💘بسم الله الرحمن الرحيم 💘
نحمدك يا الله والصلاة والسلام عليك يا رسول الله
💞প্রিয় মুসলিম সমাজ! বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ইসলাম শরীয়তের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম ও পুণ্যের কাজ। কারণ এটা নবীগণের সুন্নত ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। অতএব কোন ব্যক্তি যদি মনে করেন, বিবাহ না করে শুধু আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে জীবন অতিবাহিত করব তাহলে তা তার ভুল সিদ্ধান্ত হবে। কারণ নফল ইবাদতে মগ্ন হওয়া অপেক্ষা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও পুণ্যের কাজ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর বিভিন্ন হাদিস সমূহ হতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বিবাহ করে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা এবং তাদের দেখভাল করাটা সদকার মধ্যে গণ্য হয়। তাই কেউ যদি এই বিবাহকে পরিত্যাগ করার উদ্দেশ্য রাখে অথবা যৌন শক্তি কমানোর জন্য খাসি হয়ে যায় তাহলে তা ইসলাম শরীয়তে অপরাধ বলে গণ্য হবে। আসুন আমরা এই মর্মে কয়েকটি হাদিস শ্রবণ করি, যাহাতে বিষয়টি আপনাদের সম্মুখে সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَعْضُهُمْ لَا أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَا آكُلُ اللَّحْمَ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَا أَنَامُ عَلَى فِرَاشٍ وَقَالَ بَعْضُهُمْ أَصُومُ فَلَا أُفْطِرُ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ مَا بَالُ أَقْوَامٍ يَقُولُونَ كَذَا وَكَذَا لَكِنِّي أُصَلِّي وَأَنَامُ وَأَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
অর্থাৎ! আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাহাবায়ে কিরাম এর একদলের কেউ কেউ বললোঃ আমি স্ত্রী গ্রহণ করবো না, কেউ বললেনঃ আমি আহার করবো না। আর কেউ বললোঃ আমি বিছানায় শয়ন করবো না। আবার কেউ বললো এমন রোযা রাখব, আর কখনও রোযা ভঙ্গ করবো না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শ্রবণ করে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেনঃ এ সকল দলের কি হলো-যারা এমন এমন কথা বলে! কিন্তু আমি (রাত্রির) কিছু অংশে নামায পড়ি, আবার নিদ্রা যাই; রোযা রাখি আবার রোযা ভঙ্গ করি এবং স্ত্রী গ্রহণ করি, যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।
{{ সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-3230 }}
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-«3469 }}
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ كُنَّا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلَيْسَ لَنَا شَىْءٌ فَقُلْنَا أَلاَ نَسْتَخْصِي فَنَهَانَا عَنْ ذَلِكَ
অর্থাৎ! আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বললাম, আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন।
{{ সহীহ বুখারী হাদিস নং-5075 }}
سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، أَنَّهُ سَمِعَ سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقَّاصٍ، يَقُولُ أَرَادَ عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُونٍ أَنْ يَتَبَتَّلَ، فَنَهَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلَوْ أَجَازَ لَهُ ذَلِكَ لاَخْتَصَيْنَا ‏.‏
অর্থাৎ! সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বলতে শুনেছেন, উসমান ইবনু মাযউন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৌমাৰ্যব্রত অবলম্বনের প্রস্তাব করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (তা করতে) নিষেধ করে দেন। তিনি যদি তাকে অনুমতি দিতেন তবে অবশ্যই আমরা নিজেদের খোজা করে নিতাম।
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-3472 }}
{{ সহীহ বুখারী হাদিস নং-5074 }}
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا، يَقُولُ رُدَّ عَلَى عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُونٍ التَّبَتُّلُ وَلَوْ أُذِنَ لَهُ لاَخْتَصَيْنَا ‏.‏
অর্থাৎ! সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সা’দ (ইবনু আবূ ওয়াক্কাস) কে বলতে শুনেছি- উসমান ইবনু মায’উন এর কৌমাৰ্যব্রত অবলম্বনের প্রস্তাব (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক) প্রত্যাখ্যাত হয়। তাকে অনুমতি দেয়া হলে আমরা অবশ্যই নিজেদের খোজা করে নিতাম।
{{ সহীহ বুখারী হাদিস নং-5073 }}
{{ সুনানে তিরমিযী হাদিস নং-1106}}
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-3471 }}
{{ সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-3225 }}
{{ সুনানে দখরেমী হাদিস নং-2206 }}
{{ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নং-1921 }}
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ التَّبَتُّلِ
অর্থাৎ! আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চির কৌমার্য হতে নিষেধ করেছেন।
{{ সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-3226 }}
{{ সুনানে দারেমী হাদিস নং-2207.}}
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي رَجُلٌ شَابٌّ قَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِيَ الْعَنَتَ وَلَا أَجِدُ طَوْلًا أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ أَفَأَخْتَصِي فَأَعْرَضَ عَنْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى قَالَ ثَلَاثًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا أَنْتَ لَاقٍ فَاخْتَصِ عَلَى ذَلِكَ أَوْ دَعْ
অর্থাৎ! আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একজন যুবক ব্যক্তি। আমি ব্যভিচারের ভয় করি, আমার ব্যাপারে। অথচ বিবাহের খরচ বহনের সামর্থ্যও আমার নেই। আমি কি খাসি হয়ে যাব? একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনবার এমন জিজ্ঞাসা করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! তোমার ভবিষ্যৎ কর্ম সম্বন্ধে লিখিত হয়ে গেছে, এখন তুমি ইচ্ছা হয়, খাসি হতে পার বা তা পরিত্যাগ করতে পার।
{{ সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-3228 }}
{{ সহীহ বুখারী হাদিস নং-5076 }}
عَنْ سَعْدِ بْنِ هِشَامٍ أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ عَائِشَةَ قَالَ قُلْتُ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَسْأَلَكِ عَنْ التَّبَتُّلِ فَمَا تَرَيْنَ فِيهِ قَالَتْ فَلَا تَفْعَلْ أَمَا سَمِعْتَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً فَلَا تَتَبَتَّلْ
অর্থাৎ! সা’দ ইবন হিশাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ আমি আপনাকে কৌমার্য সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেনঃ তা করো না। তুমি কি শ্রবণ করনি যে, আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
অর্থঃ আর আমি আপনার পূর্বেও অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে ছিলাম। (সূরা আর-রা’দঃ ৩৮)।
{{ সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-3229 }}
عَنْ سَمُرَةَ. أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ التَّبَتُّلِ. زَادَ زَيْدُ بْنُ أَخْزَمَ وَقَرَأَ قَتَادَةُ: {وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً}.
অর্থাৎ! সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম চির কৌমার্য হতে নিষেধ করেছেন। হযরত যায়েদ বিন আখযাম বলেন, কাতাদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এই আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন-
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
অর্থঃ আর আমি আপনার পূর্বেও অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে ছিলাম। (সূরা আর-রা’দঃ ৩৮)।
{{ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস-1922 }}
{{ সুনানে তিরমিযী হাদিস নং-1105 }}
💗সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরোল্লিখিত হাদীসসমূহ হতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম শরীয়তে যৌন শক্তি কমানোর জন্য খাসি হয়ে যাওয়া অথবা চিরকুমার থাকা নিষিদ্ধ। অতএব কেউ যদি মনে করে, বিয়ে না করে আমি নফল ইবাদত দ্বারা জীবন অতিবাহিত করব তাহলে তা তার ভুল সিদ্ধান্ত হবে। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হলো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সন্তান সন্ততি লালন পালন করা ও তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আল্লাহর এবাদতের দিকে ধাবিত করা। আল্লাহ তাআলা সকল ভাই বোনদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নত পালনের মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করার শক্তি প্রদান করুন!! আমিন বি-জাহি সাইয়েদিল মুরসালীন আলাইহিস্ব স্বালাতু ওয়াত তাসলিম।
💎وما توفيقي الا بالله العلي العظيم 💎
🌍 কুশমন্ডি, জেলা দক্ষিন দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 🌍
 
Top