জেনাসহ নানা যৌন অপরাধের শাস্তির ইসলামী বিধান
(ব্যাখ্যা এবং প্রমাণসহ ১২ ধরণের শাস্তির বর্ণনা)
*****
ভূমিকা: আরবী জেনা زِنَى ، زِنَاء শব্দের অর্থ হলো পুরুষ-নারী উভয়ের সম্মতিতে বিধিবহির্ভূত পন্থায় যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া। তবে বৈধ সঙ্গমকে আরবীতে নিহাক نِكاح, জিমা جِماع, ওয়াতী وَطْئٌ ও মুবাশারা مُبَاشَرة বলা হয়।
জেনার দুইটি প্রতিশব্দ রয়েছে। যথাঃ ইহর/আহর عِهْرٌ ، عَهْرٌ ও দাআর دَعَرٌ ।
জেনাকারীকে বলা হয় জানী زاني, আহির عاهِر ও দায়ির دَعِر । তবে কোরআন মজীদে নারী জেনাকারীকে বাগী بَغِيٌّ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। অনরুপ হাদীছে মুমিস مُومِس শব্দটিও এসেছে নারী জেনাকারীর ক্ষেত্রে।
বেশ্যাবৃত্তিকে আরবী বলা হয় আহারা عَهارَةٌ, দিয়ারা دِعارةٌ ও দাআরা دَعَارَةٌ ইত্যাদি।
জোর করে কারো সাথে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়াকে আরবীতে ইগতিছাব اِغْتصَاب বলা হয়। পুরুষের সমকামিতাকে বলা হয় লিওয়াত ও লিওয়াতাহ لِواطُ ، لِواطَة। নারীর সমকামিতাকে বলা হয় সিহাক سِحاق। তবে পুরুষ-নারীর উভয়ে সমকামিতাকে আধুনিক আরবীতে মিসলিয়া مِثلِيَّة বলা হয়। অন্যদিকে অজাচার (মাহরিমের সাথে যৌনমিলন) বা ইনসেস্টকে বলা হয় জিনাল মাহারিম زِنا المَحارم।
অজাচার ও পশুর সাথে কৃত জেনাকে ইতয়ান إتيان, উকূ وُقُوع ও ইগতিছাব اِغْتصَاب শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা হয়।
-
বিধান: ইসলামে পুরুষের জন্য স্ত্রী ও বান্দী ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌনসঙ্গম নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজ তথা শাস্তিযোগ্য কবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত বিষয়। তাছাড়া হস্তমৈতুনও ইসলামে নিষিদ্ধ। তবে হস্তমৈতুন ছগীরা গুনাহের (ছোট পাপ) অন্তর্ভূক্ত হলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে নারীর জন্য স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌনসঙ্গমের কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। অর্থাৎ, বৈধ স্বামী নেই এমন বান্দীর সাথে তার মালিকের জন্য যৌনসঙ্গম বৈধ হলেও নারী মালিকের জন্য নিজের গোলামের সাথে যৌনসঙ্গম বৈধ নয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে গোলাম-বান্দীর প্রথা নেই। তবে তাই বলে কোনো পুরুষের জন্য তার কাজের মেয়ের সাথে বান্দীর মত যৌন আচরণ করা জায়েয হবে না।
-
দন্ডবিধি
নিজের স্বীকারোক্তি অথবা অকাট্য সাক্ষ্য দ্বারা অপরাধ প্রমাণিত হলে ইসলামে অবস্থাভেদে যৌন অপরাধের শাস্তি নিম্নরূপ:
১. জেনা: জেনাকারী পুরুষ/নারীর উভয়ে অথবা যে কোনো একজন #অবিবাহিত হলে শাস্তি হিসেবে অবিবাহি পুরুষ/নারীর প্রাপ্য হলো সহনীয় মাত্রায় একশত বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য এলাকা/দেশ ছাড়া করা কিংবা জেলে ভরে রাখা। অন্যদিকে স্ত্রী/স্বামী জীবিত থাকুক বা না থাকুক, উভয় অবস্থায় #বিবাহিত জেনাকারী পুরুষ/নারীর প্রাপ্য শাস্তি হলো পাথর ছুড়ে কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। আর অবিবাহিত জেনাকারী পুরুষ/নারীকে সে লোকের সাথে আজীবনের জন্য বিয়ের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে, যে জীবনে কোনো সময় জেনায় লিপ্ত হয়নি ।
[প্রমাণপঞ্জীঃ ১. সূরা আন-নূর, আয়াত: ১, ২। ২. ছহীহ বোখারী, হাদীস নম্বর: ৬৪৪৩, ৬৪৪৪]।
-
২. ধর্ষণ: ধর্ষক বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক এবং একজন হোক বা একাধিক হোক, উভয় অবস্থায় তার/তাদের শাস্তি পাথরছুঁড়ে কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড। এ ক্ষেত্রে ধর্ষিতার আহত/নিহত হওয়া শর্ত নয়। তবে ধর্ষিতা আহত হলে তার চিকিৎসা খরচ ধর্ষকের অভিভাবক বা ওয়ারিসদেরকেই বহন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, আমি (আবুল হুসাইন আলেগাজী) ধর্ষণের কেস সংক্রান্ত কোনো হাদীস পাইনি। সম্ভবত আগের যুগে মানব সমাজে ধর্ষণ সংস্কৃতির প্রচলন ছিল না। এখানে আমি ধর্ষণের যে শাস্তি বললাম, সেটি সূরা মায়েদার ৩৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত ফাসাদের (ছিনতাই, ডাকাতি ও জোরপূর্বক চাঁদাবাজি ইত্যাদি) বিধান থেকে নেয়া হয়েছে, যেখানে ছিনতাই-ডাকাতির জন্য শাস্তিস্বরুপ হত্যা, শূলিতে চড়িয়ে মারা, বিপরীত দিক থেকে একটি করে হাত-পা কেটে দেওয়া ও দেশান্তর করার কথা রয়েছে। কারণ, একজন মেয়ের সতীত্ব কিংবা মর্যাদার মূল্য কোনক্রমেই অর্থের চেয়ে কম নয়। তাছাড়া মানুষ ছিনতাই/ডাকাতিও করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আনন্দে থাকার জন্য।
-
৩. সমাকামিতা: পুরুষ ও নারী উভয় সমকামিতার ক্ষেত্রে শাস্তি হলো, উভয়কে উপর থেকে ফেলে কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড করা। কোরআন মজীদে বর্ণিত তথ্যমতে সমকামী লূত সম্প্রদায়কে আকাশের উপর তুলে নীচে ফেলে ও পাথরছুঁড়ে নির্মূল করা হয়েছিল। তবে এ ক্ষেত্রে কাউকে যদি জোরপূর্বক ওই কাজে বাধ্য করা হয়, তাহলে ভিকটিমের নাম-ঠিকানা গোপন রেখে শুধুমাত্র অপরাধীকেই মেরে ফেলতে হবে।
[প্রমাণপঞ্জীঃ ১. সূরা হূদ, আয়াত: ৮২। ২. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নম্বর: ৪৪৬২, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নম্বর: ১৪৫৬, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নম্বর: ২৫৬১ ও মুস্তাদরকে হাকেম, হাদীস নম্বর: ৮০৪৭]।
-
৪. অজাচার: অজাচার তথা স্থায়ী ভাবে বিয়ে হারাম এমন মাহরিমের সাথে জেনার শাস্তি হলো উভয়ের মৃত্যুদন্ড। তবে কেউ যদি নিজের মেয়ে, বোন, ভাতিজী, ভাগিনী ইত্যাদি মাহরিমকে ধর্ষণ করে, তাহলে ধর্ষিতার নাম-ঠিকানা গোপন রেখে শুধুমাত্র অপরাধীকেই মেরে ফেলতে হবে। প্রমাণঃ
عَنْ ابْنِ عَبًّاسٍ رضى الله عنه ، قَال: قَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ وَقَعَ عَلَى ذَاتِ مَحْرَمٍ فَاقْتُلُوهُ ، وَمَنْ وَقَعَ عَلَى بَهِيمَةٍ فَاقْتُلُوهُ ، وَاقْتُلُو البَهِيمَةَ». أخرجه ابن ماجه (2/856 ، رقم 2564) ، والبيهقى (8/234 ، رقم 16814) ، والحاكم (4/397 ، رقم 8054) وقال : صحيح الإسناد . وأحمد (1/300 ، رقم 2727) ، وعبد الرزاق (7/364 ، رقم 13492).
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে তার কোনো মাহরিমের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়েছে, তাকে হত্যা করো। আর যে কোনো পশুর সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়েছে, তাকেও হত্যা করো এবং পশুটিকে মেরে ফেলো।” [সুনানে ইবনে মাজা (২৫৬৪), সুনানে বাইহাকী কোবরা (১৬৮১৪), মুস্তাদরকে হাকেম (৮০৫৪), মুসনদে আহমদ (২৭২৭) ও মুছন্নফে আবদুর রজ্জাক (১৩৪৯২)]।
-
৫. পশুচার: কেউ পশুর সাথে যৌনাচারে লিপ্ত হলে তার শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড। এর সাথে ওই পশুটিকেও মেরে ফেলতে হবে, যেমনট পূর্বোক্ত হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। আর পশুটি মেরে ফেলার নির্দেশের কারণ এই হতে পারে যে, যদি পশুটিকে জীবিত রাখা হয়, তাহলে তার পেটে মানব সদৃশ বাচ্চা জন্ম নিবে এবং পশুটিকে মানুষ ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখবে।
-
৬. পতিতা ব্যবসা: কেউ যদি কোনো ভাবে পতিতাদের নিয়ে ব্যবসা করে, তাহলে তাকে বিজ্ঞ বিচারক মৃত্যুদন্ড অথবা আর্থিক/শারীরিক এক বা একাধিক শাস্তিতে দন্ডিত করতে পারবেন। এ শাস্তিও সূরা মায়েদার ৩৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত ফাসাদের (ছিনতাই, ডাকাতি ও জোরপূর্বক চাঁদাবাজি ইত্যাদি) বিধান থেকে নেয়া হয়েছে। কারণ, পতিতাবৃত্তি সমাজে ফাসাদ/বিকৃতি সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত।
-
৭. জেনার অপবাদ: কেউ যদি কোনো পুরুষ বা নারীর বিরুদ্ধে জেনা বা সমকামিতার অপবাদ ছড়ায়, তাহলে মূল হোতাসহ যে বা যারা ওই অপবাদ প্রচার করেছে, তাদের প্রত্যেককে আশিটি বেত্রাঘাত করতে হবে। এর সাথে তাকে/তাদেরকে আজীবনের জন্য যে কোনো বিষয়ে সাক্ষ্যদানের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
[প্রমাণপঞ্জীঃ সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩]।
-
৮. বান্দীর জেনা: জেনার শাস্তির ক্ষেত্রে বিবাহিত ও অবিবাহিত উভয় ধরণের বান্দীর দন্ড হলো আযাদ নারীর অর্ধেক। অর্থাৎ, পঞ্চাশ বেত। কোনো বান্দী যদি বারবার জেনা করে, তাহলে তৃতীয়বারে তাকে চুলের রশির দামে হলেও বিক্রি করে দেওয়ার আদেশ করা হয়েছে মুমিনদেরকে।
[প্রমাণপঞ্জীঃ ১. সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৫। ২. ছহীহ বোখারী, হাদীস নম্বর: ৬৪৪৮]।
-
প্রসঙ্গত, ইসলামে বান্দীর জন্য হেজাব করা ফরজ নয়। আর আগের যুগে কাফির ও মুনাফিকরা গান ও নৃত্যের কাজে ব্যবহার করতো শুধুমাত্র বান্দীদেরকে; আযাদ নারীদেরকে এসব নীচু কাজে ব্যবহার করা হতো না। কিন্তু এখন এই দুইটি কথিত শিল্প হয়ে গেছে এবং সমাজে এসব বান্দীমনা শিল্পী/মেয়েদেরকে কথিত তারকা হিসেবে দেখা হয়।

-
৯. স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম: স্ত্রীর পায়ু পথে সঙ্গম ইসলামে নিষিদ্ধ। এমনকি এতে স্ত্রীর সম্মতি থাকলেও। কোনো স্ত্রী যদি আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে পায়ুপথে সঙ্গমের অভিযোগ করে, তাহলে বিজ্ঞ বিচারক ওই স্বামীকে মৃত্যুদন্ড ছাড়া অন্য যেকোনো শাস্তি দিতে পারবেন (বেত্রাঘাত ও সশ্রম কারাদন্ডসহ অন্য যেকোনো শাস্তিও দিতে পারবেন)।
-
১০. ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম: ইসলামে ঋতুবতী তথা হায়েজ ও নেফাস চলাকালীন স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করা নিষিদ্ধ। কারণ, এতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি রয়েছে। সূরা বাকারায় হায়েজকে নারীর জন্য আযা বা কষ্টদায়ক বিষয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে কেউ যদি স্ত্রীর সাথে হায়েজ-নেফাসের সময় সঙ্গম করে, তাহলে তাকে কাফফারা স্বরূপ একটি দীনার (সোয়া চার ৪.২৫ গ্রাম সোনা) বা সেটির মূল্য সদকা/দান করতে হবে। হাদীছ শরীফে এসেছেঃ
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الَّذِي يَأْتِي امْرَأَتَهُ وَهِيَ حَائِضٌ قَالَ: «يَتَصَدَّقُ بِدِينَارٍ أَوْ بِنِصْفِ دِينَارٍ». أخرجه أبو داود (1/69 ، رقم 264) ، والترمذى (1/244 ، رقم 136) ، والنسائى (1/153 ، رقم 289) ، وابن ماجه (1/213 ، رقم 650) ، والحاكم (1/278 ، رقم 612) وقال : حديث صحيح . ووافقه الذهبى .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, হায়েয অবস্থায় যে লোক স্ত্রীসঙ্গম করে, তার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সে একটি দীনার অথবা অর্ধেক দীনার (কাফফারা স্বরূপ) দান করে দিবে।” [সুনানে আবু দাউদ (২৬৪), সুনানে তিরমিযী (১৩৬), সুনানে ইবনে মাজা (৬৫০) ও মুস্তাদরকে হাকেম (৬১২)]।
প্রসঙ্গত, হাদীসটির বর্ণনাকারী ছাহাবী আবদুল্লাহ বিন আব্বাস বলেছেন, হায়েযের প্রথমদিকে সঙ্গম করলে একটি দীনার ও শেষের দিকে করলে অর্ধেক দীনার দান করবে।
-
১১. নারীর পুরুষের বেশ ধারণ ও পুরুষের নারীর বেশ ধারণ: কোনো নারী যদি পুরুষের বেশ অথবা কোনো পুরুষ যদি নারীর বেশ ধারণ করে, তাহলে তাকে সমাজুচ্যত তথা দেশান্তর অথবা কারান্তরীণ করতে হবে। [প্রমাণপঞ্জীঃ ছহীহ বোখারী, হাদীস নম্বর: ৬৪৪৫]।
-
প্রসঙ্গত, বর্তমানে হিজড়া নামে যেসব লোককে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই স্বাভাবিক পুরুষ ও স্বাভাবিক নারী। আর কেউ হিজড়া সেজে মানুষকে ধোকা দিলে তাকে সমাজুচ্যত তথা দেশান্তর অথবা কারান্তরীণ করতে হবে। তবে যেসব মানুষ প্রকৃত হিজড়া, তাদেরকে যদি তাদের পরিবার চালাতে না পারে, তাহলে সরকার তাদেরকে ভাতা দিবে।
-
১২. যৌনগালি: কেউ যদি কাউকে বিশ্রী কোন যৌনগালি দেয়, তাহলে তার শাস্তি বিশ বেত। হাদীছ শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عِكْرِمَةَ رضى الله عنه ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : «إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِلرَّجُلِ يَا مُخَنَّثُ فَاجْلِدُوهُ عِشْرِينَ ، وَإِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِلرَّجُلِ يَا لُوطِىُّ فَاجْلِدُوهُ عِشْرِينَ». أخرجه ابن ماجه (2/857 ، رقم 2568) ، والبيهقى (8/252 ، رقم 16925) .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি কোনো পুরুষ অন্য পুরুষকে ‘হে মেয়ে!’ বলে ডাক দেয়, তাহলে তাকে বিশ বেত মারবে। অনুরুপ কানো পুরুষ যদি অন্য পুরুষকে ‘হে সমকামী!’ বলে ডাক দেয়, তাহলে তাকেও বিশ বেত মারবে।” [সুনানে ইবনে মাজা (২৫৬৮) ও সুনানে বাইহাকী কোবরা (১৬৯২৫)]।
-
প্রসঙ্গত, উক্ত শাস্তিটা কোনো নিরপরাধকে অপবাদ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে কেউ যদি সত্যি ওইরকম (সমকামী) হয়, তাহলে শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, কোনো লোক যদি নোংরা হয়, তাহলে পারলে তার নোংরামির বিরুদ্ধে যেকোনো আদালতে অভিযোগ করবে এবং তার কাছ থেকে দূরে থাকবে ও অন্যদেরকে সতর্ক করবে। কিন্তু তা না করে তার সাথে গালাগালিতে লিপ্ত হবে না।
-
১৩. অমুসলিমদের জেনার বিচার: ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিমদের জেনার বিচার করতে হয় তাদের ধর্মের বিধান দ্বারা। তবে সত্য হলো, জেনার ক্ষেত্রে তাওরাত ও কোরআনের বিচার একই। নবীজি صلى الله عليه وسلم জেনাকারী দুই বিবাহিত #ইহুদী পুরুষ-নারীর বিচার করেছিলেন তাওরাতের বিধান মতে। ওই দুইজনকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছিল। [দ্রষ্টব্যঃ ছহীহ বোখারী, হাদীছ নম্বর: ৬৪৫০]।
-
***
সাক্ষ্যের নিয়মঃ ইসলামে জেনা, ধর্ষণ ও সমকামিতা ইত্যাদিক প্রমাণিত হওয়ার জন্য যে সাক্ষ্যের নিয়ম রয়েছে, তার ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হলো:
ক. কেউ যদি সজ্ঞানে নিজ থেকে জেনার কথা স্বীকার করে, তাহলে আর কোনো কথা নেই। তবে অভিযুক্ত কেউ যদি তা স্বীকার না করে, তাহলে তার জেনা প্রমাণিত হওয়ার জন্য অন্তত চারজন বিশ্বস্ত পুরুষ/নারীকে সাক্ষ্য দিতে হবে। প্রত্যেক সাক্ষ্যদাতাকে বলতে হবে যে, তিনি নিজ চোখে তাদের উভয়কে কোনো কক্ষে ভিতর থেকে আবদ্ধ অবস্থায় দেখেছেন অথবা তাদেরকে কোনো কক্ষে প্রবেশ করে সেটি ভিতর থেকে বন্ধ করে দিতে দেখেছেন।
-
খ. পরকীয়া জেনা বা স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে অথবা স্ত্রী যদি স্বামীর বিরুদ্ধে জেনার অভিযোগ আনে এবং এ ক্ষেত্রে যদি নিজে ছাড়া অন্যকোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকে, তাহলে এ ক্ষেত্রে বিচারের নিয়ম হলো নিম্নরূপ:
স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে জেনার অভিযোগ আনে, তাহলে তাকে সেটি তিনি নিজ চোখে দেখেছেন বলে পরপর চারবার স্বীকারোক্তি দিতে হবে এবং পঞ্চমবারে বলবে, আমি যদি মিথ্যাবাদী হই, তাহলে আমার উপর আল্লাহর #লানত পড়ুক। এতে যদি অভিযুক্ত স্ত্রী জেনার কথা স্বীকার করে নেয়, তাহলে তাকে পাথরছুঁড়ে হত্যা করতে হবে।
তবে স্ত্রী যদি অস্বীকার করে, তাহলে তাকে সে জেনা করেনি মর্মে পরপর চারবার স্বীকারোক্তি দিতে হবে এবং পঞ্চমবারে বলতে হবে, ও (স্বামী) যদি সত্যবাদী হয়, তাহলে আমার উপর আল্লাহর #গজব পড়ুক।
স্ত্রী যদি জেনার অপবাদ এভাবে অস্বীকার করে, তাহলে তার উপর কোনো শাস্তি আরোপিত হবে না; খালাস পেয়ে যাবে। তবে স্ত্রী যদি সত্যি জেনাকারী হয়, তাহলে স্বামী চাইলে তাকে তালাক দিতে পারবে। ।
[প্রমাণপঞ্জীঃ সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬-৯]।
-
গ. ধর্ষক যদি ধর্ষণের কথা সজ্ঞানে স্বীকার করে, তাহলে সাক্ষ্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সে যদি ওই অভিযোগ অস্বীকার করে, তাহলে অন্তত চারজন বিশ্বস্ত পুরুষ/নারীকে এই সাক্ষ্য দিতে হবে যে, তারা নিজ চোখেই দেখেছেন ধর্ষক তাকে জোর করে কোনো নির্জন কক্ষে প্রবেশ করিয়েছেন অথবা ধর্ষিতার কক্ষে জোরপূর্বক বা মিথ্যা কথা বলে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজার বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে ধর্ষিতার পক্ষে সাক্ষ্য না থাকা অবস্থায় যদি ধর্ষণের পক্ষে অকাট্য কোনো ডাক্তারী সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, তাহলে ধর্ষককে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করতে হবে (ধর্ষিতার তাকে মাফ করার অধিকার নেই)। কিন্তু ধর্ষক যদি দাবি করে যে, সে ওই নারীর সম্মতিতেই তার সাথে যৌনমিলন করেছে এবং ওই নারীও তা স্বীকার করে নেয়, তাহলে উভয়জনকে জেনার শাস্তি দিতে হবে। তবে ওই নারী যদি তা অস্বীকার করে, তাহলে এ ক্ষেত্রে (ধর্ষকের বিচারে) পূবোল্লিখিত স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর জেনার অভিযোগ প্রমাণি করার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ, সে জেনা করেনি; বরং তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে মর্মে তাকে পরপর চারবার স্বীকারোক্তি দিতে হবে এবং পঞ্চমবারে বলতে হবে, ও (ধর্ষক) যদি সত্যবাদী হয়, তাহলে আমার উপর আল্লাহর #গজব পড়–ক। ধর্ষিতা যদি জেনার অপবাদ এভাবে অস্বীকার করে, তাহলে তার উপর কোনো শাস্তি আরোপিত হবে না; খালাস পেয়ে যাবে। তবে জেনার কথা স্বীকারকারী পুরুষকে বৈবাহিক অবস্থা অনুযায়ী জেনার শাস্তি দিতে হবে।
-
মহান আল্লাহ আমাদের হারাম যৌনতা থেকে নিরাপদ রাখুন।
-

 
Top