তৃতীয় অধ্যায় :
আল্লাহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা
1. আল্লাহ তা'য়ালার কী সৃষ্টির মত আকৃতি রয়েছে ?
2. আল্লাহর আকৃতিতে আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বানানো প্রসঙ্গ
3. আল্লাহকে স্বশরীরে সর্বত্র বিরাজমান আক্বিদা রাখা প্রসঙ্গ
4. আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলা প্রসঙ্গ
5. আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন ধারণা রাখা প্রসঙ্গ
6. মহান আল্লাহর কাছে কোন কিছু গোপন নেই
7. স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা প্রসঙ্গ
______________________________________
আল্লাহ সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা
______________________________________
আল্লাহ তায়ালার কী সৃষ্টির মত আকৃতি রয়েছে?
______________________________________
আল্লাহ আকার আকৃতি হতে মুক্ত-এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা, কেননা আকার আকৃতি থাকলে কেমন তার অবকাশ রাখে । মানুষ বা সৃষ্টি শুনতে কান, দেখতে চোখের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু স্রষ্টার জন্য মানুষের বা সৃষ্টির মত কোন কিছুই প্রয়োজন পড়ে না। স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা দেয়া কুফুরী ।
👉 ইমাম তাহাভী (রঃ) বলেন,
وَمَنْ وَصَفَ اللَّهَ بِمَعْنًى مِنْ مَعَانِي الْبَشَرِ فَقَدْ كُفر
-“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'য়ালাকে মানবীয় গুণাবলী হতে কোন গুণের দ্বারা গুণান্বিত করবে সে কাফির ।” ৫৩
👉 ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) বলেন,
لَا يشبه شَيْئا من الْأَشْيَاء من خلقه وَلَا يُشبههُ شَيْء مِنْ خلقه-
-“আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টির কোন বস্তুর মত নন, এমনকি তিনি কোনো সৃষ্টির মত নন।” ৫৪
👉 ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন,
لَا يُشْبِهُ شَيْئًا مِنْ مَخْلُوقَاتِهِ وَلَا يُشْبَّهُ بِهِ
-“সৃষ্টির কিছুই আল্লাহর সাথে সাদৃশ্য নেই, এবং তিনিও কারও সদৃশ নন।” ৫৫
মিরাজে আল্লাহকে নবিজি দেখেছেন-তা সত্য; কিন্তু তিনি কোন আকৃতির কথা বর্ণনা করেননি।
👉 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
رَأَيْت رَبِّي عَزَّوَجَلَّ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ
রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
-“আমি আমার রব আল্লাহ তা'য়ালাকে দেখেছি, তবে তার সাথে (সৃষ্টি) কোন সদৃশ্য বা তুলনা নেই।”৫৬
👉 মহান রব তা'য়ালা ইরশাদ করেন,
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ
“তার কোন দৃষ্টান্ত তথা উপমা নেই।”৫৭
👉 ইমাম বায়হাক্বী (রঃ) বলেন,
فَإِنَّ الَّذِي يَجِبُ عَلَيْنَا وَعَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ أَنْ يَعْلَمَهُ: أَنَّ رَبَّنَا لَيْسَ بِذِي صُورَةٍ وَلَا هَيْئَةٍ، فَإِنَّ الصُّورَةَ تَقْتَضِي الْكَيْفِيَّةَ وَهِيَ عَنِ اللَّهِ وَعَنْ صِفَاتِهِ مَنْفِيَّةٌ
-“নিশ্চয় আমাদের ও সকল মুসলমানের জানা অত্যাবশ্যক যে, আমাদের প্রভু আকৃতি ও অবয়ব বিশিষ্ট নহেন। কেননা, আকৃতি তথা কেমন’ এর চাহিদা রাখে । অথচ কেমন প্রশ্নটি আল্লাহ ও তাঁর গুণবলীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।” ৫৮
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫৩. তাহবী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪১ পৃ, আকিদা নং ৩৪, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি
৫৪. ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবার, ১৪ পৃ.
৫৫. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১৬৮পৃ. মাকতুবাতুল মিসরিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ, ১৩৮৪হি.।
৫৬. দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/২৫৪পৃ. হাদিস ও ৩১৮৩
৫৭. সুরা আশ-শুরা, আয়াত, ১১
৫৮. ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬৬পৃ. হাদিস ও ৬৪১, মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৩হি,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 ইমাম বায়হাকী (রঃ) আরও বলেন,
وَلَا يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ الْبَارِي تَعَالَى مُصَوَّرًا وَلَا أَنْ يَكُونَ لَهُ صُورَةٌ، لِأَنَّ الصُّورَةَ مُخْتَلِفَةٌ
“আল্লাহ তা'য়ালার জন্য আকৃতি আছে ধারণা করা বৈধ নয়, কেননা তার কোন আকৃতি নেই । আর তাঁর আকৃতি হলো স্বতন্ত্র ।” ৫৯
👉 ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (রঃ) বলেন,
فَلَيْسَ سبحانه بذى لون و لارائحة ولاصورة ولاشكل
-“মহান আল্লাহ রং, গন্ধ, আকৃতি এবং অবয়ব বিশিষ্ট নন।” ৬০
👉 ইমাম আবুল মানসুর মাতুরীদি (রঃ) বলেন,
وليس بجسم، ولا شبه، ولا جثة، ولا صورة، ولا لحم، ولا دم، ولا شخص ولا جوهر ولا عرض،.....
-“মহান আল্লাহ দেহ, কোনো সৃষ্টির সাদৃশ্য, দেহ বা শরীর, আকৃতি, মাংসবহুল, রং, বড় দেহ বিশিষ্ট, বস্তু/পদার্থ, প্রার্শ্ব, এমনকি নেই কোন সাদৃশ, আকৃতি গোস্ত, ......এগুলো থেকে পবিত্র ।” ৬১
👉 ইমাম মাতুরীদি (রঃ) আরও বলেন,
لا تشبه صفاته صفات المخلوقين، ولا اشتبهت صفات الخلق صفاته
-“মহান আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলীর মধ্যে তাঁর কোন সৃষ্টির গুণাবলীর সাদৃশ্য নেই।" ৬২
তাই বুঝা গেল আল্লাহকে কোন আকৃতি দ্বারা ব্যাখ্যা করলে, প্রশ্নের অবকাশ রাখে যে তাহলে তার আকৃতি কীসের মত তাই বলা যাবে না। এ বিষয়ে ইমাম বুখারীর উস্তাদ।
👉 ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ (রঃ) বলেন,
قَالَ الْأَئِمَّةُ -مِنْهُمْ نُعَيْم بْنُ حَمَّادٍ الْخُزَاعِيُّ شَيْخُ الْبُخَارِيِّ -: مَنْ شَبَّهَ اللَّهَ بِخَلْقِهِ فَقَدْ كَفَرَ
-“তিনি বলেন, যে মহান আল্লাহকে তার সৃষ্টির সাথে তুলনা/সাদৃশ্য করবে সে কাফির। ৬৩
পবিত্র কুরআনে কোন কোন স্থানে মহান রব তার যে অঙ্গ উল্লেখ করেছেন তা মূলত তার গুণাবলীকে বুঝানো হয়েছে; তাই তার সরাসরি অর্থ এখানে গ্রহণ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এবং আকায়েদের -
👉 অন্যতম ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেন,
أَنْ تَكُونَ الصُّورَةُ بِمَعْنَى الصِّفَةِ-
-“কোনো ক্ষেত্রে যদি আকৃতি প্রকাশের কথা আসে তা হবে তাঁর সিফাত বা গুণবলী।” ৬৪
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫৯. ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬০পৃ. মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৩হি,
৬০. ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম, আল-মুসাইরাত, ২১৮পৃ.
৬১. ইমাম মাতুরীদি, তাফসীরে মাতুরীদি, ১/১৩৫পু,
৬২. ইমাম মাতুরীদি, তাফসীরে মাতুরীদি, ৮/২৬৭পৃ.
৬৩. ইবনে কাসির, তাফসীরে ইবনে কাসির, ৩/৪ ২৭.
৬৪. ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬৬পূ, হাদিস : ৬৪১, মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেন্দা, প্রথম প্রকাশ, ১৪ ১৩হি,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) উল্লেখ করেন,
أَنَّ الْمُرَادَ بِالصُّورَةِ الصِّفَةُ وَإِلَيْهِ مَيْلُ الْبَيْهَقِيّ
-“(অনেকের মতে-উপযুক্ত হাদিসে) ‘আকার' দ্বারা ‘সিফাত (গুণ)ই উদ্দেশ্য। এ মতের দিকেই ইমাম আবু বকর আল-বাইহাকী (রঃ)-এর ঝোঁক রয়েছে।”৬৫
👉 তিনি আরও উল্লেখ করেন,
قَالَ الْقُرْطُبِيُّ الْمُرَادُ بِالصُّورَةِ الصِّفَةُ
-“ইমাম কুরতবী (রঃ) বলেন, এখানে আল্লাহর আকৃতি বলতে গুণই বুঝানো হবে।”৬৬
👉 ইমাম নববী (রঃ) ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) এর বরাতে উল্লেখ করেন,
لَا يَجُوزُ عَلَيْهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى التَّجَسُّمُ
-“আল্লাহ তা'য়ালার জন্য দেহাবয়ব আছে ধারণা করা বৈধ নয়।”৬৭
আল্লাহর আকৃতিতে আদম (আঃ) কে বানানো প্রসঙ্গ।
______________________________________
আমাদের সমাজের কিছু বাউল ও সাধারণ মুসলমানের ধারণা এরূপ । প্রকৃতপক্ষে এরূপ ধারণা রাখা বৈধ নয়; বরং এটি বাতিল পন্থীদের আক্বিদা ।
👉 ইমাম ত্বাহাভী (রঃ) তার আক্বিদাতুত ত্বাহাভীর ভূমিকায় বলেন,
المرجئة يقولون ان الله خلق ادم على صورته والعرش مكان لله-
-“ফিরকায়ে মুর্জিয়া সম্প্রদায় বলে, নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। আরশ হল আল্লাহর স্থান।"৬৮
আমাদের সমাজে এখন বহু লাকে এ হাদিসটি অনেক সময় বলে থাকেন যে,
خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ‘
‘আল্লাহ আদম (আঃ) কে তাঁর স্বীয় ছুরতে (আকৃতিতে) সৃষ্টি করেছেন। এই হাদিসের প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করা মূলত গোমরাহী ছাড়া আর কিছু নয়।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৬৫ ইমাম ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১৩/৪২৭পৃ.
৬৬. ইমাম ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১১/৪১৩পৃ.
৬৭. ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, ১৫/২৫পৃ.
৬৮ মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল আদাব, বুখারি ও মুসলিম শরিফের সূত্রে ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেন,
وَقد يُقَال: هُوَ عَائِد إِلَى الله تَعَالَى، لَكِن الصُّورَة هِيَ الْهَيْئَة وَذَلِكَ لَا يَصح إلاَّ على الْأَجْسَام، فَمَعْنَى الصُّورَة الصّفة كَمَا يُقَال: عرفني صُورَة هَذَا الْأَمر أَي: صفته، يَعْنِي: خلق آدم على صفته أَي حَيا عَالما سميعاً بَصيرًا متكلماً
-‘‘এ ব্যাখ্যাও করা যায় যে, عَلَى صُورَتِهِ এর ه সর্বনামটি الله এর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী কিন্তু ছুরত অর্থ আকৃতি। আর এমন অর্থ জিসিম বা শরীর ব্যতীত প্রয়োগ হয় না। তাই এখানে الصُّورَة শব্দটি الصّفة বা গুণ অর্থে ব্যবহৃত। যেমন আরবীতে বলা হয়- عرفني صُورَة هَذَا الْأَمر (এ বিষয়ে ছুরত আমাকে অবগত করুন) বক্তব্যটিতে الصُّورَة শব্দটি গুণ অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ আদমকে আল্লাহর গুণে সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ আদমকে আল্লাহর গুণ জীবিত, জ্ঞানী, শ্রবণকারী, দৃষ্টিসম্পন্ন এবং বক্তা হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
)خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ ) أَيْ: عَلَى صُورَتِهِ الَّتِي اسْتَمَرَّ عَلَيْهَا إِلَى أَنْ أُهْبِطَ، وَإِلَى أَنْ مَاتَ دَفْعًا لِتَوَهُّمِ أَنَّ صُورَتَهُ كَانَتْ فِي الْجَنَّةِ عَلَى صِفَةٍ أُخْرَى-
-“আল্লাহ তা'য়ালা আদম (আঃ) কে ঐ আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন যে আকৃতির উপর তাকে জান্নাত হতে জমিনে অবতরণ করা হয় এবং ইন্তিকাল পর্যন্ত ছিলেন। জান্নাতে তার আকৃতি অন্য রকম ছিল, এমন সন্দেহকে দূর করার জন্য এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ৭০
কিন্তু বিজ্ঞ আকায়েদবিদগণের মতে-“আল্লাহ তা'য়ালা দিক, কাল, গতি, স্থিতি, আকার-আকৃতির এবং যাবতীয় অঘটন থেকে পবিত্র। (মুসামের, ৩১পৃ. মাসায়েরা, ৩৯৩পৃ. বাহারে শরীয়ত প্রথম খণ্ড)
আল্লাহকে স্বশরীরে সর্বত্র বিরাজমান আক্বিদা রাখা প্রসঙ্গ
______________________________________
আল্লাহকে সর্বত্র হাযির বলা যাবে না এবং আহলে হাদিসদের মতে আল্লাহ আরশে আযীমে সমাসীনও বলা যাবে না। কেননা আল্লাহ স্থান কাল থেকে মুক্ত । মহান আল্লাহ সমস্ত জগত বেষ্টন করে রয়েছে। অনেকে রাসূল (ﷺ) কে হাযির নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে বলেন হাযির-নাযির আল্লাহর গুণ । কিন্তু আহলে হাদিসদেরই মাযহাব আল্লাহ সব জায়গায় হাযির-নাযির নন; বরং আরশে সমাসীন; কিন্তু রাসূল (ﷺ)'র হাযির-নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে তাদের নিজস্ব মতবাদ ভুলে যান । আর দেওবন্দীরা তাদের বিভিন্ন আকায়েদের কিতাবে লিখে থাকেন যে, আল্লাহ স্থান, কাল, আকার, আকৃতি থেকে মুক্ত । কিন্তু রাসূল (ﷺ)'র হাযির-নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে তারা আবার বেঁকে বসে এবং মুতাযিলা ও কাদারিয়া ফিরকার আক্বিদা পোষণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তারও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অনুসারী বলে দাবী করে।
👉 ইমাম জুরজানী (রহ) বলেন-
أََنَّهُ تَعَالَى لَيْسَ فِي جِهَة، وَلَا فِي مَكَان.
“মহান আল্লাহ কোনো দিকে বা স্থানে নন।” ৭১
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৬৯ আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ২২/২২৯পৃ. হাদিস : ৬২২৭
৭০. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাতুল মাফাতীহ, ৭/২৯৩৫পৃ. হাদিস : ৪৬২৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়র, লেবানন ।
৭১. ইমাম জুরজানী, শরহুল মাওয়াকিফ, ২/৫১-৫২পৃ., সাফর বিন আবদুর রাহমান আল-হাওলী, মিনহাজুল আশাইরাহ, ৭৯পৃ. (শামিলা)
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 ইমামে আহলে সুন্নাহ আবু মানসূর মাতুরিদী {ওফাত.৩৩৩হি.} বলেন,
وَقَالَت القَدَرِية وَ الْمُعْتَزِلَة اَنَّ اللهَ تَعَالى فِى كُل مَكَان
-“মুতাযিলা ও কাদারিয়াগণ বলেন, আল্লাহ সব স্থানে উপস্থিত।”৭২
👉 ইমাম ইবনে জারীর আত্-তবারী (রঃ) বলেন,
لَا يَتَمكن فِي كُلّ مَكَان.
-‘‘তিনি কোনো (নির্দিষ্ট) স্থানে নন।’’ ৭৩
👉 ইমাম কুরতুবী আন্দুলুসী (রঃ) বলেন,
وَأَنَّهُ فِي كُل مَكَان بِعِلْمِهِ
-“নিশ্চই মহান রবের জ্ঞান সকল স্থানে উপস্থিত ।” ৭৪
👉 শায়খ আহমাদ বিন উমর মাসআদ হাযামী তার شَرْحِ كِتَابُ الْتَوْحِيْد কিতাবের ৫৩/৮ পৃষ্ঠায় (শামিলা) উল্লেখ করেন-
اِعْتَقَد أَنَّ اللهَ تَعَالى فِي كُل مَكَان هَذَا كُفْرٌ أَكْبَرْ
-‘‘কেউ যদি আক্বিদা রাখে আল্লাহ সবখানে (হাযির-নাযির) এই ধারণা কুফুরে আকবার।’’
👉 ইমামে আহলে সুন্নাহ আবুল হাসান আশ‘আরী (রহ) {ওফাত. ৩২৪হি.} তার الإبانة عن أصول الديانة গ্রন্থের ১০৯ পৃষ্ঠায় (যা দারুল আনসার, কায়রু মিশর হতে ১৩৯৭ হিজরীতে প্রকাশিত) লিখেন-
وزعمت المعتزلة والحرورية والجهمية أن الله تعالى في كل مكان
-‘‘মুতাযিলা, হারুরিয়াহ এবং জাহমিয়্যাহ বাতিল ফিরকার লোকেরা বিশ্বাস করে আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন।’’
👉 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ)-এর ছেলে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ হাম্বল (ওফাত. ২৪১হি.) তিনি তার الرد على الجهمية والزنادقة কিতাবের ১১৪পৃষ্ঠায় এ আক্বিদা পোষণ কারীদের খণ্ডনে একটি শিরোনাম করেন এ নাম দিয়ে-
الرد على الجهمية في زعمهم أن الله في كل مكان
-‘‘আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন জাহমিয়্যাহ ফিরকার বাতিল আক্বিদার খণ্ডন।’’ জাহমিয়্যাহ ফিরকার মতে, ইবাদত করা হয় এমন কোন ইলাহ আসমানে নেই। আল্লাহ তা'য়ালা স্বত্তাগতভাবে জগতের সর্বত্র বিদ্যমান রয়েছেন। ৭৫
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৭২. ইমাম মাতুরিদী, শরহুল ফিকহুল আকবার, ১৯পৃ.,
৭৩. ইমাম ইবনে জারীর আত্-তবারীঃ তফসীরে তাবারী : ৬/২১০ পৃ
৭৪. ইমাম কুরতবী, হিদায়া ইলা বলল নিহায়া, ১/১২,
৭৫. ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ, ৩/১৯৪পৃ., ইবনু কুদামাহ, ইছবাতু সিফাতিল উলুয়ি, ১১৮পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 একদা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের উস্তাদ ইমাম সা'ঈদ ইবনু ‘আমির আদ-দুবাঈ (ওফাত.২০৮হি.)-এর নিকট একবার জাহমিয়্যাদের কথা উঠলো। তখন তিনি বললেন,
الْجَهْمِيَّةُ أَشَرُّ قَوْلًا مِنَ الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى
-“তারা তো ইয়াহুদী-খৃস্টানদের চাইতেও নিকৃষ্ট কথা বলে।”৭৬
👉 ইমাম যাহাবী (রঃ) তার এক কিতাবে লিখেন,
مَنْ قَالَ بَأَنَّ اَلله بِذَاتِه فِي كُلِّ مَكَان فَهُوَ مُخَالِف لِلْكِتَاب ِوَالسُّنَّة وَإِجْمَاع سَلْف اَلأِمَّة
-“যে ব্যক্তি বলবে মহান রব সত্ত্বাগতভাবে সর্বত্র তাহলে তা হবে কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ এবং পূর্ববর্তী উম্মতের আকিদার বিপরীত। ৭৭
তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেন,
وأما قول العامة وكثير من الخاصة الله موجود فى كل مكان أو فى كل الوجود ويعنون بذاته فهو ضلال بل هو مأخوذ من القول بوحدة الوجود الذى يقول به غلاة الصوفية الذين لا يفرقون بين الخالق والمخلوق
- ‘আল্লাহ সত্তাগতভাবে সর্বত্র বিদ্যমান'- সর্বসাধারণ ও বহু বিশিষ্টজনের এরূপ কথা ভ্রান্ত। বস্তুতপক্ষে তা চরমপন্থী অদ্বৈতবাদী সূফীদের ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ'- এর বক্তব্য থেকেই গৃহীত।” ৭৮
👉 হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমাদ ইয়ার খান নাঈমী (রঃ) লিখেন,
خدا كو هر جگہ ماننا بے دينى هے
-“আল্লাহ তা'য়ালাকে প্রত্যেক যায়গায় আছে মনে করা অধার্মিকতারই নামান্তর।” ৭৯
অনেকে বলতে পারেন মহান আল্লাহ তা'য়ালা তো বলেছেন যে,
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ
-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন।” (সূরা হাদীদ, ৪)
প্রকৃতপক্ষে এখানে মহান রব তার জ্ঞান সকলের সাথে আছে তাই বুঝিয়েছেন।
👉 এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূতি (রঃ) উল্লেখ করেন,
وَأخرج الْبَيْهَقِيّ فِي الْأَسْمَاء وَالصِّفَات عَن سُفْيَان الثَّوْريّ رَضِي الله عَنهُ أَنه سُئِلَ عَن قَوْله: {وَهُوَ مَعكُمْ} قَالَ: علمه
“ইমাম বায়হাকী (রঃ) তাঁর ‘আসমাউ ওয়াল সিফাত' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম সুফিয়ান সাওড়ী (রঃ) কে এই আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান তোমাদের সাথে আছে তা মহান রব বুঝিয়েছেন। ৮০
👉 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বলেন,
وقدرته وعلمه في كل مكان -
-“আল্লাহর কুদরত (ক্ষমতা) এবং জ্ঞান সর্বত্র উপস্থিত।" ৮১
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৭৬. ইমাম বুখারী, খালকু আফ'আলিল ইবাদ, ৩০, যাহাবী, আল-উলুয়, ১৫৮পৃ.
৭৭. যাহাবী, কিতাবুল 'আরশ, ১৮২পৃ.
৭৮. যাহাবী, আল-“উলুউ পৃ. ১৭৪
৭৯. মুফতি আহমদ ইয়ার খান, জ্বা'আল হক, ১/১৫৩পৃ. (উর্দু)
৮০.ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৯পৃ. আলুসী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ২০/৩০৫পৃ., ইমাম বায়হাকী, আসমাউ ওয়াল সিফাত, ২/৪৪৮পৃ. ক্রমিক, ৮৭০
৮১. ইমাম লালকায়ী, ই'তিকাদে আহলে সুন্নাহ, ৩/৪ ০১পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ুতি (রঃ) উল্লেখ করেন,
أخرج ابْن أبي حَاتِم عَن ابْن عَبَّاس فِي قَوْله: {وَهُوَ مَعكُمْ أَيْن مَا كُنْتُم} قَالَ: عَالم بكم أَيْنَمَا كُنْتُم
👉“ইমাম আবু হাতেম (রঃ) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।”৮২
👉বিশিষ্ট মুফাসসির মুকাতিল ইবনু হাইয়ান (১৫০হি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
يَعْنِي قدرته وسلطانه وَعلمه مَعكُمْ إينما كُنْتُم
-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমরা তাঁর (আল্লাহর) কুদরাত, প্রতিপত্তি ও জ্ঞানের ব্যাপ্তির মধ্যেই রয়েছে। ৮৩
👉 আবার অনেকে বলতে পারেন মহান রব পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,
مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوى ثَلاثَةٍ إِلاَّ هُوَ رابِعُهُمْ
-“তোমার কোন স্থানে যদি তিনজন থাক চতুর্থজন হিসেবে তিনি (মহান আল্লাহ) থাকেন।" (সূরা মুজাদালাহ, ৭)
তাই অনেকে বলে থাকেন মহান রব সকলের সাথেই আছেন।
👉ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী (রঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,
بِمَعْنَى أَنَّهُ مُشَاهِدُهُمْ بِعِلْمِهِ
-“তাঁর (আল্লাহর) ইলমের মাধ্যমে তাদেরকে প্রত্যক্ষ করেন।" ৮৪
ইমাম সুয়ূতি (রঃ) তাবেয়ী যাহহাক (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন-
وَعلمه مَعَهم
“তার জ্ঞান তোমাদের (চতুর্থজন হিসেবে) সকলের সাথে আছে ।”৮৫
👉ইমাম বায়হাকী (রঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন,
وَفِيمَا كَتَبْنَا مِنَ الْآيَاتِ دَلَالَةٌ عَلَى إِبْطَالِ قَوْلِ مَنْ زَعَمَ مِنَ الْجَهْمِيَّةِ أَنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى بِذَاتِهِ فِي كُلِّ مَكَانٍ، وَقَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ {وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ} [الحديد: ৪] ، إِنَّمَا أَرَادَ بِهِ بِعِلْمِهِ لَا بِذَاتِهِ
-“আমরা যে সব আয়াত লিপিবদ্ধ করেছি তা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, জাহমিয়াদের মধ্যে যারা মনে করে যে, আল্লাহ তা'য়ালা সত্তাগতভাবে প্রত্যেক স্থানে বিদ্যমান রয়েছেন - তা অমূলক। তিনি তোমাদের সাথেই থাকেন, তোমরা যেখানেই থাকনা কেন।' (সূরা হাদিদ, ৪)
আল্লাহ তা'য়ালার এ কথাটিতে তার জ্ঞানকেই বোঝানো হয়েছে; তার সত্তাকে নয়।”৮৬
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৮২ ইমাম সুয়ূতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৯পৃ, আলুসী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ২০/৩০৫,
৮৩. ইমাম বায়হাকী, আসমাউ ওয়াল সিফাত, ২/৪৪৬, ক্রমিক, ৮৬৮, আবু হাইয়্যান, আল-বাহরুল মুহীত, ৮/২১৭পৃ. ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৮পৃ.
৮৪ . ইমাম তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তা'ভীলিল কুরআন, ২২/৪ ৬৮পৃ.
৮৫. ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৭৯পৃ.
৮৬. ইমাম বায়হাকী, আল-ই'তিকাদ, ১১৪ পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉বিশিষ্ট মুফাসসির আবু হাইয়ান আল-আন্দালুসী (রহ) (ওফাত.৭৪৫হি.) এবং আল্লামা মাহমুদ আলুসী (রঃ) এই আয়াতের তাফসিরে লিখেন,
وَهَذِهِ آيَةٌ أَجْمَعَتِ الْأُمَّةُ عَلَى هَذَا التَّأْوِيلِ فِيهَا، وَأَنَّهَا لَا تُحْمَلُ عَلَى ظَاهِرِهَا مِنَ الْمَعِيَّةِ بِالذَّاتِ
-“এ আয়াতের উক্ত ব্যাখ্যায় ব্যাপারে উম্মতের সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেছেন । এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ (অর্থাৎ প্রত্যেক কিছুর সাথে সত্তাগতভাবে আল্লাহর বিদ্যমান থাকা) উদ্দেশ্য নয়।”৮৭
👉এজন্যই বড়পীর শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) তার কিতাবে বলেন,
وَلَا يُجَوزُ وَصفة بأنه فى كُل مكان
-“আল্লাহ তা'য়ালা সব জায়গায় বিদ্যমান-এরূপ কথা বলা জায়েয নয়।” (আল গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃ. ৫৪-৫৭, ইমাম যাহাবী, কিতাবুল আৱশ, ১৫৪পৃ.)
আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলা প্রসঙ্গ
_________________________________
যারা আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলেন তারাও পথভ্রষ্ট । তার কারণ আল্লাহর কোন সৃষ্টি তাকে ধারণ করতে সক্ষম নয় ।
মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُحِيطٌ
-নিশ্চয়ই মহান রব সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।’’ (সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত ৫৪)
👉ইমাম ত্বাহাবী (রঃ) বলেন,
مُحِيطٌ بِكُلِّ شَيْءٍ وَفَوْقَهُ وَقَدْ أَعْجَزَ عَنِ الإحاطة خلقه
-“প্রত্যেক বস্তুই তাঁর পরিবেষ্টনে রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে । আর সৃষ্টিকুল তাঁকে পরিবেষ্টনে অক্ষম।”৮৮
আরশ আল্লাহর সৃষ্টি তাই তাকে পরিবেষ্টনে সে অক্ষম। আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালার একটি নামই হল মুহিত বা পরিবেষ্টনকারী।
👉ইমাম ত্বাহাভী (রঃ) তার এ কিতাবের অন্যত্র বলেন,
لَيْسَ فِي مَعْنَاهُ أَحَدٌ من البرية وَتَعَالَى عَنِ الْحُدُودِ وَالْغَايَاتِ وَالْأَرْكَانِ وَالْأَعْضَاءِ وَالْأَدَوَاتِ لا تحويه الجهات الست كسائر المبتدعات
-“আল্লাহ তায়ালার গুণে সৃষ্টি জগতের কেহ নেই। তিনি সীমা, পরিধি, অঙ্গপ্রতঙ্গ এবং উপাদান উপকরণের উর্ধ্বে। সৃষ্টি জগতের ন্যায় ছয় দিকের কোন দিক তাকে বেষ্টন করতে পারে না। ৮৯
বর্তমান লা-মাযহাবি তথা আহলে হাদিসরা যারা মাজার জিয়ারত, মিলাদুন্নবীসহ পালন এ ইত্যাদি সুন্নত আমলকে শিরক বলে বেড়ায় অথচ তারা মহান আল্লাহর ব্যাপারে শিরকী আকিদা পোষণ করে যে রব তায়ালা আরশে সমাসীন আর সেখান থেকে তিনি সব কিছু দেখেন শুনেন।
আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন ধারণা রাখা প্রসঙ্গ
______________________________________
মহান আল্লাহর প্রত্যেক কিছুই সুন্দর ও কামালিয়াতের প্রাণকেন্দ্র। তিনি দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত অর্থাৎ তাঁর মধ্যে দোষ ত্রুটি পাওয়া যাওয়াটা অসম্ভব। এমনি পরিপূর্ণও নয়, ত্রুটিপূর্ণও নয়’-এ রকমের হওয়াটা অসম্ভব। যেমন মিথ্যা, ধোকাবাজী, ওয়াদাভঙ্গ, অত্যাচার, অজ্ঞতা, নির্লজ্জতা ইত্যাদি দোষ তার থেকে প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব । দেওবন্দীদের মত আল্লাহ মিথ্যা বলার ক্ষমতা রাখে’- এ রকম বলা মানে কুদরতের দুর্বলতা মানে বাতুলতা মাত্র। আর এ ধরনের কেউ বিশ্বাস পোষণ করলে সে কাফির হয়ে যাবে ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৮৭. ইমাম আবু হাইয়ান, আল-বাহরুল মুহীত, ১০/১০১, আলুসী, হুল মাআনী, ১৪/১৬৮পৃ.
৮৮. ইমাম তাহাভী, আকিদাতুল তাহাভী, ৫৬, ক্রমিক, ৫১, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি
৮৯. ইমাম তাহাভী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪৪পৃ. ক্রমিক, ৩৮, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রঃ) বলেন,
مِنْ صِفَاتِ كَلِمَةِ اللَّهِ كَوْنُهَا صِدْقًا وَالدَّلِيلُ عَلَيْهِ أَنَّ الْكَذِبَ نَقْصٌ وَالنَّقْصُ عَلَى اللَّهِ مُحَالٌ وَلَا يَجُوزُ إِثْبَاتُ أَنَّ الْكَذِبَ عَلَى اللَّهِ مُحَالٌ -
-“সত্য বলা আল্লাহ তা'য়ালার অন্যতম গুণ। এর পক্ষে দলীল হচ্ছে- মিথ্যা বলা দোষ । আর আল্লাহ তায়ালার মধ্যে কোন দোষ-ত্রুটি থাকা অসম্ভব।”৯০
👉ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (রাঃ) তো সুস্পষ্ট ভাষায় ফতোয়া আরোপ করেছেন,
لأي الفومن لا يوأن يط بالله الگب، بل يخرج بذلك عن الإيمان فكيف يجوز مثلهعلى الليل -
-“কোন মুসলমানের জন্য এটা জায়েয নয় যে, সে আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষে মিথ্যা বলার ধারণা করবে; বরং এ ধরনের ধারণার কারণে সে ঈমান হতে বের হয়ে যাবে (অর্থাৎ-সে কাফির হয়ে যাবে)।”৯১
👉আল্লামা নাসিরুদ্দিন বায়যাভী (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثاً إنكار أن يكون أحد أكثر صدقاً منه، فإنه لا يتطرق الكذب إلى خبره بوجه لأنه نقص وهو على الله محال.
-“আল্লাহ অপেক্ষা কার কথা বেশি সত্য?” ৯২
“এ মহান বাণী এ কথার প্রমাণ যে, তার চেয়ে বেশি সত্যবাদী কেউ নেই। কেননা, তার খবর প্রদানে মিথ্যা কোনভাবেই প্রবেশ করতে পারে না। কারণ, সেটা (মিথ্যা) হচ্ছে একটি জঘন্য দোষ, এটা আল্লাহর জন্য সম্পূর্ণ অসম্ভব।" ৯৩
👉আল্লামা শরবীনী (রঃ) বলেন,
قَوْلُه تعالى فلن يخلف الله عهده فيه دليل على ان الخلف فى خبر الله محال
-“আল্লাহ তাআলার বাণী, অতঃপর আল্লাহ কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না'-এর মধ্যে এ কথার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষে মিথ্যা খবর দেওয়া অসম্ভব। ৯৪
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৯০. ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী : তাফসীরে কাবীর : ১৩/১২৫পৃ. দারু ইহইয়াউত্-তুরাসিল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪২০হি,
৯১. ইমাম রাজী, তাফসীরে কাবির : ১৮৫২১পৃ. দারু ইহইয়াউত-তুরাসিল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪২০হি,
৯২. সূরা নিসা, আয়াত/৮৭
৯৩. ইমাম বায়যাভী, তাফসীরে বায়যাভী, ২৮৮পৃ.
৯৪. আল্লামা শরবীনী, তাফসীরে সিরাজুম মুনীর: পৃ. ৭০
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉ইমাম আলী ইবনে মোহাম্মদ আল-খাযিন (রঃ) বলেছেন,
لا أحد أصدق من الله فإنه لا يخلف الميعاد ولا يجوز عليه الكذب
-“আল্লাহ তা'য়ালার চেয়ে বড় সত্যবাদী কেউ নেই। তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না এবং তার পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভবই নয়।”৯৫
👉ইমাম আবুস সাউদ (রঃ) বলেন,
والكذِبُ مُحالٌ عليه سبحانه دون غيرِه
-“মিথ্যা বলা আল্লাহ তাআলার পক্ষে অসম্ভব।” ৯৬
👉আল্লামা মুঈনুদ্দিন কাশেফী (রঃ) বর্ণনা করেছেন,
ومن اصدق من الله حديثا از خدا ۓ تعالى يعنى نيست از وے راست گوۓ تراز جہت قولى ووعده يعنى كذب رادر سخن ووعده حق راه نيست زيرا كہ آں نقص ست وخداۓ از نقص مبراست-
-“আল্লাহ তাআলার চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? অর্থাৎ তার চেয়ে বেশি সত্যবাদী আর কেউ নেই। অর্থাৎ আল্লাহর কথা ও প্রতিশ্রুতিতে মিথ্যার কোন অবকাশ নেই। কেননা, সেটা (মিথ্যা) একটা জঘন্য দোষ। আর আল্লাহ তাআলা দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র ।”৯৭
👉ইমাম নাসাফী (রঃ) বলেন,
لا أحد أصدق منه في إخباره ووعده ووعيده لاستحالة الكذب عليه لقبحه
-“খবর প্রদান, প্রতিশ্রুতি পূরণ ও শাস্তি প্রদানের হুমকি (যদি ক্ষমা না করেন) পূরণে তার চেয়ে বেশি সত্যবাদী আর কেউ নেই । কারণ, মিথ্যা তার জন্য অসম্ভব- যেহেতু সেটা জঘন্য দোষ। ৯৮
গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম নাওয়াব সিদ্দিক হাসান ভূপালভীও মিথ্যা এবং ওয়াদা খেলাফকে দোষগুলোর মধ্যে গণ্য করেছেন। সুতরাং তিনি লিখেছেন,
وعده كى سچائى صفات حميدة ميں سے ہے جيسے خلف وعد اوصاف ذميمہ ميں سے ہے –
-“প্রতিশ্রুতিতে সত্যবাদিতা প্রশংসিত গুণাবলীর অন্যতম, যেমনিভাবে ওয়াদা ভঙ্গ করা মন্দ গুণাবলীর মধ্যে গণ্য। ৯৯
৪. হায়াত, কুদরত, শোনা, দেখা , বাকশক্তি, ইলম ও ইচ্ছা হচ্ছে তাঁর নিজস্ব সিফাত বা গুণবলী । কিন্তু কান, চোখ ও মুখ দিয়ে শোনা, দেখা ও কথা বলা নয়। কেননা এগুলো হচ্ছে সাকার। কিন্তু আল্লাহ সাকার থেকে পবিত্র । অথচ তিনি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর আওয়াজ শোনেন এবং ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বস্তু, যা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারাও দেখা যায় না, তিনি তা দেখেন। তার দেখার জন্য ওসব কিছুর প্রয়োজন হয়না । তিনি প্রত্যেক কিছু দেখেন ও শোনেন । (শরহে আকায়েদে নাসাফী, ৩৮পৃ.)।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৯৫. ইমাম খাজিন : তাফসীরে লুবাবুত তা'ভীল: ১/৪২১পৃ.
৯৬. ইমাম আবুস সাউদ: তাফসীরে আবিস সাউদ: ২/২১২পৃ.
৯৭. মোল্লা মুঈন উদ্দিন কাশেফী : তাফসীরে হুসাইনী: ১/.১২৭
৯৮. ইমাম নাসাফী । তাহলীৱে মাদাৱিক সূরা নিসা, আয়াত ৮৭
৯৯. তরজুমানে কুরআন: পৃ. ৩৫৯, পারা - ১৬, সূরা মরিয়াম।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫. তার জ্ঞানের বাইরে কোন বস্তু নেই ।
______________________________________
অর্থাৎ আংশিক-সামগ্রিক, বর্তমান-অবর্তমান , সম্ভব-অসম্ভব সবকিছু অনাদিকাল থেকে জানেন এবং অনন্তকাল পর্যন্ত জানবেন । প্রতিটি জিনিস পরিবর্তন হয় কিন্তু তার জ্ঞান পরিবর্তন হয় না। তিনি মনের ধ্যানধারণা সম্পর্কেও জ্ঞাত । তাঁর জ্ঞানের কোন শেষ নেই। (মুসামেরা, ৬২পৃ. শরহে আকায়েদ, ৪২পৃ. ,মাওয়াকেফ, ৮পৃ.)।
মহান আল্লাহর কাছে কোন কিছু গোপন নেই ?
_____________________________________
৬. মহান আল্লাহ তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সবকিছু সম্পর্কে অবগত । তার কাছে কোন কিছু গায়ব বা গোপন নেই । মহান আল্লাহ তা'য়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ
-“নিশ্চয় মহান আল্লাহর কাছে আসমান যমীনে কোন কিছুই গোপন (গায়ব) নেই।” (সূরা আলে ইমরান, ৫)
সত্তাগত জ্ঞানের অধিকারী হওয়াটা একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। যেই ব্যক্তি সত্তাগত অদৃশ্য বা দৃশ্য জ্ঞান খোদা ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রমাণ করে, সে কাফির। ১০০
স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা প্রসঙ্গঃ
_________________________
৭. পার্থিব জীবনে আল্লাহর দিদার লাভ একমাত্র নবী (ﷺ) এর জন্য খাস। এই বিষয়ে সামনে আলোকপাত করা হবে । (আল-মুনতাকিদ, ৬১পৃ.)
👉 ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (রঃ) উল্লেখ করেন,
اخرجه الْبَيْهَقِيّ فِي كتاب الرُّؤْيَة بِلَفْظ ان الله اصْطفى إِبْرَاهِيم بالخلة وَاصْطفى مُوسَى بالْكلَام وَاصْطفى مُحَمَّدًا بِالرُّؤْيَةِ
-“ইমাম বায়হাকী (রঃ) কিতাবুল রুয়াত’ এ বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সূত্রে অর্থাৎ- আল্লাহ তা'য়ালা ইবরাহীম (আঃ) কে বন্ধুত্ব, মূসা (আঃ) কে আলাপ এবং হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে তার দীদার দ্বারা একক মর্যাদা দান করেছেন।” ১০১
পরকালে প্রত্যেক সুন্নি মুসলমানদের জন্য সম্ভব বরং অবশ্যম্ভাবী।” ১০২
রূহানী বা স্বপ্নযোগে সাক্ষাৎ অন্যান্য আম্বিয়ায়ে ও আওলিয়ায়ে কিরামের জন্যও সম্ভব।
আমাদের ইমাম হযরত আবু হানিফা (রঃ) স্বপ্নে একশবার আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করেছেন। (আল-মুনতাকিদ, ৬১-৬২পৃ., ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/১১৮পৃ.)
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১০০. সুরা আনআম, আয়াত-৫০, সুরা নামল-৬৫, শরহে আকায়েদে নাসাফী, শরহে ফিকহুল আকবার ।
১০১. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/২৭০ পৃ. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খসায়েসুল কোবরা : ১১৬১,প., ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব । ৫/১১৭ প, মোল্লা আলী কারী : শরহে শিফা : ১/৪ ৭০। পৃ:
১০২ ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, কিতাবুর রিকাক, হা/৬২০৪ এবং হা/৬৯৯৯
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
অসংখ্য ওলীরা মহান আল্লাহকে স্বপ্নযোগে দেখেছেন; তার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়।
👉 ইমাম নববী (রঃ) উল্লেখ করেন,
قَالَ الْقَاضِي وَاتَّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى جَوَازِ رُؤْيَةِ اللَّهِ تَعَالَى فِي الْمَنَامِ وَلَا اخْتِلَافُ
-“ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) বলেন, সমস্ত উলামাগণ একমত পোষণ করেছেন যে, স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা বিশ্বাস বৈধ । এ ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে কারো কোনো মতভেদ নেই।” ১০৩
👉বিখ্যাত আকায়েদবিদ সা'দ তাফতানী (ওফাত, ৭৯৩হি.) এ প্রসঙ্গে লিখেন,
وَلَا خَفَاءَ أَنَّهَا نَوْعُ مُشَاهَدَةٍ تَكُوْنُ بِالْقَلْبِ دُوْنَ الْعَيْنِ
-“এটা স্পষ্টত একপ্রকারের দর্শন, যা অন্তরের মাধ্যমে হয়ে থাকে; চাক্ষুষ দেখা নয়।” ১০৪
👉ইমাম বাগভী (রঃ) এ প্রসঙ্গে লিখেন,
قَالَ الإِمَامُ: رُؤْيَةُ اللَّهِ فِي الْمَنَامِ جَائِزَةٌ،......وَتَكُونُ رُؤْيَتُهُ جَلَّتْ قُدْرَتُهُ ظُهُورَ الْعَدْلِ، وَالْفَرَجِ، وَالْخِصْبِ، وَالْخَيْرِ لأَهْلِ ذَلِكَ الْمَوْضِعِ، فَإِنْ رَآهُ فَوَعَدَ لَهُ جَنَّةً، أَوْ مَغْفِرَةً، أَوْ نَجَاةً مِنَ النَّارِ، فَقَوْلُهُ حَقٌّ، وَوَعْدُهُ صِدْقٌ، وَإِنْ رَآهُ يَنْظُرُ إِلَيْهِ، فَهُوَ رَحْمَتُهُ، وَإِنْ رَآهُ مُعْرِضًا عَنْهُ، فَهُوَ تَحْذِيرٌ مِنَ الذُّنُوبِ
-“ স্বপ্নে আল্লাহ কে দেখা বৈধ ।......স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভবপর । যদি কেউ তাঁকে জান্নাত কিংবা মাগফিরাত বা নাজাতের কথা বলতে দেখে, তা হলে তাঁর কথা হক্ক ও তাঁর ওয়াদা সত্য। যদি সে তাঁকে তার প্রতি দৃষ্টি দান করতে দেখে, তবে তা তার প্রতি দয়ার লক্ষণ আর যদি তাঁকে অবজ্ঞা করতে দেখে, তবে তা হবে পাপ থেকে সতর্ক করার লক্ষণ।”১০৫
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১০৩. ইমাম নববী, শরহে মুসলিম, ১৫/২৫পৃ. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১২/৩৮৭পৃ.
১০৪ শারহুল মাওয়াকিফ,
১০৫. বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ, ১২/২২৭পৃ. হা/৩২৮৮।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
আল্লাহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা
1. আল্লাহ তা'য়ালার কী সৃষ্টির মত আকৃতি রয়েছে ?
2. আল্লাহর আকৃতিতে আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বানানো প্রসঙ্গ
3. আল্লাহকে স্বশরীরে সর্বত্র বিরাজমান আক্বিদা রাখা প্রসঙ্গ
4. আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলা প্রসঙ্গ
5. আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন ধারণা রাখা প্রসঙ্গ
6. মহান আল্লাহর কাছে কোন কিছু গোপন নেই
7. স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা প্রসঙ্গ
______________________________________
আল্লাহ সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা
______________________________________
আল্লাহ তায়ালার কী সৃষ্টির মত আকৃতি রয়েছে?
______________________________________
আল্লাহ আকার আকৃতি হতে মুক্ত-এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা, কেননা আকার আকৃতি থাকলে কেমন তার অবকাশ রাখে । মানুষ বা সৃষ্টি শুনতে কান, দেখতে চোখের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু স্রষ্টার জন্য মানুষের বা সৃষ্টির মত কোন কিছুই প্রয়োজন পড়ে না। স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা দেয়া কুফুরী ।
👉 ইমাম তাহাভী (রঃ) বলেন,
وَمَنْ وَصَفَ اللَّهَ بِمَعْنًى مِنْ مَعَانِي الْبَشَرِ فَقَدْ كُفر
-“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'য়ালাকে মানবীয় গুণাবলী হতে কোন গুণের দ্বারা গুণান্বিত করবে সে কাফির ।” ৫৩
👉 ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) বলেন,
لَا يشبه شَيْئا من الْأَشْيَاء من خلقه وَلَا يُشبههُ شَيْء مِنْ خلقه-
-“আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টির কোন বস্তুর মত নন, এমনকি তিনি কোনো সৃষ্টির মত নন।” ৫৪
👉 ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন,
لَا يُشْبِهُ شَيْئًا مِنْ مَخْلُوقَاتِهِ وَلَا يُشْبَّهُ بِهِ
-“সৃষ্টির কিছুই আল্লাহর সাথে সাদৃশ্য নেই, এবং তিনিও কারও সদৃশ নন।” ৫৫
মিরাজে আল্লাহকে নবিজি দেখেছেন-তা সত্য; কিন্তু তিনি কোন আকৃতির কথা বর্ণনা করেননি।
👉 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
رَأَيْت رَبِّي عَزَّوَجَلَّ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ
রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
-“আমি আমার রব আল্লাহ তা'য়ালাকে দেখেছি, তবে তার সাথে (সৃষ্টি) কোন সদৃশ্য বা তুলনা নেই।”৫৬
👉 মহান রব তা'য়ালা ইরশাদ করেন,
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ
“তার কোন দৃষ্টান্ত তথা উপমা নেই।”৫৭
👉 ইমাম বায়হাক্বী (রঃ) বলেন,
فَإِنَّ الَّذِي يَجِبُ عَلَيْنَا وَعَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ أَنْ يَعْلَمَهُ: أَنَّ رَبَّنَا لَيْسَ بِذِي صُورَةٍ وَلَا هَيْئَةٍ، فَإِنَّ الصُّورَةَ تَقْتَضِي الْكَيْفِيَّةَ وَهِيَ عَنِ اللَّهِ وَعَنْ صِفَاتِهِ مَنْفِيَّةٌ
-“নিশ্চয় আমাদের ও সকল মুসলমানের জানা অত্যাবশ্যক যে, আমাদের প্রভু আকৃতি ও অবয়ব বিশিষ্ট নহেন। কেননা, আকৃতি তথা কেমন’ এর চাহিদা রাখে । অথচ কেমন প্রশ্নটি আল্লাহ ও তাঁর গুণবলীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।” ৫৮
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫৩. তাহবী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪১ পৃ, আকিদা নং ৩৪, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি
৫৪. ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবার, ১৪ পৃ.
৫৫. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১৬৮পৃ. মাকতুবাতুল মিসরিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ, ১৩৮৪হি.।
৫৬. দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/২৫৪পৃ. হাদিস ও ৩১৮৩
৫৭. সুরা আশ-শুরা, আয়াত, ১১
৫৮. ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬৬পৃ. হাদিস ও ৬৪১, মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৩হি,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 ইমাম বায়হাকী (রঃ) আরও বলেন,
وَلَا يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ الْبَارِي تَعَالَى مُصَوَّرًا وَلَا أَنْ يَكُونَ لَهُ صُورَةٌ، لِأَنَّ الصُّورَةَ مُخْتَلِفَةٌ
“আল্লাহ তা'য়ালার জন্য আকৃতি আছে ধারণা করা বৈধ নয়, কেননা তার কোন আকৃতি নেই । আর তাঁর আকৃতি হলো স্বতন্ত্র ।” ৫৯
👉 ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (রঃ) বলেন,
فَلَيْسَ سبحانه بذى لون و لارائحة ولاصورة ولاشكل
-“মহান আল্লাহ রং, গন্ধ, আকৃতি এবং অবয়ব বিশিষ্ট নন।” ৬০
👉 ইমাম আবুল মানসুর মাতুরীদি (রঃ) বলেন,
وليس بجسم، ولا شبه، ولا جثة، ولا صورة، ولا لحم، ولا دم، ولا شخص ولا جوهر ولا عرض،.....
-“মহান আল্লাহ দেহ, কোনো সৃষ্টির সাদৃশ্য, দেহ বা শরীর, আকৃতি, মাংসবহুল, রং, বড় দেহ বিশিষ্ট, বস্তু/পদার্থ, প্রার্শ্ব, এমনকি নেই কোন সাদৃশ, আকৃতি গোস্ত, ......এগুলো থেকে পবিত্র ।” ৬১
👉 ইমাম মাতুরীদি (রঃ) আরও বলেন,
لا تشبه صفاته صفات المخلوقين، ولا اشتبهت صفات الخلق صفاته
-“মহান আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলীর মধ্যে তাঁর কোন সৃষ্টির গুণাবলীর সাদৃশ্য নেই।" ৬২
তাই বুঝা গেল আল্লাহকে কোন আকৃতি দ্বারা ব্যাখ্যা করলে, প্রশ্নের অবকাশ রাখে যে তাহলে তার আকৃতি কীসের মত তাই বলা যাবে না। এ বিষয়ে ইমাম বুখারীর উস্তাদ।
👉 ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ (রঃ) বলেন,
قَالَ الْأَئِمَّةُ -مِنْهُمْ نُعَيْم بْنُ حَمَّادٍ الْخُزَاعِيُّ شَيْخُ الْبُخَارِيِّ -: مَنْ شَبَّهَ اللَّهَ بِخَلْقِهِ فَقَدْ كَفَرَ
-“তিনি বলেন, যে মহান আল্লাহকে তার সৃষ্টির সাথে তুলনা/সাদৃশ্য করবে সে কাফির। ৬৩
পবিত্র কুরআনে কোন কোন স্থানে মহান রব তার যে অঙ্গ উল্লেখ করেছেন তা মূলত তার গুণাবলীকে বুঝানো হয়েছে; তাই তার সরাসরি অর্থ এখানে গ্রহণ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এবং আকায়েদের -
👉 অন্যতম ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেন,
أَنْ تَكُونَ الصُّورَةُ بِمَعْنَى الصِّفَةِ-
-“কোনো ক্ষেত্রে যদি আকৃতি প্রকাশের কথা আসে তা হবে তাঁর সিফাত বা গুণবলী।” ৬৪
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫৯. ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬০পৃ. মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৩হি,
৬০. ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম, আল-মুসাইরাত, ২১৮পৃ.
৬১. ইমাম মাতুরীদি, তাফসীরে মাতুরীদি, ১/১৩৫পু,
৬২. ইমাম মাতুরীদি, তাফসীরে মাতুরীদি, ৮/২৬৭পৃ.
৬৩. ইবনে কাসির, তাফসীরে ইবনে কাসির, ৩/৪ ২৭.
৬৪. ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬৬পূ, হাদিস : ৬৪১, মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেন্দা, প্রথম প্রকাশ, ১৪ ১৩হি,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) উল্লেখ করেন,
أَنَّ الْمُرَادَ بِالصُّورَةِ الصِّفَةُ وَإِلَيْهِ مَيْلُ الْبَيْهَقِيّ
-“(অনেকের মতে-উপযুক্ত হাদিসে) ‘আকার' দ্বারা ‘সিফাত (গুণ)ই উদ্দেশ্য। এ মতের দিকেই ইমাম আবু বকর আল-বাইহাকী (রঃ)-এর ঝোঁক রয়েছে।”৬৫
👉 তিনি আরও উল্লেখ করেন,
قَالَ الْقُرْطُبِيُّ الْمُرَادُ بِالصُّورَةِ الصِّفَةُ
-“ইমাম কুরতবী (রঃ) বলেন, এখানে আল্লাহর আকৃতি বলতে গুণই বুঝানো হবে।”৬৬
👉 ইমাম নববী (রঃ) ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) এর বরাতে উল্লেখ করেন,
لَا يَجُوزُ عَلَيْهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى التَّجَسُّمُ
-“আল্লাহ তা'য়ালার জন্য দেহাবয়ব আছে ধারণা করা বৈধ নয়।”৬৭
আল্লাহর আকৃতিতে আদম (আঃ) কে বানানো প্রসঙ্গ।
______________________________________
আমাদের সমাজের কিছু বাউল ও সাধারণ মুসলমানের ধারণা এরূপ । প্রকৃতপক্ষে এরূপ ধারণা রাখা বৈধ নয়; বরং এটি বাতিল পন্থীদের আক্বিদা ।
👉 ইমাম ত্বাহাভী (রঃ) তার আক্বিদাতুত ত্বাহাভীর ভূমিকায় বলেন,
المرجئة يقولون ان الله خلق ادم على صورته والعرش مكان لله-
-“ফিরকায়ে মুর্জিয়া সম্প্রদায় বলে, নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। আরশ হল আল্লাহর স্থান।"৬৮
আমাদের সমাজে এখন বহু লাকে এ হাদিসটি অনেক সময় বলে থাকেন যে,
خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ‘
‘আল্লাহ আদম (আঃ) কে তাঁর স্বীয় ছুরতে (আকৃতিতে) সৃষ্টি করেছেন। এই হাদিসের প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করা মূলত গোমরাহী ছাড়া আর কিছু নয়।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৬৫ ইমাম ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১৩/৪২৭পৃ.
৬৬. ইমাম ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১১/৪১৩পৃ.
৬৭. ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, ১৫/২৫পৃ.
৬৮ মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল আদাব, বুখারি ও মুসলিম শরিফের সূত্রে ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেন,
وَقد يُقَال: هُوَ عَائِد إِلَى الله تَعَالَى، لَكِن الصُّورَة هِيَ الْهَيْئَة وَذَلِكَ لَا يَصح إلاَّ على الْأَجْسَام، فَمَعْنَى الصُّورَة الصّفة كَمَا يُقَال: عرفني صُورَة هَذَا الْأَمر أَي: صفته، يَعْنِي: خلق آدم على صفته أَي حَيا عَالما سميعاً بَصيرًا متكلماً
-‘‘এ ব্যাখ্যাও করা যায় যে, عَلَى صُورَتِهِ এর ه সর্বনামটি الله এর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী কিন্তু ছুরত অর্থ আকৃতি। আর এমন অর্থ জিসিম বা শরীর ব্যতীত প্রয়োগ হয় না। তাই এখানে الصُّورَة শব্দটি الصّفة বা গুণ অর্থে ব্যবহৃত। যেমন আরবীতে বলা হয়- عرفني صُورَة هَذَا الْأَمر (এ বিষয়ে ছুরত আমাকে অবগত করুন) বক্তব্যটিতে الصُّورَة শব্দটি গুণ অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ আদমকে আল্লাহর গুণে সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাৎ আদমকে আল্লাহর গুণ জীবিত, জ্ঞানী, শ্রবণকারী, দৃষ্টিসম্পন্ন এবং বক্তা হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
)خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ ) أَيْ: عَلَى صُورَتِهِ الَّتِي اسْتَمَرَّ عَلَيْهَا إِلَى أَنْ أُهْبِطَ، وَإِلَى أَنْ مَاتَ دَفْعًا لِتَوَهُّمِ أَنَّ صُورَتَهُ كَانَتْ فِي الْجَنَّةِ عَلَى صِفَةٍ أُخْرَى-
-“আল্লাহ তা'য়ালা আদম (আঃ) কে ঐ আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন যে আকৃতির উপর তাকে জান্নাত হতে জমিনে অবতরণ করা হয় এবং ইন্তিকাল পর্যন্ত ছিলেন। জান্নাতে তার আকৃতি অন্য রকম ছিল, এমন সন্দেহকে দূর করার জন্য এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ৭০
কিন্তু বিজ্ঞ আকায়েদবিদগণের মতে-“আল্লাহ তা'য়ালা দিক, কাল, গতি, স্থিতি, আকার-আকৃতির এবং যাবতীয় অঘটন থেকে পবিত্র। (মুসামের, ৩১পৃ. মাসায়েরা, ৩৯৩পৃ. বাহারে শরীয়ত প্রথম খণ্ড)
আল্লাহকে স্বশরীরে সর্বত্র বিরাজমান আক্বিদা রাখা প্রসঙ্গ
______________________________________
আল্লাহকে সর্বত্র হাযির বলা যাবে না এবং আহলে হাদিসদের মতে আল্লাহ আরশে আযীমে সমাসীনও বলা যাবে না। কেননা আল্লাহ স্থান কাল থেকে মুক্ত । মহান আল্লাহ সমস্ত জগত বেষ্টন করে রয়েছে। অনেকে রাসূল (ﷺ) কে হাযির নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে বলেন হাযির-নাযির আল্লাহর গুণ । কিন্তু আহলে হাদিসদেরই মাযহাব আল্লাহ সব জায়গায় হাযির-নাযির নন; বরং আরশে সমাসীন; কিন্তু রাসূল (ﷺ)'র হাযির-নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে তাদের নিজস্ব মতবাদ ভুলে যান । আর দেওবন্দীরা তাদের বিভিন্ন আকায়েদের কিতাবে লিখে থাকেন যে, আল্লাহ স্থান, কাল, আকার, আকৃতি থেকে মুক্ত । কিন্তু রাসূল (ﷺ)'র হাযির-নাযির অস্বীকার করতে গিয়ে তারা আবার বেঁকে বসে এবং মুতাযিলা ও কাদারিয়া ফিরকার আক্বিদা পোষণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তারও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অনুসারী বলে দাবী করে।
👉 ইমাম জুরজানী (রহ) বলেন-
أََنَّهُ تَعَالَى لَيْسَ فِي جِهَة، وَلَا فِي مَكَان.
“মহান আল্লাহ কোনো দিকে বা স্থানে নন।” ৭১
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৬৯ আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ২২/২২৯পৃ. হাদিস : ৬২২৭
৭০. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাতুল মাফাতীহ, ৭/২৯৩৫পৃ. হাদিস : ৪৬২৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়র, লেবানন ।
৭১. ইমাম জুরজানী, শরহুল মাওয়াকিফ, ২/৫১-৫২পৃ., সাফর বিন আবদুর রাহমান আল-হাওলী, মিনহাজুল আশাইরাহ, ৭৯পৃ. (শামিলা)
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 ইমামে আহলে সুন্নাহ আবু মানসূর মাতুরিদী {ওফাত.৩৩৩হি.} বলেন,
وَقَالَت القَدَرِية وَ الْمُعْتَزِلَة اَنَّ اللهَ تَعَالى فِى كُل مَكَان
-“মুতাযিলা ও কাদারিয়াগণ বলেন, আল্লাহ সব স্থানে উপস্থিত।”৭২
👉 ইমাম ইবনে জারীর আত্-তবারী (রঃ) বলেন,
لَا يَتَمكن فِي كُلّ مَكَان.
-‘‘তিনি কোনো (নির্দিষ্ট) স্থানে নন।’’ ৭৩
👉 ইমাম কুরতুবী আন্দুলুসী (রঃ) বলেন,
وَأَنَّهُ فِي كُل مَكَان بِعِلْمِهِ
-“নিশ্চই মহান রবের জ্ঞান সকল স্থানে উপস্থিত ।” ৭৪
👉 শায়খ আহমাদ বিন উমর মাসআদ হাযামী তার شَرْحِ كِتَابُ الْتَوْحِيْد কিতাবের ৫৩/৮ পৃষ্ঠায় (শামিলা) উল্লেখ করেন-
اِعْتَقَد أَنَّ اللهَ تَعَالى فِي كُل مَكَان هَذَا كُفْرٌ أَكْبَرْ
-‘‘কেউ যদি আক্বিদা রাখে আল্লাহ সবখানে (হাযির-নাযির) এই ধারণা কুফুরে আকবার।’’
👉 ইমামে আহলে সুন্নাহ আবুল হাসান আশ‘আরী (রহ) {ওফাত. ৩২৪হি.} তার الإبانة عن أصول الديانة গ্রন্থের ১০৯ পৃষ্ঠায় (যা দারুল আনসার, কায়রু মিশর হতে ১৩৯৭ হিজরীতে প্রকাশিত) লিখেন-
وزعمت المعتزلة والحرورية والجهمية أن الله تعالى في كل مكان
-‘‘মুতাযিলা, হারুরিয়াহ এবং জাহমিয়্যাহ বাতিল ফিরকার লোকেরা বিশ্বাস করে আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন।’’
👉 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ)-এর ছেলে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ হাম্বল (ওফাত. ২৪১হি.) তিনি তার الرد على الجهمية والزنادقة কিতাবের ১১৪পৃষ্ঠায় এ আক্বিদা পোষণ কারীদের খণ্ডনে একটি শিরোনাম করেন এ নাম দিয়ে-
الرد على الجهمية في زعمهم أن الله في كل مكان
-‘‘আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন জাহমিয়্যাহ ফিরকার বাতিল আক্বিদার খণ্ডন।’’ জাহমিয়্যাহ ফিরকার মতে, ইবাদত করা হয় এমন কোন ইলাহ আসমানে নেই। আল্লাহ তা'য়ালা স্বত্তাগতভাবে জগতের সর্বত্র বিদ্যমান রয়েছেন। ৭৫
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৭২. ইমাম মাতুরিদী, শরহুল ফিকহুল আকবার, ১৯পৃ.,
৭৩. ইমাম ইবনে জারীর আত্-তবারীঃ তফসীরে তাবারী : ৬/২১০ পৃ
৭৪. ইমাম কুরতবী, হিদায়া ইলা বলল নিহায়া, ১/১২,
৭৫. ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ, ৩/১৯৪পৃ., ইবনু কুদামাহ, ইছবাতু সিফাতিল উলুয়ি, ১১৮পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉 একদা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের উস্তাদ ইমাম সা'ঈদ ইবনু ‘আমির আদ-দুবাঈ (ওফাত.২০৮হি.)-এর নিকট একবার জাহমিয়্যাদের কথা উঠলো। তখন তিনি বললেন,
الْجَهْمِيَّةُ أَشَرُّ قَوْلًا مِنَ الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى
-“তারা তো ইয়াহুদী-খৃস্টানদের চাইতেও নিকৃষ্ট কথা বলে।”৭৬
👉 ইমাম যাহাবী (রঃ) তার এক কিতাবে লিখেন,
مَنْ قَالَ بَأَنَّ اَلله بِذَاتِه فِي كُلِّ مَكَان فَهُوَ مُخَالِف لِلْكِتَاب ِوَالسُّنَّة وَإِجْمَاع سَلْف اَلأِمَّة
-“যে ব্যক্তি বলবে মহান রব সত্ত্বাগতভাবে সর্বত্র তাহলে তা হবে কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ এবং পূর্ববর্তী উম্মতের আকিদার বিপরীত। ৭৭
তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেন,
وأما قول العامة وكثير من الخاصة الله موجود فى كل مكان أو فى كل الوجود ويعنون بذاته فهو ضلال بل هو مأخوذ من القول بوحدة الوجود الذى يقول به غلاة الصوفية الذين لا يفرقون بين الخالق والمخلوق
- ‘আল্লাহ সত্তাগতভাবে সর্বত্র বিদ্যমান'- সর্বসাধারণ ও বহু বিশিষ্টজনের এরূপ কথা ভ্রান্ত। বস্তুতপক্ষে তা চরমপন্থী অদ্বৈতবাদী সূফীদের ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ'- এর বক্তব্য থেকেই গৃহীত।” ৭৮
👉 হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমাদ ইয়ার খান নাঈমী (রঃ) লিখেন,
خدا كو هر جگہ ماننا بے دينى هے
-“আল্লাহ তা'য়ালাকে প্রত্যেক যায়গায় আছে মনে করা অধার্মিকতারই নামান্তর।” ৭৯
অনেকে বলতে পারেন মহান আল্লাহ তা'য়ালা তো বলেছেন যে,
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ
-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন।” (সূরা হাদীদ, ৪)
প্রকৃতপক্ষে এখানে মহান রব তার জ্ঞান সকলের সাথে আছে তাই বুঝিয়েছেন।
👉 এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূতি (রঃ) উল্লেখ করেন,
وَأخرج الْبَيْهَقِيّ فِي الْأَسْمَاء وَالصِّفَات عَن سُفْيَان الثَّوْريّ رَضِي الله عَنهُ أَنه سُئِلَ عَن قَوْله: {وَهُوَ مَعكُمْ} قَالَ: علمه
“ইমাম বায়হাকী (রঃ) তাঁর ‘আসমাউ ওয়াল সিফাত' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম সুফিয়ান সাওড়ী (রঃ) কে এই আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান তোমাদের সাথে আছে তা মহান রব বুঝিয়েছেন। ৮০
👉 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বলেন,
وقدرته وعلمه في كل مكان -
-“আল্লাহর কুদরত (ক্ষমতা) এবং জ্ঞান সর্বত্র উপস্থিত।" ৮১
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৭৬. ইমাম বুখারী, খালকু আফ'আলিল ইবাদ, ৩০, যাহাবী, আল-উলুয়, ১৫৮পৃ.
৭৭. যাহাবী, কিতাবুল 'আরশ, ১৮২পৃ.
৭৮. যাহাবী, আল-“উলুউ পৃ. ১৭৪
৭৯. মুফতি আহমদ ইয়ার খান, জ্বা'আল হক, ১/১৫৩পৃ. (উর্দু)
৮০.ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৯পৃ. আলুসী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ২০/৩০৫পৃ., ইমাম বায়হাকী, আসমাউ ওয়াল সিফাত, ২/৪৪৮পৃ. ক্রমিক, ৮৭০
৮১. ইমাম লালকায়ী, ই'তিকাদে আহলে সুন্নাহ, ৩/৪ ০১পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ুতি (রঃ) উল্লেখ করেন,
أخرج ابْن أبي حَاتِم عَن ابْن عَبَّاس فِي قَوْله: {وَهُوَ مَعكُمْ أَيْن مَا كُنْتُم} قَالَ: عَالم بكم أَيْنَمَا كُنْتُم
👉“ইমাম আবু হাতেম (রঃ) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।”৮২
👉বিশিষ্ট মুফাসসির মুকাতিল ইবনু হাইয়ান (১৫০হি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
يَعْنِي قدرته وسلطانه وَعلمه مَعكُمْ إينما كُنْتُم
-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমরা তাঁর (আল্লাহর) কুদরাত, প্রতিপত্তি ও জ্ঞানের ব্যাপ্তির মধ্যেই রয়েছে। ৮৩
👉 আবার অনেকে বলতে পারেন মহান রব পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,
مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوى ثَلاثَةٍ إِلاَّ هُوَ رابِعُهُمْ
-“তোমার কোন স্থানে যদি তিনজন থাক চতুর্থজন হিসেবে তিনি (মহান আল্লাহ) থাকেন।" (সূরা মুজাদালাহ, ৭)
তাই অনেকে বলে থাকেন মহান রব সকলের সাথেই আছেন।
👉ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী (রঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,
بِمَعْنَى أَنَّهُ مُشَاهِدُهُمْ بِعِلْمِهِ
-“তাঁর (আল্লাহর) ইলমের মাধ্যমে তাদেরকে প্রত্যক্ষ করেন।" ৮৪
ইমাম সুয়ূতি (রঃ) তাবেয়ী যাহহাক (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন-
وَعلمه مَعَهم
“তার জ্ঞান তোমাদের (চতুর্থজন হিসেবে) সকলের সাথে আছে ।”৮৫
👉ইমাম বায়হাকী (রঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন,
وَفِيمَا كَتَبْنَا مِنَ الْآيَاتِ دَلَالَةٌ عَلَى إِبْطَالِ قَوْلِ مَنْ زَعَمَ مِنَ الْجَهْمِيَّةِ أَنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى بِذَاتِهِ فِي كُلِّ مَكَانٍ، وَقَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ {وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ} [الحديد: ৪] ، إِنَّمَا أَرَادَ بِهِ بِعِلْمِهِ لَا بِذَاتِهِ
-“আমরা যে সব আয়াত লিপিবদ্ধ করেছি তা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, জাহমিয়াদের মধ্যে যারা মনে করে যে, আল্লাহ তা'য়ালা সত্তাগতভাবে প্রত্যেক স্থানে বিদ্যমান রয়েছেন - তা অমূলক। তিনি তোমাদের সাথেই থাকেন, তোমরা যেখানেই থাকনা কেন।' (সূরা হাদিদ, ৪)
আল্লাহ তা'য়ালার এ কথাটিতে তার জ্ঞানকেই বোঝানো হয়েছে; তার সত্তাকে নয়।”৮৬
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৮২ ইমাম সুয়ূতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৯পৃ, আলুসী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ২০/৩০৫,
৮৩. ইমাম বায়হাকী, আসমাউ ওয়াল সিফাত, ২/৪৪৬, ক্রমিক, ৮৬৮, আবু হাইয়্যান, আল-বাহরুল মুহীত, ৮/২১৭পৃ. ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৮পৃ.
৮৪ . ইমাম তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তা'ভীলিল কুরআন, ২২/৪ ৬৮পৃ.
৮৫. ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৭৯পৃ.
৮৬. ইমাম বায়হাকী, আল-ই'তিকাদ, ১১৪ পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉বিশিষ্ট মুফাসসির আবু হাইয়ান আল-আন্দালুসী (রহ) (ওফাত.৭৪৫হি.) এবং আল্লামা মাহমুদ আলুসী (রঃ) এই আয়াতের তাফসিরে লিখেন,
وَهَذِهِ آيَةٌ أَجْمَعَتِ الْأُمَّةُ عَلَى هَذَا التَّأْوِيلِ فِيهَا، وَأَنَّهَا لَا تُحْمَلُ عَلَى ظَاهِرِهَا مِنَ الْمَعِيَّةِ بِالذَّاتِ
-“এ আয়াতের উক্ত ব্যাখ্যায় ব্যাপারে উম্মতের সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেছেন । এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ (অর্থাৎ প্রত্যেক কিছুর সাথে সত্তাগতভাবে আল্লাহর বিদ্যমান থাকা) উদ্দেশ্য নয়।”৮৭
👉এজন্যই বড়পীর শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) তার কিতাবে বলেন,
وَلَا يُجَوزُ وَصفة بأنه فى كُل مكان
-“আল্লাহ তা'য়ালা সব জায়গায় বিদ্যমান-এরূপ কথা বলা জায়েয নয়।” (আল গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃ. ৫৪-৫৭, ইমাম যাহাবী, কিতাবুল আৱশ, ১৫৪পৃ.)
আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলা প্রসঙ্গ
_________________________________
যারা আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলেন তারাও পথভ্রষ্ট । তার কারণ আল্লাহর কোন সৃষ্টি তাকে ধারণ করতে সক্ষম নয় ।
মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُحِيطٌ
-নিশ্চয়ই মহান রব সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।’’ (সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত ৫৪)
👉ইমাম ত্বাহাবী (রঃ) বলেন,
مُحِيطٌ بِكُلِّ شَيْءٍ وَفَوْقَهُ وَقَدْ أَعْجَزَ عَنِ الإحاطة خلقه
-“প্রত্যেক বস্তুই তাঁর পরিবেষ্টনে রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে । আর সৃষ্টিকুল তাঁকে পরিবেষ্টনে অক্ষম।”৮৮
আরশ আল্লাহর সৃষ্টি তাই তাকে পরিবেষ্টনে সে অক্ষম। আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালার একটি নামই হল মুহিত বা পরিবেষ্টনকারী।
👉ইমাম ত্বাহাভী (রঃ) তার এ কিতাবের অন্যত্র বলেন,
لَيْسَ فِي مَعْنَاهُ أَحَدٌ من البرية وَتَعَالَى عَنِ الْحُدُودِ وَالْغَايَاتِ وَالْأَرْكَانِ وَالْأَعْضَاءِ وَالْأَدَوَاتِ لا تحويه الجهات الست كسائر المبتدعات
-“আল্লাহ তায়ালার গুণে সৃষ্টি জগতের কেহ নেই। তিনি সীমা, পরিধি, অঙ্গপ্রতঙ্গ এবং উপাদান উপকরণের উর্ধ্বে। সৃষ্টি জগতের ন্যায় ছয় দিকের কোন দিক তাকে বেষ্টন করতে পারে না। ৮৯
বর্তমান লা-মাযহাবি তথা আহলে হাদিসরা যারা মাজার জিয়ারত, মিলাদুন্নবীসহ পালন এ ইত্যাদি সুন্নত আমলকে শিরক বলে বেড়ায় অথচ তারা মহান আল্লাহর ব্যাপারে শিরকী আকিদা পোষণ করে যে রব তায়ালা আরশে সমাসীন আর সেখান থেকে তিনি সব কিছু দেখেন শুনেন।
আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন ধারণা রাখা প্রসঙ্গ
______________________________________
মহান আল্লাহর প্রত্যেক কিছুই সুন্দর ও কামালিয়াতের প্রাণকেন্দ্র। তিনি দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত অর্থাৎ তাঁর মধ্যে দোষ ত্রুটি পাওয়া যাওয়াটা অসম্ভব। এমনি পরিপূর্ণও নয়, ত্রুটিপূর্ণও নয়’-এ রকমের হওয়াটা অসম্ভব। যেমন মিথ্যা, ধোকাবাজী, ওয়াদাভঙ্গ, অত্যাচার, অজ্ঞতা, নির্লজ্জতা ইত্যাদি দোষ তার থেকে প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব । দেওবন্দীদের মত আল্লাহ মিথ্যা বলার ক্ষমতা রাখে’- এ রকম বলা মানে কুদরতের দুর্বলতা মানে বাতুলতা মাত্র। আর এ ধরনের কেউ বিশ্বাস পোষণ করলে সে কাফির হয়ে যাবে ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৮৭. ইমাম আবু হাইয়ান, আল-বাহরুল মুহীত, ১০/১০১, আলুসী, হুল মাআনী, ১৪/১৬৮পৃ.
৮৮. ইমাম তাহাভী, আকিদাতুল তাহাভী, ৫৬, ক্রমিক, ৫১, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি
৮৯. ইমাম তাহাভী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪৪পৃ. ক্রমিক, ৩৮, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রঃ) বলেন,
مِنْ صِفَاتِ كَلِمَةِ اللَّهِ كَوْنُهَا صِدْقًا وَالدَّلِيلُ عَلَيْهِ أَنَّ الْكَذِبَ نَقْصٌ وَالنَّقْصُ عَلَى اللَّهِ مُحَالٌ وَلَا يَجُوزُ إِثْبَاتُ أَنَّ الْكَذِبَ عَلَى اللَّهِ مُحَالٌ -
-“সত্য বলা আল্লাহ তা'য়ালার অন্যতম গুণ। এর পক্ষে দলীল হচ্ছে- মিথ্যা বলা দোষ । আর আল্লাহ তায়ালার মধ্যে কোন দোষ-ত্রুটি থাকা অসম্ভব।”৯০
👉ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (রাঃ) তো সুস্পষ্ট ভাষায় ফতোয়া আরোপ করেছেন,
لأي الفومن لا يوأن يط بالله الگب، بل يخرج بذلك عن الإيمان فكيف يجوز مثلهعلى الليل -
-“কোন মুসলমানের জন্য এটা জায়েয নয় যে, সে আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষে মিথ্যা বলার ধারণা করবে; বরং এ ধরনের ধারণার কারণে সে ঈমান হতে বের হয়ে যাবে (অর্থাৎ-সে কাফির হয়ে যাবে)।”৯১
👉আল্লামা নাসিরুদ্দিন বায়যাভী (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثاً إنكار أن يكون أحد أكثر صدقاً منه، فإنه لا يتطرق الكذب إلى خبره بوجه لأنه نقص وهو على الله محال.
-“আল্লাহ অপেক্ষা কার কথা বেশি সত্য?” ৯২
“এ মহান বাণী এ কথার প্রমাণ যে, তার চেয়ে বেশি সত্যবাদী কেউ নেই। কেননা, তার খবর প্রদানে মিথ্যা কোনভাবেই প্রবেশ করতে পারে না। কারণ, সেটা (মিথ্যা) হচ্ছে একটি জঘন্য দোষ, এটা আল্লাহর জন্য সম্পূর্ণ অসম্ভব।" ৯৩
👉আল্লামা শরবীনী (রঃ) বলেন,
قَوْلُه تعالى فلن يخلف الله عهده فيه دليل على ان الخلف فى خبر الله محال
-“আল্লাহ তাআলার বাণী, অতঃপর আল্লাহ কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না'-এর মধ্যে এ কথার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষে মিথ্যা খবর দেওয়া অসম্ভব। ৯৪
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৯০. ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী : তাফসীরে কাবীর : ১৩/১২৫পৃ. দারু ইহইয়াউত্-তুরাসিল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪২০হি,
৯১. ইমাম রাজী, তাফসীরে কাবির : ১৮৫২১পৃ. দারু ইহইয়াউত-তুরাসিল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪২০হি,
৯২. সূরা নিসা, আয়াত/৮৭
৯৩. ইমাম বায়যাভী, তাফসীরে বায়যাভী, ২৮৮পৃ.
৯৪. আল্লামা শরবীনী, তাফসীরে সিরাজুম মুনীর: পৃ. ৭০
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
👉ইমাম আলী ইবনে মোহাম্মদ আল-খাযিন (রঃ) বলেছেন,
لا أحد أصدق من الله فإنه لا يخلف الميعاد ولا يجوز عليه الكذب
-“আল্লাহ তা'য়ালার চেয়ে বড় সত্যবাদী কেউ নেই। তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না এবং তার পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভবই নয়।”৯৫
👉ইমাম আবুস সাউদ (রঃ) বলেন,
والكذِبُ مُحالٌ عليه سبحانه دون غيرِه
-“মিথ্যা বলা আল্লাহ তাআলার পক্ষে অসম্ভব।” ৯৬
👉আল্লামা মুঈনুদ্দিন কাশেফী (রঃ) বর্ণনা করেছেন,
ومن اصدق من الله حديثا از خدا ۓ تعالى يعنى نيست از وے راست گوۓ تراز جہت قولى ووعده يعنى كذب رادر سخن ووعده حق راه نيست زيرا كہ آں نقص ست وخداۓ از نقص مبراست-
-“আল্লাহ তাআলার চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? অর্থাৎ তার চেয়ে বেশি সত্যবাদী আর কেউ নেই। অর্থাৎ আল্লাহর কথা ও প্রতিশ্রুতিতে মিথ্যার কোন অবকাশ নেই। কেননা, সেটা (মিথ্যা) একটা জঘন্য দোষ। আর আল্লাহ তাআলা দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র ।”৯৭
👉ইমাম নাসাফী (রঃ) বলেন,
لا أحد أصدق منه في إخباره ووعده ووعيده لاستحالة الكذب عليه لقبحه
-“খবর প্রদান, প্রতিশ্রুতি পূরণ ও শাস্তি প্রদানের হুমকি (যদি ক্ষমা না করেন) পূরণে তার চেয়ে বেশি সত্যবাদী আর কেউ নেই । কারণ, মিথ্যা তার জন্য অসম্ভব- যেহেতু সেটা জঘন্য দোষ। ৯৮
গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম নাওয়াব সিদ্দিক হাসান ভূপালভীও মিথ্যা এবং ওয়াদা খেলাফকে দোষগুলোর মধ্যে গণ্য করেছেন। সুতরাং তিনি লিখেছেন,
وعده كى سچائى صفات حميدة ميں سے ہے جيسے خلف وعد اوصاف ذميمہ ميں سے ہے –
-“প্রতিশ্রুতিতে সত্যবাদিতা প্রশংসিত গুণাবলীর অন্যতম, যেমনিভাবে ওয়াদা ভঙ্গ করা মন্দ গুণাবলীর মধ্যে গণ্য। ৯৯
৪. হায়াত, কুদরত, শোনা, দেখা , বাকশক্তি, ইলম ও ইচ্ছা হচ্ছে তাঁর নিজস্ব সিফাত বা গুণবলী । কিন্তু কান, চোখ ও মুখ দিয়ে শোনা, দেখা ও কথা বলা নয়। কেননা এগুলো হচ্ছে সাকার। কিন্তু আল্লাহ সাকার থেকে পবিত্র । অথচ তিনি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর আওয়াজ শোনেন এবং ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বস্তু, যা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারাও দেখা যায় না, তিনি তা দেখেন। তার দেখার জন্য ওসব কিছুর প্রয়োজন হয়না । তিনি প্রত্যেক কিছু দেখেন ও শোনেন । (শরহে আকায়েদে নাসাফী, ৩৮পৃ.)।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৯৫. ইমাম খাজিন : তাফসীরে লুবাবুত তা'ভীল: ১/৪২১পৃ.
৯৬. ইমাম আবুস সাউদ: তাফসীরে আবিস সাউদ: ২/২১২পৃ.
৯৭. মোল্লা মুঈন উদ্দিন কাশেফী : তাফসীরে হুসাইনী: ১/.১২৭
৯৮. ইমাম নাসাফী । তাহলীৱে মাদাৱিক সূরা নিসা, আয়াত ৮৭
৯৯. তরজুমানে কুরআন: পৃ. ৩৫৯, পারা - ১৬, সূরা মরিয়াম।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫. তার জ্ঞানের বাইরে কোন বস্তু নেই ।
______________________________________
অর্থাৎ আংশিক-সামগ্রিক, বর্তমান-অবর্তমান , সম্ভব-অসম্ভব সবকিছু অনাদিকাল থেকে জানেন এবং অনন্তকাল পর্যন্ত জানবেন । প্রতিটি জিনিস পরিবর্তন হয় কিন্তু তার জ্ঞান পরিবর্তন হয় না। তিনি মনের ধ্যানধারণা সম্পর্কেও জ্ঞাত । তাঁর জ্ঞানের কোন শেষ নেই। (মুসামেরা, ৬২পৃ. শরহে আকায়েদ, ৪২পৃ. ,মাওয়াকেফ, ৮পৃ.)।
মহান আল্লাহর কাছে কোন কিছু গোপন নেই ?
_____________________________________
৬. মহান আল্লাহ তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সবকিছু সম্পর্কে অবগত । তার কাছে কোন কিছু গায়ব বা গোপন নেই । মহান আল্লাহ তা'য়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ
-“নিশ্চয় মহান আল্লাহর কাছে আসমান যমীনে কোন কিছুই গোপন (গায়ব) নেই।” (সূরা আলে ইমরান, ৫)
সত্তাগত জ্ঞানের অধিকারী হওয়াটা একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। যেই ব্যক্তি সত্তাগত অদৃশ্য বা দৃশ্য জ্ঞান খোদা ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রমাণ করে, সে কাফির। ১০০
স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা প্রসঙ্গঃ
_________________________
৭. পার্থিব জীবনে আল্লাহর দিদার লাভ একমাত্র নবী (ﷺ) এর জন্য খাস। এই বিষয়ে সামনে আলোকপাত করা হবে । (আল-মুনতাকিদ, ৬১পৃ.)
👉 ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (রঃ) উল্লেখ করেন,
اخرجه الْبَيْهَقِيّ فِي كتاب الرُّؤْيَة بِلَفْظ ان الله اصْطفى إِبْرَاهِيم بالخلة وَاصْطفى مُوسَى بالْكلَام وَاصْطفى مُحَمَّدًا بِالرُّؤْيَةِ
-“ইমাম বায়হাকী (রঃ) কিতাবুল রুয়াত’ এ বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সূত্রে অর্থাৎ- আল্লাহ তা'য়ালা ইবরাহীম (আঃ) কে বন্ধুত্ব, মূসা (আঃ) কে আলাপ এবং হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে তার দীদার দ্বারা একক মর্যাদা দান করেছেন।” ১০১
পরকালে প্রত্যেক সুন্নি মুসলমানদের জন্য সম্ভব বরং অবশ্যম্ভাবী।” ১০২
রূহানী বা স্বপ্নযোগে সাক্ষাৎ অন্যান্য আম্বিয়ায়ে ও আওলিয়ায়ে কিরামের জন্যও সম্ভব।
আমাদের ইমাম হযরত আবু হানিফা (রঃ) স্বপ্নে একশবার আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করেছেন। (আল-মুনতাকিদ, ৬১-৬২পৃ., ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/১১৮পৃ.)
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১০০. সুরা আনআম, আয়াত-৫০, সুরা নামল-৬৫, শরহে আকায়েদে নাসাফী, শরহে ফিকহুল আকবার ।
১০১. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/২৭০ পৃ. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খসায়েসুল কোবরা : ১১৬১,প., ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব । ৫/১১৭ প, মোল্লা আলী কারী : শরহে শিফা : ১/৪ ৭০। পৃ:
১০২ ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, কিতাবুর রিকাক, হা/৬২০৪ এবং হা/৬৯৯৯
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
অসংখ্য ওলীরা মহান আল্লাহকে স্বপ্নযোগে দেখেছেন; তার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়।
👉 ইমাম নববী (রঃ) উল্লেখ করেন,
قَالَ الْقَاضِي وَاتَّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى جَوَازِ رُؤْيَةِ اللَّهِ تَعَالَى فِي الْمَنَامِ وَلَا اخْتِلَافُ
-“ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) বলেন, সমস্ত উলামাগণ একমত পোষণ করেছেন যে, স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা বিশ্বাস বৈধ । এ ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে কারো কোনো মতভেদ নেই।” ১০৩
👉বিখ্যাত আকায়েদবিদ সা'দ তাফতানী (ওফাত, ৭৯৩হি.) এ প্রসঙ্গে লিখেন,
وَلَا خَفَاءَ أَنَّهَا نَوْعُ مُشَاهَدَةٍ تَكُوْنُ بِالْقَلْبِ دُوْنَ الْعَيْنِ
-“এটা স্পষ্টত একপ্রকারের দর্শন, যা অন্তরের মাধ্যমে হয়ে থাকে; চাক্ষুষ দেখা নয়।” ১০৪
👉ইমাম বাগভী (রঃ) এ প্রসঙ্গে লিখেন,
قَالَ الإِمَامُ: رُؤْيَةُ اللَّهِ فِي الْمَنَامِ جَائِزَةٌ،......وَتَكُونُ رُؤْيَتُهُ جَلَّتْ قُدْرَتُهُ ظُهُورَ الْعَدْلِ، وَالْفَرَجِ، وَالْخِصْبِ، وَالْخَيْرِ لأَهْلِ ذَلِكَ الْمَوْضِعِ، فَإِنْ رَآهُ فَوَعَدَ لَهُ جَنَّةً، أَوْ مَغْفِرَةً، أَوْ نَجَاةً مِنَ النَّارِ، فَقَوْلُهُ حَقٌّ، وَوَعْدُهُ صِدْقٌ، وَإِنْ رَآهُ يَنْظُرُ إِلَيْهِ، فَهُوَ رَحْمَتُهُ، وَإِنْ رَآهُ مُعْرِضًا عَنْهُ، فَهُوَ تَحْذِيرٌ مِنَ الذُّنُوبِ
-“ স্বপ্নে আল্লাহ কে দেখা বৈধ ।......স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভবপর । যদি কেউ তাঁকে জান্নাত কিংবা মাগফিরাত বা নাজাতের কথা বলতে দেখে, তা হলে তাঁর কথা হক্ক ও তাঁর ওয়াদা সত্য। যদি সে তাঁকে তার প্রতি দৃষ্টি দান করতে দেখে, তবে তা তার প্রতি দয়ার লক্ষণ আর যদি তাঁকে অবজ্ঞা করতে দেখে, তবে তা হবে পাপ থেকে সতর্ক করার লক্ষণ।”১০৫
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১০৩. ইমাম নববী, শরহে মুসলিম, ১৫/২৫পৃ. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১২/৩৮৭পৃ.
১০৪ শারহুল মাওয়াকিফ,
১০৫. বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ, ১২/২২৭পৃ. হা/৩২৮৮।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''