এরা জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-6862}}
{{ সুনানে তিরমিযী হাদিস নং-1915 }}
عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ كَانَ لَهُ ثَلاَثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ وَأَطْعَمَهُنَّ وَسَقَاهُنَّ وَكَسَاهُنَّ مِنْ جِدَتِهِ – كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏ ‏.‏
অর্থাৎ! উকবা ইবনে ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কারো তিনটি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করলে, যথাসাধ্য তাদের পানাহার করালে ও পোশাক-আশাক দিলে, তারা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম থেকে অন্তরায় হবে।
{{ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নং-3800 }}
{{ মুসনাদে হুমাইদী হাদিস নং-755 }}
{{ মুসনাদে আহমদ হাদিস নং-17403 }}
{{ আল-আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং-76 }}
{{ মুজমে কাবির তাবরানী হাদিস নং-826 }}
{{ শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী হাদিস নং-8317}}
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ مَا مِنْ رَجُلٍ تُدْرِكُ لَهُ ابْنَتَانِ فَيُحْسِنُ إِلَيْهِمَا مَا صَحِبَتَاهُ أَوْ صَحِبَهُمَا إِلاَّ أَدْخَلَتَاهُ الْجَنَّةَ ‏”‏ ‏.‏
অর্থাৎ!! ইবনে ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির দু’টি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করলে যত দিন তারা একত্রে বসবাস করবে, তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।
{{ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নং-3801 }}
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((مَنْ عَالَ ثَلاَثَ بَنَاتٍ فَأَدَّبَهُنَّ وَزَوَّجَهُنَّ وَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ فَلَهُ الْجَنَّةُ)).
অর্থাৎ!! আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করলো, তাদেরকে আদব শিক্ষা দিলো, বিয়ে দিলো এবং তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করলো, তার জন্য জান্নাত রয়েছে।
{{সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-«5149 }}
{{ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস নং-25434}}
{{ মুসনাদ আহমাদ হাদিস নং-11924 }}
عَنْ سُهَيْلٍ بِهَذَا الإِسْنَادِ بِمَعْنَاهُ قَالَ: ((ثَلاَثُ أَخَوَاتٍ أَوْ ثَلاَثُ بَنَاتٍ أَوْ بِنْتَانِ أَوْ أُخْتَانِ)).
অর্থাৎ!! সুহাইল রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তিনটি বোন অথবা তিনটি কন্যা অথবা দু’টি কন্যা অথবা দু’টি বোন হলেও।
{{ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-«5150 }}
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ اﻟﺨﺪﺭﻱ، ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ: ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻷﺣﺪﻛﻢ ﺛﻼﺙ ﺑﻨﺎﺕ ﺃﻭ ﺛﻼﺙ ﺃﺧﻮاﺕ ﻓﻴﺤﺴﻦ ﺇﻟﻴﻬﻦ ﺇﻻ ﺩﺧﻞ اﻟﺠﻨﺔ.
অর্থাৎ! আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যারই তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, সে তাদের সাথে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে জান্নাতে যাবে।
{{ সুনানে তিরমিজি হাদিস নং-1912 }}
{{ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস-25438 }}
{{ আল-আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং-79 }}
{{ শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী হাদিস নং-8309 }}
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَنِ ابْتُلِيَ بِشَيْءٍ مِنَ الْبَنَاتِ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏
অর্থাৎ!! আইশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  যে ব্যক্তি তার মেয়ে সন্তানদের জন্য কোনরকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয় (বিপদগ্ৰস্ত হয়), সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরলে তার জন্য তারা জাহান্নাম হতে আবরণ (প্রতিবন্ধক) হবে।
ইমাম তিরমিজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
এ হাদীসটি হাসান।
{{ সুনানে তিরমিযী শরীফ নং-2037 }}
উপরোক্ত হাদীস সমূহ হতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, কন্যার পিতা হওয়া অর্থাৎ জান্নাতের চাবি হাতে পাওয়ার সমতুল্য। সেই মেয়ের পিতা আজ কন্যাকে পেয়ে জান্নাত পাওয়ার আশা নয় বরং যৌতুকের আয়োজন ও ব্যবস্থা কিভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তায় চিন্তিত। বর্তমান শিক্ষিত সমাজ ভালো ভাবেই অবগত যে, প্রায় প্রতিদিন আমরা পেপার-পত্রিকায় যৌতুকের কারণে বিষপান করে আত্মহত্যা, শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্ম হত্যা করার কথা পড়তে থাকি। যৌতুকের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ করা, যৌতুকের কারণে নতুন বধূকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, যৌতুকের কারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া, যৌতুকের কারণে স্ত্রীর সম্ভ্রম নষ্ট করা, যৌতুকের কারণে স্ত্রীর অভিভাবকদের নানান ভাবে লাঞ্ছিত ও গালিগালাজ করার ব্যাপারটা একটা সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। তবে আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল, কি যৌতুক অর্থাৎ মেয়ের বাবার কাছ থেকে বিয়ের সময় যৌতুকের চুক্তি করে নেওয়া আদৌ কি বৈধ? যুক্তি যুক্ত ? এটা কি মানবিক আচরণ ?? এই ব্যবহারকে একজন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি গ্রহণ করতে পারেন?
উদাহরণস্বরূপ! আপনি ভাবুন, আপনি যেই পোশাকটি নিজের বলেন এবং পরিধান করে আছেন সেই পোশাকটি কোনো দোকানদারের কাছ থেকে ক্রয় করে সেটা ব্যবহার করছেন। আপনি কোনদিন কি ভেবেছেন যে, এই কাপড়টি আপনার ব্যবহারযোগ্য করার জন্য কতগুলো মানুষের মেহনত নিহিত আছে? হয়তো ভাবেননি। আসুন আমি আপনাদের কিছুটা বলি।
একটা কাপড় বানানোর জন্য প্রথমত এক প্রকারের পোকার প্রয়োজন হয়, সেই পোকা কে তুঁতের পাতা খাওয়ানো হয়, পোকা তুঁতের পাতা খেয়ে একটা বাসস্থান তৈরি করে এবং সেই বাসস্থান থেকেই মানুষ সুতা গুলোকে আলাদা করে নেয়, সুতা আলাদা করার পরে সেটা বড় ফ্যাক্টরিতে যায়, বড় ফ্যাক্টরিতে সেই সুতা কে কাপড়ে পরিণত করা হয়। আবার ওই কাপড় সেলাই মেশিনে যাওয়ার পর আপনার প্রয়োজনীয় এবং ব্যবহারযোগ্য পোশাক তৈরি করা হয়। অতঃপর সেটাকে গোডাউনে দিয়ে আসা হয়। গোডাউন থেকে হোলসেল দোকানে চলে আসে, হোলসেল দোকান থেকে আপনার পাশে থাকা দোকানে আসে, যে দোকান থেকে আপনি কাপড় ক্রয় করেছেন। এবার বলুন ওই কাপড় ক্রয় করার সময় যদি আপনি বলেন যে, দোকানদার ভাই! এই কাপড় টি আমার। কারণ আমার জন্যই কাপড় টি তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং আমাকে আমার কাপড় দিয়ে দিন তৎসঙ্গে আমাকে হাজার টাকাও দিয়ে দিন। তাহলে ওই দোকানদার আপনার সম্মান কিভাবে করবে? কি জুতা দিয়ে আপনাকে পিটাবে না? কি আপনাকে লাঞ্ছিত করবে না ? কি আপনাকে বোকা বা পাগল ভাববে না? কি আপনার কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে দোকান থেকে বের করে দিবে না? অবশ্যই দিবে। কারন, যেখানে ওই কাপড় কে আপনার উপযোগী করার জন্য এতগুলো মানুষ ও এতগুলো জিনিসের মেহনত ও খাটুনি নিহিত ছিল সেখানে আপনার উচিত ছিল, বা আপনার সদ্ব্যবহার তখন সেখানে সুস্পষ্ট এবং সঠিক প্রমাণিত হত যখন আপনি ভদ্র ভাবে কাপড়টাকে ক্রয় করতেন এবং কাপড়ের উচিত মূল্য প্রদান করে দোকানদারকে থ্যাংক ইউ অথবা শুকরিয়া জানিয়ে আপনি কাপড় বাড়িতে নিয়ে আসতেন এবং তা ব্যবহার করতেন। তদ্রুপ যে মেয়েকে আপনি নিজের স্ত্রী বলে দাবি করছেন, সেই মেয়েটি আপনার স্ত্রী হওয়ার যোগ্য এমনিতেই হয়নি। সেই মেয়েকে আপনার স্ত্রী হওয়ার উপযোগী ও উপযুক্ত করার জন্য অনেক মানুষের খাটুনি ও মেহনত নিহিত আছে। ওই স্ত্রীকে প্রায় দশ মাস আপনার শাশুড়ি পেটে ধারণ করেছেন, সেই মাসগুলোতে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন, বাচ্চা ভূমিষ্ঠ করার সময় অনেক ব্যথা বেদনা পেয়েছেন, বাচ্চা ভূমিষ্ঠ করার পর থেকেই তাকে লালনপালন এ নানান রকম কষ্ট, ব্যথা ও বেদনা সহ্য করেছেন, আপনার ওই স্ত্রী বাচ্চাকালে যদি বিছানায় পেশাব করেছেন তাহলে পেশাবের জায়গায় আপনার শাশুড়ি ঘুমিয়েছেন আপনার স্ত্রীর যেন কোন কষ্ট না হয় তাই তাকে শুকনো জায়গায় ঘুমাতে দিয়েছেন। সেই মেয়েকে আপনার উপযুক্ত করার জন্য আপনার শ্বশুর আব্বা অনেক মেহনত ও খাটুনি করে টাকা পয়সা ইনকাম করে তাকে ভালো ও সুশিক্ষা দিয়েছেন। তাকে দুনিয়া চলার জন্য যা প্রয়োজন তা কাকে প্রদান করেছেন। রাত্রের ঘুম হারাম করে জমিতে খাটুনি করেছেন শুধু আপনার স্ত্রীকে আপনার উপযুক্ত করে তোলার জন্য, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন দুপুরে কাজ করেছেন শুধু আপনার স্ত্রীকে আপনার উপযুক্ত করার জন্য। অনেক মানুষের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়েছেন শুধু আপনার স্ত্রীকে আপনার উপযুক্ত করার জন্য। আপনার ব্যবহারযোগ্য, উপযুক্ত ও উপযোগী করার জন্য আপনার শ্বশুর আব্বাকে অনেক দুঃখ‌, ব্যথা, বেদনা, জ্বালা, যন্ত্রণা ও কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে এবং অনেক মেহনত ও খাটুনি করতে হয়েছে। আপনার শ্বশুর আব্বা এসমস্ত দুঃখ, কষ্ট, মেহনত ও মজুরি করে আপনার স্ত্রীকে আপনার মত করে আপনার হাতে তুলে দিচ্ছেন সেই সময় যদি আপনি বলেন, শশুর আব্বা আমাকে আপনার কলিজার টুকরা ও আদরের কন্যা দেন এবং তৎসঙ্গে 10 লাখ, 5 লাখ বা দুই লাখ টাকাও দিতে হবে। তাহলে বলুন ওই শশুর আব্বা বা কন্যার বাবার হৃদয়ে কত বড় আগুন জ্বলবে, তার আত্মা কতটা কষ্ট পাবে, তার মন কতটা ভেঙ্গে পড়বে, তার হৃদয় কে কতটা আপনি ব্যতীত করবেন, এটা একবারও কি আপনি ভেবে দেখেছেন ? তাছাড়া এই কাজটি করে আপনি কি সেই ব্যক্তির ন্যায় হয়ে গেলেন না ? যে ব্যাক্তি দোকানদারকে গিয়ে বলেছিল যে, আমাকে আমার কাপড় দিন তৎসঙ্গে 1000 টাকাও দিয়ে দিন। কারণ পোশাকটাও আপনার এবং স্ত্রীও আপনার । পোশাক নেওয়ার সময় যদি টাকা দিতে হয় তাহলে স্ত্রীকে নেওয়ার সময়ো আপনাকে টাকা দিতে হবে। পোশাক নেওয়ার সময় যে টাকা দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় মূল্য। কিন্তুু স্ত্রীকে নেওয়ার সময় যেই টাকাটা দেওয়া হয়, সেই টাকাকে ইসলাম শরীয়তে বলা হয় ‘মোহরানা’ । এইজন্য মোহরানা দেওয়া হল আবশ্যিক। আর যদি সেখানে মোহরানার দিকে লক্ষ না করে আপনি যৌতুকের দিকে দৃষ্টিপাত করেন তাহলে, আপনাকে এই দুনিয়াতে যদিও লাঞ্ছিত না করা হয়, বঞ্চিত না করা হয়, অপমানিত না করা হয় ও আপনার কলার ধরে ধাক্কা না দেওয়া হয়। কিন্তু ইন্তেকাল করার পর অবশ্যই আল্লাহ তাআলা এক কন্যার পিতা কে লাঞ্ছিত করার কারণে এবং তার সমস্ত মেহনত ও খাটুনি কে ধুলিস্যাৎ করার কারণে, তার সমস্ত মেহনতের উচিত মূল্য না দেওয়ার কারণে অবশ্যই আপনাকে ধাক্কা দিয়ে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে, আপনাকে জাহান্নামে লাঞ্ছিত করা হবে, জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হবে। তাই মরনের সময় আসার আগেই শশুর আব্বার কাছে মাফ চেয়ে নিন এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে বিনয়ের সহিত তওবা করে নিন। আর প্রতিজ্ঞা করুন, না আপনি যৌতুক নিবেন আর না আপনার সন্তানাদি যৌতুকের কোন চুক্তি করবে। আপনাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যে, আমি যৌতুকের কথা মুখেই আনব না, বিনা যৌতুক চুক্তি করেই ছেলের, নিজের ভাইয়ের, নিজের চাচার এবং নিজের বিবাহ করব ও দেব। আর এর উপর আমল করলে সমাজ তখনই সত্তিকারের আলোর মুখ দেখতে সক্ষম হবে, কন্যা সন্তান অথবা মহিলাদের কে তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এবং পেপার-পত্রিকায় যে সমস্ত দুর্ঘটনা পড়ে মানুষ ব্যথায় ব্যথিত হয় সে সমস্ত ঘটনা আর ছাপানোর প্রয়োজন পড়বে না।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান সময়ে যৌতুক প্রথা কে বেশি হাওয়া দিচ্ছে শিক্ষিত সমাজেই। কারণ যারা যত বেশি শিক্ষিত তারা ততটাই বশি যৌতুক চুক্তি করছে অথবা যৌতুক পাওয়ার আশা রাখছে। আমার হৃদয় বলে, যদি শিক্ষিত সমাজ এ প্রসঙ্গে সচেতন হয় তাহলে, যৌতুক প্রথা কে সমাজ থেকে তুলে দিতে আমরা খুব সহজভাবেই সক্ষম হব।।
হ্যাঁ! যদি কন্যার পিতা স্বেচ্ছায় সাধ্য মোতাবেক কোন জিনিস কন্যা অথবা জামাইকে উপহারস্বরূপ প্রদান করে তাহলে তা গ্রহণ করা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সুন্নত। কারণ হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার বিয়েতেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কিছু জিনিস প্রদান করেছিলেন যা নিম্নের হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়।
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ جَهَّزَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ فِي خَمِيلٍ وَقِرْبَةٍ وَوِسَادَةٍ حَشْوُهَا إِذْخِرٌ
অর্থাৎ! আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে যাহিয দান করেছিলেন- একখানা চাদর। একটা পানির পাত্ৰ (মশক) আর একটা বালিশ, যার ভিতরে ছিল ইযখির নামক তৃণ।
{{ সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-3384 }}
{{ সুনানে কুবরা নাসাঈ হাদিস নং-5546 }}
{{ মুসনাদে আহমদ হাদিস নং-643}}
{{সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং-6947 }}
{{ মুস্তাদরাক হাকিম হাদিস নং-2755 }}
{{ শারহুস সুন্নাহ হাদিস নং-4050 }}
{{ আত তারগীব মুনযিরী হাদিস নং-4998 }}
(( ইমাম হাকিম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, ﻫﺬا ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ اﻹﺳﻨﺎﺩ، অর্থাৎ হাদীসটি সহীহ ও বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে))
🤲 আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম শিক্ষিত ভাইদের যৌতুক প্রথা বিলুপ্ত করার এবং সমাজকে যৌতুক মুক্ত করার শক্তি প্রদান করুন!! আমীন!! বি-জাহি সাইয়্যেদিল মুরসালীন আলাইহিস্ব স্বালাতু ওয়াত তাসলিম।
💘وما توفيقي الا بالله العلي العظيم و صلى الله علي حبيبه الكريم💘
Top