ইয়াযিদের হাকিকত

কৃতঃ হাফেজ মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন।



১. ইয়াযিদের জন্ম-মৃত্যু: 


❏ ইয়াযিদের জন্ম তারিখ সম্বন্ধে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত ‘তারিখুল খোলাফা’ গ্রন্থে বলেছেন- (আরবি) পৃ-১৭


অর্থ: ইয়াযিত বিন মুয়াবিয়া হিজরি ২৫ অথবা ২৬ সনে জন্মগ্রহণ করে। 


❏ আর মৃত্যু প্রসঙ্গে হাফিজ ইবনে কাছির (আরবি) পৃ-১৭ গ্রন্থে বর্ণনা করেন- (আরবি) পৃ-১৭


অর্থ: এজিদ ৬৪ হিজরি সনের ১৪ই রবিউল আউয়াল তারিখে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৫ বছর অথবা ৩৮ বছর। তার দুঃশাসন ছিল ৩ বছর ৬ মাস। তার মৃত্যুর পরেই যুদ্ধ বিগ্রহ ফিতনা-ফাসাদ অবসান ঘটে।  (বেদায়া ওয়ান নেহায়া- ৬৩৬ পৃষ্ঠা)


২. স্বভাব চরিত্র: 


আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইন্তিকালের পর ৬০ হিজরিতে সে ক্ষমতা দখল করে। অতঃপর ৬৪ হিজরিতে তার অকাল মৃত্যু হয়। তার শাসনকাল ছিল মাত্র ৩ বছর ৬ মাস। কিন্তু এ সামান্য সময়ের শাসনকাল পুরোটাই ছিল যুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অত্যাচারে ভরপুর। ক্ষমতা দখলের পূর্বেও সে ছিল একজন বদচরিত্রের অধিকারী।


১. হাফিজ ইবনে কাছির বলেন-(আরবি) পৃ-১৭

অর্থ: ক্ষমতা দখলের পূর্বেও সে খেল-তামাশা, ঠাট্টা, মশকারি ও অহেতুক কাজে লিপ্ত থাকতো। (বেদায়া- ৮/২২)


২. ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি বলেন-(আরবি) পৃ-১৮

অর্থ: ইয়াযিদ ছিল এমন ব্যক্তি যে উম্মে ওলদ তথা মাতা, কন্যা ও বোনদেরকে বিবাহ করত। সে ছিল মদ্যপায়ী এবং নামাযের ধারধারি ছিল না। (তারিখুল খোলাফঅ- ১৬৬)


৩. আররাদ্দু আলাল মুতাআসসিব কিতাবের ৬৪ পৃষ্ঠা আছে-(আরবি) পৃ-১৮

অর্থ: সে মদপান করে বাদ্যযন্ত্র বাজায়, কুকুরের সাথে খেলা করে। 


৪. আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া গ্রন্থের ৮/২১৬ পৃষ্ঠায় আছে-(আরবি) পৃ-১৮

অর্থ: আল্লাহর কসম! সে মদপান করতো এবং নেশাগ্রস্থ থাকতো, এমনিভাবে নামাযের ওয়াক্ত চলে যেত।


৩. ইয়াযিদ সম্বন্ধে নবীজির ভবিষ্যতবাণী: 


রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াবিদ সম্বন্ধে পূর্বেই ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন। তার চরিত্র, দুষ্কর্ম, এমনকী তার বংশ পরিচয় সবকিছুই নবীজি বর্ণনা করে গেছেন। ইহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইলমেগায়েব সংক্রান্ত একটি বড় মো’জেযা।


ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম এ ব্যাপারে বর্ণনা করেন-

(আরবি) পৃ-১৯  


অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- কুরাইশদের কিছু যুবকদের হাতে আমার উম্মত ধ্বসং হবে। তখন মারওয়ান বললেন- এ সমস্ত যুবকদের প্রতি আল্লাহর লা’নত। অতঃপর আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন- আমি যদি চাই তাহলে বলতে পারব তারা ওমুকের পুত্র ওমুক। (বুখারি হাদিস নং ৭০৫৮, মুসলিম হাদিস কিতাবুল ফিতান)

       

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী আলাইহির রহমত উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন-(আরবি) পৃ-২০

অর্থ: নিশ্চয়ই এজিদই হল সর্বপ্রথম যুবক শাসক। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্য ইহাই প্রমাণ করে। তিনি অন্য হাদিসে ৬০ হিজরির শুরু এবং যুবক শাসন কথা উল্লেখ করেছেন। কারণ এজিদই সর্বপ্রথম বিভিন্ন শহরের বয়স্ক শাসকদের বরখাস্ত করে তদস্থলে তার স্বগোত্রীয় যুবকদের নিযুক্ত করে। (ফাতহুল বারী ১৩/০৩)


ইয়াযিদ দুঃশাসনের সাড়ে ৩ বছর


১. ইয়াযিদের ক্ষমতা দখল ও কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা: 


যে সমস্ত কারণে উলামায়ে কেরামগণ ইয়াযিদের প্রতি লা’নত প্রদান জায়েয বলেছেন তার প্রধান কারণ হল, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহিদ করা, তার মস্তক মোবারকের সাথে বেয়াদবি, নবী পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করা ইত্যাদি। আর এ সবগুলোই হয়েছিল ইয়াযিদের সরাসরি নির্দেশ মোতাবেক।

আমিরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইন্তেকালের পর ইয়াযিদ জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে মক্কা মদিনাসহ সকল শহরে তার অনুগত লোকদেরকে গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ করে এবং তার হাতে বাইআত গ্রহণ করতে সবাইকে নির্দেশ প্রদান করে। ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এজিদের হাতে বাইআত করতে অস্বীকার করাই ছিল কারবালার ঘটনার মূল কারণ।


ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত ‘তারিখুল খোলাফা’ গ্রন্থের ১৬৫ পৃষ্ঠায় বলেছেন----(আরবি) পৃ-২৫


অর্থঃ ইরাকবাসী ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহু এর কাছে অসংখ্য দূত মারফত পত্রাদি প্রেরণ করে তাকে সেখানে আসতে আহবান করে। অতঃপর হোসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহু জিলহজ্বের ১০ তারিখ মক্কাশরীফ থেকে ইরাক পথে রওয়ানা দেন। তার সাথে ছিলেন পরিবারের কিছু পুরুষ, মহিলা ও শিশুগণ। তখন এজিদ ইরাকের গভর্ণর উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে পত্র মারফত নির্দেশ দেয় হোসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহুকে শহিদ করার জন্য।


২. শির মোবারকের সাথে ইয়াযিদের বেয়াদবি: 


আমি ইতোপূর্বে প্রমাণ করেছি যে, এজিদের নির্দেশেই কারবালার নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং এজন্য এজিদই দায়ি। এখন আমি প্রমাণ করব ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শির মোবারক দামেস্কে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং এজিদ পবিত্র মস্তক মোবারকের সাথে বেয়াদবি করেছিল।


৩. হাফিজ ইবনে কাছিরের বর্ণনা: 


আল্লামা হাফিজ ইবনে কাছির (আরবি) পৃ-২৬ গ্রন্থে ১১/৫৫৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-

অর্থ: হযরত মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু এর শির মোবারক যখন আনা হল, অতঃপর এজিদের সামনে রাখা হল তখন এজিদ নিম্নলিখিত কবিতাগুলি আবৃত্তি করতে লাগল-

   

‘হায়! আজ যদি বদরে নিহত আমার মুরুব্বিগণ এ অবস্থা দেখত তাহলে তারা খুশি হয়ে যেত।


৪. সিবতু ইবনুল জাওযীর বর্ণনা: 


আল্লামা সিবতু ইবনুল জাওযী ((আরবি) পৃ-৩০ গ্রন্থে বর্ণনা করেন-

অর্থ: এজিদের ব্যাপারে সবগুলো বর্ণনা যাচাই বাছাই করার পর প্রসিদ্ধ মত হল যে, ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু এর শির মোবারক শামে পৌছার পর যখন এজিদের সামনে রাখা হল তখন সে শাম বাসীদের একত্রিত করল। অতঃপর তার হাতে লাঠি দ্বারা শির মোবারকের উপর আঘাত করতে লাগল। এবং ইবনে যুবারীর কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল।

   

‘হায় বদরে নিহত আমার মুরুব্বিগণ যদি এ অবস্থা দেখত। খাযরাজ গোত্রের তলওয়ার গুলো আজ আক্রমণ করছে। (তাযকিরাতুল খাওয়াস ২৬১)


৫. মদিনা শরীফে সন্ত্রাস ও গণহত্যা: 


ইয়াযিদের লা’নত পাবার যোগ্য দুঃষ্কর্ম সমূহের দ্বিতীয় অধ্যায় হল মদিনা শরীফে আক্রমণ। এজিদী বাহিনী মদিনা শরীফে হামলা করে সন্ত্রাস কায়েম করে। তিন দিনের জন্য সকল লুঠতরাজ মুবাহ ঘোষণা করে। তারা অসংখ্য আনসার মুহাজিরদেরকে শহীদ করে। অসংখ্য মা বোনদেরকে ইজ্জত লুণ্ঠন করে। তিনদিন পর্যন্ত মসজিদে নববীতে আযান ইকামত বন্ধ ছিল।


মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে এজিদী বাহিনীর তাণ্ডবঃ


মদিনাবাসীর বিদ্রোহের খবর যখন এজিদের কাছে পৌছল তখন সে মুশরিক বিন উকবার নেতৃত্যে একদল সেনাবাহিনী সেখানে প্রেরণ করল।


হাফিজ ইবনে কাছিরের বর্ণনা:(আরবি) পৃ-৩৮


অর্থ: অতঃপর মুসরিফ বিন উকবাহ এজিদের নির্দেশক্রমে মদিনা শরীফকে তিন দিনের জন্য বৈধ ঘোষণা করল। এজন্য আল্লাহ তাকে ভাল প্রতিদান দিবেন না। সে অসংখ্য সম্মানিত সাহাবি হাফিজে কুরআনদেরকে শহিদ করল। তাদের মাল সম্পদ লুণ্ঠন করে নিল। অনেক মহিলাদের উপর পতিত হল। মারাত্মক ফাসাদ তৈরি করল। এ ইতিহাস অনেকেই বর্ণনা করেছেন। (বেদায়া-৬২০ পৃষ্ঠা)


৬. মদিনা শরীফে ১০ হাজার লোক হত্যা:


এজিদ বাহিন্যী সেদিন ৭ শত নেতৃস্থানীয় কুরাইশ, আনসার ও মুহাজিরদেরকে হত্যা করে। তাছাড়া মহিলা ও ছোট-ছোট বাচ্চাসহ ১০ হাজার লোককে তারা হত্যা করে। এ বর্ণনাগুলো প্রায় সবগুলো তারিখের কিতাবেই উল্লেখিত হয়েছে।

   

দেখুন হাফিজ ইবনে কাছিরের বর্ণনা-


অর্থ: মাদাইনী মদিনা শরীফের একজন শেখ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- আমি ইমাম যুহরীকে প্রশ্ন করলাম ‘হারবার যুদ্ধের’ দিন কত লোক শহিদ হয়েছিলেন? তিনি বললেন আনসার ও মুহাজিরীনদের ৭ শত নেতৃস্থানীয় লোক সে দিন শহিদ হন। তাছাড়া অপরিচিত পুরুষ, মহিলা ও দাস-দাসী ও অন্যান্য ১০ হাজার লোক শাহাদত বরণ করেন। (বেদায়া ৮/২২১ পৃষ্ঠা, আর রাদ্দু আলাল মুতাআসসিব ৬৭, কিতাবুল মিলহান ১৫১ পৃষ্ঠা)


৭. এক হাজার কুমারী নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন: 


এজিদ বাহিনীর হামলা থেকে নিরীহ মা বোন পর্যন্ত রেহাই পায় নাই। এ ইতিহাস বড় লজ্জাজনক ইতিহাস, বড় কলঙ্কজনক অধ্যায়। অথচ আজ যারা এজিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের কি লজ্জা লাগে না। দেখুন হাফিজ ইবনে কাসিরের বর্ণনা-(আরবি) পৃ-৪১


মাদাইনী থেকে বর্ণিত, তিনি আবু বকর কুররাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন হিশাম বিন হাসান বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- হাররার যুদ্ধের পর মদিনাবাসী এক হাজার মহিলা স্বামী ব্যতীত সন্তান প্রসব করেছেন। (বিদায়া ৮/২১১, আর রাদ্দু আলাল মুতাআসসিব ৬৭ পৃষ্ঠা)

   

ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবি ‘তারিখুল ইসলাম’ গ্রন্থে ২৬ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন-


অর্থ: হযরত জারির বিন আব্দুল হামিদ থেকে বর্ণিত, তিনি মুগিরা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- মুসরিফ বিন উকবাহ তিনদিন পর্যন্ত মদিনা শরীফে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছে। সেদিন এক হাজার কুমারী মহিলাদের ইজ্জত তারা লুণ্ঠন করেছে।

   

ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি বর্ণনা করেছেন-


অর্থ: হাসান মুররাহ বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন- আল্লাহর শপথ, সেদিন মনে হয় নাই যে, তাদের আক্রমণ থেকে কেউ রক্ষা পাবে। সে আক্রমণ অনেক সাহাবি সহ অসংখ্য লোক শহিদ হয়েছিলেন। মদিনা শরীফকে লুঠতরাজের জন্য বৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে এক হাজার কুমারি নারী তাদের ইজ্জত হারিয়েছিলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহ রাজিউন। (তারিখুল খোলাফা- ১৬৬ পৃষ্ঠা)


ইয়াযিদের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের বক্তব্য


১. ইবনে হাজার হায়তামী মক্কীর বক্তব্য: 


আল্লামা ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী আলাইহির রহমত (আরবি) পৃ-৬৮ গ্রন্থে ৫৯৩-৫৯৯ পৃষ্ঠায় এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যাসহ দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। সেখান থেকে নিম্নে কিছুটা আলোকপাত করা হল, 


অর্থ: জেনে রাখুন, এজিদকে কাফির বলার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উলামায়ে কেরামগণ মতানৈক্য করেছেন। সিবতু ইবনুল জাওযীসহ ইবনে জাওযীর নাতি একদল উলামায়ে কেরামদের মতে সে কাফির। কারণ হোসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহু এর শির মোবারক যখন এজিদের দরবারে আনা হয়েছিল তখন এজিদ শামবাসীদে একত্রিত করে পবিত্র মাথা মোবারকে লাঠি দ্বারা আঘাত করেছিল এবং ইবনে যুবারির কবিতা আবৃত্তি করেছিল। ‘হায়! আজ যদি বদর যুদ্ধে নিহত আমার মুরুব্বিগণ এ অবস্থা দেখত।’


২. ইমাম কুরতুবির বক্তব্য: ইমাম কুরতুবি (আরবি) পৃ-৭৩ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-


অর্থ: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস ‘কুরাইশদের কিছু যুবকদের হাতে আমার উম্মত ধ্বংস হবে।’এই হাদিস উল্লেখ করার পর ইমাম কুরতুবি বলেন- উক্ত হাদিসে ইঙ্গিত পূর্ণ ব্যক্তিগণ হলেন এজিদ ইবনে মুয়াবিয়া, উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং বনী উমাইয়ার ঐ সমস্ত যুবকগণ যারা এদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। তারা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর আহলে বাইতদেরকে হত্যা ও কয়েদি করেছিল। তাছাড়া তারা মদিনা শরীফ ও মক্কা শরীফের বুযুর্গ আনসার ও মুহাজিরদেরকে হত্যা করেছিল। (আত তাযকিরাহ- ২/৬৪৩ পৃষ্ঠা)


৩. আল্লামা ইবনুল জাওযীর বক্তব্য: 


আল্লামা জামালউদ্দিন আবুল ফারজ ইবনুল জাওযী আলাইহির রহমত এজিদের প্রতি লা’নতের বৈধতা প্রমাণ করে স্বতন্ত্র একটি কিতাব রচনা করেছেন। যার নাম হলঃ

অর্থ: বাংলা অর্থ দাঁড়ায় প্রায় এ রকম ‘এজিদকে মন্দ বলতে বাঁধা দানকারী, অন্ধভাবে স্বীয় সম্প্রদায়ের পক্ষালম্বনকারী, অন্যায় পথে বিচরণকারীর বক্তব্যের খণ্ডন।’


৪. ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতির বক্তব্য: 


নবম শতকের মুজাদ্দিদ ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত ‘তারিখুল খোলাফা’ গ্রন্থে ১৬৫ পৃষ্ঠায় বলেন-(আরবি) পৃ-৭৭

অর্থ: ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যে শহিদ করেছে তার প্রতি আল্লাহর লা’নত। সাথে সাথে ইবনে যিয়াদ ও ইয়াযিদের প্রতিও লা’নত।


৫. উমর বিন আব্দুল আযিয এর বক্তব্য: 


উমর বিন আব্দুল আযিয রাদিয়াল্লাহু আনহু কে উমরে সানী বা দ্বিতীয় উমর বলা হয়। এজিদকে আমিরুল মোমিনীন বলায় তিনি এক ব্যক্তিকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।


৬.ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি (আরবি) পৃ-৮০ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-(আরবি) পৃ-৮১


অর্থ: নওফেল বিন আবিল ফুরাত বর্ণনা করেন- একবার আমি উমর বিন আব্দুল আযিয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দরবারে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি ঘটনাক্রমে এজিদ সম্বন্ধে বলল ‘আমিরুল মোমেনীন এজিদ বিন মুয়াবিয়া’ একথা বলেছেন। তখন উমর বিন আব্দুল আযিয বললেন- তুমি তাকে আমিরুল মোমিনীন বললে? অতঃপর তিনি লোকটাকে ২০টি বেত্রাঘাত করার নির্দেশ প্রদান করলেন। (তারিখুল খোলাফা- ১৬৬, আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ, ৫৯৫ পৃষ্ঠা)


শেষকথা: পরিশেষে বলতে চাই এ দীর্ঘ আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হল যে, এজিদই ছিল কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার মূল নায়ক। তার হুকুমেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেই পবিত্র মস্তক মোবারকে লাঠি দ্বারা আঘাত করে উল্লাস করেছে। তার হুকুমেই মদিন শরীফে সন্ত্রাস হয়েছে। তার নির্দেশেই কাবা শরীফে হামলা হয়েছে। অথচ আজকে এ সমস্ত শেখেরা স্বীয় প্রেমিককে  ভাল মানুষ সাজাতে গিয়ে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। রচিত করছে জাল হাদিস। আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে এ সমস্ত এজিদ প্রেমিদের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করেন এবং আহলে বাইতের মহব্বত দ্বারা আমাদের অন্তরকে ভরপুর করেন। আমিন।



 
Top