▪ কিতাবঃ নূরে মুজাচ্ছাম (ﷺ)
▪ লেখক, সংকলকঃ মুফতি মােহাম্মদ আলাউদ্দিন জেহাদী
▪ Text Ready : Masum Billah Sunny

কলম নাকি প্রথম সৃষ্টি?


যেমনঃ

♣ হজরত উবাদা ইবনে ছামিত (রাঃ) থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত আছে,

-“নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা সর্বপ্রথম 'কলম' সৃষ্টি করেছেন। তারপর কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল: হে প্রভূ! কি লিখবাে? আল্লাহ বললেন: লিখ ইতােপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।”

Reference :

★ মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালছী, হাদিস নং ৫৭৮;

★ মুসনাদে ইবনে জা'দ, হাদিস, ৩৪৪৪;

★ মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২২৭০৭;

★ তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ২১৫৫)

হাদিসের মানঃ সনদ ছহীহ।

এই হাদিসের প্রথম অংশটি দ্বারা বুঝা যায় প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে কলম’ কিন্তু শেষে অংশটি দ্বারা বুঝা যায় কলম' প্রথম সৃষ্টি নয়। কারণ আল্লাহ তা'য়ালা কলমকে বলেছেন:

“আল্লাহ বললেন: লিখ ইতােপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।” এই এবারত দ্বারা বুঝা যায়, কলম সৃষ্টির পূর্বেও অনেক কিছু ছিল। কারণ এখানে (মা কানা) দ্বারা অতীতকালের ঘটনা বুঝায়। এখানে 'কলম' প্রথম সৃষ্টি ইহা কলমের সম্মানার্থে বলা হয়েছে, মূলত প্রথম সৃষ্টি কলম' নয়।

এখন জানতে হবে কলম' সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ পাক কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন।


কলমের পূর্বে কি সৃষ্টি?

♣ ছহীহ্ রেওয়াত দ্বারা স্পষ্ট জানা যায়, কলম সৃষ্টি হওয়া বহু পূর্বে আল্লাহর আরশ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ছহীহ হাদিসে আছেঃ


دين أبو الطاهر أحمد بن عمرو بن عبد الله بن بزح، حدثنا ابن وهب، أخبرني أبو

شول الله

و الخولاني، عن أبي عبد الرحمن الحبلي، عن عبد الله بن عمرو أ

الله عليه وسلم قال إ الله در مقادير الخلق بل أن يخلق السموات

والارض منيين ألف سنة كان عرشه على الماء

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:

- নিশ্চয় আল্লাহ পাক তাকদীর সৃষ্টি করেছেন

- আসমান সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে",

- আর তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপরে।"

Reference :

★ ছহীহ মুসলীম, হাদিস নং ২৬৫৩;

★ তাফছিরে ইবনে কাছির, ৩য় খন্ড, ৪৬৩ পৃ:,

★ ইমাম খারকুশী: শরফুল মুস্তফা, ১ম খন্ড, ৩১০ পৃঃ।

এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়,

→ কলম দ্বারা লিখিত ‘"তাকদীর" সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বেও "আল্লাহর আরশ" পানির" উপর ছিল। বিষয়টি স্পষ্টত যে,

→ কলমের পূর্বে আল্লাহর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব, চূড়ান্তভাবে বলা যায়, আরশ সৃষ্টি হয়েছে কলমের পূর্বে। এর সমাধান কল্পে -

♣ শারহে বুখারী আল্লামা ইমাম কুস্তালানী (রহঃ) (ওফাত ৯২৩ হিজরী) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,

-“হাফিজ আবু ইয়ালা হামদানী (রহঃ) বলেন: অধিক বিশুদ্ধ মত হল,

- আল্লাহর আরশ সৃষ্টি হয় কলম সৃষ্টির পূর্বে। যেমনটি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে ছহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ পাক তাকদীর সৃষ্টি করেছেনে আসমান-জমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে, আর তখন ‘আরশ' ছিল পানির উপরে।”

★ (ইমাম কুস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৪৮ পৃঃ)

সুতরাং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দৃষ্টিতে কলমের পূর্বে আল্লাহর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে ইহাই বিশুদ্ধ অভিমত।


আকল প্রথম সৃষ্টি হওয়ার হাদিস কেমন?


কারাে কারাে দাবী সর্ব প্রথম আল্লাহ আকল সৃষ্টি করেছেন। তাদের এই দাবী যথার্থ নয়। কারণ আকল সৃষ্টির ব্যাপারে হাদিসটি জয়ীফ কিংবা জাল পর্যায়ের হাদিস দ্বারা জানা যায় ।

-“আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম ‘আকল' বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন।”

♣ এই রেওয়াত সম্পর্কে আল্লামা হাফিজ যায়নুদ্দিন ইরাকী তদীয় (‘তাখরিজে ইহইয়াউল উলুম) গ্রন্থে বলেন,

-"এর প্রত্যেকটি সনদই দ্বয়ীফ।"

★ ইমাম আজনী: কাশফুল খাফা, ১ম খন্ড, ২৩৭ পৃ: ৭২২ নং হাদিসের হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিছিল ইহুইয়া, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃঃ)

♣ “আল্লামা ছাগানী (রহঃ) বলেন,

"সর্বসম্মতিক্রতে এই হাদিস জাল।”

★ (ইমাম আলুনী: কাশফুল খাফা, ১ম খন ২৬৩ পৃ: ৮২৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)

♣ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) উল্লেখ করেন:- -“দাউদ ইবনে মুহাব্বার ইহা বর্ণনা করেছেন।"

♣ ইমাম ছাখাবী (রহঃ) বলেন:

-"ইবনে মুহাব্বার একজন মিথ্যাবাদী রাবী।"

★ ইমাম মােল্লা আলী: আসরারুল মারফুআহ, ১০৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;

★ ইমাম সাখাবী: মাকাছিদুল হাসানা, হাদিস নং ২৩৩ এর ব্যাখ্যায়।

♣ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) বলেন:

“মিথ্যাবাদী ইবনে মুহাব্বারই উল্লেখ করেছেন।”

★ (ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) আলি লাআলী মাসনূআ, ১ম খন্ড, ১৯৯ পৃঃ)

অতএব, এই হাদিস মওজু বা ভিত্তিহীন বা জাল হাদিস।


♣ এ বিষয়ে হিজরী ৮ম শতাব্দির মােজাদ্দিদ, শারিহে বুখারী আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) (ওফাত ৮৫২ হিজরী} সবচেয়ে সুন্দর কথা বলেছেন,

"প্রথম সৃষ্টির বিষয়ে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা'য়ালা প্রথমে আকল সৃষ্টি করেছেন এই হাদিস থেকে ‘আল্লাহ তায়ালা প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন এই হাদিস অধিক প্রমাণিত।”

Reference :
★ ইমাম মােল্লা আলী কারী : আল-মাজুয়াতুল কুবরা, হাদিস নং ১০৭;
★ শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহেব : ৬খন্ড, ১৫ পৃ
★ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ফাতহুল বারী, ৩১৯০ নং হাদিসের ব্যাখ্যা;
★ ইমাম সাখাবী : মাকাছিদুল হাসানা, হাদিস নং ২৩৩ এর ব্যাখ্যায়)।

অতএব, আকল' বা জ্ঞান প্রথম বৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি গ্রহণযােগ্য নয়। 
বরং ছহীহ হাদিস থেকে জানা যায়, কলম প্রথম সৃষ্টি, তবে কলম সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর আরশ।


আল্লাহর আরশ সৃষ্টির পূর্বে কি সৃষ্টি হয়েছে?


এখন জানতে হবে আল্লাহর আরশ সৃষ্টির পূর্বে কি সৃষ্টি হয়েছে।

♣ এ বিষয়ে একটি রেওয়াত উল্লেখযােগ্য,

حدثنا موسی بن هارون الهمداني، قال: حدثنا عمرو بن حماد، قال: حدثنا أسباط بن نصر، عن السدي في خير ذكره، عن أبي مالك وعن أبي صالح، عن ابن عباس وعن مرة الهمداني عن عبد الله بن مسعود وعن ناس من اصحاب رسول الله ص قالوا: إضى الله ع وجل كان عرشه على الماء، ولم يخلق شيئا غير ما خلق قبل
-“হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হামদানীর এক ব্যক্তি হজরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও রাসূল
 (ﷺ) এর একদল সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন, 
তারা সকলেই বর্ণনা করেছেন: 
-"নিশ্চয় আল্লাহ তা'লার আরশ পানির উপর ছিল। 
- আর পানি সৃষ্টি করার পূর্বে কোন কিছুই সৃষ্টি করেননি।” 

★ (ইমাম ইবনে জারির আত-তাবারী: তারিখে তাবারী, ১ম খন্ড, ৩৯ পৃঃ)

সুতরাং স্পষ্ট হয়ে গেল আল্লাহর আরশের পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে পানি। 
আর তখন আরশ ছিল পানির উপর ভাসমান অবস্থায়।

♣ যেমন এ বিষয়ে আল্লামা আবু জাফর তাবারী (রহঃ) {ওফাত ৩১০ হিজরী) তদীয় কিতাবে আরাে উল্লেখ করেন,

-“আল্লাহ তায়ালা আরশের পূর্বে পানি সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশ সৃষ্টি করে পানির উপর রাখলেন।" 
★ (ইমাম ইবনে আবিরঃ তারিখে তাবারী, ১ম খন্ড, ৩৯ পৃ)

সুতরাং এই পর্যন্ত পানিই হল প্রথম সৃষ্টি যা আল্লাহর আরশের পূর্বে সৃষ্টি করা হয়। কারণ 
- পানি আল্লাহর আরশ ও কলমেরও পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন জানতে হবে পানির পূর্বে কি সৃষ্টি হয়েছে।

কলম, অরিশ বা পানি প্রথম সৃষ্টি নাকি প্রিয় নবীজি প্রথম সৃষ্টি?


♣ এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর বক্তব্য শুনুন,

-“হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: তখন তার সন্তানদেরকে দেখালেন, ফলে তিনি পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরিক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে তিনি একটি অতি উজ্জল নূর দেখালেন। অত:পর আদম (আঃ) বললেন: ওহে রব! এই নূর কে? আল্লাহ তা'য়ালা বলেন: তিনি আপনার পুত্র আহমদ (ﷺ) তিনিই প্রথম সৃষ্টি, তিনিই শেষ (নবী), তিনিই প্রথম শাফায়াতকারী ও তাঁরই শাফায়াত প্রথম কবুল করা হবে।"
Reference :
★ ইমাম বায়হাক্বী : দালায়েলুনবুয়াত, ৫ম খন্ড, ৪৮৩ পৃ: হাদিস নং ২২১৮
★ হাদিসু সিরাজ : হাদিস নং ২৬২৮;
★ ইমাম খারকুশী : শরফুল মুস্তফা, ১ম খন্ড, ৩০৯ পৃঃ
★ ইমাম হিন্দী : কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩২০৫৩ ও ৩২০৫৬;
★'ইমাম সুয়ূ়তী : খাছাইছুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১০২ পৃঃ;
★ মুখলেছিয়াত, হাদিস নং ২৩৪০
★ এই হাদিস সম্পর্কে নাছিরুদ্দিন আলবানী তার কিতাবে বলেন:
(আলবানী) বলছি: এই হাদিসের সনদ হাসান, ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (রহঃ) এর বর্ণনাকারী।”
★ আলবানী: সিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ৬৪৮২ ।

এই হাদিসের সনদটি হচ্ছে:-

উক্ত হাদিসের সনদঃ এই হাদিসের রাবী

- ‘হাফছ ইবনে আছেম,
- খুবাইব ইবনে আব্দুর রহমান,
- উবাইদুল্লাহ ইবনে উমার,
- হাব্বান ইবনে হিলাল’ বুখারী-মুসলীমের রাবী।
- বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ছাকান' ছহীহ্ বুখারীর রাবী ও বিশ্বস্ত।
- বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ছাকাফী' সম্পর্কেঃ


♣ ইমাম ছাখাভী (রহঃ) উল্লেখ করেন, ইমাম আবু হাতিম (রহঃ) বলেছেন:
“সে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।”
★ ছাখাভী (রহঃ) : ছিকাত মিম্বান লা ইয়াকায়া ফি কুতুবে ছিত্তাহ, রাবী নং ৯৪৩০

♣ ইমাম খালিলী (রহঃ) বলেন: 
-“সে সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্বস্ত।”
★ ছাখাভী: ছ্বিকাত মিম্বান লা ইয়াকায়া ফি কুতুবে ছিত্তাহ, রাবী নং ৯৪৩০

♣ বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খালিল ইবনে আহমদ' সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন,
"তাঁর বর্ণিত হাদিস উঁচু পর্যায়ের।"
★ ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩২৬;
★ ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আলামিন নুবালা, রাবী নং ৩২৩

♣ বর্ণনাকারী আবুল হাছান আলী ইবনে আহমদ মুকরী ইমাম বায়হাক্বীর শায়েখ ও প্রসিদ্ধ বিশ্বস্ত রাবী।

♣ এই হাদিসের সনদে মুবারক ইবনে ফাদ্বালাহ' নামক রাবী সম্পর্কে কেউ কেউ অযথা ভূয়া আপত্তি তুলেন। অথচ ইমামগণ তাকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযােগ্য বলেছেন।
যেমন হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) তার ব্যাপারে বলেছেন:
-“ইবনে আবী হায়ছামা ইমাম ইবনে মাঈন (রহঃ) বর্ণনা করেন,
"সে বিশ্বস্ত।"

♣ মুহাম্মদ ইবনে উছমান ইবনে আবী শায়বাহ ইমাম ইবনে মাদানী (রহঃ) বলেন, থেকে বলেন, "সে গ্রহণযােগ্য ও মধ্যম।"
♣ ইমাম আজলী , বলেন: "তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।"

♣ ইমাম আবু যুরাআ (রহঃ) বলেন,
"তার অনেক তাদীস রয়েছে তবে যখন হাদ্দাছানা' বলবে তখন বিশ্বস্ত প্রমাণিত বুঝাবে।"

♣ ইমাম আজরী ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) : বলেন:
"যখন সে হাদ্দাছানা বলবে তখন ঐ হাদিস প্রমাণিত বুঝাবে।"
★ (ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৫০)

♣ ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী উল্লেখ করেন,
وقال ابن معين: صالح الحديث. وقد استشهد به البخاري
-“ইমাম ইবনে মাঈন (রহঃ) বলেন: সে গ্রহণযােগ্য।
- ইমাম বুখারী (রহঃ) তার ব্যাপারে ভাল সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।”
★ (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৪/৪৮৮, রাবী নং ৩৩৭)

♣ ইমাম ইবনে মাদিনী (রহঃ) বলেন:


♣ আমি আবু ওয়ালিদ তায়ালিছী কে বলতে শুনেছি: শাইমানকে বলতে শুনেছি,

"মুবারক ইবনে ফাঘালাহ' বিশ্বস্ত।"

♣ ইমাম হাকেম তার মুস্তাদরাক' গ্রন্থে তার থেকে রেওয়াত বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন: সে বিশ্বস্ত। ইমাম আবুল হাছান আজলী (রহঃ) বলেন তার হাদিস লিখি সে জায়েযুল হাদিস। ইমাম ইবনে শাহিন (রহঃ) তাকে বিশশুদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” ★ (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৪১১).

♣ ইমাম মিযী (রহঃ) উল্লেখ করেন,

♣ ইমাম মুগলতাঈ (রহঃ) উল্লেখ করেন,

♣ “মুফাদাল ইবনে গাচ্ছান গালাবী ইমাম ইবনে মাঈন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন:
"রবিঈ ইবনে ছাবে এবং মুবারক ইবনে ফাদ্বালাহ দুজনই গ্রহণযােগ্য বান্দা ছিল।"
♣ ইমাম আবু বকর ইবনে আবী হায়ছামা বলেন,

♣ আমি ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহঃ) কে বলতে শুনেছি:

"তাকে মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বলেন: সে দুর্বল, আরেকবার তিনি বলেন: সে বিশ্বস্ত।"

♣ মুয়াবিয়াহ ইবনে ছালেহ্ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহঃ) থেকে বলেন, "তার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই।"

♣ মুহাম্মদ ইবনে উছমান ইবনে আবী শায়বাহ্ আরেক জায়গায় বলেন: আলী ইবনে মাদানী (রহঃ) এর ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি বলেন:
"সে গ্রহণযােগ্য ও মধ্যম।"

♣ ইমাম আবু যুরাআ (রহঃ) বলেন: তার অনেক তাদীছ রয়েছে তবে যখন সে যখন হাদ্দাছানা' বলেন তখন সে বিশ্বস্ত।

♣ ইমাম আবু হাতিম (রহঃ) বলেন: সে আমার কাছে রবিঈ ইবনে ছাবিহু এর চেয়ে
অধিক প্রিয়।"
★ (ইমাম মিযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৫৭৬৬)


♣ ইমাম হাকেম নিছাপুরী (রহঃ) তদীয় মুস্তাদরাক' কিতাবে বহু স্থানে তার রেওয়াতকে ছহীহ্ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী (রহঃ) একমত পােষণ করেছেন,

অতএব, এই হাদিস নির্ভরযােগ্য ও ছহীহ।


ইমাম আবুল আব্বাস মুহাম্মদ ইবনে ইবনে ইসহাক ইবনে ইব্রাহিম সিরাজ (রহঃ) ওফাত ৩১৩ হিজরী এর সনদটি আরাে সংক্ষিপ্ত। যেমন:

حدثنا أبو عبيد الله يحيى بن محمد بن السكن، ثنا تبان بن ملال، ثنا مبارك بن قضالة، حدثني عبيد الله بن عمر، عن خبيب بن عبد الرحمن، عن حفص بن عاصم، عن أبي هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ...

♣ আবু উবাইদুল্লাহ ইয়াহইয়া ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ছাকান

♣ হাব্বান ইবনে হিলাল

♣ মুবারক ইবনে ফালা

♣ উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর

♣ হুবাইব ইবনে আব্দুর রহমান

♣ হাফছ ইবনে আছেম

♣ আবী হুরায়রা (রাঃ) নবী করিম (ﷺ) থেকে...।”

★ (হাদিসু সিরাজ, হাদিস নং ২৬২৮)


সুতরাং, এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট করে প্রমাণিত হয়, রাসূলে করিম (ﷺ) সৃষ্টির প্রথম এবং আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে তিনি নৃর অবস্থায় ছিলেন। অতএব রাসূলে করিম (ﷺ) আদম (আঃ) সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন। কারণ মাটির তৈরী সর্বপ্রথম মানব হলেন হজরত আদম (আঃ)।

♣ এ জন্যেই হাফিজ আবুল ফারাজ ইবনে জাওযী (রহঃ) (ওফাত ৫৯৭ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেন:

ولما خلق الله ادم عليه السلام رظهر نوره واسمه مكتوب على ساق العرش مطرا


-“যখন আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন তখন নবী পাক (ﷺ) এর নূরকে প্রকাশ করলেন এবং প্রিয় নবীজির নাম আরশের খুটিতে উজ্জ্বল রূপে লিখে ছিলেন।”

★ (ইমাম ইবনে জাওযী: মাওলিদুন নববী শরীফ, ২৪ পৃঃ)

♣ এ সম্পর্কে ইমাম ইবনে সাদ (রহঃ) ও বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ্, আল্লামা আবুল ফজল হাফিজ ইবনে কাছির (রহঃ) (ওফাত ৭৭৪ হি.} উল্লেখ করেন:

হাদিসটি হলঃ

হজরত কাতাদা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ

أخبرنا عبد الوهاب بن عطاء عن سعيد بن أبي عروبة عن قتادة قال: أخبرنا عمر بن عاصم الكلابي. اخبرنا أبو ملال عن قتادة قال قال رسول الله گن أول الاس في الخلق وآخرهم في البغي


"সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।”

Reference :

★ ইমাম ইবনে সাদ: তাবাকাতে কোবরা, ১ম খন্ড, ১১৯ পৃ:
★ ইমাম ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃ:,
★ ইমাম খারকুশী: শরফুল মােস্তফা, ২য় খন্ড, ৭২ পৃ:
★ ইমাম কাজী আয়ায : শিফা শরীফ, ১ম খন্ড, ১১৪ পৃ:
★ বাহজাতুল মাহফিল, ১ম খন্ড, ১৩ পৃঃ
★ ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৪২ পৃ:
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব লিয যুকানী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃঃ
★ ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১০ম খন্ড, ২৭৪ পৃঃ
★ ইমাম মােল্লা আলী: শরহে শিফা, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃঃ

হাদিসটির সনদ মান পর্যালোচনাঃ

♣ এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: -“এই হাদিসটি প্রমাণিত ও অধিক ছহীহ্।”

★ (হাফিজ ইবনে কাছির: আল মায়া ওয়ন নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃঃ)

হজরত কাতাদা (রাঃ) থেকে দুইটি ধারায় হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। যেমন প্রথমটি হল:-

সূত্র ১ :
♣ তাবেঈ হযরত কাতাদা (রাঃ)

♣ সাঈদ ইবনে আবী উরওয়া

♣ আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবনে আত্বা।

সূত্র ২ :

♣ তাবেঈ হযরত কাতাদা (রাঃ)

♣ আবু হিলাল

♣ উমর ইবনে আছেম।
দুইটি সূত্রই শক্তিশালী। বর্ণনাকারী তাবেঈ কাতাদা (রাঃ) তাে নিজেই সু-প্ৰসিদ্ধ তাবেঈ ও বিশ্বস্ত বুখারী-মুসলীমের রাবী।

♣ আবু হিলাল’ এর মূল নাম হল (মুহাম্মদ ইবনে সুলাইম রাছেবী) তার ব্যাপারে একদল ইমাম বিশ্বস্ত বলেছেন ও তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন:-


♣ ইমাম আবু হাতিম বলেন, সে মূলত সত্যবাদী।

♣ ইমাম যাহাবী বলেন : ইমাম বুখারী তার থেকে তালিকরূপে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৪/৫৫ পৃ. রাবী নং ৪৭৪)।

♣ “ইমাম বুখারী (রঃ) তার ছহীহ্ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। "কিরায়াতু খালফাল ইমাম' গ্রন্থে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।”
★ (ইমাম মিযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৫৫৬)

♣ “উছমান দারেমী বলেন, আমি ইমাম ইবনে মাঈন (রহঃ) কে বললাম, আপনার কাছে কাতাদা এর চেয়ে হাম্মাদ ইবনে সালামা কি অধিক পছন্দনীয় অথবা আবু হেলাল?
- তিনি বললেন: হাম্মাদ আমার কাছে পছন্দনীয়,
- আবু হেলাল সত্যবাদী। আরেকবার বললেন, তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।"

♣ আজরী ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) থেকে বলেন,
আবু হেলাল বিশ্বস্ত।”
★ হাফিজ ইবনে হাজার: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৩০৩;
★ ইমাম মিযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৫৫৬

বর্ণনাকারী ‘উমর ইবনে আছেম' হল ইমাম বুখারী এর একজন উস্তাদ। যেমনঃ

♣ ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (রহঃ) বলেন: উমর ইবনে আছেম তিনি ইমাম বুখারীর শায়েখ।”
★ (ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ২৩তম খন্ড, ১৮১ পৃ ২৫৬৬ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)

♣ কাজী শাওকানী বলেন,
-“অবশ্যই ইহা বর্ণনা করেছেন উমর ইবনে আছেন আর তিনি বিশ্বস্তদের একজন।”
★ (কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃ: ৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)

♣ দ্বিতীয় সনদে হজরত কাতাদা (রাঃ) নিজেই বিশ্বস্ত তাবেঈ।

♣ সাঈদ ইবনে আবী উরওয়াদ বুখারী-মুসলীমের রাবী ও বিশ্বস্ত।

♣ বর্ণনাকারী আব্দুল ওয়াহহাব ইবনে আত্বা' ছহীহ মুসলীমের রাবী ও বিশ্বস্ত।


[সাঈদ ইবনে আবী উরওয়া ছহীহ বুখারী ও মুসলীমের রাবী । সুতরাং দুইটি সনদই শক্তিশালী ও বিশুদ্ধ। হাদিসটি মুরছাল ছহীহ তবে এর মুত্তাছিল ছহীহ্ রেওয়াত রয়েছে।] যেমনঃ

সূত্র ৩ :
♣ ইমাম ইবনে আদী (রহঃ) এভাবে বর্ণনা করেছেন,

-“হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল () বলেছেন: সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।”

Reference :
★ ইমাম ইবনে আদী: আল-কামিল ফিদ-দোয়াফা, ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃঃ
★ ইমাম মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ৬৪২৩;
★ ইমাম আবু হাতিম: 'যখিরাতুল হুফফাজ, হাদিস নং ৪৩৭৫
(এই সনদে (খুলাইদ ইবনে দালাজ) মজবুত রাবী না হলেও ইমাম আবু হাতিম (রঃ) তাকে নেক বান্দাহ বলেছেন।)
★ ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আলামিন নুবালা, রাবী নং ৭১;
★ ইমাম মিযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৭১৬।


এই হাদিসটি (খুলাইদ ইবনে দালাজ) এর একক সূত্রে হলে জয়ীফ হত, কিন্তু সে ইহা এককভাবে বর্ণনা করেননি বরং তার সাথে (সাঈদ) কর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ সাঈদ ও খুলাইদ উভয়ে একত্রে হাদিসটি কর্ণনা করেছেন, তাই ইহা শক্তিশালী রেওয়াত হবে। কারণ অন্য রেওয়াত দ্বারাও ইহা শক্তিশালী হয়েছে। এই হাদিসের সনদে (সাঈদ ইবনে বাশির আবু আব্দুর রহমান আযদী) নামক রাবী রয়েছে, তার ব্যাপারে কেউ কেউ সমালােচনা করলেও ইমামদের অনেকেই তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন ও তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমনঃ

♣-“ইমাম আবু বকর বায়ূর (রহঃ) বলেন:
সে আমাদের কাছে গ্রহণযােগ্য ও তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।"
★ ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ৪র্থ থভ, ৮পৃঃ
★ ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং১৯১০

♣ ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী (রহঃ) তার ব্যাপারে বলেন,

-“তিনি ইমাম, মুহাদ্দিছ, সত্যবাদী ও হাফিজ ছিলেন।”
★(ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আ'লামী নুবালা, রাবী নং ৯৭, ৭ম খন্ড, ৩০৪ পৃঃ)

♣ “মারওয়ান তাতারী বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রহঃ) কে জামরায়ে আকাবায়' বলতে শুনেছি: আমাদেরকে সাঈদ ইবনে বাশির হাদিস বর্ণনা করেছেন আর সে একজন হাফিজ ছিলেন।”
★ ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম,৪র্থ খন্ড, ৩৭৩ পৃঃ
★ ইমাম মিযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং-২২৪৩.

♣ “ইমাম দুহাইম (রঃ) বলেন: তাকে বিশ্বস্ত বলা হয়, সে একজন হাফিজ ছিলেন।”
★ ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম,৪র্থ খন্ড, ৩৭৩ পৃঃ
★ ইমাম মিযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং-২২৪৩.

♣ “ইমাম ইবনে শাহিন (রহঃ) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।”
★ ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী ১৯১০

♣-“ইমাম শুবা ইবনে হাজ্জায (রহঃ) বলেছেন: সে গ্রহণযােগ্য তােমরা তার থেকে হাদিস গ্রহণ কর।”
★ ইমাম মুগলতাই: ইকমান্ত তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯১০;
★ ইমাম মিযযী তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২২৪৩

♣ ইমাম হাকেম তাকে বিশ্বস্তদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন এবং তার মুস্তাদরাক গ্রন্থে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছে।”
★ ইমাম মুগলতাঈঃ ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯১০

♣-“ইমাম ইবনে খালিফুন (রহঃ) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”
★ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯১০

অতএব, এই হাদিস নির্ভরযােগ্য ও ছহীহ্। সুতরাং আল্লাহর রাসূল () সৃষ্টির প্রথম মানুষ।

সূত্র ৪ :
♣ আল্লামা ইবনে ছালেহ শামী (রঃ) তদীয় কিতাবে এর আরেকটি সূত্রের কথা উল্লেখ করেছেন।

“ইমাম ইবনে ইসহাক → হজরত কাতাদা (রহঃ) থেকে মুরছাল রূপে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে পাক () বলেছেন:

"সৃষ্টির মধ্যে আমি প্রথম মানুষ ছিলাম এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।"

★ (ইমাম ইবনে ছালেহ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃঃ)


সূত্র ৫ :


এর সমর্থনে আরেকটি রেওয়াত উল্লেখ করা যায়,

♣ হজরত কাতাদা (রহঃ) বর্ণনা করেছেন,

♣ হাসান বসরী (রহঃ) থেকে,

♣ তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,
"নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল () কে এই আয়াত “ইজ আখ্যনা মিছাকাহুম..” তিনি বলেন:
"সৃষ্টির মধ্যে আমিই ছিলাম তাদের প্রথম, আর প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।"
★ তারিখে ইবনে আসাকির,
★ তাফছিরে কুরতবী, ১৪তম খন্ড, ১২৭ পৃ;
★ তাফছিরে ইবনে আবী হাতেম, হাদিস নং ১৭৫৯৫

সুতরাং আমাদের নবী (ﷺ) 'ই ছিলেন প্রথম সৃষ্টি।

♣ এ সম্পর্কে বিশিষ্ট তাবেঈ ও আওলাদে রাসূল, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর পীর হজরত ইমাম জাফর সাদিক (রাঃ) বলেন:

"সকল কিছু সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তা'লা নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করেছেন।”

★ (তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৮ম খন্ড, ৩৯৬ পৃ:)।

উল্লেখিত হাদিস সমূহ বিশ্লেষণ করে প্রমাণিত হল, সৃষ্টি জগতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা ()। কলম, আরশ ও পানি প্রথম সৃষ্টির বিয়ঠি এজাফত হয়েছে সম্মানার্থে। মূল সর্ব প্রথম সৃষ্টি হল হজরত রাসূলে পাক () এর নূর বা নূরে মুহাম্মদী ()।


ফোকাহাদের দৃষ্টিতে প্রথম সৃষ্টিঃ


সর্বপ্রথম সৃষ্টি নিয়ে অনেক রকম রেওয়াত বর্ণিত হলেও মূলত সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল নূরে মুহাম্মদী। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আইম্মা ও ফোকাহাগণ এই অভিমত পেশ করেছেন। এ কারণেই

বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম ও হুজ্জাতুল ইসলাম (৩ লক্ষ হাদিসের হাফেজ) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) (ওফাত ৮৫২ হিজরী) বলেছেন ও

★ হিজরী ১১শ শতাব্দির মােজাদ্দিদ, আল্লামা ইমাম সুলতান মােল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) (ওফাত ১০১৪ হিজরী) সংকলন করেছেন,

♣ ৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ
"প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে রেওয়ায়েত গুলাের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এর সার কথা, যেমনটি আমি শরহে শামায়েলে তিরমিজি কিতাবে বলেছি,
→ নিশ্চয় এ গুলাের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হল "নূর" যা দ্বারা রাসূলে পাক (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
→ অতঃপর পানি সৃষ্টি করা হয়।
→ অত:পর আরশ সৃষ্টি করা হয়।"
★ ইমাম সুলতান আলী কারী: মিরকাত শরহে মিশকাত, ১ম খন্ড, ২৪১ পৃ:, ৭৯ নং হাদিসের অনুরূপ

♣ এ সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (রহঃ) {ওফাত ৯৭৪ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন,

মারফু ছহীহ হাদিস হচ্ছেঃ
→ ‘আরশের পূর্বে পানি সৃষ্টি হয়েছে।
→ যেনে রেখ! প্রথম সৃষ্টি সমূদয় বস্তুর মধ্যে প্রথম সম্ভোধন হয়েছে নূরে মুহাম্মদী।
→ অত:পর পানি,
→ অত:পর আরশ,
→ অত:পর কলম।
যা আমরা ‘আল্লাহ প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন এই হাদিস থেকে জানলাম।”
★ ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল, ১ম খন্ড, ৩৭ পৃঃ

♣ হাফিজ ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহঃ) আরাে বলেন,

-“নূরে মুহাম্মদী () এর পরে প্রথম সৃষ্টি কোনটি সেটা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে (অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদী প্রথম সৃষ্টি)।”

★ (ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল ফি শরহে শামাইল, ১ম খন্ড, ৩৬ পৃঃ)

♣ ইমাম হুছাইন ইবনে মুহাম্মদ দিয়ারবকরী (রহঃ) (ওফাত ৯৬৬ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেছে,

“প্রথম সৃষ্টির রেওয়াত গুলাের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
→ এক রেওয়াতে আছে, রাসূল () এর নূর প্রথম সৃষ্টি।
→ অপর রেওয়াতে আছে, আকল।
→ অপর রেওয়াতে আছে কলম।
→ অপর রেওয়াতে আছে লাওহ্।
এভাবে আল্লাহ প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন সেই রেওয়াত গুলাের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
হাদিসের মধ্যে আছে, আল্লাহ তা'য়ালা সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) এর নূর সৃষ্টি করেছেন।
"ইনছে জালিল" কিতাবে আছে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা আরশ-কুরছী, লাওহ-কলম, আসমান-জমীন, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করার ৭০ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর রাসূল () এর নূর সৃষ্টি করেছেন।”
★ আল্লামা দিয়ারবকরী: তারিখুল খামিছ, ১ম খন্ড, ১৭ পৃঃ


♣ অনুরূপ আল্লামা মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের ইবনে শায়েখ আব্দুল্লাহ আইদারুছ (রঃ) (ওফাত ১০৩৮ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেন,

“যেনে রেখ, নিশ্চয় প্রত্যেক কিছু প্রথম হওয়ার ব্যাপারে নিছবত হলেও -
→ প্রথম সৃষ্টি হল নবী পাক (ﷺ) এর নূর, 
→ অত:পর পানি,
→ অত:পর আরশ, 
→ অতঃপর কলম।” 

★ নূরুহ হাফির আনিল কারনিল আশির, ৮ নং পৃষ্ঠা
♣ যেমন এ বিষয়ে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী হানাফী (রঃ) {ওফাত ১১২৭ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন,
“নিশ্চয় একটি প্রদীপ থেকে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালালেও ঐ প্রদীপের আলাে সামান্যতমও কমেনা। সকল উম্মত এ বিষয়ে একমত যে, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুই মুহাম্মদ (ﷺ) এর নুর মােবারক যারা সৃষ্টি করেছেন। অথচ তাঁর নূর মােবারক সামান্যতমও কমেনি।” 
★ তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ১৯৭ পৃঃ, 
সূরা আহযাব এর ৪৫-৪৬ নং আয়াতের তাফছিরে

♣ আল্লামা হাফিজ ইবনুল হাজ্জ আল-মালেকী (রঃ) {ওফাত ৭৩৭ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন, .

“অনুরূপ রয়েছে যে, নিশ্চয় সর্বপ্রথম আল্লাহ তা'য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল মুহাম্মদ (ﷺ) এর নুর। অত:পর ঐ নৃর ভূ-কম্পিত হচ্ছিল এবং আল্লাহ তা'য়ালার নিকট সেজদা করছিল।" 
★ ইবনুল হাজ্জ্বঃ আল-মাদখাল, ২য় খন্ড, ৩২ পৃ 


♣ আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ছিলাহ ছানআনী (রহঃ) ওফাত ১১৮২ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন:

-“সৃষ্টি জগতে আমি প্রথম মানুষ ছিলাম' কেননা আল্লাহ তা'লা আমাকে নূররূপে আদমের পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন।" 

★ আল্লামা সানআনী: আত-তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, ৮ম খন্ড, ২৪১ পৃ: ৬৪০৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
★ আল্লামা সানআনী: আত-তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, ৮ম খন্ড, ২৪১ পৃ: ৬৪০৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়

♣ বিশ্বখ্যাত মােফাচ্ছির আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী (রহঃ) {ওফাত ১২৭০ হিজরী) সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতের তাফছিরে উল্লেখ করেন,

-“আর এ কারণেই তার নূরানী সত্ত্বা সমস্থ মাখলুকাতের পূর্বে সৃষ্টি এবং এ কথাই হাদিস শরীফে আছে: 
"হে জাবের! আল্লাহ তা'লা সর্বপ্রথম তােমার নবীর নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন।” 
★ আল্লামা আলুছী: তাফছিরে রুহুল মাআনী, ১ম খন্ড, ১০০ পূ
♣ তথাকথিত লা-মাজহাবীদের শিরমনী, মাওলানা কাজী শাওকানী সাহেব বলেন,

-“রাসূল (ﷺ) সকল মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলমান। কেননা তিনি রাসূল হিসেবে সবার পরে আবির্ভূত হলেও তিনি সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। 
★ কাজী শাওকানীঃ তাফহিরে ফাতহুল কাদির, ২য় খন্ড, ২১১
♣ বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী ছাহেব তদীয় কিতাবে বলেন,

-“আল্লাহ তা'য়ালা প্রথম সৃষ্টি করেছেন কোন কোন রেওয়াতে আছে, 
নিশ্চয় সৃষ্টির মধ্যে প্রথম হল নবী করিম (ﷺ) এর নূর মুবারক। ইমাম কাস্তালানী (রহঃ) তার মাওয়াহেবে ইমাম হাকিমের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি সেখানে সব গুলাে বর্ণনার মধ্যে (কলম, নূরে মুহাম্মাদী/ আকল/আরশ সর্বপ্রথম সৃষ্টির ভিন্নতার মধ্যে) নূরের হাদিসকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।”
★ আনওয়ার শাহ: আরফুশ শাজী শরহে তিরমিজি, ৩য় খন্ড, ৩৯৪ পৃ: ২১৫১ নং

হাদিসের ব্যাখ্যায় মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেবের অন্যতম খলিফা ও তাফছিরে মারেফুল কোরআনের মােফাচ্ছির -

♣ আল্লামা মুফতী শফি সাহেব (পাকিস্থান) তদীয় তাফছির গ্রন্থে বলেন,

“প্রথম মুসলমান হওয়া দ্বারা এদিকেও ঈঙ্গিত হতে পারে যে, সৃষ্টি জগতের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) এর নুর সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর সমস্ত নভােমন্ডল, ভূমভল ও অন্যান্য সৃষ্ট জাত অস্তিত্ব লাভ করেছে। এক হাদিসে বলা হয়েছে: আল্লাহ তা'লা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।”
★ (মুফতী শফি: তাফছিরে মারেফুল কোরআন, সৌদি সং, ৪২৮)। 

অতএব, 
→ আকল সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে কলম, 
→ কলম সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর আরশ। 
→ আল্লাহর আরশ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে পানি। 
→ এমনকি পানি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই সৃষ্টি হয়েছে নূরে মুহাম্মদী [ﷺ]

ছহীহ সনদে হজরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

♣ “হজরত জাবের আল আনছারী (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম,
ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার পিতা-মাতা আপনার কদমে কুরবান হউক (ইহা তাজিমার্থে) ! আপনি আমাকে সংবাদ দিন আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হে জাবের। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছর পূর্বে তার স্বীয় নূর থেকে তােমার নবীর নুর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে পরিক্রমন করতে থাকল যেভাবে আল্লাহ চেয়েছেন। তখন কোন ওয়াক্ত, লওহ-কলম, জান্নাত-জাহান্নাম, ফেরেস্থা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জ্বীন-ইনছান কোন কিছুই ছিলনা।.....।”

Reference :

★ মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর যুযউল মাফকুদ, ৬৩ পৃ:।
★ আল মাদখাল, ১ম খন্ড, ৩২ পৃ: কৃত: আল্লামা ইবনুল হাজরঃ]; -
★ মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৭১ পৃ:
★ শারিহে বুখারী ইমাম কাস্তালানী র:;
★ শরহে মাওয়াহেব লিয যুরকানী, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ: আল্লামা ইমাম যুরকানী।
★ তাফহিমাতে ইলাহিয়্যা, ১৯ কৃতঃ শাহ ওয়ালী উল্লাহ মােহাদ্দিসে দেহলবী (র:)
★ নশরুত্তিব, ৫ পৃ: কৃত: মাওলানা আশরাফ আলী থানভী);
★ ছিরাতে হালভিয়া, ১ম খন্ড, ৪৭ পৃ: কৃত: আল্লামা নুরউদ্দিন আলভী রঃ;
★ তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১ম জিঃ ৯০ পৃ: কৃত: আল্লামা মাহমুদ আলুসী আগদাদী (রহঃ)
★ কাশফুল খাফা, ১ম খন্ড, ২৩৭ পৃ: [কৃত: ইমাম আলুনী রঃ;
★ আছারুল মরফুয়া, ৪২-৪৩ পৃ: কৃত: আব্দুল হাই লাখনভী
★ আল মাউরিদুর রাভী, ২২ পৃ: কৃত: মােলা আলী কারী র;
★ ফাওয়ায়ে হাদিছিয়া, ৪৪ কৃত: ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী রঃ;
★ আলহাবী লিল যাওয়া, ১ম খন্ড, ৩৮৪ পৃ: কৃত: ইমাম ছিয়তী (রঃ);
★ আদ দুরারুল বাহিয়্যাহ, ৪-৮ : কৃতঃ আল্লামা নববী রঃ

এই হাদিস সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলােচনা রয়েছে। সুতরাং সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)। এরপর ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহ পাক সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাই প্রিয় নবীজি (ﷺ) কে মাটির তৈরী বলা চরম মূর্খতা, কারণ যখন রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি হয়েছিল তখন মাটি বলতে কোন জিনিস ছিলনা। বরং মাটি সহ সকল সৃষ্টিই রাসূলে পাক (ﷺ) তথা নূরে মুহাম্মদী থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায়: সকল সৃষ্টির মূল মুহাম্মদ রাসূল (ﷺ)


রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতনা।


 মােট পাঁচজন সাহাবী থেকে এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে আছে,

♣“হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, 

তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যখন আদম (আঃ) দ্বারা অপ্রত্যাশিত কাজটি হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি আপনার সত্য নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর উছিলায় প্রার্থনা করছি আমাকে ক্ষমা করে দিন। অত:পর আল্লাহ তা'য়ালা বললেন: হে আদম! তুমি কিভাবে মুহাম্মদ (ﷺ) কে চিনলে অথচ আমি তাকে সৃষ্টি করিনি? আদম (আঃ) বললেন: হে। আমার রব! যখন আমাকে আপনি সৃষ্টি করেন এবং রুহু আমার ভিতরে প্রবেশ করান, তখন আমি আমার মাথা উপরের দিকে উঠিয়েছি এবং আরশের গায়ে লিখিত দেখেছি: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। ফলে আমি জানতে পারলাম যে, নিশ্চয় আপনার প্রিয় পাত্র ব্যতীত আপনার নামের পাশে নাম থাকতে পারেনা! তখন আল্লাহ তা'লা বললেন: তুমি সত্য বলেছে হে আদম ! সে আমার কাছে খুবই ভালবাসার পাত্র বা সৃষ্টি, তুমি আমাকে তার উছিলায় প্রার্থনা করেছ ফলে আমি তােমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি যদি মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করতাম তাহলে তােমাকেও সৃষ্টি করতাম না।”

Reference :

★ ইমাম হাকেম: আল-মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ পৃঃ
★ ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওহাত, ৫ম খ, ৩৬ পূ,
★ ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুন্নবুয়্যত, ৫ম খন্ড, ৩৭৪ পৃঃ;
★ আল্লামা ছামহুদী: অফাউল অফা, ৪র্থ জিঃ ২২২ পৃঃ
★ ইবনে কাছির: মুসনাদে ফারুক, ২য় খন্ড, ৬৭১ পৃঃ
★ ইবনে কাছিরঃ জামেউল মাসানিন ওয়াস সুনান, ১৭তম খন্ড, ২৯৭ পৃঃ
★ ইমাম সুয়ূ়তী: খাছায়েসুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২৭
★ তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ২৬৪ পৃঃ
★ ইবনে কাছির আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃঃ
★ শরফুল মােস্তফা, ১৬ নং
★ হাদিস ইবনে কাছির:  “সিরাতে নববিয়া এ ১ম খন্ড, ২০ পৃঃ
★ কাহাফুল আম্বিয়া, ১ম খন্ড, ২৯ পৃঃ
★ ইমাম ইবনে আলেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খন্ড, ৮৫ ;
★ হিরাতে হলভিয়া, ১ম খন্ড, ৩১৫ :
★ শরহে যুরকানী, ১ম খন্ড, ১১৯ পৃঃ
★ ইমাম কাতালানী: মাওদ্বাহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৩য় খন্ড, ৬০৫ পৃঃ

হাদিসটির সনদমান পর্যালোচনাঃ


ইমাম হাকেম নিছাপুরী (রহঃ) ও
♣ ইমাম নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী (রহঃ) বলেন:

“এই হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ।”

★ ইমাম হাকেম: আল মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮৩ প;
★ আল্লামা ছামহুদী: অফাউল অফা, ৪র্থ জিঃ ২২২ পৃ:।

♣ এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তাবারানী (রহঃ) বলেন,
"হযরত উমর (রাঃ) থেকে এই সনদ ব্যতীত অন্য  কোন সনদে হাদিসটি দেখি নি।"
(অর্থাৎ, উল্লেখিত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসটির সনদ এককভাবে এসেছে তাই ইহা গরীব)

♣ এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম বায়হাক্কী (রহঃ) বলেছেন যা-
♣ হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে কাছির (রঃ) সমর্থন করেছেন:
-“আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ আছলাম হতে বর্ণিত ইহা একক বর্ণনা, আর তিনি হলেন জয়ীফ।" 
★ ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুন্নবুয়্যাত, ৫ম খন্ড, ৩৭৪ পৃ: 
★ হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ২য় খন্ড, ৬২৯ পৃঃ

হাদিসের সনদ পর্যালোচনাঃ

“আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম” রাবী বা বর্ণনাকারী রয়েছে, যার ব্যাপারে 

♣ ইমাম মিযযী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন,

“আবু আহমদ ইবনে আদী (রহঃ) বলেন: 
তার অনেক হাদিস হাছান পর্যায়ের রয়েছে। 
সে এমন ব্যক্তি যার রেওয়াত লোকেরা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে তাকে সত্যবাদী বলেছেন এবং সে ব্যক্তির হাদিস লিখেছেন।” 
★ ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮২০

♣ ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন,
“সে ছাহেবুল হাদিস।” 
★ ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, রাবী নং ২০১

♣ হাফিজ ইবনে তাইমিয়া সহ কিছু ইমামের মতে,
“আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম” জয়ীফ রাবী আবার অনেক ইমামের মতে নির্ভরযােগ্য রাবী। 

সর্বোপরি বলা যায়, হাদিসটি জাল বা ভিত্তিহীন নয়, বরং এর সনদ বিদ্যমান রয়েছে। কেউ কেউ এর সনদকে ছহীহ বা বিশুদ্ধ বলেছেন আবার কেউ কেউ দুর্বল বলেছেন। মােহাদ্দিছিনে কেরাম ইহাকে গ্রহণ করে তাদের কিতাবে হাদিসটি স্থান দিয়েছেন। তবে আফসোসের বিষয় হল  নাছিরুদ্দিন আলবানী তার সিলসিলাতুল দ্বঈফাহ'র মধ্যে হাদিসটিকে জাল বানানোর অপচেষ্টা কৱেছে। আল্লাহ তার উপর লানত বর্ষণ করুন। 

নবীজি (ﷺ) এর শান-মানের ব্যাপারে ইহা অবশ্যই গ্রহণযােগ্য হাদিস। 

 
Top