হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ওফাতের পর
যখন ইয়াজিদ জোরপূর্বক ইসলামী সালতানাতের খিলাফত দখল
করে,তখন সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে বায়’আত গ্রহণের প্রস্তাব দেয়। ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার বায়’আতকে প্রত্যাখ্যান করত
মক্কা মুকাররামায় চলে যান। ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর
নিকট ইয়াযিদ মুসলিম বিশ্বের খলীফা এবং ইমাম হওয়ার জন্য
সম্পূর্ণ অযোগ্য ছিল, বরং; সে ফাসিক, পাপিষ্ঠ, অত্যাচারী ও
মদ্যপায়ী ছিল । আর খলিফা হিসেবে তার নিযুক্তিও
খোলাফায়ে রাশেদা নির্বাচনে যে ইসলামী পদ্ধতি ছিল,তার
পরিপন্থী । কূফার বাসিন্দারা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর
নিকট একে একে পত্র এবং প্রতিনিধি প্রেরণ করে আরজ
করে যে, তিনি যেন কূফায় আগমন করেন। তারা এও
বলে যে, আমাদের কোন ইমাম নেই। আমরা আপনার নিকটই
বায়’আত গ্রহণ করব।
অতঃপর ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কূফায় আগমণের
সিদ্ধান্ত নিলেন। ইতোপূর্বে তিনি হযরত মুসলিম বিন
আক্বীল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’কে সেখানে প্রেরণ
করলেন। কূফাবাসী মুসলিম বিন আক্বীল রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হাতে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র নামে বায়’আতও হল। কিন্তু যখন ইবনে যিয়াদ
কূফাবাসীকে হুমকি দিল,তখন প্রায় সবাই ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র বায়’আত হতে প্রত্যাবর্তন করলো। এ খবর
তখনও ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র নিকট পৌঁছায়নি। যার
ফলে তিনি তাঁর যাত্রাকে কূফা অভিমুখে অব্যাহত রাখলেন। এর
মধ্যে ইবনে যিয়াদ হযরত মুসলিম্ বিন আক্বীল রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’কে শহীদ করলো। অতঃপর ইয়াজিদের
নির্দেশে সে কারবালা অভিমুখে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে আটক করতে সৈন্যবাহিনী পাঠালো।
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পাপীষ্ঠ ইয়াজিদের
বায়’আতকে অস্বীকার করায় ২২ হাজার সৈন্যের বিশাল ইয়াজিদ
বাহিনী সেদিন তিন দিন যাবৎ ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত হযরত ইমাম
হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর ১৮ জন আহলে বাইত ও
সঙ্গীদের মধ্য হতে ৫৪ জনকে ৬১ হিজরী মোতাবেক
১০ই মুহররম কারবালা প্রান্তরে নির্দয় ভাবে শহীদ করে।
উল্লেখ্য যে, সেদিন নবী বংশের কারোরই বিন্দু পরিমাণ
সামরিক প্রস্তুতি ছিল না।
এই তো গেল কারবালার সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। কিন্তু ইয়াজিদ
বাহিনীর উপর এর পর পরই নেমে এসেছিল আল্লাহর
মহা গযব।এই গযব ছিল ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর
শাহাদাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল
ব্যক্তির উপর। আল্লাহ
তায়ালা তাদেরকে দুনিয়াতে নির্মমভাবে শাস্তি দিয়ে ধবংস
করে দেন।নবী বংশকে কষ্ট
দেওয়া মানে নবীকে কষ্ট দেওয়া।আর নবীকে কষ্ট
দেওয়া মানে স্বয়ং খোদা তা’আলাকেই কষ্ট দেওয়া।
সুতরাং,আমরা এখন জানব কারবালা পরবর্তী অবস্থায় কিরুপ
হয়েছিল ইয়াজিদ বাহিনীর অবস্থা।এর
আগে সংক্ষেপে জেনে নিই ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র ফযিলত।এতে করে আহলে বাইতের
মর্যাদা সম্পর্কে আমরা অবগত হতে পারবো। আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে আহলে বায়তের সাথে হাশর নসীব
করুন।আমিন, বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন – অনুবাদক
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র ফযিলত
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র অগণিত ফযিলত
হাদীস সমূহের আলোকে প্রমাণিত। তন্মধ্যে কিছু
ফাযায়েল বর্ণনা করছি।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র
চাচী সাইয়্যেদা হযরত উম্মুল ফযল বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহা অর্থাৎ হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
সহধর্মিনী একদিন নবীজীর নবুয়তী দরবারে হাজির
হয়ে আরয করলেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আজ আমি একটি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি।
সাইয়্যেদুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা জিজ্ঞাসা করলেন, “কি দেখেছেন?”
তিনি বললেন,অনেক ভয়ংকর।হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা আবার বললেন, “তা কি ?” অতঃপর তিনি আরয
করলেন,
আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আপনার দেহ মুবারকের
একটি অংশ আমার কোলে রাখা হয়েছে।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করলেন,
আপনি অনেক উত্তম স্বপ্ন দেখেছেন। ইনশা’আল্লাহ
ফাতিমা (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) এর ঘরে একটি ছেলে সন্তান
হবে। এবং তাঁকে আপনার কোলে রাখা হবে।
হুজুর সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র এই
তা’বীর (স্বপ্নের বিশ্লেষণ) বাস্তবায়ন হল। সাইয়্যেদুশ
শোহাদা, শাহজাদায়ে কাওনাইন হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু ৪ঠা হিজরী মোতাবেক ৫ই শা’বান হযরত
মাওলা আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র ঘরে এবং হযরত
সাইয়্যেদা মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র পবিত্র গর্ভের
মাধ্যমে দুনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। অতঃপর
তাঁকে সাইয়্যেদা উম্মুল ফযল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা’র
কোলে দেওয়া হয়।এরই মাধ্যমে নবীজীর ভবিষ্যত
বাণী’র বাস্তবায়ন ঘটলো।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইরশাদ করেন,
হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) দেখতে রাসূলাল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র মত ছিলেন। [বুখারী শরীফ]
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একবার হুজুর করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নিকট আরয করলেন ,
ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আহলে বায়তের
মধ্যে আপনার নিকট কে সর্বাধিক প্রিয় ? হুজুর ইরশাদ করলেন,
হাসান এবং হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা)। [মিশকাত শরীফ]
অধিকাংশ সময়ই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হযরত
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে বলতেন, আমার
সন্তানদেরকে ডাকো। যখন হযরত ইমাম হাসান এবং হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হাজির হতেন, তখন তিনি উভয়ের ঘ্রাণ
নিতেন এবং তাদের গর্দান মুবারকে চুমু খেতেন।
[তিরমিযী,মিশকাত]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু
বর্ণনা করেন যে, নিঃসন্দেহে নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেছেন,
নিশ্চয় হাসান এবং হুসাইন(রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) দুনিয়াতে আমার
দু’টি ফুল। [তিরমিযী]
হযরত ইয়া’লী বিন মুররাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত
যে,
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ
করেছেন, হুসাইন আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। আল্লাহ
তাকে মুহাব্বত করবেন, যে হুসাইনকে ভালোবাসবে।
হুসাইন আমার আসবাতদের (নাতিদের) হতে অন্যতম প্রিয়
সিব্তুন (নাতি)। [তিরমিযী,মিশকাত]
[‘সিব্তুন’ ঐ গাছকে বলা হয়, যার শেকড় একটি কিন্তু শাখা-
প্রশাখা অনেক। যেমনকিনা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর
সন্তানদের আস্বাত (সিব্তুন এর বহুবচন আসবাত) বলা হয়।
এমনিভাবে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হুজুর আলাইহিস সালাতু
ওয়াস সালাম এর সিব্তুন (অর্থাৎ এ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে,
এই শাহজাদা’র মাধ্যমে আমার বংশ বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁর সন্তান
দ্বারা পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে)
সুতরাং দেখুন, আজ সা’আদাতে কিরামগণ (সৈয়্যদ বংশীয়গণ)পূর্ব
হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত আছেন। এবং এটাও পরখ
করে দেখুন যে,হাসানী সৈয়্যদ কম কিন্তু হুসাইনী সৈয়্যদ
বেশী।]
ইয়াজিদ সৈন্যদের ভয়ংকর পরিণতি
আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ভাবে হত্যাকারীদের সম্পর্কে বলেন,
ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻘْﺘُﻞْ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻣُﺘَﻌَﻤِّﺪًﺍ ﻓَﺠَﺰَﺍﺅُﻩُ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻏَﻀِﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻟَﻌَﻨَﻪُ
ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻪُ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ
অনুবাদঃ এবং যে কোন
মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলো,তার শাস্তি জাহান্নাম।
যেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। তার উপর আল্লাহর গযব
এবং অভিশম্পাত এবং আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মহা শাস্তির
ব্যবস্থা করেছেন। [সূরা নিসা,আয়াত-৯৩]
টীকাঃ কে না জানে যে, ইয়াজিদ এবং তার সৈন্যরা যত
নিরপরাধকে হত্যা করেছে,সেগুলো তো অন্যায়ভাবেই
ছিল।
ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র বদ দোয়া
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পিপাসার্ত অবস্থায়
পানি পান করার জন্য ফোরাত নদীর তীরে পৌঁছলেন।
এমতাবস্থায় অভিশপ্ত হাসীন বিন নুমাইর তাঁকে লক্ষ্য
করে তীর ছুড়লো,যা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মুখ
মুবারকে লাগলো। সে সময়ে তাঁর জবান
হতে অনিচ্ছাকৃতভাবে বদ দোয়া বের হয়ে গেল,
“ইয়া আল্লাহ তায়ালা ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর
মেয়ের সন্তানদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, আমি তার
অভিযোগ(নালিশ) আপনার কাছেই করছি। হে রাব্বুল
আলামীন ! তাদেরকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করুন,
টুকরা টুকরা করে দিন। তাদের
মধ্যে থেকে কাউকে ছেড়ে দেবেন না।”
দোয়ার প্রভাব
এমন মজলুমের দোয়া, তারপর আবার নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নাতি; তাঁর দোয়া কবুলের
মধ্যে কি সন্দেহ থাকতে পারে ! সুতরাং দোয়া কবুল হল।
এবং আখিরাতের পূর্বেই দুনিয়াতে এক এক
জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল।
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি’র শিক্ষকের বর্ণনা
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি’র শিক্ষক ইমাম
যুহরী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদতে অংশ
নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে এক জনও রক্ষা পায়নি, যাদের
কিনা আখিরাতের পূর্বে দুনিয়াতে শাস্তি হয়নি। তাদের
মধ্যে কাউকে হত্যা করা হয়েছে, কারো চেহারা কুৎসিত ও
বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশ ও সম্রাজ্য
তাদের থেকে ছিনিয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ তারা ক্ষমতায়
থাকতে পারেনি)। প্রকাশ থাকে যে, এটাই তাদের
কর্মকান্ডের আসল শাস্তি নয় বরং তার এক দৃষ্টান্ত মাত্র।
যা মানবজাতির শিক্ষার জন্য দুনিয়াতে দেখানো হয়েছিল।
ইয়াজিদের সৈন্য অন্ধ হয়ে গিয়েছিল
ইমাম জাওযীর দৌহিত্র বর্ণনা করেন যে, এক বৃদ্ধ হযরত হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের সাথে জড়িত ছিল।
সে একদিন হঠাৎ অন্ধ হয়ে গেল। লোকজন এর কারণ
জানতে চাইলে সে বলল, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে স্বপ্নে দেখলাম; তাঁর জামার আস্তিন
গুটানো অবস্থায়,হাতের মধ্যে তলোয়ার এবং তাঁর
সামনে চামড়ার একটি কার্পেট ছিল, যার উপর অপরাধীদের
মৃত্যূদন্ড কার্যকর করা হয়। এর উপর ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের মধ্য থেকে দশ জনের লাশ
যবেহকৃত অবস্থায় পড়া ছিল। তারপর হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা আমাকে ধমক দিলেন এবং ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র রক্তের ফোটা আমার
চোঁখে লাগিয়ে দিলেন।আমি সকাল
বেলা উঠে দেখি আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছি।”
যখন ইয়াজিদ জোরপূর্বক ইসলামী সালতানাতের খিলাফত দখল
করে,তখন সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে বায়’আত গ্রহণের প্রস্তাব দেয়। ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার বায়’আতকে প্রত্যাখ্যান করত
মক্কা মুকাররামায় চলে যান। ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর
নিকট ইয়াযিদ মুসলিম বিশ্বের খলীফা এবং ইমাম হওয়ার জন্য
সম্পূর্ণ অযোগ্য ছিল, বরং; সে ফাসিক, পাপিষ্ঠ, অত্যাচারী ও
মদ্যপায়ী ছিল । আর খলিফা হিসেবে তার নিযুক্তিও
খোলাফায়ে রাশেদা নির্বাচনে যে ইসলামী পদ্ধতি ছিল,তার
পরিপন্থী । কূফার বাসিন্দারা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর
নিকট একে একে পত্র এবং প্রতিনিধি প্রেরণ করে আরজ
করে যে, তিনি যেন কূফায় আগমন করেন। তারা এও
বলে যে, আমাদের কোন ইমাম নেই। আমরা আপনার নিকটই
বায়’আত গ্রহণ করব।
অতঃপর ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কূফায় আগমণের
সিদ্ধান্ত নিলেন। ইতোপূর্বে তিনি হযরত মুসলিম বিন
আক্বীল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’কে সেখানে প্রেরণ
করলেন। কূফাবাসী মুসলিম বিন আক্বীল রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হাতে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র নামে বায়’আতও হল। কিন্তু যখন ইবনে যিয়াদ
কূফাবাসীকে হুমকি দিল,তখন প্রায় সবাই ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র বায়’আত হতে প্রত্যাবর্তন করলো। এ খবর
তখনও ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র নিকট পৌঁছায়নি। যার
ফলে তিনি তাঁর যাত্রাকে কূফা অভিমুখে অব্যাহত রাখলেন। এর
মধ্যে ইবনে যিয়াদ হযরত মুসলিম্ বিন আক্বীল রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’কে শহীদ করলো। অতঃপর ইয়াজিদের
নির্দেশে সে কারবালা অভিমুখে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে আটক করতে সৈন্যবাহিনী পাঠালো।
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পাপীষ্ঠ ইয়াজিদের
বায়’আতকে অস্বীকার করায় ২২ হাজার সৈন্যের বিশাল ইয়াজিদ
বাহিনী সেদিন তিন দিন যাবৎ ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত হযরত ইমাম
হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর ১৮ জন আহলে বাইত ও
সঙ্গীদের মধ্য হতে ৫৪ জনকে ৬১ হিজরী মোতাবেক
১০ই মুহররম কারবালা প্রান্তরে নির্দয় ভাবে শহীদ করে।
উল্লেখ্য যে, সেদিন নবী বংশের কারোরই বিন্দু পরিমাণ
সামরিক প্রস্তুতি ছিল না।
এই তো গেল কারবালার সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। কিন্তু ইয়াজিদ
বাহিনীর উপর এর পর পরই নেমে এসেছিল আল্লাহর
মহা গযব।এই গযব ছিল ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর
শাহাদাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল
ব্যক্তির উপর। আল্লাহ
তায়ালা তাদেরকে দুনিয়াতে নির্মমভাবে শাস্তি দিয়ে ধবংস
করে দেন।নবী বংশকে কষ্ট
দেওয়া মানে নবীকে কষ্ট দেওয়া।আর নবীকে কষ্ট
দেওয়া মানে স্বয়ং খোদা তা’আলাকেই কষ্ট দেওয়া।
সুতরাং,আমরা এখন জানব কারবালা পরবর্তী অবস্থায় কিরুপ
হয়েছিল ইয়াজিদ বাহিনীর অবস্থা।এর
আগে সংক্ষেপে জেনে নিই ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র ফযিলত।এতে করে আহলে বাইতের
মর্যাদা সম্পর্কে আমরা অবগত হতে পারবো। আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে আহলে বায়তের সাথে হাশর নসীব
করুন।আমিন, বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন – অনুবাদক
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র ফযিলত
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র অগণিত ফযিলত
হাদীস সমূহের আলোকে প্রমাণিত। তন্মধ্যে কিছু
ফাযায়েল বর্ণনা করছি।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র
চাচী সাইয়্যেদা হযরত উম্মুল ফযল বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহা অর্থাৎ হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
সহধর্মিনী একদিন নবীজীর নবুয়তী দরবারে হাজির
হয়ে আরয করলেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আজ আমি একটি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি।
সাইয়্যেদুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা জিজ্ঞাসা করলেন, “কি দেখেছেন?”
তিনি বললেন,অনেক ভয়ংকর।হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা আবার বললেন, “তা কি ?” অতঃপর তিনি আরয
করলেন,
আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আপনার দেহ মুবারকের
একটি অংশ আমার কোলে রাখা হয়েছে।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করলেন,
আপনি অনেক উত্তম স্বপ্ন দেখেছেন। ইনশা’আল্লাহ
ফাতিমা (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) এর ঘরে একটি ছেলে সন্তান
হবে। এবং তাঁকে আপনার কোলে রাখা হবে।
হুজুর সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র এই
তা’বীর (স্বপ্নের বিশ্লেষণ) বাস্তবায়ন হল। সাইয়্যেদুশ
শোহাদা, শাহজাদায়ে কাওনাইন হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু ৪ঠা হিজরী মোতাবেক ৫ই শা’বান হযরত
মাওলা আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র ঘরে এবং হযরত
সাইয়্যেদা মা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র পবিত্র গর্ভের
মাধ্যমে দুনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। অতঃপর
তাঁকে সাইয়্যেদা উম্মুল ফযল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা’র
কোলে দেওয়া হয়।এরই মাধ্যমে নবীজীর ভবিষ্যত
বাণী’র বাস্তবায়ন ঘটলো।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইরশাদ করেন,
হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) দেখতে রাসূলাল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র মত ছিলেন। [বুখারী শরীফ]
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একবার হুজুর করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নিকট আরয করলেন ,
ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আহলে বায়তের
মধ্যে আপনার নিকট কে সর্বাধিক প্রিয় ? হুজুর ইরশাদ করলেন,
হাসান এবং হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা)। [মিশকাত শরীফ]
অধিকাংশ সময়ই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হযরত
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে বলতেন, আমার
সন্তানদেরকে ডাকো। যখন হযরত ইমাম হাসান এবং হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হাজির হতেন, তখন তিনি উভয়ের ঘ্রাণ
নিতেন এবং তাদের গর্দান মুবারকে চুমু খেতেন।
[তিরমিযী,মিশকাত]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু
বর্ণনা করেন যে, নিঃসন্দেহে নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেছেন,
নিশ্চয় হাসান এবং হুসাইন(রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) দুনিয়াতে আমার
দু’টি ফুল। [তিরমিযী]
হযরত ইয়া’লী বিন মুররাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত
যে,
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ
করেছেন, হুসাইন আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। আল্লাহ
তাকে মুহাব্বত করবেন, যে হুসাইনকে ভালোবাসবে।
হুসাইন আমার আসবাতদের (নাতিদের) হতে অন্যতম প্রিয়
সিব্তুন (নাতি)। [তিরমিযী,মিশকাত]
[‘সিব্তুন’ ঐ গাছকে বলা হয়, যার শেকড় একটি কিন্তু শাখা-
প্রশাখা অনেক। যেমনকিনা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর
সন্তানদের আস্বাত (সিব্তুন এর বহুবচন আসবাত) বলা হয়।
এমনিভাবে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হুজুর আলাইহিস সালাতু
ওয়াস সালাম এর সিব্তুন (অর্থাৎ এ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে,
এই শাহজাদা’র মাধ্যমে আমার বংশ বৃদ্ধি পাবে এবং তাঁর সন্তান
দ্বারা পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে)
সুতরাং দেখুন, আজ সা’আদাতে কিরামগণ (সৈয়্যদ বংশীয়গণ)পূর্ব
হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত আছেন। এবং এটাও পরখ
করে দেখুন যে,হাসানী সৈয়্যদ কম কিন্তু হুসাইনী সৈয়্যদ
বেশী।]
ইয়াজিদ সৈন্যদের ভয়ংকর পরিণতি
আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ভাবে হত্যাকারীদের সম্পর্কে বলেন,
ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻘْﺘُﻞْ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻣُﺘَﻌَﻤِّﺪًﺍ ﻓَﺠَﺰَﺍﺅُﻩُ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻏَﻀِﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻟَﻌَﻨَﻪُ
ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻪُ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ
অনুবাদঃ এবং যে কোন
মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলো,তার শাস্তি জাহান্নাম।
যেখানে সে চিরস্থায়ী হবে। তার উপর আল্লাহর গযব
এবং অভিশম্পাত এবং আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মহা শাস্তির
ব্যবস্থা করেছেন। [সূরা নিসা,আয়াত-৯৩]
টীকাঃ কে না জানে যে, ইয়াজিদ এবং তার সৈন্যরা যত
নিরপরাধকে হত্যা করেছে,সেগুলো তো অন্যায়ভাবেই
ছিল।
ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র বদ দোয়া
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পিপাসার্ত অবস্থায়
পানি পান করার জন্য ফোরাত নদীর তীরে পৌঁছলেন।
এমতাবস্থায় অভিশপ্ত হাসীন বিন নুমাইর তাঁকে লক্ষ্য
করে তীর ছুড়লো,যা ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মুখ
মুবারকে লাগলো। সে সময়ে তাঁর জবান
হতে অনিচ্ছাকৃতভাবে বদ দোয়া বের হয়ে গেল,
“ইয়া আল্লাহ তায়ালা ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর
মেয়ের সন্তানদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, আমি তার
অভিযোগ(নালিশ) আপনার কাছেই করছি। হে রাব্বুল
আলামীন ! তাদেরকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করুন,
টুকরা টুকরা করে দিন। তাদের
মধ্যে থেকে কাউকে ছেড়ে দেবেন না।”
দোয়ার প্রভাব
এমন মজলুমের দোয়া, তারপর আবার নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নাতি; তাঁর দোয়া কবুলের
মধ্যে কি সন্দেহ থাকতে পারে ! সুতরাং দোয়া কবুল হল।
এবং আখিরাতের পূর্বেই দুনিয়াতে এক এক
জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল।
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি’র শিক্ষকের বর্ণনা
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি’র শিক্ষক ইমাম
যুহরী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদতে অংশ
নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে এক জনও রক্ষা পায়নি, যাদের
কিনা আখিরাতের পূর্বে দুনিয়াতে শাস্তি হয়নি। তাদের
মধ্যে কাউকে হত্যা করা হয়েছে, কারো চেহারা কুৎসিত ও
বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশ ও সম্রাজ্য
তাদের থেকে ছিনিয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ তারা ক্ষমতায়
থাকতে পারেনি)। প্রকাশ থাকে যে, এটাই তাদের
কর্মকান্ডের আসল শাস্তি নয় বরং তার এক দৃষ্টান্ত মাত্র।
যা মানবজাতির শিক্ষার জন্য দুনিয়াতে দেখানো হয়েছিল।
ইয়াজিদের সৈন্য অন্ধ হয়ে গিয়েছিল
ইমাম জাওযীর দৌহিত্র বর্ণনা করেন যে, এক বৃদ্ধ হযরত হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের সাথে জড়িত ছিল।
সে একদিন হঠাৎ অন্ধ হয়ে গেল। লোকজন এর কারণ
জানতে চাইলে সে বলল, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে স্বপ্নে দেখলাম; তাঁর জামার আস্তিন
গুটানো অবস্থায়,হাতের মধ্যে তলোয়ার এবং তাঁর
সামনে চামড়ার একটি কার্পেট ছিল, যার উপর অপরাধীদের
মৃত্যূদন্ড কার্যকর করা হয়। এর উপর ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের মধ্য থেকে দশ জনের লাশ
যবেহকৃত অবস্থায় পড়া ছিল। তারপর হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা আমাকে ধমক দিলেন এবং ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র রক্তের ফোটা আমার
চোঁখে লাগিয়ে দিলেন।আমি সকাল
বেলা উঠে দেখি আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছি।”
ইয়াজিদ সৈন্যের মুখ কুৎসিত হয়ে গেলো
হযরত
আল্লামা ইবনে জাওযী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি অনুরুপ
বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র মাথা মোবারককে নিজের ঘোড়ার ঘাড়ের
সাথে লটকিয়ে ছিল; তারপর তাকে এমন অবস্থায়
দেখা গিয়েছিলো যে, তার মুখ আলকাতরার ন্যায় কুৎসিত
হয়ে গেলো। লোকজন জিজ্ঞাসা করলো, তুমি সমগ্র
আরবের মধ্যে অন্যতম সুদর্শন ব্যক্তি ছিলে তোমার এ
অবস্থা কিভাবে হল ? সে বলল, “যেদিন হতে আমি ইমাম
হুসাইনের মাথা মুবারক ঘোড়ার ঘাড়ের সাথে লটকিয়েছিলাম;
সেদিনের পর কিছুক্ষণের জন্য ঘুমালাম। তখন
(স্বপ্নে দেখলাম) দুইজন লোক আমার বাহু ধরে জ্বলন্ত
এক অগ্নি কুন্ডের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর
তাতে নিক্ষেপ করে, যা কিনা আমাকে ঝলসে দেয়। অতঃপর
কিছুদিন পর সে এই অবস্থা নিয়েই মারা যায়।
ইয়াজিদ সৈন্য ছটফট করে মারা গেলো
ঐতিহাসিকগণ লিখেন যে, যে লোক হযরত ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে তীর নিক্ষেপ করেছিল
এবং পানি পান করতে দেয় নাই। সে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহ
তা’আলা এমন পিপাসার সঞ্চার করে দিলেন যে, কোনভাবেই
তার পিপাসা নিবারণ হত না। পানি কতই না পান করুক সে, পিপাসায় ছটফট
করতে থাকতো। এমতাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত পানি পানে তার পেট
ফেটে গেল এবং সে অবশেষে মারা গেল।
ইয়াজিদ বাহিনীর নেতা ইয়াজিদের ভয়াবহ পরিণতি
সকল ইতিহাসবিদগণ ঐক্যমত যে,হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র শাহাহাদাতের পর ইয়াজিদের একটা দিনও
শান্তি মিলেনি। সমগ্র ইসলামী জাহানে তখন শহীদদের
রক্তের ডাক এবং ক্ষোভের সঞ্চার শুরু হয়ে যায়। (কারবালার
পর) তার জীবন দুই বছর আট মাস,অপর বর্ণনায় তিন বছর আট
মাস থেকে অধিক হয়নি। দুনিয়ার মধ্যেও তাকে আল্লাহ
তা’আলা অপদস্থ করেছেন এবং সেই অপদস্থতার সাথেই
সে ধবংস হয়ে গিয়েছিল। (বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমার কিতাব
“লা’নত বর্ ইয়াজিদ”)
কুফা নগরীতে মুখতার এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের
উপর আসমানী ও যমীনী বিভিন্ন বালা-মুসিবত নেমেছিল।
শাহাদাতের পাঁচ বছর পর ৬৬ হিজরীতে মুখতার
সাকাফী ইমামের হত্যাকারীদের থেকে প্রতিশোধ
(কিসাস) নেওয়ার অঙ্গীকার নিল। সাধারণ মুসলমানরাও তার
সাথী হল এবং কিছু দিনের মধ্যেই তার এমন শক্তি অর্জিত হল
যে, কুফা এবং ইরাকের উপর তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হল। অতঃপর
সে সর্বসাধারণের মাঝে ঘোষণা করল যে, “ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীরা ছাড়া সবাইকে নিরাপদ
ঘোষণা করা হল।” অতঃপর ইমাম পাকের হত্যাকারীদের
ধরপাকড় এবং তালাশের ব্যাপারে সে সর্বশক্তি ব্যয় করলো।
তারপর এক এক জনকে সে পাকড়াও করে হত্যা করল।
একদিনে দুইশো আটচল্লিশ(২৪৮) ব্যক্তিকে ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে শরীক থাকার
অপরাধে হত্যা করা হল।
আমর বিন হাজ্জাজ যুবাইদীঃ
এই ব্যক্তি গরমের মধ্যে পিপাসার্ত অবস্থায় পালিয়েছিল। পিপাসার
দরুণ সে বেহুশ হয়ে পড়ে রইলো। অতঃপর সেই
অবস্থায়ই তার শিরোচ্ছেদ করা হল।
সীমার যিল জুশান
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অভিশপ্ত এবং দূর্ভাগা ছিল।
তাকে হত্যা করে তার লাশ কুকুরের সামনে নিক্ষেপ
করা হয়েছিল।
আব্দুল্লাহ বিন উসাইদ জাহনামী,মালিক বিন বশীর বদী,হামল
বিন মালিক
এদের সবাইকে আটক করা হল। তারা ক্ষমার আবেদন
জানালো। মুখতার বলল, হে জালিমরা ! তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নাতি’র প্রতি সদয় হওনি, তোমাদের উপর
কিভাবে সদয় হওয়া যায় ? অতঃপর
একে একে সবাইকে হত্যা করা হল। এদের মধ্যে মালিক বিন
বশীর হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র টুপি মুবারক
ছিনিয়ে নিয়েছিল। তার দুই হাত-পা কর্তন
করে খোলা ময়দানে নিক্ষেপ করা হয়। সে ছটফট
করতে করতে পরে মারা যায়।
উসমান বিন খালিদ এবং বশীর বিন সমীত
সে ইমাম মুসলিম বিন আক্বীল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হত্যায়
সহযোগীতা করেছিল। এই পাপিষ্ঠকে হত্যা করে লাশ
পুড়িয়ে ফেলা হয়।
আমর বিন সা’দ
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
বিরুদ্ধে সৈন্যদেরকে কমান্ড তথা আদেশ দিত।
তাকে হত্যা করে তার মাথা মুখতারের সামনে আনা হল।
অন্যদিকে মুখতার আমরের ছেলে হাফসকে পূর্বেই নিজ
দরবারে বসিয়ে রেখেছিল।যখন এই কর্তিত মাথা মজলিশের
মধ্যে আনা হল তখন মুখতার হাফসকে বলল,
“তুমি কি জানো এই মাথা কার?” সে বলল , ‘হ্যা’ এটা দেখার পর
আমিও আমার জীবন চাই না।” অতঃপর তাকেও হত্যা করা হল।
শেষে মুখতার বলল যে, “আমর বিন সা’দ এর হত্যা তো ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র বদলায় এবং হাফস এর
হত্যা আলী আসগর বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
বদলায়।”
হাকীম বিন তুফাইল
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে লক্ষ্য
করে তীর মেরেছিল। প্রতিশোধ স্বরুপ তার
দেহকে তীর দ্বারা ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। এবং এতেই
সে ধবংস হয়।
যায়েদ বিন রিফাদঃ
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
ভাতিজা এবং মুসলিম বিন আক্বীল এর শাহজাদা(সন্তান) হযরত
আব্দুল্লাহকে তীর মেরেছিল। হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু হাত দ্বারা তাঁর কপাল রক্ষা করতে গিয়েছিলেন।
তীর হাত ভেদ করে কপালে লাগলো; এতে তাঁর হাতটিও
কপালের সাথে আহত হল। সেই রিফাদকে আটক
করে প্রথমে তাকে তীর নিক্ষেপ,পরে পাথর নিক্ষেপ
করা হল।অতঃপর জীবন্ত পুড়ে ফেলা হল।
সিনান বিন আনাস
সে হযরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
মাথা মুবারক কর্তনে অগ্রসর হয়েছিল।
কুফা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। এরপরে তার ঘর ধবংস
করে দেওয়া হয়।
ফয়সালা
হযরত
আল্লামা ইবনে জাওযী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি অনুরুপ
বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র মাথা মোবারককে নিজের ঘোড়ার ঘাড়ের
সাথে লটকিয়ে ছিল; তারপর তাকে এমন অবস্থায়
দেখা গিয়েছিলো যে, তার মুখ আলকাতরার ন্যায় কুৎসিত
হয়ে গেলো। লোকজন জিজ্ঞাসা করলো, তুমি সমগ্র
আরবের মধ্যে অন্যতম সুদর্শন ব্যক্তি ছিলে তোমার এ
অবস্থা কিভাবে হল ? সে বলল, “যেদিন হতে আমি ইমাম
হুসাইনের মাথা মুবারক ঘোড়ার ঘাড়ের সাথে লটকিয়েছিলাম;
সেদিনের পর কিছুক্ষণের জন্য ঘুমালাম। তখন
(স্বপ্নে দেখলাম) দুইজন লোক আমার বাহু ধরে জ্বলন্ত
এক অগ্নি কুন্ডের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর
তাতে নিক্ষেপ করে, যা কিনা আমাকে ঝলসে দেয়। অতঃপর
কিছুদিন পর সে এই অবস্থা নিয়েই মারা যায়।
ইয়াজিদ সৈন্য ছটফট করে মারা গেলো
ঐতিহাসিকগণ লিখেন যে, যে লোক হযরত ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে তীর নিক্ষেপ করেছিল
এবং পানি পান করতে দেয় নাই। সে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহ
তা’আলা এমন পিপাসার সঞ্চার করে দিলেন যে, কোনভাবেই
তার পিপাসা নিবারণ হত না। পানি কতই না পান করুক সে, পিপাসায় ছটফট
করতে থাকতো। এমতাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত পানি পানে তার পেট
ফেটে গেল এবং সে অবশেষে মারা গেল।
ইয়াজিদ বাহিনীর নেতা ইয়াজিদের ভয়াবহ পরিণতি
সকল ইতিহাসবিদগণ ঐক্যমত যে,হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র শাহাহাদাতের পর ইয়াজিদের একটা দিনও
শান্তি মিলেনি। সমগ্র ইসলামী জাহানে তখন শহীদদের
রক্তের ডাক এবং ক্ষোভের সঞ্চার শুরু হয়ে যায়। (কারবালার
পর) তার জীবন দুই বছর আট মাস,অপর বর্ণনায় তিন বছর আট
মাস থেকে অধিক হয়নি। দুনিয়ার মধ্যেও তাকে আল্লাহ
তা’আলা অপদস্থ করেছেন এবং সেই অপদস্থতার সাথেই
সে ধবংস হয়ে গিয়েছিল। (বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমার কিতাব
“লা’নত বর্ ইয়াজিদ”)
কুফা নগরীতে মুখতার এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের
উপর আসমানী ও যমীনী বিভিন্ন বালা-মুসিবত নেমেছিল।
শাহাদাতের পাঁচ বছর পর ৬৬ হিজরীতে মুখতার
সাকাফী ইমামের হত্যাকারীদের থেকে প্রতিশোধ
(কিসাস) নেওয়ার অঙ্গীকার নিল। সাধারণ মুসলমানরাও তার
সাথী হল এবং কিছু দিনের মধ্যেই তার এমন শক্তি অর্জিত হল
যে, কুফা এবং ইরাকের উপর তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হল। অতঃপর
সে সর্বসাধারণের মাঝে ঘোষণা করল যে, “ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীরা ছাড়া সবাইকে নিরাপদ
ঘোষণা করা হল।” অতঃপর ইমাম পাকের হত্যাকারীদের
ধরপাকড় এবং তালাশের ব্যাপারে সে সর্বশক্তি ব্যয় করলো।
তারপর এক এক জনকে সে পাকড়াও করে হত্যা করল।
একদিনে দুইশো আটচল্লিশ(২৪৮) ব্যক্তিকে ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে শরীক থাকার
অপরাধে হত্যা করা হল।
আমর বিন হাজ্জাজ যুবাইদীঃ
এই ব্যক্তি গরমের মধ্যে পিপাসার্ত অবস্থায় পালিয়েছিল। পিপাসার
দরুণ সে বেহুশ হয়ে পড়ে রইলো। অতঃপর সেই
অবস্থায়ই তার শিরোচ্ছেদ করা হল।
সীমার যিল জুশান
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অভিশপ্ত এবং দূর্ভাগা ছিল।
তাকে হত্যা করে তার লাশ কুকুরের সামনে নিক্ষেপ
করা হয়েছিল।
আব্দুল্লাহ বিন উসাইদ জাহনামী,মালিক বিন বশীর বদী,হামল
বিন মালিক
এদের সবাইকে আটক করা হল। তারা ক্ষমার আবেদন
জানালো। মুখতার বলল, হে জালিমরা ! তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নাতি’র প্রতি সদয় হওনি, তোমাদের উপর
কিভাবে সদয় হওয়া যায় ? অতঃপর
একে একে সবাইকে হত্যা করা হল। এদের মধ্যে মালিক বিন
বশীর হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র টুপি মুবারক
ছিনিয়ে নিয়েছিল। তার দুই হাত-পা কর্তন
করে খোলা ময়দানে নিক্ষেপ করা হয়। সে ছটফট
করতে করতে পরে মারা যায়।
উসমান বিন খালিদ এবং বশীর বিন সমীত
সে ইমাম মুসলিম বিন আক্বীল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হত্যায়
সহযোগীতা করেছিল। এই পাপিষ্ঠকে হত্যা করে লাশ
পুড়িয়ে ফেলা হয়।
আমর বিন সা’দ
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
বিরুদ্ধে সৈন্যদেরকে কমান্ড তথা আদেশ দিত।
তাকে হত্যা করে তার মাথা মুখতারের সামনে আনা হল।
অন্যদিকে মুখতার আমরের ছেলে হাফসকে পূর্বেই নিজ
দরবারে বসিয়ে রেখেছিল।যখন এই কর্তিত মাথা মজলিশের
মধ্যে আনা হল তখন মুখতার হাফসকে বলল,
“তুমি কি জানো এই মাথা কার?” সে বলল , ‘হ্যা’ এটা দেখার পর
আমিও আমার জীবন চাই না।” অতঃপর তাকেও হত্যা করা হল।
শেষে মুখতার বলল যে, “আমর বিন সা’দ এর হত্যা তো ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র বদলায় এবং হাফস এর
হত্যা আলী আসগর বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
বদলায়।”
হাকীম বিন তুফাইল
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে লক্ষ্য
করে তীর মেরেছিল। প্রতিশোধ স্বরুপ তার
দেহকে তীর দ্বারা ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। এবং এতেই
সে ধবংস হয়।
যায়েদ বিন রিফাদঃ
সে হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
ভাতিজা এবং মুসলিম বিন আক্বীল এর শাহজাদা(সন্তান) হযরত
আব্দুল্লাহকে তীর মেরেছিল। হযরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু হাত দ্বারা তাঁর কপাল রক্ষা করতে গিয়েছিলেন।
তীর হাত ভেদ করে কপালে লাগলো; এতে তাঁর হাতটিও
কপালের সাথে আহত হল। সেই রিফাদকে আটক
করে প্রথমে তাকে তীর নিক্ষেপ,পরে পাথর নিক্ষেপ
করা হল।অতঃপর জীবন্ত পুড়ে ফেলা হল।
সিনান বিন আনাস
সে হযরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
মাথা মুবারক কর্তনে অগ্রসর হয়েছিল।
কুফা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। এরপরে তার ঘর ধবংস
করে দেওয়া হয়।
ফয়সালা
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের
এই দৃষ্টান্তমূলক পরিণতি জানতে পেরে মনের অজান্তে এই
আয়াতে কারীমা জবানে চলে আসল,
ﻛﺬﻟﻚ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻭﻟﻌﺬﺍﺏ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﺃﻛﺒﺮ
অর্থাৎ শাস্তি এমনই হয়ে থাকে এবং আখিরাতের শাস্তি এর
চেয়েও ভয়াবহ। [সূরা ক্বলম,আয়াত-৩৩]
টীকাঃ
আখিরাতে তো সবাই এটা প্রত্যক্ষ করবে যে, এ সকল
জালিমদের হাশর কেমন হবে। কিন্তু আল্লাহ
তা’আলা দুনিয়াতেই কিছু দৃষ্টান্ত দেখিয়ে দিলেন।
ইয়াজিদ সৈন্যদের উপর দুনিয়াবী শাস্তির তালিকা
জালিমদের সৈন্যবাহিনীতে (হলুদ রঙের) যে ঘাস প্রথম
থেকে রাখা হয়েছিল, তা পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। [আগের
যুগেহলুদ রঙের ঘাস যুদ্ধাহতদের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত
হত- অনুবাদক ]
এই জালিমরা তাদের মধ্যে একটি উষ্ট্রী যবেহ
করলো,তখন তারা সেই গোশতের মধ্যে আগুনের
স্ফুলিঙ্গ বের হতে দেখলো।
যখন উষ্ট্রীর গোশত রান্না করা হল, তখন তা তিক্ত
বিষে পরিণত হয়ে গেল।
এক লোক হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
শানে বেয়াদবীপূর্ণ কথা বলেছিল। তখন খোদায়ে জাব্বার
ওয়া কাহহার তার উপর আসমানী তারকারাজির দুইটা স্ফুলিঙ্গ
ছুঁড়লেন,যার দ্বারা তার দৃষ্টিশক্তি চলে যায়।
টীকাঃ
সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু
ইয়াজিদের হীন কর্মকান্ডের কারণে যুদ্ধ
ঘোষণা করেছিলেন। নিজ, নিজের বংশধর এবং সৈনিকগণ
আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন কিন্তু
অপরদিকে ইয়াজিদের শেষ পরিণতি হল বরবাদী তথা ধবংস।
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর শাহাদাত
পরবর্তী সময়
সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
শাহাদাতের পর খবীস ইয়াজিদের জন্য আরাম আয়েশের
দরজা খুলে গেল। জিনা,হারামখোরী ও মদপান উন্মুক্ত
হয়ে গেল এবং সে নিজ নাফরমানীতে এতটাই মত্ত
হয়ে গেল যে, সে মুসলিম বিন উকবাকে বার হাজার(১২,০০০)
সংখ্যক সৈন্যসহ মদিনায়ে তৈয়্যেবা’র ধবংসের জন্য প্রেরণ
করলো। ৬৩ হিজরীর ঐ সময়ে ইয়াজিদ
বাহিনী মদীনা শরীফে এসে চরম মাত্রায় অসভ্যতা করা শুরু
করলো।
ঐ পথভ্রষ্ট সৈন্যরা সাতশো’র মত সম্মানিত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু
আনহুম’কে শহীদ করলো এবং তাঁদের সাথে আরও দশ
হাজার সাধারণ মানুষদেরকেও শহীদ করলো। অসংখ্য
মেয়ে এবং মহিলাদেরকে বন্দি করলো এবং অন্যান্য ঘরের
সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহা’র ঘরেও লুটতরাজ চালালো। মসজিদে নববী’র
খুঁটি’র সাথে ঘোড়া বেঁধে রাখলো এবং এই পবিত্র
মসজিদকে ঘোড়ার পেশাব-পায়খানা দ্বারা অপবিত্র করে দিল।
যার কারণে মুসলমানরা এই মসজিদে তিন দিন পর্যন্ত নামায আদায়
করতে পারেননি। মোদ্দাকথা হল যে, ঐ
ইয়াজিদী সৈন্যরা সেখানে এমন অবস্থা করলো, যা ভাষায়
বর্ণনা করা যাবে না।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন হানযালা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু
বর্ণনা করেন যে, “মদিনা শরীফে ইয়াজিদী সৈন্যরা তখন
এমন খারাপ এবং ক্ষমার অযোগ্য কর্মকান্ড করেছিল, যার
ফলে আমরা আশংকা করেছিলাম যে, তাদের হীন কর্মের
জন্য না আবার আকাশ হতে পাথর বর্ষণ হওয়া শুরু করে।”
অতঃপর সেই সৈন্যরা মক্কা মুকাররমার দিকে রওয়ানা হয়।
সেখানে গিয়েও ইয়াজিদীর সৈন্যরা অনেক সাহাবায়ে কিরাম
রাদিয়াল্লাহু আনহুম’কে শহীদ করে। খানায়ে কা’বার প্রতি পাথর
নিক্ষেপ করলো,যার ফলে তাওয়াফের স্থানটি পাথর
দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এতে করে মসজিদুল হারামের
কয়েকটি খুঁটিও ভেঙ্গে পড়লো। এই
জালিমরা কা’বা শরীফের গিলাফকেও তাঁর ছাদ পর্যন্ত
জ্বালিয়ে দিল। যার ফলশ্রুতিতে মক্কায়ে মুয়াজ্জামা কয়েকদিন
পর্যন্ত গিলাফহীন থাকে। ইয়াজিদ এই জুলুম এবং সীমালংঘন
করতঃ তিন বছর সাত মাস পর্যন্ত সম্রাজ্য
পরিচালনা করে এবং পরিশেষে ১৫ ই রবিউল আউয়াল ৬৪
হিজরীতে শাম দেশের এক শহর হামাসে উনচল্লিশ (৩৯)
বছর বয়সে মারা যায়। [আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র অভিশম্পাত ইয়াজিদের উপর -অনুবাদক]
ইয়াজিদের মৃত্যূর পর ইরাক, ইয়েমেন, হেযায
এবং খুরাসানবাসীরা হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র পবিত্র হাতে এবং মিশর ও শামবাসীরা মুয়াবিয়া বিন
ইয়াজিদ(অর্থাৎ ইয়াজিদের ছেলে মুয়াবিয়া) এর হাতে ঐ রবিউল
আউয়াল মাসেই বায়’আত গ্রহণ করে। ইয়াজিদের
ছেলে হযরত মুয়াবিয়া ভাল এবং সৎকর্মশীল ছিল।
এমনকি সে নিজের বাপের কর্মকান্ড ও অভ্যাসকে খারাপ
বলে মানতো। দুই-তিন মাস রাজ্য পরিচালনার পরে সেও একুশ
(২১) বছর বয়সে ইন্তিকাল করে। তখন মিশর ও শামবাসীরাও
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র পবিত্র
হাতে বায়’আত হয়ে নেন। তার কিছুদিন পর মারওয়ান বিন হাকাম
আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এবং মিশর ও শামের উপর কর্তৃত্ব
প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর ৬৫ হিজরীতে তার ইন্তিকালের পর
তার ছেলে আব্দুল মালিক সেই সাম্রাজ্যের অধিপতি হন
এবং মুখতার বিন উবাইক সাকাফীকে কুফার গভর্ণর
হিসেবে নিয়োগ দেন। মুখতার কুফার শাসনভার গ্রহণ করার
পর আমর বিন সা’আদ কে নিজ দরবারে ডেকে পাঠায়।
এতে আমর বিন সা’আদ এর ছেলে হাফ্স হাজির হলো। মুখতার
সাকাফী জিজ্ঞাসা করলো, তোমার বাবা কোথায় ? সে বলল,
নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। একথা শুনে মুখতার রাগান্বিত
হয়ে বলল যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
শাহাদাতের দিন সে কেন নিখোঁজ হয়নি। যেই সাম্রাজের
লোভে সে আওলাদে পয়গাম্বরের (নবী বংশ)
সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, এখন তোমাদের সেই
ইয়াজিদী সাম্রাজ্য কোথায় গেল ?
অতঃপর আমর বিন সা’আদকে ধরে আনার পর মুখতার
সাকাফী আমর বিন সা’আদ, তার ছেলে হাফস ও অভিশপ্ত
সীমারকে দ্রুত শিরোচ্ছেদের আদেশ দিল। এমতবস্থায়
তাদের শিরোচ্ছেদ করে ইমাম আলী মাক্বাম এর ভাই হযরত
মুহাম্মদ বিন হানফিয়্যাহ আলভী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
(যিনি হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র বৈমাত্রেয় ভাই) নিকট
মদিনা শরীফে পাঠালো। এরপর ঘোড়া অভিশপ্ত সীমার এর
লাশের উপর দৌড়িয়ে খন্ড বিখন্ড করে দিল। (উল্লেখ্য যে)
এই অভিশপ্ত সীমার ইমামে আলি মাক্বাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যাকারী এবং আমর বিন সা’আদ সেই
ইয়াজিদী সৈন্যবাহিনীর কমান্ডার ছিল।
বীরত্ব
মুখতার সাকাফী আদেশ জারী করলো যে, “যেসকল
লোক কারবালার ময়দানে জড়িত ছিল, তাদেরকে যেখানে পাও
সেখানেই হত্যা কর।” একথা শুনতেই কুফার লোকজন(অর্থাৎ
কুফায় অবস্থানরত ইমাম হুসাইনের শাহাদাতে শরীক ব্যক্তিরা)
বসরার দিকে পলায়ন শুরু করল। এ খবর পাওয়া মাত্রই মুখতারের
সৈন্যবাহিনী পিছু নিতে নিতে যাকে যেখানে পেল
সেখানেই হত্যা করলো। খাওলা বিন ইয়াজিদকে জীবিত আটক
করে মুখতার সাকাফী’র সামনে আনা হল। মুখতার আদেশ দিল
যে, তার চার হাত-পা কেটে শূলে লটকিয়ে দাও এবং তারপর তার
লাশকে আগুনে জ্বালিয়ে দাও।
এমনিভাবে আহলে বাইতের সকল হত্যাকারী যাদের সংখ্যা ছিল
প্রায় ছয় হাজার,মুখতার তাদেরকে বিভিন্ন শাস্তি দিয়ে ধবংস
করে দেয়। যখন সকল আহলে বাইতের দুশমনদের
হত্যা শেষ হল, এখন আসলো ইবনে যিয়াদের পালা।
সে কারবালার ঘটনার সময়ে কুফার গভর্ণর ছিল। সে প্রায় ত্রিশ
হাজার সংখ্যক সৈন্যসহ (আরেক শহর) মসুলের
দিকে রওয়ানা হচ্ছিল। এ সংবাদ পেয়ে মুখতার
সাকাফী ইবরাহীম বিন মালিক আশতারকে সৈন্যসহ
ইবনে যিয়াদকে প্রতিরোধের জন্য প্রেরণ করলো।
মসুল শহর হতে পনেরো(১৫) কোষ দূরে ফোরাত
নদীর তীরে দুই পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে সারাদিন যুদ্ধ
অব্যাহত থাকল।পরিশেষে সন্ধ্যার দিকে মুখতার
বাহিনী ইবনে যিয়াদের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত
করতে সমর্থ্য হল। অতঃপর ইবনে যিয়াদ যুদ্ধের ময়দান
হতে পালানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
[পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মুখতার সাকাফী প্রথম অবস্থায় মু’মিন
থাকলেও তার শেষ জীবনে মুরতাদ হয়ে যায়। এবং মুরতাদ
অবস্থায়ই সে মারা যায়।– ফয়জ আহমদ ওয়াইসি]
গণহারে হত্যা
ইবরাহীম আশতার তখন নিজের সৈন্যদেরকে আদেশ দিল
যে, যে দুশমন সামনে আসবে তার
গলা আলাদা করে ফেলবে। এমতাবস্থায় তার
সৈন্যবাহিনী ধাওয়া করতে করতে অনেক দুশমনকে মৃত্যূর
ঘাটে পৌঁছে দেয় এবং ঐ পরিস্থিতিতে ইবনে যিয়াদও ১০ মুহাররম
৬৭ হিজরীতে ফোরাতের মূল তীরে ঠিক ঐ দিন ঐ
স্থানেই মারা গেল, যেখানে কিনা এই জালিম বদকারীর
হুকুমে ইমামে আলী মাক্বাম ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’কে শহীদ করা হয়েছিল।
অজগর ও ইয়াজিদী সৈন্য
ইবনে যিয়াদ এবং তার সেনাপতিদের মাথা মুখতার সাকাফীর
সামনে এনে যখন রাখা হল, তখন হঠাৎ এক বিশাল অজগর
দেখা গেল। এমতাবস্থায় অজগরটি সব
মাথা ছেড়ে ইবনে যিয়াদের মাথায় তার নাকের ছিদ্র
দিয়ে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পরই অজগরটি মুখ
দিয়ে বাহিরে এল। অতঃপর আবার নাক দিয়ে ঢুকলো,আবার মুখ
দিয়ে বের হল।অর্থাৎ এমন করে তিন বার ভিতর ঢুকল আর
বাহিরে আসল।এক পর্যায়ে অজগরটি অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঐতিহাসিক লিখেন যে, মুখতার সাকাফীর সাথে যুদ্ধে সত্তর
হাজার(৭০,০০০) শামবাসী মারা যায়(যারা সবাই ইমাম পাকের
শাহাদাতের সাথে জড়িত ছিল)। আর এমনিভাবে হাদীস
শরীফে বর্ণিত আল্লাহ তা’আলার ওয়াদাও পূর্ণ হল যে,হযরত
ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র রক্তের বদলায় সত্তর
হাজার পাপীষ্ঠ মারা যাবে।
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সর্বশক্তিমান।
টীকা
জান্নাতের সর্দার,সাইয়্যেদুশ শোহাদা হযরত ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাত এমন এক চরম হৃদয় বিদারক
ঘটনা যে, আজ পর্যন্ত কারবালার যমীনে প্রবাহিত
হওয়া তাঁদের এক এক ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে পৃথিবী অশ্রু
সাগরে পরিণত হয়েছে। সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে,
পৃথিবীর কোন মর্মান্তিক ঘটনার বেলায় এতটুকু অশ্রু
ঝরেনি যতটুকু কিনা কারবালার ব্যাপারে ঝরেছে।
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যেহেতু এই ফিত্নার
বিষয়ে অবগত হয়েছিলেন।এজন্যই তিনি শেষ বয়সে এই
দু’আ করতেন,
“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, ষাটতম
হিজরী এবং নবীনদের নেতৃত্ব থেকে”
ষাট হিজরীতেই ইয়াজিদের মত কনিষ্ঠ ব্যক্তি খিলাফতের
দায়িত্ব নেয় এবং এই ফিত্নারও সূত্রপাত হয়।
টীকা
সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা বাতিলের
শক্তিকে নিশ্চিহ্ন এবং হক্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই ছিল।
কিন্তু পাপীষ্ঠ খারেজী সম্প্রদায়রা বলে যে, (নাউযু বিল্লাহ)
ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইয়াজিদের
বিপক্ষে অন্যায়ভাবে দাঁড়িয়েছে,এ জন্যই
সে নির্মমভাবে মারা গিয়েছে। (আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের
অভিশম্পাত ইমাম হুসাইনের এই দুশমনদের উপর -অনুবাদক)
সুতরাং খারেজীদের সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করব।
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন অন্ধ হয়ে গেলো
মুহাম্মদ বিন ছলাত আব্দী এবং র’বী বিন মুনযির
তোরী যারা তাদের পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, এক
ব্যক্তি এসে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের
সুসংবাদ দেয়(অর্থাৎ সে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতে খুশি ছিল-
অনুবাদক) এবং সে তখনই অন্ধ হয়ে যায়। যাকে পরে অন্য এক
লোক এসে ধরে নিয়ে যায়।
পৃথিবীতে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমনের
শাস্তি
ইবনে আইনিয়্যাহ বর্ণনা করেন যে, আমাকে আমার
দাদী বলছেন, জুফাইন গোত্রের দু’ব্যক্তি হযরত ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে শরীক ছিল, যাদের
মধ্যে থেকে একজনের লজ্জাস্থান এতটাই দীর্ঘ
হয়ে গিয়েছিল যে, সে বাধ্য হয়েই সেটাকে ভাঁজ
করে চলাফেরা করতো। এবং অপরজনের এত চরম
পিপাসা সৃষ্টি হয়ে গেল যে, সে পানি ভর্তি মশক’কে(বড়
পাত্র)মুখের সাথে লাগাতো এবং পাত্রের শেষ
বিন্দুটা পর্যন্ত চুষে খেতো।
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন জ্বলন্ত
আগুনে পুরে মারা গেলো
সুদ্দী এক ঘটনার বর্ণনা করেন যে, আমি এক জায়গায় মেহমান
হিসেবে গেলাম যেখানে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের আলোচনা চলছিল। আমি বললাম,
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে যারা জড়িত ছিল
তারা ন্যাক্কারজনকভাবে মারা গিয়েছে। একথা শুনে এক
ব্যক্তি বলল, হে ইরাকিরা ! তোমরা কতইনা মিথ্যাবাদী।
দেখো ! আমি হুসাইনের হত্যায় জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখনও
পর্যন্ত আমি এহেন মৃত্যূ থেকে নিরাপদ আছি। এ
কথা শেষে সে তখন জ্বলন্ত একটি চেরাগে তেল
ভরে বাতিকে নিজের আঙ্গুল দ্বারা কিছুটা বাড়িয়ে দিতেই
পুরো বাতিতে আগুন লেগে যায়, ঐ আগুন সে তার থু থু
দ্বারা নিভাতে ছিল, ঠিক তখনই তার দাঁড়িতে আগুন ধরে যায়।
সে সেখান থেকে দৌঁড়িয়ে পানিতে ঝাপ দেয় যাতে আগুন
নিভে যায়। কিন্তু পরিশেষে যখন তাকে দেখা গেল,
ততক্ষনে সে জ্বলে কয়ালায় পরিণত হয়ে গিয়েছে।অতঃপর
আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতেই দেখিয়ে দিলেন যে, “তোর
দুস্কৃতির এটাই পরিণতি।”
ইবনে যিয়াদের উপর অজগরের আক্রমন
আম্মার বিন উমায়ের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন
যে, যখন উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং তার সাথীদের
মাথা নিয়ে মসজিদের বরাবর বাহিরে রাখা হয়েছিল, তখন আমি ঐ
লোকদের নিকট পৌঁছলাম যখন কিনা তারা বলছিল, “ঐ এসেছে-ঐ
এসেছে”। এমনই মুহুর্তে একটি সাপ এসে ঐসকল মাথার
মধ্যে ঢুকতে শুরু করলো। অতঃপর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এর
নাকের ছিদ্রে ঢুকলো ও তাতে কিছুক্ষন থাকার পর
বাহিরে চলো এলো। সাপটি কোথায়
থেকে আসলো আবার কোথায় চলে গেল। এই
ঘটনাটিকে ইমাম তিরিমিযী বর্ণনা করেন এবং তার
সনদকে সহীহ হাসান বলেছেন।
আগুলের স্ফুলিঙ্গ লাগাতে অন্ধ হয়ে গেলোঃ
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’কে ফাসিক ইবনে ফাসিক
(ফাসিকের ছেলে ফাসিক) বলে গালি দেয়। আল্লাহ
তা’আলা তখনই তার উপর দুইটি ছোট তারকার স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ
করে তাকে অন্ধ করে দেন।
[সাওয়াইকে মুহাররিকাহ,পৃষ্ঠা ১৯৪]
ইয়াজিদের চেলা মুসলিম বিন উকবার পরিণতি
মুসলিম বিন
উকবা মদীনা শরীফে গিয়ে লোকদেরকে ইয়াজিদের
বায়’আত হওয়ার আহবান জানাতেই কিছু লোক জান মালের
ভয়ে ইয়াজিদের বায়’আত হলো। তাদের মধ্যে কুরাইশ
গোত্রের একজন ব্যক্তিও ছিল। বায়’আতের সময় সে বলল
যে, আমি বায়’আত হলাম ইয়াজিদের আনুগত্যের উপর,তার
গুনাহের (সাথে একাত্মতার) উপর নয়। একথা শোনা মাত্রই
মুসলিম বিন উকবা তাকে হত্যা করলো। এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির
মা ছেলে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নিয়ে বলল যে,
যদি মুসলিম বিন উকবা মরেও যায় তাহলেও আমি কবর খনন
করে তার লাশ জ্বালিয়ে দেব। মুসলিম বিন উকবা যখন মারা গেল
তখন ঐ মা তার দাসকে বলে তার কবর খনন করলো। খননের
এক পর্যায়ে যখন লাশের নিকট পৌঁছলো তখন
দেখলো যে তার ঘাড়ে অজগর সাপ
পেঁচিয়ে আছে এবং তার নাক দিয়ে ঢুকে তাকে দংশন করছে।
[ইবনে আসাকির,তইয়ুল ফারাসিখ]
হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দুশমন
আবু নঈম এবং ইবনে আসাকির আ’মাশ হতে বর্ণনা করেন যে,
এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার
শরীফে পায়খানা করে দিল (নাউজুবিল্লাহ)।
সে সঙ্গে সঙ্গে পাগল হয়ে গেল এবং কুকুরের ন্যায়
ঘেউ ঘেউ শব্দ করতে লাগলো। যখন সে মারা গেল তখন
তার কবর হতেও কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ
আসতে লাগলো। [তাবাক্বাতে মানাদী আজ
জামালে আউলিয়া,পৃষ্ঠা-৩৪]
টীকা
প্রকৃতার্থে আহলে বাইত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম’দের
দুশমন কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট। অর্থাৎ পৃথিবীর কুকুর
তো তার জীবনে ঘেউ ঘেউ করেই; আর
আহলে বাইতের দুশমন মানুষ হয়ে জন্ম নিলেও কুকুর
হয়ে মরে এবং মরার পরও ঘেউ ঘেউ করে। বুঝা গেল
যে,আল্লাহ ওয়ালাদের ব্যক্তিত্বই সম্মানের পাত্র।
এভাবে তাঁদের মাজার শরীফও সম্মানের স্থান।
এবং খুরাসানবাসীরা হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র পবিত্র হাতে এবং মিশর ও শামবাসীরা মুয়াবিয়া বিন
ইয়াজিদ(অর্থাৎ ইয়াজিদের ছেলে মুয়াবিয়া) এর হাতে ঐ রবিউল
আউয়াল মাসেই বায়’আত গ্রহণ করে। ইয়াজিদের
ছেলে হযরত মুয়াবিয়া ভাল এবং সৎকর্মশীল ছিল।
এমনকি সে নিজের বাপের কর্মকান্ড ও অভ্যাসকে খারাপ
বলে মানতো। দুই-তিন মাস রাজ্য পরিচালনার পরে সেও একুশ
(২১) বছর বয়সে ইন্তিকাল করে। তখন মিশর ও শামবাসীরাও
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র পবিত্র
হাতে বায়’আত হয়ে নেন। তার কিছুদিন পর মারওয়ান বিন হাকাম
আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এবং মিশর ও শামের উপর কর্তৃত্ব
প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর ৬৫ হিজরীতে তার ইন্তিকালের পর
তার ছেলে আব্দুল মালিক সেই সাম্রাজ্যের অধিপতি হন
এবং মুখতার বিন উবাইক সাকাফীকে কুফার গভর্ণর
হিসেবে নিয়োগ দেন। মুখতার কুফার শাসনভার গ্রহণ করার
পর আমর বিন সা’আদ কে নিজ দরবারে ডেকে পাঠায়।
এতে আমর বিন সা’আদ এর ছেলে হাফ্স হাজির হলো। মুখতার
সাকাফী জিজ্ঞাসা করলো, তোমার বাবা কোথায় ? সে বলল,
নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। একথা শুনে মুখতার রাগান্বিত
হয়ে বলল যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
শাহাদাতের দিন সে কেন নিখোঁজ হয়নি। যেই সাম্রাজের
লোভে সে আওলাদে পয়গাম্বরের (নবী বংশ)
সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, এখন তোমাদের সেই
ইয়াজিদী সাম্রাজ্য কোথায় গেল ?
অতঃপর আমর বিন সা’আদকে ধরে আনার পর মুখতার
সাকাফী আমর বিন সা’আদ, তার ছেলে হাফস ও অভিশপ্ত
সীমারকে দ্রুত শিরোচ্ছেদের আদেশ দিল। এমতবস্থায়
তাদের শিরোচ্ছেদ করে ইমাম আলী মাক্বাম এর ভাই হযরত
মুহাম্মদ বিন হানফিয়্যাহ আলভী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
(যিনি হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র বৈমাত্রেয় ভাই) নিকট
মদিনা শরীফে পাঠালো। এরপর ঘোড়া অভিশপ্ত সীমার এর
লাশের উপর দৌড়িয়ে খন্ড বিখন্ড করে দিল। (উল্লেখ্য যে)
এই অভিশপ্ত সীমার ইমামে আলি মাক্বাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যাকারী এবং আমর বিন সা’আদ সেই
ইয়াজিদী সৈন্যবাহিনীর কমান্ডার ছিল।
বীরত্ব
মুখতার সাকাফী আদেশ জারী করলো যে, “যেসকল
লোক কারবালার ময়দানে জড়িত ছিল, তাদেরকে যেখানে পাও
সেখানেই হত্যা কর।” একথা শুনতেই কুফার লোকজন(অর্থাৎ
কুফায় অবস্থানরত ইমাম হুসাইনের শাহাদাতে শরীক ব্যক্তিরা)
বসরার দিকে পলায়ন শুরু করল। এ খবর পাওয়া মাত্রই মুখতারের
সৈন্যবাহিনী পিছু নিতে নিতে যাকে যেখানে পেল
সেখানেই হত্যা করলো। খাওলা বিন ইয়াজিদকে জীবিত আটক
করে মুখতার সাকাফী’র সামনে আনা হল। মুখতার আদেশ দিল
যে, তার চার হাত-পা কেটে শূলে লটকিয়ে দাও এবং তারপর তার
লাশকে আগুনে জ্বালিয়ে দাও।
এমনিভাবে আহলে বাইতের সকল হত্যাকারী যাদের সংখ্যা ছিল
প্রায় ছয় হাজার,মুখতার তাদেরকে বিভিন্ন শাস্তি দিয়ে ধবংস
করে দেয়। যখন সকল আহলে বাইতের দুশমনদের
হত্যা শেষ হল, এখন আসলো ইবনে যিয়াদের পালা।
সে কারবালার ঘটনার সময়ে কুফার গভর্ণর ছিল। সে প্রায় ত্রিশ
হাজার সংখ্যক সৈন্যসহ (আরেক শহর) মসুলের
দিকে রওয়ানা হচ্ছিল। এ সংবাদ পেয়ে মুখতার
সাকাফী ইবরাহীম বিন মালিক আশতারকে সৈন্যসহ
ইবনে যিয়াদকে প্রতিরোধের জন্য প্রেরণ করলো।
মসুল শহর হতে পনেরো(১৫) কোষ দূরে ফোরাত
নদীর তীরে দুই পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে সারাদিন যুদ্ধ
অব্যাহত থাকল।পরিশেষে সন্ধ্যার দিকে মুখতার
বাহিনী ইবনে যিয়াদের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত
করতে সমর্থ্য হল। অতঃপর ইবনে যিয়াদ যুদ্ধের ময়দান
হতে পালানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
[পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মুখতার সাকাফী প্রথম অবস্থায় মু’মিন
থাকলেও তার শেষ জীবনে মুরতাদ হয়ে যায়। এবং মুরতাদ
অবস্থায়ই সে মারা যায়।– ফয়জ আহমদ ওয়াইসি]
গণহারে হত্যা
ইবরাহীম আশতার তখন নিজের সৈন্যদেরকে আদেশ দিল
যে, যে দুশমন সামনে আসবে তার
গলা আলাদা করে ফেলবে। এমতাবস্থায় তার
সৈন্যবাহিনী ধাওয়া করতে করতে অনেক দুশমনকে মৃত্যূর
ঘাটে পৌঁছে দেয় এবং ঐ পরিস্থিতিতে ইবনে যিয়াদও ১০ মুহাররম
৬৭ হিজরীতে ফোরাতের মূল তীরে ঠিক ঐ দিন ঐ
স্থানেই মারা গেল, যেখানে কিনা এই জালিম বদকারীর
হুকুমে ইমামে আলী মাক্বাম ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’কে শহীদ করা হয়েছিল।
অজগর ও ইয়াজিদী সৈন্য
ইবনে যিয়াদ এবং তার সেনাপতিদের মাথা মুখতার সাকাফীর
সামনে এনে যখন রাখা হল, তখন হঠাৎ এক বিশাল অজগর
দেখা গেল। এমতাবস্থায় অজগরটি সব
মাথা ছেড়ে ইবনে যিয়াদের মাথায় তার নাকের ছিদ্র
দিয়ে প্রবেশ করলো। কিছুক্ষণ পরই অজগরটি মুখ
দিয়ে বাহিরে এল। অতঃপর আবার নাক দিয়ে ঢুকলো,আবার মুখ
দিয়ে বের হল।অর্থাৎ এমন করে তিন বার ভিতর ঢুকল আর
বাহিরে আসল।এক পর্যায়ে অজগরটি অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঐতিহাসিক লিখেন যে, মুখতার সাকাফীর সাথে যুদ্ধে সত্তর
হাজার(৭০,০০০) শামবাসী মারা যায়(যারা সবাই ইমাম পাকের
শাহাদাতের সাথে জড়িত ছিল)। আর এমনিভাবে হাদীস
শরীফে বর্ণিত আল্লাহ তা’আলার ওয়াদাও পূর্ণ হল যে,হযরত
ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র রক্তের বদলায় সত্তর
হাজার পাপীষ্ঠ মারা যাবে।
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰٰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সর্বশক্তিমান।
টীকা
জান্নাতের সর্দার,সাইয়্যেদুশ শোহাদা হযরত ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাত এমন এক চরম হৃদয় বিদারক
ঘটনা যে, আজ পর্যন্ত কারবালার যমীনে প্রবাহিত
হওয়া তাঁদের এক এক ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে পৃথিবী অশ্রু
সাগরে পরিণত হয়েছে। সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে,
পৃথিবীর কোন মর্মান্তিক ঘটনার বেলায় এতটুকু অশ্রু
ঝরেনি যতটুকু কিনা কারবালার ব্যাপারে ঝরেছে।
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যেহেতু এই ফিত্নার
বিষয়ে অবগত হয়েছিলেন।এজন্যই তিনি শেষ বয়সে এই
দু’আ করতেন,
“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, ষাটতম
হিজরী এবং নবীনদের নেতৃত্ব থেকে”
ষাট হিজরীতেই ইয়াজিদের মত কনিষ্ঠ ব্যক্তি খিলাফতের
দায়িত্ব নেয় এবং এই ফিত্নারও সূত্রপাত হয়।
টীকা
সাইয়্যেদুনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা বাতিলের
শক্তিকে নিশ্চিহ্ন এবং হক্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই ছিল।
কিন্তু পাপীষ্ঠ খারেজী সম্প্রদায়রা বলে যে, (নাউযু বিল্লাহ)
ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইয়াজিদের
বিপক্ষে অন্যায়ভাবে দাঁড়িয়েছে,এ জন্যই
সে নির্মমভাবে মারা গিয়েছে। (আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের
অভিশম্পাত ইমাম হুসাইনের এই দুশমনদের উপর -অনুবাদক)
সুতরাং খারেজীদের সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করব।
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন অন্ধ হয়ে গেলো
মুহাম্মদ বিন ছলাত আব্দী এবং র’বী বিন মুনযির
তোরী যারা তাদের পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, এক
ব্যক্তি এসে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের
সুসংবাদ দেয়(অর্থাৎ সে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতে খুশি ছিল-
অনুবাদক) এবং সে তখনই অন্ধ হয়ে যায়। যাকে পরে অন্য এক
লোক এসে ধরে নিয়ে যায়।
পৃথিবীতে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমনের
শাস্তি
ইবনে আইনিয়্যাহ বর্ণনা করেন যে, আমাকে আমার
দাদী বলছেন, জুফাইন গোত্রের দু’ব্যক্তি হযরত ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে শরীক ছিল, যাদের
মধ্যে থেকে একজনের লজ্জাস্থান এতটাই দীর্ঘ
হয়ে গিয়েছিল যে, সে বাধ্য হয়েই সেটাকে ভাঁজ
করে চলাফেরা করতো। এবং অপরজনের এত চরম
পিপাসা সৃষ্টি হয়ে গেল যে, সে পানি ভর্তি মশক’কে(বড়
পাত্র)মুখের সাথে লাগাতো এবং পাত্রের শেষ
বিন্দুটা পর্যন্ত চুষে খেতো।
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র দুশমন জ্বলন্ত
আগুনে পুরে মারা গেলো
সুদ্দী এক ঘটনার বর্ণনা করেন যে, আমি এক জায়গায় মেহমান
হিসেবে গেলাম যেখানে ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের আলোচনা চলছিল। আমি বললাম,
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতে যারা জড়িত ছিল
তারা ন্যাক্কারজনকভাবে মারা গিয়েছে। একথা শুনে এক
ব্যক্তি বলল, হে ইরাকিরা ! তোমরা কতইনা মিথ্যাবাদী।
দেখো ! আমি হুসাইনের হত্যায় জড়িত ছিলাম, কিন্তু এখনও
পর্যন্ত আমি এহেন মৃত্যূ থেকে নিরাপদ আছি। এ
কথা শেষে সে তখন জ্বলন্ত একটি চেরাগে তেল
ভরে বাতিকে নিজের আঙ্গুল দ্বারা কিছুটা বাড়িয়ে দিতেই
পুরো বাতিতে আগুন লেগে যায়, ঐ আগুন সে তার থু থু
দ্বারা নিভাতে ছিল, ঠিক তখনই তার দাঁড়িতে আগুন ধরে যায়।
সে সেখান থেকে দৌঁড়িয়ে পানিতে ঝাপ দেয় যাতে আগুন
নিভে যায়। কিন্তু পরিশেষে যখন তাকে দেখা গেল,
ততক্ষনে সে জ্বলে কয়ালায় পরিণত হয়ে গিয়েছে।অতঃপর
আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতেই দেখিয়ে দিলেন যে, “তোর
দুস্কৃতির এটাই পরিণতি।”
ইবনে যিয়াদের উপর অজগরের আক্রমন
আম্মার বিন উমায়ের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন
যে, যখন উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এবং তার সাথীদের
মাথা নিয়ে মসজিদের বরাবর বাহিরে রাখা হয়েছিল, তখন আমি ঐ
লোকদের নিকট পৌঁছলাম যখন কিনা তারা বলছিল, “ঐ এসেছে-ঐ
এসেছে”। এমনই মুহুর্তে একটি সাপ এসে ঐসকল মাথার
মধ্যে ঢুকতে শুরু করলো। অতঃপর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ এর
নাকের ছিদ্রে ঢুকলো ও তাতে কিছুক্ষন থাকার পর
বাহিরে চলো এলো। সাপটি কোথায়
থেকে আসলো আবার কোথায় চলে গেল। এই
ঘটনাটিকে ইমাম তিরিমিযী বর্ণনা করেন এবং তার
সনদকে সহীহ হাসান বলেছেন।
আগুলের স্ফুলিঙ্গ লাগাতে অন্ধ হয়ে গেলোঃ
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল
রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইমাম
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’কে ফাসিক ইবনে ফাসিক
(ফাসিকের ছেলে ফাসিক) বলে গালি দেয়। আল্লাহ
তা’আলা তখনই তার উপর দুইটি ছোট তারকার স্ফুলিঙ্গ বর্ষণ
করে তাকে অন্ধ করে দেন।
[সাওয়াইকে মুহাররিকাহ,পৃষ্ঠা ১৯৪]
ইয়াজিদের চেলা মুসলিম বিন উকবার পরিণতি
মুসলিম বিন
উকবা মদীনা শরীফে গিয়ে লোকদেরকে ইয়াজিদের
বায়’আত হওয়ার আহবান জানাতেই কিছু লোক জান মালের
ভয়ে ইয়াজিদের বায়’আত হলো। তাদের মধ্যে কুরাইশ
গোত্রের একজন ব্যক্তিও ছিল। বায়’আতের সময় সে বলল
যে, আমি বায়’আত হলাম ইয়াজিদের আনুগত্যের উপর,তার
গুনাহের (সাথে একাত্মতার) উপর নয়। একথা শোনা মাত্রই
মুসলিম বিন উকবা তাকে হত্যা করলো। এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির
মা ছেলে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নিয়ে বলল যে,
যদি মুসলিম বিন উকবা মরেও যায় তাহলেও আমি কবর খনন
করে তার লাশ জ্বালিয়ে দেব। মুসলিম বিন উকবা যখন মারা গেল
তখন ঐ মা তার দাসকে বলে তার কবর খনন করলো। খননের
এক পর্যায়ে যখন লাশের নিকট পৌঁছলো তখন
দেখলো যে তার ঘাড়ে অজগর সাপ
পেঁচিয়ে আছে এবং তার নাক দিয়ে ঢুকে তাকে দংশন করছে।
[ইবনে আসাকির,তইয়ুল ফারাসিখ]
হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দুশমন
আবু নঈম এবং ইবনে আসাকির আ’মাশ হতে বর্ণনা করেন যে,
এক ব্যক্তি ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার
শরীফে পায়খানা করে দিল (নাউজুবিল্লাহ)।
সে সঙ্গে সঙ্গে পাগল হয়ে গেল এবং কুকুরের ন্যায়
ঘেউ ঘেউ শব্দ করতে লাগলো। যখন সে মারা গেল তখন
তার কবর হতেও কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ
আসতে লাগলো। [তাবাক্বাতে মানাদী আজ
জামালে আউলিয়া,পৃষ্ঠা-৩৪]
টীকা
প্রকৃতার্থে আহলে বাইত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম’দের
দুশমন কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট। অর্থাৎ পৃথিবীর কুকুর
তো তার জীবনে ঘেউ ঘেউ করেই; আর
আহলে বাইতের দুশমন মানুষ হয়ে জন্ম নিলেও কুকুর
হয়ে মরে এবং মরার পরও ঘেউ ঘেউ করে। বুঝা গেল
যে,আল্লাহ ওয়ালাদের ব্যক্তিত্বই সম্মানের পাত্র।
এভাবে তাঁদের মাজার শরীফও সম্মানের স্থান।
ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র উট
হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান
জামী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি তাঁর কিতাব “শাওয়াহেদুন
নবুওয়াতে” উল্লেখ করেন যে, সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র (কাফেলা হতে) বেচে যাওয়া কিছু উট
ছিল। ওগুলোকে জালিমরা যবেহ করে কাবাব বানালো। ঐ
গোশতের স্বাদ এতই তিক্ত ছিল যে,সেখান
থেকে ভক্ষন করার সাহস কারোরই হল না।
টীকাঃ
এই শাস্তি ফেরাউনীদের ঐ শাস্তির সদৃশ,
যেখানে পানি বনী ইসরাঈলীদের জন্য তার মৌলক অবস্থায়
ছিল। অন্যদিকে ফেরাউনীদের জন্য রক্তে পরিণত
হয়েছিল। এমনকি যে, যেই পাত্র দ্বারা বনী ইসরাঈলগণ
পানি নিত তা পানিই থাকতো। কিন্তু ঐ পাত্র দ্বারা যখন
ফিরাউনীরা পানি নিত তখন তা রক্তে রুপান্তরিত হত। তাদের খাদ্য
দ্রব্যে উকুনে ছেঁয়ে গেলো। এমনকি যে,
বনী ইসরাঈল হতে তারা খাদ্য নিলে সেটাও
উকুনে ছেঁয়ে যেত।
ইয়াজিদের উপর খোদায়ী গযব
ইয়াজিদের মৃত্যূর পর তার কবরে পাথর নিক্ষেপ করা হত।
পরবর্তীতে লোকেরা এটার উপর দালান-
কোঠা তৈরী করে ফেলে। এক পর্যায়ে ইয়াজিদের
কবরের উপর লোহা,কাঁচ গলানোর বিশাল চুলা স্থাপিত করা হয়।
যেমনটা মনে হচ্ছে যে, ইয়াজিদের কবরে প্রত্যহ আগুন
প্রজ্জলিত হচ্ছে। এমনকি এক পর্যায়ে তার কবরের নাম নিশানাই
আর থাকল না।
ইয়াজিদের ধংস
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের পর এক
দিনও শান্তিতে কাটেনি ইয়াজিদের। সমগ্র মুসলিম
জাহানে শহীদদের রক্তের ডাক এবং ক্ষোভের সূত্রপাত
হয়। ইয়াজিদের জিন্দেগী এর পর দুই বছর আট মাস এর
বেশী দীর্ঘ হয়নি। দুনিয়াতেও আল্লাহ
তা’আলা তাকে অপদস্থ করেছেন এবং সে অপদস্থতার
সাথেই ধংস হয়ে যায়।
তীর নিক্ষেপকারী পিপাসার্ত অবস্থায় ছটফট
করে মারা গেলো
যে ব্যক্তি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’কে তীর নিক্ষেপ করেছিল এবং পানি পান
করতে দেয়নি। তার মধ্যে আল্লাহ তা’আলা এমন
পিপাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, কোনভাবেই তা নিবারণ
হত না।পানি যতই পান করুক না কেন, পিপাসায় সর্বদা কাতরাতো। এক
পর্যায়ে সে পেট ফেটে মারা গেল।
অবিশ্বাস্য সময়
এটা আমাদের দূর্ভাগ্য মনে করা হোক বা অবিশ্বাস্য সময়
বলে মনে করা হোক, আমাদের যুগে এসে এমন
পাপীষ্ঠও সৃষ্টি হয়েছে; যে কিনা হযরত ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদতকে বিদ্রোহ জনিত মৃত্যূ
বলে আখ্যা দেয়। বদমাশ,নাফরমান,খবীস
ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন ইত্যাদি বলে।এমতাবস্থায়
খলীফায়ে রাশিদ সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ঐ ব্যক্তিকে বিশটি বেত্রাঘাতের হুকুম
দিতেন, যে কিনা ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন বলতো।
হায় ! আজ যদি সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু জীবদ্দশায় থাকতেন, তাহলে আমরা তাঁর নিকট
আবেদন করতাম যে, “বাংলাদেশে এক জন নয় এরকম
লাখো আছে,আর তারা কোন সাধারণ ব্যক্তি নয় বরং ধার্মিক।
এমনকি ধর্মের কর্ণধার। হে উমর বিন আব্দুল আযীয ! একটু
অনুগ্রহ করে তাদেরকেও শিক্ষা দিন। কিন্তু আফসোস
যে,তিনি আমাদের সময়ের আগেই
দুনিয়া হতে পর্দা করেছেন। ইনশা’আল্লাহ আমরা কিয়ামতের
দিন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
পতাকা তলে থাকবো এবং তারা ইয়াজিদের ধুঁতির মধ্যে থাকবে।
একটি সংশয়ের নিরসনঃ
ইয়াজিদ পন্থীরা বলে থাকে যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে হত্যার আদেশ দেয়নি এবং না সে এই
কাজে সন্তুষ্ট ছিল। (যারা এমনটা বলে) তারাও ভ্রান্ত।
“এবং কতেক বলে থাকে যে,ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যা ছিল কবীরা গুনাহ, কুফরী নয়;এবং লা’নত
যে কাফিরের জন্য নির্ধারিত,এটাও ভূল।”
তোমরা কি জান না যে, দো’জাহানের নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে কষ্ট দেওয়াটাও যে অন্যতম কুফরী।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ
ﻣُﻬِﻴﻨًﺎ
অর্থাৎ নিশ্চয় যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের
উপর দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর অভিশম্পাত। এবং তাদের জন্য
প্রস্তুত রাখা হয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
আপত্তিঃ কিছু লোক বলে থাকে যে, ইয়াজিদের শেষ
অবস্থাটা জানা যায়নি। হয়ত সে কুফর ও গুনাহের পর
তাওবা করে থাকতেও পারে। তাওবাকারী হয়ে সে মৃত্যূ বরণ
করেছে। ইমাম গাজ্জালী তারঁ “এহয়াউল উলুম” এর মধ্যে এ
দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জবাবঃ তাওবার সম্ভাবনা সম্ভাবনাই । আহ ! এই অভাগা তাদেরই
অন্তর্ভুক্ত যারা এমন কিছু করেছে যা অন্য কেউই করেনি।
ইমাম হুসাইন এবং আহলে বাইতকে শহীদের পর
সে মদিনা মুনাওয়ারাকে অপবিত্র
করতে এবং মদীনাবাসীকে হত্যা এবং শহীদ করার
জন্যে সেখানে সৈন্য প্রেরণ করে। তিন দিন পর্যন্ত
মসজিদে নববী আযান ও নামাযহীন থাকে।
তারপরে কাবা শরীফে আক্রমণ করা এবং স্বয়ং কাবার
অভ্যন্তরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে শহীদ করা এবং তাঁদের দুর্নাম বর্ণনা করা;
সবই তার কাজ ছিল। [আল্লাহই ভালো জানেন]
আপত্তিঃ বুখারী শরীফ প্রথম খন্ডে কিতাবুল জিহাদে হযরত
উম্মে হেরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণনা করেন
যে,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা হতে শুনেছি। তিনি ইরশাদ করেন যে,
আমার উম্মতের মধ্যে থেকে প্রথম
সৈন্যবাহিনী যারা কিনা রোম সম্রাটের এর শহর কুস্তন্তুনিয়ায়
জিহাদ করবে, তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। আমি আরয করলাম,
ইয়া রাসূলাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমিও
কি সেখানে যাব ? হুজুর বললেন ‘না’।
এই জিহাদ ৫০ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাতে সেনাপতি ছিল
ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া। এবং এই যুদ্ধে অনেক সাহাবায়ে কিরামও অংশ
নিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন, হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ
ইবনে যুবায়ের এবং আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুম। এই মুজাহিদদেরকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা ক্ষমাকৃত বলে ঘোষণা করেছেন।
এজন্যই ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ছিল এবং সে জান্নাতী।
এটা ছিল ইয়াজিদ পন্থী খারেজীদের সবচেয়ে বড়
দলীল, যা কিনা তাদের পক্ষ হতে বলা হয়ে থাকে। এবং এই
হাদীস দ্বারা অনেকে কারণ বের করেছে যে, ইয়াজিদের
খিলাফত সহীহ ছিল এবং সে জান্নাতী।
জবাবঃ এই হাদীস দ্বারা এটা কিভাবে হৃদয়াঙ্গম হলো যে,
ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ! কেননা যখন ইয়াজিদ
কুসতুন্তুনিয়াতে আক্রমন করতে গিয়েছিল সে সময়ে হযরত
আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জীবিত ছিলেন।
তখন তাঁর খিলাফতকাল ছিল। তাঁর আমরণ খিলাফত ওলামায়ে কিরামের
ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সহিহ ছিল। কারণ ইমামে বরহক্ব হযরত
ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইসলামী সম্রাজ্যের
খিলাফত হযরতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র নিকট অর্পণ
করেছিলেন। এখন যোদ্ধাদের ক্ষমাকৃত হওয়ার
দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে,তার প্রত্যেককে মাফ
করা হবে এবং সে বেহেশতী হবে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামার সাথে স্বয়ং এক ব্যক্তি বীরত্বের
সাথে লড়াই করছিল। হুজুর ইরশাদ করেন, সে দোযখী।
বেহেশতী আর দোযখী হওয়াটা সর্বশেষ অবস্থার
উপর নির্ভর করে। ইয়াজিদ প্রথমে অনেক ভাল কাজ
করেছে যে, কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমন করা। কিন্তু
খলীফা হওয়ার পর সে এমন হীন কর্মের দ্বারা নিজ
বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে যে, নাউজুবিল্লাহ ! ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে হত্যা এবং আহলে বাইতকে অপমান
করিয়েছে। যখন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
মাথা মুবারক আনা হল তখন অভিশপ্ত ইয়াজিদ বলতে লাগল,
“আমি বদরের প্রতিশোধ নিলাম”।
মদীনা মুনাওয়ারায় সে হামলা চালালো, হেরেমের পবিত্র
স্থানে ঘোড়া বাধলো,মসজিদে নববী এবং রওযা শরীফকে অপমান
করলো। এসকল গুনাহের পরও কি ইয়াজিদকে ক্ষমাকৃত
এবং জান্নাতী বলা যেতে পারে !!
সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম
কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে, এ
কথা তো সবারই জানা যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যায় এবং আহলে বাইতের অপমানে খুশি ও
রাজী ছিল। এজন্যই আমরা তার বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন
করি না। বরং তার ঈমানের ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি। আল্লাহর
অভিশম্পাত ইয়াজিদ ও তার সহযোগীদের উপর।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ফয়সালা
সকল মুফাসসীরিন, মুহাদ্দীসীন, আইম্মায়ে কিরাম,
ওলামায়ে রাব্বানী এবং আল্লাহর ওলীগণ এই কথার উপর
ঐক্যমত যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু
হক্বের উপর ছিলেন। অপরদিকে ইয়াজিদ ফাসিক ও ফাজির ছিল।
হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
যে,আমার উম্মতের ঐক্যমত কখনোই গোমরাহীর উপর
হতে পারে না।
ইমামে রাব্বানী হযরত মুজাদ্দীদ আলফে সানী সহ
অন্যান্য আওলিয়ায়ে কিরাম এবং ওলামায়ে ইসলামগণ বলেন,
ইয়াজিদ পাপীষ্ঠ ও ফাসিকদের দলের অন্তর্ভূক্ত। তার
পাপীষ্ঠতার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নাই। যে হীন কর্ম এই
দূর্ভাগা করেছে, কোন কাফির ফিরিঙ্গিও তা করতো না।
[মাকতুবাত শরীফ-৫৪,২৫১]
==> আলহামদুলিল্লাহ ! সমাপ্ত <==
হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান
জামী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি তাঁর কিতাব “শাওয়াহেদুন
নবুওয়াতে” উল্লেখ করেন যে, সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র (কাফেলা হতে) বেচে যাওয়া কিছু উট
ছিল। ওগুলোকে জালিমরা যবেহ করে কাবাব বানালো। ঐ
গোশতের স্বাদ এতই তিক্ত ছিল যে,সেখান
থেকে ভক্ষন করার সাহস কারোরই হল না।
টীকাঃ
এই শাস্তি ফেরাউনীদের ঐ শাস্তির সদৃশ,
যেখানে পানি বনী ইসরাঈলীদের জন্য তার মৌলক অবস্থায়
ছিল। অন্যদিকে ফেরাউনীদের জন্য রক্তে পরিণত
হয়েছিল। এমনকি যে, যেই পাত্র দ্বারা বনী ইসরাঈলগণ
পানি নিত তা পানিই থাকতো। কিন্তু ঐ পাত্র দ্বারা যখন
ফিরাউনীরা পানি নিত তখন তা রক্তে রুপান্তরিত হত। তাদের খাদ্য
দ্রব্যে উকুনে ছেঁয়ে গেলো। এমনকি যে,
বনী ইসরাঈল হতে তারা খাদ্য নিলে সেটাও
উকুনে ছেঁয়ে যেত।
ইয়াজিদের উপর খোদায়ী গযব
ইয়াজিদের মৃত্যূর পর তার কবরে পাথর নিক্ষেপ করা হত।
পরবর্তীতে লোকেরা এটার উপর দালান-
কোঠা তৈরী করে ফেলে। এক পর্যায়ে ইয়াজিদের
কবরের উপর লোহা,কাঁচ গলানোর বিশাল চুলা স্থাপিত করা হয়।
যেমনটা মনে হচ্ছে যে, ইয়াজিদের কবরে প্রত্যহ আগুন
প্রজ্জলিত হচ্ছে। এমনকি এক পর্যায়ে তার কবরের নাম নিশানাই
আর থাকল না।
ইয়াজিদের ধংস
হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের পর এক
দিনও শান্তিতে কাটেনি ইয়াজিদের। সমগ্র মুসলিম
জাহানে শহীদদের রক্তের ডাক এবং ক্ষোভের সূত্রপাত
হয়। ইয়াজিদের জিন্দেগী এর পর দুই বছর আট মাস এর
বেশী দীর্ঘ হয়নি। দুনিয়াতেও আল্লাহ
তা’আলা তাকে অপদস্থ করেছেন এবং সে অপদস্থতার
সাথেই ধংস হয়ে যায়।
তীর নিক্ষেপকারী পিপাসার্ত অবস্থায় ছটফট
করে মারা গেলো
যে ব্যক্তি হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’কে তীর নিক্ষেপ করেছিল এবং পানি পান
করতে দেয়নি। তার মধ্যে আল্লাহ তা’আলা এমন
পিপাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে, কোনভাবেই তা নিবারণ
হত না।পানি যতই পান করুক না কেন, পিপাসায় সর্বদা কাতরাতো। এক
পর্যায়ে সে পেট ফেটে মারা গেল।
অবিশ্বাস্য সময়
এটা আমাদের দূর্ভাগ্য মনে করা হোক বা অবিশ্বাস্য সময়
বলে মনে করা হোক, আমাদের যুগে এসে এমন
পাপীষ্ঠও সৃষ্টি হয়েছে; যে কিনা হযরত ইমাম হুসাইন
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদতকে বিদ্রোহ জনিত মৃত্যূ
বলে আখ্যা দেয়। বদমাশ,নাফরমান,খবীস
ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন ইত্যাদি বলে।এমতাবস্থায়
খলীফায়ে রাশিদ সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ঐ ব্যক্তিকে বিশটি বেত্রাঘাতের হুকুম
দিতেন, যে কিনা ইয়াজিদকে আমীরুল মু’মিনীন বলতো।
হায় ! আজ যদি সাইয়্যেদুনা উমর বিন আব্দুল আযীয রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু জীবদ্দশায় থাকতেন, তাহলে আমরা তাঁর নিকট
আবেদন করতাম যে, “বাংলাদেশে এক জন নয় এরকম
লাখো আছে,আর তারা কোন সাধারণ ব্যক্তি নয় বরং ধার্মিক।
এমনকি ধর্মের কর্ণধার। হে উমর বিন আব্দুল আযীয ! একটু
অনুগ্রহ করে তাদেরকেও শিক্ষা দিন। কিন্তু আফসোস
যে,তিনি আমাদের সময়ের আগেই
দুনিয়া হতে পর্দা করেছেন। ইনশা’আল্লাহ আমরা কিয়ামতের
দিন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
পতাকা তলে থাকবো এবং তারা ইয়াজিদের ধুঁতির মধ্যে থাকবে।
একটি সংশয়ের নিরসনঃ
ইয়াজিদ পন্থীরা বলে থাকে যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে হত্যার আদেশ দেয়নি এবং না সে এই
কাজে সন্তুষ্ট ছিল। (যারা এমনটা বলে) তারাও ভ্রান্ত।
“এবং কতেক বলে থাকে যে,ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যা ছিল কবীরা গুনাহ, কুফরী নয়;এবং লা’নত
যে কাফিরের জন্য নির্ধারিত,এটাও ভূল।”
তোমরা কি জান না যে, দো’জাহানের নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে কষ্ট দেওয়াটাও যে অন্যতম কুফরী।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ
ﻣُﻬِﻴﻨًﺎ
অর্থাৎ নিশ্চয় যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের
উপর দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর অভিশম্পাত। এবং তাদের জন্য
প্রস্তুত রাখা হয়েছে অপমানজনক শাস্তি।
আপত্তিঃ কিছু লোক বলে থাকে যে, ইয়াজিদের শেষ
অবস্থাটা জানা যায়নি। হয়ত সে কুফর ও গুনাহের পর
তাওবা করে থাকতেও পারে। তাওবাকারী হয়ে সে মৃত্যূ বরণ
করেছে। ইমাম গাজ্জালী তারঁ “এহয়াউল উলুম” এর মধ্যে এ
দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জবাবঃ তাওবার সম্ভাবনা সম্ভাবনাই । আহ ! এই অভাগা তাদেরই
অন্তর্ভুক্ত যারা এমন কিছু করেছে যা অন্য কেউই করেনি।
ইমাম হুসাইন এবং আহলে বাইতকে শহীদের পর
সে মদিনা মুনাওয়ারাকে অপবিত্র
করতে এবং মদীনাবাসীকে হত্যা এবং শহীদ করার
জন্যে সেখানে সৈন্য প্রেরণ করে। তিন দিন পর্যন্ত
মসজিদে নববী আযান ও নামাযহীন থাকে।
তারপরে কাবা শরীফে আক্রমণ করা এবং স্বয়ং কাবার
অভ্যন্তরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে শহীদ করা এবং তাঁদের দুর্নাম বর্ণনা করা;
সবই তার কাজ ছিল। [আল্লাহই ভালো জানেন]
আপত্তিঃ বুখারী শরীফ প্রথম খন্ডে কিতাবুল জিহাদে হযরত
উম্মে হেরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণনা করেন
যে,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা হতে শুনেছি। তিনি ইরশাদ করেন যে,
আমার উম্মতের মধ্যে থেকে প্রথম
সৈন্যবাহিনী যারা কিনা রোম সম্রাটের এর শহর কুস্তন্তুনিয়ায়
জিহাদ করবে, তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। আমি আরয করলাম,
ইয়া রাসূলাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমিও
কি সেখানে যাব ? হুজুর বললেন ‘না’।
এই জিহাদ ৫০ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাতে সেনাপতি ছিল
ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া। এবং এই যুদ্ধে অনেক সাহাবায়ে কিরামও অংশ
নিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন, হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ
ইবনে যুবায়ের এবং আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুম। এই মুজাহিদদেরকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা ক্ষমাকৃত বলে ঘোষণা করেছেন।
এজন্যই ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ছিল এবং সে জান্নাতী।
এটা ছিল ইয়াজিদ পন্থী খারেজীদের সবচেয়ে বড়
দলীল, যা কিনা তাদের পক্ষ হতে বলা হয়ে থাকে। এবং এই
হাদীস দ্বারা অনেকে কারণ বের করেছে যে, ইয়াজিদের
খিলাফত সহীহ ছিল এবং সে জান্নাতী।
জবাবঃ এই হাদীস দ্বারা এটা কিভাবে হৃদয়াঙ্গম হলো যে,
ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ! কেননা যখন ইয়াজিদ
কুসতুন্তুনিয়াতে আক্রমন করতে গিয়েছিল সে সময়ে হযরত
আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জীবিত ছিলেন।
তখন তাঁর খিলাফতকাল ছিল। তাঁর আমরণ খিলাফত ওলামায়ে কিরামের
ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সহিহ ছিল। কারণ ইমামে বরহক্ব হযরত
ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইসলামী সম্রাজ্যের
খিলাফত হযরতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র নিকট অর্পণ
করেছিলেন। এখন যোদ্ধাদের ক্ষমাকৃত হওয়ার
দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে,তার প্রত্যেককে মাফ
করা হবে এবং সে বেহেশতী হবে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামার সাথে স্বয়ং এক ব্যক্তি বীরত্বের
সাথে লড়াই করছিল। হুজুর ইরশাদ করেন, সে দোযখী।
বেহেশতী আর দোযখী হওয়াটা সর্বশেষ অবস্থার
উপর নির্ভর করে। ইয়াজিদ প্রথমে অনেক ভাল কাজ
করেছে যে, কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমন করা। কিন্তু
খলীফা হওয়ার পর সে এমন হীন কর্মের দ্বারা নিজ
বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে যে, নাউজুবিল্লাহ ! ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে হত্যা এবং আহলে বাইতকে অপমান
করিয়েছে। যখন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
মাথা মুবারক আনা হল তখন অভিশপ্ত ইয়াজিদ বলতে লাগল,
“আমি বদরের প্রতিশোধ নিলাম”।
মদীনা মুনাওয়ারায় সে হামলা চালালো, হেরেমের পবিত্র
স্থানে ঘোড়া বাধলো,মসজিদে নববী এবং রওযা শরীফকে অপমান
করলো। এসকল গুনাহের পরও কি ইয়াজিদকে ক্ষমাকৃত
এবং জান্নাতী বলা যেতে পারে !!
সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম
কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে, এ
কথা তো সবারই জানা যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যায় এবং আহলে বাইতের অপমানে খুশি ও
রাজী ছিল। এজন্যই আমরা তার বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন
করি না। বরং তার ঈমানের ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি। আল্লাহর
অভিশম্পাত ইয়াজিদ ও তার সহযোগীদের উপর।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ফয়সালা
সকল মুফাসসীরিন, মুহাদ্দীসীন, আইম্মায়ে কিরাম,
ওলামায়ে রাব্বানী এবং আল্লাহর ওলীগণ এই কথার উপর
ঐক্যমত যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু
হক্বের উপর ছিলেন। অপরদিকে ইয়াজিদ ফাসিক ও ফাজির ছিল।
হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
যে,আমার উম্মতের ঐক্যমত কখনোই গোমরাহীর উপর
হতে পারে না।
ইমামে রাব্বানী হযরত মুজাদ্দীদ আলফে সানী সহ
অন্যান্য আওলিয়ায়ে কিরাম এবং ওলামায়ে ইসলামগণ বলেন,
ইয়াজিদ পাপীষ্ঠ ও ফাসিকদের দলের অন্তর্ভূক্ত। তার
পাপীষ্ঠতার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নাই। যে হীন কর্ম এই
দূর্ভাগা করেছে, কোন কাফির ফিরিঙ্গিও তা করতো না।
[মাকতুবাত শরীফ-৫৪,২৫১]
==> আলহামদুলিল্লাহ ! সমাপ্ত <==