পঞ্চম অধ্যায় : রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বিদা

১. মহান আল্লাহ রাসূল (ﷺ) কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন
২. তিনি (ﷺ) সৃষ্টির শুরুতেই নবী ছিলেন,
হযরত আদম (আঃ)'র বহু আগেই সৃষ্ট, সকল নবীগণের শেষে প্রেরিত
৩. তিনিই সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু, তাঁর উসিলায় জগত সৃষ্টি
৪. রাসূল (ﷺ)'র সৃষ্টি অন্যান্য সৃষ্টির মতো নয়, সমস্ত মানুষ মাটির তৈরী নয়
৫. রাসূল (ﷺ)'র পিতা মাতা মু'মিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন
৬. অন্যান্য নবিদের থেকে আমাদের নবী (ﷺ) কে আল্লাহ বেশী ইলমে গায়ব দান করেছেন
৭. রাসূল (ﷺ) নিরক্ষর ছিলেন না
৮. স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই নিজেই রাসূল (ﷺ) কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন
৯. চাঁদ ও সূর্যের আলাতে রাসূল (ﷺ) 'র ছায়া জমিনে পড়তোনা
১০. রাসূল (ﷺ) এর মি'রাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল
১১. মিরাজের সময়ের বিষয়ে সঠিক আকিদা
১২. রাসূল (ﷺ) স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ তা'য়ালা কে স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন
১৩. রাসূল হায়াতুন্নবি (ﷺ) হিসেবে এখনও রওজা শরিফে আছেন
১৪. তিনি (ﷺ) ওফাতের পরেও তেমন; যেমন হায়াতে ছিলেন
১৫. রাসূল (ﷺ) যেখানে ইচ্ছা সেখানে পরিভ্রমণ করতে পারেন
১৬. রাসূল (ﷺ) এর দৃষ্টিতে সব কিছু হাযির ও নাযির
১৭. রাসূল (ﷺ) এর রওজা জিয়ারত একটি বরকতময় আমল
১৮. হুযুর (ﷺ) এর শাফায়াত সত্য
২০. রাসূল (ﷺ)'র আগমনের দিনে ঈদ উদযাপন করা বৈধ
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বিদা
______

১. মহান আল্লাহ রাসূল (ﷺ) কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন:

রাসূল (ﷺ) এর নুর সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে। ১২৩

এবং অসংখ্য হাদিসে পাকে রয়েছে। তন্মধ্যে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কর্তৃক রাসূল (ﷺ) কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রাসূল (ﷺ) বলেন,

فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّورِ يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلا قَلَمٌ وَلا جَنَّةٌ وَلا نَارٌ وَلا مُلْكٌ وِلا سِمِاءٌ وَلا أَرْضٌ وَلا شَمْسٌ وَلا قَمَرٌ وَلا جِنِّيٌ وَلا إِنْسٌ.

-“অতঃপর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা সবকিছুর
পূর্বে তার স্বীয় নূর হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন। তখন লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম.....কিছুই ছিল না। ১২৪

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১২৩. সূরা মায়েদা আয়াত-১৫, সূরা তওবা ৩২ আয়াত, সূরা নূর ৩৫, সূরা ছাফ ৮, সুরা আহযাব ৪৫-৪৬

১২৪. ইমাম আবদুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ (জুযউল মুফকুল): ১/৬৩, হাদিস-১৮, (ঈসা  হিমইয়ারী, আলামা আজলুণী  কাশফুল খাফা: ১৩১১, হাদিস/৮১১, আলামা আস্কালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া: ১/১৫, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, আল্লামা জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেদ: ১/৮৯,
আশরাফ আলী থানবী, নশরুত্ত্বীব : পৃ. ২৫, আব্দুল হাই লাখনৌভী, আসারুল মারফুআ, ৪২-৩৩পৃ. ইবনে হাজার মক্কী, ফতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ৪৪,, ও (শামেলা), শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহিল আলামিন
৩২-৩৩, ও জাওয়াহিরুল বিহার, ৩৩৭প, আনোয়ারে মুহাম্মাদিয়া ১৯ পৃ,
মোল্লা আলী কারী, মাওয়াবিদর রাভী, ২২পৃ.

এ হাদিস এবং এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মাচন" এর ১ম খন্ডের ২৯৩-৫৭৪ পৃষ্ঠা দেখুন ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ -

-“রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ তা'য়ালা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (আঃ) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকপ্রদ নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? আল্লাহ তা'য়ালা বললেন, এ তোমার আওলাদ হবে, তার নাম আসমানে আহমদ। যিনি সৃষ্টিতে প্রথম এবং তিনি প্রেরণে (নবীদের) শেষ। তিনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী ।”১২৫

তাই প্রমাণিত হল যে বাবা আদম (আঃ) ও আমাদের নবীজিকে নূর হিসেবেই জানতেন। আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন,

قُلْتُ: وَهَذَا إِسْنَادُ حَسَنٌ؛ رِجَالُه كُلُّهُمْ ثِقَات رجال البخاري؛

-“আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ হাসান , ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (রহ.) এর বর্ণনাকারী ন্যায়।”১২৬

আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রঃ) তাঁর তাফসীরে সুরা যুখরুফের ৮১ নং আয়াত,

 قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ

-“হে হাবিব! আপনি বলুন দয়াময় আল্লাহর যদি কোন সন্তান হতো তাহলে ইবাদাতকারীদের মধ্যে আমিই সর্ব প্রথম তার ইবাদত করতাম।"

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১২৫. ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত ; ৫/৪৮৩ পৃ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম সুয়ুতী ; খাসায়েসুল কোবরা : ১/৭০ পূ, হাদিস : ১৭৩, ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ.দারুল ফিক ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪৩৭ পূ, হাদিস ৩২০৫৬, আবু সা'দ নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা, ৪/২৮৫পৃ. মলানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪৯পৃ. দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/৪৫পৃ. সারাজ, হাদিসহ, হাদিস ৫ ২৬২৮, ইবনে হাজার আসকালানী, আল-মুখাগ্লিসিয়্যাত, ৩/২০৭পৃ, হাদিস ২৩৪০, সালিম জাররার, আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৬/৪৭৮পূ, হাদিস : ৬০৮৩,

১২৬. আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ, হাদিস নং ৬৪৮২
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসমাঈল হাক্কী (রঃ) একটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে,

قَالَ جَعْفَرْ الصَادِقْ رَضِى الله عَنْهُ أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِ مُحَمَّد صلى الله عليه وسلم قَبْلَ كُل شىء

-“হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রাঃ) বলেন, সকল কিছুর পূর্বে আল্লাহ নূরে মুহাম্মাদী’ কে সৃষ্টি করেছেন।” ১২৭

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রাঃ) বলেন,

اِنَّهُ تَعَالٰى نُوْرٌ لَيْسَ كَالْاَنْوَارِ وَ رُّوْحُ النَّبُوْيَّةُ القُدْسِيَّة لُمْعَةُ مِنْ نُوْرِهِ وَالْمَلاَئِكَةٌ اشرار تِلْكَ الْاَنْوَارِ وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِى وَمِنْ نُوْرِى خَلَقَ الله كُلِّ شّئٍ-

-“আল্লাহ তা'য়ালা নুর, তবে অন্যান্য নুরের মতো নন। আর নবী করীম (ﷺ) এর রূহ মোবারক হচ্ছে তার নূরের ঝলক । আর ফেরেশতাগণ হচ্ছেন তাঁর নূরের শিখা । হুযুর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমার নূর থেকে আল্লাহ প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।" ১২৮

তাই বুঝা গেল, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ইমামের আকিদা রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি। যারা এ আকিদায় বিশ্বাসী নয়, তারা কি করে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী বলে দাবি করেন? রাসূল (ﷺ) র সৃষ্টি নুরের এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন”এর ১ম খন্ড দেখুন । ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে।

২. রাসূল (ﷺ) হযরত আদম (আঃ)র বহু আগেই সৃষ্টি, যদিও প্রেরিত হয়েছেন সকল নবির শেষে। 

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) নিজেই ইরশাদ করেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله تعالى عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ-

-“আমি ছিলাম সৃষ্টিতে নবিগণের সর্বপ্রথম এবং প্রেরণে নবীগণের সর্বশেষ ।”১২৯

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১২৭. ইসমাঈল হাক্কী : রূহুল বায়ান : ৮/৩৯৬ পৃ. সুরা যুখরুফ, আয়াত,৮১

১২৮. ইমাম মাহদী আল ফার্সী ; মাতালিউল মাসাররাত : ২১ পৃ. মাতবায়ে মাকতুবায়ে নূরীয়া, পাকিস্তান, শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার, ২/২২০ পৃ., মারকাযে আহলে সুন্নাহ বি বারকাতে রেষা, গুজরাট।

১২৯. ক, ইমাম আদী : আল কামিল : ৩/৩৭৩ পৃ, দায়লামী ! ফিরদাউস বিমাসুরিল খিতাব : ৩/২৮২ পৃ হাদিস : ৪৮৫০,গ, দায়লামী : ফিরদাউস বিমাসুরিল খিতাব : ৪/৪৪১ পৃ: হাদিস : ৭১৯৫, আলুনী : কাশফুল খাফা : ২/১১৯ পৃ: হাদিস : ২০০৭, ইমাম বগভী: মা'লিমুত তানজিল : ২/৬১১, হাদিস, ১৬৮৫, ইবনে কাসীর । তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৬/৩৮২পৃ.ও সিরাতে নববিয়্যাহ, ১/২৮৯পৃ. ১/৩১৮পৃ. সুয়ুতি : সায়েসুল কুবরা : ১/৫ হাদিস : ১, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : দালায়েলুন নবুওয়াত : ১/৪২ পৃ. হাদিস ৩, আবি হাতেন : আত তাফসীর । ৯/৩১১৬প, হাদিস : ১৭৫৯৪, মুত্তাকি হিন্দী কানযুল উম্মল : ১১/৪৫২প, হাদিস ৪ ৩১২৫ তাবরানী, মুসনাদিমশামীন, ৪/৩৪পৃ. হাদিস,২৬৬২, মুয়াসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

এই হাদিসটি এক সূত্রে সহীহ, আরেকটি সূত্রে ‘হাসান পর্যায়ের ।

قَالَ  قَتَادَةُ : إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:كُنْتُ أَوَّلَ الْأَنْبِيَاءِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ

-“হযরত কাতাদা (রাঃ) হতে সহীহ সনদে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত নিশ্চয়ই রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন : আমি সৃষ্টিতে নবীদের প্রথম এবং প্রেরণের দিক দিয়ে সবার শেষে।”১৩০

ইমাম সুয়ূতী (রঃ) সহ আরও অনেকে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।”১৩১

ইমাম ইবনে সা'দ (রঃ) {ওফাত, ২০৭হি }একটি হাদিস সংকলন করেন,

عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-“হযরত কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এরূপ বলেছেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।” ১৩২

আহলে হাদিসদের ইমাম এবং ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ কাসির (রহ) {ওফাত. ৭৭৪হি.} এই হাদিসটি সংকলন করে লিখেন-
 وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -
‘‘এই সনদটি প্রমাণিত ও অধিক সহীহ।’’ ”১৩৩

তাই আদম (আঃ)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে; যা এই সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল । তাই আদম (আঃ)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই এই দিকেই ইশরা করে -

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ
-“রাসূল (ﷺ)র কাছে জানতে চাওয়া হলাে যে, আপনি কখন নবুয়ত লাভ করেছেন? তিনি বলেন, আদম (আঃ)যখন রূহ ও দেহের মাঝামাঝি ছিলেন।”১৩৪

তাই যারা বলছেন তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেছিলেন তারা যে গোমরাহ তা স্পষ্ট প্রমাণিত হল ।

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৩০. শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৬৬পৃ, ইবনে সা'দ : আত্-তাবাকাতুল কোবরা : ১/১৪৯ পৃ. ইমাম বগভী; তাফসীরে মা'লিমুত তানযিল : ৪/৪৩৫, ইমাম তবারী : তাফসীরে তবারী । ১০/২৬২, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ সহীহ, দায়লামী ; মুসনাদিল ফিরদাউস : হাদিস : ৪৮৫০, আবু নঈম ইস্পাহানী ; দালায়েলুল নবুয়ত, হাদিস, ৩, ইমাম আদি : আল-কামিল : ৩/৪৯ পৃ হাদিস : ৩৭২, ইমাম কাজী
আয়াজ, শিফা, ১/১১৪পৃ.ও ১/৪৬৬পৃ.. তাবরানী : মুসনাদিস-শামীন : ৪/২৬৬২পৃ..

১৩১. ইমাম সুয়ুতি, জামেউস সগীর, ২/২৪৮পূ, হা/৬৪২২-২৩এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উনাচন' এ ১ম খন্ডের ২৪৮-২৫১পৃষ্ঠায় দেখুন ।।

১৩২ . ইমাম ইবনে সা'দ, আত্-তাবাকাতুল কোবরা, ১/১৯৯পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩পৃ.দারু ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, শিফা শরীফ, ১/১১৪পৃ. কাসতালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪২পৃ.।

১৩৩. ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩পৃ.

১৩৪. তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৮৫পৃ. কিতাবুল মানাকিব, হাদিস ও ৩৬০৯, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান" । আহলে হাদিস আলবানী সনদটিকে সহিহ বলেছেন।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৩. যার উসীলায় সমগ্র জগৎ সৃষ্টিঃ

তিনিই সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু; তাঁর উসিলায় জগত সৃষ্টি ও আমরা যে জান্নাত লাভের প্রতীক্ষায় এবং জাহান্নামের ভয় পাই তাও নবীজি (ﷺ)'র ওসিলায় মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।

হাদিসে পাকে রয়েছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ.

-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'য়ালা হযরত ঈসা (আঃ) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো। কারণ যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত, না দোযখ সৃষ্টি করতাম।”১৩৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّار
-“একদা আমার কাছে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! (ﷺ) আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে সৃজন না হতো বেহেশত আর না দোযখ।” ১৩৬

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন" ১ম খণ্ডের ১০৬-১২৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন ।

৪. রাসূল (ﷺ)র সৃষ্টি অন্যান্য সৃষ্টির মতো নয় ?

ইমাম শিহাবুদ্দীন কুস্তালানী (রহঃ) বলেন,

اعلم أن من تمام الإيمان به- صلى الله عليه وسلم- الإيمان بأن الله تعالى جعل خلق بدنه الشريف على وجه لم يظهر قبله ولا بعده خلق آدمى مثله-

-“জেনে রাখুন! রাসূল (ﷺ)'র প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান হলো- এভাবে ঈমান আনা যে, আল্লাহ তায়ালা তার শরীর মোবারককে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তার পূর্বে পরে কোন মানুষকে তার মতন করে সৃষ্টি করেননি। ১৩৭

তাই সকলের জানা উচিত মানব জাতির অনুসরণ ও অনুকরণের সুবিধার্থে আল্লাহ তাকে বাহ্যিকভাবে মানবীয় আকৃতি ও মানবীয় কতেক গুণাবলি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।

বিভিন্ন আকায়েদের কিতাবে রয়েছে যে,
"হুযুরের অনুরূপ হওয়া অসম্ভব । হুযুরের বিশেষ গুণের ক্ষেত্রে কাউকে হুযুরের গুণের মতো বললে, সে কাফির। (আল-মুতামেদ, ১৩৩পৃ. বাহারে শরীয়ত, ১/১৯পৃ.)

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৩৫. ইমাম হাকেম নিশাপুরী আল মুস্তাদরাক ২/৬৭১, পৃষ্ঠা হাদিস ও ৪২২৭, ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী : শিফাউস সিকাম ৪৫ পৃ., জালালুদ্দীন সুয়ুতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১৪ হাদিস ও ২১, হাইসামী ও শরহে শামায়েল ১/১৪২ পৃ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার ও ২/১১৪ পৃ., ইমাম ইবনে হাইয়্যান ও তাবাকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানী : ৩/২৮৭পৃ, আবু সা'দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা : ১/১৬৫পৃ.. যুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব ; ১২/২২০পৃ.. ইবনে কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া, ১/২৯পৃ.
, দারুল তালিফ, কাহেরা, মিশর, ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ : ১/৩২০পৃ. দারুল মা'রিফ, বয়রুত লেবানন, ইবনে কাসীর, মুজিজাতুন্নাবী : ১/৪৪ ১পৃ, মাকতুবাতুল তওফিকহিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর, ইবনে সালেহ শামী, সলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩পু, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

১৩৬. দায়লামী ও আল-মুসনাদিল ফিরদাউস : ৫/২২৭পৃ, হাদিস নং,৮০৩১, মােল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফুআ, ১/২৯৫ পৃ.হাদিস :৩৮৫, পৃ, মুয়াসসতুর রিসালা, বয়রত, লেবানন, শায়খ ইউসূফ নাবহানী ও যাওয়াহিরুল বিহার ও ৪/১৬০ পৃ, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৩১, হাদিস : ৩২০২৫

১৩৭. কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ২/৫পৃ. মাকতাবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

সমস্ত মানুষ মাটির তৈরী নয়।

অনেক সাধারণ মানুষের ধারণা তারা মাটির তৈরী । অথচ এটি কোরআন বিরোধী কথা । কোরআন সুন্নাহে গবেষণা করে সমস্ত মানুষ পাঁচভাগে সৃষ্টি প্রমাণ পাওয়া যায় ।

ক. আদি পিতা আদম (আঃ) কে সরাসরি মাটি দিয়ে। ১৩৮

খ. মা হাওয়া (আঃ) কে তার স্বামী তথা আদম (আঃ)-এর পাজর থেকে। ১৩৯

সূরা নিসায় আল্লাহ ইঙ্গিত করেছেন-
  وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا
-‘‘তাঁর থেকে তার সঙ্গীনীকে বানানো হয়েছে। (সুরা নিসা, আয়াত, ১)

তার কি থেকে বানানো হয়েছে তা কোরআনে স্পষ্ট নেই। তাই সহিহ বুখারী ও মুসলিমে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে,

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
- فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، -
“নিশ্চয় আদম (আঃ)-এর স্ত্রী হযরত হাওয়া (আঃ) কে তাঁর পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।” ১৪০ 

গ. ঈসা (আঃ) কে শুধু মাত্র জিবরাঈল (আঃ) এর ফুঁক থেকে। ১৪১

ঘ. আমরা সাধারণ মানুষদেরকে পিতা-মাতার নুতফা বা বীর্য থেকে।

এ বিষয়ে কোরআনের মোট ১১টি স্থানে মহান রব ইরশাদ করেছেন। তাকে কেউ হেয় করলে কাফির হয়ে যাবেন। যেমন দেখুন-
সূরা ফোরকান, আয়াত, ৫৪,
সূরা ত্বারেক, ৫,
সূরা দাহর, ২,
সূরা মুরছালাত, ২০-২১,
সূরা সাজদা, আয়াত, ৭-৮,
সূরা ইয়াছিন, ৭৭,
সূরা নাজাম, ৪৫-৪৬,
সূরা আবাসা, ১৮-১৯,
সূরা আলাক্ব, ২,
সূরা নাহল, ৪,
সূরা কিয়ামা, আয়াত, ৩৬-৩৮,

এ মোট ১১ স্থানে কোরআনে রয়েছে মানুষ নুতফার বা মা-বাবার বীর্যের তৈরী । আর আমাদের দেশের কাটমোল্লার কোরআনের বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিচ্ছেন।

ঙ. রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর নূরের তাজাল্লী হতে। ১৪২

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৩৮. সুরা সোয়াদ, আয়াত, ৭১

১৩৯. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আপনারা আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খণ্ডের ২৪৬-২৪৭ পৃষ্ঠা দেখুন ।

১৪০. বুখারী, আস-সহিহ, ৪/১৩৩, হাদিস নং ৩৩৩১, মুসলিম, আস-সহিহ, ২/১০৯১, হাদিস নং১৪৬৮, সুনানে দারেমী, ৩/১৪২৫পৃ. হাদিস নং ২২৬৭, হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/১৯২, হাদিস নং ৭৩৩৩, ও ৭৩৩৪, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, হাদিস নং ৪১৭০

১৪১. সুরা মারিয়াম, অতি , ৭-১৯

১৪২. সুরা মায়িদা ১৫, সূরা নূর ৩৫, সূরা তাওবা ৩২, সূরা ছাফ ৮
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৫. রাসূল (ﷺ)'র পিতামাতা মু'মিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা হলো মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)'র সম্মানিত পিতা-মাতা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেননি; তারা বনী হানিফের উপরে ছিলেন। তারপর আবার মহান রব তাদেরকে নবীজির প্রতি ঈমান আনার সুযোগ দিয়েছিলেন।

★ইমাম ইবনে শাহীন (রঃ) তার "নাসেখ ওয়াল মানছুখ" গ্রন্থে
★ইবনে আসাকির তার "তারীখে দামেস্কে",
হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

বিদায় হজ্জের সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেদনার্ত ছিলেন। এসময় তিনি আনন্দচিত্তে আয়েশা (রাঃ)'র নিকট আগমন করেন। তিনি কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

فَقَالَ: ذَهَبْتُ لِقَبْرِ أُمِّي فَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُحْيِيَهَا فَأَحْيَاهَا فَآمَنَتْ بِي وَرَدَّهَا اللَّهُ

-“অতঃপর আমি আমার মা আমেনা (রাঃ)'এর নিকট গমন করি এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করি তাঁকে জীবিত করতে। তখন আল্লাহ তাকে জীবিত করেন, তিনি আমার উপর ঈমান আনয়ন করেন, অতঃপর আল্লাহ তাঁকে কবরের জগতে ফিরিয়ে নেন । কোনো কোনো বর্ণনায় পিতা-মাতা উভয়ের কথা বলা হয়েছে।” ১৪৩

ইমাম সুয়ূতী (রঃ) এ সনদটিকে দ্বঈফ বলেছেন। কিন্তু আমরা বলি এ হাদিসটি ইমাম বারী (রঃ) এ হাদিসটির আরেকটি সনদ বর্ণনা করেছেন যার কারনে সনদটি ‘হাসান। ১৪৪

বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং সকলের মান্যবড় ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) লিখেন,

وَلِهَذَا عَمَّمَ الحافظ ابن حجر فِي قَوْلِهِ: الظَّنُّ بِآلِ بَيْتِهِ كُلِّهِمْ أَنْ يُطِيعُوا عِنْدَ الِامْتِحَانِ.

-“নিশ্চয় রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা মাতা সম্বন্ধে যে ধারণা করা হয় যে, তারা প্রত্যেকেই কিয়ামতের দিন পরীক্ষায় আনুগত্যশীল হবেন।”১৪৫

ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রঃ) তাঁর অভিমত উল্লেখ করেন,

وَلَعَلَّهُ يَصِحُّ مَا جَاءَ أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلَ اللَّهَ سُبْحَانَهُ، فَأَحْيَا لَهُ أَبَوَيْهِ، فَآمَنَا بِهِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ هَذَا، وَلَا يُعْجِزُ اللَّهَ سُبْحَانَهُ شَيْءٌ

-“সম্ভবত এজন্য ইহা সঠিক যে রাসূল (ﷺ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। তখন আল্লাহ তা'য়ালা তার পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিলেন। অতঃপর তারা নবীজির প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। কারণ আল্লাহর নিকট কোন কিছুই অসম্ভব নয়। ১৪৬

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৪৩. ইমাম সুয়ুতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৭৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪২৪হি, ইমাম কুরতুবী, তাযকিরাহ, ১৫পৃ., ইমাম কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ১/১০৩পৃ. ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/১২২পৃ. দিয়ার বিকরী, তারীখুল খামীস, ১/২৩০পৃ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ,১/১৫৫পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১/৩১৫,

১৪৪. ইমাম কুস্তালানীঃ আল-মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াঃ ১/১০৩ পৃ

১৪৫. ইমাম সুয়তী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫১পু,

১৪৬. ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫২পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) প্রাথমিক জীবনে রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতা জাহান্নামী ও কাফির হওয়ার  উপরে অভিমত পেশ করেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতির কিতাব অধ্যায়নের পরে তার ভুল ভেঙ্গে যায় এবং ইতো পূর্বের আক্বিদা ঠিক করে নেন ।
যেমন তার শেষের দিকের গ্রন্থে তিনি লিখেছেন,

وأما اسلام أبويه ففيه أقوال والأصح اسلامهما على ما اتفاق عليه الأجلة من الأئمة كما بينه السيوطي في رسائله الثلاث المؤلفة

-“রাসূল (ﷺ) এর পিতা-মাতার ইসলাম গ্রহনের ব্যাপারে একাধিক মতামত রয়েছে, তবে বিশুদ্ধ অভিমত হল, রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতা উভয়ই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন; এমনটি উম্মতের মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগণ উল্লেখ করেছেন। যেমনটি ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রঃ) তার তিনটি রিসালায় উল্লেখ করেছেন।”১৪৭

এ বিষয় সম্পর্কে বিশদ আকারে জানতে চাইলে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ এর ২য় খণ্ডের শুরুতে দেখুন। ইনশাআল্লাহ ! আপনাদের বুঝে আসবে ।

৬. অন্যান্য নবিদের থেকে আল্লাহ আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুস্তাফা (ﷺ) কে বেশী ইলমে গায়ব দান করেছেন । 

সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত নবি মানুষ এবং আল্লাহ যত সৃষ্টি রয়েছে তাদের সকলকে যতটুকু ইলম দিয়েছেন তার চাইতে হাজার কোটি গুণ নবীজিকে ইলম দান করেছেন। রাসূল (ﷺ) এর ইলম সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। যেমন,

عَنْ وَهْبِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ:  قَرَأْتُ إِحْدَى وَسَبْعِينَ كِتَابًا فَوَجَدْتُ فِي جَمِيعِهَا أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يُعْطِ جَمِيعَ النَّاسِ مِنْ بَدْءِ الدُّنْيَا إِلَى انْقِضَائِهَا مِنَ الْعَقْلِ فِي جَنْبِ عَقْلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا كَحَبَّةِ رَمْلٍ مِنْ بَيْنِ رِمَالِ جَمِيعِ الدُّنْيَا، وَأَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْجَحُ النَّاسِ عَقْلًا، وَأَفْضَلُهُمْ رَأْيًا.

-“হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি ৭১ টি (আসমানী) কিতাব পাঠ করেছি। সবগুতোতেই পাঠ করেছি আর বুঝতে পেরেছি যে, আল্লাহ তা'য়ালা সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মহা প্রলয় পর্যন্ত সকল মানুষকে যে জ্ঞান বুদ্ধি দান করেছেন তা রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর জ্ঞানবুদ্ধির তুলনায় এমন, যেমন বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হল রাসূল (ﷺ) এর ইলম আর বালুকণা সমূহের মধ্যে একটি বালুকণা হল সবার ইলম। নিঃসন্দেহে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক বিচার-বিবেচনাশীল। ১৪৮

উক্ত তাবেয়ী রাসূল (ﷺ) এর ইলমের কিছুটা প্রকাশ করেছেন মাত্র । কারণ রাসূল (ﷺ) এর ইলমের পরিমাপ করার ক্ষমতা এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারও নেই। রাসূল (ﷺ)'র ইলমে গায়ব সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ-

“(হে সাধারণ লোকগণ!) এটা আল্লাহর শান নয় যে, তোমাদেরকে ইলমে গায়ব দান করবেন। তবে হ্যাঁ, রাসূলগণের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, তাকে এ অদৃশ্য জ্ঞান দানের জন্য মনোনীত করেন। ১৪৯

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৪৭. মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৬০৫, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

১৪৮. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১৯ পৃ: হাদিস নং-৩১৪, ইমাম আবু নঈম ইস্পাহানী : হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৪/২৬ পূ.. ইবনে আসাকির ; তারিখে দামেস্ক : ৩/২৪২ পৃ

১৪৯. সূরা আলে ইমরান: আয়াত, ১৭৯
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

শুধু তা-ই নয় আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন,

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا (২৬) إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍـ

-“(আল্লাহ পাক) তাঁর মনোনীত রাসূলগণ ব্যতীত কাউকেও তাঁর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন না।” ১৫০

রাসূল (ﷺ) গায়বের সংবাদ প্রদানে কার্পণ্য করেন না। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী-

وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِينٍ-

-“তিনি [নবি করিম (ﷺ)] গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন।” ১৫১

উক্ত আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও তাফসিরকারক ইমাম বগভী (রঃ) বলেন,

وَما هُوَ، يَعْنِي مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى الْغَيْبِ ...وَخَبَرِ السَّمَاءِ وَمَا اطَّلَعَ عَلَيْهِ مِمَّا كَانَ غَائِبًا عَنْهُ مِنَ الْأَنْبَاءِ وَالْقَصَصِ، بِضَنِينٍ، -

-“হুযুর (ﷺ) অদৃশ্য বিষয়, আসমানি গায়েবি সংবাদ ও কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন।” ১৫২

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম খাযেন (রঃ) বলেন,

وَما هُوَ يعني محمدا صلّى الله عليه وسلّم عَلَى الْغَيْبِ أي الوحي وخبر السّماء، وما اطلع عليه مما كان غائبا عن علمه من القصص والأنباء

-“আর তিনি এর মর্মার্থ হুযুর (ﷺ), গায়বের ব্যাপারে অর্থাৎ ওহী, আসমানী গায়েবী সংবাদ ও কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন।” ১৫৩

ইমাম বাগভী ( রঃ) বলেন,

أَيْ يَبْخَلُ يَقُولُ إِنَّهُ يَأْتِيهِ عِلْمُ الْغَيْبِ فَلَا يَبْخَلُ بِهِ عَلَيْكُمْ بَلْ يُعَلِّمُكُمْ وَيُخْبِرُكُمْ بِهِ -

-“এ আয়াতে এ কথাই বুঝানো হয়েছে যে, হুযুর (ﷺ)'র কাছে অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ আসে । তিনি তা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন”। ১৫৪

শরহে আকায়িদে নসফী গ্রন্থের ১৭৫ পৃষ্ঠায় আছে,

بِالْجُمْلَةِ الْعِلْمُ بِالْغَيْبِ اَمْرُ تَفَرَّدَ بِهِ اللهُ تَعَالَىِ لَاسَبِيْلَ اِلَيْهِ لِلْعِبَادِ اِلَّابِاِ عْلاَمٍ مِنْهُ اَوْ اِلْهَا مٍا بِطَرِيْقِ الْمُعْجِزَاتِ اَوِالْكِرَاَمَةِ.

-“সার কথা হলো যে অদৃশ্য বিষয়াবলীর জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যার একমাত্র (স্বত্তাগত) অধিকারী হচ্ছেন খোদা তায়ালা । বান্দাদের পক্ষে ওইগুলো আয়ত্ত করার কোন উপায় নেই, যদি মহান প্রভু মু'জিযা বা কারামত স্বরূপ ইলহাম বা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন। ১৫৫

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৫০. সূরা জিন: আয়াত ২৬-২৭

১৫১. সূরা তাকভীর, আয়াত-২৪

১৫২. ইমাম বগভী, মা'আলিমুত তানযিল : ৫/২১৮, দারু ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন ।

১৫৩. ইমাম খাজিন : তফসীরে খাজিন ৪/৩৯৯,

১৫৪. ইমাম বগভী, মা'আলিমুত তানযিল : ৫/২১৮, দারুল ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন ।

১৫৫. সা’দ উদ্দিন মাসউদ তাফ তাযানী : শরহে আকায়িদে নাসাফী : ৭৫ পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

তাই আমরা সেটাই বলি নবিদেরকে মু'জিযা স্বরূপ এবং ওলীদেরকে কারামাত রূপে আল্লাহ ইলমে গায়ব দান করেছেন ।

সুপ্রসিদ্ধ ‘দুররুল মুখতার’ গ্রন্থের কিতাবুল হজ্বের প্রারম্ভে আছে,

والله يكشر عذر مع عليه ببقاء حياته لیگل البليغ
فرض الحج ته تشع وإنما أرى عليه الله

-“হজ্ব নবম হিজরীতে ফরজ হয়, কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম বিশেষ কোন কারণে একে দশম হিজরী পর্যন্ত বিলম্বিত করেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তার পবিত্র ইহকালীন জীবনের বাকী সময় সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন বিধায় হজ্ব স্থগিত করেছিলেন যাতে ইসলাম প্রচারের কাজ পূর্ণতা লাভ করে।” ১৫৬

যারা আম্বিয়া কিরাম এমনকি হুযুর (ﷺ)'র কোন প্রকার ইলমে গায়বের ইলম নেই বলে দাবী করেন, তাদের বেলায় বেলায় কুরআন করীমের এ আয়াতটি প্রযোজ্য হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন- তবে কি তোমরা (কাফেররা/মুনাফিকরা) কোরআনের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর।” ১৫৭

তাই দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের অবস্থা হচ্ছে ইহুদিদের মতো। কেননা বাতিল পন্থীরা সাধারণ মানুষের সামনে যেখানে আল্লাহ ছাড়া সত্ত্বাগতভাবে কেউ ইলমে গায়ব জানে না সেই আয়াতগুলো তারা শুধু বলে বেড়ায়। ১৫৮

আর এ ছাড়া যে আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর মননীত রাসূলদের ইলমে গায়ব দান করেছেন। ১৫৯

অনেক সময় তারা এমন ভাব নেয় যে তারা মনে হয় এ আয়াতগুলো জানেই না ।

৭. রাসূল (ﷺ) নিরক্ষর ছিলেন না।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত,
وَإِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا
রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, -“আমি পৃথিবীতে শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” ১৬০

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৫৬. আলাউদ্দিন হাস্কাফী : দুররুল মুখতারঃ কিতাবুল হজ্ব ১৫৯ পৃ.

১৫৭. সুরা বাক্বারা, ৮৫

১৫৮. সুরা আনআম, ৫০, সুরা নামল, ৬৫

১৫৯. সুরা আলে-ইমরান, ১৭৯ সুরা জ্বীন, ২৬-২৭, সুরা তাকবীর-২৪।

১৬০. খতিব তিবরিয়ী : মিশকাতুল মাসাবিহ ও কিতাবুল ইলাম : ১/৮৫পূ, হাদিস ও ২৫৭, দারেমী, আসুসুনান, ১/৩৬ পূ, হাদিস, ৩৬১, সুয়ূতী, জামেউস সগীর, হাদিস : ৪২৪২, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক, আয-যহুদ, ১/৪৮৮পূ, হাদিস : ১৩৮৮, আবু দাউদ তায়লসী, আল-মুসনাদ,৪/১১পু, হাদিস ২৩৬৫, ইবনে ওয়াহহাব, আল-মুসনাদ, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৬৭পৃ.হাদিস ১১, ইবনে মাজাহ, আস্-সুনান, ১/৮৩, হাদিস, ২২৯, হারিস, আল-মুসনাদ, ১/১৮৫পৃ, হাদিস, ৪০, বাযযার, ৬/৪ ২৮, হাদিস, ২৪৫৮, তাবরানী, মু'জামুল কাবীর, ১৩৫১, হাদিস, ১২৫, ও ১৪/৯৪ পূ, হাদিস, ১৪ ৭০৯, বায়হাকী, আল-মাদখাল, ১/৩০৬পৃ. হাদিস, ৪৬২, বাগাভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২৭৫পৃ. হাদিস, ১২৮,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

যিনি নিজেই কিছু জানেন না তাহলে তিনি কিভাবে শিক্ষক হবেন? বুঝা গেল যে, তিনি
পৃথিবীতে শিখতে আসেননি বরং তিনি পৃথিবীবাসীকে শিখাতে এসেছেন।

ইমাম শরফুদ্দীন বুছুরী (রহঃ) বলেন,

فَاِنَّ مِنْ جَوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا – وَمِنْ عُلُوْمِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ.

-“হে রাসূল (ﷺ) আপনার বদান্যতায় দুনিয়া ও আখিরাতের অস্তিত্ব। লওহে মাহফুজ ও কলমের জ্ঞান আপনার জ্ঞান ভান্ডারের কিয়দাংশ মাত্র। ১৬১

আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহঃ) তার ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ ولا تخط بيمينك [সূরা আনকাবুত, আয়াতঃ ৪৮]  আয়াতটির  ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন,
كَانَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَعْلَمُ الْخَطُوْطَ وَيُخْبِرُ عَنْهَا.-

‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম লিখতে জানতেন এবং সে বিষয়ে অপরকেও জ্ঞাত করতেন।’’ ১৬৩

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন' ১ম খন্ডের ২১৯-২২৫ পৃষ্ঠায় দেখুন।

৮.স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই রাসূল (ﷺ) কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন । জিবরাঈল (আঃ) কে রাসূল (ﷺ)-এর উস্তাদ বা কেউ শিক্ষা দেননি। যারা অনুরূপ বলবে তারা পথভ্রষ্ট।

اَلرَّحْمَنُ. عَلَّمَ الْقُرْاَنَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ -عَلَّمَهُ الْبَيَانَ.

তাফসীর সমৃদ্ধ অনুবাদঃ

"দয়াবান আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন, মানবতার প্রাণতুল্য হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সৃষ্টির পূর্বাপর সব কিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন। ১৬৪

তাফসীরে মাআলেমুত-তানযীলে এ আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে নিম্নরূপ,

خَلَقَ الْاِنْسَانَ اَىْ مُحَمَّدً عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَلَمَّهُ الْبَيَانَ. يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَا يَكُوْنَ.

-“আল্লাহ তায়ালা মানবজাতি তথা মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ )‘কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।” ১৬৫

তাফসীরে খাযেনে' এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,

قِيْلَ اَرَادَ بِالْاِنْسَانِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَايَكُوْنَ لِانَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ نَبِّى عَنَ خَبْرِ الْاُوَّلِيَنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ.
-“বলা হয়েছে যে, (উক্ত আয়াতে) ইনসান' বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বোঝানো হয়েছে। তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, তাঁকে পূর্ববতী ও পরবর্তীদের ও কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।” ১৬৬

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৬১ মোল্লা আলী ক্বারীঃ শরহে কাসীদায়ে বুরাদা ও ১১০ পৃ.

১৬৩. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রূহুল বায়ান : ৬/৬১০ পৃ.

১৬৪. সূরা আর-রহমান, আয়াত ১-৪

১৬৫. মোল্লা মুঈন কাশেফী : তাফসীরে হুসাইনী ও সূরা : ইউসুফ, আয়াতঃ ১১১

১৬৬. ইমাম খাযিনঃ তাফসীরে খাযিন : ৪/২০৮ পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,

وَعَلَّمَ نَبِيَّنَا عَلَيْهِ السَّلاَم الْقُرْاَنَ وَاَسْرَارَ الْاُلُوْهِيَةِ كَمَا قَالَ وَعَلَّمْكَ مَالَمْ تَكُنَ تَعْلَمُ.

-“আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের নবী এ কে কুরআন ও স্বীয় প্রভুত্বের রহস্যাবলীর জ্ঞান দান করেছেন, যেমন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ফরমায়েছেন-
وَعَلَّمَكَ مَاَلَمْ تَكُنْ تَعْلَم
”সে সব বিষয় আপনাকে শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না ।” ১৬৭

৯. চাঁদ ও সূর্যের আলোতে রাসূল (ﷺ) এর ছায়া জমিনে পড়তো না :

এটি নবি (ﷺ)'র অসংখ্য মু'জিযা হতে অন্যতম একটি মু'জিযা ।
ইমাম সুয়ূতি সংকলন করেন,

اخْرُج الْحَكِيم التِّرْمِذِيّ عَن ذكْوَان ان رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لَمْ يَكُنْ يَرَى لَهُ ظلّ فِي شَمْسِ وَلَا قَمَرـ

-“ইমাম হাকেম তিরমিযি (রঃ) তার "নাওয়াদিরুল উসূল’ গ্রন্থে হযরত যাকওয়ান (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হুযুর (ﷺ) এর ছায়া চাঁদ সূর্যের আলোতে জমীনে পড়ত না।” ১৬৮

ইমাম আব্দুর রাযযাক (রহঃ) (ওফাত, ২১১হি.) বর্ণনা করেন,

عَنْ عَبْدُ الرَّزَّاقْ عَنْ ابن جريج قَالَ : اَخْبَرْنِىْ نَافِع أَنَّ اِبْن عباس قَالَ : لَمْ يَكُنْ مَعَ الشَّمْسِ قَطٌّ اِلَّا غَلَبَ ضَوْءَه الشَّمْسِ , وَلَمْ يَقُمْ مَعَ سِرَاجٍ قُطٌّ اِلَّا غَلَبَ ضَوْءه السِّرَاجِ-

-“ইমাম আব্দুর রাযযাক (রঃ) তিনি হযরত ইবনে জুরাইজ (রাঃ) হতে, তিনি হযরত নাফে (রাঃ) হতে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে তিনি বলেন, হুযুর (ﷺ)'র কোন ছায়া ছিল না, তাঁর ছায়া সূর্যের আলোতে পড়তো না বরং তাঁর নূরের আলো সূর্যের আলোর উপরে প্রধান্য বিস্তার করতো এবং কোন বাতির আলোর সামনে দাড়ালেও বাতির আলোর উপরে তাঁর নূরের আলো প্রাধান্য বিস্তার করতো।” ১৬৯

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৬৭. আল্লামা ঈসমাঈল হাক্কী ও তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৯/২৮৯পু, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

১৬৮. ইমাম হাকেম তিরমিযী: নাওয়াদিরুল উসূল : পৃ-১/২৯৮, জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা ১/১২২ পৃ:, হাদিস : ৩২৮, ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ২/১২০, ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/২২০পৃ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/১৪২, শায়খ ইউসূফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : পৃ: ৬৬৮, মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, মিশর, শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/১৪২ পৃ: ইমাম মাহদী আল-ফার্সী : মাতালিউল মুসাররাত : পৃষ্ঠা নং ৩৬৫, ইবনে সালেহ । সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ২/৯০পৃ, আল্লামা ইমাম আহমদ রেযা : নুরুল মুস্তফা : পৃষ্ঠা নং ৮২, ইমাম মুকরিযী : আল ইমতাওল আসমা : ১০/৩০৮ পৃষ্ঠা, ইমাম মুকরিযী : মাকাম বি খাসায়েসুন-নবী এর ২/২৩৫ পৃষ্ঠা।

১৬৯ .ইমাম আব্দুর রাজ্জাক : জযউল মুফকুদ মিন মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক : ১/৫৬ পৃহাদিস : ২৫
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

ইসলামের তৃতীয় খলিফা আমিরুল মু'মিনীন হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) বলেন,

وَقَاَلَ عُثْمَانُ إِنَّ اللهُ مَا أَوْقَعَ ظِلُّكَ عَلَى الْأَرْضِ لِئَلاً يَضَعَ إِنْسَانُ قَدَمَهُ عَلَى ذٰلِكَ الظِّلِّ

-“ হুযুর (ﷺ) এর ছায়া আল্লাহ যমিনে ফেলেননি যাতে কোন মানুষ তার ছায়ার উপর পা রাখতে না পারে।” ১৭০

ইমাম কাজি আয়ায মালেকী এবং ইমাম সাখাভী (রঃ) বলেন,

وَمَا ذُكِرَ من أنَّهُ كَانَ لَا ظل شخصه فِي شَمْسٍ وَلَا قَمَرٍ لِأَنَّهُ كَانَ نُورًا وَأَنَّ الذُّبَابَ كَانَ لَا يَقَعُ عَلَى جَسَدِهِ وَلَا ثِيَابِهِ-

-“তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর। তাঁর শরীর ও পোশাকে মাছি বসত না।” ১৭১

১০. রাসূল (ﷺ) এর মি'রাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল:

আল্লামা শায়খ জামালুদ্দীন আহমদ গাযনুভী হানাফী (রঃ) {৫৯৩হি.} বলেন,

- والمعراج حق عرج رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بشخصه فِي الْيَقَظَة إِلَى السَّمَاء ثمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ الله

“মি'রাজ সত্য, তা হলো রাসূল (ﷺ)'র জাগ্রত অবস্থায় আসমানে ভ্রমণ, তারপর আল্লাহর ইচ্ছা যতটকু ততটুকু।” ১৭২

ইমাম ত্বাহাবী (রঃ) বলেন,

وَالْمِعْرَاجُ حَقٌّ، وَقَدْ أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعُرِجَ بِشَخْصِهِ فِي الْيَقَظَةِ، إِلَى السَّمَاءِ. ثُمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الْعُلَا وَأَكْرَمَهُ اللَّهُ بِمَا شَاءَ، وَأَوْحَى إِلَيْهِ مَا أَوْحَى

-“মি'রাজ হলো রাসুল (ﷺ) এর জীবনে সংঘটিত একটি সত্য ঘটনা। নবি করিম (ﷺ)-কে রাত্রিতে ভ্রমন করানো হয়েছে এবং জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে আল্লাহ তা'য়ালা যতদূর ইচ্ছা করেছেন, আকাশের দিকে তাকে উত্তোলন করেছেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন, তা দ্বারা তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আল্লাহ তাঁর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা প্রত্যাদেশ করেছেন।” ১৭৩

মুফতি আমিমুল ইহসান (রঃ) এর মতে,

وَالْمِعْرَاجُ صعوده صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ إِلَى السَّمَاءِ  فِي الْيَقَظَةِ

-“মি'রাজ হলো রাসূল (ﷺ)'র ঊর্ধ্বগমন, যা জাগ্রত অবস্থায় আসমানে হয়েছিল।”১৭৪

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৭০. ইমাম আবুল বারাকাত নাসাফী : তাফসীরে মাদারিক : ২/৪৯২, সুরা নুর, আল্লামা শফী উকাড়ভী : শামে কারবালা : ৩২৪প, এবং জিকরে জামীল: ৩২৪প, গোলাম রাসূল সাঈদী : তাওজিহুল বায়ান; পৃ-২৪২, আহমদ ইয়ার খান নঈমী, রিসালায়ে নূর,২৫পৃ.

১৭১. কাজী আয়ায : শিফা শরীফ, ১/৪৬২পৃ. ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৮৫পৃ : হাদিস : ১২৬, (এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উনাচন' ১ম খণ্ডের ১৭৩-১৮৬পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন । ইনশাআল্লাহ আশা করি পাঠকবৃন্দের সঠিক বিশ্বাস ফিরে আসবে।)

১৭২ .শায়খ জামালুদ্দীন আহমদ গাভী হানাফী, উসূলুদ্-দ্বীন, ১/১৩৪পৃ. দারুল বাশায়রুল ইসলামিয়্যাহ, বয়র, লেবানন, প্রখম প্রকাশ, ১৪১৯ হি,

১৭৩. ইমাম তাহাভী হানাফী, (শরাহসহ) আকিদাতুত তাহাবী, ১/১৯৫পৃ.

১৭৪ . মুফতি আমিমুল ইহসান, কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃ.২৭২
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

ইমাম কালাবাজি বুখারী হানাফি (রঃ) (ওফাত, ৩৮০হি.) বলেন,

أقروا بمعراج النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَأَنه عرج بِهِ إِلَى السَّمَاء السَّابِعَة وَإِلَى ماشاء الله فِي لَيْلَة فِي الْيَقَظَة بِبدنِهِ

-“রাসূল (ﷺ) এর মি'রাজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে, নিশ্চয় তা জাগ্রত অবস্থায় এবং সপ্তম আকাশেরও উপরে রাতে আল্লাহর যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু নিয়েছেন । ১৭৫

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) বর্ণনা করেন,

فِي الْيَقَظَةِ رَآهُ بِعَيْنِهِ، -‘

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে,
-“ রাসূল (ﷺ) মি'রাজের রজনীতে তার রবকে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চক্ষু দ্বারা অবলোকন করেছেন। ১৭৬

বুঝা গেলে জাগ্রত অবস্থায় মি'রাজ না হলে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ দেখার কথা চিন্তা করা অবান্তর।

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেন -

أَنَّ الْإِسْرَاءَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ كَانَ فِي الْيَقَظَةِ لِظَاهِرِ الْقُرْآنِ-

“নিশ্চয় বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাতে ভ্রমণ ইসরা বা মিরাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে তা কোরআন থেকেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।” ১৭৭

তাই বুঝা যায় বায়তুল মুকাদ্দাস যদি জাগ্রত অবস্থায় না হয় তার পরপরই তো তিনি বুরাকে আসমানে গিয়েছিলেন । বুঝা গেল বাকীটাও জাগ্রত অবস্থায়ই হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি এ কিতাবের অন্য স্থানে বলেন-

- أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ فِي الْيَقَظَةِ -

-“নিশ্চয় ইসরা জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে।” ১৭৮

বর্তমান আহলে হাদিস তথা সালাফিরা রাসূল (ﷺ)'র জাগ্রত অবস্থায় মিরাজ হওয়াকে অস্বীকার করছে।

‘আকিদাতুত ত্বহাবী’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহাম্মদ তাইয়্যিব (রহ) বলেন-

قوله تعالى: أَسْرَى بِعَبْدِهِ اشارة الى الْمِعْرَاجُ الجسمانى لا فى المنام فان العبد ان ذات الشريف مجموع الجسم والروح لا روح فقط والا قيل أَسْرَى بروحه او ذهب بروحه-

-‘‘আল্লাহর বাণী-  أَسْرَى بِعَبْدِهِ এটা সশরীরে মি‘রাজ হওয়ার প্রতি ইশারা করছে। কেননা العبد হলো দেহ ও রূহের সমষ্টি। কেবল روح কে العبد বলা হয় না। روح -কে যদি عبد বলা হতো অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে যদি মি‘রাজ হতো,  তাহলে أَسْرَى بِعَبْدِهِ -এর পরিবর্তে أَسْرَى بروحه  অথবা ذهب بروحه বলা হতো।’’{তথ্য সূত্র : আকিদাতুত তাহাভী (শরাহ সহ) পৃ.৬৯}

আমাদের বক্তব্য হলো যদি ঘুমন্ত অবস্থায় মিরাজ হতো, তাহলে কোন বিতর্কের সৃষ্টি হততো না। কারণ স্বপ্নেযোগে মানুষ সেকেন্ডের মধ্যে প্রাচ্য থেকে প্রাশ্চাত্য পর্যন্ত ভ্রমণ করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আরবদের এটা জানা ছিল । অথচ কাফেররা মি'রাজের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত হলো। সুতরাং এতে
প্রমাণিত হয়, রাসূল (ﷺ)'র মি'রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। যা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতেরও অভিমত।

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৭৫. ইমাম কালাবাজি, আল-তারুল মাযহাবে আহলে তাসাউফ, ৫৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

১৭৬. মােল্লা আলী কারী, মেরকাত, ৯/৩৭৫৭পৃ, হাদিস, ৫৮৬১, দরল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়তি , লেবানন ।

১৭৭. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১৩৪৮৯,

১৭৮. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১৩/৪৮০পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

ইমাম তাযুল কুরা বুরহান উদ্দিন কিরমানী (ওফাত.৫০৫হি.) বলেন,

ومذهب أهل السنة والجماعة في المعراج أنه أسرى بروحه وجسده إلى بيت المقدس، ثم إلى السماوات حتى انتهى إلى سدرة المنتهى، فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى

-“এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অভিমত যে, রাসূল (ﷺ)'র ইসরা বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সিদরাতুল মুনতাহা এবং আল্লাহর নিকট দু ধনুকের নিকটবর্তী হওয়া পর্যন্ত রূহ ও স্বশরীরের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে।” ১৭৯

১১. মি’রাজের সময়ের বিষয়ে সঠিক আকিদা:

রাসূল (ﷺ)'র মি'রাজ হলাে ২৭ই রজব বা ২৬ই রজব দিবাগত রাত । এ মতটিই সুপ্রসিদ্ধ ও অধিক গ্রহণযােগ্য।
আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী (রহ) বলেন,

كَانَ الْإِسْرَاء لَيْلَة السَّابِع وَالْعِشْرين من رَجَب -‘

“রাসূল (ﷺ)'র ইসরা ভ্রমণ বা মিরাজ ২৭ই রজব হয়েছিল। বিশ্বের মুসলিম সমাজের সর্বত্র এ মতই সমধিক সুপ্রসিদ্ধও সুপরিচিত। ১৮০

বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আহলে হাদিসদেরও ইমাম এবং সকলের মান্যবড় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ) তার একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন,

أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ لَيْلَةَ السَّابِعِ وَالْعِشْرِينَ مِنْ رَجَبٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
-“অবশ্যই মি'রাজ সংগঠিত হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ । মহান রব আল্লাহ তা'য়ালাই ভাল জানেন।” ১৮১

ইমাম কাস্তাল্লানী (রহ) উল্লেখ করেন,

كان ليلة السابع والعشرين من رجب

-“মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।” ১৮২

ইমাম জুরকানী (রহ) অনুরূপ মতামত পেশ করেছেন। ১৮৩

তিনি আরও বলেন-
قال بعضهم: وهو الأقوى
“অনেক উলামাগণ বলেছেন যে, এটিই শক্তিশালী অভিমত।” ১৮৪

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৭৯. ইমাম তাযুল কুরা বুরহান উদ্দিন কিরমানী, গারায়েবুল তাফসীর, ১/৬২০পৃ.
মুয়াসসাতুল উলুমুল কোরআন, বয়রুত, লেবানন ।

১৮০. ইমাম আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৪/৩৯পৃ,
দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন ।

১৮১. ইমাম ইবনে কাসির, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৩৫পৃ. দারু ইহইয়াউত-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/৯৩,

১৮২. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৬২পৃ, দারু ইহইয়াউত-তুরাসুল আল্লবী, বয়রুত, লেবানন ।

১৮৩. ইমাম জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেরুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

১৮৪.  ইমাম জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

১২. রাসূল (ﷺ) স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ তা'য়ালা কে স্বচক্ষে অবলােকন করেছেন :

এ বিষয়ে নিয়ে কিছু হাদিসে পাক ও ইমামদের বক্তব্য দেয়া হলাে-

  قَالَ: كَانَ الْحَسَنُ يَحْلِفُ بِاللَّهِ ثَلَاثَةً لَقَدْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ-‘

“ইমাম আব্দুর রাযযাক (রহ) তাঁর “তাফসীরে” হযরত হাসান বসরী (রা.) হতে বর্ণনা করেন,
তিনি কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তা'য়ালাকে দেখেছেন।” ১৮৫

وَرَوَى شَرِيكٌ عَنْ أَبِي ذَرّ رَضِيَ اللَّه عَنْهُ فِي تَفْسِيرِ الآيَةِ قَالَ رَأَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم رَبَّهُ

-হযরত তাবেয়ি শারিক (রহ) হযরত আবু যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত (হৃদয় যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে যে, হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করেছেন।” ১৮৬

হযরত আবুল হাসান আশ'আরী (রহ) বলেন,

وَقَالَ أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيل الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ أنَّهُ رَأَى اللَّه تعالى ببصره وعيسى رَأسِهِ وَقَالَ كُلّ آيةٍ أُوتِيهَا نَبِيّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدْ أُوتِي مِثْلَهَا نَبِيُّنا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُصَّ مِنْ بَيْنِهِمْ بِتَفْضِيلِ الرُّؤْيَةِ-

-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আলী আশআরী (রহ) ও তাঁর এক জামাত সঙ্গী-সাথী বলেন হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তা'য়ালাকে কপালের (চর্ম) চক্ষু দ্বারাই অবলােকন করেছেন। তারা আরও বলেন, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকে যত মু'জিজা দেওয়া হয়েছে অনুরূপ মু'যিজা হুযুর (ﷺ) কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুযুর (ﷺ) কে অগ্রবর্তী করে দিদারে এলাহী মুযিজা দেওয়া হয়েছে।” ১৮৭

বুঝা গেল, কেউ যদি রাসূল (ﷺ)'র মি'রাজে আল্লাহ দেখার বিষয়টি অস্বীকার করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত এবং পথভ্রষ্ট বাতিল ফিরকা হিসেবে গণ্য।

ইমাম কাযি আবুল ফজল আয়াজ (রহঃ) তিনি বলেন,

قَالَ الْقَاضِي أَبُو الْفَضْلِ وَفَّقَهُ اللَّهُ : والحق الذي لا امتراءالحق الذى لا امتراء فيه ان فِيهِ أَنَّ رُؤْيَتَهُ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا جَائِزَةٌ عَقْلًا. وَلَيْسَ فِي الْعَقْلِ مَا يُحِيلُهَا-
“সত্য কথা হলাে আকলের দিক থেকে এ বিষয়ে সন্দেহ পােষণ করার কোন অবকাশ নেই যে, দুনিয়াতে তিনি আল্লাহর দীদার লাভ করেছেন। আর আকলের দিক থেকে বিরূপ কোন প্রমাণও নেই যে, এরূপ হওয়া অসম্ভব।” ১৮৮

মােল্লা আলী ক্বারী (রহ) বলেন,

وقال الغزالي في الإحياء والصحيح أن رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم  رأى الله تعالى ليلة المعراج-

-“ইমাম গাযযালী (রহ) ইহইয়াউল উলুমুদ্দী’নে লিখেন, এ মতই সহীহ বা বিশুদ্ধ যে মি'রাজের রজনীতে রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন।” ১৮৯

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৮৫.
ক. ইমাম আব্দুর রাযযাক, আত-তাফসির, ৩/২৫১, হাদিস ও ৩০৩৩,
খ. কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ
১/১১৫,
গ. মােল্লা আলী কারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.

১৮৬. কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৬পৃ., মােল্লা আলী ক্বারী শরহে শিক্ষা : ১/৪২৬ পৃ

১৮৭. কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পূ, আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪ ২৯ পৃ.

১৮৮. কাজী আয়াজ । শিফা শরীফ : ১/১১৮ প আল্লামা মোল্লা অালী : কারী শরহে শিফা : ১/৪২৯ পু,

১৮৯. আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৩ পৃ,
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,

فَالْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ لِحَدِيثِ بن عَبَّاسٍ وَغَيْرِهِ مِمَّا تَقَدَّمَ وَإِثْبَاتُ هَذَا لَا يَأْخُذُونَهُ إِلَّا بِالسَّمَاعِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

-“অধিকাংশ ওলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নবী করীম (ﷺ) মি'রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তার চর্ম চক্ষু দ্বারাই দেখছেন। যেমনটি, ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে যারা (সাহাবীরা) রাসূল (ﷺ) হতে মি'রাজের সময় (মিরাজের ঘটনা) শ্রবণ করেছেন কেবল তাদের অভিমত ছাড়া বাকি অন্য অভিমত (যেমন মা আয়েশার অভিমত; কেননা তিনি তখন খুব ছােট ছিলেন) গ্রহণ করা হবে না।” ১৯০

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উনােচন"১ম খণ্ডের ১২৮-১৩৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন ।

১৩. রাসূল হায়াতুন্নবী (ﷺ) হিসেবে এখনও রওজা শরিফে আছেন ।

ইতােপূর্বে সমস্ত নবিরা জীবিত তা আলােকপাত করা হয়েছে সে হিসেবে রাসূল (ﷺ)ও নিঃসন্দেহ রওজা শরিফে জীবিত।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ  قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ. - 

-“আমার হায়াত তােমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তােমাদের সাথে কথা বলি তােমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তােমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত । কেননা তােমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবাে। যদি তােমাদের কোন ভালাে আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবাে, আর তােমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তােমাদের জন্য (তােমাদের পক্ষ হতে) ক্ষমা প্রার্থনা করবাে।” ১৯১

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৯০. ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ৩/৫পৃ. দারু ইহইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬, মােল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিক্ষা : ১/৪২৫ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পূ,

১৯১. ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮পৃ. হাদিস : ১৯২৫, সুয়ুতি, জামিউস সগীর : ১/২৮২পৃ. হাদিস : ৩৭৭০-৭১, ইবনে কাছির বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭পৃ, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭পৃ. হাদিস ৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জওজী, আল-ওয়াফা বি আহওয়ালি মােস্তফা, ২ / ৮০৯ - ৮১০ পৃ. আল্লামা ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (রহ) বলেন-
رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ.

-“উক্ত হাদিসের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত ।" ১৯২
ইমাম সুয়ুতি (রহ)ও সহীহ বলেছেন ।

হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,

إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ، فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ

-“নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা আম্বিয়ায়ে কিরামগণের দেহকে ভক্ষণ করা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নবীগণ স্বীয় রওজা পাকে জীবিত । তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়।” ১৯৩
(সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৫২৪পৃ. হা/১৬৩৭)

এ বিষয়ের বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা সম্পর্কে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রহ) দীর্ঘ আলােচনার সর্বশেষ বলেন,

حَيَاةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَبْرِهِ هُوَ وَسَائِرِ الْأَنْبِيَاءِ مَعْلُومَةٌ عِنْدَنَا عِلْمًا قَطْعِيًّا لِمَا قَامَ عِنْدَنَا مِنَ الْأَدِلَّةِ فِي ذَلِكَ وَتَوَاتَرَتْ الْأَخْبَارُ، وَقَدْ أَلَّفَ الْبَيْهَقِيُّ جُزْءًا فِي حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ فِي قُبُورِهِمْ، فَمِنَ الْأَخْبَارِ الدَّالَّةِ عَلَى ذَلِكَ

-“হায়াতুন্নবী (ﷺ) তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় রওজা মােবারকে জীবিত এবং সমস্ত নবীগণই জীবিত যা অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত । কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল প্রমাণ অকাট্য এবং এ প্রসঙ্গে অনেক মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত হয়েছে (আনবিয়াউল আযকিয়া)।”১৯৪

সকল উলামাগণ একমত যে (মুতাওয়াতির) এ পর্যায়ের হাদিসকে ইনকার (অস্বীকার) করলে কাফের হয়ে যাবে। এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন” এর ১ম খণ্ডের ৪০৭৪১১পৃষ্ঠা দেখুন ।
ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে।

১৪. তিনি (ﷺ) ওফাতের পরেও তেমন; যেমন হায়াতে ছিলেন:

আল্লামা ইমাম ইবনুল হজ্জ (রহ) “আল-মাদখাল” গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (রহ) তার “মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া” গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরিফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন,

وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ. ـ

-“আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযুর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলাে তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।”১৯৫

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৯২. ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৪পৃ. হা/১৪২৫০

১৯৩. ইমাম সুয়ুতি, জামিউস সগীর ১/২৮২পৃ. হাদিস/৩৭৭০-৭১,

১৯৪. আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সুয়তী : আল হাভীলিল ফাতাওয়া : ২/১৪৯ পূ,

১৯৫. ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচেছদ : ৪/৫৮০ পৃ,
আল্লামা ইবনুল হজ্ব : আল মাদখাল : কালাম আলা যিয়ারতে সাইয়্যিদিল মুরসালীন : ১/২৫২পু, আল্লামা ইমাম যুরকানী ; শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ:
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

১৫. রাসূল (ﷺ) যেখানে যেখানে ইচ্ছা সেখানে পরিভ্রমণ করতে পারেন।

এ বিষয়ে ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি (রহ) (ওফাত-৯১১হি.) এর প্রসিদ্ধ কিতাব [أَنْبَاءُ الْأَذْكِيَاءِ بِحَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ] এর ৭ পৃষ্ঠায় একটি হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,

النَّظَرِ فِي أَعْمَالِ أُمَّتِهِ وَالِاسْتِغْفَارِ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ، وَالدُّعَاءِ بِكَشْفِ الْبَلَاءِ عَنْهُمْ، وَالتَّرَدُّدِ فِي أَقْطَارِ الْأَرْضِ لِحُلُولِ الْبَرَكَةِ فِيهَا، وَحُضُورِ جِنَازَةِ مَنْ مَاتَ مِنْ صَالِحِ أُمَّتِهِ، فَإِنَّ هَذِهِ الْأُمُورَ مِنْ جُمْلَةِ أَشْغَالِهِ فِي الْبَرْزَخِ كَمَا وَرَدَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ وَالْآثَارُ ـ

“উম্মতের বিবিধ কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের বালা মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগােনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা, এগুলােই হচ্ছে হুযুর (ﷺ) এর শখের কাজ। অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।” ১৯৬

বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহ) তাফসীরে রুহুল বায়ানে, সূরা মূলকের ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন,

قال الامام الغزالي رحمه الله تعالى والرسول عليه السلام له الخيار فى طواف العوالم مع أرواح الصحابة رضى الله عنهم لقد رآه كثير من الأولياء ـ

“সুফীকুল সম্রাট হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ) বলেছেন, হুযুর (ﷺ) সাহাবায়ে কিরামের রূহ মােবারক সাথে নিয়ে জগতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার (প্রমাণ) আছে । তাই অনেক আওলিয়া কিরাম তাদেরকে দেখেছেন।” ১৯৭

মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতুল মাফাতীহ এ মােল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন,

بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْت

ُ শীর্ষক অধ্যায়ের মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন-

وَلَا تَبَاعُدَ مِنَ الْأَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِيَتْ لَهُمُ الْأَرْضُ، وَحَصَلَ لَهُمْ أَبْدَانٌ مُكْتَسَبَةٌ مُتَعَدِّدَةٌ، وَجَدُوهَا فِي أَمَاكِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِي آنٍ وَاحِدٍ، ـ


“ওলীগণ একই মুহুর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারেন। একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারীও হতে পারেন। ১৯৮

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৯৬. সুয়ূতি, আল-হাভী লিল ফাতওয়া, ২ : ১৮৪-১৮৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন ।

১৯৭. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ১০/৯৯পৃ. সূরা মুলক, আয়াত নং-২৯।

১৯৮. আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত চতুর্থ খন্ড, পৃ- ১০১ হাদিস নং-১৬৩২
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

তাই এক সময়েই বহু জায়গায় মিলাদ মাহফিল হয় ওলীগণ যদি একাধিক শরীরে বহু জায়গায় যেতে পারেন তাহলে রাসূল (ﷺ) যেতে পারবেন না কেন? বরং তার সাথে কোন তুলনাই হতে পারে না ?

শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (রহ) লিখেন,

قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ـ

“যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী ﷺ আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হােক।” ১৯৯

এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (রহ) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন,
أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام
“কেননা, নবী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।” ২০০

১৬. রাসূল (ﷺ) এর দৃষ্টিতে সব কিছু হাযির ও নাযিরঃ

আমরা কি করি না করি তিনি তা রওজা শরিফ থেকে অবলােকন করেন। ইতােপূর্বে আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর হাদিস বর্ণনা করেছিলাম, সেখানে রয়েছে রাসূল (ﷺ) আমাদের ভালাে-খারাপ সব কাজ তিনি দেখতে পান। এ বিষয়ে আমরা দেখব,

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে,,

إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ،.

“আল্লাহ তা'য়ালা আমার সামনে সারা দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। তখন আমি এ দুনিয়াকে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে এমনভাবে দেখতে পেয়েছি, যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।” ২০১

হযরত ছাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,

إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا،.

“আল্লাহ তা'য়ালা আমার সম্মুখে গােটা পৃথিবীকে এমনভাবে সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন যে, আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত ও পশ্চিমপ্রান্ত সমূহ স্বচক্ষে অবলােকন করেছি।” ২০২

___________________________

১৯৯. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা তাহরিফে মুকুকে মােস্তফা : ২/৪৩ পূ,

২০০. আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃ, দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

২০১. ইমাম আবু নঈম: হুলিয়াতুল আউলিয়া: ৬১০১, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়তী : খাছায়েসুল কোবরা : ২/১৮৫ পৃ., ইমাম তাবরানী : মু'জামুল কবীর : ১/৩৮২পৃ., মুত্তাকী হিন্দিী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪২০ হাদিসঃ ৩১৯৭১,
ইমাম কুস্তালানী ও মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ৩/৯৫ পৃ:, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মালঃ ১১/১৩৭৮ হাদিস : ৩১৮১০, হায়সামী ও মামাউদ যাওয়াহিদ : ৮/২৮৭ পৃ.,
হাদিসটির সনদের ব্যাপারে অনেক বাতিলপন্থী আপত্তি তুলেছেন। তাদের আপত্তির দাঁতভাঙা জবাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হাদিস শাস্ত্রের উপর গবেষনামূলক গ্রন্থপ্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন" ১ম খন্ডের ৫০৭-৫০৮পৃষ্ঠা দেখুন।

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
২০২. মুসলিম আস-সহীহ : ৪/২২১৬ হাদিস ২৮৮৯, আবু দাউল : আস-সুনান কিতাবুল ফিতান : ৪/৯৫ হাদিস ও ৪২৫২, ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ : ৫/২৮৪ হাদিস : ২২৫০, আবু দাউদ : আস-সুনান : ৪/৯৭ , হাদিস ৪২৫২, তিরমিজি : আস-সুনান ৪ হাদিস ১৮২, নাসায়ী : আস-সুনানে : হদিস ১৬২৭, ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ১৬/ হাদীস : ৭২৩৬, ইবনে মাজাহঃ আস-সুনান : হাদীস ৩৯৫২, খতিব তিবরিযী : মেশকাতঃ ৪/৩৫৪পৃ. হাদীস  ৫৭৫০
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

১৭. রাসূল (ﷺ) এর রওজা জিয়ারত একটি বরকতময় আমল:

কেননা তাঁর রওজা জিয়ারত পূর্নাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপন করে করলে মু'মিনের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي -

“যে আমার রওজা যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। ২০৩

এ হাদিস থেকে দূর থেকে সফর করে রওযা যিয়ারতের বৈধতা প্রমাণ হয় । ২০৪

১৮. হুযুর (ﷺ) এর শাফায়াত সত্য :

হাশরে তিনি শুধু উম্মতের সগীরা গুনাহের জন্য নয়, বরং তাঁর উম্মতের কবীরাহ গুনাহের জন্যই শাফায়াত করবেন। হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي
“আমি আমার উম্মতের কবীরাহ গুনাহের জন্য সুপারিশ করবাে।” ২০৫

এ হাদিসটি অনেক সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন।” ২০৬

১৯. হাশরে শুধু নবীজী শাফায়াত করবেন শুধু তাই নয়, বরং রাসূল (ﷺ) আরও অনেককে সুপারিশ করার ক্ষমতা দিবেন। হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  يَشْفَعُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلَاثَةٌ: الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْعُلَمَاءُ، ثُمَّ الشُّهَدَاءُ

“কিয়ামতের ময়দানে তিন ধরনের মানুষই সুপারিশ করবে, নবীগণ, তারপর আলেমগণ এবং তারপর আল্লাহর রাস্তায় শহীদগণ।” ২০৭

বিভিন্ন হাদিসে আরও অনেক লােকদের বর্ণনা রয়েছে। উক্ত হাদিসটিকে নবম শতাব্দীর মুজাদ্দেদ ইমাম হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ুতি বলেন হাদিসটি “হাসান” ।
অনুরূপভাবে আল্লামা আলুনী, ইমাম বায়হাকীও গ্রহণযােগ্য বলে মেনে নিয়েছেন।২০৮

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
২০৩. দারেকুতনী, আস-সুনান, ৩/৩৩৪, হাদিস: ২৯৫, মুয়াসুসার রিসালা, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪২৪হি

২০৪. এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মোচন" ১ম খণ্ডের ৪২৩-৪৪০পৃষ্ঠা দেখুন ।

২০৫. আবু দাউদ, আস্-সুনান, ৪/২৩৬পৃ. হাদিস : ৪৭৩৯, মুয়াসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪২৪হি, আলবানীও সনদটিকে সহিহ বলেছেন ।

২০৬. এ বিষয়ে বিজারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মোচন" ২য় খণ্ড দেখুন।

২০৭. ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ২/১৪৪৩ পূ, হাদিস : ৪৩১৩,
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়তী : জামেউস-সগীর : ২/৭১৪ পূ, হাদিস : ১০০১১,
আযলুনী : কাশফুল খাফা ; ২/৩৬৫ পৃ. হাদিস :৩২৫৯,
খতিব বিরিযী : মেশকাত : বাবুল হাওজওয়া শাফায়াত : ৩/৩১৮ পূ, হাদিস নং : ৫৬১১,
বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ২/২৬৫ পূ, হাদিস :১৭০৭,
মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১০/১৫৯ পূ, হাদিস : ২৮৭৭০।

২০৮. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন” ২য় খণ্ড দেখুন ।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

২০. রাসূল (ﷺ)'র আগমনের দিনে ঈদ উদযাপন করা বৈধ:

মহান আল্লাহ তা'য়ালা নিয়ামত প্রাপ্তির পর তার শােকরিয়া আদায়ের জন্য মহান রব কুরআনে বহুবার তাগিদ দিয়েছেন। আর আল্লাহর বড় অনুগ্রহ বা নিয়ামত হলাে। রাসূল (ﷺ)। মহান আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেন,

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ

অনুবাদঃ হে হাবিব! আপনি বলে দিন আল্লাহর অনুগ্রহ (ইলম) ও তার রহমত (রহমাতাল্লিল আলামিন) এর প্রাপ্তিতে তাদের মু'মিনদের খুশি উদ্যাপন করা উচিত এবং তা তাদের জমাকৃত ধন সম্পদ অপেক্ষা শ্রেয় ।২০৯

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূতী (রহ) বলেন,

وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى (وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين) (الْأَنْبِيَاء الْآيَة ১০৭)

“সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা নবী করিম (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি।
(সুরা আম্বিয়া, ১০৭)।” ২১০

আওলাদে রাসূল (ﷺ) ইমাম আবু জাফর বাকের (রাঃ) বলেন, এখানে (ফদ্বল) দ্বারাও নবি পাক (ﷺ) কে উদ্দেশ্য। ২১১

তাই বুঝা গেল মহান রব তা'য়ালাই তার রাসূল কে পাওয়ার কারণে আনন্দ বা ঈদ উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
২০৯. সুরা ইউনু, আয়াত, ৫৮

২১০. সুয়ূতী, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭পৃ, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

২১১. সুয়ূতী, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম আলুসী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১১/১৮৩পৃ. ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান, ৫/১৭৭-১৭৮পৃ., হাইয়্যনি, তাফসীরে বাহারে মুহিত, ৫/১৭১, ইমাম জওজী, তাফসীরে যাদুল মাইসীর, ৪/৪০পৃ.
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
 
Top