কিতাবঃ উচ্চস্বরে জিকির করার শরয়ী বিধান-৫
লেখকঃ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ)
অনুবাদঃ হাফেজ ইকরাম উদ্দিন
এপ্স ডেভেলপারঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজি
_______________
পর্যালোচনা
ইমাম সুয়ুতি বলেন ইতোপূর্বে আমি যে সমস্ত হাদিস পেশ করেছি আপনি যদি এগুলো সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করেন তাহলে এর সারাংশ দ্বারা ইহাই বুঝতে পারবেন যে, উচ্চস্বরে জিকির করা অবশ্যই মাকরুহ বা অপছন্দনীয় নয়। বরং এগুলোই প্রমাণ করে যে, উচ্চস্বরে জিকির করা স্পষ্ট ও অপরিহার্যভাবে মুস্তাহাব। যেমন আমরা এদিকেই ইঙ্গিত করেছি।
‘নীরবে জিকির করা উত্তম’ হাদিসখানার ব্যাখ্যা
ইমাম সুয়ুতি বলেন- অতঃপর خير الذكر الخفى ‘অর্থাৎ নীরবে জিকির করা উত্তম’ এ হাদিসটি পূর্বে উল্লেখিত হাদিসগুলির সাথে সাংঘর্ষিক মনে হয়। তবে ইহা উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত ও নিুস্বরে কুরআন তিলাওয়াতসংক্রান্ত হাদিসসমূহের মধ্যকার সংঘর্ষের মত একটি দৃষ্টান্ত।
তদ্রূপ প্রকাশ্যে দান করা ও গোপনে দান করা সংক্রান্ত হাদিসের মধ্যকার বিরোধের মত।
ইমাম নবভী রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় প্রকার হাদিসের সমন্বয় করেছেন এভাবে-
بان الاخفاء افضل حيث خاف الرياء او تأذى به مصلون او نيام والجهر افضل فى غير ذلك- لان العمل فيه اكثر-
অর্থ: যদি রিয়া বা লোক দেখানোর আশঙ্খা থাকে কিংবা নামাযি ব্যক্তির নামাযে বিঘ্ন ঘটে অথবা ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা থাকে তাহলে নীরবে জিকির করা উত্তম। অন্যথায় উচ্চস্বরে জিকির করা উত্তম। অর্থাৎ উল্লেখিত সমস্যাবলী না থাকলে উচ্চস্বরে জিকির করা উত্তম। কেননা এর উপরেই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামদের আমল।
অতঃপর ইমাম নবভী বলেন- তাছাড়া উচ্চস্বরে জিকির করার মধ্যে অনেক উপকারিতা ও রয়েছে। যেমন এতে শ্রুতাগণের নিকট আওয়াজ পৌছানো হয়, পাঠকের হৃদয় জাগ্রত হয়, ইচ্ছাশক্তি চিন্তা ফিকিরের দিকে ধাবিত হয়, শ্রবণ শক্তি আমলের দিকে মনোনিবেশ করে তন্দ্রা দূরীভুত হয় এবং আমলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
কোন কোন উলামায়ে কেরামগণ বলেন- কিছু কিছু কিরাত উচ্চস্বরে পড়া মুস্তাহাব, আবার কোন কোন কিরাত নিুস্বরে পড়া মুস্তাহাব। কেননা নিরবে পাঠকারী যখন অমনযোগী হয়ে পড়বে তখন উচ্চ স্বরের মাধ্যমে মনোনিবেশ করবে। আবার উচ্চস্বরে পাঠকারী যখন কান্ত হয়ে যাবে তখন বিশ্রামের জন্য নীরবে পাঠ করবে। (এ পর্যন্ত ইমাম নবভীর বক্তব্য শেষ)
অতঃপর ইমাম সুয়ুতি বলেন-
وكذلك نقول فى الذكر على هذا التفصيل وبه يحصل الجمع بين الاحاديث-
অর্থ: এমনিভাবে জিকিরের ক্ষেত্রেও আমরা উল্লেখিত ব্যাখ্যাটিই বর্ণনা করি। এবং এর মাধ্যমেই উভয় প্রকার হাদিসের মধ্যে সমন্বয় সাধন করি।