দ্বিতীয় অধ্যায় : আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতই একমাত্র নাযাত প্রাপ্ত দল

1.পবিত্র কুরআনে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত
2.হাদিসের আলোকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের প্রমাণ
3.প্রথম এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসদের অভিমত
4.দ্বিতীয় হাদিসের বিষয়ে বিজ্ঞ উলামাদের ব্যাখ্যা
5.পঞ্চম হাদিসের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ উলামাদের ব্যাখ্যা
6.আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আদর্শ 
7.আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম কে?
8.মাযহাব অস্বীকারকারীরা কি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অনুসারী? 
______________________________________

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতই একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল

প্রায় দেড় হাজার বছর গত হয়ে গেল ইসলাম ধর্ম এ পৃথিবীতে এসেছে। এর মধ্যে অনেক বিপদাপদের মোকাবেলা করতে হয়েছে এ পবিত্র ধর্মকে। হুযুর (ﷺ)'র সুশোভিত এ উদ্যানের উপর দিয়ে অনেক প্রলয়ঙ্করী ঝড়-তুফান বয়ে গেছে। কিন্তু খোদার লাখো শুকরিয়া যে, এ বাগান পূর্ববৎ সজীব ও প্রাণবন্ত রয়েছে। এ ধর্ম কখনো কুখ্যাত ইয়াযিদের শাসনামলে মেঘাচ্ছন্ন হয়েছে, কখনও হাজ্জাজের আমলের নির্যাতনে ধূলিধূসরিত হয়েছে, কখনো খলিফা মামুনের আমলে বাতিল পন্থীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে, আবার কখনও তাতারীরা বীর-বিক্রমে এর উপর প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে, আবার কখনও খারেজিদের সাথেও মোকাবেলা করতে হয়েছে। রাফেজিরাও একে সমূলে ধ্বংসের নীল নকশা তৈরী করেছিল। বর্তমান শতাব্দীতে আহলে হাদিস ও দেওবন্দী ফিতনাও ইসলামকে বিনাশ সাধনের জন্য ইসলামকে কেচি দ্বারা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের মত ছোট করতে শুরু করেছে । কিন্তু ইসলাম এমন এক স্থির পাহাড়, যার সম্মুখে কোন শক্তিই টিকে থাকতে পারেনি। এটা যেমন ছিল তেমনই মজবুত রয়েছে। আর যতগুলো বাতিল দলই উদ্ভাবিত হোক না কেন সকল বাতিল মতবাদের মুখোশ উন্মোচনে তার থেকে একটি হকপন্থি সত্যান্বেষী দল কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে, যারা রাসূল (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবিগণ এবং সলফে সালেহিনের আক্বিদা, আমল, মত এবং পথের উপর প্রতিষ্ঠিত । সে দলের নাম হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।

👉 পবিত্র কুরআনে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত :

আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আলে-ইমরানের ১০৬ নং আয়াতে। বলেছেন,

يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ

-“সেদিন (কিয়ামতের দিন) কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো। বস্তুত যাদের মুখ কালো হবে, তাদরেকে বলা হবে তোমরা কি ঈমান আনার পর কাফির হয়ে গিয়েছিলে? এবার সে কুফুরির বিনিময়ে আযাবের স্বাদ আস্বাদন করো।” 

এখন আমরা দেখবো হাশরের ময়দানে কাদের মুখ উজ্জ্বল হবে আর কার মুখ কাল হবে। 

১. সুন্নী, দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের মান্যবড় আল্লামা ইবনে কাসির (রঃ) পবিত্র কোরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)'র উক্তি বর্ণনা করেছেন,

وَتَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ

-“কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জল হবে তারা হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী ।” ৩

বুঝা গেল সাহাবিদের যুগ থেকেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলোচনা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে এবং যে দলের সফলতার ইঙ্গিত বহন করে মহান আল্লাহর বাণী পবিত্র কোরআন। 

২. ইমাম ইবনে আবি হাতেম (রহ) (ওফাত,৩২৭হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সনদ সহ একটি হাদিস সংকলন করেন এভাবে,

عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ فِي قَوْلِهِ: يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ قَالَ: تَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ.

-“হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন,
কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারাই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। ৪

৩. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রঃ); (ওফাত.৯১১হি.) বলেন,

وَأخرج ابْن أبي حَاتِم وَأَبُو نصر فِي الْإِبَانَة والخطيب فِي تَارِيخه واللالكائي فِي السّنة عَن ابْن عَبَّاس فِي هَذِه الْآيَة قَالَ {تبيض وُجُوه وَتسود وُجُوه} قَالَ تبيض وُجُوه أهل السّنة وَالْجَمَاعَة وَتسود وُجُوه أهل الْبدع والضلالة

-“ইমাম আবু হাতেম এজন্য তার তাফসীরে, আবু নছর এক তার ইবানাত গ্রন্থে, খতিবে বাগদাদী (রহঃ) তাঁর তারিখে বাগদাদে, ইমাম লালকায়ী গ্রাঙ্গণ তাঁর সুন্নাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কিয়ামতের দিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মুখ উজ্জ্বল হবে এবং আহলে বিদআতি বা দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে।” ৫

৪. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রঃ) (ওফাত.৯১১হি.) আরও বর্ণনা করেন,

وَأخرج الْخَطِيب فِي رُوَاة مَالك والديلمي عَن ابْن عمر عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فِي قَوْله تَعَالَى {يَوْم تبيض وُجُوه وَتسود وُجُوه} قَالَ: تبيض وُجُوه أهل السّنة وَتسود وُجُوه أهل الْبدع

-“ইমাম খতিবে বাগদাদি (রহঃ) তাঁর তারিখে বাগদাদে, ইমাম মালেক (রহঃ), ইমাম দায়লামী (রহঃ) তারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে, এ আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারাই হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত। আর আহলে বিদআতী বা দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে।” ৬

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৩. ইবনে কাসির, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/৭৯পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৯হি, 

৪. ইমাম আবি হাতেম, আত-তাফসীর, ৩/৭২৯, হাদিস, ৩৯৫০, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী, তাফসীরে আদ্দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন । 

৫. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে আদ্দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

৬. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদুআত, ১/৮৪পৃ, 

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৫. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (রঃ); (ওফাত.৯১১হি.) আরও বর্ণনা করেন,

وَأخرج أَبُو نصر السجْزِي فِي الْإِبَانَة عَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَرَأَ {يَوْم تبيض وُجُوه وَتسود وُجُوه} قَالَ: تبيض وُجُوه أهل الْجَمَاعَات وَالسّنة وَتسود وُجُوه أهل الْبدع والأهواء

ইমাম আবু নছর আল-সাযি (রহ) একদা তার আল-ইবানাত গ্রন্থে, 
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে,
এ আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জল হবে তারাই হলো আহলে জামাত অর্থাৎ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত, আর আহলে বিদআতী বা ও দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এবং যাদের মধ্যে প্রবৃত্তিপূজা থাকবে তাদের মুখ কালো হবে।" ৭

৬. আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,

وَأَخْرَجَ ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ، وَالْخَطِيبُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ فِي قَوْلِهِ: يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ قَالَ: تَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوهُ أَهْلِ الْبِدَعِ وَالضَّلَالَةِ.

-" কিয়ামতের দিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মুখ উজ্জ্বল হবে এবং বিদআতী ও দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে (যাদেরকে আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকা বলা হয়)। ৮

৭. ইমাম দায়লামী (রঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন,

{يَوْم تبيض وُجُوه وَتسود وُجُوه} تبيض وُجُوه أهل السّنة وَتسود وُجُوه أهل الْبدع

-“এ আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ বর্ণনা করেন যে, কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারাই হলো আহলে সুন্নাহ (জামাত)। আর আহলে বিদআতি বা দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে।”৯

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৭. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ২/২৯১পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম অাবি হতাম, আত-তাসীর, ৩/৭২৯, 

৮. শাওকানী, ফতহুল ক্বদীর, ১/৪২৫, দারু ইবনে কাসির, দামেস্ক, বয়রুত, প্রকাশ ১৪ ১৪হি, 

৯.ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/৫২৯পৃ. হাদিস, ৮৯৮৬
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৮. আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন,

قال ابن عباس رضي الله عنهما: تبيض وجوه أهل السنة والجماعة وتسود وجوه أهل البدعة والفرقة.

-“হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কিয়ামতের দিন যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারাই হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং বিদআতী ও দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুখ কালো হবে (তাদেরকে আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকা বলা হয়)। ১০

👉 হাদিসের আলোকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের প্রমাণ :

প্রথম হাদিসঃ হযরত ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-“আমার উম্মতের মধ্যে সে সমস্ত জিনিসের আবির্ভাব ঘটবে, যা বনী ইসরালের মধ্যে ছিল। দু'টি জুতার একটি অপরটির সাথে যেমন মিল থাকে । এমনকি বনী ইসরাঈলের কেউ যদি প্রকাশ্যে মায়ের সাথে যিনা করে, তবে আমার উম্মতের মধ্যেও এমন লোকের আবির্ভাব হবে, যে তা করবে। নিশ্চয় বনী ইসরাঈল বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে এবং আমার উম্মত তিয়াত্তার দলে বিভক্ত হবে। তাদের সকলেই জাহান্নামে যাবে তবে একটি দল ব্যতীত । তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কারা? রাসূল (ﷺ) উত্তর দিলেন, “আমি এবং আমার সাহাবার আদর্শের ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” ১১

প্রথম এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসদের অভিমত ও আমরা এখন দেখবো যে উপরের হাদিসের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহগণ কোন দলের কথা বলেছেন। 

১.এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রঃ) বলেন,

فَلَا شَكَّ وَلَا رَيْبَ أَنَّهُمْ هُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ

-“এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নাজাতপ্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত।” ১২

২. আল্লামা ইমাম ইরাকী (দঃ) বলেন,

أهل السّنة وَالْجَمَاعَة

"এটাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জা'আমাত।” ১৩ 

৩. বিখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা ইসমাঈল হাক্কি (রঃ) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-

وفرقة ناجية وهم اهل السنة والجماعة 

“নাজাতপ্রাপ্ত দলই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত।" ১৪

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১০.ইবনে তাইমিয়া, মুস্তাদরাক আ'লা মাজমাউল ফাত্ওয়া, ২/২৫২পৃ. (শামিলা)

১১. খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃ., কিতাবুল ই'তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং.১৬১, তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/২৬, হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি হাসান বলেছেন, তাবরানী : মুজামুল কাবীর, ১৩/৩০পৃ, হাদিস, ৬২, ১৪/৫২, হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ, ১৪ ১৫হি, বায়হাকি, ই'তিত্বাদ, ১/২৩৩পৃ. বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩, হাদিস, ১০৪ 

১২. মােল্লা আলী কৃারী, মেরকাত, ১/ ২৫৯, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়ত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ, ১৪২২হি,। 

১৩. ইমাম ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়াউল উলুম, ১/১১৩৩পৃ. দারুল ইবনে হাযম, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ, ১৪২২হি,।
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৪. আহলে হাদিসদের মুহাদ্দিস মোবারকপুরী এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন -

ولا شك أنهم أهل السنة والجماعة. 

“এতে কোন সন্দেহ নেই নাজাত প্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ।” ১৫ 

দ্বিতীয় হাদিস: এ বিষয়ে উপরের হাদিসের ন্যায় সাহাবি হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রাঃ) হতে আরেকটি সূত্র এভাবে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে । আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।

كُلُّهَا فِي النَّارِ إِلَّا وَاحِدَةً، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ

‘বাহাত্তর দল জাহান্নামে যাবে এবং একটি দল জান্নাতে যাবে। আর তারা হল জামাত অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। আর আমার উম্মতের মাঝে এমন একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তিপূজা এমনভাবে প্রবেশ করবে, যেমন জলাতঙ্ক রোগ, এ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিটি শিরা-উপশিরায় প্রবেশ করে।”১৬ 

এই দ্বিতীয় হাদিসের বিষয়ে বিজ্ঞ উলামাদের ব্যাখ্যা ,

১.আল্লামা শায়খ মাতুলী শা'রাভী একা { ওফাত.১৪১৮হি. } এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন,
والجماعة: هم أهل السنة والجماعة

-“এখানে জামাত বলতে রাসূল (ﷺ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতকে বুঝিয়েছেন।"১৭ 

২. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আব্দুর রউফ মানাভী (রঃ) বলেন,

والجماعة أي أهل السنة والجماعة

-“এখানে জামাত বলতে রাসূল (ﷺ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতকে বুঝিয়েছেন।”১৮ 

৩. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আব্দুর রউফ মানাভী (রঃ) আরও বলেন, 

الفرقة الناجية هي أهل السنة والجماعة 

-“নাজাত প্রাপ্ত দলই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত।”১৯ 

৪. আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের আলেম আযিমাবাদী (ওফাত.১৩২৯হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-

هُمْ أهل السنة والجماعة وهي الفرقة الناجية 

“এটা দ্বারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতকে বুঝানো হয়েছে, যা একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল।"২০

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
১৪. ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রূহুল বায়ান, ১/১৩পৃ. সুরা ফাতেহার ব্যাখ্যা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়া, লেবানন । 

১৫. মােবারকপুরী, মের'আতুল মাফাতিহ, ১/ ২৭৫পৃ. 

১৬. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পূ, কিতাবুল ই'তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং. ১৬২, মুসনাদে আহমদ,আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/১৯৮পৃ. কিতাবুস-সুন্নাহ, হাদিস, ৪৫৯৭, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে আবি দাউদের তাহকীকে হাদিসটি হাসান বলেছে কিন্তু পাগলের মত আবার মিশকাতে সহিহ বলেছে। 

১৭. শায়খ শারাভী, তাফসীরে শারাভী, ৭/৪ ০০২পৃ.। 

১৮. মানজ, ফয়যুল কাদীর, ২/২০পৃ, হাদিস ও ১২২৩, মাকতুবাতুল আযারিয়াতুল কোবরা, মিশর, প্রকাশ, ১৩৫৬হি । 

১৯. মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ২/২৩, হাদিস : ১২২৩, মাকতুবাতুল যারিয়াতুল কোবরা, মিশর, প্রকাশ, ১৩৫৬হি,।।

২০. আযিমাবাদী, শরহে সুনানে আবি দাউদ, ১২/২২৩পৃ.দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৫ হি,।

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫. আহলে হাদিস মোবারকপুরী (ওফাত,১৩৫৩হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন  -

هُمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَهِيَ الْفِرْقَةُ النَّاجِيَةُ 

“এটা দ্বারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতকে বুঝানো হয়েছে, যা একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল। ২১

তৃতীয় হাদিস:  এ ছাড়া এ বিষয়ে উপরের হাদিসের অনুরূপ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে আরেকটি সূত্র পাওয়া যায়। ২২

চতুর্থ হাদিস : ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী (রহ) {ওফাত ৩৭৩হি.} এ হাদিসটি কিছুটা মতন পরিবর্তন করে সংকলন করেন এভাবে,

قالوا: يا رسول الله ما هذه الواحدة؟ قال: أهْلَ السُّنَّةِ وَالجَمَاعَةِ الَّذِي أنا عَلَيْهِ، وأصْحَابِي

-“সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! নাজাতপ্রাপ্ত একমাত্র দল কোনটি? তিনি বললেন, তারা হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত যারা আমার এবং সাহাবিদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত।"২৩

উপরের হাদিসে প্রমাণিত হলো যে রাসূল (ﷺ)'র মুখেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নাম উচ্চারিত হয়েছে বা প্রচলন ছিল । তার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায় সাহাবিদের যুগেই এ সঠিক দলের নামের প্রচলন ছিল। যেমন :

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) বর্ণনা করেন,

سُئِلَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ عَنْ عَلَامَاتِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ؟ فَقَالَ: أَنْ تُحِبَّ الشَّيْخَيْنِ، وَلَا تَطْعَنَ الْخَتَنَيْنِ، وَتَمْسَحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ.

-“হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন- শায়খাইন অর্থাৎ হযরত আবু বকর ও উমর (রাঃ) কে মুহাব্বত করা । এবং হযরত আলী  ও হযরত উসমান (রাঃ)'র সমালোচনা না করা এবং চামড়ার মৌজাদ্বয়ের উপরে মাসেহ করা । (মোল্লা আলী কারী, মিরকাত, ২/৪৭২পৃ.) 

এ রকম বর্ণনা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর পাওয়া যায় (তথ্য সূত্র: মোল্লা জিওন, তাফসীরে আহমদিয়্যাহ তে সুরা আনআমের ১৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়।) 

এ ছাড়া আমরা সুরা আলে ইমরানের ১০৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা বিস্তারিত আলোকপাত করেছি। এ সমস্ত হাদিসে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত দলের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, যারা রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর রাসূল (ﷺ) বলেন. - এবং সাহাবিদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত একমাত্র দল হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। 

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
২১. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযি, ৭/৩৩২পৃ. ও মের'আতুল মাফাতিহ, ১/২৭১পৃ. ও ১.২৭৮পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন । 

২২. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হুলিয়াতুল আউলিয়া, ৯/১৩৮পৃ. দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন । 

২৩. ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী, তাফসীরে বাহারুল উলুম, ১/৪৫৬পৃ. দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়কত, লেবান। 
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিসে পাক জানতে আপনারা আমার লিখিত প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ দ্বিতীয় খণ্ড দেখুন। এ ছাড়া যত সম্প্রদায় তথা রাফেযী, খারেজী, মুরজিয়া, কাদারীয়া, জাহমিয়া, হারুরিয়া, শিয়া, আহলে হাদিস, কওমী-দেওবন্দী সকলেই ভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট। 

পঞ্চম হাদিস : হযরত মুয়াবিয়া বিন কুররাতা (রঃ) তিনি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন ,

لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي مَنْصُورِينَ، لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ

-“আমার উম্মতের মাঝে একদল কিয়ামত পর্যন্ত (শত্রু পক্ষের উপর) সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত থাকবে। যে তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে চায়, সে তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” ২৪

পঞ্চম হাদিসের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ উলামাদের ব্যাখ্যাঃ

১.এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম কাযি আয়াজ মালেকী (রঃ) এবং ইমাম নববী (রঃ) বলেন,

قَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ إِنَّمَا أَرَادَ أَحْمَدُ أَهْلَ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَمَنْ يَعْتَقِدُ مَذْهَبَ أَهْلِ الْحَدِيثِ

-“ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) বলেন, নিশ্চয় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) এ হাদিস থেকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা পোষণ করেছেন যারা হাদিস বিশারদগণের আক্বিদার উপর রয়েছেন। ২৫ 

২. আল্লামা ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (র) এর ব্যাখ্যায় লিখেন,

وَقَالَ الإِمَام أَحْمد: إِن لم يَكُونُوا أهل الحَدِيث فَلَا أَدْرِي من هم. وَقَالَ القَاضِي عِيَاض: إِنَّمَا أَرَادَ الإِمَام أَحْمد أهل السّنة وَالْجَمَاعَة.

-“ইমাম আহমদ (রহ) বলেন, যদি (সে দলের লোকেরা ) তারা হাদিস বিশারদগণ না হয় তাহলে তাদের সম্পর্কে আমি জানি না । ইমাম কাযি আয়ায (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) (এ হাদিসে পাকের ব্যাখ্যায়) (এখানে তায়েফা বা একটি দল বলতে) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকেই উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা পোষণ করেছেন।" ২৬ 

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
২৪. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৪ পূ, হাদিস ৪৬, আৰু নুয়াইম ইস্পাহানী, হুলিয়াতুল আউলিয়া, ৯/৩০৭পৃ, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬৮৩৫, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮২৭৪ 

২৫. ইমাম নওয়াবী, শরহে মুসলিম, ১৩/৬৭পৃ, দারু ইহইয়াউত-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৩৯২হি

২৬. ইমাম বদরুদ্দীন আইনী, শরহে বুখারী, ২/৫২পৃ. এবং ১৬/১৬৪পৃ.দারু ইহইয়াউত-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন ।
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৩. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রঃ) (ওফাত.৯১১হি.) বলেন,

قَالَ أَحْمد بن حَنْبَل فِي هَذِه الطَّائِفَة إِن لم يَكُونُوا هم أهل الحَدِيث فَلَا أَدْرِي من هم أخرجه الْحَاكِم فِي عُلُوم الحَدِيث قَالَ القَاضِي عِيَاض وَإِنَّمَا أَرَادَ أهل السّنة وَالْجَمَاعَة وَمن يعْتَقد مَذْهَب أهل الحَدِيث 
-“ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) ঐ দল সম্পর্কে বলেন যদি তারা হাদিস বিশারদগণ না হন তাহলে আমি তাদেরকে চিনি না। ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রঃ) তাঁর “উলুমুল হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) বলেছেন, (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল) যারা হাদিস বিশারদগণের আক্বিদার উপরে তিনি তাদেরকেই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত বলে বুঝিয়েছেন। ২৭

৪. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- 

فَالْمُرَادُ بِهِمْ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ.

“এখানে তায়েফা বা একদল দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।”২৮ 

৫. আহলে হাদিস আযিমাবাদী (ওফাত.১৩২৯হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-

وقال أحمد بن حنبل إن لم يكونوا أهل الحديث فلا أدري من هم -قال القاضي عياض إنما أراد أحمد أهل السنة والجماعة ومن يعتقد مذهب أهل الحديث

-“ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) ঐ দল সম্পর্কে বলেন যদি তারা হাদিস বিশারদগণ না হন তাহলে আমি তাদেরকে চিনি না। ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) বলেছেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) এখানে যারা হাদিস বিশারদগণের আক্বিদার উপরে রয়েছেন তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতকেই ইচ্ছা পোষণ বা উদ্দেশ্য করেছেন।”২৯ 

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
২৭. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২পৃ. (শামিলা) 

২৮. ইমাম মােল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৪০৫২, হাদিস নং-৬২৯২, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪০৫ হি, 

২৯. আযিমাবাদী, শরহে সুনানে আবি দাউদ, ৭/১১৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪ ১৫ হি,
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৬. আহলে হাদিস মোবারকপুরী (ওফাত.১৩৫৩হি.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, 

وَقَالَ الْحَافِظُ فِي الْفَتْحِ وأخرج الحاكم فِي عُلُومِ الْحَدِيثِ بِسَنَدٍ صَحِيحٍ عَنْ أَحْمَدَ إِنْ لَمْ يَكُونُوا أَهْلَ الْحَدِيثِ فَلَا أَدْرِي مَنْ هُمْ وَمِنْ طَرِيقِ يَزِيدَ بْنِ هَارُونَ مِثْلُهُ انْتَهَى قَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ إِنَّمَا أَرَادَ أَحْمَدُ أَهْلَ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَمَنْ يَعْتَقِدُ مَذْهَبَ أَهْلِ الْحَدِيثِ

-“ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) তাঁর ফতহুল বারী' গ্রন্থে এবং ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রঃ) তার উলুমুল হাদিস গ্রন্থে সহিহ সনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন ঐ দল সম্পর্কে বলেন যদি তারা হাদিস বিশারদগণ না হন তাহলে আমি তাদেরকে চিনি না। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইয়াযিদ ইবনে হারুন (রঃ) ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন । ইমাম কাযি আয়ায (রঃ) বলেছেন, (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল) যারা হাদিস বিশারদগণের আকিদার উপরে রয়েছেন তিনি তাদেরকেই তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত বলে উদ্ধেশ্য বা ইচ্ছা পোষণ করেছেন।”৩০

আল্লামা ইবনে কাসির দামেস্কী (রঃ) মত পেশ করেছেন যে, তায়েফা বা সে দলটি হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত।” ৩১

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ :

আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পরিচয় সম্পর্কে আল্লামা মায়দানী (রঃ) লিখেছেন,

أَهْلِ السُّنَّةِ السيرة والطريقة المحمدية و أَهْلِ الْجَمَاعَةِ من الصحابة والتابعين ومن بعدهم من المتبعين للنبي صلى الله عليه وسلم

-“আহলুস সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রাসূল (ﷺ)র সীরাত এবং তাঁর তরিকার ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত এবং আহলুল জামা'আত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যারা রাসূল (ﷺ)'র অনুসারী সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন এবং তাবে-তাবেয়ীগণের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত।”
(শরহে আকিদাতুত তাহাবী, পৃ.৪৪)। 

সদরুশ শরিয়া আল্লামা উবায়দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রঃ) লিখেন,

أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ هُمُ الذين والطريقهم طريقة الرسول وَأَصْحَابِهِ دون أَهْلِ الْبِدَعِ

-“যাদের তরিকা হলো, রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবাবিদের তরিকা, তারাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত এবং তারা কোন বিদআতী সম্প্রদায় নয়। ৩২

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পরিচয় সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রঃ) বলেন,

أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ، وَهُمُ الَّذِينَ طَرِيقَتُهُمْ كَطَرِيقَةِ رَسُولِ اللَّهِ  صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ–وَأَصْحَابِهِ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ -، دُونَ أَهْلِ الْبِدَعِ

- যাদের তরিকা হলো, রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবাবিগণের তরিকা, তারাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত এবং তারা কোন বিদআতী সম্প্রদায় নয়।” ৩৩

আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন,

والبدعة مقرونة بالْجَمَاعَةِ فيقال: أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ كما يقال اهل البدعة والفرقة

-“বিদআত শব্দটি ফিরকা’ (বিচ্ছিন্নতাবাদ)'র সাথে সম্পর্কিত এবং সুন্নাত শব্দটি জামাত (বৃহত্তম) দলের সাথে সম্পর্কিত। যেমন বলা হয়ে থাকে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত এবং বলা হয়, আহলুল বিদআত ওয়াল ফিরকা।” (আল-ইস্তিমাতু, ১/৪২পৃ.) 

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৩০. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়ামি, ৬/৩৬০পৃ.দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন । 

৩১. ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নেহায়ী, ৬৭৩পৃ.দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪০৭হি। 

৩২. আল্লামা উবায়দুল্লাহ ইবনে মাসউল, আত-তাওযীহ, ৩/৩৮পৃ.. 

৩৩. ইমাম মোল্লা আলী কারী, মেরকাত, ৯/৪০৪৪, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ, ১৪২২হি।
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

ইমাম তিরমিযি (রহ) এ মতটিকে উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেন,

وَهَكَذَا قَوْلُ أَهْلِ العِلْمِ مِنْ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالجَمَاعَةِ

-“আর এটিই আহলে ইলম তথা আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বিদা।”৩৪ 

ইমাম জুরকানী (রঃ) একটি বিষয়কে হক প্রমাণে এবং বাতিলদের খণ্ডনে বলতে গিয়ে লিখেন- 
قَالَ أَهْلُ الْعِلْمِ مِنْ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ 

“আর এটিই আহলে ইলম (যারা ইলমে হাদিস ও ফিকহের অধিকারী) তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বিদা। ৩৫ 

আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী এক পর্যায়ে আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতকে হক এভাবে লিখেন,

لِأَنَّ الْمَسْحَ ثَبَتَ بِالتَّوَاتُرِ وَاتَّفَقَ عَلَيْهِ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ

-“নিশ্চয় (জুতার উপর মোজা) মাসেহ করা মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। ৩৬

আহলে হাদিস মোবারকপুরী (ওফাত,১৩৫৩হি.) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত সম্পর্কে তার কিতাবের এক স্থানে লিখেন,

الشيخ الجيلاني في الغنية: وأما الفرقة الناجية فهي أهل السنة والجماعة.

-“বড় পীর হযরত শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ“গুনিয়াতুত-তালেবীন' এ লিখেন, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতই হলো একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল। ৩৭

ইমাম খতিবে বাগদাদী (রহঃ) একজন রাবীর গ্রহণযোগ্যতা ও সে সঠিক আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিল বলতে গিয়ে লিখেন,

وكان شيخا صالحا صدوقا من أهل السنة، معروفا بالخير،

-“তিনি হাদিসের শায়খ ছিলেন, সৎ, সত্যবাদী, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন, পরিচিত ভালো ব্যক্তি ছিলেন।” ৩৮

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম কে? 

ইজতিহাদী ফিকহী শরিয়তের মাসআলার ক্ষেত্রে চার মাযহাবের যে কোনো ইমামের মতামতকে অনুসরণ করা অপরিহার্য। কিন্তু আকিদাগত ক্ষেত্রে সেটা ভিন্নতর ।

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৩৪. তিরমিযি, আস্-সুনান, ৩/৪১পৃ.হাদিস : ৬৬২. 

৩৫. জুরকানী, শরহে মুয়াত্তা, ৪/৬৬৩পৃ. আযিমাবাদী, শরহে সুনানে আবি দাউদ, ১৩/১৩পৃ.দারুল কুতুব ইমিয়্যাহ, বয়কত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪ ১৫ হি.।

৩৬. শাওকানী, নায়লুল আউতার, ১/২৩১, দারুল হাদিস, মিশর, প্রকাশ,১৪১৩হি, 

৩৭. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়ার্যি, ৭৩৩২৭পৃ, ও মেরআতুল মাফাতিহ, ১/২৭১,দারুল কুতুব ইমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন ।

৩৮. খতিবে বাগদাদ, তারীখে বাগদাদ, ৪/২২পৃ. ক্রমিক.১২৩৩, দারুল গুরুবুল ইসলাম, বয়রুত, লেবানন ।
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

১.ফাতওয়ায়ে শামীর মুকাদ্দামায় উল্লেখ আছে,

(عَنْ مُعْتَقَدِنَا) اَىْ عَمَّا نَعْتَقِدْهُ مِنْ غَيْرِ الْمَسَائِلِ الْفَرْعِيَّةِ مِمَّا يَجِبُ اِعْتَقَادْهُ عَلَه كُلِّ مُكَلَّفٍ بِلَا تَقْلِيْدٍ لِاَحْدٍ وَّهُوَ مَا عَلَيْهِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَهُمْ اْلاَشَاعِرَةُ وَالمَاتُرِيْدَّيَّةُ.

-“শারয়ী আনুষঙ্গিক মাসাইল ব্যতীত যে সব বিষয়ে আমরা বিশ্বাস রাখি এবং কারো অনুসরণ ছাড়াই যে সমস্ত বিষয়ে বিশ্বাস রাখাটা প্রত্যেক মুকাল্লাফ (বালিগ ও বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি) এর জন্য ওয়াজিব, সেগুলো হলো, আকায়িদের সহিত সম্পৃক্ত বিষয়, যার ধারক ও বাহক হচ্ছে- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত । তারা হলেন ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রঃ) এবং ইমাম মাতুরীদি (রঃ)।”৩৯ 

২. এ বিষয়ে আরও কিছু ইমামদের মতামত নিম্নে দেয়া হলো- আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেন,

كَمَا حَكَاهُ أَبُو الْحسن الْأَشْعَرِيّ وَغَيره من أهل السّنة وَالْجَمَاعَة

-“যেমন আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রঃ) বলেন এবং তার সাথে অন্যান্যগণ।” ৪০

৩. ইমাম তকী উদ্দিন সুবকী (রঃ) { ওফাত.৭৭১হি.} বলেন 

إِمَام أهل السّنة وَالْجَمَاعَة أبي الْحسن الْأَشْعَرِيّ - رَضِي الله عَنهُ

-“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জা'আমাতের আকায়েদের ইমাম হলো ইমাম আবুল হাসান আশআরী (রঃ)।”৪১ 

৪. ইমাম তাহতাবী (রহ) বলেন,

والمراد بالعلماء هم أهل السنة والجماعة وهم أتباع أبي الحسن الأشعري وأبي منصور الماتريدي رضي الله عنهما

-“ইমাম আবুল হাসান আশ'আরী (রঃ) এবং তাঁর সহযোগী হযরত আবুল মনসুর (রঃ) এর আক্বিদার উপর যারা রয়েছেন।” ৪২

৫. খাতেমাতুল মুহাক্কিকীন , ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রঃ) বলেন,

أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَهُمْ الْأَشَاعِرَةُ وَالْمَاتُرِيدِيَّةِ

-“আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত বলতে আশ'আরী এবং মাতুরীদী (মতবাদের অনুসরণ) কে বুঝায়।” ৪৩

৬. এ ব্যাপারে আল্লামা যুবাইদি (রঃ) বলেন,

اذا اطلق السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ فالمراد به الأشاعرة والماتريديه

-“যখন সাধারণভাবে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত বলা হয়, তখন আশআরী এবং মাতুরীদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়।” ৪৪

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৩৯. ইবনে আবেদীন শামী ও রুদুল মুখতার ও বহসে তাকলীদ : ১/৩৬ পৃ. 

৪০. মােবারকপুরী, মের'আতুল মাফাতিহ, ১/২৭৫পৃ. 

৪১. তকি উদ্দিন সুবকি, রফেউল হিজাব, ১/২৬৮, দারুল আলমুল কিতাব, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৯৯৯, 

৪২. তাহতাবী, মারাকিল ফালাহ ১/৯, দারল আলামুল কিতাব, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৮হি, 

৪৩. ইবনে আবেদীন শামী, রুদুল মুখতার, ১/৪৯পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন । 

৪৪. আল্লামা যুবাইদি, ইত্তিহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন, ২/৬পৃ.
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

৭. ইমাম ইবনে হাজার মক্কী হাইতমী (রঃ) বলেন,

إِمَام أهل السّنة وَالْجَمَاعَة الشَّيْخ أَبُو الْحسن الْأَشْعَرِيّ

-“হযরত আবুল হাসান আশ'আরী (রাঃ) হলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের ইমাম।”৪৫

৮. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রঃ) বলেন,

إِمَامُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ الشَّيْخُ أَبُو الْحَسَنِ الْأَشْعَرِيُّ

-“হযরত আবুল হাসান আশ'আরী (রঃ) হলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামআতের ইমাম। ৪৬ 

৯. তাফসিরে মাতুরীদির ভূমিকায় রয়েছে

الأشاعرة هم أهل السنة والجماعة 

-“ইমাম আশআরী (র)-এর আক্বিদা বা মতবাদে বিশ্বাসীরাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী।” ৪৭

মাযহাব অস্বীকারকারীরা কি আহলে সুন্নাহ
ওয়াল জামা'আতের অনুসারী? 

বর্তমানে নয় যুগযুগ ধরে অনেক বাতিল পন্থীরাও নিজেদেরকে আহলে সুন্নাহ বা হক পন্থী বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু দেখতে হবে যে আহলে সুন্নাহের মূল নীতি অনুসারে সে আছে কিনা। এ কয়েক শতাব্দী ধরে একটি ফিতনা খুব প্রবল বেগে গজিয়ে উঠছে তাদের নাম আহলে হাদিস । তারাও সুযোগ বুঝে নিজেদেরকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী বলে দাবি করে। কিন্তু আক্বিদা ও মূল নীতির ক্ষেত্রে তারা আহলে সুন্নাহ এর ধারে কাছেও নেই । তারা চার মাযহাব মানাকে অস্বীকার করে, অথচ অতীতের অসংখ্য উলামায়ে কেরামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, চার মাযহাবকে অস্বীকারকারী আহলে সুন্নাহ থেকে খারিজ বা বাতিল পথভ্রষ্ট। 

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেন,

هُوَ مَذْهَب الْأَئِمَّة الْأَرْبَعَة وَغَيرهم من أهل السّنة وَالْجَمَاعَة

-“চার মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামগণ এবং অন্য মুজতাহিদ ফকিহ ইমামদের মাযহাব হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত।”৪৮ 

এ প্রসঙ্গে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন-

وَمَذْهَبِ الْحَنَفِيَّةِ مِنْ جُمْلَةِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ،  

“হানাফী মাযহাব হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই বুঝা গেল যারা মাযহাব অস্বীকার করে তারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অনুসারী নয়; বরং সে পথভ্রষ্ট। ৪৯

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৪৫. ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ১/৫২পৃ. 

৪৬. ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৪১পৃ. 

৪৭. তাফসীরে মাতুরিদী, (ভূমিকা) ১/১৫৭প, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ, ১৪২৬ হি.। 

৪৮. আইনী, উমদাতুল কারী, ২/২৩৮পৃ. 

৪৯. মােল্লা আলী কারী, মেরকাতুল মাফাতিহ, ৮/৩৩৭৪৮পৃ. হা/৫৩৭৬ এর আলোচনা।
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

এ প্রসঙ্গে ইমাম সাভী একদা সূরা কাহাফ আয়াত ২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,

وَلَا يَجُوْزُ تَقْلِيْدُ مَا عَدَا الْمَذَهِبِ الْاَرْبَعَةِ وَلَوْ وَافَقَ قَوْلَ الصَحَّابَةِ وَالْحَدِيْثِ الصَّحِيْحِ وَالْاَيَةِ فَالْخَارِجُ عَنِ الْمَذَاهِبِ الْاَرْبَعَةِ ضَالٌّ مُضِلٌّ وَرُبَمَا اَدَّاهُ ذَالِكَ اِلَي الْكُفْرِ لِاَنَّ الْاَخْذَ بِظَوَاهِرِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ مِنْ اُصُوْلِ الْكُفْرِ 

“চার মাযহাব ছাড়া অন্য কোন মাযহাবের তাকলীদ বা অনুসরন জায়েয নয়। যদিও সে মাযহাব সাহাবিদের উক্তি, সহীহ হাদীস ও কুরআনের আয়াতের সহিত সাঙ্গতি পূর্ণ হয় । যে এ চার মাযহাবের কোন একটির অনুসারী নয়, সে পথভ্রষ্ট এবং পথ ভ্ৰষ্টকারী। কেননা হাদিস ও কুরআনের কেবল বাহ্যিক অর্থ গ্রহণই হলো কুফরীর মূল।” ৫০

তাই মাযহাবের প্রত্যেক ইমামকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হবে এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের আক্বিদা। আজ পর্যন্ত কোন মুজতাহিদই বলেননি যে তারা ভুল করেছেন। তবে ডা. জাকির নায়েক বলে, আমি জানি সব মানুষই ভুল করতে পারেন। ইমাম আবু হানিফা ভুল করেছেন, ইমাম শাফেয়ী (র) ভুল করেছেন, ইমাম মালেক ও ইমাম হাম্বলী (র)-ও ভুল করেছেন।” ৫১

ইমাম তাহাবী (রহঃ) {৩২১হি.} আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা বর্ণনা করেন,

وَعُلَمَاءُ السَّلَفِ مِنَ السَّابِقِينَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ مِنَ التَّابِعِينَ أَهْلِ الْخَيْرِ وَالْأَثَرِ وَأَهْلِ الْفِقْهِ وَالنَّظَرِ لَا يُذْكَرُونَ إِلَّا بِالْجَمِيلِ وَمَنْ ذَكَرَهُمْ بِسُوءٍ فهو على غير السبيل

-“পূর্ববর্তী যুগের ‘সালাফে সালিহীন' (নেককার পূর্ববর্তীগণ) ও তাঁদের অনুসারী পরবর্তী কালের কল্যাণময় আলেমগণ, মুহাদ্দিস ও হাদিস অনুসারীগণ এবং ফকীহমুজতাহিদ ও ফিকহ-অনুসারীগণ, তাদের সকলকেই যথাযোগ্য সম্মান ও প্রশংসার সাথে স্মরণ ও উল্লেখ করতে হবে । আর যে ব্যক্তি তাঁদের সম্পর্কে কটুক্তি বা বিরূপ মন্তব্য করে সে ভ্রান্ত পথের অনুসারী। তাই ডা. জাকির নায়েকও সেই ভ্রান্ত পথের অনুসারী হয়েছেন চার মাযহাবের ইমামসহ অন্যান্য বুযর্গদের সমালোচনা করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ৫২

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
৫০ ইমাম সাভী : তাফসীরে সাভী : ৪/১৫পৃ. 

৫১. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ৫/৯২পৃ. পিস পাবলিকেন্স, কম্পিউটার মার্কেট, বাংলাবাজার, ঢাকা । 

৫২ ইমাম তাহাবী, আকিদাতুত তাহাবী, (শুধু মতন), ১/৮২পৃ. ক্রমিক ৯৭
'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

Top