সূরা নিছা ৪৩ নং আয়াত শরীফ নাযিল হওয়া বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন সনদে সহীহ বর্ণনা:

বিগত আলোচনা থেকে আমরা দেখেছি মদপান  করে নামায পড়ার বর্ণনা সনদ ও মতনগতভাবে পারষ্পারিক সংঘর্ষিক। আর এ ধরনেরন মুদ্বতারিব বর্ণনা দলীলযোগ্য নয়। উপরোক্ত বর্ণনা যেহেতু গ্রহনযোগ্য না তাই উক্ত ঘটনা অন্যকোন সনদে ও মতনে পাওয়া যায়কিনা সেটা দেখতে হবে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদে তেমন একটি বর্ণনা উল্লেখ করেন,
حَدَّثَنَا سُرَيْجٌ ، يَعْنِي ابْنَ النُّعْمَانِ ، حَدَّثَنَا أَبُو مَعْشَرٍ ، عَنْ أَبِي وَهْبٍ ، مَوْلَى أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : حُرِّمَتِ الْخَمْرُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ، ........... وَكَانُوا يَشْرَبُونَ الْخَمْرَ . حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمٌ مِنَ الأَيَّامِ ، صَلَّى رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ ، أَمَّ أَصْحَابَهُ فِي الْمَغْرِبِ ، خَلَطَ فِي قِرَاءَتِهِ ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ فِيهَا آيَةً أَغْلَظَ مِنْهَا : {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاَةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ}
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনবার মদ পান হারাম হয়। ............. (মদ পান নিষিদ্ধ হওয়ার ২ টি ধাপের আলোচনা)  ততক্ষন পর্যন্ত মদ পান করতো যতক্ষন একদিন মুহাজিরদের মধ্যে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মাগরিবের নামাযে কিরআত ব্যতিক্রম করে ফেললেন। তখন আল্লাহ পাক নাযিল করেন, হে ঈমানদারগন তোমরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষনা তোমরা যা বলছো তা বুঝতে না পারো। (মুসনাদে আহমদ ২/৩৫১: হাদীছ ৮৬০৫)

উপরোক্ত বর্ণনায় হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার কোন কথাই নাই বরং মদ পানেরও কথা নেই। আর এ বর্ণনা আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ভিন্ন সনদে বর্ণিত।
সূতারং প্রমাণ হলো আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম সর্ম্পকে যে অভিযোগ তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।


সর্বোপরি আলোচন্য সূরা নিছা ৪৩ নং আয়াত শরীফের শানে নুযুল উল্লেখ করতে গিয়ে ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি সনদসহ একটা দলীল নিয়ে এসেছেন,

حدثنا يونس بن حبيب، حدثنا أبو داود، حدثنا شُعْبَة، أخبرني سِمَاكُ بن حَرْبٍ قال: سمعت مُصْعَبَ بنَ سَعْدٍ يحدث عن سعد قال: نزلت في أربعُ آيات: صنع رجل من الأنصار طعاما، فدعا أناسا من المهاجرين وأناسا من الأنصار، فأكلنا وشربنا حتى سَكرْنا، ثم افتخرنا فرفع رجل لَحْي بعير فَفَزَر  بها أنف سعد، فكان سعد مَفْزور  الأنف، وذلك قبل أن تحرم الخمر، فنزلت: { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَقْرَبُوا الصَّلاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى } الآية
মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বার বরাতে একটা বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। হযরত ইউনুছ ইবনে হাবীব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত শুবা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত সিমাক ইবনে হারব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত মুসআব ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণণা করেন, আমাকে উদ্দেশ্য করে পবিত্র কুরআন শরীফে চারটি আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। একদিন একজন আনছার ছাহাবী উনার বাসায় খাবারের আয়োজন করলেন। তিনি উক্ত উক্ত খাবারের অনুষ্ঠানে মুহাজির ও আনছার ছাহাবী থেকে কিছু ছাহাবী দাওয়াত করলেন। খাবারে পর শরাব পান কররাম যতক্ষন না তন্দ্রাচ্ছন্ন হলাম। অতপর পরষ্পরের নিকট গর্বকরে বিভিন্ন উক্তি আওড়ালাম। তখন জনৈক ব্যক্তি উটের চোয়াল দিয়ে আমার নাকে আঘাত করলেন। আমার নাক যখম হয়ে গেলো। মদপান হারাম হওয়ার পূর্বে এটা ঘটেছিলো। অতপর আয়াত নাযিল হলো, হে ঈমানদারগন তোমরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না। (তাফসীরে ইবনে কাছীর  ২/৩০৯, মুসনাদে তায়লাসী ১/১৬৮: হাদীছ ২০৫)

গ্রহনযোগ্য ভিন্ন সনদে আমরা সূরা নিছার ৪৩ নং আয়াতের শানে নযূল জানতে পারলাম। যেখানে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনার কোন কথাই উল্লেখ নেই।
অথচ উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে বাতিল ফির্কারা একটা সাংঘর্ষিক বর্ণনা যা কখনোই দলীল হিসাবে উপস্থাপনযোগ্য নয় তা দিয়ে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনার  শানমান খাটো করার অপচেষ্ট  করছে। অথচ এর বিপরীতে শানে নযূলে আরো ঘটনা আছে যা বেমালুম চেপে যাচ্ছে।  সেই সাথে খারেজীদের দ্বারা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনার দিকে সমন্ধ করা একটা বর্ণনা দিয়ে দলীল দিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা কি মনে করে তাদের এসব দুই নম্বরীর জবাব দেয়ার মানুষ দুনিয়ায় নেই? (চলবে....)
 
Top