বাতিল  ফির্কার লোকেরা সূরা নিসা ৪৩ নং আয়াত শরীফখানার শানে নুযূলে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম শরাব পান করে (নাউযুবিল্লাহ) সূরা কাফিরূণ যোগ-বিয়োগ করে পড়েছিলেন বলে তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফ থেকে যে বর্ণনা উল্লেখ করে, তাতে সনদ ও মতনে ভয়াবহ পরস্পর বিরোধিতা রয়েছে। যা দলীল হিসাবে কোনভাবেই উপস্থাপনযোগ্য নয়। যা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হবে।

* মতনগতভাবে এ হাদীছ শরীফের ইখতিলাফ:
তিরমিযী শরীফের বর্ণনার ৩০২৬ নং হাদীছ শরীফে এসেছে,
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ صَنَعَ لَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ طَعَامًا فَدَعَانَا
হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনাকে দাওয়াত দেন। যেখানে উনাকে ইমামতিতে এগিয়ে দেয়া হয় এবং তিনি সূরা কাফেরূণে ব্যাতিক্রম পড়েন। নাউযুবিল্লাহ।

আবু দাঊদ শরীফে বর্ণনায় ৩৬৭১  নং হাদীছ শরীফে এসেছে যে,
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَنَّ رَجُلاً، مِنَ الأَنْصَارِ دَعَاهُ وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম ও হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জনৈক আনছার ছাহাবী দাওয়াত দেন। অতঃপর খাওয়া দাওয়ার পরে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম মাগরিবের সালাতে ইমামতি করেন ও সূরা কাফেরূণে ব্যাতিক্রম করেন (নাউযুবিল্লাহ)।


উপরোক্ত বর্ণনা ভালো করে খেয়াল করুন। এক বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি উনার ঘরে খাবারের দাওয়াত করলেন। অন্য বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি উনার ঘরে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম ও হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দাওয়াত দেন। বোঝা গেলো মতনগত ভাবে এ বর্ণনা পারষ্পারিক সাংঘর্ষিক।

এরপর আশ্চার্যজনক একটা ভুল রেওয়াতে দেখা যায়। ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি উনার সুনানের ৩৬৭১ নং হাদীছ শরীফে যে বর্ণনাটি করেছেন সেটা নিম্নে ইবারতে ভালো করে লক্ষ্য করুন।

 عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَنَّ رَجُلاً، مِنَ الأَنْصَارِ دَعَاهُ وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ فَسَقَاهُمَا قَبْلَ أَنْ تُحَرَّمَ الْخَمْرُ فَأَمَّهُمْ عَلِيٌّ فِي الْمَغْرِبِ فَقَرَأَ ‏{‏ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ‏
বর্ণনাটির মূল বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম। তিনি যদি উক্ত মাগরিব নামায পড়ান তাহলে তিনি বলবেন আমি ইমামতি করলাম বা আমাকে ইমামতি করতে বলা হলো ইত্যাদি। যেমনটা তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় উল্লেখ আছে। কারন তিনি হচ্ছেন মূল বর্ণনাকারী। অথচ আবু দাউদ শরীফের এ বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে তিনি বর্ণনা করছেন, فَأَمَّهُمْ عَلِيٌّ فِي الْمَغْرِبِ  যার অর্থ অতঃপর মাগরিবের নামাজে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম তাদের ইমামতি করলেন। যা সম্পূর্ণ বেমানান। উদাহরন স্মরূপ বলা যায়, “আব্দুর রহমান বললো, আব্দুর রহমান ভাত খেয়েছে।” বাক্যটা কি মানানসই? বাক্যটা হওয়া উচিত ছিলো আব্দুর রহমান বললো, আমি ভাত খেয়েছি’।  এ থেকে যেটা বোঝা যায় এ ঘটানা মূলত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং উনার পূর্বের যিনি রাবী বা বর্ণনাকারী তিনিই ঘটনাটি বর্ণনা করে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনার দিকে নিছবত করে দিয়েছেন। পূর্বের রাবী আবু আব্দুর রহমান সুলামী তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু  আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাত পেয়েছেন এটাও প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে আলোচনা সামনে আসছে।
প্রমাণ হলো, আবু দাউদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফের বর্ণনা পরষ্পর বিরোধি বা মুদ্বতারিব বর্ণনা। এ ধরনের বর্ণনা উছূলে হাদীছের মানদন্ডে দলীল হিসাবে আনা যায় না। (চলবে....)
 
Top